সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ২৩৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ

তেঁতুলিয়া, ঢাকা

সুওয়াল : পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ অর্থ কি? পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ পালন করা শরীয়ত সম্মত কিনা? অনেকে এ আমলকে বিদ্য়াত বলে থাকে। তা কতটুকু দলীলভিত্তিক দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব : ‘আখির’ শব্দটি আরবী। এর অর্থ- শেষ। আর ‘চাহার শোম্বাহ’ হচ্ছে ফারসী শব্দ। এর অর্থ- বুধবার। আরবী ও ফারসী শব্দের সংমিশ্রণে ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ বলতে ছফর মাসের শেষ বুধবারকে বুঝানো হয়ে থাকে। মূলত এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য মহা খুশির দিন।

এ মুবারক দিনটির ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ উনার পূর্ববর্তী মাসের অর্থাৎ ছফর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তিনি মারীদ্বী শান প্রকাশ করেন। দিন দিন উনার মারীদ্বী শান প্রকাশ পেতেই থাকে। কিন্তু ছফর মাসের শেষ বুধবার ভোর বেলা ঘুম থেকে জেগে তিনি বললেন, ‘আমার নিকট কে আছেন?’ এ কথা শুনামাত্রই উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি তাড়াতাড়ি করে আসলেন এবং বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আমি হাযির আছি।’ তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আমার মাথা মুবারক এর ব্যথা দূর হয়ে গেছে এবং শরীর মুবারকও বেশ হালকা মনে হচ্ছে। আমি আজ ছেহহাতী শান গ্রহণ করছি।’ সুবহানাল্লাহ! এ কথা শুনে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং তাড়াতাড়ি পানি আনয়ন করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা মুবারক ধুয়ে দিলেন এবং সমস্ত শরীর মুবারক-এ পানি ঢেলে ভালোভাবে গোসল করিয়ে দিলেন।

এই গোসলের ফলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম উনার শরীর মুবারক হতে বহু দিনের অবসাদ অনেকাংশে দূর হয়ে গেলো। তারপর উনি বললেন, ‘হে উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম! ঘরে কোনো খাবার আছে কি?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘জী-হ্যাঁ, কিছু রুটি পাকানো আছে।’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘আমার জন্য তা নিয়ে আসুন আর হযরত মা ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে খবর দিন, তিনি যেনো উনার আওলাদগণ উনাদেরকে সঙ্গে নিয়ে তাড়াতাড়ি আমার নিকট চলে আসেন।’ উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে সংবাদ দিলেন এবং ঘরে যে খাবার তৈরি ছিলো তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পরিবেশন করলেন।

হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি উনার আওলাদগণ উনাদেরকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে হাযির হলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে নিজের গলা মুবারক উনার সাথে জড়িয়ে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিলেন, নাতিগণ উনাদের কপাল মুবারক-এ চুমো খেলেন এবং উনাদেরকে সাথে নিয়ে আহারে বসলেন। কয়েক লোকমা খাবার গ্রহণ করার পর অন্যান্য হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা খিদমতে এসে হাযির হলেন। অতঃপর পর্যায়ক্রমে বিশিষ্ট ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারাও বাইরে এসে হাযির হন। কিছুক্ষণ পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাইরে এসে উনাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে ছাহাবীগণ! আমার বিদায়ের পর আপনাদের অবস্থা কিরূপ হবে?’ এ কথা শুনে ছাহাবীগণ উনারা ব্যাকুলচিত্তে কান্না শুরু করলেন। উনাদের এ অবস্থা দেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে সান্ত¡না দান করলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মসজিদে নববী শরীফ-এ ওয়াক্তিয়া নামাযের ইমামতি করলেন।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দীর্ঘদিন মারীদ্বী শান গ্রহণের পর ছেহহাতী শান গ্রহণ করে মসজিদে নববী শরীফ-এ আগমন করেন এবং নামাযের ইমামতি করেন এই অপার আনন্দে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ উনারা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুসারে অনেক কিছু হাদিয়া মুবারক করেন। এবং সাথে সাথে দান-খয়রাতও করেন। কোনো কোনো বর্ণনায় জানা যায় যে, খুশিতে ফানা হয়ে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি সাত হাজার দীনার, হযরত উমর ফারুক আলাইহিস সালাম তিনি তিনি পাঁচ হাজার দীনার, হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি দশ হাজার দীনার, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি তিন হাজার দীনার, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একশত উট ও একশত ঘোড়া মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় হাদিয়া করতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত ও সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করেন। সুবহানাল্লাহ!

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের নীতি অনুসরণে মহান আল্লাহ পাক উনার মা’রিফত-মুহব্বতে দগ্ধিভূত বান্দাগণ উনারা উক্ত দিনটিকে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফত-মুহব্বত লাভের উসীলা সাব্যস্ত করেছেন। ফলে মুসলমানগণ যুগ যুগ ধরে ‘পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ পালন করে আসছেন। পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে উত্তমভাবে অনুসরণ করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের প্রতি সন্তুষ্ট।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা তওবা : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)

কেউ কেউ ‘পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ উদযাপন করাকে নাজায়িয ও বিদয়াত বলে আখ্যায়িত করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! যা সম্পূর্ণ অশুদ্ধ ও ভুল। বরং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে ‘পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ উপলক্ষে সাধ্যমত গরিব-মিসকীনদেরকে দান-খয়রাত করা, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অধিক পরিমাণে ছলাত-সালাম, মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ করা অত্যন্ত ফযীলত ও মর্যাদা লাভের কারণ। {দলীল: সমূহ সীরাতগ্রন্থ।}

মুহম্মদ আজহারুল ইসলাম

কুড়িগ্রাম

 

সুওয়াল: ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার ফাযায়িল-ফযীলত ও সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহে উমরী মুবারক জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধারা সাইয়্যিদাতুন্্ নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম ও উনার আওলাদদ্বয় সাইয়্যিদা শাবাবি আহলিল জান্নাহ, ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের মাধ্যমে বিশ্বময় জারি রয়েছে।

একবার সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুজরা শরীফ উনার বাইরে আসলেন, অতঃপর পর্যায়ক্রমে ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ফাতিমাতু যাহরা আলাইহাস সালাম ও হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনারা এসে উপস্থিত হলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের সকলকে এক চাদরতলে নিয়ে বলেন, “হে মহান আল্লাহ পাক! উনারা আমার আহলে বাইত শরীফ। উনাদের থেকে আপনি অপবিত্রতা দূর করুন এবং উনাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র রাখুন।’ এরপর এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়-

انما يريد الله ليذهب عنكم الرجز اهل البيت ويطهركم تطهيرا

অর্থ: “হে আহলে বাইত শরীফ! মহান আল্লাহ পাক অবশ্যই চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।” অর্থাৎ আপনাদের থেকে সমস্ত অপবিত্রতা দূর করে, পবিত্র করার মত পবিত্র করে সৃষ্টি করেছেন। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩ )

নজরানের ঈসায়ীদের (খ্রিস্টানদের) একটি প্রতিনিধি দল মদীনা শরীফ-এ আগমন করে। তাদের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে। তাদের এলোমেলো বক্তব্যের কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দোয়ার মাধ্যমে এর ফয়ছালা করতে বলেন। এটাকে “দাওয়াতে মুবাহালা” বলা হয়। নূরে মুজাসমাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের কয়েকজন সদস্য উনাদেরকে নিয়ে বাইরে তাশরীফ মুবারক আনেন। এসব নূরানী চেহারা মুবারক দেখে ঈসায়ীদের প্রধান পাদ্রী তার দলের লোকদেরকে বলে: “আমি এমন সব পবিত্র চেহারা মুবারক দেখছি, উনাদের দোয়া পাহাড়সমূহকেও আপন স্থান হতে হটিয়ে দিতে পারে। সুতরাং উনাদের সাথে মুবাহালা করে ধ্বংস হয়ো না।” আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের সদস্য হিসেবে ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

হযরত আবু বাকরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের সাথে নামায পড়ছিলেন। এমন সময় ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আসলেন; তখন তিনি ছোট্ট শিশু। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিজদায় ছিলেন। ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পৃষ্ঠ মুবারকে অথবা কাঁধ মুবারকে উঠে বসলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়েই অতি স্নেহপরায়ণভাবে দ-ায়মান হলেন। তিনি যখন নামায শেষ করলেন, ছাহাবীগণ উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন: ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি এই শিশু উনার সঙ্গে যেরূপ ব্যবহার করলেন তা আপনি আর কারো সঙ্গে করেননি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-

ان ابنى هذا سيد ولعلى الله ان يصلح به بين فئتين عظيمتين من الـمسلمين

অর্থ: “নিশ্চয়ই আমার এ সন্তান তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদ, অচিরেই মহান আল্লাহ পাক উনার দ্বারা মুসলমানদের দু’টি দলের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করবেন।

হযরত ইমাম নাঈম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাকে হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, যখনই আমি ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতাম আমার চোখে পানি আসত। এটা এ কারণে যে, একদিন আমি দেখতে পেলাম, ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি দ্রুতবেগে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোল মুবারকে বসে গেলেন। অতঃপর তিনি দুই হাত মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাড়ি মুবারক ধরলেন, আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মুখ মুবারক হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র মুখ মুবারক উনার নিকটবর্তী করলেন। এমতাবস্থায় তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন: ‘হে মহান আল্লাহ পাক! নিশ্চয়ই আমি উনাকে মুহব্বত করি, সুতরাং আপনিও উনাকে মুহব্বত করুন।’ এ পবিত্র বাক্যটি তিনি তিনবার উচ্চারণ করলেন।

ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শত্রুরা উনাকে শহীদ করার উদ্দেশ্যে একে একে পাঁচবার বিষ পান করায়। প্রতিবারই তিনি অসুস্থ অবস্থায় নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে গিয়ে দুয়া করেন, আর সাথে সাথেই তিনি সুস্থ হয়ে যান। কিন্তু শেষবার অর্থাৎ ৬ষ্ঠ বার যে বিষ পান করানো হয় তা ছিল অত্যন্ত মারাত্মক বিষ, অর্থাৎ হিরকচূর্ণ। হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদত মুবারক ছিল যে, তিনি প্রতিদিন তাহাজ্জুদ নামাযের সময় পানি পান করতেন। তিনি যে কলসী মুবারক থেকে পানি পান করতেন সে কলসী মুবারকের মুখ একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতেন যেন কেউ কিছু ফেলতে বা বিষ মিশ্রিত করতে না পারে। কিন্তু শত্রুরা হিরকচূর্ণ বিষ কলসীর মুখে বেঁধে রাখা কাপড়ে মিশিয়ে দিয়ে গেল।

হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রতিদিনের ন্যায় পানি পান করার জন্য কলসী থেকে পাত্রে পানি ঢাললেন- তখন হিরকচূর্ণ বিষসহ পানি পাত্রে পড়লো। তিনি তা পান করার সাথে সাথে মারাত্মক বিষক্রিয়া শুরু হলো। এবার আর উনার পক্ষে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওযা শরীফ-এ যাওয়া সম্ভব হলো না। তিনি বুঝতে পারলেন যে, উনার বিছাল শরীফ এর সময় নিকটবর্তী। তাই তিনি উনার ছোট ভাই হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সংবাদ দিলেন। তিনি আসলে ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে ভাই! এই খিলাফতের জন্য আমাদের পিতা শহীদ হয়েছেন। আমিও শহীদ হচ্ছি। কাজেই, এই খিলাফতের আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। আপনি এই খিলাফত থেকে দূরে থাকবেন। খিলাফত ফিরিয়ে দেয়ার শর্ত বাতিল করে দেয়া হলো। এ কারণেই হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে ইমামুছ ছাালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খিলাফত ফিরিয়ে নেননি।

উক্ত মারাত্মক বিষক্রিয়ার কারণেই ৪৯ হিজরী সনের ২৮শে ছফর প্রায় ৪৬ বৎসর বয়স মুবারকে তিনি শাহাদত মুবারক গ্রহণ করেন বা বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। উনাকে পবিত্র জান্নাতুল বাক্বীতে সমাহিত করা হয়। মূলকথা হচ্ছে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ আওলাদ ও আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম হচ্ছেন ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার বরকতময় সাওয়ানেহে উমরী বা জীবনী মুবারক জানা ও উনাকে যথাযথ মুহব্বত ও অনুসরণ-অনুকরণ করা সকলের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্থাৎ ফরয ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।

 

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুরা।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

 

সুওয়াল : মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ ও ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর ১৩)

সাইয়্যিদুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি বাংলাদেশতো অবশ্যই; এমনকি সারা পৃথিবীতে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ।’ সুবহানাল্লাহ :

দ্বিতীয় প্রমাণ:

হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি খলীফা হিসেবে প্রকাশ হওয়ার পূর্বে  সম্মানিত মুসলমান উনারা খুব কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন। ইহুদী, খ্রিস্টান, বিধর্মীরা এবং মুনাফিক্ব ও উলামায়ে সূ’রা  সম্মানিত মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে কঠিন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে। তখনও সম্মানিত মুসলমান উনাদের সংখ্যা কাফির-মুশরিকদের তুলনায় বেশি থাকবে। কিন্তু মুনাফিক্ব ও ‘উলামায়ে সূ’দের কারণে সম্মানিত মুসলমান উনারা সাময়িকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবেন। এমতাবস্থায় সম্মানিত মুসলমান উনারা এই কঠিন পরিস্থিতির মুকাবিলা করার জন্য একজন বিশেষ খলীফা আলাইহিস সালাম উনার প্রয়োজন অনুভব করবেন। ওই সময় সম্মানিত মুসলমান উনাদের মধ্যে যিনি খলীফা থাকবেন উনার বিছাল শরীফ গ্রহণ করার সময় সম্মানিত সভাসদগণ উনাদের মধ্যে ইখতিলাফ দেখা দিবে যে, এই কঠিন পরিস্থিতিতে কাকে খলীফা হিসেবে মনোনীত করা যায়।

তখন সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে সর্বশেষ খলীফা তথা ১২তম খলীফা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি নিজেকে গোপন রাখার উদ্দেশ্যে সম্মানিত মদীনা শরীফ থেকে সম্মানিত  মক্কা শরীফ-এ যাবেন। ওই সময় যেই সমস্ত সুমহান ওলীউল্লাহ উনারা থাকবেন, উনারা সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত বিভিন্ন আলামত দেখে হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনাকে চিনে ফেলবেন এবং উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করবেন। এমতাবস্থায় গায়েবী নিদা হবে যে, “ইনিই মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ খলীফা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম। আপনারা উনার কথা মুবারক অনুযায়ী চলুন এবং উনার ইতায়াত তথা অনুসরণ-অনুকরণ করুন।”

সুতরাং উপরোক্ত সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার খলীফা হিসেবে প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে পৃথিবীতে সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক কায়িম থাকবে এবং খলীফাও থাকবেন। যদি হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বে আর সম্মানিত খিলাফত মুবারক কায়িম না-ই হয়, তাহলে উনার খলীফা হিসেবে প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে তখন খলীফা আসবেন কোথা থেকে? অথচ তখন যে একজন মহান খলীফা থাকবেন এবং সম্মানিত খিলাফত মুবারকও থাকবে এই বিষয়টি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।

এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার থেকে আরো একটি বিষয় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলোÑ হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার সময় সম্মানিত মদীনা শরীফ, সম্মানিত মক্কা শরীফ এবং সম্মানিত ক্বা’বা শরীফ উনাদের মধ্যে কোনো সিসি টিভি থাকবে না। কারণ সম্মানিত কা’বা শরীফ এবং উনার আশেপাশে সিসিটিভি থাকা অবস্থায়  তিনি কস্মিনকালেও সম্মানিত কা’বা শরীফ তাওয়াফ করতে পারেন না।  তাহলে উনার পূর্বে সেই সিসিটিভিগুলো ধ্বংস করবেন কে? বর্তমান যামানায় যেই সমস্ত ফিতনা-ফাসাদসমূহ রয়েছে এই সমস্ত ফিতনা-ফাসাদগুলো মিটিয়ে দিয়ে সারা বিশ্বে সম্মানিত খিলাফত আ’লা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেন কে?

অবশ্যই অবশ্যই সেই সুমহান কাজটি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে থেকে অন্যতম একজন আখাচ্ছুল খাছ বিশেষ খলীফা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি করবেন। তাহলে সেই সুমহান আখাচ্ছুল খাছ বিশেষ খলীফা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি কে? আমরা জানি, এই পর্যন্ত মোট ৯ জন মহান খলীফা আলাইহিমুস সালাম উনারা অতীত হয়েছেন। উনারা হচ্ছেনÑ  ১. ছিদ্দীক্বে আকবর সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম, ২. ফারূক্বে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ইবনুল খত্ত্বাব আলাইহিস সালাম, ৩. সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান যুন নূরাঈন আলাইহিস সালাম, ৪. আসাদুল্লাহিল গালিব সাইয়্যিদুনা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম, ৫. ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম, ৬. ছাহিবুস সির সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ৭. সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ৮. হযরত ওমর বিন আব্দুল আজীজ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ৯. সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন ১২তম খলীফা। আর ১০ম খলীফা হচ্ছেন  সর্বকালের সর্বযুগের, সর্বশ্রেষ্ঠ, মুজাদ্দিদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন আওলাদে রসূল, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা খলীফাতুল্লাহ হযরত আস্ সাফ্ফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি এবং ১১তম খলীফা হচ্ছেন মুজাদ্দিদে আ’যমে ছানী, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল উমাম আল মানছূর হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস্ সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং এটা আর বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, সর্বকালের, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই হচ্ছেন সেই সুমহান আখাচ্ছুল খাছ খলীফা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম যিনি বর্তমান যামানায় যত ফিতনা-ফাসাদ রয়েছে সমস্ত ফিতনা-ফাসাদ মিটিয়ে দিয়ে অতিশীঘ্রই সারা বিশ্বে, সারা কায়িনাতে সম্মানিত খিলাফত আ’লা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠা করবেনই করবেন ইনশাআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ!

শুধু তাই নয়, উনার মুবারক উছীলায় এক সময় সম্মানিত মক্কা শরীফ, সম্মানিত মদীনা শরীফ এবং সম্মানিত ক্বা’বা শরীফ উনাদের মধ্যে যত সিসিটিভি রয়েছে এই সমস্ত সিসিটিভিগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এবং উনি ছবি ছাড়াই সম্মানিত মক্কা শরীফ ও সম্মানিত মদীনা শরীফ-এ সম্মানিত হজ্জ মুবারক করতে যাবেন ইনশাআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ!

 

মুহম্মদ রুবেল

সাভার, ঢাকা

সুওয়াল: হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফাযায়িল-ফযীলত সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণ উনাদেরকে মুহব্বত ও অনুসরণ-অনুকরণ করার কথা খোদ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যেই রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يايها الذين امنوا اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم

অর্থ : ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে, উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ও উলিল আমরগণ উনাদেরকে অনুসরণ কর।’ (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)

আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

احبوا اولياء الله فانهم هم الـمقبولون ولا تبغضوهم فانهم هم الـمنصورون

অর্থ: ‘তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণ উনাদেরকে মুহব্বত কর। কারণ, উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মকবূল। আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করো না। কেননা, উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত।’

মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরই নির্দেশ মুবারক হচ্ছে, উলিল-আমর তথা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণ উনাদেরকে মুহব্বত ও অনুসরণ-অনুকরণ করা। আর আফদ্বালুল আউলিয়া, কাইয়্যূমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হলেন একজন খাছ উলিল আমর বা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী তথা সত্যিকার নায়িবে রসূল।

ক্বইয়্যূমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এমনই একজন উলিল আমর বা নায়িবে রসূল, উনার সম্পর্কে স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণনা করেছেন।

যেমন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يبعث رجل على احد عشر مأة سنة وهو نور عظيم اسمه اسمى بين السلطنين الجابرين يدخل الجنة بشفاعته رجالا الوفا.

অর্থ: “হিজরী একাদশ শতাব্দীর আরম্ভকালে মহান আল্লাহ পাক তিনি এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন, যিনি একটি বৃহৎ নূর। উনার নাম মুবারক হবে আমার নাম মুবারক উনার অনুরূপ। দুই অত্যাচারী বাদশাহর রাজত্বকালের মাঝে তিনি আবির্ভূত হবেন এবং উনার সুপারিশে অগনিত মানুষ বেহেশতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

يكون فى امتى رجل يقال له صلة يدخل الـجنة بشفاعته كذا وكذا من الناس

অর্থ: “আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি আগমন করবেন যাঁকে ‘ছিলাহ’ উপাধি দেয়া হবে। উনার সুপারিশের কারণে অগণিত লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!

সুলত্বানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘জামউল জাওয়াম’ ও ‘জামিউদ্ দুরার’ কিতাবে উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দু’খানা উল্লেখ করেছেন।

‘সম্রাট আকবর’ সৃষ্ট ফিৎনার চরম সময়ে ৯৭১ হিজরীর ১৪ই শাওওয়াল (ইংরেজি ১৫৬৩ সাল) ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন পাঞ্জাব প্রদেশের পাতিয়ালার সিরহিন্দ শরীফ-এ। মাত্র ছয় বছর বয়স মুবারকে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ হিফয করেছিলেন। অতঃপর কানপুরস্থ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে জগৎ বরেণ্য আলিমগণের নিকট তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র তাফসীর শরীফ, ফিক্বাহ শরীফ, সাহিত্য, কাব্য, ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন, বিজ্ঞানসহ ইসলামী ইলমের সকল শাখায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। কামালতের পরিপূর্ণ ধাপে উত্তরণের জন্য তিনি ওলীকুল শিরোমনি হযরত খাজা বাকীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে বাইয়াত হন।

হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত খাজা বাকীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে মুরীদ হওয়ার পূর্বেই উনার বুযূর্গ পিতা হযরত শায়েখ আব্দুল আহাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে চৌদ্দটি তরীক্বার কামালত হাছিল করেন। এ সমুদয় তরীকা বিশ্লেষণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে উনার ‘মুজাদ্দিদসুলভ’ কামালতের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আরো যুক্ত হয় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে পাওয়া খাছ কামালতসমূহ। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত দ্বিতীয় সহস্র হিজরীর ‘মুজাদ্দিদ’ হিসেবে উনার মধ্যে সমাবেশ ঘটে ইমামত ও কাইয়্যুমিয়াতের। মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত নিয়ামত ও যোগ্যতাবলে তিনি নক্্শবন্দিয়া তরীক্বার সংস্কার সাধন করেন এবং নুবুওওয়াতে কামালাতের সাথে এ তরীক্বার সেতুবন্ধন রচনা করেন। এভাবে পৃথিবীতে সকল কামালাতের সংযোগ বিশিষ্ট ‘মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বা’ প্রকাশ ঘটে। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পরে এই পবিত্র তরীক্বা অথবা অন্য কোন সিলসিলায় এমন প্রাতিষ্ঠানিক অগ্রগতির কথা বাহ্যিকভাবে জানা যায়নি।

আকবর নিদারুণ মর্মপীড়া ও শারীরিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়। অবশেষে ১৫৫৬ থেকে ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের রাজত্বের অবসানে ১৬০৬ সালে আকবরের মৃত্যু হয়। কিন্তু সে তার আদর্শ সঞ্চারিত করে যায় তার পুত্র জাহাঙ্গীরের মন ও মননে। সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর তার আটত্রিশ বছরের পুত্র জাহাঙ্গীর মোঘল সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। একপর্যায়ে সম্রাজ্ঞী নূরজাহান, আসিফ খান এবং অন্যান্য রাজন্যবর্গ ও আমলাদের সুপারিশে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জাহাঙ্গীর কারাবন্দি করেন। এ কারাবাসকে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি- নির্জনতায় উনার মর্যাদা ও মর্তবা উত্তরণের অনুকূল ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করেছেন। সুদীর্ঘ দু’বছর কারাবাসকালে উনি উনার নিয়ামতপূর্ণ ছোহবত দান করে অনেক কারাবন্দিকে হিদায়েতের পথে এনেছেন। এরই মাঝে উনার অসংখ্য মুরীদ ও খলীফার মধ্যে খিলাফত প্রতিষ্ঠার তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। স¤্রাট জাহাঙ্গীর ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উনাকে গোয়ালিয়ার দুর্গ থেকে মুক্তি দিয়ে রাজ দরবারের অন্তঃপুরে নজরবন্দি করে রাখেন। অবশেষে বিজয় সূচিত হয় তখন, যখন স¤্রাট জাহাঙ্গীর হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে উনার কাছে মুরীদ হন।

সম্রাট আকবরের সময়ে যে সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে বাস্তবায়িত হয়। আন্দোলনের তীব্রতার মুখে মানসিক দিক দিয়ে পর্যুদস্ত জাহাঙ্গীর হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কারাবাস থেকে মুক্তি দিয়ে উনার সাক্ষাৎলাভের অনুমতি প্রার্থনা করেন। সাক্ষাৎ দানের পূর্বে তিনি যেসব শর্ত আরোপ করেছিলেন তা হলো- (১) রাজ দরবারে তা’যীমী সিজদা প্রথা রহিতকরণ (২) সকল মসজিদের পুনঃনির্মাণ (৩) জিযিয়া কর পুনঃপ্রবর্তন (৪) সম্মানিত ইসলামী শাসন ব্যবস্থা চালু করার জন্য কাজী ও মুফতী নিয়োগ (৫) সকল বিদয়াত কার্যকলাপ নিষিদ্ধকরণ; (৬) গরু যবেহ করার উপর নিষেধাজ্ঞা রহিতকরণ; (৭) সংস্কার আন্দোলনে সকল কারারুদ্ধ ব্যক্তিকে মুক্তিদান।

সম্রাট জাহাঙ্গীর সকল শর্তই মেনে নিয়ে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি উনার মুরীদ হন এবং উনার উপদেশ মতো সাম্রাজ্য পরিচালনা করতে থাকেন। উনার উপদেশেই জাহাঙ্গীর শাসননীতিতে ইসলামী আইন সংযোজন করেন। জাহাঙ্গীর শেষ জীবনে প্রায়ই বলতেন, “আখিরাতে নাজাত পেতে পারি, এমন কোন কাজ (আমল) আমি করিনি। তবে আমার কাছে একটি সনদ আছে, আখিরাতে আমি তা মহান আল্লাহ পাক উনার সমীপে পেশ করবো। সে সনদ এই যে, একদিন হযরত শায়েখ আহমদ ফারুক্বী সিরহিন্দী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাকে বলেছেন- যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি দান করেন তবে আপনাকে ছেড়ে যাবো না।” সুবহানাল্লাহ!

হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজ জীবনে পত্রি সুন্নত উনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ঘটিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করেন। মানুষের মাঝে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত অনুসরণের স্পৃহা জাগিয়ে তুলে তিনি অবলুপ্ত সকল সুন্নত যিন্দা করেন। এজন্য উনাকে বলা হয় ‘মুহইস সুন্নাহ’।

পবিত্র সুন্নত উনার পরিপূর্ণ অনুসারী এবং মহান আল্লাহ পাক উনার যমীনে পবিত্র সুন্নত যিন্দাকারী হাজার বছরের মুজাদ্দিদ- হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি উনার বড় সাধ, উনার কর্মময় জীবনাবসানের সর্বশেষ কাজটিও যেনো পবিত্র সুন্নত উনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। তিনি আপনজন, খলীফা ও মুরীদগণকে ডেকে বললেন, “ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তেষট্টি বছর বয়স মুবারকে নশ্বর পৃথিবী থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার দীদার মুবারকে প্রত্যাবর্তন করেন।” অবশেষে সময় ঘনিয়ে এলো। তেষট্টি বছর বয়স মুবারকে বিছাল শরীফ দান করে আমল ও ক্ষমতা বহির্ভূত সুন্নত অনুসরণের উনার এই অন্তিম বাসনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পূর্ণতা দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! হিজরী ১০৩৪ (ইংরেজি ১৬২৪ সাল) ২৮শে ছফর তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।

অতএব, প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- আফদ্বালুল আউলিয়া, কাইয়্যূমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে জানা, উনাকে মুহব্বত ও অনুসরণ-অনুকরণ করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি হাছিল করা।

 

 

মুহম্মদ শহীদুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি।

মুহম্মদ রাকিবুল হাসান, চট্টগ্রাম।

মুহম্মদ মুঈনুদ্দীন, কক্সবাজার।

মুহম্মদ রূহুল আমীন, খুলনা।

মুহম্মদ জয়নুল আবেদীন, চাঁদপুর।

মুহম্মদ আব্দুল হান্নান, ঢাকা।

মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন, মাদারীপুর।

 

সুওয়াল: আলাইহিস সালাম বাক্যটির অর্থ কি? অনেকের ধারণা যে, ‘আলাইহিস সালাম এ দুআ সম্বলিত বাক্যটি শুধুমাত্র হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য নির্দিষ্ট। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যতীত অন্য কারো ক্ষেত্রে ব্যবহার করাটা নাকি শরীয়ত সম্মতন নয়। এ বিষয়ে সঠিক ফায়ছালা জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: ‘আলাইহিস সালাম’ বাক্যটির অর্থ হলো উনার উপর সালাম অর্থাৎ খাছ শান্তি বর্ষিত হোক।

উল্লেখ্য, এক মুসলমান অপর মুসলমানের সাথে সাক্ষাত হলে সালাম দেয়া ও নেয়া পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরই নির্দেশ।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবাক হয়েছে-

اذا حييتم بتحية فحيوا باحسن منها او ردوها ان الله كان على كلى شىء حسيبا

অর্থ: যখন তোমাদেরকে কেউ সালাম দেয় তখন তোমরাও তদপেক্ষা উত্তম বাক্যে সালামের জবাব প্রদান করো অথবা তদানুরূপই জবাব প্রদান করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: আয়াত শরীফ ৮৬)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه ان رجلا سال رسول الله صلى الله عليه وسلم اى الاسلام خير قال تطعم الطعام وتقرئ السلام على من عرفت ومن لـم تعرف.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, সম্মানিত ইসলাম উনার কোন বিষয়টি উত্তম? তিনি বললেন, (ক্ষুধার্তকে) খাদ্য খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকল মুসলমানকে সালাম দেয়া। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারককৃত

وتقرئ السلام

বাক্যাংশের ব্যাখায় মিশকাত শরীফ মুল কিতাবের কিতাবুল আদব, সালাম অধ্যায়ে ৩৯৭ নং পৃষ্ঠার হাশিয়ায় বর্ণিত রয়েছে-

واقرى عليه السلام فانه حين يبلغه سلامه يحمله على ان يقرى السلام ويرده.

অর্থাৎ, আমি বলবো, তার প্রতিও সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক। (এরূপ জাওয়াব) যখন কেউ তার কাছে কারো সালাম নিয়ে এসে বলবে যে, তিনি সালাম দিয়েছেন এবং সালাম গ্রহীতাও তার সালামের জাওয়াব দিবেন। এরূপ বর্ণনা ‘মাজমাউল বিহার’ কিতাবেও উল্লেখ রয়েছে।

হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এক মুসলমানের উপর আরেক মুসলমানের সদ্ব্যবহারের ছয়টি হক্ব রয়েছে। তারমধ্যে প্রথমটিই হচ্ছে

يسلم عليه اذا لقيه

অর্থাৎ “যখন কারো সাথে সাক্ষাৎ হবে তাকে সালাম দিবে।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

মূল কথা হলো, একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানের সাথে সালাম বিনিময়ের যে উদ্দেশ্য; কোন মুসলমানের নামের সাথে আলাইহিস সালাম ব্যবহারের সে একই উদ্দেশ্য।

আর একজনের সালাম আরেকজনের নিকট পৌঁছানোর মাসয়ালা হলো যে, সে বলবে, অমুক ব্যক্তি আপনাকে সালাম দিয়েছেন। এর উত্তরে সালামের উত্তরদাতা বলবেন-

وعليكم السلام وعليه السلام

অর্থাৎ: “আপনার প্রতি এবং যিনি সালাম পাঠিয়েছেন উনার প্রতিও সালাম অর্থাৎ শান্তি বর্ষিত হোক।”

দেখা যাচ্ছে, সালাম প্রেরণকারী ব্যক্তির সালামের জাওয়াব দানকালে উনার ক্ষেত্রে

‘আলাইহিস সালাম’ ব্যবহৃত হচ্ছে। عليه السلام

কাজেই, বলার অবকাশ রাখে না যে, ‘আলাইহিস সালাম’ বাক্যটি হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যতীত অন্যান্যদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধানে নিষেধ তো নেই বরং আদেশ রয়েছে।

স্মরণীয় যে, সম্মানিত শরীয়ত উনার অনেক বিষয়ে দু’ ধরণের ফতওয়া বা মাসয়ালা বর্ণনা করা হয়। এক. আম বা সাধারণ মাসয়ালা। দুই. খাছ বা বিশেষ মাসয়ালা।

প্রথমত: সাধারণ মাসয়ালা হলো, কুল-মাখলূক্বাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উনার সাথে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে। এবং এটা উম্মতের জন্য ফরযের অন্তর্ভুক্ত।

যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ করেছেন-

يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.

অর্থ: হে ঈমানদাররা! তোমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত পাঠ করো এবং সালামের মতো সালাম পেশ করো অর্থাৎ আদব রক্ষা করে তথা দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করো। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

দ্বিতীয়ত: অন্যান্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম মুবারক উনার সাথে ‘আলাইহিস সালাম’ যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে। এটাও ফরযের অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফ উনার অনেক আয়াত শরীফ-এ উনাদের প্রতি সালাম বর্ষিত হওয়ার বিষয়টি ইরশাদ মুবারক হয়েছে।

যেমন পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

سلم على نوح فى العالـمين.

অর্থ: বিশ্ববাসীর মধ্যে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক। (পবিত্র সূরা ছফফাত শরীফ: আয়াত শরীফ ৭৯)

سلم على ابراهيم.

অর্থ: হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার প্রতি সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক। (পবিত্র সূরা ছফফাত শরীফ: আয়াত শরীফ ১০৯)

سلم على موسى وهرون.

অর্থ: হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এবং হযরত হারূন আলাইহিস সালাম উনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। (পবিত্র সূরা ছফফাত শরীফ: আয়াত শরীফ ১২০)

سلم على ال ياسين.

অর্থ: হযরত ইল্ইয়াসীন আলাইহিস সালাম উনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। (পবিত্র সূরা ছফফাত শরীফ: আয়াত ১৩০)

سلم على الـمرسلين.

হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক। (পবিত্র সূরা ছফফাত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮১)

একইভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

سلم عليه يوم ولد ويوم يموت ويوم يبعث حيا.

অর্থ: উনার প্রতি সালাম (শান্তি বা অবিভাদন) যেদিন তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহন করেন এবং যেদিন তিনি বিছাল শরীফ গ্রহন করেন এবং যেদিন তিনি ক্বিয়ামত দিবসে পুনরুত্থিত হবেন। (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ: আয়াত শরীফ ১৫)

উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যারা সম্মানিত পিতা-মাতা আলাইহিমাস সালাম, আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম অর্থাৎ আযওয়াজ-আহলিয়া অর্থাৎ উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম ও আল-আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনারা উনার পবিত্র যাত মুবারক উনার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে উনারা উনার সম্মানে সম্মানিত। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং উনাদের নামের সাথেও আলাইহিস সালাম ও আলাইহাস সালাম সংযুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে।

অনুরূপ হুকুম অন্যান্য হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত পিতা মাতা আলাইহিমুস সালাম, আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম অর্থাৎ আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম ও আল-আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও।

এ বিষয়ে যেমন রয়েছে নক্বলী তথা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দলীল তদ্রƒপ রয়েছে আক্বলী তথা জ্ঞানভিত্তিক দলীল।

যেমন সূরা নমল-এর ৫৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قل الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى

অর্থ: (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন, সমস্ত প্রশংসাই মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যে এবং সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক উনার মনোনীত বান্দাগণ উনাদের প্রতি।”

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বর্ণিত রয়েছে, পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উম্মতের ধ্বংসযজ্ঞ কিছু অবস্থা বর্ণনা করার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে, আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কারণ, আপনার উম্মতকে দুনিয়ার ব্যাপক আযাব থেকে নিরাপদ করে দেয়া হয়েছে। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক উনার যারা মনোনীত বান্দা উনাদের প্রতি সালাম বা শান্তির সুসংবাদ দান করুন।

রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত এক রেওয়ায়েতে আছে, আয়াত শরীফ-এ

عباده الذين اصطفى

‘মনোনীত বান্দা’ বলতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বোঝানো হয়েছে। হযরত ইমাম ছুফিয়ান ছওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও এ মতই গ্রহন করেছেন। মূলত

عباده الذين اصطفى

এ আয়াতে কারীমা দ্বারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাসহ সমস্ত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদেরকে বোঝানো হয়েছে। (তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে কুরতুবী, ইবনে কাছীর, তাফসীরে কবীর ইত্যাদি)

অনুরূপ ব্যাখ্যা ‘মাআরেফুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর পবিত্র কোরআনুল কারীম’ যা সউদী শাসক বাদশা ফাহাদ ইবনে আব্দুল আজীজের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাপানো হয়েছে, উক্ত কিতাবের ৯৯৯নং পৃষ্ঠার মধ্যেও উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ব্যতীত অন্যদের ক্ষেত্রেও ‘আলাইহিস সালাম’ বলা জায়িয রয়েছে।

উল্লেখ্য, মি’রাজ শরীফকালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার সমীপে সমস্ত পবিত্রতা, ছলাত-সালাম নিবেদন করে বললেন-

التحيات لله والصلوات والطيبات

তখন মহান আল্লাহ পাক তিনিও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন-

السلام عليك ايها النبى ورحمة الله وبركاته.

আপনার উপর সালাম (শান্তি) এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সমস্ত রহমত ও বরকত।

অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতের প্রতি এত মেহেরবান ও দয়ালু যে, উনার উপর মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে প্রদত্ব সালাম, রহমত ও বরকতের হিসসা উম্মতও যাতে লাভ করেন সেজন্য তিনি পূনরায় বললেন-

السلام علينا وعلى عباد الله الصالـحين

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ব সালাম, রহমত, বরকত আমাদের উপর অর্থাৎ সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর এবং মহান আল্লাহ পাক উনার যারা ছালিহীন বা নেককার বান্দা উনাদেরও উপর।

প্রতিভাত হলো যে, আমরা নামাযে যে তাশাহহুদ পাঠ করে থাকি যা প্রত্যেক নামাযে পাঠ করা ওয়াজিব; সেখানে যারা নেককার, আল্লাহওয়ালা বান্দা উনাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক’ এ দুয়া প্রতিনিয়ত করছি।

তাশাহহুদ পাঠের এ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের শানে السلام (সালাম) শব্দের ব্যবহার জায়িয।

এছাড়া অনেক দুরূদ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার আল-আওলাদ অর্থাৎ পবিত্র বংশধর উনাদের শানে ছলাত-এর সাথে সালাম উনার বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে। যেমন-

اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا وسيلتى اليك واله وسلم.

উচ্চারণ: আল্লাহুমা ছল্লি আলা সাইয়িদিনা নাবিয়্যীনা হাবীবিনা শাফীয়িনা মাওলানা ওয়াসীলাতী ইলাইকা ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লিম।

অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি ছলাত (খাছ রহমত) ও সালাম (খাছ শান্তি) নাযিল করুন আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর যিনি আপনার প্রতি আমার ওসীলা এবং উনার পবিত্র বংশধর উনাদের উপরও।

اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا معدن الجود والكرم واله وسلم.

উচ্চারণ: আল্লাহুমা ছল্লি আলা সাইয়িদিনা নাবিয়্যিনা হাবীবিনা শাফীয়িনা মাওলানা মা’দানিল জূদি ওয়াল কারামি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লিম।

অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি ছলাত (খাছ রহমত) ও সালাম (খাছ শান্তি) নাযিল করুন আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর যিনি দান ও বখশীশের খনি এবং উনার পবিত্র বংশধর উনাদের উপরও।

اللهم صل على سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولانا النبى الامى واله وسلم.

উচ্চারণ: আল্লাহুমা ছল্লি আলা সাইয়িদিনা নাবিয়্যীনা হাবীবিনা শাফীয়িনা মাওলানা আন্নাবিয়্যীল উম্মিয়্যি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লিম ।

অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি ছলাত (খাছ রহমত) ও সালাম (খাছ শান্তি) নাযিল করুন আমাদের সাইয়্যিদ, আমাদের নবী, আমাদের হাবীব, আমাদের শাফায়াতকারী, আমাদের অভিভাবক যিনি প্রধান ও মূল নবী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর এবং উনার পবিত্র বংশধর উনাদের উপরও।

স্মরণীয় যে, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৭ম খ- ২২৮ পৃষ্ঠায় পবিত্র সূরা নমল শরীফ উনার উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় বর্ণিত রয়েছে-

والارجح فى مثل لقمان ومريم والـخضر والاسكندر الـمختلف فى نبوته ان يقال رضى الله عنه او عنها ولو قال عليه السلام او عليها السلام لا بأس به.

অর্থ: অতএব প্রণিধানযোগ্য উদাহরণ হলো: হযরত লুক্বমান, হযরত মারইয়াম, হযরত খিযির, হযরত সেকেন্দার যুল ক্বরনাইন। উনাদের নবী হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ থাকার করণে উনাদের শানে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অথবা আনহা বলা হয়। আর কেউ যদি উনাদের শানে আলাইহিস সালাম অথবা আলাইহাস সালাম বলে, এতে কোনই অসুবিধা নেই।

মূল কথা হলো: উল্লেখিত ব্যক্তিগণ উনারা কেউই নবী-রসূল ছিলেন না। বরং উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন বিশেষ শ্রেণীর ওলীআল্লাহ।

এখন উনাদের শানে যদি আলাইহিস সালাম কিংবা আলাইহাস সালাম ব্যবহারে কোন রকম অসুবিধা বা নিষেধ না থাকে তাহলে অন্যান্য বিশেষ শ্রেণীর পুরুষ ওলীআল্লাহ হোন কিংবা মহিলা ওলীআল্লাহ হোন উনাদের শানে অসুবিধা বা নিষেধ হবে কেন? বরং ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবহার করাটাই আদব এবং ফযীলত হাছিলের কারণ। যার কারণে যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার লক্ষ্যস্থল আওলাদে রসূল, যামানার শ্রেষ্ঠতম মুজতাহিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদ আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন ছাহাবা আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রত্যেকের শান মুবারক-এ আলাইহিস সালাম ও আলাইহাস সালাম ব্যবহার করার অনন্য তাজদীদ মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

আর আক্বলী দলীল প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের খাদিম হলেন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনিসহ সমস্ত হযরত ফেরেশতা উনাদেরকেও আলাইহিমুস সালাম বলা হয়।

উনাদের যারা খাদিম হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের নামে যদি আলাইহিস সালাম যুক্ত হতে পারে তাহলে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা সম্মানিত পিতা-মাতা উনাদের নাম মুবারকে আলাইহিস সালাম যুক্ত হবে না কেন? মূলত: কারো নাম মুবারকে আলাইহিস সালাম যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাধিক হক্বদার উনারাই। আর আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনাদের ঐকমত্য হলো, কোন হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পিতা-মাতা কেউই কাফির কিংবা মুশরিক ছিলেন না। উনারা প্রত্যেকেই ঈমানদার ছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত, মক্ববুল বান্দা-বান্দী এবং যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ও ব্যক্তিত্বার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

এরপর হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা পুত-পবিত্রা আহলিয়া-আযওয়াজ আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানে সম্মানিত। উনারা হলেন উম্মতের মা। উম্মতের রূহানী ও ঈমানী পিতা হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম মুবারক-এ যদি আলাইহিস সালাম ব্যবহার অপরিহার্য হয় তাহলে যারা উম্মতের রূহানী ও ঈমানী মা উনাদের নাম মুবারক-এ আলাইহাস সালাম-এর ব্যবহার অপরিহার্য হবে না কেন?

অতঃপর হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা আল-আওলাদ বা সন্তান-সন্ততি উনারা তো হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র যাত মুবারক উনার অংশ, পবিত্র দেহ মুবারক উনার অংশ। কাজেই, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানের মতোই উনাদের আল-আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মান করা ফরয-ওয়াজিব।

অতএব বলার অপেক্ষা রাখে না, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা আল-আওলাদ উনাদের নাম মুবারক-এ আলাইহিস সালাম ব্যবহার করাটাই হচ্ছে উনাদের হক্ব।

তৃতীয়ত: হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নাম মুবারক-এর সাথে ‘রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’ যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে একাধিক পবিত্র আয়াত শরীফ-এ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ফযীলত বর্ণনা প্রসঙ্গে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

رضى الله عنهم ورضوا عنه

অর্থাৎ- আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট। (পবিত্র সূরা বাইয়্যিনাহ শরীফ)

চতুর্থত: হযরত তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম যাঁরা অতীত হয়ে গেছেন উনাদের নাম মুবারক-এ ‘রহমতুল্লাহি আলাইহি’ যুক্ত করে ব্যবহার করতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ان رحمة الله قريب من الـمحسنين

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিনীন বা আল্লাহওয়ালা উনাদের নিকটে।

উপরে বর্ণিত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, আম বা সাধারণ মাসয়ালা বা ফতওয়া হলো, কুল-কায়িনাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে। আর উনার সম্মানিত পিতা-মাতা এবং উনার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ- হযরত উম্মুল মু’মিনীন ও আল-আওলাদ উনাদের নাম মুবারক-এ আলাইহিস সালাম কিংবা আলাইহাস সালাম যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে।

অনুরূপভাবে অন্যান্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং উনাদের পিতা-মাতা ও আল-আওলাদ উনাদের নাম মুবারক-এর সাথে ‘আলাইহিস সালাম’ কিংবা ‘আলাইহাস সালাম’ যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে।

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম উনাদের নাম মুবারক-এ ‘রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’ ও রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে।

আর হযরত তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম যাঁরা অতীত হয়েছেন উনাদের নাম মুবারক-এ ‘রহমতুল্লাহি আলাইহি’ বলতে হবে বা লিখতে হবে। এটা হলো আম বা সাধারণ মাসয়ালা বা ফতওয়া।

আর খাছ বা বিশেষ ফতওয়া মতে, ব্যক্তি বিশেষে আলাইহিস সালাম বা আলাইহাস সালাম, রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, রহমতুল্লাহি আলাইহি বা রহমতুল্লাহি আলাইহা ইত্যাদির মধ্যে ব্যতিক্রম বলা বা লিখা জায়িয রয়েছে। তবে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ এ বাক্যটি অন্যদের জন্য ব্যবহার জায়িয থাকলেও তা শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ বলা বা লেখার ক্ষেত্রে খাছ করে নেয়া উচিত এবং এটা আদবেরও অন্তর্ভুক্ত।

এছাড়া অন্যান্য বাক্যগুলি ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই। ফলে, উঁচু স্তরের ওলীআল্লাহ হওয়ার কারণে হযরত লুক্বমান আলাইহিস সালাম, হযরত খিযির আলাইহিস সালাম, হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনাদের নাম মুবারক উচ্চারণকালে আলাইহিস সালাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একইভাবে হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম, হযরত হাজেরা আলাইহাস সালাম, হযরত রহিমা আলাইহাস সালাম, হযরত আছিয়া আলাইহাস সালাম, হযরত উম্মু কুলছূম আলাইহাস সালাম, হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম উনাদের নাম মুবারক-এ আলাইহাস সালাম ব্যবহার করা হয়।

আবার উঁচু স্তরের ওলীআল্লাহ হওয়ার কারণে হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের নাম মুবারক-এ ‘রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’ ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।

উল্লেখ্য, পুরুষের জন্য একজনের ক্ষেত্রে আলাইহিস সালাম, দুইজনের ক্ষেত্রে আলাইহিমাস সালাম, তিন বা ততোধিক হলে আলাইহিমুস সালাম ব্যবহার করার  নিয়ম। আর মহিলার জন্য একজনের ক্ষেত্রে আলাইহাস সালাম, দুইজনের ক্ষেত্রে আলাইহিমাস সালাম এবং তিন বা ততোধিকের ক্ষেত্রে আলাইহিন্নাস সালাম ব্যবহার করার নিয়ম।

অনুরূপভাবে ‘রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’ ব্যবহারের নিয়ম হলো- একজন পুরুষের ক্ষেত্রে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা-এর পর ‘আনহু’ দুইজনের ক্ষেত্রে ‘আনহুমা’ এবং তিন বা ততোধিকের জন্য ‘আনহুম’। আর একজন মহিলার ক্ষেত্রে ‘আনহা’, দুইজনের ক্ষেত্রে ‘আনহুমা’ এবং তিন বা ততোধিকের ক্ষেত্রে ‘আনহুন্না’ ব্যবহার করা।

একইভাবে ‘রহমতুল্লাহি আলাইহি’ ব্যবহারের নিয়ম হলো: একজন পুরুষের ক্ষেত্রে ‘রহমতুল্লাহি’ শব্দের পর ‘আলাইহি’ দু’জনের ক্ষেত্রে ‘আলাইহিমা’, তিন বা ততোধিকের ক্ষেত্রে ‘আলাইহিম’। আর মহিলার ক্ষেত্রে একজন হলে ‘আলাইহা’, দু’জন হলে ‘আলাইহিমা’ এবং তিন বা অধিকজন হলে ‘আলাইহিন্না’।

অতএব, যাদের ধারণা বা বক্তব্য ‘আলাইহিস সালাম’ দুআ সম্বলিত বাক্যটি শুধুমাত্র হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য নির্দিষ্ট আর অন্য কারো ক্ষেত্রে জায়িয বা সম্মানিত শরীয়ত সম্মত নয় , তাদের সে ধারণা বা বক্তব্য আদৌ শুদ্ধ নয় বরং সম্পূর্ণরূপে দলীলবিহীন, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর।

আসলে ক্বিল্লতে ইলম ও ক্বিল্লতে ফাহাম অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝই হচ্ছে সমস্ত ফিতনার মূল। ফার্সীতে একটি প্রবাদ আছে, “নীম হেকীম খতরে জান, নীম মোল্লা খতরে ঈমান।” অর্থাৎ আধা কবিরাজ বা ডাক্তার মানুষের জীবন নাশ করে আর আধা মোল্লা অর্থাৎ মালানা-মুফতী মানুষের ঈমান নষ্ট করে।

যার কারণে নামধারী মালানা, মুফতী, ইমাম, খতীব, ওয়ায়িজ, মুফাসসিরে কুরআন, শায়খুল হাদীছ ইত্যাদি খেতাবধারী হলেই তাকে অনুসরণ করা যাবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত খিতাবধারী ব্যক্তিবর্গ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের পরিপূর্ণ অনুসারী না হবে অর্থাৎ তাদের আক্বীদা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী না হবে, পবিত্র সুন্নত উনার পাবন্দ না হবে, সর্বপ্রকার হারাম কাজ যেমন ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা, টিভি দেখা, টিভিতে প্রোগ্রাম করা, খেলাধুলা করা, খেলাধুলা দেখা, গান-বাজনা শোনা, ভোট দেয়া, নির্বাচন করা, গণতন্ত্র করা, নারী নেতৃত্ব সমর্থন করা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা ইত্যাদি থেকে বেঁচে না থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে অনুসরণ করা যাবে না। কেননা উল্লেখিত খিতাব ধারণ করে যারা সম্মানিত শরীয়ত বিরোধী তথা হারাম নাজায়িয কাজ করে এবং কাফির-মুশরিকদের প্রবর্তিত হরতাল, লংমার্চ, কুশপুত্তলিকা দাহ, ভোট, নির্বাচন, গণতন্ত্র ইত্যাদি করে তারা উলামায়ে হক্ব উনাদের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং তারা হচ্ছে উলামায়ে ‘সূ’ অর্থাৎ নিকৃষ্ট আলিমদের অন্তর্ভুক্ত, যাদেরকে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভাষায় দাজ্জালে কাযযাব অর্থাৎ চরম মিথ্যাবাদী, মুনাফিক এবং জাহান্নামী বলা হয়েছে। শুধু তাই নয় তাদেরকে জাহান্নামের সবচেয়ে কঠিন শাস্তিযোগ্য স্থান জুব্বল হুযনের অধিবাসী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!

কাজেই, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ উনাদের সঠিক ফায়ছালা, মাসয়ালা বা ফতওয়া জানার জন্য কেবলমাত্র উলামায়ে হক্ব উনাদের নিকট থেকে জানতে হবে এবং উনাদেরকে অনুসরণ করতে হবে। কারণ যাঁরা উলামায়ে হক্ব উনারা মনগড়াভাবে আমল করেন না এবং মাসয়ালা বা ফতওয়া প্রদান করেন না। বরং সম্মানিত শরীয়ত উনার উছূল পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস অনুযায়ী নিজেরা আমল করেন এবং অন্যদেরকে আমল করতে বলেন।

কাজেই, যারা উলামায়ে হক্ব উনারাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় ওলী, আউলিয়া, আহলে যিকির, ছদিক্বীন, ছলিহীন, মুহসিনীন ইত্যাদি নামে পরিচিত। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভাষায় ‘ওরাছাতুল আম্বিয়া’ ফক্বীহ, ওলী, আউলিয়া ইত্যাদি নামে পরিচিত।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ان هذا العلم دين فانظروا عمن تأخذون دينكم

অর্থ: নিশ্চয়ই এই (পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের) ইলমই হচ্ছে সম্মানিত দ্বীন। অতএব  তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন বা ইলম গ্রহণ করছো তাকে লক্ষ্য করো অর্থাৎ যাচাই বাছাই করো যে, তার আক্বীদা শুদ্ধ আছে কিনা, আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ আছে কিনা। (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

মহান আল্লাহ পাক না করুন, কেউ যদি বাতিল আক্বীদাপন্থী কোন ব্যক্তির অনুসারী হয়, তাহলে তার আক্বীদা ও আমল নষ্ট হয়ে সে জাহান্নামী হয়ে যাবে। অতএব, সাবধান থাকতে হবে বাতিল আক্বীদাপন্থী ৭২টি ফিরক্বার উলামায়ে ‘সূ’দের থেকে। এরা বাইরের দেশ থেকে আগন্তুক কেউ তা নয় বরং এরা আপনারই মহল্লার, মসজিদেরই ইমাম, খতীব, আপনারই ভাই, ভাতিজা, চাচা, বন্ধু, প্রতিবেশির মধ্যেই পরিচিত কেউ না কেউ।

প্রশ্ন আসতে পারে, এরা  বাতিল আক্বীদাপন্থী হলো কিভাবে? এর জাওয়াবে বলতে হয়, বাতিল আক্বীদাপন্থী কোন আলিম নামধারী ব্যক্তির কাছ থেকে তা’লীম বা শিক্ষা পেয়ে বাতিল আক্বীদার অনুসারী হয়ে তারাও সেটা প্রচার করছে। নাউযুবিল্লাহ!

যেমন তারা বলছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের মতো দোষে-গুণে মানুষ, নাউযুবিল্লাহ! মানুষ হিসেবে উনারও গুনাহখতা ছিল, যার কারণে তিনিও তওবা করেছেন, ইস্তিগফার করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! তিনি মাটির তৈরি মানুষ, তিনি নূরে তৈরি নন। নাউযুবিল্লাহ! ইত্যাদি। তারা আরো বলছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি নন নাউযুবিল্লাহ। তারা আরো বলছে, বর্তমান যুগে ছবি, টিভি জায়িয নাউযুবিল্লাহ! বর্তমানে অত পর্দা লাগে না নাউযুবিল্লাহ! খেলাধুলা জায়িয নাউযুবিল্লাহ! এত সুন্নত লাগেনা নাউযুবিল্লাহ! দাড়ি না রাখলেও অসুবিধা নেই নাউযুবিল্লাহ! শুধু পবিত্র কুরআন শরীফ পড়লে ও আমল করলেই যথেষ্ট, পবিত্র হাদীছ শরীফ আমল না করলেও চলে। নাউযুবিল্লাহ! ওলীআল্লাহ উনাদের নিকট বাইয়াত হওয়ার প্রয়োজন নেই নাউযুবিল্লাহ! এ শ্রেণীর লোকদেরই বক্তব্য হচ্ছে, আলাইহিস সালাম শুধুমাত্র হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ব্যতীত আর কারো শানে বা নামে আলাইহিস সালাম ব্যবহার করা জায়িয নেই। নাউযুবিল্লাহ!

অথচ এসব বিষয় সম্পূর্ণরূপে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের সম্পূর্ণ খিলাফ বা বিরোধী।

কাজেই, কোন বিষয়ে সঠিক ফায়ছালা বা মাসয়ালা জানতে হলে শুধুমাত্র উলামায়ে হক্ব যারা, উনাদের নিকট জানতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে স্বয়ং যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون

অর্থ: যদি তোমরা না জান তাহলে যাঁরা আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালা উনাদের নিকট জিজ্ঞাসা করো।

আর যারা আহলে যিকির হবেন উনারা অবশ্যই দলীল সহকারে জিজ্ঞাসিত বিষয় জানিয়ে দিবেন। কেননা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক হলো-

هاتوا برهانكم ان كنتم صادقين

অর্থ: যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে তোমরা দলীল পেশ করো।

অর্থাৎ উলামায়ে হক্ব যারা হবেন উনাদের প্রতিটি বিষয় দলীল সাপেক্ষে হবে। আক্বীদা হোক, আমল হোক, বক্তব্য হোক, লিখনী হোক, উনারা মনগড়াভাবে নিজেরা যেমন আমল করবেন না, অন্যকেও আমল করতে বলবেন না।

অতএব, যে কোন বিষয়ে সঠিক ফায়ছালা জানতে হলে উলামায়ে হক্ব উনাদের নিকট থেকে জিজ্ঞাসা  করে জেনে নেয়া উচিত।

 

মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন

আমানবাড়িয়া

 

সুওয়াল: ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ের ২৯ পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে, ‘নামাযের মোট ফরয চৌদ্দটি (১৪)।’ আরো লিখা হয়েছে, ‘নামাযের ভিতরে সাতটি (৭টি) ফরয রয়েছে। ৭ নম্বর ফরয হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সালামের মাধ্যমে নামায থেকে বের হওয়া।’

জাওয়াব: নামাযের আহকাম ও আরকান বা ফরয সম্পর্কিত উল্লিখিত বক্তব্যটি শুদ্ধ নয়, বরং ভুল। কারণ নির্ভরযোগ্য সমস্ত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবেই উল্লেখ আছে যে, “নামাযের ফরয হচ্ছে ১৩টি। তন্মধ্যে আহকাম বা নামাযের বাইরে ৭টি ফরয। আর আরকান বা নামাযের ভিতরে ফরয হচ্ছে ৬টি।”

৭টি আহকাম নিম্নরূপ:

১. শরীর পাক, ২. কাপড় পাক, ৩. নামাযের জায়গা পাক, ৪. সতর ঢাকা, ৫. ক্বিবলামুখী হওয়া, ৬. নামাযের ওয়াক্ত হওয়া, ৭. নিয়ত করা।

৬টি আরকান নিম্নরূপ:

১. তাকবীরে তাহরীমা, ২. ক্বিয়াম করা, ৩. ক্বিরয়াত পাঠ করা, ৪. রুকু করা, ৫. সিজদাহ করা, ৬. আখিরী বৈঠক করা।

অথচ উক্ত বইয়ে ৭টি আরকান বা ফরয লিখা হয়েছে এবং সপ্তম ফরয হিসেবে ‘সালামের মাধ্যমে নামায থেকে বের হওয়ার কথা লিখেছে।’

মূলত, সালামের মাধ্যমে নামায থেকে বের হওয়া আরকান বা ফরযের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তা ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।

আর এটা তারা নিজেরাই উক্ত বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠায় স্বীকার করেছে। সেখানে তারা নামাযের ১৪টি ওয়াজিবের বর্ণনা দিতে গিয়ে ১৪ নম্বর ওয়াজিব হিসেবে ‘সালামের মাধ্যমে নামায শেষ করার’ কথা বলা হয়েছে।

মূলকথা হলো- নামাযের ফরয ১৪টি নয়, বরং ১৩টি। আর সালামের মাধ্যমে নামায শেষ করা আরকান বা ফরযের অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং তা ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।

কাজেই অতিসত্বর ফরয ইবাদত নামায সম্পর্কিত উক্ত মারাত্মক ভুলটি সংশোধন করে সঠিক বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

 

 

মুহম্মদ ইবরাহীম খলীল

নোয়াখালী

 

 

সুওয়াল: ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ের ৭৭ পৃষ্ঠায়, ‘আমভাবে মেয়েদের চাকরি করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে’ এটা কতটুকু শুদ্ধ?

জাওয়াব: উক্ত বইয়ের উল্লেখিত বক্তব্যটি আদৌ শুদ্ধ হয়নি। কেননা উক্ত বক্তব্যের কারণে মেয়েরা চাকরির প্রতি উৎসাহিত হবে। সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে আমভাবে মেয়েদের চাকরি করা জায়িয নয়। হ্যাঁ, কোনো মেয়ে যদি মাজূর হয় অর্থাৎ যদি তার ভরণ-পোষণের কোনোই ব্যবস্থা না থাকে তখন সে মাজূর হিসেবে চাকরি করতে পারবে। তবে অবশ্যই তাকে পর্দা রক্ষা করতে হবে।

 

মুহম্মদ রিয়াজুল ইসলাম

চাঁদপুর

 

 

সুওয়াল: ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ের ৭৭ পৃষ্ঠায়, ‘নরকবাস’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। এটা কতটুকু ঠিক?

জাওয়াব: মূলত, মুসলমান উনাদের জন্য ‘নরক’ শব্দটি ব্যবহার করা ঠিক নয়। মুসলমান উনাদেরকে ‘দোযখ’ বা ‘জাহান্নাম’ শব্দ ব্যবহার করতে হবে।

 

মুহম্মদ হামীদুল্লাহ

কিশোরগঞ্জ

 

সুওয়াল: ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ের ৮৫ পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে, ‘জাতি ধর্ম বর্ণ ও শ্রেণী নির্বিশেষে সকলকে সমান মর্যাদা দিতে হবে।’ এ বক্তব্যটি শরীয়ত সম্মত কিনা?

জাওয়াব: একথাটি কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে-

ولله العزة ولرسوله وللمؤمنين ولكن الـمنافقين لايعلمون

অর্থ: নিশ্চয়ই সমস্ত ইজ্জত সম্মান ও মর্যাদার মালিক হচ্ছেন যিনি খালিক্ব মালিক মহান রব তিনি অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এরপর মু’মিনগণ এ বিষয়টি মুনাফিকরা জানেনা। (পবিত্র সূরা মুনাফিকুন শরীফ: আয়াত শরীফ ৮)

কাজেই সাধারণভাবে প্রথমত সম্মান বা মর্যাদা পাওয়ার হক্বদার হচ্ছেন উম্মতগণের মধ্যে মুসলমান উনারা। দ্বিতীয়তঃ মুসলমান উনাদের মধ্যে যারা মুত্তাক্বী বা পরহেযগার উনারাই সম্মান বা মর্যাদা পাওয়ার হক্বদার। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ان اكرمكم عند الله اتقاكم

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ওই ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি সম্মানিত, যে ব্যক্তি অধিক মুত্তাক্বী।” (পবিত্র সূরা হুজুরাত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)

কোনো কাফির বা বিধর্মীকে সম্মান দেখানো সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হারাম। কেননা, যেখানে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

من وقر صاحب بدعة فقد أعان على هدم الاسلام

অর্থ: “যে ব্যক্তি কোনো বিদয়াতীকে সম্মান করলো সে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ধ্বংসে সাহায্য করলো।” নাউযুবিল্লাহ! (শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী, আল মু’জামুল আওসাত লিত তবারানী, মিশকাতুল মাছাবীহ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اذا مدح الفاسق غضب الرب واهتزله العرش

অর্থ: “যখন কোনো ফাসিকের প্রশংসা করা হয় তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি অসন্তুষ্ট হন। ফলে উনার রোবের কারণে সম্মানিত আরশ মুবারক কেঁপে উঠে।” নাউযুবিল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)

এখন ফিকিরের বিষয় হচ্ছে, বিদয়াতী ও ফাসিক ব্যক্তি মুসলিম ও ঈমানদার হওয়ার পরও তাদেরকে সম্মান ও প্রশংসা করলে যদি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ধ্বংস করার কাজে সহযোগীতা করা হয় এবং মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র আরশ মুবারক কেঁপে উঠে তবে কাফিরদেরকে সম্মান দেখালে ও প্রশংসা করলে কি হবে?

কাজেই উল্লিখিত বইয়ের উক্ত বিষয়গুলো অবশ্যই সংশোধন করতে হবে। অর্থাৎ সংশোধন করা ফরয-ওয়াজিব।

 

মুহম্মদ আব্দুল হান্নান খান

মুসলিম নগরী, সুনামগঞ্জ

 

সুওয়াল: আমাদের সিলেটের অধিকাংশ মসজিদে ও মাদরাসায় পবিত্র রমাদ্বানুল মুবারক মাসে পবিত্র কুরআন শরীফ বা ক্বারিয়ানা শিক্ষার নামে দারুল ক্বিরায়াত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট, ইত্তেহাদুল কুররা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা মিশন, আনজুমানে তা’লীমুল কুরআন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান ক্বারিয়ানা শিক্ষা দিয়ে থাকে। তাছাড়া অনেক মসজিদ-মাদরাসায় প্রতি জুমুয়াতে সাপ্তাহিক ক্বারিয়ানা শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে। উক্ত ক্বারিয়ানা প্রতিষ্ঠানে প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ে একত্রে শিক্ষা গ্রহন করে এবং ক্বারী-ক্বারিয়াহ দ্বারা পরিচালিত হয়। বিশেষ করে রাবি’, খামিস এবং মেয়েদের জন্য যে সাদিস জামাত খোলা হয়, সেখানে ১৪-২০ উর্ধ্ব মেয়েরা ভর্তি হয়ে মসজিদেই ক্বারীয়ানা শিক্ষা গ্রহন করে। অপরদিকে ছাত্র-ছাত্রী ও ক্বারী-ক্বারিয়াহ প্রায় সমবয়সী হওয়ায় কখনো ছাত্র দ্বারা ছাত্রী, কখনো ক্বারী দ্বারা ক্বারিয়াহ, কখনো ছাত্র দ্বারা ক্বারিয়াহ আবার কখনও ক্বারী দ্বারা ছাত্রীর সাথে সম্পর্কের কথা প্রকাশ হয়ে থাকে। কোন কোন এলাকায় শেষ পর্যন্ত ক্বারী-ক্বারিয়াহ, ক্বারী ও ছাত্রীর মাঝে এলাকাবাসী বিয়ে পড়িয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। নাউযুবিল্লাহ!

এখন আমার সুওয়াল হলো- ১. পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষার নামে যুবক-যুবতী ছেলে ও মেয়েরা পবিত্র মসজিদে একত্রিত হয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা, কাছীদা শরীফ পাঠ জায়িয কিনা? ২. ক্বারী দ্বারা প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদেরকে ক্বারিয়ানা শিক্ষা দেয়া অথবা ক্বারিয়াহ দ্বারা প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেদেরকে শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা জানতে চাই? ৩. এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানে দান করলে বা মসজিদ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা করলে ছাওয়াব পাবে কিনা? দয়া করে জানাবেন। ৪. রাবি’, খামিস ও সাদিস জামায়াতে যারা ভর্তি হয় ছেলে হোক অথবা মেয়ে হোক বাধ্যতামূক ছবি দিতে হয়। এক্ষেত্রে ছহীহ পদ্ধতিতে ছেলে-মেয়ের পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষার পদ্ধতি জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: না, পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষার নাম দিয়ে যুবক-যুবতী মেয়েরা পবিত্র মসজিদে একত্রিত হওয়া এবং পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা, শিক্ষা করা, শিক্ষা দেয়া, ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করা, কোনটিই জায়িয নেই। কেননা যুবক-যুবতী মেয়েদের জন্য পর্দার বিধান রয়েছে। বালেগ-বালেগা ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য সম্মানিত শরীয়ত পর্দা ফরযে আইন করে দিয়েছে। যার কারণে কোন প্রাপ্ত বয়স্ক বেগানা ছেলে ও মেয়ে কোন স্থানে একত্রিত হওয়া, পরস্পর সাক্ষাৎ করা, দেখা করা সেটা মসজিদে হোক অথবা অন্য স্থানে হোক না কেন সবখানেই হারাম ও কবীরা গুনাহ।

স্মরণীয় যে, মেয়েদের জন্য বালেগা হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স হচ্ছে ৯ বৎসর এবং উর্ধ্বতম বয়স হচ্ছে ১৫ বৎসর আর ছেলেদের জন্য বালেগ হওয়ার নিম্নতম বয়স যদিও উল্লেখ নেই তবে ১৫ বৎসর বয়সের আগে বালেগ হওয়ার আলামত বা লক্ষণ প্রকাশ পেলে তখন হতে বালেগ হিসেবে গণ্য হবে অন্যথায় ১৫ বৎসর বয়স থেকে বালেগ হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য বালেগ বালেগা হওয়ার উর্ধ্বতম বয়স হচ্ছে ১৫ বৎসর তবে সাধারণভাবে মেয়েরা ১৫ বৎসরের আগেই বালেগা বা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে থাকে।

অতএব, ১৪ থেকে ২০ বছরের বেশি বয়সের মেয়দেরকে মসজিদে পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দেয়া কখনোই জায়িয নয়। কেননা তাদের মাজুরতার বিষয় রয়েছে। আর প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেদের সাথে একত্রে শিক্ষা দেয়াও জায়িয নেই। কারণ তাদের সাথে পর্দার বিষয় রয়েছে।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার  “পবিত্র সূরা নিসা শরীফ, পবিত্র সূরা নূর শরীফ ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ” ইত্যাদি সূরাসমূহে পর্দা করার ব্যাপারে কঠোর আদেশ-নির্দেশ করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وقرن فى بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الاولى.

অর্থ : “তোমরা (মহিলারা) তোমাদের গৃহে পর্দার সাথে অবস্থান কর এবং জাহিলিয়াত যুগের মহিলাদের মতো বেপর্দা হয়ে সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বাইরে বের হয়ো না।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرة ابن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الـمرأة عورة فاذا خرجت استشرفها الشيطان.

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মেয়েরা পর্দার অধীন থাকবে। কেননা তারা যখন কোথাও বের হয় তখন শয়তান উঁকি-ঝুঁকি দিতে থাকে পাপ কাজ সংঘটিত করানোর জন্য।” (তিরমিযী, মিশকাত)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون. وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولا يبدين زينتهن.

অর্থ: “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি মু’মিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি তারা যা করে তার খবর রাখেন।

আর আপনি মু’মিনাদেরকে বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে ও তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৩০,৩১)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرة بريدة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلى يا على عليه السلام لاتتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.

অর্থ: “হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম! দৃষ্টিকে অনুসরণ করবেন না। প্রথম দৃষ্টি (যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয় তা) ক্ষমা করা হবে; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।” অর্থাৎ প্রতি দৃষ্টিতে একটি কবীরা গুণাহ লেখা হয়ে থাকে। (আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, দারিমী, মিশকাত)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرة الحسن مرسلا قال بلغنى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعن الله الناظر والمنظور اليه.

অর্থ: “হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি  তিনি মুরসালসূত্রে বর্ণনা করেন, আমার নিকট এই হাদীছ শরীফ পৌঁছেছে, যে দেখে এবং যে দেখায় তার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা সরাসরি পর্দাকে ফরয করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় বরং চোখের দৃষ্টিসহ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হিফাযত করে পর্দা করতে বলেছেন।

গবেষণা করে দেখা গেছে যে, প্রত্যেক মানুষ পুরুষ কিংবা মহিলা হোক, সে প্রতি দু’সেকেন্ডে পাঁচটি করে চোখের পলক বা দৃষ্টি ফেলে থাকে। সে হিসাবে প্রতি মিনিটে ১৫০টি পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। আর ঘণ্টা হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় ৯০০০ (নয় হাজার) পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। সে হিসাবে বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাদের উভয়ের প্রতি এক মিনিটে তিনশটি এবং এক ঘণ্টায় আঠারো হাজার কবীরা গুনাহ লিখা হয়। এ হিসাব একজন পুরুষ ও একজন মহিলার ক্ষেত্রে। আর যদি কোনো জনসমাবেশে উপস্থিত মহিলা-পুরুষের পরস্পর পরস্পরের দৃষ্টির হিসাব করা হয় তাহলে গুনাহর পরিমাণ আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। ধরা যাক, কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা ব্যাপী কোন জনসমাবেশ হলো আর সেখানে পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা ১০০+১০০= ২০০ জন। এখন একজন পুরুষ ও একজন  মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি করার কারণে এক ঘণ্টায় আঠারো হাজার কবীরা গুনাহ হয় তাহলে একশ জন পুরুষ ও একশ জন মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে কবীরা গুনাহর পরিমাণ হবে ৩৬ লক্ষ এবং তিন ঘণ্টায় হবে ১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ।

অথচ একজন মানুষ যদি একশ বছর হায়াত পায়। মহান আল্লাহ পাক না করুন সে যদি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত (ফরয হওয়া সত্ত্বেও) কিছুই না করে তারপরও ১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ হবে না। যেমন- একশ বছরে অর্থাৎ জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয, তা না করার কারণে ১টা কবীরা গুনাহ। যাকাত একশ বছরে একশটা ফরয, তা না দেয়ার কারণে ১০০টা কবীরা গুনাহ। রোযা ২৯ বা ৩০টা। হিসাবের সুবিধার্থে যদি ৩০টা ধরে নেয়া হয় তবে তা না রাখার কারণে একশ বছরে ৩,০০০ কবীরা গুনাহ। এরপর নামায দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ৫টা, এক ওয়াক্ত ওয়াজিব ১টা, সুন্নতে মুয়াক্কাদা- ফজরের ফরযের পূর্বে ১টা, যুহরের ফরযের আগে-পরে ২টা, মাগরিবের ফরযের পর ১টা, ইশার ফরযের পর ১টা মোট ৫টা; তা আদায় না করার কারণে সবমিলে দৈনিক ১১টা কবীরা গুনাহ। আর হিজরী বছরে ৫০ সপ্তাহ হিসেবে জুমুয়ার সুন্নাত যোগ হবে ৫০টা। বছরে ত্রিশ তারাবীহ (সুন্নতে মুয়াক্কাদা), তা আদায় না করার কারণে ৩০টা এবং দু’ঈদের (ওয়াজিব) নামায, তা আদায় না করার কারণে ২টা; মোট ৩২টা কবীরা গুনাহ। হিজরী হিসেবে ধরে ৩৫৪ দিনে বৎসর। সে হিসেবে একশ বছরে নামায তরক করলে কবীরাহ গুনাহ হবে ৩৯,৭৬০০টা।  অর্থাৎ ১০০ বছর নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত তরক করলে কবীরাহ গুনাহ হবে সর্বোমোট ৪০০৭০১টা।

অর্থাৎ একশ বছর কোনো ব্যক্তি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত না করলে তার সর্বোচ্চ কবীরা গুনাহর পরিমাণ হলো মাত্র চার লাখ সাতশত একটা। আর একজন পুরুষ কিংবা মহিলা যদি কোন জনসমাবেশে যোগ দেয়, যে জনসমাবেশে পুরুষ বা মহিলার সংখ্যা কমপক্ষে একশ জন এবং সেখানে একঘণ্টা অবস্থান করে তাহলে শুধু চোখের দৃষ্টির কারণে তার কবীরা গুনাহর পরিমাণ হবে আঠারো লক্ষ। আর লোক সংখ্যা বেশি হলে এবং বেশি সময় অবস্থান করলে কত লক্ষ-কোটি কবীরা গুনাহ যে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাহলে পর্দার কত গুরুত্ব রয়েছে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।

কাজেই, যেসমস্ত বেগানা যুবক-যুবতী, বালেগ ও বালেগা পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষার নামে বেপর্দা হচ্ছে, তারা দৈনিক যে কত কোটি কোটি কবীরা গুনাহ করে যাচ্ছে তা মহান আল্লাহ পাক তিনিই বেহ্তর জানেন।”

এটা তো শুধু চোখের গুণাহর কথা বলা হলো। এমনিভাবে প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা গুনাহ হয়ে থাকে।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرة ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم العينان زناهما النظر والاذنان زناهما الاستماع واللسان زناه الكلام واليد زناها البطش والرجل زناها الخطى والقلب يهوى ويتمنى ويصدق ذلك الفرج ويكذبه.

অর্থ: “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “চোখের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি করা, কানের ব্যভিচার হলো শ্রবণ করা, মুখের ব্যভিচার হলো কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হলো স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হলো ধাবিত হওয়া, অন্তর চায় ও আকাঙ্খা করে এবং লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য অথবা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।” (বুখারী, মুসলিম, কানযুল উম্মাল)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

الديوث لايدخل الجنة.

অর্থ: “দাইয়ূছ বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারবেনা।” দাইয়ূছ ঐ ব্যক্তি যে নিজে পর্দা করেনা এবং তার অধীনস্ত মহিলাদেরও পর্দা করায়না।” (মুসনাদে আহমদ)

আরও ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

قال حضرة عبد الله رضى الله تعالى عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ثلاث لايدخلون الجنة ولا ينظر الله اليهم يوم القيامة العاق لوالديه والـمرأة المترجلة الـمتشبهة بالرجال والديوث.

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তিন প্রকার লোক জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং আল্লাহ পাক তিনি ক্বিয়ামতের দিন তাদের প্রতি (রহমতের)  দৃষ্টি দিবেন না। (১) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, (২) পুরুষের ছূরত ধারণকারিণী মহিলা, (৩) দাইয়ূছ।” (মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ২য় জিলদ ১৩৪ পৃষ্ঠা, নাসায়ী শরীফ কিতাবুয্ যাকাত বাব নং ৬৯)

অর্থাৎ যারা বেপর্দা হয়ে থাকে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মুতাবিক তারা সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা অবৈধ কাজ তথা ব্যভিচারে মশগুল বা লিপ্ত।

পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে আরো উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন মু’মিনগণের মাতা অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন। উনাদেরকে আক্বদ করা বা আক্বদের চিন্তা করাটাও উম্মতের জন্য হারাম ও কুফরী এবং সেটা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়ার শামীল এবং স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে গুরুতর অপরাধ অর্থাৎ কুফরী। তারপরও উম্মুল মু’মিনীনগণ যে কিরূপ পর্দা করেছেন তা নিম্নোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে অনুধাবন করা যায়।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرة ام سلمة عليها السلام انها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمونة عليها السلام اذ اقبل ابن ام مكتوم فدخل عليه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجبا منه فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم اليس هو اعمى  لايبصرنا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افعمياوان انتما الستما تبصرانه.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, একবার তিনি এবং উম্মুল মু’মিনীন হযরত মাইমূনা আলাইহাস সালাম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে বসা ছিলেন। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলেন ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি স্বাভাবিকভাবে চক্ষু মুবারক দিয়ে দেখতে পেতেন না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে বললেন, আপনারা দু’জন উনার থেকে পর্দা করুন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি কি দৃষ্টি শক্তি রহিত নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না। উত্তরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনারাও কি দৃষ্টি শক্তি রহিত? আপনারাও কি উনাকে দেখতে পাচ্ছেন না?” (মুসনাদে আহমদ, আবূ দাঊদ)

এখানে ফিকিরের বিষয় যে, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে যাদেরকে ‘মু’মিনগণের মা’ বলা হয়েছে, যাদের ব্যাপারে অন্তরে কোন প্রকার খারাপ চিন্তাও উদয় হওয়া সম্ভব নয়। উনাদেরকেও পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পর্দা করার জন্য কঠোর তাকিদ দিয়েছেন। তাহলে সাধারণ লোকের জন্য পর্দার গুরুত কতটুকু¡ রয়েছে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।

অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পর্দা করা ফরয। বেপর্দা  হওয়া শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ।

ইবলিস সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তাকে অনেক নিয়ামত দিয়েছিলেন। সে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুয়াল্লিম ছিল। উনাদেরকে সে দর্স-তাদরীস, তালীম-তালক্বীন, ওয়ায-নছীহত করেছিল। লক্ষ লক্ষ বছর সে ইবাদত-বন্দিগীও করেছিল, আসমান-যমীন, বেহেশ্ত সবখানেই সে ইবাদত করেছে। এরপরও মহান আল্লাহ পাক উনার মাত্র একটা আদেশ মুবারক অমান্য করার কারণে সে জান্নাত থেকে, মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে চির বিতাড়িত হয়েছে, চির লা’নতগ্রস্ত হয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন আদেশ মুবারক করলেন-

اسجدوا لادم فسجدوا الا ابليس ابى واستكبر وكان من الكفرين.

অর্থ “হে হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম! (ইবলিসসহ) তোমরা সকলেই প্রথম হযরত নবী, রসূল ও খলীফা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সিজদা করো। ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদা করলেন। ইবলিস সিজদা করতে অস্বীকার করলো এবং অহঙ্কার করলো। তাই সে কাফিরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فاخرج منها فانك رجيم. وان عليك لعنتى الى يوم الدين.

অর্থঃ “তুমি জান্নাত থেকে বের হয়ে যাও। নিশ্চয়ই তুমি চির অভিশপ্ত। আর নিশ্চয়ই ক্বিয়ামত পর্যন্ত আমার লা’নত তোমার উপর।” (পবিত্র সূরা ছদ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৭, ৭৮)

এখানে আরো উল্লেখ্য, ক্বারিয়ানা শিক্ষার নামে যারা বেপর্দা হচ্ছে তারা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক অমান্য করে কোটি কোটি কবীরা গুণাহ করছে যা শক্ত নাফরমানীর অন্তর্ভুক্ত।

এই শক্ত নাফরমানীমূলক কাজ করে নিজেকে কখনোই হক বলে প্রমাণিত করা যাবে না। কেননা তারা যদি হক্ব হয় তাহলে ইবলিস যে ৬ লক্ষ বছর ইবাদত-বন্দেগী করলো এবং লাখ লাখ বছর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে তা’লীম দিল, সে কেন হক্ব হবে না? আর ইবলিস যদি হক্ব হয় তাহলে সে কেন মালউন হলো?

আর ইবলিস যদি মালউন হয় তাহলে তারা কেন মালউন হবেনা। আর যে মালউন হবে সে চির জাহান্নামী হবে। কাজেই যারা ক্বারিয়ানা শিক্ষার নামে বেপর্দা হচ্ছে তারা চির মালউন ও চির জাহান্নামী হবে।

দ্বিতীয়ত: ক্বারিয়াহ (মেয়ে ক্বারী) দ্বারা প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেদেরকে শিক্ষা দেয়া কোনভাবেই জায়িয নেই। কেননা বয়স্ক ছেলেদের সাথে মেয়ে ক্বারীর পর্দা করা ফরয। আর ছেলে ক্বারীর দ্বারা প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদেরকে শিক্ষা দেয়াও জায়িয নেই। তাদেরকে শিক্ষা দিতে হলে মেয়ে বা মহিলা ক্বারী দ্বারা শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এটা প্রত্যেক অভিভাবকদের দায়িত্ব।

বিশেষ করে উক্ত ক্বারিয়ানা প্রতিষ্ঠানে যেহেতু ক্বারী (ছেলে ক্বারী) এবং ক্বারিয়াহ  (মেয়ে ক্বারী) উভয়ে রয়েছে, সেহেতু ছেলেদেরকে ছেলে ক্বারী দ্বারা শিক্ষা দেয়া এবং মেয়েদেরকে মেয়ে ক্বারী দ্বারা শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা কর্তব্য। এর ব্যতিক্রম করা অর্থাৎ ছেলে-মেয়ে একত্রে শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা আদৌ উচিত নয়। আর ছেলেদের ক্বারিয়ানা শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা মসজিদ ভিত্তিক হতে পারে তবে মেয়েদের জন্য মসজিদে শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা শুদ্ধ নয়। বরং মেয়েদের জন্য মসজিদ ব্যতীত আলাদা কোন জায়গায় পর্দার সাথে শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে যদি কোথাও মেয়ে বা মহিলা ক্বারী পাওয়া না যায় সেক্ষেত্রে শরীয়তসম্মত পর্দার সাথে কোন সচ্চরিত্রবান মাহরাম ক্বারী দ্বারা বয়স্ক মেয়েদের শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা যাবে।

তৃতীয়ত: যেসমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেপর্দাভাবে বয়স্ক ছেলে-মেয়েদেরকে একসাথে শিক্ষা দেয়া হয় সেখানে দান করলে কোন ছাওয়াব তো পাওয়া যাবেইনা। বরং ছাওয়াবের পরিবর্তে কবীরা গুনাহ হবে। কেননা বেপর্দা এমন কঠিন  গুনাহ, যা লা’নতগ্রস্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। নাউযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ولا تعاونوا على الاثم والعدوان

অর্থ: পাপের মধ্যে এবং শত্রুতার মধ্যে সাহায্য সহযোগিতা করো না। (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

কাজেই, উক্ত ক্বারিযানা শিক্ষার নামে যেখানে প্রতি মুহুর্ত পাপ কাজ, হারাম কাজ সংঘটিত হয় সেখানে তার ব্যবস্থা করা এবং তাতে কোনরূপ সাহায্য সহযোগিতা, দান-ছদকা করা জায়িয নেই। তবে হ্যাঁ, সম্পূর্ণ শরীয়ত সম্মমতভাবে পর্দার সাথে ক্বারিয়ানা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হলে, শিক্ষা দেয়া হলে সেখানে অশেষ ছাওয়াব ও ফযীলত রয়েছে।

চতুর্থত: ক্বারিয়ানা শিক্ষার নাম দিয়ে বেপর্দা হওয়া যেমনিভাবে চরম হারাম ও কবীরা গুনাহ এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ তদ্রƒপ ছবি তোলাও চরম হারাম, কবীরা গুনাহ ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

এ সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ মুবারক হয়েছে, তারমধ্যে কয়েকখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ এখানে উল্লেখ করা হলো-

قال حدثنا حضرة الاعمش رضى الله تعالى عنه عن حضرة مسلم رضى الله تعالى عنه قال كنا مع حضرة مسروق رضى الله تعالى عنه فى دار حضرة يسار بن نـميـر رضى الله تعالى عنه فراى فى صفته تـماثيل فقال سـمعت حضرة عبد الله رضى الله تعالى عنه قال سـمعت النبى صلى الله عليه وسلم يـقول ان اشد الناس عذابا عند الله الـمصورون.

অর্থ: “হযরত আ’মাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত মুসলিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি হযরত মাসরুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে হযরত ইয়াসার ইবনে নুমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার ঘরে ছিলাম, তিনি উনার ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার নিকট শুনেছি, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)

عن حضرة عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه اخبره ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيمة يقال لهم احيوا ما خلقتم.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যারা প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, যে ছবিগুলো তোমরা তৈরী করেছ, সেগুলোর মধ্যে প্রাণ দান কর।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ২০১)

عن حضرة ابى حجيفة رضى الله تعالى عنه عن ابيه ان النبى صلى الله عليه وسلم نهى عن ثمن الدم وثـمن الكلب وكسب البغى ولعن اكل الربى وموكله والواشـمة والـمستوشـمة والـمصور.

অর্থ: হযরত আবু হুজায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা হতে বর্ণনা করেন। “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রক্তের দাম ও কুকুরের দাম নিতে এবং ব্যভিচারিণীর উপার্জন নিষেধ করেছেন, এবং তিনি লা’নত বা অভিসম্পাত করেছেন ওইসব লোকদের উপর যে ঘুষ খায়, যে ঘুষ দেয়, যে অংগে উলকি আঁকে এবং যে আঁকায়, আর যে ছবি অংকন করে বা তোলে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৮৮১)

عن حضرة ابى معاوية رضى الله تعالى عنه ان من اشد اهل النار يوم القيمة عذابا المصورون.

অর্থ: হযরত আবূ মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। “নিশ্চয় ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আযাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।” (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০১)

عن حضرة سعيد رضى الله تعالى عنه قال جاء رجل الى حضرة ابن عباس رضى الله تعالى عنه فقال انى رجل اصور هذه الصور فافتنى فيها فقال له ادن منى فدنا منه ثم قال ادن منى فدنا حتى وضع يده على راسه وقال انبئك بما سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم وسمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول كل مصور فى  النار يجعل له بكل صورة صورها نفسا فيعذبه فى جهنم وقال ان كنت لا بد فاعلا فاصنع الشجر وما لا نفس له.

অর্থ: হযরত সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট এসে বললেন, আমি এমন এক ব্যক্তি যে প্রাণীর ছবি অংকন করি, সুতরাং এ ব্যাপারে আমাকে ফতওয়া দিন। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে বললেন, তুমি আমার নিকটবর্তী হও। তিনি উনার নিকটবর্তী হলেন। পুণরায় বললেন, তুমি আরো নিকটবর্তী হও। তিনি আরো নিকটবর্তী হলেন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার মাথায় হাত মুবারক রেখে বললেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ ব্যাপারে যা বলতে শুনেছি তোমাকে তা বলব। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তোলনেওয়ালা বা তোলানেওয়ালা ব্যক্তিই জাহান্নামে যাবে। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রত্যেকটি ছবিকে প্রাণ দিবেন এবং সেই ছবিগুলো তাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে।” অত:পর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, তোমার যদি ছবি আঁকতেই হয় তবে গাছ-পালা বা প্রাণহীন বস্তুর ছবি আঁক। (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০২)

অতএব, ক্বারীয়ানা শিক্ষার নামে কখনোই ছবি তোলা যাবে না। অন্যথায় চির লা’নতগ্রস্ত ও জাহান্নামী হতে হবে।

প্রকৃতপক্ষে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম শিক্ষা দানের নামে যারা হারাম, নাজায়িয কাজ করে, বেপর্দা হয়, ছবি তোলে, টিভি দেখে, টিভিতে প্রোগ্রাম করে এরা কেউই উলামায়ে হক্ব নয় বরং এরা হচ্ছে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত উলামায়ে ‘সূ’। এরাই জাহান্নামের সবেচেয়ে কঠিন শাস্তিযোগ্য স্থান জুব্বল হুযনে প্রবেশ করবে। নাউযুবিল্লাহ!

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن  حضرة ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تعوذوا بالله من جب الحزن قالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم وما جب الحزن قال واد فى جهنم يتعوذ منه جهنم كل يوم اربع مائة مرة قيل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ومن يدخلها قال القراء الـمراؤن باعمالهم.

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা জুব্বুল হুযন থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পানাহ চাও। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জুব্বুল হুযন কি? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, জাহান্নামের মধ্যে একটি গর্ত, যা থেকে (জাহান্নামবাসী তো দূরের কথা) স্বয়ং জাহান্নামও দৈনিক ৪শত বার পানাহ চেয়ে থাকে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাতে কারা প্রবেশ করবে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, সেই সকল কুরআন শরীফ অধ্যয়নকরী, যারা নিজেদের কাজ অন্যকে দেখিয়ে থাকে। (অর্থাৎ দেখানোর উদ্দেশ্যেই অধ্যায়ন করে থাকে, মহান আল্লাহ পাক উনাকে রাযী খুশি করার উদ্দেশ্যে নয়) (তিরমিযী শরীফ)

عن حضرة على كرم الله وجهه عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يوشك ان ياتى على الناس زمان لا يبقى من الاسلام الا اسمه ولا يبقى من القران الا رسمه مساجدهم عامرة وهى خراب من الهدى علمائهم شر من تحت اديم السماء من عندهم تخرج الفتنة وفيهم تعود.

অর্থ: হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, শীঘ্রই মানুষের উপর এমন এক যামানা আসবে, যখন নাম ব্যতীত সম্মানিত ইসলাম উনার কিছুই বাকী থাকবে না, অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম শুধু নামে মাত্র থাকবে, আমলে থাকবে না। অক্ষর ব্যতীত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার তিলাওয়াত কেবল রসম রেওয়াজ থাকবে কিন্তু আমলে থাকবে না। তাদের মসজিদগুলো দালান সর্বস্ব, অথচ সেগুলো হবে হিদায়েতশূন্য। তাদের আলিমরা হবে আকাশের নীচে সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক, তাদের নিকট হতে ফিতনা প্রকাশ পাবে; অতঃপর সে ফিতনা তাদের প্রতিই প্রত্যাবর্তন করবে। (বায়হাক্বী শুয়াবুল ঈমান)

عن حضرة زياد بن لبيد رضى الله تعالى عنه قال ذكر النبى صلى الله عليه وسلم شيأ فقال ذاك عند اوان ذهاب العلم قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم وكيف يذهب العلم ونحن نقرأ القران ونقرئه ابنائنا ويقرئه ابنائنا ابنائهم الى يوم القيامة فقال ثكلتك امك زياد رضى الله تعالى عنه ان كنت لاراك من افقه رجل بالـمدينة اوليس هذه اليهود والنصارى يقرؤن التورة والانجيل لا يعملون بشىء مما فيهما.

অর্থ: হযরত যিয়াদ ইবনে লাবীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (ক্বিয়ামত নিকটবর্তী যামানার ফিতনা সংক্রান্ত) কিছু বিষয় উল্লেখ করলেন এবং ইরশাদ মুবারক করলেন, ইহা ইলিম উঠে যাওয়ার সময় সংঘটিত হবে। তখন আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ইলিম কি করে উঠে যাবে, অথচ আমরা নিজেরা পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা করছি এবং আমাদের সন্তানদেরও শিক্ষা দিচ্ছি; অতঃপর আমাদের সন্তানগণ ক্বিয়ামত পর্যন্ত (পুরুষানুক্রমে) তাদের সন্তানদের শিক্ষা দিতে থাকবে। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে যিয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার মা আপনাকে হারাক! এতদিন তো আমি আপনাকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার একজন বেশ জ্ঞানী ব্যক্তি বলেই মনে করতাম। এই ইহুদী খ্রিস্টানরা কি তাওরাত শরীফ ও ইনজীল শরীফ পড়ছে না? কিন্তু উক্ত পবিত্র কিতাবদ্বয়ের মধ্যে যে হুকুম-আহকাম বর্ণিত আছে তার উপর তারা আমল করছে না। (আহমদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)

অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দেয়ার নামে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে হোক অথবা অন্য মাসে সাপ্তাহিক কিংবা প্রতিদিন হোক মসজিদ বা মাদরাসায় প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে ও মেয়েদেরকে বেপর্দাভাবে একত্রে শিক্ষা দেয়া জায়িয নেই। তা সম্পূর্ণ হারাম ও শক্ত কবীরাহ গুনাহ এবং লা’নতগ্রস্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। এরূপ শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে, শিক্ষা গ্রহন করা হতে এবং সাহায্য সহযোগিতা করা হতে বিরত থাকা প্রত্যেকের জন্য ফরয।

 সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ