সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৬৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রসংশা আল্লাহ পাক-এর জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।

কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “সত্য এসেছে, মিথ্যা দূরীভূত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা দূরীভূত হওয়ারই যোগ্য।” (সূরা বণী ইসরাঈল-৮১)

 এ আয়াত শরীফের দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব সবার  উপরে। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসকারীদেরকে আল্লাহ পাক নাম রেখেছেন মুসলমান। ইসলাম তাদের দ্বীন। যে সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “আজ আমি তোমাদের দ্বীন কে পরিপূর্ণ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে কবুল করলাম।” (সূরা মায়িদা-৩)

এ  আয়াত শরীফে প্রতিভাত হয় যে দ্বীন ইসলাম আল্লাহ পাক-এর মনোনীত। কোন মানুষের সেখানে হাত দেয়ার অধিকার নেই। দ্বীন ইসলামকে স্বয়ং আল্লাহ পাক পূর্ণতা দিয়েছেন। দ্বীন ইসলামের বিধান নিয়ে কোন মানুষের কিছু বলার অবকাশ নেই। এ বক্তব্যের সমার্থক হিসেবে কুরআন শরীফে অনেক আয়াত শরীফ এসেছে।

আল্লাহ পাক প্রথমতঃ আমভাবে সবাইকে বলেন, “হে ঈমানদাররা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর।” কিন্তু তারপরেও যারা গাফেল, যারা কিছু করে আর কিছু করেনা তাদের সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে আল্লাহ পাক বলেন, “তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ মানবে আর কিছু অংশ অস্বীকার করবে?” (সূরা বাক্বারা-৮৫)

এরপরও যারা অস্বীকার করবে তাদেরকে সাবধান করে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “যারা আল্লাহ পাক-এর বিধান অনুযায়ী চলেনা তারা জালিম, ফাসিক ও কাফির।”

বলাবাহুল্য আল্লাহ পাক-এর বিধান অনুযায়ী না চললে সাধারণত বান্দা কোন পথে চলতে পারে বা কাদেরকে অনুসরণ করতে পারে সে প্রসঙ্গেও আল্লাহ পাক বলেছেন। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ তোমরা ইহুদী-খ্রিস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একজন অপরজনের বন্ধু। তাদেরকে যারা বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।”   (সূরা মায়িদা-৫১)

এ আয়াত শরীফে প্রতিভাত হয় যে, ইহুদী-খ্রিস্টানদের আমল আর মুসলমানদের আমল এক হতে পারেনা। ইহুদী-খ্রিস্টানদের আমল গ্রহণযোগ্যও নয় এবং কল্যাণকরও নয়। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। কেবল তারা ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে।” (সূরা আছর-২, ৩)

অতএব, ঈমানের সাথে থাকা এবং নেক কাজের সুযোগ থাকা তথা বদ কাজের পরিবেশ থেকে মুক্ত থাকা এবং বদকাজের জন্য বাধ্যবাধকতা না থাকা-  প্রতিটি মুসলমানের জন্য মৌলিক অধিকার তথা ধর্মীয় অধিকার।

উল্লেখ্য, অধুনা কোন কথিত রাষ্ট্র তথা সরকারই কখনই স্বীকার করেনা বা করতে চাবেনা যে, মুসলমানকে তারা ইসলাম পালন করতে দেবেনা। মুসলমানকে আল্লাহ পাক ও তাঁর আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ-নিষেধ পালন করতে দিবেনা। বরং সবাই ব্যক্তি, গোষ্ঠীর ধর্মীয় অধিকার সুনিশ্চিত করেছে বলে দাবি করে থাকে।

প্রসঙ্গতঃ রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের দেশ, শতকরা নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে, মুসলমানের এই ধর্মীয় অধিকার আরো অধিক সংরক্ষিত তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে সংবিধানে ৪১(ক) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, “প্রত্যেক নাগরিকের যে  কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রয়েছে,” দেখা যাচ্ছে এ অনুচ্ছেদে শুধু ধর্ম পালনই নয় বরং তা প্রচারের  ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে।

কাজেই গত কিছুদিন আগে নির্বাচন কমিশনার সাহেব- ছবি তোলার বিরুদ্ধে

প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বললে এক বছর জেল দেয়া হবে শীর্ষক যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা যে সংবিধান বিরোধী হয়েছে তা বিশেষভাবে উল্লেখ্য।

পাশাপাশি উল্লেখ্য, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবি তোলা, রাখা, আঁকা দেখা হারাম।’ ‘ইসলামের নারী নেতৃত্ব হারাম।’ ‘ইসলামের নামে মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ হারাম’ -ইসলামের এসব বিধিবিধান প্রচারও যে ধর্মীয় অধিকারের মধ্যে পড়ে তাও বলার অপেক্ষা রাখেনা। কেউ কেউ মনে করে থাকে ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা হারাম’ আল বাইয়্যিনাত এর এ কথা বুঝি রাষ্ট্রদ্রোহী। কিন্তু তারা অবগত নয় যে আল বাইয়্যিনাত এর এ ফতওয়া রাজনৈতিকভাবে নয়, রবং ইসলামী দৃষ্টি কোণ থেকে ইসলামের আলোকেই দেয়া হয়। যা প্রচলিত আইনে মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকারেরই আওতাভুক্ত হয়। তাছাড়া গণতন্ত্র নিজেই এমন ব্যবস্থা যা অন্য মত পথকেও ধারণ করে, লালন করে। বাংলাদেশ সংবিধানের  ৩৯(১) ধারায় উল্লেখ রয়েছে “চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা দেয়া হইল। এই কারণে গণতন্ত্রের এদেশে গণতন্ত্র বিরোধী সমাজতন্ত্রের প্রচার ও কার্যক্রম যদি চলতে পারে তাহলে ‘ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা হারাম’ ইসলামের ভিত্তিতে এ কথার প্রচার ও কার্যক্রম করা যাবেনা কেন?

মূলতঃ ইসলামের নামে গণতান্ত্রিক রাজনীতির তল্পীবাহক, ধর্মব্যবসায়ী মাওলানাদের না আছে সামান্য দুনিয়াবী জ্ঞান, না আছে ক্ষুদ্র দ্বীনি ইলম, না আছে কিঞ্চিত আমল। তথাকথিত ইসলামী রাজনীতির নামে তারা যা করছেন তা শুধুই ধর্মব্যবসা; আর ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, হরতাল, লংমার্চ ও গণতন্ত্রের মত হারাম ও বিজাতীয় আমল। (নাঊযুবিল্লাহ)

মূলতঃ এদের আমলহীনতার কারণেই সরকার অনেক সময় অনেক অনৈসলামিক আমল আমভাবে মুসলানের উপর চাপিয়ে দেয়। তবে অস্তিত্বের খাতিরে, সতের নিরীখে সরকারকে বুঝতে হবে যে, ধর্মব্যবসায়ী, আমলহীন মাওলানারা যা করে তাই ইসলাম নয়। মুসলমানের অনুভবও অনুভূতি নয় তথা দ্বীনি চেতনা নয়। ধর্মব্যবসায়ী মুলানারা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব জায়িয করেছে তাই বলে ঐ সব কাজ ইসলামে জায়িয হয়ে যাবে তা নয়। বরং তা যে ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম সে ফতওয়া মুসলমানের ভেতরে ঈমানের নূরের মতই বিরাজ করছে ও করে।

সে নূরের একবার প্রজ্বলন হলে তার তেজোচ্ছাটায় সব বাতিল পুড়তে বাধ্য। তা  দমিয়ে রাখার শক্তি  কারো নেই।

প্রসঙ্গতঃ একটা কথা আজ খুব স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন যে,  রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামের এদেশে, শতকরা নব্বই ভাগ মুসলমানের এ দেশে মুসলমানের ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষিত আছে কি নাই?

মুসলমান এখানে স্বাধীন ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্ম পালন  করতে পারবে কি পরবেনা? সরকার বা সরকারের প্রতিনিধি দ্বারা মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া চলবে কি চলবেনা।

বলাবাহুল্য এসব প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ বোধক হয় তাহলে তার অন্তরালে অস্পষ্টতা, অস্বচ্ছতা ও অনিয়মের অবকাশ নেই। পক্ষান্তরে তার জবাব যদি  সরকারের পক্ষ থেকে না বোধক হয় তবে তাও অবিলম্বে অবগতি প্রয়োজন। তবে সেক্ষেত্রে সরকার নিজেই যে হবে দেশদ্রোহী, সংবিধান বিরোধী তাও সরকারের উপলদ্ধি প্রয়োজন। কারণ বাংলাদেশ সংবিধানের প্রস্তাবনায়ও লিখিত রয়েছে “সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস।” উল্লেখ্য এ তখনই সত্য হবে যখন আল্লাহ পাক ও তার হবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণিত বিধি নিষেধ পরিপূর্ণ মানা যাবে ও তার পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

বলাবাহুল্য শুধু দুনিয়াবী উদ্যোগই নয় এজন্য প্রয়োজন খাছ নেক দোয়া, রহমত ও ফয়েজ তায়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ; মুজাদ্দিদে আ’যমের নেক ছোহবতেই সে সব পাওয়া সম্ভব।

মহান আল্লাহ পাক আমাদের  তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়