সব প্রশংসা মহান আল্লাহ্ পাক-এর জন্য। যিনি অনাদি ও অনন্ত। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অফুরন্ত দরূদ ও সালাম। সময়ের কসম করে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমান, “নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। কেবল তারা ব্যতীত, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে।” সময়ের পরিস্থিতি ও পরিবেশ অধিকাংশ মানুষকে প্রভাবিত করে। কালের ধারাবাহিকতায় আজকে যে যুগে আমরা বাস করছি ইসলামের পরিভাষায় তা ‘আখিরী যুগ’ বলে অভিহিত। এ সময়ের লোকেরা ইসলামকে তাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে মানতে অপ্রস্তুত। ইসলামী চেতনা এখন বিরাজ করছে একটা ক্ষয়িষ্ণু ধারার মত। “গান-শোনা পাপ” সে অনুভূতি এ প্রজন্মকে আলোড়িত করেনা। নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যতিরেকে বিপরীত লিঙ্গের অন্য কারো দিকে তাকানো শক্ত গুনাহ্, তথা ব্যাভিচার সমতুল্য সে বোধ এ যুগের লোকদের পীড়াগ্রস্থ করেনা। সুদ-ঘুষ, দুর্নীতির কামাই এ যুগের লোকদের যন্ত্রণাদগ্ধ করেনা। এ সময়ে মন্ত্রী থেকে আরম্ভ করে প্রশাসনের সর্বত্রই এমনকি মাদ্রাসা-মসজিদের মত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অর্থ আত্মসাত করার মত ঘটনা এতই বেশী হচ্ছে যে, অতি নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য হলেও এটাই যেন এখন সকলের কাছে সহনীয় হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ সর্বত্রই হারামের অবাধ সয়লাব। পাশাপাশি তথাকথিত সংস্কৃতিবাদী তথা বুদ্ধিজীবী মহল প্রগতিশীলতা আর আনন্দ-উচ্ছাসের নামে ক্রমাগতভাবে যেসব নাজায়িয উৎসবের অনুশীলন করছেন তাতে করে সাধারণ মানুষের নফস আরো প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। ইবলিস শয়তান তাতে ওস্ওয়াসা দিয়ে সাধারণের দিল ক্রমাগতই মুর্দা করে দিচ্ছে। মানুষের দিল মুর্দা হবার কারণেই আজ মানুষ নিজেদের জান-মালের নিরাপত্তা তথা অধিকার সম্পর্কে আদৌ সচেতন নয়। দ্রব্যমূল্যের চরম স্ফীতি, সীমাহীন দুর্নীতি, অরাজকতা আর অনৈতিকতার শাসন-শোষনে বিপর্যস্ত ও নাজেহাল সাধারণ মানুষ দিশেহারা। কিন্তু তারপরেও তারা নির্বাক ও নিষ্ক্রিয়। যেন এটাকেই নিয়তি মনে করে নিষ্পেষিত হচ্ছে সবাই। অথচ বিদায় হজ্বের খুৎবায়, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আজকের এ দিন যেমন পবিত্র, তেমনি প্রতিটি মুসলমানের জান-মাল পবিত্র। এমনকি এজন্য তিনি জিহাদ করারও অনুমতি ব্যাক্ত করেন। এর দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, শুধু ঈমানী দিকই নয় অর্থনৈতিক নিশ্চয়তাসহ সব ধরনের সামাজিক নিরাপত্তাও প্রতিটি মুসলমানের জন্মগত বা মৌলিক অধিকার তথা সহজাত পাওনা। এ পাওনা ব্যাহত হলে মুসলমান জিহাদীও হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ চেতনা বড়ই ম্লান। বরং ঐতিহাসিক সত্য এই যে, যখন যে শাসকই এদেশের শাসন ক্ষমতা দখল করেছে তখন তারই বশ্যতা তারা আমভাবে স্বীকার করেছে। যে কারণে সীমাহীন দুর্নীতি আর দুঃশাসনে তথা আত্মঘাতী ও হঠকারীতামূলক রাজনৈতিক কর্মসূচীতে নাভিশ্বাস উঠলেও সাধারণ মানুষ কিন্তু এখনো আদৌ প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারেনি। সাধারণ মানুষের আত্মঅধিকার এরূপ অসচেতন হওয়ার পেছনে মুল কারণ হল নামধারী মাওলানা ও ইমাম তথা ধর্ম ব্যবসায়ীদের অজ্ঞতা, কুপমন্ডুকতা ও স্বার্থবাদী প্রবনতা। ইসলামের ছহীহ ইলম অর্জন, আমলের প্রতিফলন নিজেদের জীবনে ঘটাতে যেমনি তারা অক্ষম তেমনি সাধারণের মাঝে তা বিস্তারেও তারা করুণভাবে ব্যর্থ। ‘তত্ত্ববধায়ক সরকারের রূপকার’ ছিল তাদেরই উচ্চকিত দাবী। কিন্তু এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার তত্ত্বেও যে, আজকের এতসব নৈরাজ্যের বীজ লুক্বায়িত রয়েছে, ইসলামের নামে হারাম পথে চলার কারণেই সে দূরদর্শীতার প্রমান তারা দিতে পারেনি। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন “নাপাক থেকে নাপাকিই তৈরী হয়।” প্রচলিত রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যে ইসলাম নয়- একথা রাজনীতিকরাও স্বীকার করেন। অবস্থার প্রেক্ষিতে কেউ কেউ মনে করেন বর্তমান রাজনীতি একটা অসভ্যনীতি। আর কমপক্ষে সবাই প্রচলিত রাজনীতিকে একটা বিতর্কিত বিষয় বলে ব্যক্ত করেন এবং এরকম বিতর্কিত ক্ষেত্রে ইসলামকে টেনে আনা বা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ঘোর আপত্তি জানান। অর্থাৎ প্রচলিত রাজনীতির পথ ও প্রক্রিয়া আর ইসলামী আন্দোলনের যোগ্যতা ও কর্মসূচী যে সম্পূর্ণ আলাদা সে কথা সাধারণেও বুঝেন। কিন্তু চরম স্বার্থবাদিতার মোহে প্রচলিত রাজনীতির পঙ্কিল পথেই চলছে ইসলামের নামধারী দলগুলো। আজ তাদের প্রতিপক্ষ হয়েছে মুসলমান। মুসলমানকেই কাফির মনে করে বৃষ্টির মত গুলি ছুড়ছে তারা। আর যখন প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাতে মারা যাচ্ছে তখন শহীদ বলে প্রচার করছে। কিন্তু ভেবে দেখার বিষয় যে, লাঠির আঘাতে মৃত্যুপ্রাপ্ত ঐ ব্যক্তিও কিন্তু শুধু লাঠির আঘাতে প্রতিপক্ষকে আহত না বরং গুলির আঘাতে নিহতই করতে গিয়েছিল। সুতরাং সেও যদি সুযোগ পেত তাহলে ঐ লাঠিধারীকেও নিহত করত। তাহলে তারা নিহত করলে গাজী, আর নিজেরা নিহত হলে ঘৃন্য পৈশাচিকতা এ কেমন ফতওয়া? স্মর্তব্য ফতওয়া হল, নবীদের যে শহীদ করেছে সে জাহান্নামী। আবার নবী যাকে হত্যা করেছেন সেও জাহান্নামী। কারণ নবী যাকে হত্যা করেছেন, তিনি তাকে হত্যা না করলে, সুযোগ পেলে সেও নবীকে শহীদ করত। এখানে সে সুযোগ না পাওয়াতেই সে নিহত হয়েছে। যেমন লাঠির আঘাতে নিহত ব্যক্তি সুযোগ পেলে গুলি করে প্রতিপক্ষকে নিহত করত। অতএব তাকে শহীদ বলা যায় না। এবং তারা যে বৃষ্টির মত গুলি করে কাফির মেরেছে তাও বলা যায় না। বরং মুসলমানকে হত্যা করে তারা কুফরী করেছে সেকথা নিশ্চিতই বলা যায়। কিন্তু ধর্ম ব্যবসায়ীরা তাদের এ কুফরী কাজকেই ইসলামের লেবেল এটে প্রচার করছে। এমনিভাবে তারা বেপর্দা, ছবি তোলা, লংমার্চ, হরতাল, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী আইন, ইসলামের নামে নির্বাচন সবই জায়িয করেছে। বলাবাহুল্য এসব ধর্মব্যবসায়ীদের আমলহীনতার কারণেই ইসলামের আদর্শ মুসলমানদের মধ্যে সঞ্চালিত হয়নি। দুর্নীতি, হত্যা ও সন্ত্রাস, ক্ষমতার লোভ একগুয়েমি এসব যে ইসলামের দৃষ্টিতে মহা নিন্দিত সে মূল্যবোধ জনগণের মাঝে জাগরিত হয়নি। যার পরিণতি আজকের রাজনৈতিক সহিংসতা, অরাজকতা আর অস্থিরতা। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “যমিনে যত ফিতনা-ফ্যাসাদ সব মানুষের হাতের কামাই।”
কাজেই সাধারন ধর্মপ্রাণদের মাঝে ধর্মীয় চেতনা জাগরুক করার জন্য চাই ধর্ম ব্যবসায়ীদের নির্মূলকরণ। আর এজন্য যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যমের নেক ছোহবত ও ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহর বিকল্প নেই। মহান আল্লাহ পাক আমাদরে সবাইকে তা নছীব করুন।(আমীন)