মুর্শিদ ক্বিবলা কর্তৃক খিলাফত লাভ
খিলাফত প্রাপ্তি কামিল মুর্শিদের অন্যতম শর্ত। তাঁর কামালিয়াত বা পূর্ণতার সত্যায়ন আউলিয়ায়ে কিরামের মাধ্যমে হওয়া আবশ্যক। আল্লাহ পাক-এর এরূপ বিধান প্রচলিত আছে যে, মানুষ যতক্ষণ কামিল মুর্শিদের দর্শণ (ছোহবত) লাভ না করে ততক্ষণ কামিল বা পূর্ণতা হাছিল করতে পারে না। যেরূপ আলিমগণের ছোহবত ব্যতীত ইল্ম হাছিলে সক্ষম হয়না। (তাছাউফ তত্ত্ব, ত্বরিকত দর্পন) সঙ্গতকারণে প্রয়োজন হয় কামিল মুর্শিদের ছোহবত ও তাঁর মনোসন্তুষ্টি ফয়েজ ও তাওয়াজ্জুহ্র। “ইরশাদুত্ ত্বলিবীন” কিতাবে রয়েছে, “যিনি কোন কামিল মুর্শিদের খিদমত করত: তাঁর তরফ হতে মুরীদ করানোর অনুমতি প্রাপ্ত হয়েছেন তিনিই কামিল মুর্শিদ।” কুতুবুল ইরশাদ, বাহরুল উলূম, হাফিজুল হাদীছ, আল্লামাতুদ্ দাহর মাওলানা মুহম্মদ রুহুল আমীন বশিরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘ফতওয়ায়ে আজিজীয়া’-এর বরাত দিয়ে স্বীয় “তাছাউফ তত্ত্ব তরিক্বত দর্পন” কিতাবে উল্লেখ করেছেন, “কামিল পীর ছাহেব- যিনি অনেক সময় কামিল পীর ছাহেবগণের ছোহবত বা সঙ্গলাভ করে চরিত্র গঠন করে থাকেন এবং তাঁদের নিকট হতে (ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ) আধ্যাত্মিক নূর ও শান্তি লাভ করে থাকেন।” উল্লেখ্য যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে কামিল মুর্শিদের গভীর তায়াল্লুক-নিছবত থাকা আবশ্যক। তাঁর ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ ছাড়া হক্বের উপর ইস্তিকামত থাকা শুধু অসম্ভবই নয় বরং কল্পনাতীতও বটে। মূলত: আউলিয়ায়ে কিরামগণ সিলসিলাক্রমে সিনা-ব-সিনা সেই ফয়েজ ও তাওয়াজ্জুহ পেয়েই মুসলিম উম্মাহ্র হিদায়েত কাজে ব্যাপৃত থাকেন। অর্থাৎ খিলাফত প্রাপ্তিই হচ্ছে সেই ফয়েজ ও তাওয়াজ্জুহ এবং নিছবত পাওয়ার সনদ। কাজেই খিলাফত বা প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি নিছক কোন রেওয়াজ নয় বরং এটি তাৎপর্যম-িত ও স্পর্শকাতর একটি বিষয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, হাল জামানায় যত মশহুর মুর্শিদ দৃষ্টিগোচর হয় তাদের প্রায় সবাই শিকড় কাটা গাছের ন্যায়। সিলসিলার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই, সিলসিলার ঊর্ধ্বতন আউলিয়ায়ে কিরামের সাথে সম্পর্ক না থাকার কারণে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সেই ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ, তায়াল্লুক ও নিসবতের নামগন্ধও তাদের মাঝে নেই। আর তা থাকেই বা কি করে তারা তো খিলাফত প্রাপ্ত নয়। অনেকটা ‘গায়ে মানে না আপনি মোড়ল’- এর মত ক্ষমতা দখলকারী। তারা খিলাফত পাওয়ার উপযুক্ত ছিলনা হেতু খিলাফত দেয়া হয়নি। কাজেই তাদের সেই পীরত্বের মাকামে ব্যাপৃত থাকা অবৈধ তো বটেই এমনকি তা মহাপ্রতারণা ও ধোঁকার শামিল। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই হাদীছ শরীফ, من غش فليس منا. “যে ধোঁকা দেয় সে আমার দলভুক্ত নয়” তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তারা পীর তো নয়ই বরং এই হাদীছ শরীফ মুতাবিক উম্মত থেকে খারিজ। তারা কেউ স্বীয় পিতার ইন্তিকালের পর স্বেচ্ছায় তার শূন্যস্থানপূরণকারী। কেউ বা আম জনতার পরামর্শে গদিনাসীন হয়ে পীর নাম ধারণ করেছে। আবার কেউ লাভজনক ব্যবসা মনে করে পকেট ভারী করার লক্ষ্যেই ক্ষমতা জবরদখল কারী। পরিণামে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। তাদের দ্বারা মানুষের গোমরাহীর পথ প্রশস্ত হচ্ছে। হারাম নাজায়িয কাজগুলোকে একের পর এক হালাল ও জায়িয করছে। আর হালাল ও জায়িয কাজগুলোকে হারাম ও নাজায়িয করছে। অন্ধ অনুসারী মুরীদরা তার অনুসরণ-অনুকরণ করে কাফিরে পরিণত হচ্ছে। ইমামে আ’যম, হাবীবে আ’যম, গাউসুল আ’যম, মুজাদ্দিদে আ’যম, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলীই হাল জামানায় সেই শাশ্বত তর্জ-তরীক্বা মুতাবিক এবং কামিল মুর্শিদ কৃর্তক খিলাফতপ্রাপ্ত এবং হক্বের উপর ইস্তিকামত (অটল) রত একমাত্র মুর্শিদ। তাঁকে যিনি খিলাফত দিয়েছেন তিনিও সাধারণ মুর্শিদ নন। তিনি হচ্ছেন, সেই যামানার সর্বশ্রেষ্ঠ, অদ্বিতীয় এবং বেমেছাল (তুলনাহীন) ওলী। (অসমাপ্ত)