সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৫৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মহান আল্লাহ্ পাক-এর জন্য। যিনি সব কিছু ফায়সালার মালিক। সব ছলাত ও সালাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। যিনি সব কিছুর বন্টনকারী।

প্রসঙ্গত উল্লেখ, তাক্বদীর খুব স্পর্শকাতর বিষয়। তাক্বদীর সম্পর্কিত বিভ্রান্তিকর আলোচনা অতীতের অনেক জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে। তবে তাক্বদীর দোয়া দ্বারা পরিবর্তিত হয় তাও হাদীছ শরীফেরই কথা।

সুতরাং শা’বান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে যখন মানুষের জন্ম-মৃত্যৃ, রিযিক বন্টন সহ, খাছ রহ্মত নাযিল করা হয় তখন সে রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থেকে স্বীয় তাক্বদীরকে মোবারক করাই বুদ্ধিমানের কাজ। যদিও কোন কোন মহল মনে করেন যে, কোরআন শরীফে শবে-বরাত পালনের কোন নির্দেশনা নেই। কিন্তু আসলে তা সত্য নয়। আল্লাহ্ পাক বলেন, “এ বরকতময় রজনীতে আমার নিকট হতে প্রত্যেক হিক্বমত পূর্ণ কাজের ফায়সালা করা হয়।” (সূরা দুখান)

এছাড়াও কুরআন-সুন্নাহর আলোকে শবে বরাতের অনিবার্যতা সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে অকাট্ট ও বিস্তর দলীল-আদিল্লা সাপেক্ষে আলোচনা করা হয়েছে এবং এ সম্পর্কিত বাহাছের চ্যালেঞ্জও দেয়া  হয়েছে।

উল্লেখ্য, শবে-বরাতের পর থেকেই মানুষের মধ্যে একটা আমলের চেতনা জাগরিত হয়। পরবর্তী পনের দিনের মাথায় রমজানের আগমনধ্বনি সাধারণের মনে গুনাহ ত্যাগের মানসিকতা তৈরীর পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত বেশী নেক আমলের দ্বারা রোজার মাস অতিবাহিত করণের একটা পবিত্র ইচ্ছা জাগরুত হয়।তাই রমাদ্বানে মসজিদে বেশী মুছুল্লী হয়, মানুষ অধিকাহারে কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করে, দান-খয়রাত করে, পাশাপাশি ঝগড়া-ফ্যাসাদ, পাপাচার পূর্ণ আনন্দ এবং যাবতীয় হারাম কাজ পরিত্যাগে প্রচেষ্টা চালায়।

মূলতঃ এসব কিছুই হচ্ছে তাক্বওয়া তথা পরহেজগারী অর্জনের পরিক্রমা। আল্লাহ্ পাক বলেন, “হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমনটি করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা তাকওয়া হাছিল করতে পার।” (সূরা তওবা)

উল্লেখ্য, তাক্বওয়ার সাধারণ অর্থ খোদাভীতি হলেও এর ক্ষেত্র অতি ব্যাপক। কারণ তাকওয়া- কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসা, বেপর্দা, বেহায়া তথা ফাহেশা কাজ, কথা, গানবাজনা, সিনেমা দেখা ইত্যাদি যাবতীয় কু-রিপু দমনের নাম। সংযম এসব কু-রিপু দমনে বিশেষ সহায়ক। মুলতঃ নফসের স্বাদ অনাস্বাদন তথা নফস দমন করাটাই সংযমের পরিচয়।

নফস দমনের সাথে ‘রিয়াজত মুশাক্কাত’ কথাটি বিশেষভাবে সম্পৃক্ত। আর এটি পরিপূর্ণভাবে ইল্মে তাছাউফে তথা তাক্বওয়া হাছিলেরই বিষয়। কিন্তু অধুনা তথাকথিত আলেম সমাজ নফস দমনের পরিবর্তে নফসের পায়রবীর প্রাবল্যে তাক্বওয়ার অনুভূতিকে যেন বিলুপ্ত করতে বসেছে। তাক্বওয়ার প্রচেষ্টার বিপরীতে আজকে তাদের মধ্যে তৎপরতা এসেছে কট্টর নাস্তিক বা কমুনিষ্টের লংমার্চের পথে, কট্টর মুশরিক গান্ধীর হরতালের কর্মসূচীতে, খ্রীষ্টান প্রোটেষ্ট্যান্টদের মৌলবাদী অনুভূতিতে, হিন্দুদের কুশপুত্তলিকা দাহে, ইহুদী-নাছারার ব্লাসফেমী আইন দাবীতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী পদক্ষেপে এবং বেপর্দা ও বেহায়াপনায় সম্পৃক্ত হতে।

উল্লেখ্য, যত ফিৎনা-ফাসাদ, গযব, অত্যাচার, নিপীড়ন সবই মুসলমানের নফসের পায়রবির পরিণতি তথা তাক্বওয়াহীনতার কুফল। কি লেবানন, কি ফিলিস্তীন, কি ইরাক তথা গোটা মধ্যপ্রাচ্য সহ গোটা মুসলিম বিশ্বই আজ আমেরিকান আগ্রাসী শক্তি তথা মুসলিম বিরোধি শিবিরের কাছে পদানত ও পর্যুদস্ত। কিন্তু এর প্রতিবাদে মুসলমানের প্রতিক্রয়া সামান্য থাকলেও তার প্রতিকারের প্রচেষ্টার পথ মোটেও ছহীহ নয়। এখন শুধু হাহাকার আর আহাজারির প্রচারণাই চলছে বা মুসলমান কেবল ব্যর্থতায়ই পর্যবসিত হচ্ছে। অথচ মুসলমানের কামিয়াবীর উপায় বিদায় হজ্বের মশহুর সেই হাদীছ শরীফেই ব্যক্ত রয়েছে। “আমি তোমাদের জন্য দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ তোমরা তা আঁকড়ে থাকবে ততক্ষণ তোমরা কামিয়াবীর শীর্ষে থাকবে। আর যখনই তা থেকে বিচ্যূত হবে তখনই লাঞ্ছিত ও পদদলিত হবে। সে দু’টি বিষয় হচ্ছে, কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ।” (মিশকাত)

উল্লেখ্য প্রচারণার এ যুগে মুসলমানও পিছিয়ে নেই। ইন্টারনেট খুললে হাজার হাজার কথিত বা তথাকথিত  ইসলামিক ওয়েব সাইট তার প্রমাণ। এদিকে অস্ত্র ও প্রযুক্তির প্রক্রিয়ায় মুসলমান পিছিয়ে নেই। পাকিস্তানের পারমানবিক বোমা তৈরী ও আরো কয়েকটি মুসলিম দেশের অগ্রগতি এক্ষেত্রে উদাহরণ। কিন্তু তারপরেও মুসলমানের পরে পরে মার  খাওয়ার কারণ মুসলমান নিজেই। কারণ আজ মুসলমান নিজেই ইসলামী আমল ছেড়ে দিয়েছে।

তারা আমেরিকা, ইউরোপ,ইসরাইল আক্রমণ করছে বলে আর্তনাদ করছে কিন্তু নিজেদের লাইফ স্টাইলে মুসলমান সেই ইহুদী-নাছারাদেরকেই হুবহু অনুসরণ করছে। মুসলমান বলতে তাদের জীবন আচরণে ইসলামের অনুভূতি প্রকাশ পাচ্ছে না বা মুসলমানের আমলে কোন ব্যতিক্রমই পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। ইহুদী-খ্রীস্টানদের মতই তারা উদ্বাহু নাচ-গানে মত্ত হচ্ছে। “ক্লোজআপ ওয়ান- তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ, গাও বাংলাদেশ গাও, দারুচিনি দ্বীপের নায়িকা খুঁজছি, লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগিতা, লিভ টুগেদার, ‘পার্টটাইম রোমানস’ এসব সংবাদ শিরোনামই মুসলমানের আমল আজ কত নীচ পর্যায়ে পৌঁছেছে তার প্রমাণ বহন করে।

অতএব, ঈমানের দাবীতে যারা আমেরিকা ইসরাইলের আগ্রাসী হামলায় ব্যথিত হবেন, গুমরে মরবেন কিন্তু মুসলমান হিসেবে অনৈসলামী আমল থেকে দূরে সরবেননা ইসলামী আমল দ্বারা নিজেদের রূহানী কুওয়ত বৃদ্ধি করবেন না তথা খোদায়ী রহমত পাবার পথকে প্রশস্ত করবেন না তাদেরকে মনে রাখতে হবে, লাঞ্ছনা আর নিপীড়ন তাহলে অনিবার্য যা তাদের একান্তই হাতের কামাই।

মূলতঃ নামধারী মাওলানা তথা ধর্মব্যসায়ীদের বদ তাছিরেই সাধারণ মুসলমান নিজেদের আমলকে ইসলামীকরণের ক্ষেত্রে উৎসাহ পাচ্ছে না। বরং ইহুদীদের ক্রীড়ানক ধর্মব্যবসায়ীদের অপতৎপরতার কারণেই সাধারণ মানুষ ওদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে বেশামাল তথা আমলহীন হয়ে পড়ছে।

সুতরাং উম্মাহ্র স্বার্থেই আজ আমাদের এসব ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতিহত করার উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ তথা  মুজাদ্দিদে আ’যমের নেক ছোহ্বতে গিয়ে  তার ফয়েজ বরকতে সুন্নতী আমল দ্বারা নিজ জীবনকে সুশোভিত করতে হবে। আমলের মাস শা’বানে এই পবিত্র ইচ্ছাই হোক আমাদের আগামী দিনের চলার অনুপ্রেরণা। (আমীন)

সম্পাদকীয়

 সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়