মুহম্মদ আলী হায়দার আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা জানুয়ারী/ফেব্রুয়ারী/মে/২০০৪ ঈসায়ী সনে পরপর তিনটি সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, হিন্দিয়া, তাতারখানিয়া, ইত্যাদি কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “সানি জামাআত করা জায়েয নেই …।”…নির্ভরযোগ্য উক্তি অনুযায়ী সানী বা দ্বিতীয় জামায়াত করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী…।”
আর আপনারা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় লিখেছেন, জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয এবং সকল ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ঐক্যমতে জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহ্রীমী নয়; যদি জামায়াত প্রথম ছূরতে না হয়। কোনটি সঠিক? দয়া করে দলীল-আদিল্লাহসহ বিস্তারিতভাবে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ মহল্লা বা জামে মসজিদে (অর্থাৎ যেসব মসজিদে ইমাম-মুয়ায্যিন ও জামায়াত নির্ধারিত আছে এবং নির্দিষ্ট সময়ে জামায়াত কায়িম হয় সেসব মসজিদে একবার জামায়াত হওয়ার পর) সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর মাধ্যমে যা জানতে পেরেছেন সেই ফতওয়াই সঠিক, নির্ভরযোগ্য, দলীলভিত্তিক এবং গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত।
পক্ষান্তরে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, অশুদ্ধ, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং ফতওয়াগ্রাহ্য মতের বিপরীত। শুধু তাই নয়। বরং হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার মৌলভী ছাহেবরা মহল্লা বা জামে মসজিদে সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করার বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়ে শক্ত গুণাহ্র কাজ করেছে। কেননা সঠিক, গ্রহণযোগ্য ও বিশুদ্ধ ফতওয়া মুতাবিক জামে মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ তাহরীমী নয়। এটাই ترجيح বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া। আর ترجيح বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়ার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয।
উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা কিতাবের নাম দিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে মনগড়া বক্তব্য প্রদান করেছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ নিজের ভ্রান্ত মতকে টিকিয়ে রাখতে কিতাবের ইবারত কারচুপি করে ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, হিন্দিয়া, তাতারখানিয়া, ইত্যাদি কিতাব”-এর বরাত দিয়ে যেটা বলতে চেয়েছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। আমরা পর্যায়ক্রমে সেটা তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ্। (ধারাবাহিক) উল্লেখ্য, হাটহাজারীর অখ্যাত মাসিক পত্রিকার মৌলভী ছাহেবরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে ইবারত কারচুপি করে যে কয়টি কিতাবের দলীল উল্লেখ করেছে তন্মধ্যে গত সংখ্যাতে আমরা তিনটি মূল কিতাবের অর্থাৎ ফতওয়ায়ে শামী, আলমগীরী ও বাহরুর রায়িকের সঠিক জাওয়াব পেশ করে প্রমাণ করেছি যে, ‘তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল ও ধোকাপূর্ণ।’ তারা চতুর্থ দলীল হিসেবে “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের বরাত দিয়েছে।
অথচ “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবেই উল্লেখ আছে, মহল্লা বা জামে মসজিদে পুনরায় আযান ব্যতীত যদি দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করে, তাহলে সকলের ইজমা বা ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয। এই হুকুম রাস্তার মসজিদের জন্যও প্রযোজ্য। যেমন “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- “মহল্লার মসজিদে ইমাম ও জামায়াতের লোক স্বাভাবিকভাবে নির্দিষ্ট থাকে এবং মহল্লার লোকেরা মহল্লার মসজিদে আযান দিয়ে নামায পড়ে, তাহলে পুনরায় আযান দিয়ে দ্বিতীয় জামায়াত পড়া জায়িয নেই। আর আযান ব্যতীত যদি দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করে, তাহলে সকলের ইজমা বা ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা জায়িয। এই হুকুম রাস্তার মসজিদের জন্যও প্রযোজ্য। ইহা “শরহে মাজমা” কিতাবের মধ্যে উল্লেখ আছে।” তাদের পঞ্চম দলীল হলো- “ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া।” অথচ “ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৫২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وروى عن محمد رحمه الله أنه لم ير بالتكرار بأسا.
অর্থঃ- “ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে। তিনি দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করার ব্যাপারে কোন অসুবিধা মনে করেননা।” উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,
وفى الخلاصة وقال الشافعى رحمه الله لا بأس بتكرار الجماعة.
অর্থঃ- “খুলাছা কিতাবে উল্লেখ আছে, ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করতে কোন অসুবিধা নেই।” “ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫২৮ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
وفى الولوالجية ولم يقام مقام الاول وبه نأخد.
অর্থঃ- “ওয়ালওয়ালিজীয়া’ কিতাবে উল্লেখ আছে, দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ নয় তবে প্রথম স্থানে দাঁড়ানো যাবেনা। অর্থাৎ ইমাম ছাহেব যে স্থানে দাঁড়িয়ে প্রথম জামায়াত আদায় করেছেন সে স্থানে দ্বিতীয় জামায়াতের ইমাম ছাহেব দাঁড়াবেন না। বরং সেখান থেকে দূরে সরে দ্বিতীয় জামায়াতের ইমামতি করবেন, তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করলে মাকরূহ্ হবে না। আর وبه نأخذ এটাই আমরা গ্রহণ করেছি।” এছাড়াও নিম্নে সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে দলীল পেশ করা হলো- যেমন, বিশ্বখ্যাত সর্বজনমান্য ফতওয়ার কিতাব “আল ফিকহুল হানাফীয়্যু ফী ছাওবীহিল জাদীদ” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
لاتكره الجماعة الثانية إذا كانت على غير هيئة الأولى وبالعدول عن المحراب تختلف اليهئة.
অর্থঃ- “মহল্লার মসজিদে সানী জামায়াত করা মাকরূহ হবে না। যদি সানী জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়। আর মিহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত।” “আল ফিক্বহু আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الحنفية قالوا لا يكره تكرار الجماعة فى مساجد الطرق وهى ما ليس لها امام وجماعة معينون. أما مساجد المحلة وهى ما لها امام وجماعة معينون فلا يكره تكرار الجماعة فيها أيضا ان كانت على غير الهيئة الاولى كما صليت الاولى فى المحراب والثانية صليت بعد ذلك.
অর্থঃ- “হানাফীগণ বলেন, রাস্তার মসজিদে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ হবেনা। আর রাস্তার মসজিদ একেই বলা হয় যার ইমাম এবং জামায়াত নির্ধারিত নেই। অনুরূপ মহল্লার মসজিদ- যে মহল্লার মসজিদে ইমাম ও জামায়াত নির্ধারিত আছে উক্ত মহল্লার মসজিদেও দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ হবেনা। যদি দ্বিতীয় জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়। আর দ্বিতীয় জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো, যেমন প্রথম জামায়াতে মেহরাবে নামাযের ইমামতি করা আর দ্বিতীয় জামায়াতে মেহরাব থেকে দূরে সরে নামাযের ইমামতি করা।” উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,
لايكره مطلقا تكرار الجماعة فى مسجد المحلة بلا أذان واقامة.
অর্থঃ- “(مطلقا) বা সাধারণভাবে মহল্লার মসজিদে (অর্থাৎ যেখানে ইমাম এবং জামায়াত নির্ধারিত আছে যাকে জামে মসজিদ বলা হয় সেখানেও) আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ হবেনা।” “আল ফিক্বহুল মুইয়াস্সার আ’লা মাযহাবিল ইমামিল আ’যম আবী হানীফা আন্ নু’মান কিতাবের ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
أما اذا تغيرت الهيئة الاولى بأن قام امام الجماعة الثانية فى غير المكان الذى قام فيه امام الجماعة الاولى فلاتكره.
অর্থঃ- “মহল্লার মসজিদে যেখানে ইমাম ও মুয়ায্যিন নির্ধারিত আছে অতঃপর সেখানে যদি প্রথম জামায়াতের ছূরত পরিবর্তন করে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করে তাহলে মাকরূহ হবেনা। অর্থাৎ প্রথম জামায়াতের ইমাম ছাহেব যেখানে দাঁড়িয়েছিল, সেখানে দ্বিতীয় জামায়াতের ইমাম ছাহেব না দাঁড়িয়ে যদি অন্য স্থানে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করে তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবে না।” “শরহুল মূনীয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,
اذا لم تكن الجماعة على الهيئة الاولى لا تكره والا تكره وهو الصحيح وبالبول عن المحراب تختلف الهيئة.
অর্থঃ- “যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে দ্বিতীয় জামায়াত না হয় তাহলে দ্বিতীয় জামায়াত মাকরূহ্ হবে না। (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো দ্বিতীয় জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবেনা, ইমামের নির্ধারিত স্থানে তথা মেহরাবে দাঁড়াতে পারবেনা, তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করলে মাকরূহ্ হবে না) অন্যথায় মাকরূহ্ হবে। আর وهو الصحيح এটাই ছহীহ্ ও বিশুদ্ধ ফতওয়া। আর মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত।” অর্থাৎ মেহরাবে না দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করলে দ্বিতীয় জামায়াত করা মাকরূহ্ হবেনা।” “গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- “দুরারে বর্ণিত আছে, যদি মহল্লার অধিবাসী তাদের মহল্লার মসজিদে আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করে … তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা সকলের ঐক্যমতে জায়িয।” “ফতওয়ায়ে বায্যাযীয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,
تكرار الجماعة …. اذا لم يكن على الهيئة الاولى لايكره والا فيكره وهو الصحيح وبالعدول عن المحراب تختلف الهيئة.
অর্থঃ- “দ্বিতীয় জামায়াত ……. যদি প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয় তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ হবেনা। (প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হওয়ার অর্থ হলো, দ্বিতীয় জামায়াতের জন্য আযান ও ইক্বামত হবেনা, ইমামের নির্ধারিত স্থানে তথা মেহরাবে দাঁড়াতে পারবেনা) তাহলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ হবে না অন্যথায় মাকরূহ্ হবে। আর وهو الصحيح এটাই বিশুদ্ধ ফতওয়া। আর মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত। অর্থাৎ দ্বিতীয় জামায়াতে মেহরাবে না দাঁড়ানোই হলো প্রথম ছূরতের বিপরীত। আর প্রথম ছূরতের বিপরীত হলে অর্থাৎ মেহরাবে না দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় জামায়াত করলে দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ হবেনা।” “গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খন্ডের ২৫৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে, উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- “শরহে মুনীয়া” কিতাবে হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে যে, যদি দ্বিতীয় জামায়াত প্রথম জামায়াতের ছূরতে না হয়, তাহলে দ্বিতীয় জামায়াত মাকরূহ হবেনা। অন্যথায় মাকরূহ হবে। এটাই صحيح ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ ফতওয়া। আর তাতারখানীয়া কিতাবে ওয়ালওয়ালিজিয়াহ কিতাব থেকে বর্ণিত আছে যে, এ মতকেই আমরা গ্রহণ করেছি। আর বায্যাযিয়া কিতাবে বর্ণিত আছে যে, মেহরাব থেকে সরে দাঁড়ানোই হলো প্রথম জামায়াতের ছূরত পরিবর্তন হওয়া।” “মিনহাতুল খালিক্ব” কিতাবে উল্লেখ আছে,
يجوز تكرار الجماعة بلا اذان ولا اقامة ثانية اتفاقا.
অর্থঃ- “সকলের ঐক্যমতে দ্বিতীয়বার আযান ও ইক্বামত ব্যতীত দ্বিতীয় জামায়াত কায়িম করা জায়িয।” উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, বিশুদ্ধ ফতওয়া মুতাবিক মহল্লা বা জামে মসজিদে (অর্থাৎ যেসব মসজিদে ইমাম-মুয়ায্যিন ও জামায়াত নির্ধারিত আছে এবং নির্দিষ্ট সময়ে জামায়াত কায়িম হয় সেসব মসজিদে একবার জামায়াত হওয়ার পর) সানী বা দ্বিতীয়বার জামায়াত কায়িম করা মাকরূহ্ নয় বরং জায়িয। এটাই ترجيح বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালা। আর প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই নাজায়িয ও হারাম। (চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার
সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা
সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-
জিজ্ঞাসা: সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখূঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন-প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এদলের আমল যতই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেন, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে ইসলাম হতে খারিজ, দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও দ্বীনের পথে, কুরআন ও সুন্নাহ্র পথে ফিরে আসবেনা। আমার প্রশ্ন হল, উপরোক্ত হাদীছ ছহীহ্ কি-না? ছহীহ্ হলে এ দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? উক্ত হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতের কোন সম্পর্ক আছে কি-না? অনেকে এই হাদীসের সাথে তাবলীগ জামাতকে জড়াতে চান। উক্ত হাদীসের সঙ্গে তাবলীগ জামাতকে জড়ানো সঠিক কি-না?
জবাবঃ প্রশ্নে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ্। মুহাদ্দিছীনে কেরাম উক্ত হাদীছসহ এ জাতীয় হাদীছসমূহের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ সব হাদীছ দ্বারা একটি নির্ধারিত জামাত বা খারিজী ফেরক্বা নামে পরিচিত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর খেলাফত আমলে এই হাদীছসমূহের বাস্তবতা এবং খাওয়ারেজদের অবস্থার সমন্বয় ঘটেছিল। যার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে বলা চলে যে, এ হাদীছসমূহ দ্বারা একমাত্র খাওয়ারেজদেরকেই বুঝানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণাদি ছাড়া অন্য কোন জামাতকে এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা।
কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া তাবলীগ জামাতকে এই হাদীছসমূহের মেসদাক বা উদ্দেশ্য বানানো, তাদেরকে খাওয়ারেজ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায় ও অপরাধ। তাবলীগের নিয়মনীতি ও কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই। বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ্ তা’আলা তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে পথহারা, ঈমানহারা, হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছেন, ঈমান আনার তাওফিক দান করেছেন। এছাড়া এ জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ।
অতএব, তাবলীগ জামাতকে খারেজী জামাত বলা, মিথ্যা অপবাদ বৈ কিছুই নয়। (ফতহুল বারী ১২ঃ৩৫০, আল মিরকাত ৭ঃ১০৭), উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-
(১) উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বর্ণিত গুণাবলী প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে আছে কি? (২) উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা কি শুধু খারিজী ফিরক্বার লোকদেরকেই বুঝানো হয়েছে? নাকি খারিজীদের ন্যায় আক্বীদা পোষণকারীদের ক্ষেত্রেও এ হাদীছ শরীফ প্রযোজ্য?(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য? (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? (৫) কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করার নির্দেশ আছে কি? প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ করা কুরআন-সুন্নাহ্ মতে জায়িয কিনা? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কিত উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের সাফাই গাইতে গিয়ে বর্ণিত হাদীছ শরীফের অপব্যাখ্যা করেছে। সাথে সাথে “ছয় উছূলীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন আক্বীদা-আমল নেই” বলে তাদের নির্লজ্জ দালালী করে নিজেদেরকে অপব্যাখ্যাকারী ও মিথ্যাবাদীরূপে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবাহিক দলীলভিত্তিক আলোচনা করলেই তা আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারীতার খণ্ডনমূলক জবাব-৩
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, পর্যায়ক্রমে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো- প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ৯ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মনে করে বা প্রচার করে থাকে যে, মাওলানা ইলিয়াস ছাহেব প্রবর্তিত “তাবলীগ জামায়াতই আসল ও একমাত্র নাযাতের পথ।” যে প্রসঙ্গে মাওলানা ইলিয়াস ছাহেবও তার “মলফুযাতের ২৪নং মলফুযে বলেছেন, “আসল কাজের তরীক্বা তাবলীগ হতে শিখতে হবে।” ইল্মে তাছাউফ ইসলামী পূর্ণ শিক্ষার অর্ধেক হচ্ছে ইল্মে তাছাউফ। আর এটাই মূলতঃ মূল শিক্ষা। কারণ ইল্মে তাছাউফ ব্যতীত অন্তর পরিশুদ্ধ করা বা ইখলাছ হাছিল করা সম্ভব নয়। অথচ ইখলাছ ব্যতীত কোন আমলই আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে কবুল হবেনা। তাই আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইখলাছের সহিত আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ্ পাক বলেন,
وما امروا الا ليعبدوا الله مخلصين له الدين.
অর্থঃ- “তোমাদেরকে ইখলাছের সহিত আল্লাহ পাক-এর ইবাদত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” আর আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
اخلص دينك يكفيك العمل القليل.
অর্থঃ- “তুমি আমলের মধ্যে ইখলাছ পয়দা কর, অর্থাৎ ইখলাছের সহিত আমল কর, অল্প আমলই তোমার (নাযাতের) জন্য যথেষ্ট হবে।” আর শুধুমাত্র ইল্মে তাছাউফ হাছিল করার মাধ্যমে ইখলাছ হাছিল করা সম্ভব। তাই সকলেই ইল্মে তাছাউফ অর্জন করাকে ফরয বলেছেন। ইমাম-মুজ্তাহিদ ও আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম ইল্মে তাছাউফকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন- (১) মুহ্লিকাত (২) মুন্জিয়াত। মুহ্লিকাতের বর্ণনা ‘মুহ্লিকাত’ ঐ সকল বদ্ খাছলত বা কুস্বভাবকে বলে, যে সকল বদ্ খাছলত মানুষকে ধ্বংস বা হালাক করে দেয়। ঐ সকল বদ্ খাছলত হলো- ১। কিব্র (অহংকার), ২। হাসাদ (হিংসা), ৩। বোগ্য (শত্রুতা), ৪। গদ্বব (রাগ), ৫। গীবত (পরনিন্দা), ৬। র্হিছ (লোভ), ৭। কিয্ব (মিথ্যা), ৮। বোখ্ল (কৃপনতা), ৯। রিয়া (লোক দেখানো), ১০। গুরুর (ধোকাবাজী), ১১। কিনা (দুশমনী), ১২। ত্বমা’ (হালাল-হারাম না দেখে ভবিষ্যতে পাওয়ার আশা করা), ১৩। কাছীরুল কালাম (অতিরিক্ত কথা বলা), ১৪। শরফ্ (সম্মান কামনা করা), ১৫। হুব্বেজাহ্ (প্রভুত্ব প্রিয়তা), ১৬। হুব্বুদ্দুনিয়া (দুনিয়ার মুহব্বত), ১৭। খোদপছন্দী (আত্মগৌরব), ১৮। কুওওয়াতে শাহ্ওয়াত (কামশক্তি), ১৯। খতা (ভুল, মোহ্ বা ভ্রম), ২০। হুব্বুল মাল (মালের মুহব্বত), ২১। নিফাক্ব (কপটতা), ২২। গাফলতী (অলসতা), ২৩। শাব্য়ান (অধিক আহার করা), ২৪। খছ্ম (ঝগড়া), ২৫। নাম্মাম (চোগলখোরী), ২৬। ফুহুশ (অশ্লিলতা), ২৭। মুনাজিরা (তর্ক), ২৮। বদ্ দোয়া (অভিশাপ), ২৯। তোহ্মত (অপবাদ), ৩০। মকর (ধোকাবাজী), ৩১। শেকায়েত (খারাপ বলা, দোষ বর্ণনা করা), ৩২। বদ্ গুমান (কু-ধারণা), ৩৩। আফাতুল লিসান (যবানের খারাবী), ৩৪। জোরন (ভীতু), ৩৫। আয্ল (তাড়াহুড়া করা), ৩৬। কুফ্র (অস্বীকার করা), ৩৭। আ-মল (অবৈধ আকাংখা), ৩৮। জিহালত (অজ্ঞতা) ইত্যাদি। মুন্জিয়াতের বর্ণনা ‘মুন্জিয়াত’ হলো ঐ সকল নেক খাছলত বা সৎ স্বভাব, যে সকল নেক খাছলত বা সৎ স্বভাব মানুষকে নাযাত বা মুক্তি দেয়। অর্থাৎ “তায়াল্লুক মায়াল্লাহ্” আল্লাহ্ পাক-এর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে দেয়। ঐ সকল নেক খাছলত হলো- ১। তওবা (গুণাহ্ থেকে প্রত্যাবর্তন), ২। ছবর (ধৈর্য), ৩। শোক্র (কৃতজ্ঞতা), ৪। তাওয়াক্কুল (ভরসা), ৫। ইখলাছ (একনিষ্ঠতা), ৬। খওফ (ভয়), ৭। রিদ্বা (সন্তুষ্টি), ৮। মুহব্বত (ভালবাসা), ৯। মুরাক্বাবা (চিন্তা-ভাবনা) ১০। মুহাসাবা (আমলের হিসাব), ১১। ইনাবত (রুজু হওয়া), ১২। যুহ্দ (বিরাগী হওয়া), ১৩। অরা’ (পরহেযগারী), ১৪। ক্বনায়াত (অল্পে তুষ্ট), ১৫। তাস্লীম (আত্মসমর্পণ করা), ১৬। তাফাক্কুর (সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা), ১৭। শওক্ব (আগ্রহ), ১৮। তাওহীদ (একত্ববাদ), ১৯। নিয়ত (সংকল্প), ২০। ছিদ্ক (সত্যবাদীতা), ২১। ফক্বর (স্বেচ্ছায় দারিদ্রতা গ্রহণ করা), ২২। যিক্রুল মউত (মৃত্যুর স্মরণ), ২৩। আহ্ওয়ালে আখিরাত (পরকালের অবস্থা), ২৪। সাখাওয়াত (দানশীলতা), ২৫। তাওয়াদু’ (বিনয় বা নম্রতা), ২৬। রিদ্বা (আশা), ২৭। মুজাহাদা (চেষ্টা বা কোশেশ) ২৮। মুশাহাদা (দেখা), ২৯। ইল্ম (জ্ঞান), ৩০। ইস্তেক্বামাত (দৃঢ়তা), ৩১। হায়া (লজ্জা), ৩২। ক্বিল্লাতুত্ ত্বয়াম (কম খাওয়া), ৩৩। আদব (শিষ্টাচার), ৩৪। ইছার বা হুররিয়াত (স্বাধীনতা বা অপরের লাভকে প্রাধান্য দেয়া), ৩৫। হুযূরী ক্বল্ব (সর্বদা অন্তরে যিক্র করা), ৩৬। খিদ্মাতুল ফুক্বারা (ওলীগণের খিদমত), ৩৭। উজ্লত (নির্জনতা) ৩৮। তাফবীজ (ভার অর্পন বা দায়িত্ব দেয়া), ৩৯। ইহ্সান (পরোপকার), ৪০। শুজায়াত (বাহাদুরী), ৪১। আহ্দ (ওয়াদা), ৪২। ক্বিল্লাতুল কালাম (কম কথা বলা), ৪৩। ক্বিল্লাতুল মানাম (কম ঘুমানো), ৪৪। ক্বিল্লাতুল্ ইখ্লাত মায়াল আনাম (মানুষের সাথে কম মেলামেশা করা) ইত্যাদি। সুতরাং অন্তর থেকে বদ্ খাছলতসমূহ দূর করে নেক খাছলতসমূহ পয়দা করতে হলে অবশ্যই ফরয পরিমাণ ইল্মে তাছাউফ বা তাছাউফের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আর ইল্মে তাছাউফ শিক্ষা দিয়ে থাকেন পীরানে তরীক্বত, আওলিয়ায়ে কিরাম বা কামিল মুর্শিদগণ। প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে ইল্মে তাছাউফের শিক্ষা সম্পূর্ণই অনুপস্থিত। এতে প্রমাণিত হলো যে, এ ক্ষেত্রে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে ইসলামী পূর্ণ শিক্ষার অর্ধেকই অনুপস্থিত। বাকী অর্ধেকেরও যৎসামান্য মাত্র শিক্ষা দেয়া হয়। এখন যদি আমরা ইসলামী পূর্ণ শিক্ষাকে মান হিসেবে হিসাব করি, তবে আরো সুস্পষ্টভাবেই বুঝতে পারবো যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের শিক্ষা পূর্ণ ইসলামী শিক্ষার তুলনায় একেবারেই নগণ্য বা যৎসামান্য। প্রথমে আমরা পূর্ণ ইসলামী শিক্ষাকে ১০০ মান হিসাবে ধরি। আর এই পূর্ণ ইসলামী শিক্ষাকে ইমাম-মুজ্তাহিদ, আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ প্রথমতঃ দু’ভাগে ভাগ করেছেন- ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফ। তবে মান হিসেবে ইল্মে ফিক্বাহ্র ক্ষেত্রে পঞ্চাশ, আর ইল্মে তাছাউফের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ। অতঃপর ইল্মে ফিক্বাহ্, যা মান হিসেবে পঞ্চাশ, তাকেও আবার চার ভাগ করা হয়েছে- আক্বাইদ, ইবাদত, মুয়ামিলাত ও মুয়াশিরাত। সুতরাং ইল্মে ফিক্বাহ্র মান পঞ্চাশ হিসেবে উপরোক্ত প্রত্যেক ভাগেই পড়ে সাড়ে বার (১২.৫০) করে। ইমাম-মুজ্তাহিদ ও আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উপরোক্ত চার ভাগের দ্বিতীয় ভাগ অর্থাৎ ইবাদতকে আবার পাঁচভাগে ভাগ করেছেন- কলেমা, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত। তবে ইবাদতের মান সাড়ে বার হিসেবে উপরোক্ত প্রত্যেক ভাগেই আড়াই (২.৫০)করে পড়ে। আর পূর্বেই প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে ইবাদতের ক্ষেত্রে কলেমা ও নামায সম্পর্কে যৎসামান্য শিক্ষা দিয়ে থাকে (যা মান হিসাবে ইসলামী শিক্ষার তুলনায় ২ ভাগ-এর বেশী হবেনা।) রোযা, হজ্জ, যাকাত-এর শিক্ষা অর্থাৎ এখানে ৭.৫০ ভাগ শিক্ষা সম্পূর্ণই অনুপস্থিত। আর মুয়াশিরাতের ক্ষেত্রে ইকরামুল মুসলিমীন সম্পর্কে যে শিক্ষা দেয়া হয়, তাও মান হিসেবে ১%-এর বেশী নয়।
অতএব স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ইসলামী পূর্ণ শিক্ষার তুলনায় ৫% শিক্ষাও দেয়না। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে কি করে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত আসল ও একমাত্র নাযাতের পথ হতে পারে? তাবলীগ জামায়াতের শিক্ষা মূলতঃ বর্তমানে প্রচলিত তাবলীগ জাামায়াতে যা শিক্ষা দেয়া হয়, তার মুল হচ্ছে- ছয়টি বিষয়। যেমন- (১) কলেমা, (২) নামায, (৩) ইল্ম ও যিকির, (৪) ইকরামুল মুসলিমীন, (৫) তাছহীহে নিয়ত, (৬) তাবলীগ বা নফরুন ফী সাবীলিল্লাহ্। * কলেমা শরীফ বলতেঃ শুধু মৌখিকভাবে শুদ্ধ করে কলেমা শরীফ শিক্ষা দেয়া হয় । * নামায বলতেঃ নামাযের নিয়ম-কানুন ও তার আনুসঙ্গিক নেহায়েত জরুরী সূরা-ক্বিরায়াত এবং জরুরত আন্দাজ সীমিত মাসয়ালা-মাসায়িল শিক্ষা দেয়া হয়। * ইল্ম বলতেঃ শুধু তাবলীগে নিছাবের কিতাব পড়ে শুনা ও শুনানো, যার মধ্যে রয়েছে কিছু ফযীলত সম্পর্কীয় বর্ণনা। * যিকির বলতে বুঝায়ঃ সকাল-সন্ধায় তিন তাস্বীহ্ পাঠ করা। তিন তাস্বীহ্ হচ্ছে- একশতবার ইস্তিগ্ফার, একশতবার দুরূদ শরীফ ও একশতবার ‘সুব্হানাল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়ালা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ পাঠ করা। * ইকরামুল মুস্লিমীন বলতেঃ মুসলমানদেরকে ইক্রাম (সম্মান) করা সম্পর্কে সীমিত ও জরুরী কিছু নিয়ম শিক্ষা দেয়া হয়। * তাছহীহে নিয়ত বলতেঃ মৌখিকভাবে নিয়ত শুদ্ধ করার জন্য তাকীদ দেয়া হয়। * তাবলীগ বলতেঃ যে যা জানে, তা অপরের নিকট প্রচার করার জন্য বলা হয়। অথচ উপরোক্ত বিষয়সমূহের শিক্ষা আরো অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত, যা ইতি পূর্বের সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মূলতঃ উপরোক্ত শিক্ষাসমূহ অর্থাৎ মক্তবের ওস্তাদ বা শিক্ষকগণই তাদের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মক্তবে বিশুদ্ধ নিয়তে কলেমা, নামায, সূরা-ক্বিরায়াত ও তার আনুসঙ্গিক মাসয়ালা-মাসায়িল, আদব-কায়দা, দোয়া-দুরূদ, তাস্বীহ্-তাহ্লীল ইত্যাদি শিক্ষা দিয়ে থাকে। প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত যে শিক্ষা দিচ্ছে, তা হচ্ছে মক্তবী বা প্রাথমিক শিক্ষা। মূলতঃ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে ইসলামের যে পাঁচটি বুনিয়াদ (ভিত্তি) রয়েছে, তার সব কয়টিও শিক্ষা দেয়া হয়না। শুধু মৌখিকভাবে কলেমা শরীফ শিক্ষা দেয়া হয়। আর নামায সম্পর্কে তার জরুরী ও সীমিত কিছু নিয়ম-কানুন, সূরা-ক্বিরায়াত ও মাসয়ালা-মাসায়িল শিক্ষা দেয়া হয়। রোযা, হজ্জ ও যাকাত সম্পর্কে কিছুই শিক্ষা দেয়া হয়নাৎ
অথচ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
بنى الاسلام على خمس شهادة ان لا اله الا الله وان محمدا عبده وسوله واقام الصلوة وايتاء الزكوة والحج وصوم رمضان.
অর্থঃ- “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি- (১) এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ্ বা মা’বুদ নেই এবং নিশ্চয়ই হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রসূল, (২) নামায ক্বায়িম করা, (৩) যাকাত দেয়া, (৪) হজ্জ পালন করা, (৫) রমাদ্বান শরীফের রোযা রাখা।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, উমদাতুল ক্বারী, ফতহুল বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহে নববী, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, মুযাহিরে হক্ব, তা’লীকুছ্ ছবীহ্) যেখানে ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে তিনটি (রোযা, হজ্জ ও যাকাত) সম্পর্কে কিছুই শিক্ষা দেয়া হয়না, আর বাকী দু’টি সম্পর্কেও নেহায়েত মক্তবী বা প্রাথমিক শিক্ষা ব্যতীত কিছুই শিক্ষা দেয়া হয়না। সেখানে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত কিভাবে (হক্ব) আসল ও একমাত্র নাযাতের পথ হতে পারে? (চলবে) ছূফী মুহম্মদ তছলিমুদ্দীন বসুনিয়া উলিপুর, কুড়িগ্রাম
সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারী/২০০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়- প্রশ্নঃ অনেকের মুখে শুনেছি যে, ঘরে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি থাকলে সেই ঘরে নামায হয় না। দোকান ঘরে বিভিন্ন জিনিষের ঠোঙ্গায় মানুষ ও জীব-জন্তুর ছবি থাকে। এই দোকান ঘরেই নামায আদায় করতে হয়। অনেক দোকানে ৮/১০ জনে জামাত করেও নামায পড়তে দেখা যায়। এমতাবস্থায় এসব দোকানে নামায শুদ্ধ হবে কিনা? এবং করণীয় কি? উত্তর ঃ মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি ঘরে মজুদ থাকলেই সেই ঘরে নামায শুদ্ধ হবে না,বিষয়টা এমন নয়। ছবি যদি নামাযীর সামনে থাকে তবে অবশ্যই নামায শুদ্ধ হবে না। কিন্তু যদি ছবি দৃশ্যমান না থাকে এবং বিশেষভাবে নামাযী ব্যক্তির চোখের সামনে না থাকে তাহলে নামাযের ক্ষতি হবে না।
উল্লেখ্য, মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্যে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, (১) মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ রাখতে কোন অসুবিধা নেই। তবে নামাযীর সামনে না পড়লেই হলো। (২) শুধুমাত্র নামাযীর সামনে মানুষ বা জীব- জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি মওজুদ থাকলে নামায মাকরূহ্ হবে। নামাযীর ডানে-বামে, উপরে-নীচে, পিছনে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি মওজুদ থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না।
এখন আমার সুওয়াল হলো- মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ থাকা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি ঘরের ভিতরে নামাযীর চোখে পড়ে না, এমন কোন ঘরে প্রাণীর ছবি মওজুদ থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। দলীলসহ সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ ঘরের ভিতরে নামাযরত অবস্থায় নামাযীর চোখে পড়ে না, এমন কোন ঘরে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি মওজুদ রেখে নামায পড়া সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি, বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। (ধারাবাহিক) উল্লেখ্য, গত সংখ্যায় আমরা ঘরে ছবি মওজুদ রেখে নামায পড়া সম্পর্কে মাসিক মদীনার ভুল বক্তব্য দলীল আদিল্লাহ্-এর মাধ্যমে খণ্ডন করে প্রমাণ করে দিয়েছি যে, “যে ঘরে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি মওজুদ থাকে, সে ঘরে প্রবেশ করা, বসা এবং পরিদর্শন করাটাও মাকরূহ্ তাহ্রীমী তথা নিষিদ্ধ বা হারাম।” সুতরাং যেখানে ঘরে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি মওজুদ রাখাই হারাম, সেখানে ছবিযুক্ত ঘরে নামায শুদ্ধ হয় কি করে? অতএব, মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি ঘরে মওজুদ থাকলে,সেই ঘরে নামায পড়া শুদ্ধ হবে না। এটাই সঠিক, নির্ভরযোগ্য, দলীলভিত্তিক এবং গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত।
নিম্নে মাসিক মদীনার মনগড়া বক্তব্য খণ্ডণ করা হলো-
দ্বিতীয়তঃ মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্যে এটাও প্রতীয়মান হয় যে, “(২) শুধুমাত্র নামাযীর সামনে মানুষ বা জীব-জন্তু ইত্যাদি প্রাণীর ছবি মওজুদ থাকলে নামায মাকরূহ্ হবে। নামাযীর ডানে-বামে, উপরে-নীচে, পিছনে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি মওজুদ থাকলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না।” এর জবাবে বলতে হয় যে, মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্যও ভুল হয়েছে। কারণ সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে সুস্পষ্টভাবে এটাই উল্লেখ আছে যে, মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি ঘরে মওজুদ রেখে নামায পড়লে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। চাই উক্ত প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে, দৃষ্টির সামনে অথবা দৃষ্টির আড়ালে দৃশ্যমান থাকুক অথবা চোখের সামনে পড়ুক বা না পড়ুক সকল অবস্থাতেই প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ থাকলে সে ঘরে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী হবে। যেমন, “হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৪২/১৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ويكره أن يكون فوق رأسه فى السقف او بين يديه او بحذائه تصاوير اوصورة معلقة …. واشدها كراهة أن تكون امام المصلى ثم من فوق رأسه ثم على يمينه ثم على شماله ثم خلفه.
অর্থঃ- “নামায মাকরূহ তাহ্রীমী হবে যদি নামাযীর মাথার উপর, ছাদের মধ্যে অথবা সামনে অথবা জুতার মধ্যে অথবা ঝুলন্ত বা লটকানো অবস্থায় প্রাণীর ছবি অথবা মূর্তি থাকে। … এবং নামায শক্ত মাকরূহ তাহ্রীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে বা মাথার উপরে বা ডানে-বামে বা নামাযীর পিছনে থাকে।” “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খণ্ডের ২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وان يكون فوق رأسه أو بين يديه أوبحذائه صورة ….. وأشدها كراهة ما يكون على القبلة أمام المصلى … فوق رأسه … عن يمينه ويساره و …. خلفه.
অর্থঃ- “নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে ,যদি নামাযীর মাথার উপর অথবা সামনে বা জুতার মধ্যে প্রাণীর ছবি থাকে। …..এবং নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহরীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি ক্বিবলার দিকে, নামাযীর সামনে …. মাথার উপরে ….. ডানে-বামে এবং নামাযীর পিছনে থাকে।” “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ১০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ويكره أن يصلى وبين يديه أوفوق رأسه أوعلى يمينه أوعلى يساره أو فى ثوبه تصاوير ….. وأشدها كراهة ان تكون أمام المصلى ثم فوق رأسه ثم يمينه ثم يساره ثم خلفه.
অর্থঃ- “নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে যদি নামাযীর সামনে, মাথার উপরে,ডানে-বামে, অথবা কাপড়ের মধ্যে প্রাণীর ছবি থাকে। ….. এবং নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহরীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে বা মাথার উপরে বা ডানে-বামে বা নামাযীর পিছনে থাকে।” “হাশিয়াতুত্ তাহ্তাবী আলাদ দুররিল মুখতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লে
واشدها كراهة ما يكون على القبلة أمام المصلى والذى يليه ما يكون فوق رأسه والذى يليه ما يكون عن يمينه ويساره على الحائط والذى يليه ما يكون خلفه على الحائط او الستر.
অর্থঃ- “এবং নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি ক্বিবলার দিকে নামাযীর সামনে তথা পার্শ্ববর্তী স্থানে বা মাথার উপর বা নামাযীর ডানে-বামে, দেয়ালের উপর অথবা নামাযীর পিছনে পর্দা বা দেয়ালের উপর থাকে।” অর্থাৎ নামাযীর পার্শ্ববর্তী স্থানে তথা সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে, প্রাণীর ছবি থাকলে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। “ফতওয়ায়ে কাযীখান” কিতাবে উল্লেখ আছে,
ويكره أن يصلى وبين يديه او فوق رأسه أو على يمينه أو على يساره أو فى ثوبه تصاوير.
অর্থঃ- “নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে বা মাথার উপরে বা ডানে-বামে অথবা নামাযীর কাপড়ের মধ্যে থাকে। “আল ফিক্বহুল ইসলামিয়্যূ ওয়া আদিল্লাতুহু” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৭৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وتكره الصلاة الى صورة منصوبة أو تمثال فوق رأسه او بين يديه أو بحذانه يمنة أو يسرة.
অর্থঃ- “নামাযী ব্যক্তির ডানে-বামে, জুতার মধ্যে, সামনে অথবা মাথার উপরে মূর্তি বা ছবি রেখে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।” “শরহে বিক্বায়াহ্” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৬৮ পৃষ্ঠার ১৮ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
تكره الصلوة اذا كانت الصورة قدام المصلى اوعلى جنب الايمن والايسر او فوق رأسه فى السقف او معلقة على السقف او فى الستر.
অর্থঃ-“ নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি মুছল্লীর সামনে বা ডানে-বামে বা মাথার উপর, ছাদের মধ্যে অথবা ছাদের উপর বা পর্দায় ঝুলন্ত বা লটকানো থাকে।” “হাশিয়াতুত্ তাহ্তাবী আলা মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ২৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
أشدها كراهة أن تكون أمام المصلى ثم فوق رأسه بحذائه ثم خلفه.
অর্থঃ- “নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি মুছল্লীর সামনে, মাথার উপরে, সামনে বা পিছনে থাকে।” “আল ফিক্বহুল হানাফী ফী ছাওবিহিল জাদীদ” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
تكره الصلاة فى مكان فيه صور.
অর্থঃ- “প্রাণীর ছবিযূক্ত স্থানে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।” “ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৬৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وأشدها كراهة أن يكون أمام المصلى ثم فوق رأسه ثم على يمينه ثم على شماله ثم خلفه.
অর্থঃ- “এবং নামায শক্ত মাকরূহ তাহ্রীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে বা মাথার উপরে, ডানে-বামে বা নামাযীর পিছনে থাকে।” “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খন্ডের ৬৪৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وأشدها كراهة ما يكون على القبلة أمام المصلى ثم ما يكون فوق رأسه ثم ما يكون عن يمينه ويساره على الحائط ثم ما يكون خلفه على الحائط او الستر.
অর্থঃ- “এবং নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে যদি প্রাণীর ছবি ক্বিবলার দিকে নামাযীর সামনে বা মাথার উপর বা নামাযীর ডানে-বামে, দেয়ালের উপর অথবা নামাযীর পিছনে পর্দা বা দেয়ালের উপর থাকে।” “কিতাবুল ফিক্বহ্ েআলাল মাযাহিবিল আরবায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الحنفية قالوا تكره الصلاة الى صورة الحيوان مطلقا وان لم تشغله سواء كانت فوق رأس المصلى أو أمامه أو خلفه أو من يمينه أو يساره أو بحذائه وأشدها كراهة ما كانت امامه ثم فوقه ثم يمينه ثم يساره ثم خلفه.
অর্থঃ- “হানাফীগণ বলেন, সাধারণত প্রাণীর ছবিযুক্ত স্থানে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী, যদিও উক্ত ছবির প্রতি মশগুল না হয়। চাই উক্ত প্রাণীর ছবি মুছল্লীর মাথার উপরে, সামনে-পিছনে অথবা ডানে-বামে বা মুছল্লীর জুতার মধ্যে থাকুক না কেন; সকল অবস্থাতেই নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। এবং নামায শক্ত মাকরূহ্ তাহরীমী হবে প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে বা উপরে বা ডানে-বামে বা নামাযীর পিছনে থাকলে।” “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, উর্দূ কম্পোজ করতে হবে অর্থঃ- “নামাযীর সামনে, উপরে, ডানে-বামে অথবা কাপড়ের মধ্যে প্রাণীর ছবি থাকলে নামায মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। …..এবং সবচেয়ে বেশী মাকরূহ্ হবে যদি প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে বা মাথার উপর বা নামাযীর ডানে-বামে বা নামাযীর পিছনে থাকে।” অতএব, আবারো প্রমাণিত হলো যে,মানুষ বা জীব-জন্তরু ছবি ঘরে মওজুদ থাকলে সে ঘরে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। চাই প্রাণীর ছবি ঘরের ভিতরে নামাযী ব্যক্তির সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে যেখানেই মওজুদ থাকুক না কেন। তাই করণীয় হলো- ঘরে, দোকানে বা যে-কোন স্থানে মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবি মওজুদ রাখা যাবে না এবং উক্ত প্রাণীর ছবি ঘরে মওজুদ থাকলে সেই ঘরে নামায পড়া যাবে না। (চলবে) মুহম্মদ মুহিউদ্দীন সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম। সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর- জানুয়ারী/২০০৩-০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ‘‘বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।’’ তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ্, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে।
আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, ‘‘বিতির নামাযের পর দুই রাক্আত নফল নামায… দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।”
এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফগুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য। তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালক্বী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীমূলক হয়েছে।
কেননা সাধারণতঃ নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব-সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ। কেননা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল এবং অন্যান্য নফলের ক্ষেত্রে একই হুকুম নয়। বরং বিত্র নামাযের পর দুই রাকায়াত নফলের হুকুম অন্যান্য নফল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ অন্যান্য নফল দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব, বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব। আর হালক্বী নফল অর্থাৎ বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব, আর বসে পড়লে পূর্ণ ছওয়াব। কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেননি। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।
(ধারাবাহিক)
উল্লেখ্য,রেযাখানীরা ‘বুখারী, মুসলিম,ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ’ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে কয়েকখানা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছে আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। কারণ তারা কিতাবের ইবারত, সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে ইবারত কারচুপি করে “বুখারী, ইবনে মাজাহ, মিনহাজ, মিরকাত, মুসলিম নাসায়ী ও রদ্দুল মুহ্তার ইত্যাদি কিতাব” -এর বরাত দিয়ে যেটা বলতে চেয়েছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য সে রকম নয়। আমরা পর্যায়ক্রমে সেটা তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ্। নিম্নে রদ্দুল মুহ্্্তার কিতাবের বক্তব্য পর্যালোচনা করা হলো- উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে রদ্দুল মুহ্তার কিতাবের বরাত দিয়ে যে ইবারতখানা উল্লেখ করেছে, নিম্নে তা হুবহু উল্লেখ করা হলো। যেমন রেযাখানীদের হুবহু ইবারত খানা হচ্ছে – এ প্রসঙ্গে রদ্দুল মুহ্তার, ২য় খণ্ডের ২৮ পৃষ্ঠার ‘সালাত’ পর্বে ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন-
اما النبى صلى الله عليه وسلم فمن خصائصه ان نافلته قاعدا مع القدرة على القيام كنافلته قائما- الخ.
অর্থাৎ- “দাঁড়ানোর শক্তি থাকা সত্ত্বেও বসে নফল নামায পড়া হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাঁড়িয়ে নামায পড়ার অনুরূপ। (অর্থাৎ বসে পড়লেও দাঁড়িয়ে পড়ার মতো পূর্ণ সাওয়াব দেয়া হবে) আর এটা তাঁর বিশেষত্ব।” অতএব, নির্ভরযোগ্য হাদীস ও ফিক্হের ইমামগণের মতকে উপেক্ষা করে বিতরের পর দু’রাকাতকে বসে পড়া উত্তম বলাটা নিছক মুর্খতা বৈকি? এর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, “রেযাখানীরা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে রদ্দুল মুহ্তার কিতাবের বরাত দিয়ে যে ইবারতখানা উল্লেখ করেছে, সেই ইবারতের মধ্যে যেহেতু بعد الوتر ركعتين (বা’দাল বিত্রি রাকয়াতাইনি) অর্থাৎ বিতরের পর দু’রাকায়াত (নফল) নামায যাকে হালকী নফল বলা হয় তার উল্লেখ নেই, সেহেতু ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর লিখিত রদ্দুল মুহ্তার কিতাবের সেই ইবারতের দ্বারা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযের প্রশ্ন আসে কি করে? মুলতঃ উল্লিখিত ইবারতে বিতরের পর দু’রাকায়াত নফল ব্যতীত অন্য সকল নফল নামাযের কথা বলা হয়েছে। বিতরের পর দু’রাকায়াত নফলের কথা বলা হয়নি। আর আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতের মধ্যে হাদীছ শরীফের সুস্পষ্ট ইবারতের দ্বারা প্রমাণ করে দিয়েছি যে, বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করা সুন্নত ও পূর্ণ ছওয়াব। কারণ হাদীছ শরীফের ইবারতের মধ্যে
يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
বিতর নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করার বর্র্ণনা সুস্পষ্টভাবে হুবহু উল্লেখ আছে। রেযাখানীদের কারচুপিমূলক বক্তব্য উদঘাটন ও খণ্ডন দ্বিতীয়তঃ রেযাখানীরা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে ‘রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে এবং ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর নাম উল্লেখ করে যে ইবারতখানা উল্লেখ করেছে, উক্ত ইবারতেও তারা সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। কারণ রেযাখানীরা কিতাবের ও লিখকের নাম দিয়ে যে ইবারতখানা উল্লেখ করেছে, উক্ত ইবারতের মধ্যে بعد الوتر ركعتين. (বা’দাল বিত্রি রাকয়াতাইনি) অর্থাৎ বিতরের পর দু’রাকায়াত (নফল) নামায যাকে হালকী নফল বলা হয় তার উল্লেখ নেই।
তৃতীয়তঃ রেযাখানীরা ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর নামে অপবাদ দিয়েছে। কারণ রেযাখানীরা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে ‘রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে এবং ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর নাম উল্লেখ করে যে ইবারতখানা উল্লেখ করেছে, উক্ত ইবারতের মধ্যে ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি بعد الوتر ركعتين قائما. (বা’দাল বিত্রি রাকয়াতাইনি ক্বায়িমান) এ ধরণের কোন ইবারত উল্লেখ করেননি বা লিখেননি। চতুর্থতঃ তাদের উল্লিখিত ইবারতে বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়া তো দুরের কথা যে ইবারতের মধ্যে بعد الوتر ركعتين. এধরণের কোন ইবারতই ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেননি বা লিখেননি। সেক্ষেত্রে ধোঁকাবাজ রেযাখানীরা কিভাবে নিজের ভ্রান্ত মতটিকে ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর নামে চালিয়ে দিল? আফসুস! এধরণের ধোঁকাবাজ মৌলভী রেযাখানীদের জন্য।
পঞ্চমতঃ রেযাখানীরা বলেছে, “নির্ভরযোগ্য হাদীস ও ফিক্হের ইমামগণের মতকে উপেক্ষা করে বিতরের পর দু’রাকাতকে বসে পড়া উত্তম বলাটা নিছক মুর্খতা বৈকি?
এর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, নির্ভরযোগ্য কোন হাদীছ শরীফের মতকে উপেক্ষা করা হয় নাই। কারণ রেযাখানীরা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে ‘বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ’ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে কয়েকখানা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছে, মুলতঃ তাদের উল্লিখিত হাদীছ শরীফে بعد الوتر ركعتين قائما (বা’দাল বিত্রি রাকয়াতাইনি ক্বায়িমান) বিতরের পর দু’রাকায়াত নফল দাঁড়িয়ে পড়ার কথা বলা হয়নি। শুধু তাই নয় তাদের উল্লিখিত হাদীছ শরীফে بعد الوتر ركعتين قائما এধরণের কোন ইবারতই উল্লেখ নেই। সুতরাং যে হাদীছ শরীফে بعد الوتر ركعتين قائما এধরণের কোন ইবারতই উল্লেখ নেই সেক্ষেত্রে হাদীছ শরীফের মতকে উপেক্ষা করা হলো কিভাবে? মুর্খ রেযাখানীরা কি তাদের উল্লিখিত হাদীছ শরীফে بعد الوتر ركعتين قائما এধরণের কোন ইবারত প্রমাণ করতে পারবে? মুর্খ রেযাখানীরা কশ্মিনকালেও তা প্রমাণ করতে পারবে না। অথচ মুর্খ রেযাখানীরাই নির্ভরযোগ্য হাদীছ শরীফের মতকে উপেক্ষা করে বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযকে দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম বলে চরম মুর্খতার এবং কুফরীর পরিচয় দিয়েছে। কারণ নির্ভরযোগ্য হাদীছ শরীফের ইবারতের মধ্যে
يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করার বর্র্ণনা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। সুতরাং পাঠকের সুবিধার্থে বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করা সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য হাদীছ শরীফখানা হুবহু আবারো তুলে ধরা হলো। যেমন, “ইবনে মাজাহ্্্্্্্ শরীফের” ৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
حدثنا محمد بن بشار حدثنا حماد بن مسعدة حدثنا ميمون بن موسى المرئى عن الحسن عن امه عن ام سلمة رضى الله عنها ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মুহম্মদ ইবনে বাশ্শার রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত হাম্মাদ ইবনে মাসয়াদা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত মায়মূনা ইবনে মূসা আল-মারায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি তাঁর মা থেকে বর্ণনা করেন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, আখিরী রসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
يصلى بعد الوتر ركعتين خفيفتين وهو جالس.
বিত্র নামাযের পর সংক্ষিপ্তাকারে দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করতেন।”
ষষ্ঠতঃ রেযাখানীরা বলেছে,“…..ফিক্হের ইমামগণের মতকে উপেক্ষা করে বিতরের পর দু’রাকাতকে বসে পড়া উত্তম বলাটা নিছক মুর্খতা বৈকি?
মুর্খ রেযাখানীদের উক্ত মুর্খতাসুচক বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, ফিক্হের ইমামগণের কোন মতকে উপেক্ষা করা হয় নাই। কারণ রেযাখানীরা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে ‘রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে এবং ফিক্হের ইমাম হিসাবে ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর নাম উল্লেখ করে যে ইবারতখানা উল্লেখ করেছে, উক্ত ইবারতের মধ্যে بعد الوتر ركعتين قائما এধরণের কোন ইবারতই উল্লেখ নেই। সুতরাং যে ফিক্হের ইমামের লিখিত কিতাব থেকে بعد الوتر ركعتين قائما. এধরণের কোন ইবারতই তারা উল্লেখ করতে পারেনি সেক্ষেত্রে ফিক্হের ইমামগণের মতকে উপেক্ষা করা হলো কিভাবে?
মূলতঃ রেযাখানীরা ফিক্হের ইমামগণের বরাত দিয়ে এখানেও তারা সাধারণ মানূষকে ধোঁকা দিয়েছে। (চলবে)
মোল্লা মুহম্মদ আলী আকবর লেমুবাড়ী, মানিকগঞ্জ।
সুওয়ালঃ কেউ যদি আত্তাহিয়্যাতু পড়তে বসে ভুলে সূরা ফাতিহা বা অন্য কিছু পড়ে বা নামাযের নিয়ত বেঁধে ছানা পড়ার পরিবর্তে ভুলে দোয়া কুনূত বা অন্য কিছু পড়ে অথবা ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পরিবর্তে আত্তাহিয়্যাতু বা অন্য কিছু পড়ে, তাহলে কি সিজ্দায়ে সাহু ওয়াজিব হবে?
জাওয়াবঃ আত্তাহিয়্যাতু পড়তে বসে ভুলে অন্য কিছু যেমন সূরা ফাতিহা, ছানা, দোয়া কুনূত ইত্যাদি পড়লে সিজ্দায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। আর নামাযের নিয়ত বেঁধে ছানা পড়ার পরিবর্তে ভুলে দোয়া কুনূত বা আত্তাহিয়্যাতু ইত্যাদি কোন কিছু পড়লে অথবা ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পরিবর্তে অন্য কিছু পড়লে যেমন- আত্তাহিয়্যাতু, ছানা বা যে কোন সূরা, তাহলে সিজ্দায়ে সাহু ওয়াজিব হবেনা। (সমূহ ফিক্বাহ কিতাব)
মুহম্মদ এনামুল হক, কুষ্টিয়া।
সুওয়ালঃ সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণের কথাটি শুদ্ধ কিনা?
জাওয়াবঃ এ কথাটি কুফরী। {দলীলসমূহঃ আহকামুল কুরআন, খাযিন, বাগবী, আল বাইয়্যিনাত ২৬, ৯০তম সংখ্যা।} মুহম্মদ শামসুদ্দীন, চাঁদপুর। সুওয়ালঃ ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদি খেলার জন্য মীলাদ মাহফিল ও দোয়া করা যাবে কিনা?
জাওয়াবঃ যাবে না। দোয়া করা হারাম ও কুফরী। {দলীলসমূহঃ জামিউল ফুছূলীন, আলমগীরী, ফতওয়ায়ে আমীনিয়া, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৭১তম সংখ্যা।}
মুহম্মদ জিয়াউর রহমান, দিনাজপুর।
সুওয়ালঃ আক্বীদা বিশুদ্ধ রাখা কি?
জাওয়াবঃ ফরয। কারণ আক্বীদা বিশুদ্ধ না রাখলে আমলের কোন মূল্য নেই। [দলীলসমূহঃ আক্বাঈদে নছফী, ফিক্বহুল আকবর, আক্বীদাতুত্ তহাবী, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৩৫তম সংখ্যা]
মুহম্মদ আলী আছগর, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ যার আক্বীদা শুদ্ধ নয়, তার ইবাদত কবুল হবে কি না?
জাওয়াবঃ না, কবুল হবে না। [দলীলসমূহঃ আহকামুল কুরআন, মাযহারী, আলমগীরী, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৩৫-৪৬তম সংখ্যা]
মুহম্মদ আব্দুল হাই, টঙ্গী।
সুওয়ালঃ কাদিয়ানী সম্প্রদায় কাফির, না মুসলমান?
জাওয়াবঃ কাফির। কারণ তারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শেষ নবী ও রসূল হিসেবে বিশ্বাস করেনা। [দলীলসমূহঃ তাফসীরে মাযহারী, মুসলিম, মিশকাত, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১২৯তম সংখ্যা]
মুহম্মদ আবু বকর ছিদ্দীক, মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়ালঃ নাজাতপ্রাপ্ত দলটির নাম কি?
জাওয়াবঃ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত। তথা যারা হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী। [দলীলসমূহঃ আহমদ, আবূ দাউদ, মিরকাত, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১১৩তম সংখ্যা]
মুহম্মদ কামরুজ্জামান, বায়েরকাদি, কিশোরগঞ্জ।
সুওয়ালঃ হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল বলা কি?
জাওয়াবঃ কুফরী। [দলীলসমূহঃ আলমগীরী, আক্বাঈদে নছফী, আক্বীদাতুত্ তহাবী, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১২৯তম সংখ্যা]
মুসাম্মত ফাহমিদা খাতুন, কাউনিয়া, রংপুর।
সুওয়ালঃ মেয়েদের জন্য অতিরিক্ত কোন আমল ফরয?
জাওয়াবঃ পর্দা করা। [দলীলসমূহঃ মাযহারী, নাসাঈ, বাইহাক্বী, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১৩১তম সংখ্যা] মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম, চাপাইনবাবগঞ্জ।
সুওয়ালঃ লক্বব ব্যবহার করা কি?
জাওয়াবঃ সুন্নত। [দলীলসমূহঃ আহকানুল কুরআন, কিতাবুল আলক্বাব, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১২, ১৩, ১৬ ১৭, ১৮,, ১৯, ৪৪, ৪৭, ৪৮, ৫৭, ৭৪, ৭৬, ৮২, ৯৮, ৯৪, ৯৭, ১০৫, ১০৬তম সংখ্যা]
মুহম্মদ শাফিয়ী আহমদ, নাজিমখান, কুড়িগ্রাম।
সুওয়ালঃ কোনা বন্ধ, গোল ও নিছফুসাক কোর্তা ব্যবহার করা কি?
জাওয়াবঃ সুন্নত। [দলীলসমূহঃ তিরমিযী, মাকতুবাত শরীফ, ফতওয়ায়ে শামী, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৪৯তম সংখ্যা] মুহম্মদ এনামুল হক, মাহিগঞ্জ, রংপুর। সুওয়ালঃ কোনা ফাঁড়া কোর্তা পরিধান করা কি?
জাওয়াবঃ সুন্নতের খিলাফ ও বিদ্য়াত। [দলীলসমূহঃ তিরমিযী, ফতওয়ায়ে শামী, গুলজারে সুন্নত, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৪৯তম সংখ্যা]
কাওছার আহমদ, বানারিপাড়া, বরিশাল।
সুওয়ালঃ কোর্তায় গুটলি ব্যবহার করা কি?
জাওয়াবঃ খাছ সুন্নত। [দলীলসমূহঃ আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৪৯তম সংখ্যা]
মুহম্মদ রুহুল আমীন, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম।
সুওয়ালঃ ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুষ্ঠান পালন করা কি?
জাওয়াবঃ ফরয-ওয়াজিব। [দলীলসমূহঃ তাফসীরে ইবনে আব্বাস, তিরমিযী, মাছাবাতা বিস্ সুন্নাহ, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১১, ১৬, ৪৭, ৮২, ৯৪, ৯৮, ১০০, ১০৫তম সংখ্যা]
মুহম্মদ শাহীনুর রহমান, খুলনা।
সুওয়ালঃ ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুষ্ঠান পালন করাকে যারা বিদ্য়াত বলে তাদের ফায়ছালা কি?
জওয়াবঃ তারা বিদ্য়াতী, গোমরাহ্ ও কাফিরের অন্তর্ভুক্ত। [দলীলসমূহঃ ফতওয়ায়ে আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, শরহে আক্বাঈদে নছফী, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৯৮, ১০০, ১০৫, ১২৯তম সংখ্যা] মুহম্মদ মামুন, সিলেট।
সুওয়ালঃ নিয়ত করে মাযার শরীফ যিয়ারত করা কি?
জাওয়াবঃ খাছ সুন্নত। [দলীলসমূহঃ ইবনে মাজাহ, বাইহাক্বী, দুররুল মুখতার, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৪, ২২, ২৩, ৩৩, ৪৫, ৫২, ৫৫, ৬৯, ৮০, ৮২, ৮৩তম সংখ্যা]
মুহম্মদ শামীম, নরসিংদী।
সুওয়ালঃ তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া কি?
জাওয়াবঃ বিদ্য়াত। [দলীলসমূহঃ হিদায়া, দুররুল মুখতার, ফতহুল ক্বাদীর, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৭, ১৩, ১৪, ৩১, ৪১, ৫৩, ৭০, ৮২তম সংখ্যা]
মুহম্মদ শহীদুর রহমান, টেকনাফ, কক্সবাজার।
সুওয়ালঃ লাল রুমাল পরিধান করা পুরুষের জন্য জায়িয কিনা?
জাওয়াবঃ না, জায়িয নেই। বরং পুরুষের জন্য লাল রুমাল পরিধান করা হারাম। [দলীলসমূহঃ তিরমিযী কাযীখান, খুলাছাতুল ফতওয়া, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৪৭, ১০৪তম সংখ্যা]
মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ তারাবীহ্ নামাযে কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয কিনা?
জাওয়াবঃ হ্যাঁ, জায়িয। [দলীলসমূহঃ তাফসীরে আযীযী, আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ২৩, ২৪, ৩৬, ৪৭, ৬৬, ৬৯, ৭১, ৭৪, ৭৫, ৭৬, ৭৭, ৮২, ৮৪, ৮৭, ৮৮, ৯০, ৮২, ৯৯তম সংখ্যা]
মুহম্মদ ইব্রাহীম খলীফ, বাসাবো, ঢাকা।
সুওয়ালঃ দাঁড়ি রাখা কি?
জাওয়াবঃ ফরয। [দলীলসমূহঃ বুখারী, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন, আহসানুল ফতওয়া, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ২, ৬, ৮,১১, ১৮, ২০, ২৩, ২৬, ৩০, ৩২, ৩৩, ৩৪, ১০৬তম সংখ্যা]
মুহম্মদ হামিদুর রহমান, ফতুল্লা, এনগঞ্জ।
সুওয়ালঃ দাঁড়ি কাটা কি?
জাওয়াবঃ হারাম। কবীরা গুণাহ।
[দলীলসমূহঃ তিরমিযী, মাদারিজুন্ নুবুওওয়াত, আহসানুল ফতওয়া, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৩২, ৩৩, ৩৪, ১০৬তম সংখ্যা]
মুসাম্মত সায়েমা আক্তার, চিলমারী, কুড়িগ্রাম।
সুওয়ালঃ যারা মীলাদ শরীফ পড়াকে নাজায়িয বলে তাদের ফায়সালা কি?
জাওয়াবঃ তারা গোমরাহ ও কাফিরের অন্তর্ভুক্ত। {দলীলসমূহঃ আলমগীরী, দুুররুল মুখতার, আকাঈদে নছফী, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৩৬, ৯৯, ১১৫-১১৮তম সংখ্যা।]
মুহম্মদ রুহুল হাসান, পল্লবী, মিরপুর।
সুওয়ালঃ মীলাদ শরীফে ক্বিয়াম করা কি?
জাওয়াবঃ শরাফত, আদব, সুন্নতে উম্মত, মুস্তাহ্সান। বিদ্য়াত বলা মূর্খতা ও গোমরাহী। {দলীলসমূহঃ রদ্দুল মুহতার, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, শরহুত্ ত্বীবী, মাসিক আল বাইয়্যিনাত ২৮, ৩৬, ৪০, ৪৭, ৫৯, ৬৩, ৬৮, ৭০, ৭৫, ৭৭, ৮৪, ৮৮, ৯৩, ১০৪, ১২২, ১০৫তম সংখ্যা।}
মুসাম্মত রোজী আখতার, মানিকগঞ্জ।
সুওয়ালঃ আমার স্বামী যখন বাড়িতে থাকেন তখন আমি ও আমার স্বামী জামায়াতে নামায পড়ে থাকি। (স্বামীর এক কাতার পিছনে দাঁড়াই) উক্ত নিয়মে নামায পড়লে আমার নামায হবে কি-না?
জাওয়াবঃ হ্যাঁ, নামায হয়ে যাবে। [দলীলসমূহঃ আলমগীরী, শামী, বাহরুর রায়িক্ব ইত্যাদি)