সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৬৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

          সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক-এর জন্য। যিনি কোন কিছুই ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করেননি। সব ছলাত ও সালাম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। যার উছীলায় উম্মতে মুহম্মদীগণ পেয়েছেন। বিশেষ মাস, খাছ দিন তথা মুহূর্ত।

          উম্মতে দুঃখজনক এবং অগ্রহণীয় ও অসহণীয়হলেও সত্য যে, গত কয়েক বছর ধরে ধর্মব্যবসায়ী, রাজাকার মহলটি খুব জোরদার প্রচারণা চালাচ্ছে যে ‘শবে বরাত’ বলে ইসলামে কিছু নেই। পাশাপাশি তারা আরো বলছে- মীলাদ শরীফ, মাজার শরীফ জিয়ারত, কদমবুছি এগুলো ইসলামে জায়িয নেই। কিন্তু তার বিপরীতে জুমুয়া ও ঈদের জামাত, মহিলা মসজিদ, মহিলা জামাত, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম এসব কাজের জন্য তারা বড়ই উজ্জীবিত ও নিবেদিত। এক্ষেত্রে একটি বিষয় খুব স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, যেসব বিষয় মানুষকে আমলমুখী করে সেসব বিষয়কে তাদের খুব ভয়। তারা সেগুলোর ঘোর বিরোধী। আর যেসব কাজ তাদের তথাকিথত ইসলামী রাজনীতি তথা তাদের ধর্মব্যবসার সহযোগী বলে তারা মনে করে সেসব কাজের জন্য তারা খুব উদ্যোগী।

          হাদীছ শীফ মুতাবেক মহিলারা যদি ২৫গুণ ছওয়াব বেশী পাওয়ার জন্য ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠে নামায পড়ে; তাহলে তাদেরকে দলে ভেড়ানো ধর্মব্যবসায়ীদের জন্য সহজ হয়না। কিন্তু তাদেরকে যখন মহিলা জামাতের নামে ঘর থেকে বের করা যায় তখন সহজেই টার্গেট করা যায়। আর ছলাকলা দিয়ে, কুরআন শরীফ স্পর্শ করিয়ে, মহিলা ভোটও বাগানো যায়। এ কারণে জুমুয়া ও ঈদের জামাত তথা ৫ ওয়াক্ত নামাযেও মহিলা জামাতের নামে মহিলাদের ঘর থেকে বের করার জন্য এ ধর্মব্যবসায়ী, মৌলবাদী, রাজাকার, জঙ্গী, তালেবান গ্রুপটি খুবই উদ্যোগী, উৎসাহী ও উদ্যমী। ইদানিংকালে তাই অনেক মহিলা জেএমবি তালেবান তথা সন্ত্রাসীরও হদিস মিলছে।

          উল্লেখ্য, ধর্মব্যবসায়ী রাজাকার গ্রুপটি তাদের ‘৭১এর কু-কর্মের গন্ধ কোন মতেই ছাড়তে পারছে না। সেক্ষেত্রে শেষ চেষ্টা হিসেবে এখন তারা মডারেট হবার ভান ধরছে। তারা এখন আমেরিকার নেক নজর কাড়ছে। টুপি খুলে, দাঁড়ি ছোট করে, স্যুট-কোট পড়ে হিন্দুদের জূজায় শরীক হচ্ছে। হিন্দু যুবতী মহিলার সান্নিধ্য ও স্পর্শ নিচ্ছে। নারী নেতৃত্ব, ভোট, গণতন্ত্র, ছবি ইত্যাদি যা আগে নাজায়িয বলত; এখন চশমখোরের মত তা জায়িয বলছে।

          পাশাপাশি কথিত আধুনিক শিক্ষিত মহলেও ঠাই পাওয়ার জন্য, তাদের জাতে উঠার জন্য জামাতীরা দ্বিধাহীনচিত্তে ইসলামকে বিসর্জন দিতে পারছে। আধুনিক শিক্ষিত মুসলমান আমলে উদ্যোগী না। শ্বাশত ইসলামী অনুশাসনে উৎসাহী না। নতুনত্ব তাদেরকে আকর্ষিত করে। আর এ বিষয়টি অনুধাবন করেই তা লুফে নিতে চাচ্ছে ধর্মব্যসায়ী জামাতী, রাজাকার মহল।

          শবে বরাতের আমলের প্রতি উৎসাহ দেয়ার পরিবর্তে ‘ইসলামে শবে বরাতই নেই’- এ মিথ্যা ঘোষণায় আধুনিক শিক্ষিত মহলটিকে কিভাবে চমকিত, আকর্ষিত করতে পারবে- ছলনাময়ী ধর্মব্যবসায়ী রাজাকার গ্রুপটি সে কুট-কৌশলের কারিশমা ভাল করেই জানে।

          অন্তত জামাতের খাতায় নাম না লেখালেও শবে বরাত অবিশ্বাসকারীরা আমলের পথে আগ্রহী না থাকার প্রেক্ষিতে মতাদর্শগতভাবে জামাতের সাথে মিলে গেল, পাশাপাশি জামাত বিরোধী মনোভাব কিছুটা হলেও দূর হলো; এটাই ধর্মব্যবসায়ী, রাজাকার গ্রুপটির বড় অর্জন, বড় পাওয়া, বড় লাভ। এজন্যই তারা মহিলা জামাতের পক্ষে বললেও শবে বরাত, মিলাদ শরীফের এত বিরোধী। ‘ধর্ম ও রাজনীতি দু’টো আলাদা বিষয়’- জন্মের শুরু থেকেই এটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রচারণা। একারণেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোন ধর্মকে প্রাধান্য না দিয়ে কথিত ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদকে লালন করা হয়।

          এদিকে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রকাশের প্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক সরকার কোন ধর্মের উপর হস্তক্ষেপ করবেনা এটাই স্বতসিদ্ধ। যে কারণে ধর্মীয় স্বাধীনতা সংবিধানেই স্বীকৃত। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সে ধারণা-মূলে অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক আঘাত করছে। যা তাদের জন্য ঘোর স্ববিরোধী

          বিশেষতঃ নির্বাচন কমিশন অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে না হলেও অর্থাৎ ধর্মালম্বীদের জন্য ‘ধর্ম ও রাষ্ট্র বা রাজনীতি’ আলাদা বিষয় বলে ব্যক্ত করলেও ইসলামকে আলাদাভাবে দেখছেনা, মূল্যায়ন করছেনা। বরং ইসলামকে রাষ্ট্রের অধীন করে দিয়েছে। প্রকৃত সত্য হল রাষ্ট্রও নয় বরং রাষ্ট্রের অঙ্গ সংগঠন, নির্বাচন কমিশনের অধীন করে দিয়েছে।

          ‘নির্বাচন কমিশন’ এখন মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে, মুসলমানের বিরুদ্ধে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরুদ্ধে তথা খোদ আল্লাহ পাক-এর বিরুদ্ধে কথা বলার মত স্পর্ধাজনিত ও গর্হিত অপরাধ অনুশীলন করছে। নাউজুবিল্লাহ। এক্ষেত্রে তারা সে ফেরাউন, হামান, শাদ্দাদ, নমরুদের অনুশীলন করছে। নাউজুবিল্লাহ।

          গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাজের কথা বলে, তারা ধর্মকে, মুসলমানের দ্বীনকে, ইসলামকে নির্বাচন কমিশনের অধীন করে দিয়েছে। কুরআন-সুন্নাহয় শত শত বার বেপর্দার বিরুদ্ধে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে স্পষ্ট নির্দেশ থাকার পরও তারা ছবি তোলার জন্য; বেপর্দা হওয়ার জন্য; রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা বলে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রচারিত ইসলামের উপর সরাসরি হাত দিয়েছে। মুসলমানের অনুভূতিতে নির্মম আঘাত হেনেছে।

          বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরেশতাও নয় এবং নবী-রসূলও নয়। সুতরাং তাদের সততা এবং সমঝ কোনটাই প্রশ্নের ঊেের্ধ্ব নয়। বলাবাহুল্য, বিবৃত যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই আপেক্ষিক। আর কথিত রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শুধু আপেক্ষিকই নয় বরং ভীষণ স্পর্শকারতও। কারণ এর সাথে জড়িত থাকে ধর্মের বিষয়ও। বিশেষ করে ইসলাম সব সময়ই সংবেদনশীল। এ কারণেই গণতন্ত্রের বিকাশের পর থেকে কোন মুসলিম দেশেই আজ পর্যন্ত গত একশ বছরে পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের চেষ্টা চলে নাই। এমনকি স্বাধীনতা উত্তর কোন সরকারই সে দুঃসাহস করে নাই। এদিকে সংস্কারের নামে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোন কাজই নির্ভূল প্রমাণিত হয় নাই। তারপরেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার; চিহিত রাজাকার ধর্মব্যবসায়ী মাওলানাদের উপর ভর করে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার কথা বলে সে নির্বোধজনিত দুঃসাহিসক কাজটি করতে যাচ্ছে; এরপর পরিণতি কি হতে পারে? সময়ই তা বলতে পারে।

          প্রসঙ্গতঃ আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ‘আলিম নামধারীদের পদঙ্খলন ও ভুল, মুনাফিকদের বিরোধ ও বিতর্ক এবং ভ্রান্ত পথে চালিত শাসকদের হুকুম ইসলাম বিনষ্টের কারণ।’

          স্মর্তব্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আজ যেসব ধর্মব্যবসায়ী ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরীর সমর্থন দিচ্ছে; তারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংস্কারের জঞ্জাল- বিগত দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক সরকারেরই সব সময়ের সহযোগী ছিলো। তারাই মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ, ব্লাসফেমী, হরতাল, লংমার্চ, বেপর্দ, নারী নেতৃত্ব, ইসলামের নামে ভোট, নির্বাচন ইত্যাদি প্রবর্তনকারী ও পূজরী।

          ‘সুতরাং ধর্মব্যবসায়ীদের নিয়োগকর্তা, সংস্কারের প্রবক্তা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এসব কথা ভেবে দেখতে হবে।

          প্রসঙ্গতঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি সত্যিই যথাযথ সংস্কার করতে চায় তবে তাদের উচিত হবে যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফের মামদুহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এ  র নেক ছোহবতে আসা। তবেই তারা একদিকে পাবে ছহীহ্ সমঝ ও প্রজ্ঞা। পাশাপাশি পাবে খোদার রহমত। হতে পারবে সত্যিকারের কল্যাণমূলক সরকার।

          মহান আল্লাহ পাক সবাইকে সে নেক ছোহবতের ছায়াতলে স্থান দান করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়