সব প্রশংসা মহা মহিম আল্লাহ্ পাক-এর জন্য। মহান রমাদ্বান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরয করা হয়েছিল।”(সূরা বাকারা)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে মানবজাতি! একটি মহান ও বরকতপূর্ণ মাস তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করার জন্য হাজির হয়েছে।”
চন্দ্র মাসের পরিক্রমায় রমাদ্বান শরীফ নিয়ে আসে অনেক ফযীলতের অনুষঙ্গ। রমাদ্বান শরীফ রাতের শেষভাগে উঠে সাহ্রী গ্রহণের উদ্দীপনা, সারাদিন রোযা রেখে মাগরিবে ইফ্তারী করার খুশী, কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের মোহিত আবেশ, যিকরুল্লাহ্র প্রশান্তি, দরূদ শরীফ পাঠের ফযীলত, যাকাত দানের বরকত, ফিত্রা আদায়ের এতমিনান, ইতিকাফের উদ্যম, শব-ই-ক্বদর লাভের ব্যাকুলতার আবহে এক অভাবনীয় রহ্মত, বরকত ও নাযাতের প্রাচুর্য।
যার প্রতিফলন আমরা ধর্মপ্রাণদের মাঝে স্বতঃস্ফুর্তভাবে লক্ষ্য করি। যথাসময়ে সাহ্রী শেষকরণ, সময় স্বল্প হলে সাহ্রী সংক্ষিপ্তকরণ, আদৌ সময় না পেলে বিনা সাহ্রীতেই রোযা পালন, দাঁত পরিষ্কারে সতর্কতা অবলম্বন, ওযু-গোছলে পানি না পানের সাবধানতা পালন, ইচ্ছাকৃত ধোয়া গ্রহণ থেকে হিফাযতের প্রচেষ্টা ইত্যাদি সবই রোযাকে যথাযথভাবে পালনের তথা তার অঙ্গহানি না করার এক বাঞ্ছিত প্রচেষ্টার নিদর্শন। আমরা মনে করি রোযা পালনে এ সতর্ক প্রয়াস কেবল রোযার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিৎ নয়, আমাদের সামগ্রিক ইসলামী কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে এই মূল্যবোধের প্রতিফলন অপরিহার্যভাবে ঘটানো উচিৎ। কার্যতঃ তা না করার কারণে আমরা প্রতারিত হচ্ছি সর্বত্র। বিশেষতঃ ইসলামী আন্দোলন নামক স্পর্শকাতর বিষয়টিতে এ প্রতারণা সুস্পষ্টভাবে পরিস্ফুট।
মূলতঃ ইসলামী আন্দোলন, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী সকল মুসলমানেরই প্রাণ স্পন্দন। কিন্তু কথিত ইসলামী আন্দোলনকেই যখন আন্দোলিত করা হয় অনৈসলামের পথে, কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী মাওসেতুং-এর লংমার্চ অভিযাত্রায়, হিন্দুদের কুশপুত্তলিকা দাহ ক্রিয়ায়, কট্টর হিন্দু গান্ধীর হরতাল পালনে, ইহুদী-নাছারার ব্লাসফেমী, মৌলবাদ আর গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়, তখন রোযার শিক্ষা- ‘ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মীর আদর্শের খিলাফকরণের’- প্রেক্ষিতে তাকে কি ইসলামী আন্দোলন বলা যায়? বরং এ আন্দোলন কি তখন ঐরূপই হয়ে যায়না, যেমনটি হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “রোযা ঢাল স্বরূপ, যতক্ষণ পর্যন্ত রোযাদার নিজেই তা ফুটো করে না দেয়।” (নাসাঈ শরীফ) ইহুদী-নাছারার আদর্শে তথা হারাম পথে পরিচালিত এসব তথাকথিত ইসলামী আন্দোলন কি তখন ঐরূপই হয়না যেমনটি হয়, সারাদিন রোযা রেখে হারাম মাল দ্বারা সাহ্রী ও ইফতারী করলে অথবা সুব্হে সাদিকের পরে খেয়ে, ইশার সময় ইফতার করার মত খেয়াল-খুশীনুযায়ী চললে। যেমন হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “অনেক রোযা পালনকারী এমন, যাদের ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকাই সার হয়। তদ্রুপ অনেক ইবাদতকারী এরূপ যাদের রাত কাটানোই সার হয়।” (বোখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী শরীফ)
বলার অপেক্ষা রাখেনা আজকে তথাকথিত ইসলামী নেতারা ইসলামের নামে শুধু রাজনীতি করছে। আর ইসলামের নামে করলেও মূলতঃ তারা ইসলামকেই বাদ দিয়ে চলছে। তারা নির্বিচারে ছবি তুলছে, ভিডিও করছে, মিটিং-মিছিলের নামে প্রকাশ্যে নামায ত্যাগ করছে, মেয়ে লোকের সাথে উঠা বসা করছে, নারী নেতৃত্ব জায়িয করছে। আর কুরআন সুন্নাহ্য় স্পষ্টভাবে, শত-সহস্রবার ঘোষিত এসব হারাম কাজকে তারা মনগড়াভাবে জায়িয বলে প্রকারান্তরে নিজেদের নতুন নবী দাবী করে চলছে। ‘বর্তমান সময়ের প্রয়োজনে ঐসব হারাম কাজ কেবল হালালই নয় বরং ইসলামিক, মূলতঃ এ বক্তব্যের দ্বারা তারা আল্লাহ পাক-এর কালাম তথা কুরআন শরীফকে টেক্কা দিয়ে কথা বলছে। মহান আল্লাহ পাক এদের প্রসঙ্গে বলেন, “আর তাদের মধ্যে একদল রয়েছে যারা বিকৃত উচ্চারণে মুখ বাঁকিয়ে কিতাব পাঠ করে যাতে তোমরা মনে কর যে, তারা কিতাব থেকেই পাঠ করছে। আর তারা যা তিলাওয়াত করছে তা আদৌ আল্লাহ পাক-এর কিতাব থেকে নয়। যদিও তারা বলে যে, এসব কথা আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে আগত। অথচ এসব কথা আল্লাহ পাক-এর কিতাবের কথা নয়। আর তারা জেনে শুনেই আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যারোপ করছে।” (সূরা আলে ইমরান/৭৮)
উল্লেখ্য, এইসব মিথ্যাবাদী ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক সুবিধা অন্বেষী নামধারী আলিমরাই ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু। এরাই উলামায়ে ‘ছূ’।
মূলতঃ এসব উলামায়ে ‘ছূ’দের মিটিয়ে দিতে হলে অনিবার্যভাবে চাই মাহে রমাদ্বানের সওগাত ‘তাক্বওয়ার শিক্ষা’ ও রূহানি শক্তি। আর যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যমের নেক ছোহবতের মাধ্যমেই সে কাঙ্খিত নিয়ামত বাঞ্ছিতভাবে হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ্ পাক আমাদের তা নছীব করুন। (আমিন)