সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৫৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক-এর জন্য। যিনি অনাদি ও অনন্ত। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অফুরন্ত দরূদ ও সালাম।

আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আখিরী যামানায় আলিম নামধারী এমন কিছু মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা এমন সব কথা বলবে, যা তোমরা শুননি, তোমাদের বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষ শুনেনি।”

আবহমানকাল ধরে মুসলমানগণ শুনে আসছেন, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা থাকেনা। সে ঘরে নামায পড়া মাকরূহ। কিন্তু এখন ধর্মব্যবসায়ী মাওলানারা টিভি চ্যানেলে বসে নিজেদের রাজনৈতিক মতবাদ বিস্তারের লক্ষ্যে ইসলামের নামে প্রোগ্রাম করে যাচ্ছে। তারা বলছে যে, এসবের দ্বারা তারা ইসলামের প্রচার করছে। কিন্তু যে টিভি চ্যানেলে তারা তথাকথিত ইসলামী প্রোগ্রাম করছে সে টিভি চ্যানেলগুলো যে, ‌ঈদের’ মত  পবিত্র বিষয় উপলক্ষ করে প্রায় শ’ খানিক সিনেমা, নাটক, টেলিফিল্ম তথা ব্যাপক নাচ-গানের আয়োজন করল সে সম্পর্কে তাদের প্রতিক্রিয়া নেই কেন? কোন বিরোধি বক্তব্য নেই কেন? কোন ফতওয়াই নেই কেন?

উল্লেখ্য, ঈদ বিনোদনের নামে এসব আয়োজন যে মূলতঃ অশ্লীলতা, বেহায়াপনা তথা ইসলাম বৈরী মানস তৈরী হয় তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এর দ্বারা কি এই প্রতিভাত হয় না যে, ঈদ বিনোদনের নামে এ সব অনুষ্ঠান এবঙ তাদের তথাকথিত ইসলামী প্রোগ্রাম মূলতঃ সমার্থক। দুটোই অভিন্নভাবে অনৈসলামী। আর সে কারণেই মূলতঃ তাদের সহাবস্থান। নচেৎ ছহীহ ইসলামী শিক্ষা তো সব নাজায়িয বিনোদনেরই ঘোর বিরোধী।

প্রসঙ্গতঃ প্রশ্ন উঠে, তবে তথাকথিত ইসলামী প্রোগ্রামে কী শিক্ষা দেয়া হয়? যাতে কিনা ঐ চ্যানেলগুলোই ইসলামী হচ্ছে না। তারাই অশ্লীলতা ত্যাগ করছে না। অর্থাৎ তথাকথিত ইসলামী প্রোগ্রামগুলোর আবেদন নিতান্তই শুন্য। এ কথা তারাো জানেন। তাই আল বাইয়্যিনাত-এর তরফ থেকে প্রকাশ্য বাহাসের চ্যালেঞ্জেও তারা আজো পর্যন্ত আদেৌ অবতীর্ণ হননি।

মূলতঃ তারা তাদের বিবৃত কথাবার্তা দ্বারা নিজেদের ইসলামের নামে রাজনীতি সম্পৃক্ত কথাবার্তা প্রচার করেন। যা তাদের রাজনৈতিক ভিত তৈরীর কেৌশল। এ ক্ষেত্রে  তারা মডারেট ইসলামের নামে শ্বাশত ইসলামকে কাট-ছাট করে অপব্যাখ্যা করেন। আপাত মধুর যুক্তি পেশ করে তথাকথিত আধুনিক হবার অপচেষ্টা করেন। সত্যিকার অর্থে তাদের ইসলামী মনোভাব এতই সংকীর্ণ যে তারা যেখানে বসে ইসলামের কথা বলছেন সেটাই যে অনৈসলামের তথা ‌অশ্লীলতার মা’ সেখানেই যে প্রতিনিয়ত অনেসলামী আবেদন, পরকীয়া, তথাকথিত আধুনিকতাসহ যাবতীয় অনৈসলামী সঙস্কৃতির জোরদার ছবক দেয়া হচ্ছে- তার বিরুদ্ধে তারা কিছুই বলছেন না বরং সহাবস্থান করে চলছেন। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‍তোমরা হক্বকে বাতিলের সাথে মিশ্রিত করোনা।” (সূরা বাক্বারা)

উল্লেখ্য ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ একমাস রমাদ্বান পালনের পর ঈদ সম্পূর্ণই একটি দ্বীনি উৎসব। কিন্তু ঈদে সাতটি অশ্লীল ছবি মুক্তি। (প্রথম আলো ২২-১০-০৬)  ফাল্গুন-মিউজিকের ঈদ আয়োজন, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হবে ২৩টি সিনেমা।” ঈদের অডিওতে যা আসছে, ‌’সাউন্ডটেকের ঈদ আয়োজন’ এসব সঙবাদ শিরোনাম প্রমাণ করে যে, ঈদ আনন্দকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

অথচ ঈদের ভিত্তি যে রোযা সে সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, যে মিথ্যা আর অশ্লীলতা ত্যাগ করতে পারল না তার রোযা রাখার কোন দরকার নেই। মূলতঃ ইসলামের মূল শিক্ষাই-অশ্লীলতা বিরোধী তথা পর্দা পালন।

কিন্তু বৃটেনের ব্লেয়ার, জ্যাক স্ট্র থেকে দেশীয় উলামায়ে ছূ’রা এক যোগে ইহুদী মদদে নিজেরা বেপর্দা হচ্ছে এবঙ পর্দার বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। ইহুদীরা খুব সূক্ষ্ম কেৌশলে ঈদ ফ্যাশন তথা ঈদের  পোশাকের সুযোগে চরম বেপর্দার ব্যাপক বিস্তার ঘটাচ্ছে। ‘দৈনিক আল ইহসান’ সূত্রে জানা যায় যে, এবার মেয়েদের জন্য ব্যাপক হারে বিক্রী হয়েছে স্কার্ট। আবার স্যালোয়ার কামিজকে আরো বেপর্দা ও সঙক্ষিপ্ত করে নতুন প্রচলন হয়েছে শর্ট কামিজের।

এছাড়া মেয়েদের গেঞ্জী-প্যান্ট, শার্ট-প্যান্ট ছাড়াো সাধারণের পোশাক শাড়ী-কাপড়ো এত পাতলা বের হচ্ছে যে, পর্দানশীনরা পড়ার মত কাপড় পেতে হিমশিম খাচ্ছেন। আর সাধারণরা উপায়ন্তর না দেখে তাই ক্রয় করছেন। অর্থাৎ বিভিন্ন ক্রেজ ও ফ্যাশনের নামে খুব সুকেৌশলে কিন্তু মর্মান্তিকভাবে বেপর্দা বেহায়াপনায় মক্ত করে দেয়া হচ্ছে মসলিম নারী সমাজকে।  প্রসঙ্গত হাদীছ শরীফে সাবধান করে দেয়া হয়েছে, “আখিরী যামানায় মানুষ এমন পাতলা কাপড় পড়বে যে, তাদের সবই দেখা যাবে।” কিন্তু এসব বেহায়াপনা ও অনৈসলামী কর্মকাণ্ডের পরো ধর্মব্যবসায়ী মাোলানা তথা উলামায়ে ‘ছূ’দের বিন্দু মাত্র প্রতিক্রিয়া, প্রতিবাদ ও প্রতিকার নেই।

তারা এএকবারেই নিথর, নিস্তেজ ও নিষ্ক্রিয়। অথচ তাদের অমিত তেজা উদ্যম যেন ঐ মাোসেতুং এর লংমার্চে, গান্ধীর হরতালে, প্রোটেস্ট্যান্টদের মেৌলবাদে, ইহুদী নাছারার ব্লাসফেমী আইন আর বেপর্দায়, ছবি তোলায়, নির্বাচনে, ভোট ও গণতন্ত্রে।

কিন্তু ঐসব নাজায়িয কাজ দ্বারা যে ইসলাম আসেনা, আসার পথ পরিষ্কার হয়না, প্রেক্ষাপট তৈরী হয়না-যতই দিন যাচ্ছে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর সে কথাই তত জোরদারভাবে প্রমাণিত হচ্ছে।

‘কেয়ারটেকার সরকারের রূপকার বলে’ ইসলামের নামধারী যে জামাত গর্ব বোধ করত আজকে তা চূর্ণ হয়েছে। তাদের কেয়ারটেকার সরকারও যে কত অসংগতিতে ভরা, কত বড় সহিংসতা, অরাজকতা আর সংঘাত তৈরী করতে পারে, ‌’তত্বাবধায়ক সরকার’ নিয়ে সাম্প্রতিক কালের ঘটনাপ্রবাহ তারই প্রমাণ।

মূলতঃ ইসলাম এক বিষয় আর প্রচলিত রাজনীতি ভিন্ন জিনিষ। প্রচলিত রাজনীতির গায়ে  যারাই ‘ইসলামের পোশাক’ পড়াতে চান তারা মূলতঃ ইসলামকে নিয়ে ব্যবসাই করেন এবঙ ব্যর্থতারই বিস্তার ঘটান।

অজ্ঞতার আঙ্গিকে যারা বলেন, তবে কি ইসলামে রাজনীতি নেই? তাদের নূন্যতম আক্বীদা বিশুদ্ধ প্রয়োজ যে, ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন। যা অসঙ্গতি, অপূর্ণ ো অন্যায়ে ভরা প্রচলিত রাজনীতির অনেক উর্ধ্বে। ইসলাম কায়েম হবে ইসলামেরই আলোকে, ইসলামের প্রক্রিয়ায়ই। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনবে এবং আমলে ছলেহ করবে এমন লোকদের জন্য আল্লাহ পাক ওয়াদা করেছেন যে তিনি তাদেরকে খেলাফত দান করবেন। (আন নূর-৫৫)

খিলাফত আল্লাহ পাক-এর দান। এটা আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে কুদরতীভাবে ও ওয়েবী মদদে আসবে। কিন্তু তার জন্য দরকার আমলে ছলেহ করা তথা খালিছ আল্লাহোয়ালা হোয়া। আর এ জন্য মুজাদ্দিদে আ’যমের নেক ছোহবতের বিকল্প নেই।

মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সে মহান নেয়ামত নছীব, কবুল ও কামিয়াব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

 সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়