সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১২৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

বারে ইলাহীর তরেই সব প্রশংসা। যিনি পরম পবিত্র, প্রজ্ঞাময় পরওয়ারদিগার। তাঁর পেয়ারে হাবীব,সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বেশুমার দরূদ ও সালাম। উম্মতের মাঝে যিনি আবির্ভূত হয়েছেন সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে এবং যা ব্যাপ্ত করেছেন তাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে। স্বজনের মৃত্যুর মত বেদনাদায়ক বিষয় থেকে উৎসবের উচ্ছ্বাস প্রকাশের উচ্ছল মূহূর্তটিতেও।          উম্মতে মুহম্মদীর জন্য এমনিতর একটি উৎসবময় দিন হচ্ছে- ঈদুল ফিত্র। বলাবাহুল্য মুসলমানের ধর্মীয় উৎসবরূপে ঈদ উদ্যাপনের বিষয়টি বিভিন্ন পত্রিকায় পত্রস্থ হয়েছে। পত্রিকান্তরে মন্তব্য করা হয়েছে, “যথাযথ মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও বিপুল আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে ঈদ উদ্যাপিত।” মূলতঃ উৎসব একটি আনন্দবহ শব্দ। তবে সমাজ, শ্রেণী বা ধর্ম বিশেষে তার ভিন্নতা অতীতেও ছিল এবং এখনো রয়েছে। প্রাচীন এথেন্সে সূরাদেবতা ডায়োনিসাসের নামে সূরা পানের মাধ্যমে চলতো ডায়োনিসিয়ন উৎসব। ভৈরবীচক্র নামে ভারতে তান্ত্রিকদের সূরা পানের উৎসবের পরিচয় পাওয়া যায়। ইদানিং কালে সূরা পানসহ গান-বাজনা ও নাচ ব্যাপক হারে বিধর্মীদের বিভিন্ন উৎসব এমনকি ধর্মীয় উৎসবেও অর্ন্তভূক্তি লাভ করেছে। কাঁসার ঘন্টা, ঢাকের বাদ্য ছাড়া দূর্গা পূঁজা হয়না। এছাড়া হিন্দুদের কিছু অর্চনাতো কেবলি নাচ নির্ভর।  কিন্তু বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ইসলাম ধর্মে কোন উৎসবেই গান-বাজনা বা নাচের স্থান নেই। অথচ আক্ষেপ এই যে, বর্তমানে ঈদের দিনে সেসবের প্রচলনই আমরা দেখছি। রাস্তায় কয়েক হাত অন্তর অন্তর, গলির মোড়ে মোড়ে, বাড়ীর ছাদে বা গেটে লাউড স্পীকারে বিভিন্ন রকমের গান-বাজনা, নাচ, তার সাথে আনন্দ মিছিলসহ বিভিন্ন ধরণের হুজ্জতি খুবই আপত্তিকর অবস্থায় পৌঁছেছে। অথচ ঈদ সম্পূর্ণরূপেই মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব, যার আনন্দলাভের পরিধি শরীয়তের গন্ডীতে আবদ্ধ। তার খিলাফ, নাচ-গান ইত্যাদি হারাম বাহ্যিক উপকরণের, বিজাতীয় বা বিধর্মীয় আচরণের সাথে তা আদৌ সদৃশ ও সাযুজ্য নয়।  জানা গেছে, এবারের ঈদে প্রায় পনের হাজার কোটি টাকার কেনাকাটা হয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানী পর্যবেক্ষণে জানা যায় এ কেনাকাটা হয়েছে বল্গাহারা আঙ্গিকে। উল্লেখ্য, ইসলামী চেতনার বিপরীতে বিজাতীয় আবেদন নিয়ে পোশাক তৈরী ও কেনার মনোবৃত্তি দিন দিন বেড়েই চলছে।  পত্রিকান্তরে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, “….. এছাড়া থাইল্যান্ড, ইংল্যান্ড, চীন ও ভারত হতে আগত মেয়েদের বিভিন্ন পোশাকের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শর্ট কামিজ, ফ্রক, শটসেট, ….. ফ্যাশন সচেতন মেয়েদের জন্য রয়েছে, শর্ট কামিজ পেনডেন্ট, ওয়েষ্টার্ণ আউটফিট প্যান্ট, ফর্মাল ক্যাজুয়াল প্যান্ট, স্কার্ফ টপস ইত্যাদি। ……. পাশাপাশি ফ্যাশন সচেতন তরুণদের জন্য বেশ কিছু হিট এক্সক্লুসভ আইটেম যার মধ্যে রয়েছে, কানের রিং, ব্রেসলেট, নেকলেস, ওয়ালেট ইত্যাদি। স্মর্তব্য, মেয়েদের সংক্ষিপ্ত ও অশালীন পোশাক তথা ছেলেদের পোশাক পরিধানের পাশাপাশি ছেলেদের জন্য অলংকার পড়া শরীয়তে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও কিয়ামতের সাক্ষাত আলামত বলে বিবেচিত। কিন্তু আমাদের মুক্তবাজার  অর্থনীতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফ্যাশন সংস্কৃতির নামে বল্গাহীন প্রবাহের মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধ বিনষ্টকরণের বিপরীতে হিন্দুয়ানী, খ্রীষ্টানী তথা বেশরা কালচার সয়লাব করছে। মূলতঃ এটা বিধর্মীদের একটি অতি সূক্ষ্ম ও শক্ত ষড়যন্ত্র এবং মারাত্মক সাংস্কৃতিক ছোবল।  ‘ঈদের’ মত একটা পবিত্র শব্দকে আজ যত্রতত্র যথেচ্ছাভাবে সংযোজন করা হচ্ছে। এমনকি ৪টি চিভি চ্যানেলের ৪১টি নাটক, ১৪টি ছায়াছবি ১৭টি টেলিফিল্ম; ১০টি নতুন সিনেমা; শতাধিক অডিও, সিডি ইত্যাদির আগে যোগ করা হয়েছে ‘ঈদ আনন্দ’। অথচ এসব নাজায়িয আনন্দের মূলকথা হচ্ছে উলঙ্গপনা ও বেহায়াপনা। আর হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “লজ্জা ঈমানের অর্ধেক।” মূলতঃ ছবি নির্ভর এবং হাজারো বেশরা আবহযুক্ত এসব নিলর্জ্জ তথা অনুষঙ্গই যে মুসলমানদের ইসলাম থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিচ্ছে তা উপলদ্ধি করা আজ টিকে থাকার  জন্য প্রমাণ জরুরী হয়ে পড়েছে। তবে এটা ঠিক বর্তমান গণমানসকে এতটা অনৈসলামিক করার পেছনে একধরণের তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা যেমন দায়ী, তার চেয়ে অনেক বেশী দায়ী- আলিম নামধারী তথাকথিত ওলামার দল বা ওলামায়ে “ছূ” গোষ্ঠী। তারা ইসলামী আন্দোলনকে আজ সংকীর্ণ, স্বার্থবৃত্তভূক্ত ও মৌসুমী করে  ফেলেছেন। দেশে সুন্দরী নারী প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে কখনও কখনও তাদের হঠাৎ আওয়াজ শোনা যায়। কোন কোন স্থানে মুর্তি তৈরীর বিরুদ্ধে তাদের বিক্ষিপ্ত আন্দোলনের কথা জানা যায় কিন্তু তার বাইরে সারা দেশে সব সময়ই যে অঘোষিত সুন্দরী প্রতিযোগিতা চলছে, প্রায় সব বিপনী কেন্দ্রগুলোতেই অজস্র নারী মুর্তির অবস্থান চলছে সে ব্যাপারে তাদের আদৌ কোন অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়া নেই। এ বিষয়ে জনসমাজে তথা মুসলিমমানসে কোন সচেতনতা বা ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী তৈরীরও কোন  প্রয়াস তাদের নেই। বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা, লংমার্চ করা, হরতাল করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, ইসলামের নামে গণতন্ত্র তথা নির্বাচন করা ইত্যাদি বিদ্য়াত ও বিজাতীয় কর্মসূচীর জালে আবদ্ধ হয়ে তারা আজ নিজেদের ঈমানী চেতনা সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেছে। কাজেই এরা ইসলামী অন্দোলন তথা খিলাফতের কথা বললেও এদের দ্বারা কখনও খিলাফত বা ঈদের হাক্বীক্বী স্বাদ আস্বাদন সম্ভব নয়।  উল্লেখ্য, যমীনে খিলাফত কায়িম হলে যমীন তথা দুনিয়াই হবে বেহেশ্ত। তখন প্রতিদিনই হাছিল হবে হাক্বীক্বী ঈদ। বলাবাহুল্য, যামানার মুজাদ্দিদ-এর রূহানী পরশ বিস্তারেই সে প্রাপ্তি সম্ভব। মহান আল্লাহ্ পাক আমাদের তা নছীব করুন।

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়