দ্বীনে হক্ব, ইসলামের অভিভাবক, আল্লাহ্ পাক-এর জন্য সব প্রশংসা। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য সব সালাত, সালাম। ইসলামী বছরের দ্বিতীয় মাস ‘সফর’, মুসলমানদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আখিরী চাহার শোম্বাসহ বিবিধ কারণে এ মাসটিতে রয়েছে ফযীলত, বরকত ও নছীহত হাছিলের অবকাশ। হায়াত মুবারকের শেষ বছরে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘সফর’ পূর্ব মহররম মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন, ক্রমাগত অসুস্থতার পর তিনি এদিনে খানিকটা সুস্থতাবোধ করেন। এতে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও আহলে বাইতগণ অত্যাধিক খুশী হয়ে উঠেন। তারা দান-খয়রাতের দ্বারা এর শোকরিয়া আদায় করেন। এই স্মরণীয় ঘটনা ফার্সী কথায় “আখেরী চাহার শোম্বা” বলে পরিচিত। অপরদিকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর লখতে জিগার, নয়নের মণি, বেহেশতের যুবকদের সাইয়্যিদ, হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শাহাদাত বরণ এবং ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ইন্তিকাল, সফর মাসকে আরো বৈশিষ্ট্যম-িত করেছে। সন্তোষজনকভাবে না হলেও, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর আলোচনা, অনেক মহলই করেন। এমনকি বর্তমানে খারেজী, ওহাবী, বিদ্য়াতী গোষ্ঠী তথা উলামায়ে ‘ছু’রাও তাঁর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে থাকে। কিন্তু তাদের বক্র দিল, পর্দা ঢাকা দিল, অন্ধ দিল সর্বোপরি অসুস্থ অন্তরের কারণে তারা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয় যে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কালে, আবুল ফজল, ফৈজী, মোল্লা মোবারক প্রমুখ উলামায়ে ‘ছু’রা যে কলঙ্কিত অধ্যায় রচনা করেছিল, তারাও ঠিক একই ভূমিকায় অবতীর্ণ রয়েছে। হাক্বীক্বতে তারাও উলামায়ে ‘ছু’। তারাও প্রবর্তন করছে আরেক দ্বীন-ই-শয়তানী। কমিউনিষ্ট কমরেড মাওসেতুং-এর লংমার্চ, গান্ধীর হরতাল, খ্রীষ্টানদের মৌলবাদ, ইহুদী নাছারার ব্লাসফেমী আইন, গণতন্ত্র, নির্বাচন ইত্যাদির সমন্বয়ে, বর্তমানে উলামায়ে ‘ছু’দের তথাকথিত ইসলামী আন্দোলন মূলতঃ বিভিন্ন ধর্মের গোমরাহী মতবাদের সমাহারে বাদশাহ্ আকবরের কূফরী দ্বীন-ই-ইলাহীরই এক নতুন সংস্করণ। যাকে আখ্যা দিতে হয়- “দ্বীন-ই শয়তানী”। ঈমানের স্বার্থে, ইসলামের রাহে এসব উলামায়ে ‘ছু’দের থেকে তাই আমাদের হতে হবে বিশেষ সাবধান।
মূলতঃ হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পবিত্র আলোচনা আমাদেরকে একজন মুজাদ্দিদের আগমন কাল, তাঁর কাজের প্রেক্ষাপট ও নীতি বা কৌশল সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দান করে। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ ফরমান, “আমি সময়কে মানুষের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ঘুরিয়ে থাকি।” আইয়্যামে জাহিলিয়াতের পরেই এসেছিল খতমে নুবুওওয়াতের নেয়ামত। তদ্রুপ যুগে যুগে বেশরা-বেদয়াতের ঘনঘটার পরই আবির্ভূত হয় মুজাদ্দিয়তের সওগাত।
আজ সারা বিশ্বে মুসলমানদের নতজানু ও পর্যুদস্থ অবস্থা, আমেরিকা, ইউরোপ তথা ইহুদী খ্রীষ্টানের নির্মম অত্যাচার ও অগ্রাসন; ওসামা ও সাদ্দামের চরম মুনাফিকী এবং ধর্মব্যবসায়ী নামধারী শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মাওলানা, পীর ছাহেবদের পদস্খলন ও বিবিধ অপতৎপরতা আর বিজাতীয় বিধর্মীয় সংস্কৃতিতে মগ্ন, সুদ-ঘুষ, দুর্নীতি, গান-বাজনা, অশ্লীলতা ও অরাজকতার আষ্টে পৃষ্ঠে জরাগ্রস্ত, আত্মবিস্মৃত, আমলহীন মুসলমানের গুনাহর কারণে ভারী হয়ে উঠছে আকাশ-বাতাস, দুঃসহ হয়ে পড়ছে চারপাশের পরিবেশ। থেকে থেকে যেন ধ্বনিত হচ্ছে কুরআন শরীফের সে আয়াত। “যারা বলে হে আমাদের প্রতিপালক এ জনপদ যার অধিবাসী জালিম, তা হতে আমাদেরকে অন্যত্র নিয়ে যাও; তোমার নিকট থেকে কাউকে আমাদের অভিভাবক করো এবং তোমার নিকট থেকে কাউকে আমাদের সাহায্যার্থে প্রেরণ করো।” (সূরা নিসা/৭৫)
হতাশাগ্রস্ত মুসলমানের এ দোয়া যে আল্লাহ পাক কবুল করবেন তা হাদীছ শরীফে প্রমাণ রয়েছে। আবূ দাঊদ শরীফের হাদীছ শরীফে রয়েছে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমান, “নিশ্চয়ই এই উম্মতের মাঝে প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুতে আল্লাহ পাক একজন মুজাদ্দিদ পাঠাবেন। যিনি দ্বীনের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী সব বেশরা বিদয়াতকে নির্মূল করবেন। অর্থাৎ শাশ্বত ইসলামকে তুলে ধরবেন।
এতদ্বপ্রেক্ষিতে দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে বলতে হয় যে, ১৪২৫ হিজরী সাল হিসেবে এ সময় হচ্ছে বর্তমান হিজরী শতকের প্রারম্ভ তথা হাদীছ শরীফে উল্লিখিত মুজাদ্দিদের তাজদীদের সময়কাল।
কাজেই শুধু সমষ্টিকভাবে নয় ব্যক্তিগতভাবেও প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ বর্তমান যামানায় স্ব স্ব দায়িত্ব হিসেবে যামানার মুজাদ্দিদের ছোহবত তলব করা। যার স্বপক্ষে কুরআন-সুন্নাহর আরো অনেক দলীল মওজুদ রয়েছে। যা মূলতঃ ফরয-ওয়াজিবের মধ্যে পড়ে। যেমন, হাদীছ শরীফে উল্লেখ রয়েছে “যে যামানার ইমামকে (মুজাদ্দিদুয্ যামানকে) চিনলনা সে যেন জাহিলিয়াতের মধ্যে ইন্তিকাল করল।” (কানযুল উম্মাল) প্রসঙ্গতঃ কুরআন সুন্নাহ্র সামগ্রিক নির্দেশনায় আমরা নির্দ্বিধায় ও দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে বলতে পারি যে, ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, আওলাদের রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলাই কুরআন সুন্নাহয় নির্দেশিত মহান মুজাদ্দিদ তথা মুজাদ্দিদে আ’যম। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে এই মহান মুজাদ্দিদের নেক ছোহবত ও সন্তুষ্টি নছীব করুন। (আমীন)