(ক)
পৃথিবীটার এখন অনেক বয়স হয়েছে। বেশ বুড়িয়ে গিয়েছে সে। সাথে বয়স বেড়েছে আরেক জনেরও। সে অভিশপ্ত ইবলিস। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে ইবলিসের অভিজ্ঞতার ঝুলিও। শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত হয়েছে তার কুর্কমকা-ের।
কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক বলেন, “মানুষের মধ্যে তোর (শয়তানের) আওয়াজের দ্বারা যাদেরকে পথভ্রষ্ট করা সম্ভব তাদেরকে তুই পথভ্রষ্ট কর এবং তোর চেলা চামু-া নিয়ে তাদের উপর ছওয়ার হ।”
এই আয়াত শরীফে উদ্ধৃত শয়তানের আওয়াজ সম্পর্কে সমূহ তাফসীরে যা বলা হয়েছে তাহলো গান-বাজনা। সে হিসেবে বলতে হয় শয়তানের শয়তান হিসেবে যত বয়স হয়েছে গান-বাজনার বয়সও তার কাছাকাছি। অর্থাৎ দশ, বিশ, ত্রিশ হাজার বছরেরও বেশী।
এতে করে আজকে যে প্রজন্ম আছেন তারা পাচ্ছেন গত বিশ-ত্রিশ হাজার হাজার পুষ্টিপূর্ণ গান-বাজনার আবহ। সেক্ষেত্রে একজন সাধারণ মানুষের শৈশব কৈশোরের ৪/১৪ বছর বা গোটা জিন্দেগীর ৬০/৭০ বছর কিছুই না। ফলতঃ একজন সাধারণ মানব সন্তান খুব সহজেই গান-বাজনা দ্বারা অনুপ্রাণিত, অনুরণিত হয়। গানের সূর তাকে বিমোহিত করে।
বর্তমান আখিরী যামানা সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে, আখিরী যামানায় গানÑবাজনার ব্যাপক বিস্তার হবে।
বলাবাহুল্য তাই হয়েছে। বর্তমানে গান-বাজনার এতই প্রাবাল্য হয়েছে যে, এখন মুসলমান শিশু-কিশোর-যুবকরা জানেইনা ইসলামের দৃষ্টিতে গান-বাজনা হারাম।
বাজারে এখন যেন প্রতি মিনিটে একটি করে নতুন গানের ক্যাসেট সিডি বের হচ্ছে। এখন মানুষের মুকে মুখে, পত্রিকার পাতায় পাতায়, টিভি বিজ্ঞাপনে ওমুকের-তমুকের গানের অ্যালবাম, সিডি, ক্যাসেট ইত্যাদি নিয়েই ব্যাপক চর্চা হচ্ছে। স্বাধীনাতা উত্তর কয়েকজনের স্থলে এখন গায়িকা আর নায়িকার প্রাদুর্ভাব কত যে প্রাদুর্ভাব কত যে প্রকট হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য। যা সীমাহীন বিরক্তিকর, দুঃসহনীয় তথা ঘোর অনৈসলামিক।
বয়সের অভিজ্ঞতায় চেলা-চামু-ার বংশ বিস্তারে ইবলিশ কত ব্যাপকভাবে যে তার আওযাজ ছড়িয়ে দিচ্ছে, তা ইবলিসের হাতের পুতুল-এ প্রজন্ম টেরও পাচ্ছে না। নিত্য নতুন নামে, নিত্য নতুন কায়দায়, ইবলিশ তার কাজগুলো করে যাচ্ছে।
গত ২১ জুলাই সংবর্ধনার নামে প্রথম আলো আর গ্রামীণ ডিজুস ঢাকা শহরের সব জিপিএ- পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এক সঙ্গে ব্যা- সঙ্গীতের হল্লোরে মাতিয়ে দিল। অর্থাৎ ইবলিস কুটকৌশলে এসব কোমল মতি কিশোর-কিশোরীদের অন্তরে তার আওয়াজ তথা গান-বাজনার শক্ত শেকড় স্কুল জীবনের গ-ী উন্মুক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের এখন আরো অবাধে আরো ব্যাপকভাবে গানে মত্ত হবার তা’লীম দেয়া হল। তারা এখন মশগুল থাকবে ওমুক ব্যা- ইত্যাদির আলোচনা-পর্যালোচনা।
(খ)
এদেরকে আজ তাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে সেলিব্রেটি হিসেবে।
পাশাপাশি সেলিব্রেটি হওয়ার ফাঁদে ফেলে সারাদেশে গানের উন্মাদনা করা হচ্ছে নিত্য-নতুন কায়দায়। ক্লোজ আপ ওয়ান তোমাকেই খুজছে বাংলাদেশ, বাউল খোজার অন্বেষণে ইত্যাদি নিত্য-নতুন নামে সারদেশে সারাবছরই গান-বাজনার ব্যাপক উন্মাদনা জিইয়ে রাখা হচ্ছে।
বলাবাহুল্য এসব কিছুর মূলে যে সেই গুরু ইবলিস ও তার চেলা-চামু-রাই কাজ করছে ধর্মব্যবসায়ী মাওলানারা তাদের ধর্মব্যবসা ক্ষুণœ হওয়ার ভয়েই সে কথা উচ্চারণ করছেনা। আর সাধারণ মানুষও তা আদৌ উপলদ্ধি করছে না।
কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বার্থেই সাধারণ মানুষের মধ্যে সে উপলদ্ধির উন্মেষ ঘটানো জরুরী। যে গান ভালবাসেনা সে মানুষ খুন করতে পারে বিখ্যাত ইংরেজ কবি, নাট্যকার সেক্সপীয়রের এ কথা ভুল প্রমাণিত হয়েছে বহু পূর্বেই। কিন্তু তারপরেও গানভক্ত মানুষের যুক্তির অভাব নেই।
মুলতঃ মানুষ এক্ষেত্রে একা থাকেনা, এ সময়ে সীমাবদ্ধ থাকেনা। এক্ষেত্রে সেই বিশ/ত্রিশ হাজার বছরের পূঞ্জীভূত ইবলিশী শক্তি ও ওয়াসওয়াসা তার উপর ভর করে। ইবলিসী শক্তি মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে তাকে চালিত করে।
তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে, মানুষ যখন গান শুনে তখন ইবলিস এসে তার অন্তরে লাথি মারতে থাকে। আর সে গানের সুর লহরীকে নফসের স্বাদের আলোকে পেতে থাকে। সে মনে করতে থাকে গানটা কত আকর্ষণীয়! (নাউজুবিল্লাহ)
(গ)
কিন্তু গান-বাজনা, সিনেমা ইত্যাদি গায়িকা-নায়িকা তথা তাদের ভক্ত শ্রোতা-দর্শকদের কি দিয়েছে? গান-বাজনা তথা সিনেমার মাঝে তারা যে সাময়িক আনন্দানুভূতি পেয়েছেন সেটা সামগ্রিক জীবনে কতটুকু স্থায়ী হয়েছে? জীবনের শেষ লগ্নে বা চরম পরিণতিতে তা কতটুকু সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে? কতটুকু আশ্রয় দিতে পেরেছে?
এজন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, গান-বাজনা মানুষের অন্তরে মুনাফিকীর সৃষ্টি করে।
যে গায়িকা-নায়িকা একটা বিরাট ভক্ত সমাজ পাবার উদ্দেশ্যে তাদের কাছে বাহবা পাওয়ার লক্ষ্যে, তাদের কাছে হার্টথ্রব বা নিদেনপক্ষে সেলিব্রেটি হওয়ার জন্যে গান-বাজনা নাটক-সিনেমায় জীবনকে উৎসর্গ করেন; জীবনের এক পর্যায়ে তারা অবশ্যম্ভাবীরূপে সেটা বিলকুল হারান।
সেটা নতুন নায়িকা-গায়িকার উদয়ের কারণে হতে পারে, তাদের গ্যালামার হারানোর জন্য হতে পারে, আর অন্য কিছু না হলেও নিদেন পক্ষে বয়সের ভারে তা অবশ্যই হয়ে থাকে। অথচ জীবনের সামগ্রিক উপলদ্ধি ও হিসাব শুধু যৌবন আর গ্যালামারকে ভিত্তি করেই না বরং গোটা বয়সের অস্তিত্ব ও অনুভূতি আর মৃত্যুর অঙ্ক কষেই জীবনের পরিণতি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে গান-বাজনা-সিনেমার উদ্দামতা, গায়িকা-নায়িকাভক্ত, শ্রোতা, দর্শক সবার জন্যই টুকরো কাহিনী হয়ে দাঁড়ায়। জীবন বেলাভূমির নিরীখে অবশেষে তা কেবলই ছলনা আর মুনাফেকী বলে প্রতিভাত হয়, প্রতিপন্ন হয়, প্রমাণিত হয়।
(ঘ)
গত ২৬শে মে দৈনিক দিনকাল পত্রিকায় ১২ নং পৃষ্ঠায় সংবাদ শিরোনামটা হয়েছিল এভাবে- “সেই দিনের পর্দা কাপানো নায়িকা রেবেকা এখন মৃত্যু শয্যায়।” এতে বলা হয়-
সত্তর সালের বহুল আলোচিত ভিন্ন ধারার চলচিত্র ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত’-এর পরিচালক ও অন্যতম নায়িকা রেবেকা ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। শুধু বাংলাদেশ নয় অখ- পাকিস্তানেরও তিনিই প্রথম নারী চলচ্চিত্রকার।
গতকাল শুক্রবার ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে অসাধারণ ব্যক্তিত্বময়ী এই নারীকে সামনা-সামনি প্রথম দেখলাম। জীর্ণ শীর্ণ দেহখানি নিঃশব্দ পড়ে আছে বিছানায়।
দুটি কিডনীই অকেজো হয়ে গেছে। এখন নাকে অক্সিজেনের নল। শিরায় লবণ পানি প্রবাহের জন্য সুঁচবিদ্ধ প্রসারিত হাত খানি। নিশ্বাস-প্রশ্বাস চলাচল করছে। কিন্তু হুঁশ নেই। ডাক্তারী ভাষায় এই অবস্থাকে বলা হয় ‘ক্লিনিক্যাল ডেথ’ অর্থাৎ কৃত্রিম উপায়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখা। (সূত্র: দিনকাল ২৬মে ২০০৭)
উল্লেখ্য, রেবেকা তার কয়েকদিন পর মারা যায় কিন্তু তাতে রেবেকার কোন শোককাতর ভক্তকুল দেখা যায়নি। কারো কাঁদার খবর জানা যায়নি। দোয়া করার খবর হয়নি। স্মরণসভা হয়নি। মূলতঃ সত্তর সালের পর্দা কাঁপানো নায়িকা আমি সালেই আর আলোচিত থাকেনি।
(ঙ)
অথচ সত্তরের পর্দা কাঁপানো রেবেকার সে সময়ের অবস্থান আজকের আরেক গায়িকার আলোচনা প্রসঙ্গে আঁচ করা যায়। গত ১৩/০৭/০৭ তারিখে দৈনিক যায়যায়দিনে ছাপা হয়-
* “প্রিয় শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন আর গান গাইবেন না” – এমন কথা শুনে স্কুলে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ক্লাস সেভেনের ছাত্র ইমরান। আর তাকে সান্তনা দিতে শেষ পর্যন্ত গোটা স্কুলের ছাত্র-শিক্ষক মিলে আয়োজন করল ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা আব্দুল বারীকে দিয়ে ও মীলাদের। মীলাদ শেষে সাবিনা ইয়াসমীনের বেশ কিছু জনপ্রিয় গান গেয়ে শোনায় ছাত্রছাত্রীরা। সাবিনার প্রতি এমন শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দেখতে পেরে গর্ববোধ করছেন বলে জানালেন হেড মাস্টার নুরুল আমীন।” (দৈনিক যায়যায়দিন ১৩-০৭-০৭)
* “সাবিনার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে দেশে-বিদেশে তাঁর ভক্তরা উদ্বিগ্ন। তার রোগ মুক্তি কামনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থনা করা হচ্ছে। শুক্রবার মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক গণপ্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রার্থনায় সাবিনার ভক্তরা তার আশু আরোগ্য কামনা করেন।” (সূত্র: জনকণ্ঠ ১৫-০৭-০৭)
* “বাংলাদেশে এমন কোন মেয়ে নেই যে সাবিনা ইয়াসমীন হতে চায়না। একথা জানা গেছে সাবিনা ইয়াসমীনেরই এক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার গল্প থেকে। বছর কয়েক আগে একবার সাবিনাকে তার জীবনের দু’ একটি মজার ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে উত্তরে সে বলেছিল একটি ঘটনার কথা। একদনি বাড়ির উঠোনে দেয়ালের পাশে কয়েকজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে সে বেশ উঁচু স্বরে তার নিজের গাওয়া একটি গান গাইছিল। দেয়ালের অপর পাশে রাস্ত দিয়ে তখন যাচ্ছিল কয়েক যুবক। তাদের মধ্যে একজন গান শুনে মন্তব্য করেছিল, ইস-শ-রে, সাবিনা হইবার চায় মনে হয়। আজ নিশ্চয়ই সেই যুবকদের প্রার্থনাও যোগ দিয়েছে অজস্র মানুষের প্রার্থনায়। (সূত্র: সংবাদ ১৫-০৭-০৭)
* “বাংলাদেশের মানুষের পাশাপাশি সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাঙালিরাও উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন বাঁধন। হাসপাতালে ভর্তির খবর পেয়ে সেদিনই শত শত বাঙালি তাদের প্রিয় শিল্পীকে দেখতে হাসপাতালে ভিড় জমান। তারা ঘণ্টার পর ঘন্টা হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে শিল্পীর দ্রوত আরোগ্য কামনা করেন।” (যুগান্তর ১৩-০৭-০৭)
* “এদিকে সিঙ্গাপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের বাঙ্গালীরা ২৪ ঘণ্টাই ফোনে সাবিনার খবর জানার জন্য ঐ হসপিটালে ফোন করছেন।” (দৈনিক যুগান্তর ১৪-০৭-০৭)
* “বাংলাদেশ অবনত মস্তকে বিদায় দিলো সাবিনা ইয়াসমীনকে, ক্যান্সারের ভয়াল থাবা থেকে বাঁচাতে তাকে নিয়ে যাওয়া হলো সিঙ্গাপুর, পেছনে পড়ে রইল ১৫ কোটি মানুষের উদ্বিগ্ন চোখ, অনিশ্চিত উৎকণ্ঠা, বুকের ভিতরে মোচড় দিয়ে উঠা বোবাকান্না, অন্তরের অন্তঃস্থলের ভালবাসা…….।” (মানবজমিন ১৪-০৭-০৭)
* উপরে উদ্ধৃত সংক্ষিপ্ত সংবাদ অনুচ্ছেদেই সাবিনার কথিত জনপ্রিয়তা মালুম করা যায়। এবং সে সাথে সে সময়ের রেবেকার জনপ্রিয়তাও আঁচ করা যায়।
কিন্তু সত্তরের রেবেকা যেমন আশিতেই আর আলোচিত থাকেনি তেমনি ৬৭ সাল থেকে গান করলেও সে গান অব্যাহত না রাখতে পারলে বা মরে গেলে ২০০৭-এ-ই ভক্তকুলের কাছ থেকে ঝড়ে যাবে আজকের ‘গানের পাখি’ কথিত সাবিনা ইয়াসমীন ও তার ৪০ বছরের কথিত বর্ণাঢ্য গায়কী জীবন।
প্রসঙ্গত: তার সম্পর্কে গত ১৩-০৭-০৭ তারিখে দৈনিক খবরপত্রে বলা হয়েছে,
তাকে ফিরতেই হবে মুক্ত জানালার উদাত্ত আহবানে
লোকসঙ্গীত, আধুনিক বাংলা গান, দেশাত্মবোধক গানসহ সব সঙ্গীতেই তিবি বিশ্বের কোটি কোটি বাঙালী হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়তে সক্ষম হয়েছেন। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে, আচারসঙ্গীত পরিবেশনায় সাবিনার বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন। সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হিসেবে তিনি যুক্তরাজ্য, গ্রিস, জার্মানি,সুইডেন, জাপান, চীন, হংকং, থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান, নরওয়েসহ পৃথিবীর ……….. উজ্জ্বল করেছেন। বাংলাভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি, ফ্রান্স, বাহরাইন, কাতার, কুয়েত, পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়ার আমন্ত্রণে একক গান পরিবেশন করে প্রবাসীদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
সঙ্গীতের স্বীকৃতি স্বরূপ সাবিনা ইয়াসমিন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক পুরস্কার স্বাধীনতা পদক এবং একুশে পদক অর্জন করেছেন। চলচ্চিত্র-সঙ্গীতে অনন্য অবদানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারই পেয়েছেন দশ বার। এটি একজন সঙ্গীত শিল্পীর জীবনে সম্মান ও স্বীকৃতি প্রাপ্তির বিরল ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। বাচসাল পুরস্কারসহ নামী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য পুরস্কার তার সঙ্গিত প্রতিভার চিহিত স্মারক। ভারতের ‘দ্যা বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস এসোসিয়েশন’ তাকে সেরা গায়িকার মর্যাদা দিয়েছে। (দৈনিক খবরপত্র ২৭-০৭-০৭)
(ছ)
উল্লেখ্য সাবিনা ভক্তদের জন্য এতসব স্ততিকাব্যের পর সাবিনা ইয়াসমিনের জন্য এখন কঠিন যে সত্য কথা অথবা চরম বাস্তবতা তা হলো-
“সাবিনা ইয়াসমিন যুদ্ধ শেষে ফিরে আসুন আবার”
গত ১২ জুন জ্বর নিয়ে তিনি হসপিটালে। এরপর মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সিরাজুল হক, মোফাজ্জল হোসেন, সার্জারি বিশেষজ্ঞ খাদেমুল ইসলাম সহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার চিকিঃসা শুরু হয়। হসপিটাল সূত্রে জানা যায়, গত ৫ জুলাই তার গলব্লাডারে একটি সিস্ট ধরা পড়লে সেটি অস্ত্রোপচার করে অপসারণ করা হয়। এরপর দেশে ও বিদেশে সিস্টের বায়াপসি করা হলে রিপোর্টেলিস্ফোমা ক্যান্সার ধরা পড়ে। এটি লিভার, ফুসফুস ও কিডনির উপর আক্রমণ করে। মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন এ ধরনের ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজন কেমোথেরাপি দেয়া। সাবিনা ইয়াসমিনকে কমপক্ষে ছয়বার কেমোথেরাপি দিয়ে কিছুটা সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
শিল্পীর পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয় গত ১১ জুলাই।
সাবিনা ইয়াসমিন বাংলাদেশের সঙ্গিত ভুবনে অনন্য এক মান। কিছুদিন আগেও মিষ্টি হাসির এ শিল্পীর সূরের মুর্ছনায় আমরা হারিয়ে যেতাম, সেই উচ্ছল মানুষটি আজ হসপিটালের বেডে দিন কাটাচ্ছেন। দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে তার শরীর। ফিকে হয়ে যাচ্ছে উজ্জ্বলতা। হলুদাভ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। (দৈনিক যায়যায়দিন ১৩-০৭-০৭)
(জ)
হতে পারে সাবিনা আরো কিছুকাল বেঁচে থাকবেন। কিন্তু মৃত্যুর হিমশীতল পরশ তাকে স্পর্শ করবেই করবে।
সেক্ষেত্রে কথিত সেলিব্রেটি সাবিনা কি ভেবে দেখবেন যে, গান ও তার তথাকথিত কোটি কোটি ভক্ত তাকে কি দিতে পারল?
কথিত দেশপ্রেমিক সাবিনা দেশেই চিকিৎসা চেয়েছিল কিন্তু দেশীয় ভক্তরা তাকে রাখতে ব্যর্থ হলেন। উন্নত চিকিঃসার জন্য বাংলাদেশের সাবিনা ভক্ত ডা. সজল আশফাক, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সিরাজুল ইসলাম, বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ড. মালী হোসেন, ডা. মহিউদ্দীন ডা. খাজা নাজিমুদ্দীন সবাই অবশেষে ব্যর্থ হলেন। তাকে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টারের ৭৮নং ওয়ার্ডের ১৬নম্বর কেবিনে ভর্তি করা হলো। পেছনে পড়ে থাকল তার বর্তমান লক্ষ কোটি ভক্তের আকুতি। কিন্তু এ নিবেদন পুরোই স্বার্থপ্রণোদিত। সূরের ভূবনে গানের পাকি সাবিনা আবার ফিরে আসুক, আবার সবার নফসের ইবলিসী স্বাদের যোগান দিক ভক্তের সে আকাঙ্খা জড়িত।
যে কথা আগেও বলা হয়েছে যে, তাই বলে সাবিনার স্থান কিন্তু শূন্য হয়ে থাকবে না। সামান্য কিছুদিনের ফারাকে তা প্রতিস্থাপিত হয়ে যাবে।
(ঝ)
সুতরাং এই বিষয়ই বার বার প্রতিভাত ও প্রমাণিত হয় যে ব্যক্তি গায়িকা-নায়িকাদের কোন ভক্তই মূল্যায়ন করেনা। করে তাদের গায়কীকে ও সৌন্দর্যকে। সুতরাং সেক্ষেত্রে তারা খুবই অসহায়, নিঃসঙ্গ, হতদরিদ্র।
নামকাওয়াস্তে হাজারো ভক্ত থাকলেও খাঁটি জীবনসঙ্গী থাকেনা এদের একজনও। ঢাকার ল্যাব এইডে সাবিনা যখন কুকড়ে মরছেন তার স্বামী সুমন তখন কলকাতায় গান করে বেড়াচ্ছেন। ভক্তরা যখন সাবিনাকে সিঙ্গাপুর পাঠিয়ে শ্রান্ত, দিন অতিক্রান্ত তার স্বামী তখনও জানেইনা যে তাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জীবন-সন্ধিক্ষণের লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করলেও আজ তাকে চিকিৎসার জন্য এখানে ওখানে হাত পাততে হচ্ছে। অর্থাৎ এদের সংসারেও শান্তি নেই, টাকায়ও বরকত নেই, জীবনেরও কোন দাম নেই।
এদিকে খোদ প্রধান উপদেষ্টা সাবিনাকে দু’দফায় আট লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন।
কিন্তু বিত্তশালী এক সাবিনাকেই যদি দশ লাখ টাকা দেয়া হয় তাহলে দেশের লক্ষ গরীব-অসহায়রা কেন বঞ্চিত হচ্ছে? এ বৈষম্যের অধিকার প্রধান উপদেষ্টাকে, রাষ্ট্রপতিকে কে দিল? তাহলে কি গান সরকারকেও বিভ্রান্ত করে? বৈষম্য শেখায়?
(ঞ)
গান যে আদলেই মুনাফিকী তৈরী করে সাবিনা তার ভক্তবৃন্দ এখন সে শিক্ষাটা হাতে কলমে নিতে পারেন।
নন- হসকিন’স লিম্ফোমায় আক্রান্ত, আজকের ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া সাবিনা যখন কেমোথেরাপির পাশ্বপ্রতিক্রিয়ায় দুদর্শাগ্রস্ত সে মুহূর্তেকি তার মুখ থেকে উদ্দামত্তার, ছলনার, চপলতার, চটুলতার রোমান্টিকতায়, প্রেম-নিবেদনের, উদ্বাহু নৃত্যের, সেই গানের কলিগুলো বেরিয়ে আসছে?
অথচ তিনি প্ররূপ গান গেছেনে লক্ষবার। তাহলে সে লক্ষবার গাওয়া গানগুলো কি তার জীবনের এ মুহূর্তে অর্থহীন, বিদ্রুপাত্মক, বিভিষীকাময় মরীচিকা প্রতিপন্ন হচ্ছেনা?
আর শুধু সাবিনাই নয় সাবিনা ভক্ত যেসব ক্যান্সার রোগী রয়েছেন অথবা অন্য রোগীই রয়েছেন অথবা অন্য কোন বিপদ-দুঃখ দুর্দশাগ্রস্থ ব্যক্তি রয়েছেন তারাও কি পারবেন সে দুঃখজনক মুহূর্তে সে ব্যথা এবং বেদনাদায়ক মুহূর্তে উদ্বাহু নৃত্যের গীত গেতে? বাজনার তাল উঠাতে?
এরপরেও যাদের অন্তরে মোহর পড়ে গেছে তারা কূট যুক্তির অবতারণা করতে পারেন যে, সে দুঃখজনক মুহূর্তে তার দুঃখের গান গেয়ে নিজেকে সান্তনা দিবেন। কিন্তু সান্তনা পাওয়া আর দুঃখ দূর হওয়া এক জিনিস নয়। আর গান-বাজনা দুঃখ দূর করতে পারেনা। পারলে উদ্বাহু নৃত্য-গীতের কথিত কিংবদন্তী রূনা লায়লা, আমেরিকার মঞ্চে, সাবিনা ইয়াসমিনের ক্যান্সারের কথা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন না।
(ট)
এটাই বাস্তবতা। তাই রুনা লায়লাও কেঁদে কেটে সবাইকে দোয়া করতে বলেছেন। দোয়া করতে বলেছেন কথিত প্রোথিতযশা অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার সহ আরো অনেক নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, বুদ্ধিজীবি তথা সংস্কৃতিকর্মী। এমনকি সাবিনা নিজেও বিদেশে যাওয়ার সময় চিঠি লিখে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন এবং সিঙ্গাপুরে গিয়েও বার বার দোয়া চাচ্ছেন। (সূত্র- আমার দেশ ১৫-০৭-০৭)
তাহলে একটি বিষয় বারবার প্রতিভাত হচ্ছে যে, তথাকথিত সেলিব্রেটি, হার্টথ্রব- নায়ক-নায়িকা, গায়ক, গায়িকা, তথা সংস্কৃতিকর্মী সারাজীবন গুনাহর কাজে মশগুল থাকলেও আসলে তারা সব সময়ই দোয়া তথা আল্লাহ পাক-এর রহমত এর মুখাপেক্ষী
এদিকে বিপদে পড়ে আল্লাহ পাক-এর রহমত চাবেন কিন্তু সুস্থ অবস্থায় সংস্কৃতির নামে আল্লাহ পাক-এর শত্রু, মুসলমানের শত্রু, ইসলামের শত্রু ইবলিসের আওয়াজকে বুলন্দ করবেন, গান-বাজনায় মত্ত রেখে মানুষকে আল্লাহ পাক থেকে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে, ইসলাম থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে দিবেন তা কি চরম ছলনা, প্রবঞ্চনা আর মুনাফেকী নয়?
সত্যিই গান বাদ্য মানুষকে শুধু মুনাফেক আর মুনাফেকীতেই পর্যবসিত করে।
(ঠ)
উল্লেখ্য,কান্নায় ভেঙ্গে পড়া রুনা লায়লা থেকে খোদ সাবিনা ইয়াসমীন দোয়া চাইলেও সাবিনার জন্য হাইমচর স্কুলের শিক্ষক মাওলানা আব্দুল বারী আর ঢাকা চামেলীবাগে গত ১৬ জুলাই শুক্রবার বাদ জুমুয়া আমিনবাগ মসজিদে, মিলাদ শরীফ পাঠ ও দোয়ার মাঝে দুস্তর ফারাক রয়েছে। (দৈনিক খবরপত্র ১৪-০৭-০৭)
কারণ তারা দোয়া করেই একটি জিনিস চেয়েছেন ও বলেছেন, সাবিনা যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়েউঠে। কিন্তু তারা কি ভেবে দেখেছেন দোয়াটা তাদের কিভাবে করা উচিত ছিল এবং তারা যেভাবে দোয়া করেছেন তার পরিণতি কি? তাদের মাঝে আর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সাবিনার জন্য প্রার্থনাকারী পুরোহিতদের মাঝে পার্থক্য কি? (আসলেই কোন পার্থক্য নেই)
উল্লেখ্য, হিসাব অনুযায়ী শুধু চলচ্চিত্রের জন্যই তিনি গান গেয়েছেন নয় হাজারেরও বেশী। যে গান মুনাফেকী তৈরী করেছে। বিভ্রান্ত ও গোমরাহ করেছে লক্ষ কোটি লোককে। কবিরাহ গুনাহ হয়েছে কোটি কোটি।
এখন আমভাবে তার জন্য দোয়া করে উলামায়ে ‘ছূ’রা কি সেই কোটি কোটি গুনাহর আর গুমরাহীর পথকেই আরো প্রশস্ত করতে চাচ্ছেন না। আর সাবিনা নিজেও কি সে বিষয়টি স্পষ্ট করেন নাই।?
বিদেশে যাওয়ার আগে সাবিনা জাতির উদ্দেশ্যে যে চিঠি লিখে রেখে গেছেন তাতে তিনি বলেছেন, “তার ভেতরে রয়েছে আরও অনেক কথা, অনেক গান ও অনেক সুর। সে জানে দেশবাসী তাকে ভালবাসে এবং তার কাছ থেকে সে গানগুলো শুনতে চায়।” (দৈনিক সংবাদ ১৫-০৭-০৭)
(ড)
তাহলে কি এই প্রমাণিত হয় না যে সাবিনার জন্য দোয়াকারী ইমাম মাওলানা তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা সাবিনার সে গানগুলোই আবার শুনতে চায়। মুলতঃ তারা শুধু চায়না পাশাপাশি তারা আম মানুষদেরকেও শোনাতে চায়। কারণ তারা ইবলিসের অনুচর। ইবলিস তাদেরকে নিযুক্ত করে তাদের কাঁধে কাজ চাপিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। আর তারাই এখন নেকীর ছূরতে গোমরাহি, বিভ্রান্তি ও গুনাহর প্রসার করে চলছে।
তাই সাবিনা ইয়াসমিনের জন্য দোয়া করতে গিয়ে কোন উলামায়ে ‘ছূ’ দোয়া করেনি যে, আল্লাহ পাক! এবং তার ভক্তদের তওবা নসীব করুন। গান বাদ্য থেকে ফিরে আসার তাওফিক দেন। মানাফেকী থেকে উদ্ধার করুন। ইসলামী মত-পথে ফিরে আনুন। হিদায়েত করে দিন।
উলামায়ে ‘ছূ’রা নিজেরাই হিদায়েত প্রাপ্ত না হওয়ার কারনে সে দোয়া করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বরং লুকিয়ে লুকিয়ে তাদেরও সাবিনা ইয়াসমিনের গান শোনার অভ্যাস থাকার জন্য কার্যত তারা সাবিনা যাতে আবারো তাদের গান শোনাতে পারে সে দোয়াই করেছে। (নাউজুবিল্লাহ)
এজন্যই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ধর্মব্যবসায়ীরাই সৃষ্টির নিকৃষ্ট। এদের কারণেই গায়ক-নায়িকা, বাদিকা তথা সংস্কৃতিকর্মীরা পায়না ইসলামী আদর্শের প্রতিফলন। দেখেনা ইসলামের সৌন্দর্য্য। বুঝেনা ইসলামের মাহাত্ম। জানেনা ইসলামের শিক্ষা। এরা গান-বাদ্যের বিরুদ্ধে বললেও নিজেরাই তা শোনে। সংস্কৃতিকর্মীরা তাই গান-বাদ্য থেকে ফিরে আসার উৎসাহ পায়না। অর্থাৎ আজকের গান-বাদ্য তথা অনৈসলামী সংস্কৃতির মূলে মুলতঃ ঐ উলামায়ে ‘ছূ’রাই দায়ী।
-মুহম্মদ তারীফুর রহমান, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২