আউলিয়া-ই-কিরামগণের নাম মুবারকে কিভাবে লক্বব মুবারক সন্নিবেশিত হয়
আউলিয়া-ই-কিরাম তথা যামানার ইমাম, ইমামুল আ’ইম্মা, মুহ্ইস্ সুন্নাহ্, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদুয্ যামান, আওলার্দু রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর নাম মুবারকের পূর্বে লক্বব বা খেতাব কিভাবে সন্নিবেশিত বা সংযোজিত হয় তা জানার জন্য আউলিয়া-ই-কিরামের শ্রেণী বিন্যাস সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
আউলিয়া-ই-কিরাম সাধারণতঃ দু’শ্রেণীতে বিভক্ত। (১) কামালতে বেলায়েত তথা বেলায়েতের মাকামের হিছ্ছাপ্রাপ্ত। (২) কামালতে নুবুওওয়াত ও রিসালত তথা নুবুওওয়াত ও রিসালতের মাকামের হিছ্ছাপ্রাপ্ত।
কামালতে বেলায়েতের তা’ছীর বা শান হচ্ছে নিজকে সর্বদা গোপন রাখা।
আর কামালতে নুবুওওয়াত ও রিসালতের তা’ছীর বা শান হচ্ছে প্রকাশ পাওয়া, প্রকাশিত হওয়া। নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের স্বভাব যেমন শরীয়তকে প্রতিষ্ঠা করা। তেমন কামালতে নুবুওওয়াত ও কামালতে রিসালতের হিছ্ছাপ্রাপ্ত আউলিয়া-ই-কিরামের স্বভাব হচ্ছে শরীয়তকে জিন্দা ও প্রতিষ্ঠা করা। এটা তাঁদের দায়িত্বও বটে।
যারা কামালতে বেলায়েতের হিছ্ছাপ্রাপ্ত তাদের মধ্যে আবার দু’টি ভাগ রয়েছে। (ক) বেলায়েতে ছোগরা, হযরত আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের বেলায়েত। (খ) বেলায়েতে কুব্রা, হযরত আম্বিয়া-ই-আলাইহিমুস্ সালামগণের বেলায়েত।
যারা বেলায়েতে ছোগরা-এর মাকামে উন্নীত তাঁরা দু’ভাগে বিভক্ত। তাঁদের প্রথম শ্রেণী- সাধারণভাবে তারা মুসলিম উম্মাহ্র তা’লীম-তরবিয়তে আত্মনিয়োগ করেননা। একাকী, নিরিবিলি জীবন-যাপন করেন। নির্জনতা, নিসঙ্গতাই তাঁদের স্বভাব। তাঁরা লোকালয় হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ে-পর্বতে, অনাহারে-অর্ধাহারে, ছেড়া-ফাঁড়া জামা-কাপড় পরিধান করে লোক চক্ষুর অন্তরালে জীবন অতিবাহিত করতে ভালবাসেন।
সুতরাং তাঁদের সাথে মুসলিম উম্মাহ্র দৈবাৎ পরিচিতি ঘটলেও তাঁদের দ্বারা হিদায়েতের তেমন কোন কাজ হয়না।
আর দ্বিতীয় শ্রেণী- তাঁরা একাকী নিরিবিলি জীবন-যাপন করা পছন্দ করলেও তাঁদের দ্বারা কিছু হিদায়েতের কাজ হয়ে থাকে।
আর কামালতে বেলায়েতের দ্বিতীয় ভাগ হচ্ছে বেলায়েতে কুবরা। বেলায়েতে কুবরা-এর মাকামে উন্নীত আউলিয়া-ই-কিরাম যেহেতু আম্বিয়া-ই-আলাইহিমুস্ সালামগণের বেলায়েতের হিছ্ছাপ্রাপ্ত সেহেতু তাঁদের দ্বারা মুসলিম উম্মাহ্র হিদায়েতের কাজ হয়ে থাকে। তবে তাঁরা নিজকে গোপন রাখতে সচেষ্ট হলেও তাঁদের প্রচার-প্রসার ঘটে। আর তাঁদের মধ্যে বেলায়েতের মাকামের প্রভাব থাকার কারণে নিসঙ্গতা, নির্জনতা, অনাহার, অর্ধাহার থেকে মুক্ত থাকতে পারেননা। সঙ্গতকারণেই তাঁদের মাঝে কামালতে নবুওয়াত বা রিসালতের গুণাবলী বা মাকামের ব্যাপকভাবে বিকাশ ঘটেনা।
তবে কামালাতে নুবুওওয়াত এবং রিসালত তথা নুবুওওয়াত এবং রিসালতের হিছ্ছাপ্রাপ্ত আউলিয়া ই-কিরাম-এর অবস্থা তার বিপরীত। নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ যেমন মুসলিম উম্মাহ্কে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ্ পাক-এর মতে মত এবং নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের পথে পথ হওয়ার জন্য তা’লীম-তরবিয়ত দান করেন। নির্যাতন, নিপীড়নকে অকাতরে বরণ করেও হিদায়েতের কাজে লিপ্ত থাকেন।
কামালতে নবুওওয়াত এবং রিসালতের মাকামের হিছ্ছাপ্রাপ্ত আউলিয়া-ই-কিরামগণের অবস্থাও তদ্রুপ। তারাও মুসলিম উম্মাহকে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ পাক-এর মতে মত এবং আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথে পথ হওয়ার জন্য ত’ালীম তরবিয়ত দান করেন। আর এ জন্য নির্যাতন-নিপীড়ন অকাতরে বরণ করেও মুসলিম উম্মার হিদায়েতের কাজে ব্যপৃত থাকেন।