সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৯৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হতে যাচ্ছে মুসলিমদের বড় ধর্মীয় ঈদ ঈদুল আযহা। সৌদি আরব, আরব-আমিরাত সহ মধ্যপ্রাচ্য তথা মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশিরভাগ মুসলিমপ্রধান দেশেই ধুমধামে ঈদ উদযাপন করছেন মুসলিমরা। শুধু আনন্দ নেই ফিলিস্তিনিদের মনে। ঈদের দিনেও পেটে ক্ষুধা নিয়ে, প্রতি মুহূর্তে প্রাণ হারানোর শঙ্কা নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।

আল জাজিরার খবর থেকে জানা গেছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার রাফা শহর থেকে প্রায় ৮ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। দক্ষিণ গাজার এই শহরে ইসরায়েল হামলা শুরু করলে আত্মরক্ষায় তারা অন্যত্র সরে যান।

বাংলাদেশসহ মুসলমান প্রধান দেশগুলো সবসময় ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন এবং ‘নিপীড়িত’ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আসলেও বড় ধরণের সংকট এলে পুরো মুসলিম বিশ্বকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে খুব একটা শক্ত অবস্থান নিতে দেখা যায় না।

এমনকি মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি কিংবা আরব লীগও ইসরায়েলের সাথে সংকটকালে ফিলিস্তিনের পক্ষে খুব জোরালো কোন ভূমিকা নিতে পারছেন না।

“পশ্চিমাদের চটিয়ে কেউ নিজের ক্ষমতাকে দুর্বল করতে চায় না। মিসর, তিউনিসিয়ার মতো দেশও এর বাইরে নয়। সবাই মনে করে সোচ্চার হলেই চাপ আসবে। বরং ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ইসরায়েলের সাথে তাদের সমঝোতা জরুরি”।

মুসলিম বিশ্বের নেতাদের প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত হতাশাজনক। তারা শুধু বিবৃতি দিয়েই তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানরা যতটুকু প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন তা করছেন কেবল দেশের নাগরিকদের ক্ষোভ প্রশমনের উদ্দেশ্যে। একদিকে ভীরুতা অন্যদিকে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই তারা আজ গাজায় মুসলমান ভাইবোন ও শিশু-সন্তানদের নির্বিচারে শাহাদাত কাণ্ড তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন। ইসরাইল নামক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম বিশ্বের একেবারে পেটের মধ্যে অবস্থিত। তারপরও মুসলিম দেশগুলো তাই ইসরাইলের সামরিক শক্তির ভয়ে হাত গুটিয়ে থাকে। তার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণেও মুসলিম দেশগুলো ভীতসন্ত্রস্ত। বিভিন্ন মুসলিম দেশের সরকার নানাভাবে আমেরিকা এবং ইসরাইলের আর্থিক সুবিধার ভাগিদার। তারা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে চায় না। এসব সুবিধাভোগী নেতারা দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। জর্দান ও মিসর ইতোমধ্যে ইসরাইলের সাথে পূর্ব-ভূমধ্যসাগরের বিশাল মজুদের তেল ও গ্যাস আহরণের জন্য বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করছে। অর্থনৈতিক স্বার্থেই বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরাইলের সাথে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’ নামে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। (নাউযুবিল্লাহ)

আরব দেশগুলোর আরেকটি বড় ভয় হলো রাজতন্ত্রের প্রতি হুমকি। মধ্যপ্রাচ্যে ‘হামাসের’ মতো একটি মুজাহিদ গোষ্ঠী সফলতা লাভ করলে এর জিহাদের ঢেউ তাদের রাজতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রকে তছনছ করে ফেলতে পারে। ২০১১ সালের আরব বসন্তের ঘণঘটা মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদেরকে এখনো তাড়া করে বেড়ায়।

ফিলিস্তিনিদের হত্যার প্রতিবাদে শক্তভাবে দাঁড়ানোর অর্থ ইসরাইল-আমেরিকার সাথে যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়া নয়। সামরিক শক্তির বাইরেও মুসলিম বিশ্বের হাতে রয়েছে অত্যন্ত শক্তিশালী ‘নরম অস্ত্র’। প্রথমেই তারা ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারতেন। এরপর ইসরাইলের পণ্য বর্জনের ডাক দিলে বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের বাজার তারা হারাতে পারে। যা হতে পারে ইসরাইলের ওপর অত্যন্ত কঠিন ও অসহনীয় চাপ। সৌদি আরবের তেলসম্পদও অত্যন্ত শক্তিশালী অস্ত্র। এই তেল অবরোধ খুবই কার্যকর হতে পারত। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ছাড়া প্রায় অনেক দেশেই মার্কিন সামরিক স্থাপনা রয়েছে। এই দেশগুলো ওইসব মার্কিন সামরিক স্থাপনা সরিয়ে নিতে অবশ্যই মার্কিনিদের চাপ সৃষ্টি করতে পারত।

অথচ শুধু চাপ প্রয়োগই নয় ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে জিহাদী মুসলমান গাজাবাসীর প্রতি সহমমীর্তা প্রকাশ করে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ বা জিহাদে সামিল হওয়াই ঈমান ও ইসলামের একান্ত দাবী। এ মুহুর্তে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফরজ কাজ।

ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শির্দ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র এই অনুভূতি আমলের যোগ্যতা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। আমীন।

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়