সব প্রশংসা মহান আল্লাহ্ পাক-এর জন্য। যিনি তাঁর যিকিরকে মহান বলে ঘোষণা করেছেন। সব সালাত সুালাত ও সালাম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লা?আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। যিনি বলেছেন, প্রত্যেক জিনিষ পরিষ্কার করার একটি যন্ত্র আছে। ক্বলব বা অন্তর পরিষ্কার করার যন্ত্র হল যিকির।
মূলতঃ ক্বলব বা অন্তর পরিষ্কার করার যে যিকির তা হতে হবে ক্বলব বা অন্তর থেকেই উৎসারিত। যার সঙ্গে অনিবার্যভাবে জড়িত পীর সাহেব ক্বিবলার রূহানী ফায়েজ। সে ফায়েজের বদৌলতে ক্বালবের সাথে সম্পৃক্ত করে ত্বরীকানুযায়ী যিকিরের মাধ্যমে মানব হৃদয় বা ক্বালবে আল্লাহ্ আল্লাহ যিকির জারী হয়। ক্বালবী যিকিরের এ ফযীলত সম্পকে?হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, মানুষের অন্তর বা ক্বালব যখন আল্লাহ্’র যিকিরে ম?থাকে তখন আল্লাহ্ পাক একজন ফিরিশ্তা নির্দিষ্ট করে দেন, যে তাকে হিদায়েতের পথে পরিচালিত করে। আর মানুষের অন্তর যখন যিকির থেকে গাফেল থাকে তখন একজন শয়তান নির্দিষ্ট হয়ে যায়, যে তাকে ওয়াসওয়াসা দিতে থাকে।
উল্লেখ? এ ওয়াসওয়াসা থেকে হেফাজতের জন?তাছবীহ্, মৌখিক যিকির-আযকার ইত্যাদি সহায়ক নয়। আবহমান কাল ধরে মানুষকে হিদায়েতের দু’টি ধারা চলে আসছে। একটি জাহিরী কায়দায়, অপরটি জাহিরী-বাতিনী উভয় কুয়তের সমন্বয়ে।
সাধারণভাবে ইল্মে জাহিরর যৎকিঞ্চিত হাছিলকারী জাহিরী আলিমগণ আম মানুষকে যে নছীহত করেন তাতে তত্ত্বকথার আশ্রয় বেশী থাকে। যে তত্ত্বকথা সাধারণ দিলকে স্পশ?করে সামান্যই। শুধু একটু ভাবনার উদ্রেক হলেও মনের তথা নফসের উদ্দাম গতিপথে তার আবেদন স্বল্পই।
কিন্তু নফসের সে উচ্ছ্বল গতিপথের সঞ্চারকে নিয়ন্ত্রণ করে খোদায়ীপথে চলার স্বতঃস্ফুর্ত প্রবৃত্তি তৈরী করে দিতে পারেন, জাহিরী-বাতিনী ইল্ম সমৃদ্ধ হক্বানী মুর্শিদগণ। কারণ অন্তরের ইল্মে তাঁরা সমৃদ্ধ।
প্রসঙ্গতঃ ক্বালবী যিকিরই এ ইল্মের সোপান। মুরীদ বা সালেকের ক্বালবে সে যিকির জারী করে দিতে তারা সক্ষম। যার সমৃদ্ধ রূপ হলো সুলতানুল আযকার। ক্বালব সহ আরো ন’টি লতিফা যথা- রূহ, ছির, খফি, আখফা, নফস, আব, আতেশ, খাক, বাদ মোট দশটি লতিফায়ই যখন এ যিকির জারী হয়, তখন মাথার প্রতিটা চুল থেকে আরম্ভ করে শরীরের সর্বাংশে আল্লাহ্ আল্লাহ্ যিকির জারী হয়ে যায়। যা সুলতানুল আযকার যিকিরের প্রথম ধাপ। এরপরে আশা-পাশের সবকিছুতেই আল্লাহ্ পাক-এর যিকির হতে দেখা এবং তারপরে তামাম মাখলুকাতের মাঝে আল্লাহ্ আল্লাহ্ যিকির দেখতে পাওয়া দ্বিতীয় ধাপ। সুলতানুল আযকারের তৃতীয় পর্যায়রূপে গণ্য। উল্লেখ? কারো হাক্বীক্বী সুলতানুল আযকার জারী হলে তাঁর দ্বারা কস্মিনকালেও সামান্যতম বিচ্যুতি সম্ভব নয়। যে প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এটা এমন এক হুজুরী, যার পরে আর বিচ্ছেদ নেই। (মকতুবাত শরীফ)
স্মর্তব্য, পৃথিবীর ইতিহাসে বড় ওলীআাল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি অতীত হয়েছেন, যাঁদের মুবারক জীবনীতে হাক্বীক্বী সুলতানুল আযকারের অপূব?নিদর্শন ফুটে উঠৈছে। রবিউস সানী মাসের অন্যতম আলোচিত ব্যক্তিত্ব গাউছুল আ’যম, মুহিউদ্দীন, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, হযরত বড়মুর্শিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পেশাব মুবারক পরীক্ষাকালে দেখা গিয়েছে তা কেবল সুগন্ধযুক্তই নয় বরং প্রতিটি ফোটা হতে স্পষ্টরূপে আল্লাহ্ আল্লাহ্ যিকির ধ্বনিত হচ্ছে। হাক্বীক্বী সুলতান আযকার জারীর এই অপূর্ব দৃষ্টান্ত চারশত বিধর্মীর ইসলাম গ্রহণই কেবল অমূল্য ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত নয় বরং এটি অনাগতকালের জন?এক বিশেষ নছীহত।
আপসোসের বিষয়, ক্বালবী যিকির জারীসহ, দশলতিফার বিষয়, সুলতানুল আযকার, বেলায়েতের মাকাম হাছিল করা, ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পকে?আজকে আমাদের মূল্যবোধ একেবারেই শুন্যের কোঠায়।
যাবতীয় নামধারী জাহিরী মাওলানাগং তথা তাবৎ উলামায়ে “ছূ?এ বিষয়ে বিশেষ গাফলতী ছাড়াও, তল্পীবাহক সিলসিলাধারীর বর্তমান অযোগ্য উত্তরসূরীদের এ বিষয়ে বিশেষ দখলহীনতা সামগ্রিকভাবে আমাদের জাতীয় জীবনে কাঙ্খিত আলোড়ন তথা আবেদন সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এ ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে তাই আজ তারা নিজেদেরকে পরিচালিত করছে ছবি তোলা, লংমাচ?করা, মৌলবাদ দাবী করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, ইসলামের নামে নির্বাচন ভিত্তিক হারাম দলীয় রাজনীতি করা ইত্যাদি যাবতীয় বিদ্য়াত বিশরা কাজে। এর পেছনে কারণ হল, এসব কাজের হোতারা শাইখুল হদছ, মাহিউদ্দীন, মুফতি, মুফাস্সির ইত্যাদির আবরণে থাকলেও আসলে তাদের অন্তরে ক্বালবী যিকির জারী নেই। তাই আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন ঐ ব্যক্তির অনুসরণ করোনা, যে তার ক্বালবকে আমার যিকির থেকে গাফেল রেখেছে। অর্থাৎ যার ভেতরে ক্বালবী যিকির জারী নেই অর্থাৎ তার অনুসরণ করা জায়িয নেই।
স্মর্তব? কেবল ব্যক্তিগত ইঝলাহ্ই নয়, আল্লাহ্ পাক-এর মুহব্বত-মারিফত লাভসহ তাঁর সন্তুষ্টির জন?খিলাফত আলা- মিনহাজিন্ নবুওয়াহ্’র কাজ করার ?ত্রেও ক্বালবী যিকিরের সমৃদ্ধতাই মূল আঞ্জাম। তাবৎ বিষয়টি থেকে উদাসীন বলেই তাদের আবেদন নিবেদন তথা কর্মতৎপরতা একান্তই নিষ্ফল।
তাই সার্বিক কামিয়াবীর জন?মহান আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ্, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যমের নেক ছোহবতের মাধ্যমে খুব সহজেই হাক্বীক্বী সুলতানুল আযকার নছীব করুন (আমীন)।