সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক-এর জন্য যিনি সবকিছু করতে সক্ষম। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অগণিত ছলাত ও সালাম। যিনি আযাব-গযব থেকে উম্মতদেরকে সর্তক করেছেন। আদ, সামুদ, ফিরআউনের ক্বওম, হযরত লূত আলাইহিস্ সালাম-এর ক্বওমের প্রতি আযাব-গযবের কথা আল্লাহ পাক কুরআনে কারীমায় ঘোষণা করেছেন। প্রথম গযব এসেছিল হযরত নুহ আলাইহিস্ সালাম-এর ক্বওমের প্রতি। যা ঐতিহাসিক হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম-এর প্লাবন বা বন্যা বলে পরিচিত।
৮৮, ৯৮ এরপর এবারও এক মহাবন্যা দেশকে আক্রান্ত করেছে। মূলতঃ বন্যা বান্দার পাপাচারের কারণেই ঘটে থাকে। আল্লাহ পাক বলেন, ‘‘অতঃপর তারা অবাধ্যতা করল, যার ফলে আমি তাদের উপর প্রেরণ করলাম প্রবল বন্যা।’’ (সূরা সাবা)
উল্লেখ্য, কোন গযব বা দুর্যোগ আসলেও সে দুর্যোগকে ঢালাওভাবে ছেড়ে দেয়া নয় বরং সে দুর্যোগের ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়াই ইসলামী বিধান। সে হিসেবে বর্তমান বন্যাকে মহাদুর্যোগ হিসেবে চিহিুত করা গেলেও সে তুলনায় সরকারি, বেসরকারি সাহায্যের উদ্যোগ নিতান্তই নগণ্য।
বিশেষতঃ প্রায় বছর বছর বন্যা হওয়ার পরও এ ব্যাপারে সরকারের স্থায়ী কোন পদক্ষেপ নেই। নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রায় সব নদীই যে দু’পাশ থেকে সংকীর্ণ হয়ে সরু রেখার মত হয়ে গেছে, সে ব্যাপারে সরকারের কোন উদ্বেগ নেই। নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষার্থে পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করার ব্যাপারে তাই জনমত তীব্র করে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি উপযুক্ত বাঁধ তৈরীর ব্যাপারেও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, বন্যার সামগ্রিক চিত্রটি ভয়াবহ হওয়ার ফলে দুর্গতের হাহাকার আকাশ-বাতাস ভারী করলেও তাদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়নি কাঙ্খিত ধর্মীয় অনুভুতি। অথচ আল্লাহ পাক-এর কাছে আকুতি-মিনতি করে কান্নাকাটি করাই গযব থেকে নাযাত প্রাপ্তির প্রধান শর্ত।
“স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোন প্রকৃতিক দুর্যোগের আলামত পেতেন তখনই তিনি রোনাজারিতে, ইবাদত-বন্দিগীতে মশগুল হতেন। উম্মতের জন্য পানাহ্ চাইতেন।”
মহান আল্লাহ পাক বলেন, “অতঃপর আমি তাদেরকে অভাব অনটন ও রোগব্যাধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম। যাতে তারা আকুতি-মিনতি করে। অতঃপর তাদের কাছে যখন আমার আযাব আসল তখন তারা আকুতি মিনতি করল না। মূলতঃ তাদের অন্তর কঠোর হয়ে গিয়েছিল এবং শয়তান তাদের কাছে আকর্ষণীয় করে দেখিয়েছিল যে কাজ তারা করছিল।’’ (সূরা আনয়াম)
বর্তমান বন্যায়ও এর নজীর দেখা গেছে। ঘরের মাচায় আশ্রয় গ্রহণকারী দৃর্গতদেরও দেখা গেছে বসে বসে হারাম টি, ভি দেখতে, গান-বাজনা শুনতে। আযাব-গযবে আক্রান্ত হয়ে তওবা ইস্তিগ্ফারের পরিবর্তে শয়তান এসব কাজকেই তাদের কাছে আকর্ষণীয় করেছে।
মূলতঃ আম মানুষের এই বিভ্রান্তির পিছনে একদিকে যেমন দায়ী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা তার চেয়েও বেশী দায়ী তথাকথিত আলিম সমাজ। বলাবাহুল্য, বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যে জীবন দর্শন, তাতে সাধারণের মনের খোরাক পাপাচার নির্ভর। আদর্শহীন এ ব্যবস্থার যাতাঁকলে নিস্পেষিত সাধারণ মানুষ তাই একদিকে যেমন বঞ্চিত ধর্মীয় চেতনা ও মূল্যাবোধের শিক্ষা থেকে তেমনি তারা প্রবাহমান গান-বাজনা, টি.ভি, ভি.সি.আর ইত্যাদি হারাম উপকরণের মদ-মত্ততায় চরমভাবে বিকারগ্রস্ত। পাশাপাশি নিজেদের রূহানী ক্ষমতার অভাবে বিকারগ্রস্ত এ উম্মাহ্কে রূহানীয়াতের মাধ্যমে হিদায়েতের পথে নিয়ে আসতে তথাকথিত আলিম-সমাজ চরমভাবে ব্যর্থ।
অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় বন্যা দুর্গতদের মাঝে নয়, হারাম গণতান্ত্রিক নির্বাচন ক্ষমতার গদী লড়াইয়ে অঢেল অর্থ ঢালা; দুর্বল বাধ রক্ষায় নয় মাওসেতুং-এর লংমার্চে দল বেধে নামা; দুর্গতদের বাড়ী-ঘর রক্ষায় নয়, কট্রর হিন্দু গান্ধীর হরতাল পালনে ইট-পাটকেল মারা; মুসলমানদের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তোলার প্রচারণায় নয়, খ্রীষ্টান প্রটোস্ট্যান্টাদের মৌলবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে নামা ইত্যাদি হরাম কাজে মশগুল হওয়াই হলো ঐ সব বিপথগামী, স্বার্থন্বেষী আিেলম সমাজ তথা উলামায়ে “ছু”দের তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনের আসল চিত্র। মূলতঃ উলামায়ে ‘ছু’দের পাপাচারই বর্তমান বন্যারূপী গযবের অন্যতম কারণ।
কাজেই আমাদের দ্বীনী-দুনিয়াবী যাবতীয় বালা-মুছীবত থেকে বাচঁতে হলে মুজাদ্দিদে আ’যমের ছোহবতে যেতে হবে। তবেই একদিকে যেমন আমাদের পক্ষে অবাঞ্ছিত গুনাহ্রে আমল থেকে বাঁচা সম্ভব হবে তেমনি কাঙ্খিত নেক আমল করাও সহজ হবে। সর্বোপরি খোদাতায়ালার আযাব-গযব থেকে বাঁচা যাবে।
স্মর্তব্য, বন্যারূপী গযব থেকে মহান আল্লাহ পাকই একমাত্র মুক্তিদাতা। তিনি বলেন, “আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মত। অতঃপর আমি জমিনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করতে সক্ষম।” (সূরা মু’মিনুন/১৮)