সব ছানা ছিফত মহান আল্লাহ্ পাক-এর জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম-এর প্রতি বেশুমার দুরূদ ও সালাম। যিনি সারা ক্বায়িনাতের পথপ্রদর্শক। আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান, “নভোমন্ডল-ভূমন্ডলে এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তীস্থানে যা আছে তা আল্লাহ পাক তাৎপর্যহীনভাবে সৃষ্টি করেননি।” (সূরা হিজর) অথবা “ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করেননি।” (সূরা আম্বিয়া) বান্দা হিসেবে তাই উচিৎ নয় জীবনটাকে ক্রীড়াচ্ছলে গ্রহণ করা বা ক্রীড়ামোদী হওয়া। যদিও বান্দা তাই করে থাকে। তাই মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান, “সময়ের কছম! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ততার মধ্যে লিপ্ত। কেবলমাত্র যারা ঈমান এনেছে এবং নেককাজ করেছে তারা ব্যতিত।” ‘সময়ের কছম’ বলার মাঝে মুহাক্কিকগণ একটা আলাদা বিশেষত্ব খুঁজে পেয়েছেন। এর দ্বারা মূলতঃ প্রত্যেক সময়ই অন্তর্ভুক্ত বলে তারা মনে করেন। যদিও এর অবকাশ ও অনুষঙ্গ পরিবর্তনশীল ও বহুমুখী। গত ৯জুন থেকে ৯জুলাই সারাবিশ্বে ‘বিশ্বকাপ ফুটবলের’ নামে যে হুজ্জোতি হলো তাতে খেলাধুলা এ সময়ের মানসিকতায় কি গভীর স্থান করে নিয়েছে তা জাহির হয়েছে। জানা গেছে, কয়েক বছর আগে থেকে শুরু করে ২০৪টি দেশ থেকে ছেকে রাখা ৩২টি দেশের ৭৩৬ জন খেলোয়াড়ের ৬৪টি খেলা দিয়ে শেষ হয়েছে এবারের অষ্টাদশ বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ ফুটবলকে বলা হচ্ছে বৈশ্বিক খেলা। এটি ধর্ম ও দেশের ঊর্ধ্বে স্থান করে বিশ্বজনীন মাত্রা লাভ করেছে বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। একে জাতিসংঘের চেয়েও শক্তিশালী ধরা হচ্ছে। জাতিসংঘের সদস্য ১৯১। পক্ষান্তরে বিশ্বকাপের আয়োজক ফিফার সদস্য ২০৪। বিশ্বকাপ উম্মাদনায় মেতেছে এদেশেরও অধিবাসী তথা মুসলমান। বিশ্বকাপ উপলক্ষে এক মাসে অতিরিক্ত টিভি বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার। বাড়ির ছাদে চলেছে ভিন দেশের বাহারী ও দীর্ঘ পতাকা উড়ানোর প্রতিযোগিতা। নোয়াখালীর চাটখিলের মত প্রত্যন্ত এলাকায় আর্জেন্টিনার সমর্থকরা টানিয়েছে ১৬ হাত পতাকা আর ব্রাজিলের সমর্থকরা টানিয়েছে ৩২ হাত। শুধুমাত্র রাজধানীর গুলিস্তানে বিক্রি হয়েছে ৬৫ হাজার পতাকা। বিদ্যুতের সাথে জেনারেটর স্ট্যান্ডবাই রেখে বড় বড় পর্দায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে হাজার হাজার স্থানে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। জানা যায়, টিভিতে এবারের বিশ্বকাপ দেখেছে ৫০০ কোটি লোক। স্বাগতিক জার্মানি বিশ্বকাপ আয়োজনে ব্যয় করেছে ৯ হাজার কোটি টাকা। শুধু উদ্বোধনী দিনে জার্মানিতে ফুটবল প্রেমিকরা বিয়ার গিলেছে ২৪ হাজার লিটার। জুয়া ধরেছে ১ বিলিয়ন পাউন্ডের। চোখ ধাঁধানো লেজার রশ্মির ঝলকানী আর উদ্বাহু সাম্বা নৃত্যের সাথে তারা তাল মিলিয়েছে। এছাড়া ছিলো প্রায় বিবস্ত্র ললনা আর আন্তর্জাতিক মডেলদের অব্যক্ত বেলেল্লাপনা। আবার জার্মানিতে অংশ নিতে যাওয়া ৩২টি দেশের সুন্দরীদের নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিলো মিস ওয়ার্ল্ডকাপ প্রতিযোগিতা। জার্মানিতে পতিতা বৃত্তি এমনিতে বৈধ। তারপরেও বিশ্বকাপ উপলক্ষে সেখানে আরো যোগাড় হয়েছিলো ৭০ হাজার পতিতা এবং করা হয়েছিলো ব্যাপক নারী পাচার। অথচ বিশ্বকাপের এসব পাপযজ্ঞ, বেলেল্লাপনা ও বেহুদা খরচের বিপরীতে জ্ঞাতব্য তথ্য হলো যে, বর্তমান বিশ্বে ১২০ কোটিরও বেশী মানুষ চরম দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করছে। ৮০ কোটি লোক চরম খাদ্যাভাবে জর্জরিত। প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একজন শিশু ক্ষুধার যন্ত্রনায় মারা যাচ্ছে। প্রতি সাতজনে একজন শিশু ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভুগছে। বিশ্বখাদ্য সংস্থা জানিয়েছে, প্রতিদিন ২৫ হাজার মানুষ অনাহারের উছীলায় মারা যাচ্ছে। সুতরাং আর্তমানবতার বিপন্ন এ পৃথিবীর কাছে বিশ্বকাপ কি করে বরণীয় হতে পারে? কোন বিচারে তাকে গ্রেটেস্ট ইভেন্ট অন আর্থ বলা যেতে পারে? এ ক্ষেত্রে ইসলামী মূল্যবোধ বড়ই অনিবার্য ও যুক্তিযুক্ত। হাদীছ শরীফে তাই সব খেলাধূলাকেই নিষেধ করা হয়েছে। বলাবাহুল্য, এ আদর্শ যদিও কোন কোন মহলের কাছে বিরূপ মনোভাবের উদ্রেক করতে পারে, কিন্তু আসলে সেটি তাদের অদূরদর্শী ও অজ্ঞ মনেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আর মুসলিম মাত্রেই নিজের ভেতরে নফ্স এবং রূহানিয়ত পরস্পর বিরোধী এ দু’শক্তির অবস্থানকে অকাট্যভাবে গ্রহণ করতে হয়। খেলা-ধূলা, গান-বাজনা ইত্যাদি নফসকে উত্তেজিত করে, উদ্বেলিত করে, আনন্দিত করে। কিন্তু এর কোন সুশৃংখল গতিপথ নেই, শেষ নেই, কামিয়াবী নেই। তদুপরি তা মানবাত্মার জন্য অবমাননাকর এবং লাঞ্ছনাদায়ক বটে। পক্ষান্তরে কামিল মুর্শিদ ক্বিবলা-এর হাতে বাইয়াত হয়ে ক্বলবী যিকিরই দিতে পারে যাবতীয় কামনা-বাসনার পরিশুদ্ধি ও পরিতৃপ্তি। আল্লাহ পাক বলেন- ‘‘সাবধান! (ক্বলবী) যিকির দ্বারাই দিল এতমিনান হয়।’’ (সূরা রা’দ-২৮) বলাবাহুল্য, বর্তমান বিশ্ব এই ক্বলবী যিকির থেকে দূরে বিধায় তাদের অতৃপ্ত মন বিশ্বকাপ ফুটবল, অলিম্পিক, বিশ্বকাপ ক্রিকেট, বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগীতা ইত্যাদি হাজারো অনৈসলামিক কায়দায় আনন্দ অন্বেষণ করে লাখো অনৈতিক এবং অমানবিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। সঙ্গতকারণে সাধারণের এই বিপথগামীতার পিছনে ধর্ম ব্যবসায়ীদেরকেই বিশেষভাবে দায়ী করতে হয়। ধর্মের প্রাণ- ক্বলবী যিকিরের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া থেকে ন্যাক্কারজনকভাবে পিছিয়ে থাকার কারণে সাধারণের মাঝে সে মূল্যবোধের জাগরণ ঘটাতে তারা লজ্জাস্করভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। হাজারো হারাম কাজের আধার- বিশ্বকাপ ফুটবলের বিরুদ্ধে আমাদের তথাকথিত শাইখুল হাদীছ, মুফতী, খতীব, নামধারী পীর, মুফাস্সিরে কুরআন তথা ইসলামী পত্রিকার সম্পাদকদের কোন আওয়াজ নেই। বরং এ ব্যাপারে পুরোই নিষ্ক্রিয় ও নিরব থেকে তারা দিব্যি বোবা শয়তানের ভূমিকা পালন করছে। পক্ষান্তরে, ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, লংমার্চ, হরতাল, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, ইসলামের নামে নির্বাচন, শয়তান প্রসূত এসব হারাম কাজে ঠিকই তাদের কক্ত বড়ই জোরদার। অথচ ঈমানের দাবী তা নয়। কেবলমাত্র যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতই এ বিষয়ে উম্মাহ্র ঈমান হিফাজতে বেমেছাল ভূমিকা পালন করছে। তাই এর প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক তথা বর্তমান যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যমের নেক ছায়াতলে আমাদের সবাইকে করুণাময় আল্লাহ পাক দায়েম-কায়েম রাখুন। (আমীন)