-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
মুজাদ্দিদুয্ যামান লক্বব প্রসঙ্গে
مجدد ‘মুজাদ্দিদ’ শব্দটি اسم فا عل । এটা باب تفعيل হতে নির্গত। অর্থঃ সংস্কারক, সংশোধনকারী, নবায়নকারী।
الزمان ‘যামান’ শব্দটি اسم جامد অর্থঃ যামানা, কাল, সময়, যুগ। مجدد الز مان ‘মুজাদ্দিদুয্ যামান’-এর শাব্দিক অর্থঃ যামানার সংস্কারক।
যখন ইল্ম এবং সুন্নত হ্রাস পাবে এবং জিহালতী (মূর্খতা), বিদ্য়াত বৃদ্ধি পাবে তখন যিনি বিদ্য়াত ও বিদ্য়াতীকে মিটিয়ে সুন্নত প্রতিষ্ঠা করবেন, ইলমের প্রচার-প্রসার করবেন তাঁকে মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক বলে। (মিরকাত- ১/৩০২, আওনুল মা’বুদ- ৪/১৭৮, বযহুল মাযহুদ- ৬/১০৩)
মোদ্দাকথা, যিনি যাবতীয় বিদ্য়াত, বেশরা, বেদ্বীনী-বদ্দ্বীনী কার্যকলাপের মূলোৎপাটন করে সুন্নত ও হক্ব প্রতিষ্ঠা করেন তিনি ‘মুজাদ্দিদুয্ যামান’ লক্ববে ভূষিত হন।
عن ابى هر يرة رضى الله تعا لى عنه فيما اعلم عن ر سول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله عزو جل يبعث لهذه الا مة على رأس كل ما ئة سنة من يجدد لها دينها.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এ ব্যাপারে সর্বাধিক অবগত যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক প্রত্যেক (হিজরী) শতকের শুরুতে এই উম্মতের মাঝে এমন একজন ব্যক্তিকে পাঠান যিনি দ্বীনের তাজদীদ বা সংস্কার করেন।” (আবূ দাউদ শরীফ- ২/২৪১)
ان الله تعالى يقيض فى رأس كل ما ئة سنة من يعلم الناس دينهم.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক প্রত্যেক একশত বছরের মাথায় (শুরুতে) এমন একজন ব্যক্তিকে মনোনীত করেন যিনি মানুষকে দ্বীন শিক্ষা দিবেন।” (আওনুল মা’বুদ- ৪/১৭৮)
ان الله يمن على اهل دينه فى ر أس كل مائة سنة بر جل من اهل بيتى يبين لهم امر ديهم.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক প্রত্যেক শতাব্দীর শুরুতে আমার আহলে বাইতগণ থেকে এমন একজন ব্যক্তিকে পাঠিয়ে মু’মিনদেরকে বিশেষ অনুগ্রহ করেন যিনি তাঁদেরকে দ্বীনের যাবতীয় হুকুম-আহকাম সুস্পষ্টভাবে বয়ান করেন।” (আওনুল মা’বুদ- ৪/১৭৯, হাশিয়ায়ে আবু দাউদ- ২/২৪১)
ان شر اشر شر ار العلماء وان خير الخير
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠহচ্ছে উলামায়ে হক্ব। আর সৃষ্টির সর্বনিকৃষ্ট হচ্ছে উলামায়ে ‘ছূ’ দুনিয়াদার মাওলানা।”
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফের আলোকে প্রতীয়মান হয় যে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত দু’শ্রেণীর আলিম থাকবেন। প্রথম শ্রেণী উলামায়ে হক্ব- যারা আখিরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খলীফা বা প্রতিনিধি। তাঁরা দ্বীনের প্রচার-প্রসারের কাজে নিয়োজিত থাকবেন।
আর দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে, ‘উলামায়ে ‘ছূ’ দুনিয়াদার মাওলানা। যারা তাগুত বা শয়তানের প্রতিনিধিত্ব করে। তারা স্বীয় স্বার্থ হাছিলের জন্য দ্বীন বিক্রি করে দুনিয়া তালাশ করে। দ্বীন ধ্বংসের কাজে সব সময় সচেষ্ট থাকে। হালালকে হারাম করে এবং হারামকে হালাল ফতওয়া দিয়ে মানুষকে গোমরাহ করে। সাধারণ লোক তাদের নফসের অনুকূলে ফতওয়া পাওয়ার কারণে সেদিকে ধাবিত হয়। ফলে সমাজ থেকে সুন্নত উঠে যায়। বিদ্য়াত প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সুন্নতগুলো বিদ্য়াত বলে স্বীকৃত হয়। আর বিদ্য়াতগুলো সুন্নত বলে স্বীকৃতি পায়। বিদ্য়াতীরাই দ্বীনের ধারক-বাহক সেজে যায়। হক্বপন্থীগণ বিদ্য়াতীদের প্রভাবে আত্মগোপন করে। হক্ব কথা বলার শক্তি ও সাহস পায়না। ঠিক সেই যুগ সন্ধিক্ষণে মুজাদ্দিদুয্ যামানের আবির্ভাব ঘটে। তিনি বিদ্য়াত ও বিদ্য়াতীদেরকে নির্মূল করে সুন্নত প্রতিষ্ঠা করেন। হক্ব তালাশীদের আশার আলো জ্বালিয়ে দেন। তাদের ঈমান আক্বীদা নবায়ন করেন।
(অসমাপ্ত)