পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম, সিলসিলার ত্যাজ্য নাতি নামে খ্যাত গদীনশীন সাহেব মারা গেছেন। শুনেই চিন্তা করলাম একবার গিয়ে দেখেই আসি। পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন সময় তার অদ্ভুত বিবৃতি শুনেছি, ছবিও দেখেছি। তার প্রকাশিত একটি স্মরণিকাতে সে লিখেছে- ওল্ডটেস্ট মেন্ট এবং নিউ টেস্টমেন্টের মতই আল্লাহ’র নাযিলকৃত লাস্ট টেস্টমেন্ট হচ্ছে আল কুরআন; (নাউজুবিল্লাহ)। উক্ত স্মরণিকা পড়ার পর থেকেই তাকে একটু পরখ করার ইচ্ছা বিরাজ করছিল মনে। পত্রিকাতে মৃত্যু সংবাদ এর সাথে উল্লেখ করে ছিল, “তিনি বুধবার সকালের দিকে মারা গেছেন আর লাশের জানাজা দাফন হবে শুক্রবার বাদ জুমুয়া।” লাশ দেখার আগ্রহে তাই খোঁজ নিলাম কিন্তু জানতে পারলাম ত্যাজ্য নাতি সাহেবের লাশ বারডেমের ডীপ ফ্রীজে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তাই বারডেম হাসপাতালের দায়িত্বশীল এক বন্ধুর নিকট ফোন করে লাশ দেখানো যাবে কি-না বলে জানতে চাইলাম। বন্ধুটি জানালো যে- মৃত ত্যাজ্য নাতি সাহেবের পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ না দেখানোর জন্য কড়াকড়ি ভাবে নিষেধ করা আছে, তুমি পারলে মৃত ত্যাজ্য নাতির গদিনশীন কারো মাধ্যমে অনুমতি নিয়ে আসতে পারো। অগত্যা নিরূপায় হয়ে শুক্রবার মিরপুর দারুস সালামে রওনা হলাম, কারণ সেখানেই জানাজা পড়ে তাকে কবরস্থ করা হবে। জানাজা নামাজ প্রাঙ্গনে দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে ‘ছূ’ এবং তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখতে পেলাম। গুনে গুনে লোকজনকে লাশ দেখানো হচ্ছিল। কোনক্রমে আমিও কাছাকাছি পৌঁছলাম লাশ দেখতে। কিন্তু একি! লাশতো উন্মক্ত করা হয়নি। হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে লাশ রাখা হয়েছে। জানালা দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। দেখতে পেলাম মাথা ফুলে গেছে, চেহারা কাল হয়ে গেছে। বিশেষ করে কপাল অধিক কাল হয়েছে। চেহারা বাম দিকে বাঁকা হয়ে পিছন দিকে ঘুরে গেছে এবং লাশ থেকে বিকট দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল আশে পাশে। দাঁড়িয়ে থাকা আমার নিকট অসহনীয় লাগছিল। লাশ কবরে রাখার সময় মাইকে বার বার ঘোষণা হচ্ছিল লাশের মাথা ঘুরিয়ে কিবলামুখি করে দিতে কিন্তু জোরপুর্বক মাথা ঘুরানো হলেও কিছুক্ষণ পর মৃত ত্যাজ্য নাতি সাহেবের মাথা কিবলা পরিবর্তন করে পুর্বের ন্যায় হয়ে যাচ্ছে। স্টেজ থেকে মাইকে আরো ঘোষণা করা হচ্ছিল যে, জানাযার স্থলে আপনারা সবাই যাবেন না। মৃতের আত্মীয়-স্বজনরাই শুধু যাবেন। আমি আরো আশ্চার্য হলাম যখন মৃত লাশকে সামনে রেখেই সেজ জামাই কট্টর ওহাবী মৌলভী আব্দুল্লাহ জাহাংগীর জলজ্যান্তভাবে, মিথ্য সাক্ষ্য দিল। জীবনে নাকি সে দু’জন লোককে মরার পর হাসতে দেখেছে তার মধ্যে সদ্য মৃত শ্বশুর ত্যাজ্য নাতি সাহেব নাকি একজন। (!) নাউজুবিল্লাহ এত বড় কাট্টা মিথ্যা বানানো কথা জনসম্মুখে মৃত লাশকে সামনে রেখে কিভাবে যে বললো তা আল্লাহ্ পাকই ভাল জানেন। এরপর ছবিতোলা এবং ভিডিও চর্চা করার যেন ধুম লেগে গেল। বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষ সম্পর্কে মিথ্যা ভুল ধরা এবং ইলমে তাসাউফ চর্চা বন্ধে অসামান্য অবদান রাখার প্রশংসা করে ওহাবী-তবলীগী- জামায়াতী-বিদাতী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা মোশাহেবীমূলক বক্তৃতা দিচ্ছিল। অথচ তারা কেউই ইলমে তাসাউফে বিশ্বাসী নয়। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখবে তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে। এ হাদীছ শরীফের খাস মেছদাক মৃত ত্যাজ্য নাতি এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। সারাজীবন কুফরীমূলক বয়ান-লিখনীর প্রচার প্রসার, সিলসিলা হতে বহিষ্কার, নিজের সন্তানদের ওহাবী মতবাদে দীক্ষিত করা, জামানার মহান মুজাদ্দিদের বিরোধিতায় মিথ্যা তোহমত দেয়া, হরদম ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, বাতিল ফিরকার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের শানে বেয়াদবীমূলক কথা বলে প্যারালাইসিস এ আক্রান্ত হয়ে অবশেষে বাকরুদ্ধ হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া, অতঃপর চেহারায় বিকৃতি ঘটা, চেহারা নূরানী হওয়ার পরিবর্তে ফ্যাকাসে কালচে হওয়া, মাত্র দু’দিন লাশ ডীপ ফ্রিজে রাখার পরও পঁচে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়ানো, বিদাতী উলামায়ে ‘ছূ’ বদ আক্বীদা-বদ মাযহাবের লোকজন দ্বারা জানাজা, কাফন, দাফন সম্পন্ন হওয়া ইত্যাদি আলামত যে কত বদকার গোমরাহ লোকের জন্য প্রযোজ্য তা একজন সাধারণ মুসলমানের পক্ষেও অতি সহজে বুঝা সম্ভব। উল্লেখ্য, সিলসিলার ত্যাজ্যপুত্রের ক্ষেত্রেই শুধু এমন করুণ ঘটনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি। আক্বীদা-আমলে তারই সমগোত্রীয় দেওবন্দী, ওহাবী সিলসিলার গণতন্ত্রকারী আরেক গদীনশীন চর্মনাইরও মৃত্যুকালীন অবস্থা আরও করুণ। এ প্রসঙ্গে হদছ পয়গামে স্বয়ং শাইখুল হদছ নিজেই উল্লেখ করেছে- “তার হারাম তন্ত্রমন্ত্রের উপযুক্ত শাগরিদ চর্মনাইকে মুক্তাঙ্গন চত্ত্বরে অনশন করার সময় চেহারা অত্যন্ত ফুলা-ফাঁপা দেখতে পায়। এতে উপযুক্ত শিষ্য চর্মনাইয়ের মরণ ঘনীভূত বলে মনে করে হদছ।” ঠিকই অল্পকিছুদিন পরে মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে এই গদীনশীন। বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় এই গদীনশীনের এমন একটি ছবি ছাপা হয় যা দেখে প্রথমে কেউই ভাবতে পারেনি এটা কোন মানুষের ছবি। তার আকৃতির এমন বিকৃতি ঘটেছিল যে, একেকজন মানুষ তখন ছবিটিকে একেক রকম প্রাণীর সাথে তুলনা করতে থাকে। এ অবস্থায় সে মারা গেলে তার লোকজন অতি গোপনে মৃত লাশকে তার গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানেই অতি দ্রুত কাফন পড়িয়ে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। কাফনে আবৃত অবস্থায়ই লোকজনকে দেখার ব্যবস্থা করে। চেহারা না দেখানোর কোন কারণ না দর্শালেও সমঝদার লোকজন ঠিকই বুঝতে পারে মূলত এই গদীনশীনের চেহারার আকৃতি-বিকৃতি ঘটার কারণেই এমন তড়িঘড়ি করে চেহারা না দেখিয়ে কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে ব্যাপক কানাঘুষা লক্ষ্য করা যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।
-মুনজির মুহম্মদ, মিরপুর, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২