সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১২৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

দিন-রাতের পরিবর্তনকারী আল্লাহ পাক উনার জন্যই সব প্রশংসা। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যই সব সালাত ও সালাম।

বারটি চান্দ্র মাসের সমাবর্তনে নতুন হিজরী সনের আবির্ভব। মুহররম নতুন মাস, পহেলা মুহররম নতুন দিন। তবে এই নতুন দিনের দাবী পহেলা বৈশাখ বা পহেলা জানুয়ারীর মত নয়। যেহেতু ইসলাম নওরোজ বা নববর্ষের উৎসব স্বীকার করেনা। জানা যায় খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে ইলিয়াস সিজার সর্ব প্রথম ইংরেজী নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন। অপরদিকে পারসিক কালচারে মুগ্ধ বাদশাহ আকবর পারসিক রীতি অনুকরণে ফসীল সন বা বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আকবর প্রবর্তিত বঙ্গাব্দের সাথেও বাঙ্গালীত্বের মূলত: কোন যোগাযোগ ছিল না।

মূলত: আদর্শগত সংঘাতের কারণেই বাঙ্গালী সংস্কৃতি আর মুসলিম সংস্কৃতির বিভাজনের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। কারণ আর সব সংস্কৃতির মত বাঙ্গালী সংস্কৃতি মিশ্রধর্মী হলেও মুসলিম সংস্কৃতি তার ওহীর গুণ সাপেক্ষে স্বকীয়তা ও স্বাকীয়তা ও স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণেই অবিমিশ্র।

নতুন মুহররমের আগমনের দ্বারা যথারীতি বিদায় নিয়েছে ১৪২৪ হিজরী। আবির্ভূত হয়েছে ১৪২৫ হিজরী। নতুন হিজরী সনের প্রেক্ষাপটে সচেতন মুসলমান হিসেবে একদিকে আমাদের জন্য যেমন রয়েছে বিগত বছরের সার্বিক আমলের হিসেবের অবকাশ, তেমনি আছে নব উদ্যোগে, নব চেতনায় এবং সংশোধিত মানসিকতায় দীপ্ত পদকেষপে নব যাত্রা সূচনার সুযোগ। যদিও কার্যত: এর খুব কম প্রতিফলন আমরা লক্ষ্য করি। মুলত: মুসলিম জাতীয়তাবোধের ক্ষীণ ধারাই এর সুপ্ত কারণ।

বলাবাহুল্য, মুসলিম জাতীয়তাবোধ তথা মুসলিম সংস্কৃতি অনিবার্যভাবে ইসলামী রীতি-নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে স্মর্তব্য যে মুসলমান যা করে তাই কিন্তু মুসলিম সংস্কৃতি বলে গণ্য হতে পারে না। ইসলামী হুকুমের খিলাফ মুসলমান যাই করবে সেটা হবে তার আত্মঘাতী ও অনৈসলামী প্রক্রিয়া। মনে রাখা দরকার মুসলিম সংস্কৃতি একটা আদর্শিক, একটা সীমারেখা সংযুক্ত সংস্কৃতি। নতুন করে যেমন কোন ওহীর অবতারণা নেই তেমনি ওহীর বিপরীতে এই সংস্কৃতিতে পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবপুষ্ট নতুন কিছু যোগ হওয়ারও অবকাশ নেই। জায়িয-নাজায়িযের সীমারেখা এখানে একান্তই ধ্রুব।

অথচ এ মূল্যবোধের অবক্ষয় এখন এত বেশী যে মুসলিম অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় মুসলমানই এখন ইসলামের সাথে তামাশা করছে, ইসলামকে উপহাস করছে, বিদ্রুপ করছে, বিরোধিতা করছে।

আমাদের প্রতিনিধিগণ জানিয়েছেন আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রোলিয়া তথা বিদেশে ঈদ সম্মিলন অনুষ্ঠান হচ্ছে ব্যান্ড, গীটার, কি বোর্ডের ধুমধাম মিউজিক, যুগল নৃত্যে, অশ্লীলতায় আর অনাচার ও ব্যাভিটারে। অথচ মুসলিম কম্যুনিটির ব্যানারে ইসলামী অনুষঙ্গ হিসেবে এসব অনুষ্ঠানর করা হচ্ছে। পাশাপাশি সদ্য উদযাপিত কুরবানীর ঈদে স্বদেশেও আমরা কি দেখলাম!

আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছার প্রতি চরমভাবে নিবেদিত হওয়াই হচ্ছে কুরবানী ঈদের নিবেদন। কিন্তু কার্যত ামরা দেখছি যে কুরবানী উপলক্ষে গরুর হাট নিয়ে দলীয়করণ, হাটে গরু আসার পথে পদে চাঁদাবাজি, জোর করে গরু নিজ হাটে ঢোকানো, হাটে মাইকে গান-বাজনা শোনানোর বাধ্যগত ব্যবস্থা; সংখ্যায় বেশি, দামে বেশি গরু কুরবানী দেয়ার লোক দেখানো প্রবণতা; বিশেষত: যে কুরবানীর পশুর চামড়া সম্পূর্ণই গরীবের হক সে পশুর চামড়া দিয়েও এক ধরনের মহল্লাভিত্তিক রাজনীতি করা ইত্যাদি। হালে মাদরাসার জন্য চামড়া কিনতে গেলে বাড়ীর মালিক তা দিচ্ছেন না। তারা বেশি দাম হাঁকালেও তিনি কম টাকায় চামড়া দিয়ে মহল্লার মস্তানকেই তুষ্ট করেন।

উল্লেখ্য, গরীবের হক্ব বঞ্চিত করে এ ধরনের মহল্লা ভিত্তিক রাজনীতি হচ্ছে কুরবানীকে কেন্দ্র করেই। পাশাপাশি যে মস্তান দিনের বেলায় প্রকাশ্য ডাকাতি করে সন্ধেয় মদ আর ব্যান্ডের আসর বসাচ্ছে তাও কুরবানীর সুযোগেই।

কাজেই দেখতে দেখতে সয়ে যাওয়া চোখে নয়, সুস্থ মস্তিষ্কে, স্থির চিত্তে ভেবে দেখলে হতবাক, হত বিহবল আর হতাশ হতে হয় যে, কুরবানীর মত নিবেদিত বিষয় নিয়ে মুসলমান কি করছে? ইসলাম থেকে মুসলমান যে আজ কতদূরে সরে গেছে এটাই তার সাক্ষাৎ চিত্র।

কাজেই উপলব্ধি করতে হবে যে, সামাজিক আবহ, পারিপার্শ্বিক প্রভাব তথা সময়ের প্রেক্ষিতে মুসলমান যা করছে তাই ইসলামী নয়। যেমনটি আজকের তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনকারীরা যা করছে তাও ইসলামী নয়।

কুরানীর নামে চাঁদাবাজী, হাট দখল, গান শোনানো চামড়া দখল, গরু যবেহের ছবি ভিডিওকরণ যেমন জায়িয নয়, তেমনি জায়িয নয় বর্তমান ধর্মব্যবসায়ীদের ইসলামের নামে ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, রংমার্চ করা, হরতাল করা, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী দাবী করা ইত্যাদি কাজ।

মূলত: বহমান মুসলিম মানসিকতাকে সত্যিকার মুসলিম সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতায় পর্যবসিত করতে তথা ইসলামী তাহজীব-তমুদ্দন পুনরুজ্জীবিত করতে এ মুহূর্তে দরকার ইসলামের অন্তর্নিহিত- ‘রূহানী শক্তি’ অর্জনের এবং তা বিকাশের ও বিস্তারের।

যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যমের নেক ছোহবতের মাধ্যমেই সে মহান নিয়ামত হাছিল করাই হোক নতুন মুহররম, নতুন হিজরী সালের নেক নিয়ত। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয় 

সম্পাদকীয়