সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১২৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ পাক, সকল নিয়ামত, হামদ ও বাদশাহীর মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যই সকল ছালাত ও সালাম।

ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদের মধ্যে হজ্জ অন্যতম এবং আলাদা বৈশিষ্ঠ্য মন্ডিত। হজ্জ ব্যতীত অন্যান্য ফরজের তাৎপর্য দৃশ্যত: সহজেই অনুধাবন যোগ্য। নামাযে রুকু-সিজদার দ্বারা রাব্বুল ালামীনের কাছে বিনয়, ন¤্রতার প্রকাশ হয়; যাকাতের সহানুভুতি ও সহমর্তিতা সহজেই উপলব্ধি করা যায়; রোজার মাধ্যমে নফসানিয়াত দমনের যৌক্তিকতাও অনুধাবন করা যায়, কিন্তু হজেজর সামগ্রিক কার্যকলাপের সহজাত ফযীলত সাধারণভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দ্বারা তায়াল্লুক মা’আল্লাহর যে উত্তরণ, রমাযানের রোযায় যে কুয়ত, যাকাত আদায়ের পরও মালে নিসাবের মালিক হয়ে আল্লাহ পাক উনার ঘর জিয়ারতের যে খুলুছিয়ত তারই বিশেষ বহিঃপ্রকাশ ঘটে জামিউল ইবাদত হজ্জের ক্ষেত্রে। এরই দিকে ইঙ্গিত করে, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “হে রাববুল আলামীন হজ্জের জন্য আমি হাযির! ইখলাস ও আবদিয়াতের পরিপূর্ণ মনোভাব নিয়ে আমি হাজির।

উল্লেখ্য, সিফাত বা গুণাবলীই হচ্ছে মুহব্বতের উৎস। আর সে প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সম্পৃক্ত বাইতুললাহ এবং উনার মুহব্বতের মূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ত মদীনা মুনাওয়ারা তাই তাই সকল মুসলমানদের জন্য অন্যন্য আকর্ষিত, পবিত্র এবং সর্বাপেক্ষা শ্রদ্ধার ও মুহব্বতের স্থান। তা অবমাননা এবং তার সাথে অন্য কিছু তুলনা চরম গর্হিত কাজ।

প্রসঙ্গত: লিবিয়ার নেতা গাদ্দাফী বিবৃত, “একটি ঘরের প্রতি মুসলমানদের এতটা সম্মান প্রদর্শন অযৌক্তিক” এই বক্তব্যের সাথে আমাদের দেশের ছয় উছূলধারী তাবলীগওয়ালাদের কথিত “ইস্তিমাকে গরীবের হজ্জ” বলে আখ্যা দেয়া, “মক্কা শরীফ-এর হজ্জের পরেই বাংলাদেশের ইস্তিমার স্থান” ত্যিকার ধারণা প্রচার করা সত্যিকার অর্থে নেকীর সূরতে শয়তানী ওয়াসওয়াসারই বাস্তবায়ন।

হজ্জের পাশাপাশি কুরবানীর ক্ষেত্রেও শয়তান নেকীর ছূরতে ওয়াসওয়াসা বিস্তারে পারঙ্গমতা দেখাচ্ছে। কেটি মহল বলছে, এত জীব এভাবে নিধন না করে সে পরিমাণ ব্যয়িত টাকা দুঃস্থ-অসহায়দের দান করলে তারাও উপকৃত হয় আর পশুরাও বেঁচে যায়।

অথচ আল।লাহ পাক তিনি ইরশাদ ফরমান, “প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি যবেহর বিধান দিয়েছিলাম, যা তারা অনুসরণ করে। সুতরাং আপনার সাথে এ ব্যাপারে বিতর্কে প্রবৃত্ত হওয়া তাদের উচিৎ নয়। (সূরা হজ্জ)

উল্লেখ্য, যে বস্তু বেশি ব্যয়িত হয়, আল্লাহ তায়ালা তার উৎপাদনও বড়িয়ে দেন। গরু-ছাগল কুরবানী দেয়া হয়, আল্লাহ পাক সে অনুপাতে এগুলোর উৎপাদন বাড়িয়ে দেন। সব সময় ছুরির নীচে থাকা সত্ত্বেও দুনিয়াতে গরু-ছাগলের সংখ্যাই কুকুর-বিড়ালের সংখ্যা থেকে অনেক বেশি। গবেষণায় প্রকাশ, প্রতিবেশী দেশ ভারতে যখনই গো-হত্যা নিষিদধ হয়েছে তখনই সেখানে গরুর উৎপাদনও অপেক্ষাকৃত হ্রাস পেয়েছে।

মুলত: মুসলমান হিসেবে এই আক্বীদাই দৃঢ়ভাবে পোষণ করা উচিৎ যে, ঘাটতি দেয়ার এবং তা হতে হিফাযতের মালিক আল্লাহ পাক। যেমন ইংল্যান্ড ও কানাডার পর গেল ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে আমেরিকায় ও দেখা গিয়েছে গরুর ভয়াবহ রোগ নঙঠওঘঊ ঝচঙঘএও ঋঙজগ ঈঊচঐঅখঙচঅঞঐণ বা ম্যাড কাউ রোগ। এতে করে আমেরিকার ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের গবাদি পশু শিল্পে ধ্বংস নেমেছে।

এ ম্যাড কাউ রোগ প্রথম ধরা পড়ে ব্রিটেনে ১৯৮৬ সালে। সে সময় দেশটির ১ লাখ ৭৮ হাজার গরু আক্রান্ত হয় এই ভয়াবহ রোগে। এতে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ৩৭ লাখ  গবাদি পশু ধ্বংস করতে বাধ্য হয়। যাতে ক্ষতি হয় প্রায় পনেরশ’ কোটি ডলার। এর আগেও ১৯৮৫ সালে দেড় লক্ষ গরু মারা যায়। গত বছর সে মাসে কানাডায়ও ম্যাড কাু’র ভারিাস ধরা পড়ে ফলে ৬ মাসে তাদের ক্ষতি হয় আড়াইশ’ কোটি ডলার। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ম্যাড কাউ াক্রান্ত গরুর গোশত খেলে মানুষের মধ্যেও এই রোগ দেখা দিতে পারে। নব্বই দশকে ইুরোপে ম্যাড কাউর কারণে ১৫৩ জন মারা যায়। মানুষের মস্তিষ্ক বিকল হওয়ার রোগ ভ্যারিয়েন্ট ক্রেউটজফেল্ডট জ্যাকব ডিজিজের (বিসিজেডি) সঙ্গে ম্যাড কাউর সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অতএব, তথাকথিত পশু প্রেমিকদের এসব আপ্তবাক্য মূলত: নিখাঁদ নেকীর ছূরতে শয়তানী ওয়াসওয়াসা। আলিম নামধারীদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এ কারণেই তাদের দ্বারা হচেছ, ছবি তোলা, মেয়ে লোকের নেতৃত্বে চলা, হরতাল, লংমার্চ, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, কুশপুততলিকা দাহ, ইসলামের নামে গণতন্ত্র অনুশীলন ও নির্বাচন ইত্যাদি যাবতীয় হারাম কাজ। আর নেকীর ছুরতে শয়তানের ওয়াসওয়াসার দ্বারা ধাবিত হওয়ার পেছনে কুরআন-সুন্নাহ বাদ দিয়ে সাধারণ আক্বল আর আবেগ ও প্রবৃত্তি দ্বারা তাড়িত হওয়াই মূল কারণ।

স্মর্তব্য, হজ্জ এবং কুরবানীর উদ্দেশ্য হচ্ছে আক্বলকে সাধারণ যৌক্তিকতার পথ থেকে এবং নফসকে সহজাত প্রবণতার পথ থেকে ফিরিয়ে, শরীয়তের লাগাম লাগিয়ে, নির্ভেজাল আনুগত্যের পথে পরিচালিত করে ঈমানী জজবা জাগ্রত করা। আর এ দুরূহ কিন্তু অনিবার্য পথে চলতে হলে উলামায়ে সূ’দের পরিত্যাগ করে, মুজাদ্দিদে যামানের সংস্পর্শে আসা অত্যাবশ্যক।

মহান আল্লাহ পাক আমাদের কবুল করুন। আমীন!

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়