সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ৩০০তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের কোটা সংস্কারের জন্য যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার সাথে, রাষ্ট্র সংস্কার কথাটা উচ্চারিত সংযুক্ত না থাকলেও এখন কোটা সংস্কার আন্দোলন আর রাষ্ট্র সংস্কার সমার্থক বলে প্রচার করা হচ্ছে। সংস্কারের রূপকার রূপে অন্তর্বতীর্ সরকারও বেশ আগ্রহী ও তৎপর। প্রধান উপদেষ্টা বলেছে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের বার্তাকে প্রতিফলিত করতে রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কার প্রয়োজন।

ইতোমধ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন জমা হয়েছে।

কমিশনগুলো এত বড় বড় সুপারিশ করেছে, সেগুলো কে বাস্তবায়ন করবে? নির্বাচিত সংসদ ছাড়া ওই কাজগুলো হবে না। সংস্কারপন্থীরা তো সংবিধানই বদলে ফেলতে বলেছে। এটা কি এই সরকার পারবে? ফলে নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই সংস্কারগুলো করা সম্ভব অনেক রাজনৈতিক দল মনে করছে।

সংস্কার ও নির্বাচন ইস্যুতে বিবাদে জড়িয়েছে ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলো। আগে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শেষ করে নির্বাচন নাকি কিছু সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন এ নিয়ে তাদের বিরোধ এখন প্রকাশ্যে। একে-অপরকে উদ্দেশ্য করে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যও দিচ্ছে অনেক নেতা।

পর্যবেক্ষক মহল মন্তব্য করছেন, সংস্কারটা কোথায় হচ্ছে, এটাই তো আমরা বুঝতে পারছি না। সংস্কার হতে গেলে তার তো একটা প্রতিফলন জনগণের জীবনের মধ্যে থাকবে। জনগণের জীবনে তার কোনো প্রতিফলন নেই।

জিনিসপত্রের দামের মধ্যে সংস্কারের প্রতিফলন নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে এর প্রতিফলন নেই। বিভিন্ন জায়গায় যে দমন-পীড়ন ও অনিশ্চয়তা, সেটার মধ্যে সংস্কারের কোনো প্রতিফলন নেই।

সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য থাকে একটি দেশের যত সম্পদ, তা কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে ছেড়ে দেওয়া। আওয়ামী স্বৈরশাসনের আমলে যে লুটেরা ধনিকশ্রেণির উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছিল, তার পেছনে এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো প্রবলভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর পরিবর্তন হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কোনো ধরনের পার্থক্য নেই। অভিজ্ঞমহল মনে করছেন, প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্তর্বতীর্ সরকারের নিজেদেরই সংস্কার প্রয়োজন।

মনের সংস্কার না হলে রাষ্ট্রের সংস্কার শুধু নামমাত্রই হবে, যা আদতে কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে না।

ইসলামের নামে রাজনীতির দাবীদার দলগুলো তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছে, সংস্কার ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে নয় তারা। তবে বিএনপিসহ আরো রাজনৈতিক দলের অবস্থান পুরো উল্টো। তারা জরুরী কিছু নামকাওয়াস্তে সংস্কার করে অতি সত্বর নির্বাচন চাচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দেশ বদলানো যাবে এবং সে বিশ্বাস রাখতে হবে। এ জন্য ভালো সরকার ও শাসক প্রয়োজন। আর সরকার ও শাসক তখনই ভালো হবে, যখন রাজনৈতিক দলগুলো ভালো হবে। কিন্তু সেই দলই যদি অসৎ হয়, তাহলে আর তা হবে না। তাই সবার আগে রাজনৈতিক দলের সংস্কার প্রয়োজন।

গত ৬ই ফেব্রুয়ারি, ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে শেখ সাহেবের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।

বাড়িটি ভাঙার পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি বিবৃতি দিয়েছে সরকার। এতে বলা হয়, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্খিত।

এর প্রতিক্রিয়ায় যে কোনো বিচার তাৎক্ষণিকভাবে করতে গেলে অবিচার হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা বলেছে, বাংলাদেশে ‘মব জাস্টিস’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে বিচার), আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া, গণপিটুনি ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণ করা হবে না। এগুলো ঘটলে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেবে এবং আইনের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অথচ এই মব জাষ্টিসের সাথে সম্পৃক্ত অধিকাংশই গত ৩১শে জুলাই/২৪, তীব্র প্রতিকূল সময়ে মার্চ ফর জাষ্টিস কর্মসূচী পালন করেছে। তাহলে মাত্র ৬ মাসের মাথায় সেই জাষ্টিসের অনেকেই কী করে মব জাষ্টিসে রূপান্তরিত হল। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেকেই বৈষম্যের স্বীকার হয়ে দল ছাড়ল। মারামারিতে লিপ্ত হল। মূলত: খোদ বৈষম্য বিরোধীদেরই মনের সংস্কার এখন ভীষণ জরুরী।

৩২ এর ভেতর থেকে ভাঙারি পণ্য হিসেবে বিক্রয় করা যাবে- এমন স্টিল, লোহা ও কাঠের নানা কাঠামো ভেঙে যে যার মতো নিয়ে গেছে।

এসব নিয়ে কী করবেন, তা জানতে চাইলে তারা বলে, ‘ভাই, বিক্রি করে দিমু। সেই টাকায় ভালোমন্দ খামু। মুরগি পাইলে মুরগি, গরু গোশত পাইলে গরু গোশত কিনে খামু। এই ছাড়া আর কিছুই না।’

এর আগে পতিত জালিম প্রধানমন্ত্রীর পলায়নের পর গণভবনে ঢুকে পড়ে অসংখ্য মানুষ। একইভাবে জাতীয় সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও লোকজন ঢুকে পড়ে। জিনিসপত্র যা ছিল, তা নিয়ে যায়।

এই তালিকায় রয়েছে পতিত জালিম প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহৃত সোফা, মাছ ধরার ছিপ, টেলিফোন, বিভিন্ন ক্রেস্ট, পুরস্কার, লকার বক্স, মগ, রেজিস্টার খাতা, বসার চেয়ার, লাইট, সুইচ, প্রিন্টার টোনার, মাটির ফুলদানি, লোহার চেয়ার, অফিস চেয়ার, হরলিক্স ডিব্বা, কাঁচের ডিব্বার মত সামান্য জিনিস এবং শাড়ী, অন্তর্বাসের মতও সংবেদনশীল জিনিস।

পতিত প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালালেও গণভবনের সম্পদে কোন সত্যিকারের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা হাত দিতে পারে না। অপরের মাল-সম্পদ বা দেশের বিন্দুমাত্র সম্পদে তারা হাত দিতে পারে না। প্রতিভাত হচ্ছে খোদ ছাত্র-জনতার নিজেদেরই মন-মানসিকতার চরিত্রের সংস্কার খুব বেশি প্রয়োজন।

এ কথা স্বীকার করে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ বর্থসূচী-২০২৫ উপলক্ষে তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপার ভাইজারদের “প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (TOT) শীর্ষক প্রশিক্ষণে

সিইসি পুরনো মন-মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলে, ‘সব সংস্কারের বড় সংস্কার হলো নিজের আত্মাকে সংস্কার করা। নিজের মনকে সংস্কার করা।’

প্রসঙ্গত, সিইসি বলেছে সবার আগে অন্তরের সংস্কার বা আত্মার সংশোধন করতে হবে। সঙ্গতকারণেই আমরা মনে করি এটা শুধু সিইসি নয় গোটা অন্তবর্তী সরকার এবং সংস্কার সংশ্লিষ্টসহ দেশের নাগরিক সবারই সম্যক উপলব্ধি করতে হবে ইনশাআল্লাহ।

আর সেক্ষেত্রে অন্তর সংস্কারকারী বা পরিশুদ্ধিকারী মূলত: ইসলাহ দানকারী মহান রুহানি ব্যক্তিত্ব তথা- হক্কানী-রব্বানী কামেল শায়েখ, উনারই মুখাপেক্ষী হতে হবে। বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে। আত্মাকে সংশোধনের জন্য কলবী যিকির জারি তথা ইলমে তাছাওউফ শিক্ষা করতে হবে ইনশাআল্লাহ।

ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শির্দ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র আত্মার সংশোধন লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। আমীন।

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়