সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৭১তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম। মুহম্মদ হুসাইন। মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।

সুওয়াল:  ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খণ্ডন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো- … ৪. ইসলামী স্বর্ণযুগে এবং তৎপরবর্তীতে ফুক্বাহায়ে কিরাম ও হাদীছ বিশারদগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। তাই তা হযরত মুফতিয়ানে কিরামের ঐক্যমতে বিদয়াত। (নাঊযুবিল্লাহি মিনাল কাযিবীন) এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাট হাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি। (ধারাবাহিক)

জাওয়াব:    হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য শুধু ডাহা মিথ্যাই নয় বরং সম্পূর্ণরূপেই মনগড়া, দলীলবিহীন ও বিভ্রান্তিকর। শুধু তাই নয়, তার পাশাপাশি স্বয়ং আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম, ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের প্রতি মিথ্যারোপ করার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। স্মর্তব্য যে, হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।  (১) স্বর্ণযুগে কেউ ফরজ নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি।  (২) তৎপরবর্তিতে অর্থাৎ স্বর্ণযুগের পর থেকে অদ্যবধি ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করেননি।   (৩) সকল মুফতিয়ানে কিরাম ঐক্যমত হয়ে ফতওয়া দিয়েছেন যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদয়াত বা নাজায়িয।  (নাউযুবিল্লাহ) উল্লেখ্য, হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবরা তাদের উল্লিখিত তিনটি বক্তব্যের কোন একটিও নির্ভরযোগ্য কিতাবের ইবারত বা দলীল দ্বারা প্রমাণ করতে পারেনি এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও তা প্রমাণ করতে পারবেনা। সুতরাং এমনিতেই তাদের উল্লিখিত বক্তব্যগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও পরিত্যাজ্য বলে সাব্যস্ত হয়। এরপরও আমরা তাদের উল্লিখিত প্রতিটি বক্তব্য দলীলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট ও কুফরীমূলক বলে প্রমাণ করবো। ইনশাআল্লাহ। যেমন হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের প্রথম বক্তব্য হলো- (১) স্বর্ণযুগে কেউ ফরজ নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। অর্থাৎ  তাদের বক্তব্য হলো হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। (নাউযুবিল্লাহ) হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য যে ভুল, মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া ও দলীলবিহীন তা আপনারাও গত কয়েক সংখ্যার আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবেই অবগত হয়েছেন। অথাৎ অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন। যদি তাই হয়ে থাকে তবে তাদের উক্ত বক্তব্য রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল নয় কি? আর উনাদের প্রতি মিথ্যারোপ করা কুফরী নয় কি?

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

 من كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.

অর্থঃ- যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে সে যেন জমিনে থাকতেই তার  স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়। (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ) হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের দ্বিতীয় বক্তব্য হলো- (২) তৎপরবর্তিতে অর্থাৎ স্বর্ণযুগের পর থেকে অদ্যবধি ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরয নামাযের পর মুনাজাত করেননি।  এর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, “স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয নামাযের পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নিয়ে হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন” এটা হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পর অন্য কোন দলীলের কোনই প্রয়োজন নেই। বরং এ ক্ষেত্রে অন্য কোন দলীল তালাশ করা কুফরী বৈ কিছুই নয়। দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, “ফুক্বাহায়ে কিরামগণের ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরয নামাযের পর মুনাজাত করেননি।” হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য চরম মিথ্যা, বানোয়াট ও ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের শানে সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল। কারণ তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে একটি দুর্বল থেকে দূর্বলতম দলীলও পেশ করতে পারেনি এবং তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোশেশ করলেও উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল তারা পেশ করতে পারবে না। পক্ষান্তরে অনুসরণীয় সকল মুহাদ্দিছীনে কিরাম ও ফুক্বাহায়ে কিরাম যে ফরয নামাযের পর মুনাজাত করাকে সমর্থন করেছেন এবং নিজেরাও করেছেন তার বহু প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। যা অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে ও অনেক সংখ্যাতেই পত্রস্থ হয়েছে। এখানেও কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো-

(তৃতীয় অংশ)

 “আইনুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৬৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..

 অর্থঃ “এবং নামাযের পরে মুনাজাত করাই সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। হযরত আবূ উমামাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, কোন্ দোয়া অধিক কবূলযোগ্য? তিনি উত্তর দিলেন, শেষ রাত্রের মধ্যখানে এবং ফরয নামাযের পরে মুনাজাত কবূল হয়। আর হযরত মুগীরা ইবনে শো’বা  রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক নামাযের পর মুনাজাত করতেন। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি এটা ‘তারীখুল আওসাত্ব’ কিতাবে বর্ণনা করেন।”  আইনুল হিদায়া ১ম জিঃ, ৬৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..

অর্থঃ- “প্রত্যেক ফরয নামাযের পর মুনাজাত করার আদেশ রয়েছে, কেননা ফরয নামাযের পর মুনাজাত কবূল হওয়ার স্থান। (অর্থাৎ এরপর মুনাজাত কবূল হয়।।”  মিনহাজুল উম্মাল ও আকায়িদুস সুন্নিয়া, তুহ্ফাতুল মারগুবাত কিতাবে উল্লেখ আছে,

ان الدعاء بعد الصلوة المكتوبة مسنون.

অর্থঃ- “নিশ্চয় ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা সুন্নত।”  তাহ্যীবুল আয্কার র্লিরমলী, তুহ্ফাতুল মারগুবাত কিতাবে উল্লেখ আছে,

قد اجمع العلماء على استحباب الذكر والدعاء بعد الصلوت وجاءت فيه احاديث كثيرة تهذيب الاذكار للرملى- كذا فى التحفة المرغوبة.

অর্থঃ “আলিমগণ একমত যে, নামাযের পর যিকির ও মুনাজাত করা মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।”   মাফাতিহুল জিনান, তুহ্ফাতুল মারগুবাহ্ ও সায়াইয়াহ্ কিতাবে উল্লেখ আছে,

(يدعو) بعد المكتوبة اى قبل السنة (مفاتيح الجنان كذا فى التحفة المرغوبة والسعاية.)

অর্থঃ- “ফরয নামাযের পর, সুন্নতের পূর্বে সকলে মুনাজাত করবে।” তুহ্ফাতুল মারগুবাহ্ত কিতাবে উল্লেখ আছে,

وفى شرعة ااسلام ويغتنم اى امصلى الدعاء بعد المكنوبة كذا فى التحفة امروبة.

অর্থঃ- “শরয়াতুল ইসলাম কিতাবে বর্ণিত রয়েছে- মুছল্লীগণ ফরয নামাযের পর মুনাজাত করাকে গণীমত মনে করবে।”  ফতওয়ায়ে সূফীয়াহ্ কিতাবে উল্লেখ আছে,

عن البستى. انه قا فى تفسير قوه تعالى فاذا قضيتم الصلوة فاذكروا الله … اى اذكروا الله تعالى وادعوا بعد الفراغ من الصلوة.

অর্থঃ- “হযরত বুস্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ পাক-এর কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ

فاذا قضيتم الصلوة فاذكروا

 -এর তাফসীরে বলেন, অর্থাৎ তোমরা নামায শেষ করে আল্লাহ পাক-এর যিকির কর এবং তাঁর নিকট মুনাজাত কর।”  (আল ইক্মাল লি আব্দিল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহ্লভী, ইস্তিহবাবুদ্ দাওয়াত, ইমদাদুল ফতওয়া কিতাবে উল্লেখ আছে,

وان منها الدعاء اثر الصلوة وانكر الامام ابن عرفة وجود الخلاف فى ذالك وقال لا اعرف فيه كراهة دعاء الامام عقب الصلوة وتأمين الحاضربن على دعائه.

অর্থঃ- “এবং নিশ্চয় নামাযের পরক্ষণ মুনাজাত কবূলের উত্তম স্থান। ইমাম ইবনে আরফা এ বিষয়ে কোন মতানৈক্য আছে বলে মনে করেন না। তিনি আরো বলেন, নামাযের পর ইমাম ছাহেবের মুনাজাত ও এর উপর উপস্থিতগণের আমীন বলার মধ্যে কোন মাকরূহ্ আছে বলে আমি মনে করিনা।”  নুয্হাতুল মাজালিস শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী, আল ই’তিছামে বিছ্ছলাত আলান নবী কিতাবে উল্লেখ আছে,

  ان رجلا صاد ظبية فقالت يا رسول الله صى الله عليه وسلم ارسالى حتى ارضع اوادى اعود اليه وان م اعد اليه اكن كمن صلى وم يدع واشر ممن ذكرت عنده وم يصلى عليك.

অর্থঃ- “এক ব্যক্তি একটি হরিনী শিকার করে, (নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাত হলে) হরিনী বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই শিকারীকে বলুন, আমাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য, যেন আমি আমার বাচ্চাদেরকে দুধ পান করিয়ে ফিরে আসতে পারি। যদি আমি ফিরে না আসি, তবে আমি ঐ (হতভাগ্য) ব্যক্তির ন্যায় হবো, যে ব্যক্তি নামায পড়লো অথচ মুনাজাত করলো না। অথবা সেই নরাধমের ন্যায় হবো, যার সম্মুখে আপনার নাম মুবারক উচ্চারিত হয় অথচ সে আপনার প্রতি ছলাত (দুরূদ শরীফ) পড়েনা।”  গুনিয়াতুত্ তালিবীন লি শায়খ আব্দুল কাদির জ্বিলানী, নুয্হাতুল মাজালিস কিতাবে উল্লেখ আছে,

اذا انصرف العبد من الصلوة وم يحضر الدعاء نقول املئكة انظر واالى هذا العبد استغنى عن الله.

অর্থঃ- “কোন বান্দা যখন নামায শেষ করে মুনাজাতে উপস্থিত না থেকে চলে যায়, তখন ফেরেশ্তাগণ তাকে লক্ষ্য করে বলতে থাকেন, এ বান্দার প্রতি লক্ষ্য কর, সে আল্লাহ পাক-এর রহ্মত বা নিয়ামত থেকে অমুখাপেক্ষী (বেপরোয়া) হয়ে গেল।”

 মুহম্মদ মনজরুল হক গুলবাগ, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ্ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।”  (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৮০) এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা  তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।   জাওয়াবঃ “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতোয়া দারুল উলুম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গোমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গোমরাহ করার  জন্য যথেষ্ট। কারণ আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফিকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা উত্তম বলা হয়েছে।  অর্থাৎ আযানের পর  পুনরায় মুছল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা  তাছবীব করার জন্য  الصلاة الصلاة   (আছ্ ছলাহ! আছ্ ছলাহ!)  নামায! নামায! অথবা   قامت قامت(ক্বামাত! ক্বামাত!) নামায আসন্ন, নামায আসন্ন, অথবা  التنحنح  (আত্তানাহ্নুহ্) গলা খাকড়ানো, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে আহবান করা বা তাছবীব করা সুন্নত, উত্তম ওমুস্তাহ্সান। যার আরো কিছু প্রমাণ নিম্নে পেশ করা হলো- (ধারাবাহিক)ঞ্জ  যেমন, “বিনায়া ফী শরহিল হিদায়া” কিতাবের ২য় খণ্ডের ১১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

والتثويب فى الفجر حى على الصلاة حى على الفلاح مر تين بين الاذان وااقامة حسن لانه وقت نوم وعفة.

অর্থঃ- “ফজরের নামাযে আযান ও  ইক্বামতের   মাঝে দু’বার

حى على اصلاة. حى عى الفلاح

 (হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্)  বলে সকল মানুষদেরকে  নামাযের জন্য  তাছবীব করা উত্তম।” কেননা ফজরের ওয়াক্তটা হলো ঘুম ও গাফলতির সময়।” অনুরূপ আইনী শরহে হিদায়া-এর ১ম খণ্ড ৫৪নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে। “আইনী শরহে হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وهذا التثويب محدث أحدثه عليماء الكوفة بعد عهد الصحابة رضى الله تعالى عنهم لظهور التوانى وتغير أحوال اناس .

অর্থঃ- “আর এই তাছবীব নতুন প্রচলন যা, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পর  কুফার উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ মানুষের অবস্থা পরিবর্তন  এবং তাদের মধ্যে ইবাদতে গাফলতী ও অলসতা  প্রকাশ পাওয়ার কারণেই এই তাছবীবের প্রচলন করেন। অর্থাৎ প্রথম যামানায় ঘুমের গাফলতী থেকে সতর্ক করার জন্য তাছবীব করা হতো। আর এই যামানায় মানুষের মধ্যে জাগ্রত অবস্থাতেই গাফলতী ও সুস্তী-কাহেলী পয়দা হয়েছে।” (অতএব বর্তমান যামানায় তাছবীবের গুরুত্ব আরো বেশী।  অনুরূপ বিনায়া-এর ২য় খণ্ড ১১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।   “বিনায়া ফী শরহিল হিদায়া” কিতাবের ২য় খণ্ডের ১১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ومعناه أى معنى التثويب اعود الى الاعلام وهذا معناه الشرعى ….. وهو أى التثويب عى حسب ما تعارفوه أى ما تعارفه أهل كل بلدة من التنحنح أوقوله اصاة اصلاة أو قوله قامت قامت لانه لمبالغة فى ااعلام وانما يحصل ذلك بما تعارفوه.

অর্থঃ- “তাছবীবেরঞ্জশরয়ী অর্থ হলো (আযানের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার পর) পুনরায় মানুষদেরকে নামাযের কথা জানিয়ে দেয়া। …আর এই তাছবীব  প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়েই করতে হবে। যেমন, التنحنح  (আত্তানাহ্নুহ্)  গলা খাকড়ানো অথবা  الصلاة الصلاة   (আছ্ ছলাহ! আছ্ ছলাহ!)    নামায! নামায! অথবা  قامت قامت  (ক্বামাত! ক্বামাত!) নামায আসন্ন, নামায আসন্ন, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে তাছবীব করতে হবে।  কেননা মানুষদেরকে  নামাযের কথা ভালভাবে জানিয়ে দেয়ার জন্যই  তাছবীব করা  হয়।  আর মানুষদেরকে নামাযের কথা ভালভাবে জানিয়ে দেয়াটা হাছিল হয় প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দের মাধ্যমে।” অনুরূপ আইন-এর ১ম খণ্ড ৫৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে। “হিদায়া মায়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

والمتأ خرون استحسنوه فى الصلوات كلها لظهور التوانى فى الامور الدينية.

অর্থঃ- “আর দ্বীনী কাজে তথা নামাযে মানুষের  গাফলতি  প্রকাশের কারণেই  উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ  সকল নামাযেই এই তাছবীব” করাকে  মুস্তাহ্সান  বলেছেন।  (চলবে)

 মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান টাইগার পাস রোড  চট্টগ্রাম সুওয়ালঃ  চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব” …। এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য? জাওয়াবঃ   আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে  এবং ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহনযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডন সহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-

(ধারাবাহিক)

রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত দলীল সমূহের খণ্ডনমূলক আলোচনা

  উল্লেখ্য, রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। কারণ তাদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। নিম্নে রেযাখানীদের হুবহু বক্তব্য তুলে ধরে তার সঠিক জবাব উল্লেখ করা হলোঃ  যেমন, রেযাখানীরা বলেছে, “আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব।”  এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য যে, ডাহা মিথ্যা এবং দলীল বিহীন তা আমরা আমাদের মাসিক আল বাইর্য়্যিনাতে বিগত সংখ্যায় প্রমাণ করেছি যে, তাদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই।  কারণ তারা  তাদের বক্তব্যের  স্বপক্ষে দলীল হিসাবে ‘আল ফিক্বহু আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া’ কিতাবের বরাত দিয়েছে। অথচ আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব। এধরনের কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা, কোন ইবারত তাদের উল্লেখিত “আল ফিক্বহু আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া” কিতাবের ইবারতে উল্লেখ নেই।  সুতরাং প্রমাণিত হলো রেযাখানীদের  বক্তব্যের সাথেঞ্জকিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। অতএব রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের ইবারত  ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। ইহা  তাদের  প্রথম ধোকা । দ্বিতীয়তঃ জামায়াত যেখানে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্। সেখানে জামায়াতে শরীক হওয়ার জন্য  গমন করা ওয়াজিব হয় কি করে। কারণ নির্ভরযোগ্য সকল ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে এ কথাই উল্লেখ আছে যে, “জামায়াত হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা”। অর্থাৎ জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।          বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাবগুলোতে মূল ফতওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা হিসেবে উল্লেখ আছে। যেমন, বিশ্ব বিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব-       “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

جماعة سنت موكده بى.

অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”   “শরহে বিক্বায়া”  কিতাবের ১ম খন্ডের ১০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 الجماعة سنة مؤكدة وهو قريب من الواجب.

অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা ওয়াজিবের নিকটবর্তী।”         “বাহরুর রায়িক”-এর ১ম খন্ডের ৩৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

الجماعة سنة مؤكدة اى قوية تشبه الواجب فى القوة.

অর্থঃ- “জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অর্থাৎ খুবই শক্তিশালী যা শক্তিতে ওয়াজিবের সাদৃশ্য রাখে।”          “ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ১ম খন্ডের ২৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

الجماعة سنة مؤكدة اى تشه الواجب فى القوة.

অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা শক্তিতে ওয়াজিবের সাদৃশ্য রাখে।”   “আল ফিক্বহুল মু-ইয়াস্সার” কিতাবের ১০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

تسن الجماعة لرجال سنة عين مؤكدة شبيهة بالواجب فى القروة لصلوات الخمس.

অর্থঃ- “পুরুষ লোকের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামায়াতে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা আইনী যা ওয়াজিবের সাদৃশ্য রাখে।”         “আইনুল হিদায়া”  কিতাবের ১ম খন্ডের ৫৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

খ উদূ লেখা ঢুকবে………………………………

অর্থঃ- “ইমাম মুছান্নেফ রহমতুল্লাহি আলাইহি জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা নির্ধারণ করেছেন। অর্থাৎ পুরুষের জন্য এই সুন্নতটা শক্তিশালীর দিক দিয়ে ওয়াজিব যা মূলতঃ ওয়াজিব নয়।” “নূরুল ইজাহ্” কিতাবের ৭৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

والصلوة بالجماعة سنة للرجال الاحرار بلا عذر

অর্থঃ- “ওজর ব্যতীত স্বাধীন পুরুষের জন্য জামায়াতে নামায পড়া সুন্নত।” “শরহুন্ নিক্বায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 الجماعة فى اصلوة الفريضة سنة مؤكدة.

অর্থঃ- “ফরয নামায জামায়াতে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”     “হেদায়া মা’য়াদ দেরায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের  ১২১ পৃষ্ঠার ১৮ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

مؤكدة اى قوبة يشبه اواجب فى القوة.

অর্থঃ- “জামায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদা অর্থাৎ শক্তিশালী যা শক্তিতে ওয়াজিবের সাদৃশ্য রাখে।”       “নূরুল হিদায়া”  কিতাবের ১ম খন্ডের ১০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

খ উদূ লেখা ঢুকবে………………………………

অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা ওয়াজিবের নিকটবর্তী।”         “জাওহারাতুন নাইয়ারাহ”  কিতাবের ১ম খন্ডের ৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

الجماعة سنة مؤكدة اى فربية من الواجب.

অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অর্থাৎ ওয়াজিবের নিকটবর্তী।” “মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ১৯১ পৃৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

والصلوة باجماعة سنة فى ااصح مؤكدة شبيهة بالواجب فى اقوة.

অর্থঃ- “জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নত। অধিক সহীহ্ মতে সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা শক্তিতে ওয়াজিবের সাদৃশ্য রাখে।”          “মা’দানুল হাক্বায়িক শরহে কানজুদ দাক্বায়িক”  কিতাবের  ১ম খন্ডের ১৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

   খ উদূ লেখা ঢুকবে………………………………

অর্থঃ- “জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।”   “বিনায়া শরহে হেদায়া”  কিতাবের ২য় খন্ডের ৩৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 وفى الجواهرعن مالك سنة مؤكدة وليست بواجبة.

অর্থঃ-  “জাওয়াহির” কিতাবে ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে উল্লেখ আছে যে, জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। কিন্তু ওয়াজিব নয়।”  কাজেই জামায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ হলে, আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব হতে পারে না।  অতএব, রেযাখানীরা যে বলেছে, আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব। ইহা তাদের দলীলবিহীন দ্বিতীয় ধোকা। (চলবে)

  খন্দকার সেলিম আহমদ পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল সুওয়াল:  হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।  তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-  ৭. একজন নবীর পক্ষে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সম্ভব নয়।  (নাউযুবিল্লাহ)া  জাওয়াব: হাটহাজারী মৌলভীরা  যে বলেছে,  একজন নবীর পক্ষে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সম্ভব নয়। তাদের উক্ত বক্তব্যের  জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য অজ্ঞতাসূচক, জিহালতপুর্ণ ও দলীলবিহীন। শুধু তাই নয় বরং কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। কারন তারা নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব থেকে এর প্রমাণ পেশ করতে পারে নাই এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত পারবেও না। (ইন্শাআল্লাহ। মুলতঃ হাটহাজারী মৌলভীরা ও তাদের সমজাতীয়রা আখিরী নবী,  সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান-মান, মর্যদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযিলত সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারণেই এ ধরনের কাট্টা কুফরী মুলক মন্তব্য করেছে। কারণ যেখানে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যারা খাদিম ও উম্মত তারাই একই সময়ে একাধিক স্থানে উপস্থিত থাকেন বা উপস্থিত থাকতে পারেন। এর বহু প্রমাণ রয়েছে। যেমন মালাকুল মউত হযরত আজরাঈল আলাইহিস্ সালাম একই সময়ে একাধিক স্থানে একাধিক লোকের রূহ্ কবয করে থাকেন। সুতরাং হযরত আজরাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর পক্ষে যদি একাধিক লোকের রূহ্ কবয করার জন্য একই সময়ে একাধিক স্থানে উপস্থিত হওয়া সম্ভব  হয়, তাহলে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া আরো অনেক অনেক বেশী সম্ভব হবে। যা বলার অপেক্ষাই রাখেনা।   অনুরূপভাবে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর   যাঁরা উম্মত  তারাও যে একই সময়ে একাধিক স্থানে  উপস্থিত থাকতে পারেন এরও বহু প্রমাণ রয়েছে। যেমন, এ প্রসঙ্গে আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া অর্থাৎ নবীদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মুবারক জীবনের একটি ওয়াকেয়া উল্লেখযোগ্য। আল্লাহ্ পাক যখন বেহেশ্ত এবং দোযখ সৃষ্টি করলেন, তখন হযরত জিব্রাঈল  আলাইহিস সালাম কে বললেন যে, “হে জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম আপনি দেখেন তো আমার বেহেশ্ত-দোযখ কেমন হয়েছে।”  উনি দেখে এসে বললেন, আল্লাহ্ পাক! এত সুন্দর হয়েছে আপনার বেহেশ্ত যে, আপনার সমস্ত বান্দারা বেহেশ্তে যাবে। আর দোযখ এতো কঠিন আযাবের জায়গা, কেউ সেখানে যাবেনা।        তখন আল্লাহ্ পাক আমলনামা সৃষ্টি করে বললেন যে, “এক কাজ করেন, আমল নামাটা দেখেন?” হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম আমল নামাটা দেখলেন, দেখে বললেন যে, আল্লাহ্ পাক আপনার সমস্ত বান্দারাই জাহান্নামে যাবে। তখন আল্লাহ্ পাক বললেন, “হে জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম, আপনি কিছুক্ষণ আগে বললেন, আমার সমস্ত বান্দারা বেহেশ্তে যাবে, আর এখন বলছেন  সব জাহান্নামে যাবে, তার কি কারণ?” তখন হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, আল্লাহ্ পাক! আমি বেহেশ্তের সুখ-শান্তি ও দোযখের আযাব-গযব দেখে বলেছিলাম। কারণ কেউ চায়না কষ্টে থাকুক, সকলেই চায় সুখ। আমি বেহেশ্তের সুখ দেখে বলেছিলাম, এখন আপনি যখন আমাকে আমলনামা দেখালেন, এখন তো আমার মনে হয়, আপনার কোন বান্দা বেহেশ্তে যেতে পারবে না, সকলেই জাহান্নামে যাবে।   এরপর হযরত হযরত জিব্রাঈল  আলাইহিস সালাম বললেন, আল্লাহ্ পাক! আপনার এত সুন্দর বেহেশ্তটা আমি একবার ঘুরে দেখতে চাই , আল্লাহ্ পাক বললেন,  হে জিব্রাঈল  আলাইহিস সালাম আমার বেহেশতটা এত বড় যে, আপনার পক্ষে সেটা দেখা সম্ভব নয়।  এরপরেও হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম দেখতে চাইলে আল্লাহ্ পাক দেখার অনুমতি দিলেন। কিতাবে উল্লেখ আছে, হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম-এর ছয়শত থেকে ছয়হাজার পাখা ছিল। উক্ত ছয়শত থেকে ছয়হাজার পাখা দিয়ে  হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম ছয় হাজার বছর উড়লেন কিন্তু বেহেশ্তের কুল-কিনারা খুঁজে পেলেন না। উড়তে উড়তে উনার সমস্ত পাখা ব্যথা হয়ে গেল। হযরত জিব্রাঈল  আলাইহিস সালাম আল্লাহ্ পাক-এর কাছে আরজু করলেন, আল্লাহ্ পাক! আমার পাখা ব্যথা হয়ে গেছে আমি আর উড়তে পারছিনা, আমার বিশ্রামের ব্যবস্থা করুন।   আল্লাহ্ পাক বললেন! হে জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম! আমি তো  আগেই বলেছিলাম যে, আমার বেহেশতটা এত বড় যে, আপনার পক্ষে সেটা দেখা সম্ভব নয়। এরপর আল্লাহ্ পাক কুদরতীভাবে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালামকে বিশ্রাম দিয়ে আবার তার পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে আনলেন এবং বললেন, হে জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম! আপনি জেনে রাখুন! আমার আখিরী নবীর যাঁরা উম্মত হবেন তাঁদের এতই মর্যাদা-মর্তবা ও যোগ্যতা দেয়া হবে যে,  তারা আরশ, কুরছি, লৌহ, কলম, বেহেশ্ত, দোযখ, জান্নাত-জাহান্নাম সব কিছুই  এক চোখের পলকে দেখতে পাবেন। হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, আল্লাহ্ পাক! তাহলে আমি তা পরীক্ষা করে দেখবো। আল্লাহ্ পাক বললেন ঠিক আছে, আপনি তা পরীক্ষা করে দেখতে পারবেন।    এরপর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায়  হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম আল্লাহ্ পাককে বললেন,  আল্লাহ্ পাক!  আমি এখন সেটা পরীক্ষা করে দেখবো। আল্লাহ্ পাক  বললেন ঠিক আছে, আপনি তা পরীক্ষা করে দেখেন।  কাকে পরীক্ষা করা হবে? আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া অর্থাৎ নবীদের পরে যিনি শ্রেষ্ঠ মানুষ, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু,  উনাকে পরীক্ষা করা হবে। হযরত জিব্রাঈল  আলাইহিস সালাম মানুষের ছুরতে আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া অর্থাৎ নবীদের পরে যিনি শ্রেষ্ঠ মানুষ, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উনার  সামনে এসে বললেন, হে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আপনি বলুনতো এখন হযরত জিব্রাঈল  আলাইহিস সালাম কোথায় আছেন? আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া অর্থাৎ নবীদের পরে যিনি শ্রেষ্ঠ মানুষ, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উনার চক্ষু মুবারক বন্ধ করে খুললেন এবং বললেন যে, আপনিই হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম। হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, হে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আপনি কিভাবে বুঝতে পারলেন যে, আমিই হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম? অতঃপর আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া অর্থাৎ নবীদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হে হযরত জিব্রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি চক্ষু মুবারক বন্ধ করে আরশ, কুরছি, লৌহ, কলম, বেহেশ্ত, দোযখ, জান্নাত, জাহান্নাম সব কিছুই  এক চোখের পলকে উপস্থিত হয়ে দেখে এলাম কোথাও হযরত জিব্রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম নেই। কাজেই, আপনিই হযরত জিব্রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ্। (নুযহাতুল মাজালিস)  অতএব প্রমাণিত হলো যে, একজন উম্মতের পক্ষে যদি একই সময়ে একাধিকস্থানে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হয়, তাহলে যিনি নবীদের নবী, যিনি রসূলদের রসূল, যিনি সৃষ্টির মূল যাঁকে সৃষ্টি না করলে কিছূই সৃষ্টি হতো না। সেই আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া অসম্ভব হয় কি করে?  দ্বিতীয়তঃ  আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যাঁরা খাদিম ও উম্মতের অন্তর্ভূক্ত তাদের অবস্থা যদি এরূপ হয়, তাহলে যিনি আখিরী নবী,  সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্ষমতা কতটুকু হবে? যা সত্যিই চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়, উপলব্ধির বিষয়, অনুভূতির বিষয়। সাধারণ আক্বল -সমঝের বিষয়।

আল্লাহ্ পাক  হাটহাজারী মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সমজাতীয়দেরকে আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান-মান, মর্যদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযিলত সর্ম্পকের্ চিন্তা-ফিকির করার, উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। আমীন।  (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়াল:   অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না।  …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো।  উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই। উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো- ….. (৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী। জাওয়াব:  প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লেখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খণ্ডমূলক জবাব

(৪)

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো-  (৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবী সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা দলীলবিহীন। কারণ শরীয়ত হক্কানী আলিম হওয়ার জন্য যে শর্তারোপ করেছে তন্মধ্যে প্রথমই হলো-আক্বীদা বিশুদ্ধ থাকা। অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরী আক্বীদা রয়েছে। যার প্রমাণ আপনারা বিগত সংখ্যাগুলোতে দেখতে পেয়েছেন। যাতে প্রচলিত ছয় উছূলীদের প্রায় ২৫টি কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরী আক্বীদা দলীলসহ উল্লেখ করতঃ তা খণ্ডন করে ছহীহ আক্বীদা তুলে ধরা হয়েছে। এর পরও তারা কি করে বলতে পারে যে, ছয় উছূলীরা হক্কানী আলিম? মূলতঃ তারা যেহেতু  কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ তাই তারা হক্কানী আলিম কাকে বলে জানে না। নিম্নে শরীয়তের দৃষ্টিতে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি তুলে ধরা হলো-

(দ্বিতীয় অংশ)

আলিম কাকে বলে ?

আলিম ঐ ব্যক্তিই যার অন্তরে তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি রয়েছে। অর্থাৎ যিনি আল্লাহ্ পাক-এর ভয়ে হারাম, নাজায়িয কাজ থেকে বিরত থাকেন। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,

انما يخشى الله من عباده العلماء.

 অর্থঃ- “নিশ্চয় আল্লাহ্ পাক-এর বান্দাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আলিমগণই আল্লাহ্ পাককে ভয় করেন।” (সূরা ফাতির-২৮) এ আয়াত শরীফের তাফসীর জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল হাম্বলী মায্হাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম, ইমামুল আইম্মা, ইমামুছ্ ছিদ্দীক্বীন, শায়খুল মুহাদ্দিছীন, হযরত আহ্মদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিকে। তিনি এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন, “যাঁর ভিতর যত বেশী আল্লাহভীতি রয়েছে তিনি ততবড় আলিম।” উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে খোলাছায়” উল্লেখ আছে যে,

খ উদূ লেখা ঢুকবে………………………………

অর্থঃ- উক্ত আয়াত শরীফে  العلماء শব্দ দ্বারা কিতাব সমূহ পাঠকারী তথা (দাওরা বা টাইটেল পাশকারীদেরকে) বুঝানো হয়নি। বরং কুরআন শরীফে বর্ণিত “আলিম” তারাই, যারা মহান আল্লাহ্ পাক-এর মহিমাময় জাত ও অসীম গৌরবময় ছিফাত সমূহকে ঈমান ও মারিফতের নূরের আলোকে অবলোকন করেছেন। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয়তম ছাহাবী আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ ও (পরবর্তী) বিলায়েতপ্রাপ্ত ও মকবুল ওলীআল্লাহ্গণ কিতাবী তথা দাওরা বা টাইটেল পাশ আলিম ছিলেন না। তথাপিও তাঁরা সর্বোচ্চ স্তরের উপকারী ইল্মের অধিকারী ছিলেন। অর্থাৎ তারাই কুরআন শরীফে বর্ণিত প্রকৃত আলিম ছিলেন। উল্লিখিত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত আলিম, ইমামুল মুফাস্সিরীন, হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ “তাফসীরে ইবনে কাছীরে” উল্লেখ করেন,

عن ابن مسعود رضى الله عنه انه قال ليس العلم عن كثرة الحديث وكن العلم عن كثرة الخشية وقال احمدبن صالح امصرى عن ابن وهاب عن مالك قال ان العلم ليس لكثرة الرواية وانما العلم نور يجعله اله تعاى فى القلب.

অর্থঃ- “হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে ব্যক্তি অধিক হাদীছ শরীফ জানে সে ব্যক্তি আলিম নয়। বরং যাঁর মধ্যে আল্লাহ্ভীতি অধিক সে ব্যক্তিই আলিম। আর আহ্মদ বিন ছালেহ্ মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অধিক রেওয়ায়েত শিক্ষা করলেই আলিম হওয়া যায়না। মূলতঃ ইল্ম হচ্ছে নূর বা জ্যোতি স্বরূপ। আল্লাহ্ পাক তা মানুষের অন্তকরণে দান করেন।”  উক্ত “তাফসীরে ইবনে কাছীরে” উল্লেখিত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় আরো উল্লেখ আছে যে,

قال سفيان الثورى …………..اعلماء ثلاثة عالم بالله وعالم با مر الله وعالم بالله ليس بعالم بامر الله وعالم بامر الله ليس بعالم بالله. فالعالم بالله وبامر الله الذى يخشى الله تعالى ويعلم الدود والفرائض.

 অর্থঃ হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আলিমগণ তিনভাগে বিভক্ত। (১) আলিম বিল্লাহ্ অর্থাৎ যারা শুধু আল্লাহ্ পাককেই জানেন। কিন্তু তাঁর হুকুম-আহ্কাম সম্পর্কে অজ্ঞ। (২) আলিম বিআমরিল্লাহ্। অর্থাৎ যারা শুধু হুকুম-আহ্কাম সম্পর্কে জানেন। কিন্তু আল্লাহ্ পাক সম্পর্কে অজ্ঞ বা আল্লাহ্ভীতি নেই। (৩) আলিম বিল্লাহ্ ওয়া বিআমরিল্লাহ্। অর্থাৎ যাঁরা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর শরীয়তের হুকুম-আহ্কাম ও ফারায়েজ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত এবং আল্লাহ্ পাককে ভয় করেন। (তাঁরাই হাক্বীক্বী বা প্রকৃত আলিম।)  তৃতীয়তঃ ঐ ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আলিম যিনি অর্জিত ইল্ম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন। যেমন  এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

من ارباب العلم قال الدين يعمون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء قال الطمع.

 অর্থঃ- “(আমীরুল মু’মিনীন, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত কা’ব ইবনুল আহ্বার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন) আলিম বা ইল্মের অধিকারী কে? তিনি উত্তরে বললেন, যাঁরা ইল্ম অনুযায়ী আমল করেন। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু পুনরায় জিজ্ঞেসা করলেন, কোন্ জিনিস আলিমদের অন্তর থেকে ইল্মকে বের করে দেয়? তিনি উত্তরে বললেন, লোভ অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ্) বিশিষ্ট তাবিয়ী, আমীরুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলো- আলিম কে? তিনি জবাবে বলেন,

انما افقيه الزاهد فى الدنيا والراغب فى ااخرة والبصير بذئبه والمداوم على عبادة ربه والورع والكاف عن اعراض المسلمين والعفيف عن اموالهم والناصح لجماعتهم.

অর্থঃ- “ফক্বীহ্ বা আলিম হলেন ঐ ব্যক্তি, যিনি দুনিয়া হতে বিরাগ, পরকালের প্রতি ঝুঁকে আছেন, গুনাহের প্রতি সতর্ক, সর্বদা মহান আল্লাহ্ পাক-এর ইবাদতে মশগুল, পরহিজগার বা সুন্নতের পাবন্দ, মুসলমানের মান-সম্মান নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং তাঁর অধীনস্থদেরকে নছীহত করেন।” উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে তাঁরাই হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী।

নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

  সুওয়াল:  হানাফী মাযহাবে –  (১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে। (২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা। (৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়। (৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে। (৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা। (৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে। (৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে। (৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো জোড়া জোড়া এবং আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে। (৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে। (১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে। (১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন। (১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি। কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই। অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন। জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবিহক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে। (৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে। এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইল্ম্ রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে। অতএব, হানাফী মাযহাবে তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’ বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা ক্বিরায়াত শেষে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে দুয়া কুনূত পড়ে সে বর্ণনা হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।

(দ্বিতীয় অংশ)

ইমাম মালিক, ইমাম মুহম্মদ, ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম,  ইমাম আবূ দাউদ, ইমাম তিরমিযী, ইমাম নাসায়ী ও ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর সনদে বর্ণনা করেছেন-

 يصلى اربعا فلا تسئل عن حسنهن وطولهن ثم يصلى اربعا فا تسئل عن حسنهن وطولهن ثم يصلى ثلثا.

অর্থঃ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘ সময় ধরে সুচারুরূপে চার রাকায়াত (তাহাজ্জুদ) নামায আদায় করতেন, তৎপরে ঐরূপ আরো চার রাকায়াত তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতেন এবং অবশেষে তিন রাকায়াত বিতির নামায আদায় করতেন। ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম আবূ দাউদ, ইমাম তিরমিযী ও ইমাম ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর সনদে বর্ণনা করেছেন-

سالنا عائشة رضى الله تعالى عنها باى شيئ يوتر رسول اه صلى الله عيه وسلم قال كان يقرأ فى ااولى بسبح اسم ربك الاعلى وفى الثانية بق يا ايها الكافرون وفى الشالثة بقل هو الله احد وامعوذتين.

 অর্থঃ “রাবী বলেন, আমরা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতির নামাযে কোন্ কোন্ সূরা পাঠ করতেন? তদুত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম রাকায়াতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকায়াতে সূরা কাফিরূন এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা ইখলাছ অথবা ফালাক্ব ও সূরা নাস পাঠ করতেন।” ইমাম আবূ দাউদ ও ইমাম তহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা, ইবনে আবী ক্বইছ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সনদে বর্ণনা করেছেন-

سالت عائشة بكم كان رسول الله صلى اه عيه وسلم يوتر قالت كان يوتر باربع وثلث وست وثلث وثمان وثلث وعشر وثلث ولم يكن يوتر بانقص من سبع ولا باكثر من ثلث عشر.

 অর্থঃ “হযরত ইবনে আবী ক্বইছ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কত রাকয়াত বিতির পড়তেন? তিনি বললেন, চার ও তিন রাকয়াত, ছয় ও তিন রাকায়াত, আট ও তিন রাকায়াত। সাত রাকায়াতের কম ও তের রাকায়াতের অধিক পড়তেন না।” উল্লেখিত প্রথম হাদীছ শরীফে স্পষ্ট তিন রাকায়াতঞ্জবিতিরের কথা বর্ণিত হয়েছে। দ্বিতীয় হাদীছ শরীফে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তিন রাকায়াত বিতির পড়ার কথা প্রমাণিত হয়েছে। যদি তিনি এক, পাঁচ বা সাত রাকায়াত বিতির পড়তেন, তাহলে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা পৃথকভাবে প্রকাশ করতেন যে, এক রাকায়াতের এই সূরা, পাঁচ রাকায়াতের এই সূরা এবং সাত রাকায়াতে এই সূরা পাঠ করতেন। কিন্তু তা তিনি উল্লেখ করেননি। আর তৃতীয় হাদীছ শরীফে প্রমাণিত হয়েছে যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদাই তিন রাকায়াত বিতির পড়তেন। আরো প্রমাণিত হলো যে, তাহাজ্জুদ ও বিতির উভয়কে বিতির বলা ছাহাবাগণের নিয়ম ছিল এবং তাহাজ্জুদের পরই বিতির পড়ার হুকুম। সেহেতু হাদীছ শরীফে উভয়কে বিতির বলা হয়েছে। বিতির নামাযের দু’ রাকায়াতের পর বসতে হবে এবং তাশাহ্হুদ পাঠ করতে হবে।  এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

 عن عائشة رضى اله تعاى عنها قالت كان رسو الله صلى الله عليه وسلم يقول فى كل ركعتين التحية.

অর্থঃ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, প্রত্যেক দু’ রাকায়াত নামায পড়ে বৈঠক করে আত্তাহিয়্যাতু পড়তে হবে। (মুসলিম শরীফ) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

تشهد فى كل ركعتين.

অর্থঃ প্রত্যেক দু’ রাকায়াতে তাশাহ্হুদ পড়তে হবে। (তিরমিযী শরীফ) (চলবে)

 ডাঃ মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন ৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪

সুওয়ালঃ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাউযুবিল্লাহ) এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান- আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি। জাওয়াবঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত। কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভূক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।  নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফ এবং বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।  মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহু, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা। এ সম্পর্কে কতিপয় বর্ণনা এখানে পেশ করা হলো- ৬. শয়তান লক্ষ লক্ষ বছর ইবাদত করেছে। কিন্তু যখন সে ওসীলা সম্পন্ন একটা সিজদা করেনি তখনই সে মরদুদ বা বিতাড়িত হলো। আর ফেরেশ্তাগণ ওসীলা সম্পন্ন সিজদা করে আল্লাহ পাক-এর মাহবুব হিসেবে গণ্য হয়েছেন। বুঝা গেল, ওসীলা সম্পন্ন ইবাদত সামান্য হলেও তা আল্লাহ তায়ালার নিকট গ্রহণযোগ্য। ৭. ক্বিয়ামত দিবসে সর্বপ্রথম ওসীলা তালাশ করা হবে। তারপর অন্যান্য বিষয়। অর্থাৎ নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শাফায়াত-সুপারিশ ব্যতীত আল্লাহ তায়ালা কোন কাজ আরম্ভ করবেন না। ৮. যদি ওসীলাবিহীন ইবাদত গ্রহণযোগ্য হতো তাহলে কালিমা ত্বইয়্যিবা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু-এর পর মুহম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংযুক্ত হতো না। বুঝা গেল, ‘তাওহীদ’ কেবল তখনই গ্রহণযোগ্য যখন নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা মানা হবে। কালিমা শরীফের প্রথমাংশে তাওহীদ আর দ্বিতীয়াংশে রয়েছে তাওহীদ-এর ওসীলা অর্থাৎ রিসালত। ৯. নামায তাশাহ্হুদ ও দুরূদ শরীফের মাধ্যমে পূর্ণ হয়। যদ্বারা বুঝা গেল যে, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক ব্যতীত নামাযও সম্পন্ন হয় না। ১০. কবরে মৃত ব্যক্তির নিকট তিনটি প্রশ্ন করা হয়। প্রথম প্রশ্ন তাওহীদ সম্পর্কে। দ্বিতীয় প্রশ্ন দ্বীন সম্পর্কে। কিন্তু এ দু’টি প্রশ্ন সঠিকভাবে দেয়ার পরও বান্দা কৃতকার্য হয় না এবং বেহেশ্তের দরজাও খুলে দেয়া হয় না। বরং তাকে তৃতীয় প্রশ্ন করা হয় আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুগত গোলাম উত্তর দেয় যে, তিনি হলেন আমার নবী, রসূল। আমি হলাম তাঁর উম্মত। তখন মৃত ব্যক্তিকে নাজাতের পয়গাম শুনিয়ে দেয়া হয়। অদৃশ্য হতে ঘোষণা করা হয়-

صدق عبدى افتحوا له بابا من اجنة.

অর্থাৎ আমার বান্দা সত্য বলেছে। তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দাও। বুঝা গেল, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা ব্যতীত কবরেও কামিয়াবী হাছিল করা যায় না। কবরে কিন্তু কোন ইবাদত-বন্দিগী বা আমল সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না। আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে কিয়ামত দিবসে। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, কবর হচ্ছে আখিরাতের প্রথম মঞ্জিল। এখানে যে পরিত্রাণ পাবে বাকী মঞ্জিলসমূহেও সে পরিত্রাণ পাবে। আর এখানে যে আটকা পড়বে সে বাকী মঞ্জিলসমূহেও আটকা পড়বে। অর্থাৎ সে কঠিন আযাব-গযবে গ্রেফতার হয়ে যাবে। কাজেই, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্পর্কে কোন কথা বলতে হলে খুব সাবধানে বলতে হবে।  (চলবে)

মুহম্মদ আহমাদুর রহমান, পটিয়া, চট্টগ্রাম মুহম্মদ মাসউদুল হক, সোনাইমুরি, নোয়াখালী

সুওয়াল:  পটিয়া জমিরিয়া খারিজী মাদ্রাসার অখ্যাত পত্রিকা অক্টোবর+নভেম্বর/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় সমস্যা ও সমাধান বিভাগে প্রদত্ত একটি সমাধানের প্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো আমরা জানতে ইচ্ছুক তা হলো- ৬. যদি ফিৎনার কোন আশংকা না থাকে তবে কি বেপর্দা হওয়া বা বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাত করা জায়িয রয়েছে? ৭. “চোখের যিনা হলো বেগানা লোককে দেখা,” এ হাদীছ শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা কি? যদি খাহেশাতের সাথে দৃষ্টি না দেয় তবেও কি তা ব্যাভিচার বলে গণ্য হবে? উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী। জাওয়াব: পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা মুলতঃ হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা বা উলামায়ে ‘ছূ’-এর অন্তর্ভুক্ত। তাই তারা নিজেদের কথিত শীর্ষস্থানীয় উলামাদের বাঁচাতে নির্লজ্জভাবে কুরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করেছে, আল্লাহ পাক, তাঁর রসূল ও হক্কানী উলামায়ে কিরামকে দোষারূপ করেছে, বেপর্দাকে সুকৌশলে জায়িয করে শরীয়ত পাল্টে দিয়ে নতুন শরীয়ত প্রকাশ করে নব্য কাদিয়ানী হিসেবে নিজেদেরকে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয় বিস্তারিতভাবে ও দলীলের মাধ্যমে পর্যালোচনা করলে এটাই সুস্পষ্ট প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবহিকভাবে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

(ধারাবাহিক)

৬. যদি ফিৎনার কোন আশংকা না থাকে তবে কি বেপর্দা হওয়া বা বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাত করা জায়িয রয়েছে? এর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, “বেপর্দা হওয়ার মধ্যে ফিৎনা নাই” এ ধরনের আক্বীদা পোষণ করা বা এরূপ কথা বলাটাই মূলতঃ কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কারণ তা সম্পূর্ণরূপেই কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের বিপরীত মত বা বক্তব্য। কেননা বেপর্দা হওয়ার মধ্যে ফিৎনার আশংকা রয়েছে বলেই কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে পর্দা করার জন্য কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং বেগানা বেপর্দা নারী থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم.

অর্থঃ “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি মু’মিনদেরকে বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত করে অর্থাৎ বেগানা নারীকে দেখা থেকে হিফাযত করে এবং হিফাযত করে তাদের আবরুকে এটা তাদের জন্য পবিত্রতা ও ফিৎনা থেকে বেঁচে থাকার কারণ।” (সূরা নূর-৩০) আর আখিরী রসুল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ  করেন,

عن ابى سعيد الخدرى قال قال رسول اله صلى الله عليه وسلم فاتقوا الدنيا واتقوا النساء فان اول فتنة بنى اسرائيل كانت فى النساء.

অর্থঃ “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা দুনিয়া এবং বেগানা নারীকে ভয় কর অর্থাৎ দুনিয়া ও বেগানা নারীর ফিতনা থেকে বেচে থাকো বা সতর্ক থাকো। কেননা বনী ইস্রাইলে সর্বপ্রথম যে ফিতনা সৃষ্টি হয়েছিল তা ছিল মহিলা সংক্রান্ত।” (মুসলিম, মিশকাত) এ প্রসঙ্গে অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه عن انبى صلى الله عليه وسلم قال المرأة عورة فاذا خرجت استشر فها الشيطان.

অর্থঃ “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মহিলারা পর্দায় থাকবে। কারণ তারা যখন বেপর্দা হয় অর্থাৎ ঘর থেকে বের হয় তখন শয়তান উকি ঝুকি দিয়ে তাদের মাধ্যমে ফিৎনা সৃষ্টি করে থাকে।” (তিরমিযী, মিশকাত) অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

لايخون رجل بامرأة الا كان ثالثهما الشيطان.

অর্থাৎ “যখন কোন বেগানা পুরুষ কোন বেগানা নারীর সাথে একাকী হয় তখন তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান।” (নাসায়ী, মিশকাত) উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ফিৎনার মূলই হচ্ছে বেপর্দা। বেপর্দা সকল ফিৎনার মূল বলেই কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে পর্দাকে ফরয করা হয়েছে। কাজেই, “বেপর্দা হওয়ার মধ্যে ফিৎনার আশংকা নাই” এ ধরনের আক্বীদা পোষণ করা বা এরূপ বক্তব্য পেশ করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। দ্বিতীয়তঃ ফিৎনার আশংকা থাকুক বা না থাকুক শরীয়তের নির্দেশ হলো সর্বাবস্থায়ই পর্দা করতে হবে। কোন অবস্থাতেই বেপর্দা হওয়ার নির্দেশ শরীয়তে নেই। নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফই এর বাস্তব প্রমাণ।

 عن ام سلمة رضى الله تعالى عنها انها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمونة رضى الله عنهما اذ اقبل ابن ام مكتوم فدخ عليه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجبا منه فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسم اليس هو اعمى لا يبصرنا فقال رسول الله صلى اله عليه وسلم افعميا وان انتما استما تبصرانه.

অর্থঃ- “হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, একবার তিনি এবং হযরত মাইমূনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলেন। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলেন অন্ধ ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মু’মিনীনগণকে বললেন, আপনারা দু’জন তাঁর থেকে পর্দা করুন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না। উত্তরে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনারাও কি অন্ধ? আপনারাও কি তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন না?” (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদত্ম এখানে ফিকিরের বিষয় যে, কুরআন শরীফে যাদেরকে ‘মু’মিনগণের মা’ বলা হয়েছে, যাদের ব্যাপারে অন্তরে কোন প্রকার খারাপ চিন্তাও উদয় হওয়া সম্ভব নয়। এবং যাদের দ্বারা ফিৎনার সামান্যতমও আশংকা নেই তাদেরকেও পর্যন্ত আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্দা করার জন্য কঠোর তাকিদ দিয়েছেন। অতএব প্রমানিত হলো যে, ফিৎনার আশংকা থাকুক বা না থাকুক প্রত্যেক অবস্থাতেই পর্দা করা ফরযে আইন। (চলবে)

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ