তাফসীরে বায়যাভী, তাফসীরে নাসাফী, তাফসীরে কুশাইরী, তাফসীরে জালালাইনসহ হাদীছ-তাফসীর ও বিভিন্ন কিতাবাদিতে সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাহরীম শরীফ উনার শানে নুযূলকে কেন্দ্র করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ নানা এলোমেলো ও কুফরীমূলক বক্তব্য রয়েছে। যেমন- ‘তাফসীরে জীলানীতে’ উল্লেখ রয়েছে,
اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَلَا بِاَمَتِهٖ حَضْرَتْ مَارِيَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ فِىْ يَوْمِ حَضْرَتْ حَفْصَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَاطَّلَعَتْ حَضْرَتْ حَفْصَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ عَلٰى ذٰلِكَ فَعَاتَبَتْهُ فَقَالَ حَرَّمْتُ حَضْرَتْ مَارِيَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ عَلٰى نَفْسِىْ لِاَجْلِكِ لَا تَقُوْلِىْ لِاَحَدٍ مِّنْ اَزْوَاجِىْ وَاسْتَكْتِمِىْ عَنْهُنَّ هٰذَا التَّحْرِيْمَ وَاَيْضًا اَلْخِلَافَةُ بَعْدِىْ لِحَضْرَتْ اَبِىْ بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَبَعْدَهٗ لِحَضْرَتْ عُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَلَا تَفْشِ لِاَحَدٍ قَطُّ فَاَخْبَرَتْ حَضْرَتْ حَفْصَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ بِكِلَا الْخَبْرَيْنِ لِكَوْنِهِمَا مُتَصَادِقَتَيْنِ فَاَخْبَرَتْ حَضْرَتْ عَائِشَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِهَا فَغَضِبَ وَطَلَّقَ حَضْرَتْ حَفْصَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ طَلَاقًا رِجْعِيًّا وَعَزَلَ نِسَاءَهٗ تِسْعًا وَّعِشْرِيْنَ يَوْمًا لِاَجْلِ هٰذِهِ الْوَاقِعَةِ فَاَنْزَلَ اللهُ تَعَالٰى ﴿يٰاَيُّهَا النَّبِىُّ…﴾
অর্থ: “(একবার) উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘আহ্ আলাইহাস সালাম উনার (জন্য বণ্টিত) দিনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার বাঁদী হযরত মারিয়া আলাইহাস সালাম উনার সাথে নিরিবিলি অবস্থান করেছিলেন। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘আহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সেটা জানতে পেরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তিরস্কার করেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি আপনাকে সন্তুষ্ট করার জন্য হযরত মারিয়া আলাইহাস সালাম উনাকে আমার জন্য হারাম করে নিলাম। এটা আপনি অন্য কোনো হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের কাছে বলবেন না এবং আমি যে নিজের জন্য উনাকে হারাম করে নিয়েছি এটা আপনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের নিকট গোপন রাখবেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত রবি‘আহ্ আলাইহাস সালাম উনাকে) আরো বলেন, আমার পরে প্রথম খলীফা হবেন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এবং উনার পর হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি খলীফা হবেন। আপনি কখনও এটা কারো নিকট প্রকাশ করবেন না। কিন্তু উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘আহ্ আলাইহাস সালাম তিনি নিষেধ করা উক্ত দুটি বিষয়ই উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার নিকট বলে দেন। কারণ উনাদের দুজনের মধ্যে গভীর মুহব্বতপূর্ণ সম্পর্ক ছিলেন। তারপর উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম তিনি আবার এই বিষয়টি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবহিত করেন। এতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘আহ্ আলাইহাস সালাম উনার প্রতি অসন্তুষ্ট হন এবং উনাকে ত্বালাক্বে রেজয়ী প্রদান করেন। আর এই ঘটনার কারণে তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে ২৯ দিন আলাদা রাখেন। (না‘ঊযুবিল্লাহ!) তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি নাযিল করেন, ‘ইয়া আইয়্যুহান নাবিয়্যু… ইলা আখির’।” (তাফসীরু লিল ইমাম হযরত আব্দিল ক্বাদির জীলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৫/২২৭)
ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “উপরোক্ত বর্ণনাগুলোসহ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ আরো যত বর্ণনা রয়েছে, প্রত্যেকটি বর্ণনাই বাতিল, মওযূ, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। বর্ণনাকারীরা ইসরাঈলী বর্ণনার দ্বারা বিষয়টিকে এলোমেলো করে ফেলেছে।” না‘ঊযুবিল্লাহ!
রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাহ্রীম শরীফ উনার প্রথমোক্ত পাঁচখানা সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার প্রকৃত যে শানে নুযূল বা ঘটনা মুবারক সেটা হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মধু খাওয়া খুব পছন্দ করতেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম (সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাইনাব বিনতে জাহ্শ আলাইহাস সালাম) উনার সম্মানিত ও পবিত্র হুজরা শরীফ-এ মধু মুবারক পান করেছিলেন। প্রত্যেক মধুতে একটা ঘ্রাণ থাকে। একেক ফুলের মধুর মধ্যে একেকটা ঘ্রাণ থাকে। স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেক খাদ্য, তরী-তরকারী, মাছ, গোশত প্রত্যেকটাতে আলাদা আলাদা একটা ঘ্রাণ থেকে থাকে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যেই ঘ্রাণগুলো রুচি সম্মত হতো না, সেগুলো তিনি পছন্দ করতেন না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হুজরা শরীফ-এ যেই মধু মুবারক পান করেছিলেন, সেই মধুর মধ্যে মাগাফীর ফুলের ঘ্রাণ ছিলো। সেই বিষয়টিই উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম তিনি, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ্ আলাইহাস সালাম (সাইয়্যিদাতুনা হযরত সাওদা আলাইহাস সালাম) তিনি এবং উম্মুল মু’মিনীন আর রবি‘আহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম (সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাফছাহ্ আলাইহাস সালাম) তিনি অর্থাৎ উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলেছিলেন। বলার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছিলেন, যদি এই ঘ্রাণই হয়, তাহলে তিনি মধু পান করবেন না। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাহ্রীম শরীফ উনার প্রথমোক্ত পাঁচখানা সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন। কাজেই সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাহ্রীম শরীফ নাযিল হওয়ার কারণ হিসেবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার এবং অন্যান্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ যত বর্ণনা হাদীছ-তাফসীর ও অন্যান্য কিতাবাদিতে উল্লেখ রয়েছে প্রত্যেকটাই বাতিল, মওযূ, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।”
এ সম্পর্কে আল ইমামুল কাবীর, মাফ্খরাতুল মাগরিব হযরত ইমাম কাযী আবুল ফযল ‘আয়ায ইবনে মূসা আল ইয়াহ্চুবী আস সাব্তী আল মালিকী আন্দালুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ ৪৭৬ হিজরী শরীফ এবং বিছাল শরীফ ৫৪৪ হিজরী শরীফ) তিনি বলেন,
اِنَّهُ الصَّحِيْحُ فِىْ اَمْرِ الْعَسَلِ لَا فِىْ قِصَّةِ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلثَّانِيَةَ عَشَرَ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اُمِّ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهَا السَّلَامُ) كَمَا جَاءَ فِىْ غَيْرِ الصَّحِيْحَيْنِ وَلَمْ يَأْتِ بِتِلْكَ الْقِصَّةِ طَرِيْقٌ صَحِيْحٌ قَالَ حَضْرَتْ اَلنَّسَائِىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ حَدِيْثُ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلثَّالِثَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ) فِى الْعَسَلِ اِسْنَادُهٗ جَيِّدٌ صَحِيْحٌ غَايَةٌ
অর্থ: “অবশ্যই (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাহ্রীম শরীফ উনার এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফখানা নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে) ছহীহ বর্ণনা হচ্ছেন- এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফখানা মধু মুবারক পান করার ঘটনার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছেন। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার ঘটনার প্রেক্ষিতে নয়, যেমনটা ছহীহাইনের বাহিরে বর্ণিত হয়েছে। আর সেই ঘটনাটি অর্থাৎ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে বর্ণিত কথিত ঘটনাটি ছহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়নি। হযরত ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার (থেকে বর্ণিত) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা মধু মুবারক পান করার ঘটনা সম্পর্কিত। এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সনদ মুবারক সর্বোচ্চ পর্যায়ের ছহীহ (বিশুদ্ধ)।” সুবহানাল্লাহ! (ইকমালুল মু’লিম বি ফাওয়াইদি মুসলিম ৫/২৯)
আল্লামা হযরত আবুল হাসান আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ খাযিন রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ : ৬৭৮ হিজরী শরীফ এবং বিছাল শরীফ : ৭৪১ হিজরী শরীফ তিনি বলেন,
قَالَ الْعُلَمُاءُ اَلصَّحِيْحُ فِىْ سَبَبِ نُزُوْلِ الْاٰيَةِ اَنَّهَا فَىْ قِصَّةِ الْعَسَلِ لَا فِىْ قِصَّةِ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلثَّانِيَةَ عَشَرَ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ مَارِيَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ) اَلْمَرْوِيَّةُ فِىْ غَيْرِ الصَّحِيْحَيْنِ وَلَمْ تَأْتِ قِصَّةُ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلثَّانِيَةَ عَشَرَ عَلَيْهَا السَّلَامُ مِنْ طَرِيْقٍ صَحِيْحٍ
অর্থ: “হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন, (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাহরীম শরীফ উনার ১ম) সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফখানা নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ছহীহ বর্ণনা এই যে, এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফখানা মধু মুবারক পান করার ঘটনার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছেন। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে বর্ণিত ঘটনার প্রেক্ষিতে নয়। যা ছহীহাইনের বাহিরে বর্ণিত হয়েছে। আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার (সম্পর্কে বর্ণিত কথিত) ঘটনাটি ছহীহ সূত্রে বর্ণিত নয়’।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে খাযিন ৪/৩১২)
ইমাম আবূ মুহম্মদ মুওয়াফ্ফাকুদ্দীন আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে মুহম্মদ হাম্বলী মুক্বাদ্দাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি ইবনে কুদামাহ্ হিসেবে প্রসিদ্ধ (বিছাল শরীফ : ৬২০ হিজরী শরীফ) তিনি বলেন,
فَاِنْ قِيْلَ اِنَّمَا نَزَلَتْ الْاٰيَةُ فِىْ تَحْرِيْمِ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلثَّانِيَةَ عَشَرَ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ مارِيَةَ الْقِبْطِيَّةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ) كَذٰلِكَ قَالَ حَضْرَتْ اَلْحَسَنُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وحَضْرَتْ قَتَادَةُ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قُلْنَا مَا ذَكَرْنَاهُ اَصَحُّ فَاِنَّهٗ مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَقَوْلُ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلثَّالِثَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ) صَاحِبَةِ الْقِصَّةِ اَلْحَاضِرَةِ لِلتَّنْزِيْلِ اَلْمُشَاهِدَةِ لِلْحَالِ اَوْلٰى
অর্থ: “যদি (আপত্তি করে) বলা হয় যে, এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফখানা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনাকে হারামকরণ প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছে, যেমনটি হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত কাতাদাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেছেন। তাহলে আমরা জবাবস্বরূপ বলবো যে, ‘(মধু মুবারক পান করার ঘটনা সম্পর্কে) আমরা যা উল্লেখ করেছি তা অধিক ছহীহ। কেননা মধু মুবারক পান করার ঘটনা ছহীহ হওয়ার উপর ঐক্যমত পোষণ করা হয়েছে। আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বওল শরীফ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত- যিনি মধু মুবারক পান করার ঘটনা বর্ণনাকারী হিসেবে একজন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মূল ব্যক্তিত্ব মুবারক, (এবং তিনি এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ) নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপটে সরাসরিভাবে উপস্থিত ছিলেন, প্রকৃত বাস্তবতার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন’।” সুবহানাল্লাহ! (আল মুগনী ৯/৫০৯)
আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ১৪৪২ হিজরী শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১০ই ছফর শরীফ লাইলাতু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (লাইলাতুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ অর্থাৎ সোমবার রাত) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন, “এই যে দুনিয়া জোড়া বইগুলো কুফরীতে ভরা। আমি বলেছিলাম, বইগুলো সব কাটছাট করা দরকার। ঐ দিন (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ৫ই ছফর শরীফ লাইলাতুল আরবিয়া অর্থাৎ বুধবার রাতে) যে, সে (আল আমীন) ওয়াজ করলো- হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত কিতাব ‘তাফসীরে জীলানী শরীফ’ উনার ব্যাপারে (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাহ্রীম শরীফ উনার তাফসীরে উক্ত কিতাবের ৫ম খণ্ডের ২২৭ ও ২৩০ পৃষ্ঠায় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাহিন্নাস সালাম উনাদের ব্যাপারে অনেক এলোমেলো লিখা আছে, সে বিষয়ে যে ওয়াজ করলো)। তখন হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমার সাথে দেখা করে বললেন যে, ‘এটা আমার তাহক্বীক্ব ছাড়া লেখা হয়ে গেছে।’ উনার ভুলটা উনি স্বীকার করলেন- ‘উনার এটা লেখা শুদ্ধ হয়নি, ভুল হয়ে গেছে।’ আমি তো এগুলো সব বলি না। কারণ বললে, মানুষ বুঝবে না। উনি স্বীকার করেছেন যে, ‘এটা উনার অজান্তে হয়ে গেছে।’ আমি চিন্তা করলাম, উনি এতো বড় ওলীআল্লাহ, উনার এতো তাহ্ক্বীক্ব, এতো রিয়াযাত-মাশাক্কাত, এতো ইছলাহ্, উনি এটা কি করে করলেন? তখন উনি যাহির হলেন। উনি বললেন যে, ‘এটা আমার বিনা তাহ্ক্বীক্বে হয়ে গেছে।’
রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ১৪৪২ হিজরী শরীফ উনার পবিত্র ২১শে রবীউছ ছানী শরীফ লাইলাতু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (লাইলাতুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ অর্থাৎ সোমবার রাত) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘ফালইয়াফরহূ শরীফ’ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি যখন ঐ দিন অর্থাৎ পবিত্র ১১ই রবীউছ ছানী শরীফ জুমু‘আর দিন জুমু‘আর খুতবা মুবারক-এ যাবো, ঐ সময় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনি আমাকে বললেন, ‘হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি যে আমার ব্যাপারে এরকম বললো, তাহলে উনার ছানা-ছিফত করাটা কতুটুকু কি হবে?’ যার কারণে আমি কিন্তু বেশি কিছু আলোচনা করিনি। হিকমত করে আলোচনা করেছি। এরকম তো অনেক ঘটনা আছে। কতটা শুনবে মানুষ? হঁ্যা? কয়টা শুনবে?”
কাজেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয়ে সমস্ত সৃষ্টিকে অত্যন্ত সতর্ক, সাবধান ও সচেতন থাকতে হবে। কেননা যিনি খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন,
وَلَوْلَا اِذْ سَـمِعْتُمُوْهُ قُـلْتُمْ مَّا يَكُوْنُ لَـنَا اَنْ نَّــتَكَلَّمَ بِـهٰـذَا سُبْحٰنَكَ هٰذَا بُـهْتَانٌ عَظِـيْمٌ
অর্থ: “তোমরা যখন (উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ এলোমেলো) এই কথা শুনলে, তখন কেন বললে না যে, এই বিষয়ে আমাদের কোনো কথা বলার অধিকার নেই। তিনি (অর্থাৎ উনারা) অত্যন্ত পবিত্রতম। মহান আল্লাহ পাক তিনিও পবিত্র থেকে পবিত্রতম। এটা একটা কঠিন অপবাদ।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নূর শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬)
অতএব বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ্ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মুসনাদে আহমদ, তাফসীরে ত্ববারী, দুররে মানছূর, ইবনে আবী হাতিম, মাযহারী, তাফসীরে জীলানী, জালালাইন, মকতূবাত শরীফ, তাফসীরে মাতুরীদী, ফাতহুল বারী, উমদাতদুল ক্বারীসহ হাদীছ-তাফসীর, ফিক্বহ্-ফতওয়া, আক্বাইদ-উছূল, শরাহ্, তাছাউফ ও ইতিহাসের অনেক বড় বড় নির্ভরযোগ্য কিতাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ যত হাদীছ ও বক্তব্য রয়েছে, প্রত্যেকটাই বাতিল, মওযূ, বানোয়াট, মিথ্যা, মনগড়া এবং ভিত্তিহীন।
এ প্রসঙ্গে রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান মুবারক উনার খিলাফ কোনো বর্ণনা, কোনো ক্বওল (কথা) বা লিখা গ্রহণ করা যাবে না। সেটা যত বড় ইমাম-মুজতাহিদ, ওলীআল্লাহ ও ছিকাহ্ রাবীই বর্ণনা করুক না কেন, বলুক না কেন বা লিখুক না কেন এবং তা হাদীছ-তাফসীর, ফিক্বহ্-ফতওয়া, আক্বাইদ-উছূল, শরাহ্, বালাগাত-মানতেক ও ইতিহাসের যত বড় নির্ভরযোগ্য কিতাবেই থাকুক না কেন, অবশ্যই অবশ্যই তা বাতিল, মওযূ, বানোয়াট, মিথ্যা, মনগড়া এবং ভিত্তিহীন।”
মহান আল্লাহ পাক তিনি রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে হাক্বীক্বী ছহীহ সমঝ দান করুন। আমীন!
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আল আমীন