সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক-এর জন্য। যিনি এক মহান রহমত, নূর তথা খাস নিয়ামতরূপে কায়িনাতের বুকে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়েছেন। সব ছালাত ও সালাম, রহমাতুল্লিল আলামীন, সরদারে দো’জাহান হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি যিনি সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী রূপে তামাম মাখলুকাতের জন্য আবির্ভূত হয়েছেন।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যথাযথ তাযীম-তাকরীম-এর মাঝেই মাখলুকাতের কামিয়াবী নিহিত। “যারা তাঁর প্রতি ঈমান আবে, তাঁর তাযীম করবে, তাকেঁ সাহায্য করবে, এবং তাঁর উপর অবতীর্ণ কুরআন শরীফের অনুসরণ করবে তারাইহ হবে সফলকাম।”
প্রদত্ত আয়াত শরীফসহ অসংখ্য আয়াত শরীফে স্বয়ঙ আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি তাযীম তাকরীমের অমোঘ নির্দেশ দিয়েছেন।
কোন কাজে আল্লাহ পাক-এর রসূলের চেয়ে অগ্রগামী না হওয়া, এমনি কথা বলার ক্ষেত্রেও আদব রক্ষার ব্যাপারে এতটুকু গাফিল না হওয়ার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। “হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপর তোমাদের কণ্ঠস্বরকে উচু করোনা। এবঙ তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উচুস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের আমলসমূহ বরবাদ হয়ে যাবে, তোমরা যা টেরও পাবেনা। (সূরা আল হুজরাত)
প্রসঙ্গতঃ বর্ণিত এ আয়াত শরীফখানা বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে প্রনিধান যোগ্য। আল্লাহ পাক এর রসূলের সামনে সামন্য উচুস্বরে কথা বলা যেখানে আমল বরবাদের কারণ সেখানে- যারা হর হামাশে আল্লাহ পাক-এর রসূলের মর্যাদা হানিমূলক কথা বলে, তিনি আমাদের মতই মানুষ” বলে, চরম বেয়াদবিমূলক উক্তি করে, “তিনি মাটির তৈরী” বলে প্রচার করে, “তিনি ইলমে গায়িব এর সাথে সম্পৃক্ত নন” বলে বিশ্বাস করে, তিনি যেখানে ইচ্ছা সেখানে হাযির হতে পারেন না বলে মনে করে, এমনকি তাঁর প্রতি “শরীয়তের আহকাম” আরোপের অপচেষ্টা করে তারা মূলতঃ আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে নিজেদের মহা অজ্ঞতা এবঙ ধৃষ্টতারই পরিচয় দেয়্ দৃশ্যতঃ বর্তমানে নামধারী মুসলমান হলেও মুলতঃ বদআক্বীদা ও আদবহীনতার কারণে এরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধীতাকারী আবু জেহেল, আবু লাহাবের কাতারেই নিজেদের ঠাঁই করে নেয়।
স্মর্তব্য, কোন তূলনা, কোন উপমা, কোন কাজ, কোন বিষয়, কোন প্রসঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অবমাননামূলক কোন কিছু পেশ করা, অথবা শরীয়তের সীমারেখা বর্ণনার ব্যাপারে তাঁর প্রতি হুকুমদারী আরোপ করে কিছু বলা উম্মাহর জন্য চরম বেয়াদবী ও কাট্টা কুফরী।
গভীর পরিতাপের বিষয় হলেও এ অনাকাঙিখত দিকটি সমাজে আজ ব্যাপকভাবে শিকড় গেড়ে বসেছে। সাধারণ ওয়াজ-নছীহত, সাধারণ কিতাবাদি আর সাধারণ অনুভূতিই, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চেনার-জানার যাদের একমাত্র মাধ্যমে তাদের পক্ষে উপরোক্ত গর্হীত আক্বীদা ও আচরণে দুষ্ট হওয়াই স্বাভাবিক।
পক্ষান্তরে ইলমে তাছাউফের মাধ্যমে, পীরানে ত্বরীকতের উছীলায়, স্বয়ং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালালাম-এর সাথে রূহানী সম্পর্ক অর্জনের মাধ্যমেই তাঁর হাক্বীক্বী মারিফাত-মুহব্বত লাভ সম্ভব।
এ প্রেক্ষিতে উচু দরজার বুজুর্গী হাছিল সাপেক্ষেই সম্ভব অনুক্ষণ রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্রাম-এর জিয়ারতে বিভোর থাকা এবঙ মাসয়ালা ও সিদ্দান্তের ব্যাপারে সরাসরি তাকেঁই জিজ্ঞেস করে অবহিত হওয়া।
স্মর্তব্য, বর্ণিত যোগ্যসম্পন্ন ওলীআল্লাহগণকে চেনার একটিই উপায়। সেটি হল, সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে সুন্নতের অনুসরণ। বলার অপেক্ষা রাখেনা, এ ধারাবাহিকতায় যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, মুহইস সুন্নাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ঢাকা রাজারবাগ শরীফের হযরত পীর ছাহেব ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী অনন্য ব্যক্তিত্ব। আল্লাহ পাক-এর মারিফাত-মুহব্বত লাভ, সুন্নত শিক্ষা ও পালন, সবোর্পরি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে রূহানী সম্পর্ক স্থাপনে তিনি বর্তমান জামানার মূল সংযোজক মুজাদ্দিদে যামান তথা মুজাদ্দিদে আ’যম।
যদিও বর্তমান লুপ্ত প্রায় সুন্নতের যুগে কথিত ওয়ায়েজগণের পক্ষ থেকে আমভাবে সুন্নত পালনের উপর বারবার বলা হয়, কিন্তু সুন্নত যে কি জিনিস? এবঙ তার ব্যবহারিক দিক যে কি? তা তারা ব্যক্ত করতে, রূপায়ন করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়। সেদিক থেকে প্রয়োজন সুন্নতের বাস্তব রূপায়ণকারীর প্রামাণ্য নিদর্শন। অর্থাৎ যাঁর আমল দেখেই আওয়ামুন নাসের পক্ষে সুন্নতের আমল অনুসরণ শিক্ষা সম্ভব।
দাবী করা হয়, অধুনা বিজ্ঞানের বদৌলতে ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী। কিন্তু ছোট হয়ে আসেনি মানুষের সমস্যা। বরং দিগন্ত রেখার ন্যায় উম্মোচিত হয়ে তা প্রকট আকার ধারণ করেছ। অথচ সুখ ও সমৃদ্ধি বিস্তারের লক্ষ্যে মানবীয় কোশেশের অন্ত নেই। পুলিশ রাষ্টের বিপরীতে আধুনিককালের রাষ্ট্রগুলো ঘোষিত হয়েছে Welfare State বা কল্যাণমূলক রাষ্ট্ররূপে। মতাদর্শিক সুবিধার চরম লক্ষ্যে স্বীকৃত হয়েছে অবাধ মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্বলিত তথাকথিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। কিন্তু বস্তুতান্ত্রিক আদল, আদর্শহীন জীবনরোধ, বগ্লাহারা দর্শন, আপাত প্রাচুর্যের যোগান দিলেও পরিশীলিত মূল্যবোধ ও সুস্থ জীবনচর্চার উন্মেষ ঘটাতে পারেনি আদৌ।
বরং পারিবারিক সম্পর্কের চরম ভাঙ্গন, মূল্যবোধের অবক্ষয় আর সামাজিক বিপর্যস্থতার বিশেষ শিকার আজকের স্বেচ্চাচারী বিশ্ব। আমেরিকা, ইউরোপ, জাপান কি প্রাচ্য কি প্রতীচ্য? বস্তুতান্ত্রিক উন্নতির ফাঁপা বেলুনের ভিতরে সব দেশেই বিরাজ করছে এক আদর্শিক শুন্যতা, এক বিধ্বংসী মানসিকতা, এক বিধ্বস্থ প্রবনতা।
সকল সীরাত গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে, পয়দায়েশের পবিত্র মুহুর্তেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সিজদাবনত ঘটনা। পূর্ব-পশ্চিম সবই নূরান্বিত হওয়ার কথা। কাবা ঘরের মূর্তি উপূড় হওয়ার ঘটনা। পারস্য প্রাসাদ কম্পিত হওয়ার কাহিনী্ মূলতঃ পয়দায়েশের মুহুর্ত থেকে আরম্ভ করে হিজরতের প্রাক্কালে ধূলি নিক্ষেপ, সাওর গুহায় মাকড়সার জালের অন্তরালে অবস্থান অতঃপর হাজারো কুদরতী সাহায্যে মদীনায় বসবাস, জিহান করণ, ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠাকরণ, সর্বোপরি মক্কা বিজয়; এক কথায় সারাজীবনই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি অর্জনে, ইসলামের কাজে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন রূহানী শক্তি আবেষ্টনে। ইসলামের কাজের জন্য, ইসলামী আন্দোলনের জন্য তাই একান্তভাবে চাই রূহানী কুয়ত, রূহানী তাকত।
বলাবাহুল্য, এই রূহানী ক্ষমতা অর্জনে যারা অক্ষম তারা একদিকে যেমন অযোগ্য ইসলামের খেদমত করতে তমনি তারা অবাঞ্ছিত আল্লাহর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রকৃত ওয়ারিছ হতে। তাদের অর্জিত কিতাবী ইলমের ব্যার্থতা এখানেই।
এ ব্যর্থতার কারণেই তারা অক্ষম হয়, “সার্বভৌম ক্ষমতা আল্লাহর” একথা ঘোষণার পাশাপাশি “সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণের” বদদ্বীনি, এ নীতিতে গ্রোথিত নির্বাচনী ব্যবস্থা হতে বিরত থাকতে।
অতীব আফসোস ও দুঃখের বিষয়, আমরা উম্মত দাবী করেও ফখরুল আওয়ালীন ওয়াল আখিরীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদা অনুধাবনে প্রবৃত্ত হইনা। আর তাই অনিবার্য ভাবে আমরাও আমাদের কাঙ্খিত সম্মান ও বাঞ্ছিত সমৃদ্ধি নিয়ে জীবন-যাপন করতে পারিনা।
আজকে ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, কাশ্মীর, মধ্যপ্রাচ্য সহ গোটা মুসলিম বিশ্বে মুসলমানদের অবমাননা ও লাঞ্ছনার মূলে উল্লিখিত কারণই নিহিত।
আর এ বিষয়টিকে আরও ত্বরান্বিত এবং ব্যাপক করেছে আলিম দাবীদার এক ধরণের উলামায়ে ‘ছূ’ তারা সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদা দানে সদিচ্ছুক নয়, তাঁর সুন্নত অনুসরণে সচেষ্ট নয়, কিন্তু বিজাতীয় ও বিধর্মীয় আদর্শ ও কর্মসূচী-লংমার্চ, হরতাল, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, ছবি, নির্বাচন ও গণতন্ত্র ইত্যাদি পালনে বড়ই সক্রিয়্ যাদের সম্পকে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে- “আখিরী যামানায় এক শ্রেণীর দাজ্জাল বের হবে, যারা এমন সব কথা বলবে, যা তোমরা শুননি এবঙ তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। তোমরা তাদের থেকে দূরে থাক; তাদেরকেও তোমাদের থেকে দূরে রাখ। তাহলে তারা তোমাদের গোমরাহ করতে পারবেনা।” (মিশকাত)
পাশাপাশি মনে রাখা কর্তব্য, হামিলু লিওয়ায়িল হামদ, হাবীবে আ’যম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সার্বক্ষণিক রূহানী সংযোগ সমৃদ্ধ ও তাঁর মহান সুন্নত দ্বারা সুশোভিত মুজাদ্দিদে আ’যম-এর নেক ছোহবতের মাধ্যমেই আমাদের পক্ষে পাওয়া সম্ভব সনদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জাত ও সিফত সম্পর্কিত ইলম-ফিকির। তাঁর হাক্বীক্বত সম্পির্কিত মা’রিফাত এবঙ তাঁর পূর্ণ অনুসরণ ও সুন্নত পালনের কুয়ত। পবিত্র ঈদ-ই-মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে সেসব নিয়ামত হাছিলই হোক আমাদের অন্তরের আরজু। (আমীন)