পীরে কামিল-এর পরিচয়
পীরে কামিল-এর আর একটি শর্ত হচ্ছে, ইল্মের অধিকারী হওয়া। জরুরী মাসয়ালা-মাসায়িলের সম্যক জ্ঞান থাকা। কারণ ইল্মহীন ব্যক্তি হাদী হলে উম্মাহ-এর ধ্বংসকে তরান্বিত করে। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
هلك امتى عالم فاجر وعابد جاهل.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ফাসিক আলিম তথা উলামায়ে ‘ছূ’ এবং জাহিল (মূর্খ) দরবেশ, এই দু’শ্রেণীর লোক আমার উম্মতের ধ্বংসের কারণ।”
অতএব, যিনি কামিল পীর ছাহেব হবেন তাঁর ইল্মে ফিকাহ এবং ইল্মে তাসাউফ উভয় প্রকার ইল্মই অন্ততপক্ষে এই পরিমাণ থাকতে হবে যাতে সে নিজেও গোমরাহ না হয় এবং অধিনস্থদেরকে গোমরাহ না করে। যদিও কোন কোন মাশাইখে ইজাম তাফসীরে জালালাইন অথবা মাদারিক এবং মিশকাত শরীফ পড়া ও বুঝানোর মত ইল্ম থাকাকে শর্তারোপ করেছেন। তবে তা যথার্থ নয়। কারণ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং পূর্ববর্তী অনেক ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম ছিলেন, যারা কেহই এরূপ কোন তাফসীরের কিতাব পড়েননি এবং পড়াননি। অথচ তারা হচ্ছেন সত্যের মাপকাঠি এবং সকল যুগের সকল লোকের জন্য অনুসরণীয়, অনুকরণীয়।
তাঁদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,
رضى الله عنهم ورضوا عنه.
অর্থঃ- “তাঁরা (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) আল্লাহ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট আর আল্লাহ পাকও (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম)-এর প্রতি সন্তুষ্ট।” (সূরা আল বাইয়্যিনাহ-৮)
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
اصحابى كلهم كالتجوم بايهم اقتديتم اهتديتم.
অর্থঃ- “আমার ছাহাবায়ে কিরামগণ হচ্ছেন তারকা সদৃশ। তোমাদের যে কেউ তাঁদের যে কাউকে যে কোন বিষয়ে অনুসরণ করলে হিদায়েত (সঠিক পথ) পেয়ে যাবে।” অর্থাৎ তাঁরা মকবুল। তাঁদেরকে অনুসরণকারী প্রত্যেকই হিদায়েতপ্রাপ্ত।
কাজেই গন্ডীভুক্ত কোন কিতাব পড়া বা পড়ানো শর্ত নয় বরং হাক্বীক্বী ইল্মের অধিকারী তথা আলিম হওয়া শর্ত। তা যেকোন ভাবেই হতে পারে। তবে কিতাব পড়তে এবং পড়াতে পারা উত্তম। আর বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, জামানার ইমাম ও মুজতাহিদ তথা মুজাদ্দিদে জামান হওয়ার জন্য খাছ ইল্মে লাদুন্নী থাকা শর্ত।
সেক্ষেত্রে ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বেমেছাল (তুলনাহীন) সেই সর্বোত্তম ব্যক্তিত্ব, পীরে কামিলের বাস্তব উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর ইল্মে ফিকাহ এবং ইল্মে তাসাউফসহ সকল বিষয়েরই ইল্মের ব্যাপকতা এত বিশাল এবং বিস্তৃত যে, তা নির্ণয় করা শুধু অসম্ভবই নয় বরং রীতিমত অনধিকার চর্চা ও বেয়াদবী বটে। যাকে মহান আল্লাহ পাক সব সময় ইলহাম ও ইলকা করেন। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ থেকে যিনি বেমেছাল ইল্মে লাদুন্নী লাভ করেছেন। তাঁর রূহানী নির্দেশে যিনি সকল কাজ করেন, পূর্ববর্তী ইমাম-মুজতাহিদগণ যাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন, তাঁর ইল্মের পরিধি বর্ণনা করা সাধ্য কার?
সমসাময়িক সমস্ত হক্বানী-রব্বানী আলিম ইল্মের দিক থেকে তাঁর সন্তানতুল্য। তিনি যদি একটা পাথর খণ্ডকে স্বর্ণের টুকরা এবং স্বর্ণের টুকরাকে পাথরখণ্ড বলেন, তবে এমন কোন আলিম নেই যে, স্বর্ণের সেই টুকরাকে স্বর্ণের এবং পাথরখণ্ডকে পাথরখণ্ড প্রমাণ করতে পাবে। (সুবহানাল্লাহ)
তাঁর ছোহবত ইখতিয়ারের জন্য যুগ শ্রেষ্ঠ আলিমগণ আসা-যাওয়া করেন। তাঁদের কোন একজনকেও আমি স্বাভাবিক অবস্থায় তাঁর সাথে কথা বলতে দেখিনি। তাঁর ইল্ম এবং বেলায়েতের দাপটে তাদের সমস্ত ইল্ম যেন ছল্ব (নিশ্চিহ্ন) হয়ে যায়। তিনি যদি কারো নিকট হতে কোন কথা শুনার ইচ্ছা পোষণ করেন তবেই সে কথা বলতে পারে অন্যথায় কথা বলার সাহস কারো নেই। তিনি যদি কাউকে প্রশ্ন করে নির্বাক করতে চান তবে এমন কেউই নেই যে, তাঁর প্রশ্নে সদুত্তর দিতে পারে।