সম্মানিত আরশ-এর মালিক আল্লাহ্ পাক-এর জন্যই সব সানা-সিফত। যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বেশুমার দুরুদ ও সালাম যিনি সারা জীবন উচ্চকিতভাবে আল্লাহ্ পাক-এর সার্বভৌমত্বের কথা ঘোষণা করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে, “বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক-এর। যিনি না কোন সস্তান রাখেন, না তার সার্বভৌমত্বে কোন শরীক আছে এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তার কোন সাহায্যকারীর প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং আপনি সসম্ভ্রমে তার মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে থাকুন।” (সূরা বণী-ইসরাঈল-১১১)।
‘সার্বভৌম’ শব্দটি শুধু ব্যাপকই নয় তা বিশ্লেষণধর্মীও বটে। সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কে সহজ ধারণার অভাব অনেকের মাঝেই রয়েছে। অথচ ইসলামী আকীদার সাথে সার্বভৌম ক্ষমতার সঠিক মূল্যবোধের বিষয়টি গভীরভাবে সম্পৃক্ত।
অধুনা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কে যে কথাটির প্রচলন রয়েছে, ইসলামের দৃষ্টিতে তা গভীর আপত্তিকর। “সব সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক জনগণ” একথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্জ্মা এবং কিয়াসের দৃষ্টিতে কোনভাবেই বরদাশত করা যায় না। একটি-দুটি নয়, অনেক আয়াত শরীফেই এ বিষয় স্পষ্টরূপে প্রকাশ পেয়েছে। “আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই তার পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।” (সূরা হাশর-২৪)
“তিনিই আল্লাহ। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ইহকাল ও পরকালে তাঁরই প্রশংসা। বিধান তাঁরই ক্ষমতাধীন এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।” (সূরা কাসাস-৭০)
“নিশ্চয়ই তোমাদের মা’বুদ এক। তিনি আসমান সমূহ, যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর পালনকর্তা এবং পালনকর্তা উদয়াচল সমূহের।” (সূরা আসাফফাত / ৪, ৫)
“তিনি (আল্লাহ), যাঁর রয়েছে, আসমান ও জমিনে সার্বভৌমত্ব। তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি। সার্বভৌমত্বে তাঁর কোন অংশীদার নেই।” (সূরা
ফুুরক্বান/-2)
সকলেরই জানা রয়েছে যে, ইসলামী মূল্যবোধের ক্ষেত্রে শিরক সবচেয়ে অমার্জনীয় অপরাধ। যে প্রেক্ষিতে সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণার অভাব মূলতঃ শিরকের দিকেই ধাবিত করে। এ কথা তাই কখনও বলা শুদ্ধ নয় যে, জনগণই সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কে সাধারণের সমঝের ঘাটতির পিছনে মূলতঃ এক শ্রেণীর নামধারী আলেমের ইলম ও আকীদাগত ত্রুটি অনেকাংশে দায়ী। মাত্র কিছু দিন পূর্বেও তারা নির্দ্বিধায় গণতন্ত্রকেই মূল্যায়ণ করতো। কিন্তু মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর পৌনঃপুনিক আলোচনায়, অনেকটা ইসলামী খোলশ আগলে রাখতেই যেন তারা নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলতে বাধ্য হচ্ছে, ‘সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক জনগণ’-এ কথা ইসলাম সম্মত নয়।
অথচ তাদের গৃহীত কর্মসূচী তাদেরকে সে আদর্শে অবিশ্বাসী এবং অজ্ঞই প্রমাণ করে। বলাবাহুল্য, গণতন্ত্রে জনগণের সর্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের প্রক্রিয়াটি কি? সে বিষয়ে তারা এখনও সমঝদার নয়। সার্বভৌম ক্ষমতার মালিকানা, জনগণ রাষ্ট্রীয় সকল কাজে সমান অংশীদারিত্বের হারে প্রয়োগ করেনা । বরং ভোট প্রদানে তার অবিভাজ্য, জবাবদিহী ক্ষমতা বিহীন, নিরঙ্কুশ ক্ষমতার দ্বারাই সে তার কথিত সার্বভৌষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে। যা কিনা নির্বাচনী ব্যবস্থার মাধ্যমেই হয়ে থাকে ।
উল্লেখ্য ইসলামী আদর্শানুযারী পদের জন্য প্রার্থী হওয়া নাজায়েয। যা দাবীকৃত শাইখুল হাদীছ, মাওলানা মুফতীদেরও প্রকৃতপক্ষে অজানা নেই। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে এধরণের নির্বাচন ব্যবস্থার অগ্রহণযোগ্যতার কথাও তাদের অস্বীকারের কোন উপায় নেই। হালে সাধারণেও উপলব্ধি করতে পারছে খোদায়ী রহমত না থাকার কারণে মিডিয়া ক্যু, কালো টাকা এবং পেশী শক্তির মাধ্যমে অবর্ণনীয় অরাজকতা দ্বারা এ নির্বাচন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সুতরাং সাধারণ দৃষ্টিতেই যখন তা এক অস্বস্তিকর প্রক্রিয়া, তখন ইসলামের লেবেলে কথিত ইসলামী দলগুলো, ইসলামের নামে তাদের স্বার্থানেষী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য কি করে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে? তা সত্যিই গভীর আশ্চর্যবোধক, আক্ষেপ ও ক্ষোভজনিত প্রশ্ন।
এই আক্ষেপ ও ক্ষোভকে মাত্রা দিয়েই যেন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “সাবধান! ধর্মব্যবসায়ী নামধারী মাওলানারা সবচেয়ে খারাপ।”
উল্লেখ্য, এ ধরনের অজ্ঞ ও অসৎ আলেমদের মুখে তাই নির্দ্বিধায় নিন্দনীয়, অসত্য ভাষণে উচ্চারিত হয়, “হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু গণতন্ত্রের জন্য শাহাদাৎ বরণ করেছেন।” (নাউজুবিল্লাহি মিন যালিক)
স্মর্তব্য, হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শাহাদত আমাদের এই শিক্ষাই জোরালোভাবে দেয় যে, আল্লাহ্ পাক কারো পিঠে সীলমোহর মেরে দেননি যে তাকে ছলে বলে কৌশলে তথা অনাদর্শের বা অনৈসলামের সাথে আপোষ করে খিলাফত কায়িম করতেই হবে। আল্লাহ্ পাক যা চান তা কেবল নববী আদর্শের পথে, ইসলামী নীতিতে অটল থাকা। তাই দৃশ্যতঃ হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শহীদ হলেও কার্যতঃ তিনিই কামিয়াব। তার কামিয়াবী হজ্বের, ইসলামের।
বলাবাহুল্য ইসলামী আদর্শ থেকে বিচ্যুতিই মুসলমানদের বর্তমান অবনতির কারণ। এর থেকে উদ্ধারের জন্য দরকার মজবুতভাবে ইসলামী তথা সুন্নতী আদর্শের পথে চলা। এই মুহররমের চেতনা। যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম-এর সোহবতের মাধ্যমেই সে চেতনার উন্মেষ ঘটানো সম্ভব। আল্লাহ্ পাক আমাদের তা নসীব করুন। (আমীন)