সময়ের কছম করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কেবল তারা ব্যতীত, যারা পবিত্র ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে।”
সময়ের গতি ও প্রবাহ অধিকাংশ মানুষকে প্রভাবিত করে। কালের ধারাবাহিকতায় আজকে যে যুগে আমরা বাস করছি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার পরিভাষায় তা ‘আখিরী যুগ’ বলে অভিহিত।
আফযালুল আউলিয়া, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় ‘মকতুবাত শরীফ-এ’ এক হাজার হিজরী ঊর্ধ্বকাল বা সময়কে ‘আখিরী যামানা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
‘আখিরী যামানা’ ক্বিয়ামতের নিকটবর্তী যুগ। এ যামানার মানুষের পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিমুখতা সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী ব্যক্ত হয়েছে।
এ সময়ের লোকেরা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে তাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে মানতে অপ্রস্তুত। সম্মানিত ইসলামী চেতনা এখন বিরাজ করছে একটা ক্ষয়িষ্ণু ধারার মতো। ‘গান-শোনা পাপ’ সে অনুভূতি এ প্রজন্মকে আলোড়িত করে না। নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যতিরেকে বিপরীত লিঙ্গের অন্য কারো দিকে তাকানো পাপ, শক্ত গুনাহ, জিনা সমতুল্য সে বোধ এ যুগের লোকদের পীড়াগ্রস্ত করে না। সুদ-ঘুষ, দুর্নীতির কামাই এ যুগের লোকদের যন্ত্রণাদগ্ধ করে না।
এ সময়ে মন্ত্রী থেকে আরম্ভ করে প্রশাসনের সর্বত্রই এমনকি মাদরাসা-মসজিদের মতো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অর্থ আত্মসাৎ করার মতো ঘটনা এতই বেশি হচ্ছে যে, অতি নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য হলেও এটাই যেন এখন সকলের কাছে সহনীয় হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ সর্বত্রই হারামের অবাধ সয়লাব। পাশাপাশি তথাকথিত সংস্কৃতিবাদী তথা বুদ্ধিজীবী মহল প্রগতিশীলতা আর আনন্দ-উচ্ছাসের নামে ক্রমাগতভাবে যেসব নাজায়িয উৎসবের অনুশীলন করছে তাতে করে সাধারণ মানুষের নফস আরো প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। ইবলিস শয়তান তাতে ওসওয়াসা দিয়ে সাধারণের দিল ক্রমাগতই মুর্দা করে দিচ্ছে।
আর এই মুর্দা দিল- দুনিয়া ও আখিরাত- কোথাও শান্তি, স্বস্তি ও সফলতা কিছুই দেয় না। ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “ক্বিয়ামতের দিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোনোই উপকারে আসবে না, কিন্তু যে সুস্থ দিল নিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আসবে।” (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৮-৮৯)
মুহাক্কিক মহল মনে করেন যে, বর্তমানে সেক্যুলার শিক্ষা, সমাজ, দর্শন, ব্যাপক গান-বাজনা, টিভি, ভি.সি.আর, সিনেমা, ডিশ-এন্টিনা, সি.ডি, কনসার্ট, লেজার লাইট শো, র্যাগ ডে পার্টি, পহেলা বৈশাখ, থার্টি ফার্স্ট নাইট কালচার, বসন্তবরণ, ভ্যালেন্টাইন ডে, ইত্যাদি অনৈসলামিক সংস্কৃতি ও অনুষঙ্গের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষের অন্তর যেভাবে মুর্দা হয়ে পড়ছে, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নূর, ঈমান উনার নূর, নেক আমল উনার স্বাদ, বদ-আমলের অন্তঃজ্বালা যেভাবে তাদের অন্তর থেকে তিরোহিত হচ্ছে তাতে করে এ মুর্দা দিলবিশিষ্ট লোকদের অন্তরে যদি ফের পবিত্র ঈমান উনার চেতনা, আমল উনার জজবা, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মুহব্বত জাগাতে হয়, তাহলে অনিবার্যভাবে দরকার রূহানী শক্তি। ইলমে তাছাউফ উনার পরিভাষায় একে বলা হয় ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ মুবারক।
বলা আবশ্যক, বর্তমান সময়ে এদেশ তথা সারা-বিশ্বব্যাপী যেরূপ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিপরীত বৈরী আবহ বিদ্যমান, সে প্রেক্ষিতে কি ব্যক্তি, কি পারিবারিক, কি সামাজিক জীবন, সর্বক্ষেত্রেই যদি বর্তমান ইসলাম বিমুখ মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হয়, ইসলামী মূল্যবোধ ও জজবার জাগরণ ঘটাতে হয়, তাহলে প্রয়োজন ততোধিক ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ মুবারক উনার ঘনঘটা।
যামানার প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ মুবারক বিতরণকারী অমিত শক্তিধর রূহানী ব্যক্তিত্বের অস্তিত্বের কথা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ব্যক্ত করা হয়েছে। উনাকে মুজাদ্দিদুয যামান আখ্যায়িত করে প্রতি হিজরী শতকে উনার আবির্ভাবের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। এমনকি অপর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ‘যে যামানার ইমাম (মুজাদ্দিদুয যামান উনাকে) চিনলো না, সে জাহিলিয়াতের মধ্যে মারা যাবে’ বলে সাবধান করা হয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, মুহইস সুন্নাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনিই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ব্যক্ত সে মহান মুজাদ্দিদ তথা সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম। উনার বেমেছাল রূহানী যোগ্যতা মুবারক, রূহানী দক্ষতা মুবারক, সুন্নতী আমল মুবারক, অভূতপূর্ব ইলমে লাদুন্নী মুবারক, প্রজ্ঞা ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার পক্ষে বেপরোয়া মনোভাবের কারণে তিনি শুধু এদেশের সরকার ও এই দেশের জনগণ নয়, বরং গোটা বিশ্বসরকার তথা বিশ্ববাসীকেই হিদায়েত করার রূহানী হিম্মত রাখেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!
কাজেই দেশের জনগণসহ সরকারের তথা বিশ্ববাসীর উচিত- উনার সকাশে যাওয়া ও নছীহত তথা উনার ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ মুবারক হাছিল করা এবং ফলতঃ অকল্পনীয় সহজ উপায়ে তথা পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের কুওওয়াত অর্জন করা। ঈমানদার হওয়া, মুসলমান হওয়া, সুস্থ দিল হাছিল করা। কামিয়াবী তথা ইতমিনান হাছিল করা।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে কবুল করুন। (আমীন)
-আল্লামা মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, ঢাকা।
বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভুমিকা-৯