সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক-এর জন্য। যিনি সর্বপ্রথম ওয়াজ করেছেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বেশুমার ছালাত ও সালাম। যিনি সারা জীবন উম্মতকে ওয়াজ নছীহত করেছেন। বর্তমানে আলিম সমাজের উরই ওয়াজ নছীহতের সে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে।
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের সাথে সম্পৃক্ত সংস্কৃতি। সংস্কৃতি যখন ধর্ম বিরোধী, সেটাই তখন মূল বিপত্তি। কারণ যুগ প্রবাহের প্রতিকূলে চলা, সাধারণ মানুষের সাধারণ ক্ষমতার বাইরে। সাধারণ মুসলমান তাই ছবি তোলে, সিনেমা, টিভি, ভি. সি. আর দেখে, গান শোনে যাবতীয় হারাম কাজ করে। আল্লাহ পাক বলেন, “মানুষের হিসাব কিতাব নিকটবর্তী অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।” (সূরা আম্বিয়া)
মুখ ফিরিয়ে নেয়া মানুষকে আল্লাহ পাক-এর দিকে আহবানের জন্যই ওয়াজ নছীহত। বলাবাহুল্য, মুসলিম দেশে তথা বাংলাদেশে ওয়াজ নছীহতের ক্ষেত্র অনেক সুগম এবং ব্যাপক। ওয়াজ নছীহতের বিপরীতে এদেশে অনেক রাজনৈতিক সভাসহ বিভিন্ন ধরণের সভা হয়। কিন্তু সে সব সভা যতটা আয়াস সাধ্য, ব্যয় সাধ্য তথা ভাড়া করা লোক দিয়ে পূর্ণ করার তৎপরতায় দুষ্ট, ওয়াজ মাহ্ফিলে তার অবতারণা ঘটেনা। অথচ রাজনৈতিক দলগুলো প্রনান্তকর প্রচেষ্টায় বিভিন্ন সভায় যে লোক সমাগম ঘটায় তার চেয়ে অনেক বেশী লোক সমাগম ঘটে দেশের বিভিন্ন বড় বড় মসজিদে, জুমার দিনে।
উল্লেখ্য, রাজনৈতিক নেতারা তথা তথাকথিত মুক্তবুদ্ধির প্রবক্তারা যতক্ষণ এদেশে মাইক ব্যবহারের সুযোগ পান, তার চেয়ে অনেক বেশি সুযোগ পান বাংলাদেশের আলিমগণ। জুমুয়ার প্রায় তিন লাখেরও অধিক মসজিদে তারা যে বয়ান করেন, তা এক হিসেব মতে তিন কোটিরও বেশী মুসল্লী শোনেন।
সুতরাং উল্লেখ আবশ্যক যে, প্রতি শুক্রবারই দেশে তিন কোটিরও বেশী মুসল্লী সমাবেশ হচ্ছে। তাদের সামনে ধর্মীয় বয়ান রাখার সুযোগ পাচ্ছেন খতীব সাহেবগণ। জুমুয়ার বয়ানের পাশাপাশি ওয়াক্তিয়া নামাজ তথা বিশেষ দিনে এবং অন্যান্য মাহফিলেও তারা ওয়াজ নছীহতের অবকাশ পান।
বলাবাহুল্য, এক্ষেত্রে তাদের অমুসলমানকে মুসলমান করার মত আলাদা কাজটি করতে হয় না, বরং জন্মসূত্রে মুসলমানদেরকেই নছীহত করতে হয়।
বলাবাহুল্য, এ নছীহতের ক্ষেত্রে একটি সমন্বিত, সুগঠিত এবং ছহীহ উদ্যোগ গোটা জাতির চেহারাকে, জনমতকে পাল্টিয়ে অতি অল্প সময়ে আত্যাশ্চর্য সুফল দিতে পারে। পারে ধর্মনিরপেক্ষতা তথা ধর্মহীনতার আদল থেকে ইসলামের পরিপূর্ণ জজবা তৈরি করতে। কিন্তু সে কাক্সিক্ষত ফল থেকে যখন আমরা বরাবরই বঞ্চিত হচ্ছি, তখন প্রতিভাত হয় যে, এর ভেতর রয়েছে স্বচ্ছতার, সদিচ্ছার এবং সততার অভাব।
মূলতঃ সে শুন্যতা নতুন কিছু নয় বরং তা ঐতিহাসিক ভাবেই সত্য। এক্ষেত্রে যেমন একদিকে রয়েছে ওয়ায়েজীন আমলশুন্যতা, রয়েছে ইল্্মস্বল্পতা, তেমনি রয়েছে খুলুছিয়তহীনতা। আমল হীনতার ক্ষেত্রে এমন ওয়াজকারীদেরকে কুরআন শরীফেই সাবধান করা হয়েছে, তোমরা যা করনা তা কেন বল? তোমরা যা করনা তা বলা আল্লাহ পাক-এর কাছে খুবই অসন্তোষজনক। সূরা সাফ-২৩)
ইল্্ম স্বল্পতার ক্ষেত্রে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, যাকে ইল্্ম ব্যতীত ফতওয়া দেয়া হয়েছে, আর সে তদানুযায়ী আমল করেছে, এর গুনাহ্্ ফতওয়া দানকারীর উপরই বর্তাবে। (আবু দাউদ, মিশকাত)
খুলুছিয়তের ক্ষেত্রে হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এমন কিছু কথা শিক্ষা করে, এমনভাবে কথা বলে যাতে মানুষের অন্তরকে আকৃষ্ট এবং সম্মোহিত করতে পারে, আল্লাহ তা’য়ালা কিয়ামতের দিন তার নফল ও ফরজ কোনটাই কবুল করবেন না। (আবু দাউদ, মিশকাত শরীফ)
মূলতঃ এইসব ইল্্মহীন, আদবহীন, খুলুছিয়তবিহীন ওয়ায়েজীনরা ওয়াজ মাহফিলের বরকত নষ্ট করেছে। ওয়াজকে তারা পেশা হিসেবে নিয়েছে।
মুলতঃ এ অবস্থা নামধারী মাওলানাদের চোর, ডাকাত তথা অন্য সব দুস্কৃতিকারী ও দুর্নীতিবাজদের চেয়ে বড় অপরাধী বলে সাব্যস্ত করে। মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান, “আর আপনি তাদের অনেককে দেখবেন যে, দৌড়ে দৌড়ে পাপে, সীমালঙ্ঘনে এবং হারাম ভক্ষণে পতিত হয়। তারা অত্যন্ত মন্দ কাজ করছে। দরবেশ ও আলিমরা (নামধারী) কেন তাদের পাপ কথা বলতে এবং হারাম ভক্ষণ করতে নিষেধ করে না। তারা খুবই মন্দ কাজ করছে। (সূরা মায়িদা/৬২)
নামধারী দুর্নীতিবাজ মাওলানা সম্পর্কেই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই নামধারী আলিমরাই নিকৃষ্ট জীব” (দারিমী শরীফ)
এদিকে বর্তমান দুদক চেয়ারম্যান মসজিদে মসজিদে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ওয়াজ করার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। খতীব ছাহেবদের ওয়াজ-নছীহতের প্রভাবে তিনি দুর্নীতিমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু এখন ওয়াজ-নছীহত যারা করবেন তারাই তো পূর্ব থেকেই আছেন। দুর্নীতিবাজদের মহা দুর্নীতিকালেও ছিলেন। তাদের সীমাহীন দুর্নীতি সম্পর্কে অবগতও ছিলেন। তাহলে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, তাদের ওয়াজে দুর্নীতি বন্ধ হবার নয়। বা তারা দুর্নীতিবাজদের হেদায়েত করার মত যোগ্যতাধারী নয়। বরং সত্য এই যে, তারা দুর্নীতিবাজ, মন্ত্রী, পুলিশ, রাজনীতিক আমলার মতই দুর্নীতিবাজ মাওলানা।
উল্লেখ্য, সরকার যদি দুর্নীতিরোধে সত্যিই ইসলামী অনুভূতির জাগরণ ঘটাতে চায় তাহলে তাদেরকে ঐসব আলিমকেই মূল্যায়ণ করতে হবে যারা সরকারের মুখের উপর হক্ব কথা বলার সাহস রাখেন। যারা সরকারের সব অনৈসলামী কাজের প্রতিবাদ করার হিম্মত রাখেন। যারা একদিকে সরকারের ফরমায়েশ মত দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলবে অপরদিকে সরকারের হুকুম মত মসজিদে মসজিদে ছবি তোলার পক্ষে বলে, আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরুদ্ধে বলবে তারা নয়। যারা ইতোমধ্যে ছবি, বেপর্দা, লংমার্চ, হরতাল মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, গণতন্ত্র, নির্বাচন ইত্যাদি নাজায়িয কাজ করেছে তারা নয়।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, মুহ্্ইস্্ সুন্নাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-ই কেবল তার বেমেছাল যোগ্যতা, রূহানী দক্ষতা, সুন্নতী আমল, অভূতপূর্ব ইলমে লাদুন্নী, প্রজ্ঞা ও ইসলামের পক্ষে বেপরোয়া মনোভাবের কারনে শুধু বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও এই দেশের জনগণ নয় বরং গোটা বিশ্বসরকার তথা বিশ্ববাসীকেই হেদায়েত করার খোদায়ী হিম্মত রাখেন।
কাজেই সব সরকারেরই উচিত তাঁর সকাশে যাওয়া ও নছীহত তথা তাঁর ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করা।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের কবুল করুন। (আমীন)