সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সব সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “ওই ব্যক্তি সফলতা অর্জন করেছে যে ইছলাহ লাভ করেছে। আর ওই ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে কলুষিত হয়েছে।” পথ দুটি- এক. সত্যের পথ, দুই. অন্যায়ের পথ। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা সত্যের সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করোনা।” কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা তথা রাষ্ট্রীয় আইন তাই করেছে। দেশে প্রায় বারো’শ আইন রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি আইন ইসলামী। বাদ বাকী সবই অনৈসলামী। কিন্তু এ অনৈসলামী আইন সমাজে কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি। বরং সমাজের সর্বত্র অরাজকতা, অনাচার আর অনিয়ম। প্রতিদিনই পেপার পত্রিকায় এসবেরই সিংহভাগ খবর।
প্রশ্ন হচ্ছে সমাজে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল থেকে আরম্ভ করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রতারণা, রাস্তা-ঘাটে দুর্ঘটনা, স্বামী-স্ত্রী প্রতারণা, বাবা কর্তৃক ছেলেকে হত্যা, পরকীয়ার কারণে মা কর্তৃক সন্তান হত্যা, সেনাবাহিনী-পুলিশ-মন্ত্রী কর্তৃক দুর্নীতি, চালক-হেলপারের দায়িত্বহীনতার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা এসবের পিছনে মূল কারণ কী?
কারণ হলো ভয়হীনতা অথবা সঠিক শক্তিকে ভয় না করা। উপরিল্লিখিত যত অপরাধ আছে এবং সে অপরাধে জড়িত যত মানুষ তারা ভয় পাওয়ার মত কাউকে দেখেনা। এসব অপরাধ থেকে বিরত থাকার জন্য যে শক্তির বর্ণনা দরকার তা তাদের সামনে নেই।
প্রসঙ্গত: উপরিল্লিখিত অপরাধীদের ভয়ের বিষয় হলো রাষ্ট্র। আর রাষ্ট্রের মালিক হলো জনগণ। সংবিধানে রাষ্ট্র বা প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। অর্থাৎ উপরিল্লিখিত অপরাধীদের যদি ভয় পেতে হয় তাহলে তাদের মতে জনগণকেই ভয় পেতে হবে। তারা সব ক্ষমতার মালিক জনগণের পক্ষে ক্ষমতা প্রয়োগকারী পুলিশ, বিচারক ইত্যাদিকে ভয় পাবে। অথচ এরা অপরাধীদের মতোই অনুভূতি, প্রবৃত্তিগত ও প্রকৃতিগতভাবে প্রায় একই ধরনের মানুষ।
সেক্ষেত্রে সঙ্গতকারণেই অপরাধীরা তাদেরকে খুব একটা ভয় পায়না। বরং ম্যানেজ করার অবকাশ পায়। অথবা মন্ত্রী থেকে বিচারক তারাও অপরাধীদের মতোই অন্যভাবে অপরাধই করে যায়। এ কারণে স¦াধীনতা উত্তর এ প্রজাতন্ত্রে অদ্যাবধি দুর্নীতি ও অপরাধ কমার পরিবর্তে উল্টো বেড়েছে। আর সব অঘটনের পিছনে এই একই বিষয়।
কারণ যে লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটে, যে সড়ক দুর্ঘটনা হয় তাতে সংশ্লিষ্টের মনে যদি জনগণের প্রতি জবাবদিহিতার পরিবর্তে মহান আল্লাহ পাক উনার ভয় থাকতো তাহলে সে চালানোর বিষয়ে গাফলতি বা অসতর্কতা অবলম্বন করতো না। সমাজের কোথাও এতো অনাচার হতোনা। এখন যেটা হচ্ছে সংবিধান মোতাবেক প্রজাতন্ত্রের মালিক, সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক জনগণ। কাজেই জনগণ কতটুকু ক্ষমতার মালিক হতে পারে অথবা কতটুকু ভয়ের কারণ হতে পারে সেটা সংশ্লিষ্ট অপরাধীরা ভালো করে বুঝেই অনাচার বা অনিয়মে গা ভাসিয়ে দেয়। আর এ কারণেই সমাজ আজ অন্যায় আর অনিয়মের ¯্রােতে ভেসে যাচ্ছে।
অথচ রাষ্ট্রদ্বীন পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার এ দেশে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আইন অনুযায়ী আমাদের সর্বাগ্রে বিশ্বাস করতে হয় ‘সব সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি।’ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে ‘মহান আল্লাহ পাক’ তিনি তা ব্যক্ত করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আপনি জানেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যই নভোম-ল ও ভূম-লের সার্বভৌমত্ব? মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত (মুসলমানদের জন্য) কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী নেই।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৭)
উল্লেখ্য, সার্বভৌমত্ব ক্ষমতার মালিক যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি, একমাত্র ভয় করার হক্বদারও মহান আল্লাহ পাক তিনি। এ বিষয়েও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ! মহান আল্লাহ পাক উনাকে যেমন ভয় করা উচিত ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাকুন এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করবেন না।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০২)
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “এরা যে রয়েছে, এরাই হলো শয়তান, এরা নিজেদের বন্ধুদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না। তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক, তবে আমাকে ভয় কর।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭৫)
অনুরূপ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আরো অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে রয়েছে।
বলাবাহুল্য “সার্বভৌমত্ব ক্ষমতার মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি” এবং “একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনাকেই ভয় করতে হবে”- এ দুটো মূল্যবোধ যদি আমাদের মাঝে থাকে এবং আমাদের আইন, শিক্ষা ও বিচার ব্যবস্থায় যদি তা সর্বাত্মক প্রতিফলিত হয় তবে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে খুব সহজেই সব অনাচার-অনিয়ম-অন্যায় ইত্যাদি দূর হয়ে যাবে। সমাজে সম্মানিত ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা পাবে। সত্য ও ইনসাফ তথা শান্তি ও সমৃদ্ধির সুবাতাস বইবে। ইনশাআল্লাহ!
মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ অনন্তকালব্যাপী পালন করার ইলম ও জজবা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত মুবারক তথা মুবারক ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারকেই কেবলমাত্র সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। আর ইতিহাসে তিনিই সর্বপ্রথম দিচ্ছেন অনন্তকালব্যাপী পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার মহামহিম নিয়ামত মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)