– হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
মুর্শিদে মুকাম্মিলঃ
ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর একটি বিশেষ লক্বব হচ্ছে মুর্শিদে মুকাম্মিল”। এ লক্বব মুবারক প্রাপ্তির ইতিহাস বিরাট। ইতিমধ্যেই তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ব্যাপকভাবে। মুর্শিদ (مرشد) শব্দটি আরবী। উর্দু ও ফার্সী ভাষায়ও তার প্রয়োগ রয়েছে। শাব্দিক অর্থঃ পথ প্রদর্শনকারী, উপদেশদাতা। আর مكمل শব্দটিও আরবী। শাব্দিক অর্থ পূর্ণতাদানকারী। যিনি কোন আউলিয়ায়ে কিরাম কর্তৃক খিলাফত প্রাপ্ত হয়ে মুসলিম উম্মাহকে سبيل الرشاد কল্যাণের পথ তথা আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মারিফাত মুহব্বতের পথ প্রদর্শন করেন তাকে মুর্শিদ বলা হয়। যারা হিদায়েত চায় তারা এরূপ মুর্শিদের সন্ধান সহসাই পায়, আর গোমরাহীতে লিপ্ত ব্যক্তিবর্গ, যারা হিদায়েত তালাশ করেনা তারা তাঁর সন্ধান পায়না অথবা পেলেও তাঁকে চিনতে সক্ষম হয়না। তাঁর সোহবতে এস্তেকামাত থাকতে পারেনা। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
من يهد الله فهو المهتد ومن يضلل فلن تجد له وليا مرشدا.
অর্থঃ- “যে হেদায়েত চায় আল্লাহ পাক তাকে হিদায়েত দান করেন। আর যে গোমরাহীতে দৃঢ় থাকে সে ওলী-মুর্শিদের সন্ধান পায়না।” উল্লেখ্য, ওলীয়ে মুর্শিদের মাঝে তা’লীম তরবিয়ত ও উপদেশ দান করত: স্বীয় ছোহবত এখতিয়ারকারীকে মা’রিফাত-মুহব্বত প্রাপ্তিতে পরিপূর্ণতা দান করেন। অর্থাৎ যার ছোহবত এখতিয়ার করলে হাক্বীক্বী মুমিন, হাক্বীক্বী মুসলমান হওয়া যায় তাকে ‘মুর্শিদে মুকাম্মিল’ বলে। ‘কামিল’ অর্থ পরিপূর্ণ। মানবীয় সকল গুণে গুণাম্বিত ব্যক্তিত্ব। আর ‘মুকাম্মিল’ অর্থ অপরকেও পরিপূর্ণতা দানকারী ব্যক্তিত্ব। অর্থাৎ যিনি অন্যকেও কামিল বানানোর যোগ্যতাধারী। আউলিয়ায়ে কিরামগণের নিকট বাইয়াত হয়ে তাঁদের ছোহবত এখতিয়ার, যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মুশাককাত করলে সাধারণতঃ কামিল তথা পূর্ণতা হাছিল হয়। কিন্তু মুকাম্মিল তথা অন্যকে পূর্ণতা দান করার জন্য আলাদা যোগ্যতা প্রয়োজন। একজন মানুষের সমস্ত বদ খাছলতগুলো দূর করে তদস্থলে নেক খাছলতের বীজ রোপণ করা এবং তাতে ফুলে ফলে সুশোভিত করার বিষয়টি তত সহজ নয়। তার জন্য প্রয়োজন অধিক শক্তিশালী ফয়েজ তথা ফয়েজে ইত্তিহাদীর। মুর্শিদে মুকাম্মিল- তিনি “ফয়েজে ইত্তেহাদী”-এর অধিকারী। প্রসঙ্গতঃ ফয়েজে ইত্তিহাদী, তার প্রভাব, গুরুত্ব-তাৎপর্য সমস্ত কিছু জানা আবশ্যক। ফয়েজে ইত্তিহাদীর উৎসঃ ফয়েজে ইত্তিহাদীর উৎস হচ্ছেন স্বয়ং আহকামুল হাকিমীন, মহান আল্লাহ পাক। আল্লাহ পাক-এর খাস রহমত বলতে যা বুঝায় মুলতঃ সেটাকেই ফয়েজ বলা হয়। আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে যখন নিসবত করা হয় তখন তাকে রহমত, বরকত, সাকীনা এবং ইহসান বলা হয়। আর আউলিয়ায়ে কিরামগণের সাথে নিসবত হলে তাকে ফয়েজ বলে আখ্যায়িত করা হয়। অর্থাৎ শুধু পরিভাষাগত পার্থক্য। অন্যথায় তার গুরুত্ব, তাৎপর্য বা প্রয়োজনীয়তার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যেমনিভাবে কারামতের বিষয়টি। আউলিয়ায়ে কিরামগণের দ্বারা যে অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয় তাকে কারামত বলে। নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের দ্বারা সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাকে মু’জিযা বলা হয়। আর আল্লাহ পাক-এর সাথে নিসবত বা সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে কুদরত বলা হয়। ফয়েজের তীব্রতা এবং প্রয়োগকারীর ভিন্নতার কারণে ফয়েজের শ্রেণীভেদ হয়ে থাকে। ফয়েজে ইনেকাসী, ফয়েজে ইলকাহী, ফয়েজে ইছলাহী এবং ফয়েজে ইত্তিহাদী নামকরণ তারই প্রকারভেদ মাত্র। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, একদিন আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি আল্লাহ পাককে উৎকৃষ্ট গুণসম্পন্ন দেখেছিলাম।” অন্যত্র তিনি বলেন, হে আমার হাবীব! ফেরেশ্তাগণ কি বিষয়ে আলোচনা করেন? আমি বললাম, আপনি শ্রেষ্ঠতম অন্তর্যামী। তারপর আল্লাহ পাক অনুগ্রহের জ্যোতি রহমতের ফয়েজ আমার অন্তরে নিক্ষেপ করলেন। এতে আমি তার স্নিগ্ধতা স্বীয় অন্তরে অনুভব করতে লাগলাম এবং আমি আসমান-যমীনের যাবতীয় বিষয় অবগত হলাম। হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে যে, প্রত্যেক বিষয় আমার নিকট প্রকাশিত হলো এবং আমি তৎসমূদয়ের তত্ত্বজ্ঞান লাভ করলাম।” (মিশকাত শরীফ)
(অসমাপ্ত)