সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১২৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা পালনকর্তা আল্লাহ্ পাক-এর জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বেশুমার দরূদ ও সালাম।   মানুষ আল্লাহ্ পাক-এর পছন্দনীয় সৃষ্টি। আল্লাহ্ পাক তাই মানুষকে তাদের চরম শত্রু- শয়তান সম্পর্কে সম্যক অবহিত করেছেন। বলেছেন, “শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রুরূপেই গ্রহণ করো। সে তার দলবলকে আহবান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়।” (সূরা ফাতির/৬) আরো সতর্কবাণী যুক্ত করে আল্লাহ্ পাক বলেন, “হে বণী আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের ইবাদত করোনা, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা ইয়াসীন/৬০)         পবিত্র কুরআন শরীফে উচ্চকিতভাবে ঘোষিত এই প্রকাশ্য শত্রু সম্পর্কে মানুষ বড়ই বে-খবর। উল্লেখ্য, শয়তানের কূটচাল সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর। বণী ইস্রাঈলকে কুমন্ত্রণা দিয়ে শয়তান বাহাত্তর ফিরকা তৈরী করেছিল। আর উম্মতে মুহম্মদীর মাঝে করেছে তিহাত্তর ফিরকা। তন্মধ্যে বাহাত্তরটিই বাতিল ও জাহান্নামী। অথচ তারা প্রত্যেকেই ইসলামের নামেই চলছে। কিন্তু ইসলামী দাবী করলেও আসলে তাদের আক্বীদা ছহীহ্ নয়। বরং তারা নানা ধরনের বদ আক্বীদায় বিভ্রান্ত।

উল্লেখ্য, কুরআনে করীমায় আল্লাহ পাক আমলে সলেহ করার পূর্বে আক্বীদা ছহীহ্করণ তথা ঈমানের  উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি আমলে সলেহ করার পূর্বে ঈমান আনার কথা বলেছেন। কুরআন শরীফের ১৮ স্থানে সরাসরি ঈমান আনার কথা বলা হয়েছে। ৫৩ এবং প্রকারান্তরে ২৫৮ স্থানে, আগে ঈমানের ও পরে আমলে সলেহের কথা বলা হয়েছে। আক্বীদা ছহীহ্র উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে হাদীছ শরীফেও। আক্বীদার গলদের প্রেক্ষিতেই তিরমিযী, মসনদে আহমদ ও আবূ দাঊদ শরীফের হাদীছ শরীফের উল্লেখ করা হয়েছে, “উম্মতে মুহম্মদীর মধ্যে ৭৩ ফিরকা হবে, যার মধ্যে ৭২টিই জাহান্নামী। ” মিরকাত শরীফে বিভিন্ন  উপদলসহ প্রধান ৮টি দলের কথা বলা হয়েছে। যথাঃ মু’তাজিলা, শিয়া, খারেজী, মরজিয়াহ, নাজ্জারিয়্যাহ, জাবারিয়্যাহ, মুশাব্বিহা। উল্লেখ্য, কাদিয়ানী, বাহাই, ইবনে তাইমিয়া, ওহাবী, নজদী ইত্যাদি সাম্প্রতিক কালের বদ আক্বীদাভুক্ত গোষ্ঠী ছাড়াও বর্তমান সমাজে ইসলামের নাম ব্যবহারকারী ও ইসলামের নামে রাজনৈতিক ফায়দালোভীদের যোগসাজশে একটি সমন্বিত বাতিল আক্বীদা পন্থীদের উদ্ভাব হয়েছে। এরা হচ্ছে বর্তমান উলামায়ে ‘ছূ’। হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “যে যে জাতির সাথে সাদৃশ্য রাখবে সে ঐ জাতির অন্তর্ভুক্ত হবে।” এই স্পষ্ট নির্দেশ থাকার পরও এমনকি আশুরার রোযা ইহুদীদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে একটির পরিবর্তে দু’টি রাখার নির্দেশ থাকলেও উলামায়ে ‘ছূ’রা অবলীলাক্রমে ইহুদী-নাছারাদের গণতন্ত্র, ব্লাসফেমী আইন, মৌলবাদ, নির্বাচন, হরতাল, লংমার্চ ইত্যাদি হারাম কাজ অবাধে অব্যাহত ভাবে করে যাচ্ছে। সঙ্গতঃকারণেই এদের এসব কার্যকলাপের প্রেক্ষিতে এদেরকে নব্য কাদিয়ানী বলে অভিহিত করতে হয়। ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, পদপ্রার্থী হওয়া, নারী নেতৃত্ব সমর্থন করা, বিজাতীয় আদর্শ অনুসরণ করার বিরুদ্ধে সরাসরি আখিরী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিষেধবাণী থাকলেও তারা তাতে আদৌ গা করছেনা। বরং তারা যুগের দোহাই দিয়ে বলছে যে, এ জামানায় এসবের প্রয়োজন রয়েছে। অর্থাৎ এরূপ বক্তব্য ও আমলের দ্বারা তারা কার্যতঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ  ও আমল বা আদর্শকে বর্তমান যামানায় অচল বলছে আর তাদেরটা প্রযোজ্য বলছে। অর্থাৎ তারা আখিরী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বর্তমান যামানায় বাতিল ঘোষণা করে প্রকারান্তরে প্রকাশ্যে নিজেরা নবী দাবী করছে।

উল্লেখ্য, বর্তমান কাদিয়ানীরা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে তাদের নবী মানছে। আর বর্তমান যামানায় উলামায়ে ‘ছূ’রা কুরআন-সুন্নাহ্র বিপরীত নিজেদের মনগড়া ফতওয়া ও আমল জারি করে নিজেরাই বর্তমানে নবী  দাবী করছে। কাজেই কাদিয়ানীদের ফিৎনা হতে এরা আরো ভয়ঙ্কর।

সম্প্রতি কাদিয়ানীদের প্রকাশনা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। এটি প্রশংসিত উদ্যোগ হলেও শুধু এতটুকুতেই এ উদ্যোগ থেমে থাকলে চলবেনা। বাতিল বাহাত্তর ফিরকার সবগুলো বিরুদ্ধেও একইভাবে উদ্যোগ না নেয়া হলে ইসলাম ও মুসলমান প্রীতির সত্যিকার নমুনা  দেখানো হবে না।

উল্লেখ্য, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শেষ নবী না মানার দরুন অর্থাৎ তাঁকে অস্বীকার ও তাঁর প্রতি বেয়াদবী করার জন্যই যেহেতু কাদিয়ানীরা কাফির। সেহেতু এরূপ আরো যেসব বেয়াদব মহল রয়েছে, যারা আখিরী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বড় ভাইয়ের মত মনে করে, যারা তাঁর মুহব্বতে মীলাদ শরীফ পাঠ ও ক্বিয়াম করাকে শেরেক বলে, যারা ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করাকে বিদয়াত বলে সেসব ওহাবী, খারিজী, জামায়াতী রাফিজী, শিয়া ইত্যাদি বাতিল ফিরকাকেও যথাক্রমে প্রতিহত করতে হবে। কাদিয়ানীদের মত এই সব নব্য কাদিয়ানী তথা উলামায়ে ‘ছু’দেরও যাবতীয় প্রকাশনা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে খিলাফত আলা মিনহাজুন নুবুওওয়ার পথে যথাযথভাবে এগিয়ে চলতে হবে। তবেই তা ইসলামের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ বলে মূল্যায়িত হবে।          স্মর্তব্য, যামানার ইমাম ও মুযাদ্দিদের সংশ্রবেই সমসাময়িক যুগে ছহীহ আক্বীদার সমঝ হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে মুযাদ্দিদে আযমের সান্নিধ্যে এসে আক্বীদা বিশুদ্ধ করতঃ নাযাতপ্রাপ্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয় 

সম্পাদকীয়