সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক-এর জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “সময়কে আমি মানুষের মধ্যে বিভিন্নরূপে আবর্তন করে থাকি।” মূলতঃ সৃষ্টির সূচনা থেকেই চলছে পালা বদলের প্রক্রিয়া। তবে ওহীক নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত পরিবর্তন সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ, বেঠিক ও নিষ্ফলা বরং বিবিধ ফিতনা-ফাসাদের কারণ।
প্রসঙ্গতঃ দেশের রাজনৈতিক পট ও প্রক্রিয়ার সংস্পর্শে মানুষের কাঙ্খিত স্বস্তিবোধ মোটেই আসেনি। বিশেষতঃ কথিত গণতান্ত্রিক কাঠামো ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যেসব সরকার এসেছে সেগুলোর ব্যর্থতা ও বিভীষিকা সম্পর্কে মানুষের ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া এখন তুঙ্গে।
সাধারণ মানুষ এ যাবত গণতান্ত্রিক রাজনীতির যে ধারা লক্ষ্য করেছে তাতে একাংশের অভিব্যক্তি- গণতান্ত্রিক রাজনীতি নোংরা জিনিস, সাধারণভাবে এ রাজনীতিতে ভাল, সৎ, শিক্ষিত লোক টিকতে পারে না। এতে কোন নীতি নেই। আজকে এ স্বার্থের প্রয়োজনে ওকে নিচ্ছে, স্বার্থ ফুরালে কালকে ত্যাগ করছে।
পাশাপাশি সব আমলে সরকার দলীয় লোকদের সীমালঙ্ঘন, নিন্দনীয় দৌরাত্ম্য ও দাপট, ক্ষমতার অপব্যবহার ও আত্মসাৎ, বিরোধীদলীয় লোকদের ঢালাওভাবে জেল-জুলুম, নিপীড়ন, আর সন্ত্রাস-দুর্নীতিরোধে ব্যর্থতা, দায়িত্ব পালনে নিদারুন গাফলতি ও অবহেলা সাপেক্ষে দাবীকৃত সব গণতান্ত্রিক সরকার সম্পর্কে জনগণ গভীর তিক্ত অভিজ্ঞতা লাভ করেছে।
এত কিছুর পরও সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের যে প্রক্রিয়াকে অবলম্বন করে আছে তা নির্বাচন। অথচ এ কথা আজ বহুল পরীক্ষিত যে, বর্তমান গণতান্ত্রিক নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে ইংরেজী ভাষায় তিনটি এম অদ্যাক্ষর বিশিষ্ট শব্দ; মানি, মাসলম্যান, মিডিয়া। যার সরল ব্যাখ্যা দাঁড়ায়, কালো টাকা, ক্যাডার আর অসৎ-প্রচারণা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, তত্ত্বাবধায়ক সরকারও সাধারণ মানুষের এই সাধারণ অনুভূতি দ্বারাই আবেষ্টিত, আবর্তিত ও পরিচালিত হচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার এক্ষেত্রে তত বেশি দায়ভার বহন করতো না যদি না তারা ‘সংস্কার’ ‘সংস্কার’ শব্দটা মুর্হুমুহু উচ্চারণ না করতেন। এবং কথিত ‘সংস্কারটাকে’ই তাদের সরকারের বৈশিষ্ট্য ও কৃতিত্ব বলে দাবী না করতেন।
সংস্কার কর্মসূচী হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মূলতঃ নতুন কিছুই করেননি। নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নের দাবী এর আগেও বহুবার করা হয়েছে। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারও সে দাবী করছেন। ‘জন্ম নিবন্ধন’ কর্মসূচী বহু পূর্বেই দেশে চালু হয়েছে। আর বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় পরিচয়পত্রের কথা বলছেন। মূলতঃ বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথিত সংস্কারের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র একটি বিষয়ই নতুন করে সংযুক্ত হচ্ছে তা হলো ছবি। সুতরাং কেবলমাত্র এই ‘ছবি’র ব্যবহারের প্রেক্ষিতেই বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংস্কার ‘সংস্কার’ এতসব বুলি কপচানের কি যথার্থতা রয়েছে তা সমঝদারদের বোধগম্য নয়।
এদিকে ছবি সংক্রান্ত জটিলতা তৈরী হচ্ছে অনেক। একজনের ছবির পিছনে আরেকজনের নাম সংযুক্ত; ধর্মপ্রাণ প্রায় সবারই ছবি তুলতে অনীহা। পর্দানশীন মহিলাদের ছবি তুলতে প্রচণ্ড অনিচ্ছা; ইত্যাদির পাশাপাশি নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে ছবি তুলতে নিষ্ক্রিয়তা- এসব কিছুই যে ছবিযুক্ত ভোটার কার্ডের সংস্কারকে ইতোমধ্যে গভীর প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেবলমাত্র বর্তমান জরুরী অবস্থার প্রেক্ষিতেই বিষয়টি সম্পর্কে গণমুখে প্রকাশ পাচ্ছে না।
ইতিহাসের সূত্র এই যে, কিছু লোককে কিছু সময়ের জন্য বোকা বানিয়ে রাখা যায়। কিন্তু সব লোককে সব সময়ের জন্য ধোঁকা দিয়ে রাখা যায় না। ভয়ের আবহে জনগণকে দাবিয়ে রাখা গেলেও জনগণের অনুভূতিকে বিলুপ্ত করা যায় না। ‘রাজা তো ন্যাংটা’ অবোধ শিশুর সে উচ্চারণ মুহূর্তের মধ্যে জনগণের মাঝে দাবানলের মত প্রজ্বলিত হবার পিছনে কারণ সেটাই। আওয়ামুন্ নাছ তথা সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া প্রতিমুহূর্তেই পুঞ্জীভূত হতে থাকে। একটি অগ্নিকণিকাই তার বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। কথাটি সবার জন্যই স্মর্তব্য।
সংস্কারবিষয়ক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্মসূচীকে ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা ঝুলাবে কে’ এই প্রবাদের সাথে তুলনা করলে অভ্যুক্তি হয় না। বক্তব্যের সুবিধার্থে মেনে নেয়া গেল ভোটার আইডি কার্ড প্রকল্প প্রর্ণাঙ্গরূপে সফল। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি কখনো ভেবে দেখেছে যে, ভোটার আইডি কার্ড নির্ভূল হলেও যে ভোটার ভোট দিবে সে যে নির্ভূলভাবে ভোট দিবে এই নির্ভূল নির্ণয়করণের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিছুই করেনি অথবা তার কিছুই করার নেই।
এদিকে যেসব রাজনৈতিক দলের নেতাদের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতির দায়ে আটকগ্রস্ত করেছে জরুরী অবস্থা উঠে গেলে সে নেতারা অথবা তার নিম্নস্তরের অনুচররাই আবার প্রার্থী হবেন। এদিকে নির্ভুল ভোটার তালিকার ভোটাররা তাদেরকেই আবার ভোটা দিবেন।
সুতরাং পোশাকবিহীন রাজার মতই তত্ত্বাবধায়ক সরকারও যে পোশাকবিহীন সংস্কারের পিছনে ছুটছেন আওয়ামুন্ নাছ তথা সাধারণ মানুষের এ অনুভূতি উচ্চারিত হচ্ছে না বটে তবে গভীরে পুঞ্জীভূত যে হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটা কথিত সরকার বটে চিকিৎসক তো নয়। আর প্রচলিত সমাজ ও রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিও কোন টিউমার নয়। সুতরাং দুর্নীতি ও রাজনীতিকে দক্ষ চিকিৎসকের মত টিউমার অপারেশনের ন্যায় কেটে ফেলে দিবেন- এমন ধারণা সর্বৈব ভুল।
মূলতঃ এ ভুলের শিকড় আরো গভীরে। ‘সংস্কার’ ‘সংস্কার’ এ সময়ে বহুল আলোচিত শব্দ। কিন্তু এ সংস্কারের যোগ্য কে? হাদীছ শরীফে কিন্তু তার জবাব রয়েছে। “আবূ দাউদ শরীফের” হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক এই উম্মতের মাঝে প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুতে একজন মুজাদ্দিদ পাঠাবেন। যিনি দ্বীনের মাঝে তাজদীদ করবেন।”
বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান যামানায় আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হচ্ছেন হাদীছ শরীফে বর্ণিত সে মহান মুজাদ্দিদ। তিনি বেমেছালভাবে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে রূহানীভাবে তাওয়াল্লুকযুক্ত, গায়েবী মদদপ্রাপ্ত। তাঁর রয়েছে বেমেছাল ইলমে লাদুন্নী ও ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ দেয়ার ক্ষমতা।
মূলতঃ তাঁর ছোহবতে ও তায়াজ্জুহ লাভেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পেতে পারে সংস্কারের প্রজ্ঞা ও যোগ্যতা।