সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৬৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। যিনি ইরশাদ মুবারক ফরমান, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে। যেমন তাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাক্বওয়া হাছিল করতে পার।”

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম। রমাদ্বান শরীফ উনার খুৎবায় যিনি বলেছেন, ‘হে মানবজাতি! একটি মহান ও বরকতপূর্ণ মাস তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করার জন্য হাজির হয়েছে।

রোযা মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ পছন্দনীয় আমল। আল্লাহ পাক পাক উনাকে যেমন দেখা যায় না, রোযাকেও তেমনি দেখা যায় না। আল্লাহ তায়ালা যেমন পানাহার মুক্ত, রোযাদারও তেমনি পানাহার বিমুখ। রোযা কেবল আল্লাহ পাক উনার জন্যই। তাই আল্লাহ পাক স্বয়ং  নিজেই রোযাদারের বদলা দান করবেন এবং রোযাদার রোযার মাধ্যমে স্বয়ং আল্লাহ পাককেই হাছিল করতে পারবে।

সময়ের প্রবাহে পুষ্ট অধিকাংশের বিশ্বাস এরূপ যে, ‘চলমান পরিস্থিতিতে প্রচলিত অনৈসলামিক আচারও অনৈসলামিক থাকে না। তাদের ধারণা গান-বাজনা, খেলা-ধুলা, সুদ, ঘুষ, টিভি, সিনেমা, বেপর্দা, বেহায়া এগুলো বর্তমান সময়ের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। যা সময়ের প্রেক্ষিতে জায়িয ও সহনীয়।’ (নাঊযুবিল্লাহ)

আওয়ামুননাছের ভিতরে এসব বিশ্বাস শক্ত করে এঁটে বসার কারণে তার বিপরীতে চলতে ভয় পায়, স্বার্থান্বেষী ধর্মব্যবসাযী মাওলানা তথা উলামায়ে সূ’। চলমান আবহের প্রতিকুলে ইসলামী আদর্শকে প্রকাশ ও প্রচার করা নয় বরং তার উপর ইসলামী লেবেল আঁটার অপচেষ্টার প্রেক্ষিতে ছবি তোলা, ভি.ডি ও, টেলিভিশন ইত্যাদিকে তারা জায়িয করেছে বহু পূর্বেই। (নাঊযুবিল্লাহ)

ছবি টিভিকে জায়িয এবং সমর্থনকারীরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত উনার প্রতি ভীষণ ক্ষুব্ধ। নাঊযুবিল্লাহ! তারা ছবি ও টিভির মাঝে বিবিধ উপযোগীতা খুঁজে পান। রে সত্যতা হুবহু কুরআন শরীফ উনার ঐ আয়াত শরীফ-উনার মত। “আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, শরাব ও জুয়া সম্পর্কে। আপনি বলে দিন শরাব ও জুয়াতে ফায়দাও আছে, মন্দও আছে। (শরাব খেলে স্বাস্থ্য আপাতত ভাল হয়। জুয়াতে রাতারাতি টাকা পাওয়া যায়) তবে ফায়দার চেয়ে গুণাহই বড়।”

ছবি-টিভিতে যারা ফায়দা দেখতে পান, তা আয়াত শরীফে উদ্ধৃত শরাব ও জুয়ার ফায়দার মতই। এতে কথিত ফায়দার চেয়ে গুণাহর ভাগই অনেক অনেক বেশি।

তথাকথিত ইসলামী দরদীরা আজ ভীষণ হতাশায় পর্যুদস্ত। সারা বিশ্বে মুসলমানের মাঝে ইসলামী চেতনা, ঈমানী জজবা তথা আমল বলতে কিছু নেই। তলিয়ে দেখলে পাওয়া যাবে এসব কিছুর মূলে হচ্ছে বেপর্দা ও বেহায়াপনা এবং তার মুলে হচ্ছে ছবি।

স্বাধীনতা উত্তর এদেশে খুব কম সংখ্যক মেয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেত। যারাও যেত তারাও খুব গুটিশুটি, জড়সড় হয়ে এখনকার চেয়ে অনেক শালীনভাবে যেত। তারও কিছু পূর্বে নাটকে, যাত্রায় মেয়ে চরিত্রে পুরুষদেরই অভিনয় করতে হত। স্বাধীনতা উত্তর দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল গুটিকতক।

কিন্তু আশির দশক থেকেই দৃশ্যিপট পাল্টে যায়। আমদানি হয় ভি.সি.আর, ভি.সি.ডি’র। প্রথমে উচ্চবিত্ত, পরে পাড়ার ক্লাবে ক্লাবে এরপর মধ্যবিত্ত ছাড়িয়ে এখন নি¤œবিত্তের বাসায়ও অবাধে ঠাই করে নিয়েছে ভি.সি.আর-ভিসিডি।

পাশাপাশি এখন কম্পিউটারের যুগের সুবাদে তার মাধ্যমেও চলছে সিডি’র রমরমা ব্যবহার। কিন্তু এর পরিণতি, পরিণামটা ও প্রতিফলটা কি হচ্ছে? সত্তরের দশক থেকে আজবে পরকীয়া, অবাধ যৌনাচার, জ্যামিতিক হারকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। প্রচলন হয়েছে বিবাহ বহির্ভুত লিডিং টুগেদার, পার্টটাইম রোমান্স ইত্যাদি পশুবৎ প্রক্রিয়া। ভেঙ্গে পড়ছে পারিবারিক বন্ধন। প্রচলন হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকার বরাহারা সংসকৃতির। কবর রচিত হচ্ছে ইসলামী অনুভুতির।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এসব কিছুর মুলে হচ্ছে ছবি। কারণ আজকে যদি ছবি নিষিদ্ধ; তা পালিত হত তাহলে থাকতো না টিভি, ভিসিআর, ভিসিপি, ভিসিডি ইত্যাদি। হতো না সিনেমা, নাটক, অশ্লীল ফিল্ম ইত্যাদি। হতো না আজকের মত চরিত্রহারা, ঈমানহারা তথা কাফির-মুশরিকদের কাছে নতজানু দেশহারা বিপর্যস্থ মুসলিম সমাজ।

মূলত: সূরা বাকারায় বর্ণিত শরাব ও জুয়া সম্পর্কিত আয়াত শরীফটিই ছবি টিভির পক্ষে উলামায়ে সূ’দের যাবতীয় শয়তানী যুক্তি খ-নের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তারপরেও নেকীর ছুরতে শয়তানের ওয়াছওয়াসা বলে একটা বিশেষ দিক রয়েছে। এরই বদতাছিরে ধর্মব্যবসায়ীরা টিভি চ্যানেলে তথাকথিত ইসলামী প্রোগ্রামের উপযোগীতা খুঁজে পান। ইসলামের প্রচার-প্রসার হয় বলে মনে করেন।

কিন্তু কুরআন শরীফ উনার ভাষায় আসলে তারা; মুসলমানই না। সূরা বাকারার শুরুতেই মুসলমানের পরিচয় সম্পর্কে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘যারা অদৃশ্যের উপর বিশ্বাস রাখে।” ছবি-টিভির পক্ষে ধর্মব্যবসায়ী মাওলানাদের দৃশ্যমান ছবির উপরই সব বিশ্বাস অদৃশ্যের উপর বিশ্বাস নেই। মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ও বিশ্বাস নেই। ইসলাম সম্পর্কেও তাদের কোন ইলম নেই।

তাদের যদি ইলম ও ইয়াক্বীন থাকত তবে, জনমানব শুন্য আরাফার ময়দানে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে যখন আল্লাহ পাক আযান দিতে বললেন, তখন উনার “এ জন-মানবহীন ময়দানে আযান দিলে কে মুনবে? এ প্রশ্নের উপর প্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে আগত “আপনার কর্তব্য আযান দেয়া, পৌঁছিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমার”- এ জবাব জানা থাকত।

আল্লাহ পাক উনার হুকুম মানলে বিনা ছবি-টিভিতেই লক্ষ-কোটি গুণ বেশি সিলামের কাজ হয় সে সমঝ থাকত। যেমন হযরত ব্রিাহীম আলাইহিস সালাম উনার যে আযান কুদরতীভাবে আল্লাহ পাক এমন ছড়িয়ে দিয়েছিলেন যে লক্ষ লক্ষ লোক হজ্জ করছে। আর আজও একইভাবে আল্লাহ পাক উনার কুদরতী ক্ষমতায় কাজ হবে; মুসলমান দাবী করলে তাদের সে য়িাক্বীন থাকা আবশ্যক ছিল।

সঙ্গতকারণেই তাদের প্রতি প্রশ্নবিদ্ধ হয় যে, আসলেই তারা মুসলমান কিনা? কারণ ইসলামকে বাদ দিয়ে বিজাতীয় তর্জ-তরীকা যথা- ছবি তোলা, বেপর্দা, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, হরতাল, গণতন্ত্র, নির্বাচন ইত্যাদিতেই তাদের ঘোর প্রবৃত্তি।

কুরআন শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা অল্প মুল্যের বিনিময়ে আমার আয়াত শরীফকে বিক্রি করো না।” ধর্মব্যবসায়ী মাওলানা তথা উলামায়ে সূ’রা তাই করেছে। এরা তাক্বওয়ার ধরে কাছেও নেই। অথচ রমাদ্বান শরীফ-এর শিক্ষা হলো- তাক্বওয়া হাছিল করা। কাজেই রমাদ্বান শরীফ উনার হক্ব আদায় করতে হলে ব্যক্তিগত তাক্বওয়া কোশেশের পাশাপাশি তাক্বওয়ার শত্রু- বাবত ধর্মব্যবসায়ী মাওলানা, জামাতী, ওহাবী, খারেজী, আল-বাদর, হদছ, কামিনী, উবাইগঙ”কে নিস্তানাবুদ করার দ্বীপ্ত শপথ ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ছবি-টিভির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করতে হবে। মুসলমানের হারানো ঈমানী জজবা ফিরিয়ে এনে যথাযথ তাক্বওয়ার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। তবেই রমাদ্বান শরীফ-এর কাঙ্খিত হক্ব বাঞ্ছিতভাবে আদায় হবে।

স্মর্তব্য, তাক্বওয়া আর তাছাউফ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যা কেবল মাত্র হক্বানী-রব্বানী ওলীআল্লাহ তথা মুজাদ্দিদে আ’যম উনার ছোহবতের মাধ্যমেই সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক আমাদের তা নছীব করুন। আমীন!

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়