পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার ফযীলত প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামান নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “হে মানবজাতি! একটি মহান ও বরকতপূর্ণ পবিত্র মাস তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করার জন্য হাজির হয়েছে।”
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার বরকত অনেক। তন্মধ্যে একটি হলো এ মহান মাসে প্রতিটি নেক কাজের সত্তরগুণ বেশি ছওয়াব পাওয়া যায়। এ জন্য সারা বছর পবিত্র যাকাতআদায়ের সুযোগ থাকলেও পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনারমধ্যে অধিকাংশ বিত্তশালী মুসলমান পবিত্র যাকাত আদায় করেন।
কিন্তু গভীর পরিতাপের বিষয় যে, আজকে মুসলমানগণ উনারা পবিত্র নামায উনাকে যতটা গুরুত্ব দেন, যতটা আগ্রহভরে উনারা একের পর এক পবিত্র মসজিদ নির্মাণ করেন, পবিত্র রোযা উনাদের জীবনে যতটা প্রভাব বিস্তার করেন, সে তুলনায় পবিত্র যাকাত আদায়ের বিষয়টি উনাদের মানসিকতা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছেন। অথচ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে ব্যক্তি পবিত্র যাকাত প্রদান করেনা, তার নামায কবুল হয়না।” (পবিত্র আত্তারগীব ওয়াত্ তারহীব)
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র সালাত কায়িম করার সাথে সাথে পবিত্র যাকাত প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র যাকাত শব্দ ৩২ বার, ইনফাকা শব্দ ৪৩ বার, ছদকা শব্দের মাধ্যমে ৯ বার মোট ৮৪ বার এসেছে। এছাড়া খরচ করা হিসেবে প্রায় ১৫০ বার অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, একমাত্র যাকাত-ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙ্গা করতে এবং সম্পদের সুষম বণ্টনসহ দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে একমাত্র সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে এই যাকাত-ব্যবস্থা।
সম্প্রতি বিদেশে অর্থ পাচার সংক্রান্ত এক ভয়াবহ তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। সংস্থাটির এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর গত চার দশকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা মোট দেশজ উৎপাদনের ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ।
এদিকে সুইস ব্যাংকে অনেক দেশের আমানত যেখানে ২০১৩ সালে কমেছে, সেখানে বাংলাদেশীদের আমানত এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা বেড়েছে। ২০১৩ সালে ব্যাংকটিতে বাংলাদেশীদের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ২৩৬ কোটি টাকা।
সচ্ছল ব্যক্তিরা সচ্ছল হোম বানাচ্ছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত ও থাইল্যান্ডে। নাগরিকত্ব নিচ্ছে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াতে। অর্থ রাখছে হংকং, সুইজারল্যান্ড ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপে। কেউ কেউ ঘর-বাড়ি কিনছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যেও।
এর মধ্যে শুধু মালয়েশিয়াতেই মাই সেকেন্ড হোম প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা মালয়েশিয়ায় চলে গেছে।
দেশে কোটিপতির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতির সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচজন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ জন। ১৯৮০ ডিসেম্বরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮ জনে। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে কোটিপতির মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ১৬২ জন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন সংখ্যা ৪৯ হাজার ৫৫৪। গত ৬ মাসের ব্যবধানে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৪১৯ জন। এর বাইরে আরো কয়েক লক্ষাধিক রয়েছে কোটি টাকার সম্পদের মালিক।
বিপরীত দিকে দেশে দরিদ্র জনগণের সংখ্যাদিন দিন বাড়ছে। যাদের আয় দৈনিক ১ ডলার অর্থাৎ ৭৭ টাকারও নিচে তাদের চরম দরিদ্র হিসেবে ধরা হয় বাংলাদেশে।
জাতিসংঘ এখন ডলারের হিসাবে নয়, মাথাপিছু ক্যালরি গ্রহণকে দারিদ্র্য পরিমাপের একক হিসেবে বিবেচনা করছে। বলা হচ্ছে, এ হিসাব অনুযায়ী দেশে ৩৬ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। কিন্তু এ হিসেবেও প্রকৃত সংখ্যা ৫০ শতাংশেরও বেশি হবে।
তাহলে বিষয়টি কী দাঁড়াচ্ছে? একদিকে কারো ব্যক্তিগত খরচ দৈনিক ৫-৭ লাখ টাকার উপরে। অপরদিকে কেউ দৈনিক ৭৭ টাকা অর্জন করে দু’বেলা শুধু ভাতও খেতে পারছে না। অর্থাৎ স্বাধীন বাংলাদেশেও ধনী-গরিব বৈষ্যম্য অকল্পনীয়। নাঊযুবিল্লাহ!
অপরদিকে এনবিআরের তালিকায় দেশে মাত্র ৫ হাজার ৬৬২ জন কমক রদাতা রয়েছে, যারা দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক। আর এদের কাছ থেকে এনবিআরের রাজস্ব প্রাপ্তি হয়েছে মাত্র ৬০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
অথচ দেশ থেকে শুধু পাচার হওয়া টাকা, ব্যাংকের আমানতকারীদের আমানত থেকে যাকাত আদায় করা হলে তার পরিমাণ দাড়ায় প্রায় ৩ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। শুধু এ থেকেই পবিত্র যাকাত আদায় করা যেতো প্রায় ৮৯ হাজার কোটি টাকা। যা ২০১৫-১৬ সালের জিডিপি’র প্রায় সাড়ে ১০ ভাগ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, বাস্তবে সম্পদশালীদের যারা ব্যক্তিগত ও অপরিকল্পিতভাবে যাকাত দেন তার পরিমাণ হতে পারে মাত্র শতকরা ০.০৪ ভাগ। ঠিকভাবে যাকাত আদায় করা হলে বাংলাদেশে সম্ভাব্য যাকাতের পরিমাণ হতে পারে বছরে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। যাকাতের এই বিশাল অঙ্ক বাস্তবায়ন করা গেলে এক বছরেই বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য দূরীভূত করা সম্ভব। কাজেই বাংলাদেশ সরকারের উচিত সুদভিত্তিক ও আয়করভিত্তিক অর্থনীতি বাদ দিয়ে যাকাতভিত্তিক অর্থনীতি চালু করা।
-আল্লামা মুহম্মদ তা’রীফুর রহমান, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০