সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৭০তম সংখ্যা | বিভাগ:

 বারে এলাহীর তরেই সব প্রশংসা। যিনি পরম পবিত্র, প্রজ্ঞাময় পরওয়ারদিগার। তাঁর পেয়ারে হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বেশুমার দরূদ ও সালাম। উম্মতের মাঝে যিনি আবির্ভূত হয়েছেন সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে এবং যা ব্যাপ্ত করেছেন তাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে। স্বজনের মৃত্যুর মত বেদনাদায়ক বিষয় থেকে উৎসবের উচ্ছাস প্রকাশের উচ্ছল মুহূর্তটিতেও। উম্মতে মুহম্মদীর জন্য এমনিতর একটি উৎসবময় দিন হচ্ছে- ঈদুল ফিত্র। যা পালিত হয় পহেলা শাওয়ালে।  মূলতঃ উৎসব একটি আনন্দবহ শব্দ। তবে সমাজ, শ্রেণী বা ধর্ম বিশেষে তার ভিন্নতা অতীতেও ছিল এবং এখনো রয়েছে। প্রাচীন এথেন্সে সূরাদেবতা ডায়োনিসাসের নামে সূরা পানের মাধ্যমে চলতো ডায়োনিসিয়ন উৎসব। ভৈরবীচক্র নামে ভারতে তান্ত্রিকদের সূরা পানের উৎসবের পরিচয় পাওয়া যায়। ইদানিং কালে সূরা পানসহ গান-বাজনা ও নাচ ব্যাপক হারে বিধর্মীদের বিভিন্ন উৎসব এমনকি ধর্মীয় উৎসবেও অন্তর্ভুক্ত লাভ করেছে। কাঁসার ঘণ্টা, ঢাকের বাদ্য ছাড়া দূর্গা পূঁজা হয়না। এছাড়া হিন্দুদের কিছু অর্চনাতো কেবলি নাচ নির্ভর।  আক্ষেপ এই যে, বর্তমানে ঈদের দিনে সেসবের প্রচলনই আমরা দেখছি। রাস্তায় কয়েক হাত অন্তর অন্তর, গলির মোড়ে মোড়ে, বাড়ীর ছাদে বা গেটে লাউড স্পীকারে বিভিন্ন রকমের গান-বাজনা, নাচ, তার সাথে আনন্দ মিছিলসহ বিভিন্ন ধরণের হুজ্জতি খুবই আপত্তিকর অবস্থায় পৌঁছেছে। অথচ ঈদ সম্পূর্ণরূপেই মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব, যার আনন্দলাভের পরিধি শরীয়তের গন্ডীতে আবদ্ধ। তার খেলাফ, নাচ-গান ইত্যাদি হারাম বাহ্যিক উপকরণের, বিজাতীয় বা বিধর্মীয় আচরণের সাথে তা আদৌ স্বদৃশ ও সাযুজ্য নয়। হাদীছ শরীফে পাওয়া যায়, মদীনায় পূর্বে প্রচলিত শরৎ ও বসন্ত পূর্ণিমায় উদ্যাপিত নওরোজ ও মিহিরজান নামক খেল-তামাশার উৎসবকে বাদ দিয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের জন্য ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আয্হার ব্যবস্থা করেন। সুতরাং সে ঈদ যখন পালিত হয় গান-বাজনা, নাচসহ বিভিন্ন বেদ্য়াতী ঢংয়ে, তখন স্পষ্টতই বলতে হয় যে, সেসব কিছুই আমাদের ঈদ তথা ধর্মীয় উৎসবের মর্যাদাকে চরমভাবে ক্ষুণœকরছে। আমরা তাই এ ব্যাপারে সকলের সচেতনতা কামনা করি। উল্লেখ্য কোন কোন মহল মনে করেন যে, মুসলমানরাই যেহেতু ওসব করছেন, তাই সেটা ইসলামী। আবার কেউ কেউ বলতে চান, তথাকথিত ঐসব লৌকিক আচার এত গভীরে প্রবেশ করেছে যে, আজকে জোর শুদ্ধি অভিযান চালিয়েও তা থেকে তাদেরকে জুদা (আলাদা) করা সম্ভব নয়। আমরা মনে করি এসবই অমূলক কথা। স্মর্তব্য যে, মুসলমান যা করে, তার সবই শরীয়তের বহিঃপ্রকাশ নয়, যদি না সেভাবে তা করা হয়ে থাকে। আর খোদা তায়ালা অবশ্যই মু’মিনদের কামিয়াব করেন। তবে এটা ঠিক, বর্তমান পরিস্থিতিকে জটিল করার পেছনে একধরণের বল্গাহীন বুদ্ধিজীবিরা যেমন দায়ী, তার চেয়ে অনেক বেশী দায়ী- আলেম নামধারী তথাকথিত ওলামার দল বা ওলামায়ে “ছূ”র গোষ্ঠী। উল্লেখ্য, ঈদের ভিত্তি যে রোযা সে সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, যে মিথ্যা আর অশ্লীলতা ত্যাগ করতে পারল না তার রোযা রাখার কোন দরকার নেই। মূলতঃ ইসলামের মূল শিক্ষাই- অশ্লীলতা বিরোধী তথা পর্দা পালন। কিন্তু ব্রিটেনের ব্লেয়ার, জ্যাক স্ট্র থেকে দেশীয় উলামায়ে ছূ’রা ও ঢাবির চান মিয়ার মত তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা এক যোগে ইহুদী মদদে নিজেরা বেপর্দা হচ্ছে এবং পর্দার বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি ইহুদীরা খুব সুক্ষ্ম কৌশলে ঈদ  ফ্যাশন তথা ঈদের পোশাকের নামে চরম বেপর্দার ব্যাপক বিস্তার ঘটাচ্ছে। ‘দৈনিক আল ইহসান’ সূত্রে জানা যায় যে, এবার মেয়েদের জন্য ব্যাপক হারে বিক্রী হয়েছে স্কার্ট। আবার স্যালোয়ার কামিজকে আরো বেপর্দা ও সংক্ষিপ্ত করে নতুন প্রচলন হয়েছে শর্ট কামিজের। এমনকি এখন মেয়েদের জন্য গেঞ্জী-প্যান্ট, শার্ট-প্যান্ট, টপস প্যান্ট ইত্যাদি পোশাকও দেদারছে বিক্রী হচ্ছে। এছাড়াও সাধারণের পোশাক শাড়ী-কাপড়ও এত পাতলা বের হচ্ছে যে, পর্দানশীনরা পড়ার মত কাপড় পেতে হিমশিম খাচ্ছেন। অতঃপর উপায়ন্তর না দেখে তাই ক্রয় করছেন।  প্রসঙ্গতঃ হাদীছ শরীফে সাবধান করে দেয়া হয়েছে, “আখিরী যামানায় মানুষ এমন পাতলা কাপড় পড়বে যে, তাদের সবই দেখা যাবে।” কিন্তু এতসব বেহায়াপনা ও অনৈসলামী কর্মকা-ের পরও ধর্মব্যবসায়ী মাওলানা তথা উলামায়ে ছূ’দের বিন্দু মাত্র প্রতিক্রিয়া, প্রতিবাদ ও প্রতিকার নেই। তারা একেবারেই নিথর, নিস্তেজ ও নিষ্ক্রিয়। অথচ তাদের অমিত তেজা উদ্যম যেন ঐ মাওসেতুং এর লংমার্চে, গান্ধীর হরতালে, প্রোটেস্ট্যান্টদের মৌলবাদে, ইহুদী নাছারার ব্লাসফেমী আইনে আর বেপর্দায়, ছবি তোলায়, নির্বাচনে, ভোট ও গণতন্ত্রে। প্রসঙ্গত: বিশেষভাবে উল্লেখ্য, এদেশের তাবৎ তথাকথিত ইসলামপন্থীদের অতীত ইতিহাস হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেখা যায় যে, ইসলামী আন্দোলনের নামে তারা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলন এসব কিছুই এযাবত করে আসছে। তাতে করে তাদের লক্ষ্য থাকছে ব্যক্তি বা দলের বিরোধিতা। এবং এ বিরোধীতাকেই মূখ্য মনে করার কারণে বিরোধিতার স্বার্থে তারা ইসলাম বিরোধী ব্যক্তি বা কর্মচারীর সাথেও আঁতাত করছে। অতীতে কংগ্রেস সমর্থনসহ বর্তমানে নারী নেতৃত্ব সমর্থন করেছে। আবার ইসলাম বিরোধী মতবাদও গ্রহণ করেছে। অতীতে সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদ থেকে বর্তমানে লংমার্চ, হরতাল, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, গণতন্ত্র, নির্বাচন ইত্যাদি কুফরী মতবাদও গ্রহণ করছে। পাশাপাশি নিজেরাও ইসলাম বিরোধী আমলে সরাসরি লিপ্ত হয়েছে। জনসভায় নামায না পড়া থেকে, ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া এর সরাসরি উদাহরণ। সত্যিকার অর্থে কারো বিরোধিতা বা সমর্থন লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। বরং উদ্দেশ্য হতে হবে খালিছ আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টির জন্য পরিপূর্ণ ইসলামের বাস্তবায়ন। তবেই গাইরুল্লাহ থেকে নাজাত পাওয়া সম্ভব। সম্ভব খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়ার নিয়ামত প্রতিষ্ঠা।  মূলতঃ খিলাফত আল্লাহ পাক-এর দান। এটা আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে কুদরতীভাবে ও গায়েবী মদদে আসবে। কিন্তু তার জন্য দরকার আমলে ছলেহ করা তথা খালিছ আল্লাহওয়ালা হওয়া। আর এ জন্য মুজাদ্দিদে আ’যমের নেক ছোহবতের বিকল্প নেই।  মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সে মহান নেয়ামত নছীব, কবুল ও কামিয়াব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়