সব প্রশংসা মহান আল্লাহ্ পাক-এর জন্য। যিনি কোন কিছুই ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করেননি। সকল সালাত ও সালাম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। যার উসীলায় উম্মতে মুহম্মদীগণ পেয়েছেন বিশেষ মাস, খাস দিন তথা মুহূর্ত। হারাম মাসসমূহের মাঝে রজবের পরেই শা’বান। শা’বানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত হচ্ছে শবে বরাত। এ রাতের ফযীলত, নাযাত ও বরকতের কথা, দোয়া কবুলের বা দোয়া দ্বারা স্বীয় তক্বদীর পরিবর্তন করার কথা প্রায় সকলেই অবগত। তবে সে রাতেও গুণাহ্ মাফের প্রতি কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে বা বিশেষ তওবার কথা যুক্ত করা হয়েছে। তাই এসব পাপীদের সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। কারণ তারা নিজেরা যেমন নিজেদের জন্য লা’নত, তার সাথে তারা সমাজেও অশান্তির কারণ ঘটায়। হাদীছ শরীফে এদেরকে বলা হয়েছে, নাম্মাম (চোগলখোর)। যারা ভাল লোকদের নামে, ওলী আল্লাহ্গণের তথা যামানার মুজাদ্দিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে, অপবাদ রটনা করে। এদিকে ইঙ্গিত করে হাদীস শরীফে ব্যক্ত হয়েছে, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ বান্দাগণের মধ্যে উত্তম বান্দা হচ্ছে তাঁরা, যাঁদেরকে দেখলে হৃদয়ে আল্লাহ্ পাক-এর কথা স্মরণ হয়। আর আল্লাহ্র বান্দাগণের মধ্যে খারাপ বান্দা তারা, যারা চোগলখোরী ও কুটনামী করে বেড়ায়।” (আহমদ, বাইহাক্বী) তবে উল্লেখ থাকে যে, তাবত ধর্মব্যবসায়ী আলিমরাও যদি যামানার মুযাদ্দিদের বিরুদ্ধে একজোট হয়, তারা যদি তাদের বিরোধীতার মাত্রা আকাশ সীমা পর্যন্ত পৌঁছায়, তারা যদি নির্যাতনের রোলার সারা যমীনে বিস্তার করে তবু যামানার ইমাম ও মুযাদ্দিদ চিন্তিত নন, শঙ্কাগ্রস্থ নন, পেরেশানীগ্রস্থ নন। কারণ, হক্ব ও নাহক্বের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে সৃষ্টির শুরু হতেই। প্রথম মানব, প্রথম নবী, প্রথম রসূল হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম সৃষ্টির পর হতেই ইবলিস তাঁর শত্রুতা করেছিল, অপবাদ রটনা করে বলেছিল, ‘হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর চেয়ে সে ভাল।’ (নাউযুবিল্লাহ্) অর্থাৎ দুষ্টরা দুষ্টামি করবে এটাই স্বাভাবিক। আবু জাহিল, আবু লাহাব গং আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মুবারকে নামাযরত অবস্থায় উটের নারী-ভুড়ি চাপিয়ে দিয়েছে, তায়েফের ময়দানে বৃষ্টির মত ইট-পাটকেল মেরেছে। পাগল, যাদুকর, ধর্মত্যাগী ইত্যাদি অপবাদ দিয়েছে। পাশাপাশি অর্থ-রাজত্ব-নারী ইত্যাদি সবকিছুর প্রলোভন দেখিয়েছে। জবাবে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা যদি আমার এক হাতে চাঁদ এবং অপর হাতে সূর্য এনে দাও তবু আমি সত্য দ্বীন হতে এক চুল বিচ্যুত হবোনা।” ইসলামের পরিভাষায় এই অভিব্যাক্তির নাম ইস্তিকামত। বলাবাহুল্য, যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদ, ইমামুল আইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ্, কুতুবুল আলম, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী নুবুওওয়াতের গুণে সমধিক গুণান্বিত থাকায় তিনি নিজেও বেমেছাল ইস্তিকামতের অধিকারী। সুতরাং উলামায়ে ‘ছূ’ তথা বিরোধীতাকারীদের এ ধারণা করার অবকাশ নেই যে, তারা যেখানে অপপ্রচারের বিষবাষ্প ছড়িয়ে ধুম্রজাল তৈরী করেছে অথবা বৃষ্টির মত প্রস্তর বর্ষণ করেছে, দুনিয়াবী দৃষ্টিতে যেখানকার অবস্থা বিশেষ প্রতিকুল, জীবনের নিরাপত্তা যেখানে বাতাসের মত ঠুনকো সেখানে বুঝি যামানার ইমাম ও মুজাদ্দিদের তাজদীদের কাজ থমকে দাঁড়াবে। বরং উলামায়ে ‘ছূ’দের চোখ কপালে উঠলেও খোদায়ী ইচ্ছায় ও মদদে আবারও তিনি সেখানে যাবেন, মাহ্ফিল করবেন, উলামায়ে ‘ছূ’দের মুখোশ উন্মোচন করবেন, হক্ব মত ও পথ প্রতিষ্ঠা করবেন, পথহারা মানুষের ঈমান নবায়ন করবেন, সুন্নতের পুনঃ প্রচলন ঘটাবেন, পুরো কামিয়াবীর মর্যাদায় মর্যাদাবান হবেন।
মূলতঃ যামানার মুজাদ্দিদ সার্থক মেছদাক ঐ আয়াত শরীফের, “তোমরা চিন্তিত হয়োনা, তোমরা পেরেশারীগ্রস্থ হয়োনা, তোমরাই কামিয়াব হবে যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাক।” “যারা মাখলুকাতকে ভয় করেনা, শুধুমাত্র আল্লাহ্ পাককে ভয় করে তাদের প্রতি নিয়ামত পরিপূর্ণ করা হবে এবং তাদেরকে অবশ্যই হিদায়েত দেয়া হবে।” “নিশ্চয়ই যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ্ পাক, অতঃপর তাতেই ইস্তিকামত থাকে, তাদের কাছে ফেরেশ্তা অবতীর্ণ হয় এবং বলে,‘ তোমরা ভয় করোনা, চিন্তা করোনা এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোন। ইহ্কাল ও পরকালে আমরা তোমাদের বন্ধু।” অতএব, প্রতিভাত হয় যে, যামানার মুজাদ্দিদ এবং তার তাজদীদী কাজে ফেরেশ্তা নাযিল হওয়া, গায়েবী সাহায্য আসার বিষয়টি কুরআন শরীফেই বিবৃত ও স্বীকৃত। স্মর্তব্য যে, উলামায়ে ‘ছূ’রা অতি শীঘ্রই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। যামানার মুজাদ্দিদের বিরোধীতা করে করার কারণে- তারা বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা, লংমার্চ করা, হরতাল করা, মৌলবাদ দাবী করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া ইত্যাদি হারাম, কুফরী কাজে লিপ্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে অতি শীঘ্রই খোদায়ী গযব তাদের গ্রেফতার করবে। যেমন, কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আপনার শত্রুরা নির্বংশ, নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।” অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, “সত্য এসেছে, মিথ্যা দূরীভূত হয়েছে। নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই মিথ্যা দূরীভূত হওয়ার যোগ্য।”
মূলতঃ মুজাদ্দিদে যামানই এ সত্যের ধারক-বাহক। মহান আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে তাঁর সোহবতের মাধ্যমে সত্য পথ ও মতের অন্তর্ভুক্ত করুন। পবিত্র শাবান মাসের উছীলায় পরম করুনাময়ের কাছে এটাই আমাদের আন্তরিক চাওয়া।