মুহম্মদ ওবায়দুল্লাহ
কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ
সুওয়াল: বর্তমান সময়ে কোনো ব্যক্তি যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ অর্থাৎ উনার পক্ষ থেকে ছাগল, বকরী, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি কুরবানী দেয় অথবা গরু, মহিষ, উটের সাত নামের মধ্যে যদি এক নাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে অর্থাৎ উনার পক্ষ থেকে দেয়, তবে উক্ত গোশতের হুকুম কি? এটা কি সকলে খেতে পারবে? অথবা এ গোশত অছিয়তকৃত গোশতের হুকুমের অন্তভুর্ুক্ত হবে কি-না?
জাওয়াব: অবশ্যই উক্ত কুরবানীকৃত গোশত সকলে খেতে পারবে। আর এটা অছিয়তকৃত গোশতের হুকুমের অন্তভুর্ক্ত হবে না। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ইমামুল আউওয়াল কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে বিশেষভাবে পবিত্র কুরবানী করার জন্য যে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন এটা উনার জন্যই খাছ নয়। বরং এই নির্দেশ মুবারক সকলের জন্যই প্রযোজ্য।
বর্তমান সময়ে কোনো ব্যক্তি যদি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে পবিত্র কুরবানী দেয়, তবে এটা তার ফযীলত, তথা বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত, নাজাত সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করা ও তার পবিত্র কুরবানী কবুল হওয়ার একটি উসীলা হবে।
কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে যদি কেউ কুরবানী দেয়, তবে উক্ত কুরবানীকৃত গোশত সকলেই খেতে পারবে। {দলীলসমূহ : আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, শরহে তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত শরীফ, ত্বীবী শরীফ, তালিক ও মুজাহিরে হক্ব ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন
সদর, চাঁদপুর
সুওয়াল: সুন্নতী পণ্য ক্রয়-বিক্রয় বা সুন্নতী পণ্যের ব্যবসা করার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম সম্পের্ক জানতে চাই।
জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যবসাকে হালাল সাব্যস্ত করেছেন আর সুদকে তিনি হারাম ঘোষণা করেছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ ২৭৫ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে-
وَأَحَلَّ اللهُ الْبَـيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা মূলত হালাল পণ্য সামগ্রীর ব্যবসা করার জন্য আদেশ মুবারক করা হয়েছে। আর হারাম পণ্য সামগ্রীর ব্যবসা বা বেঁচা-কেনা করাকে নিষেধ করা হয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হালাল পণ্যের ব্যবসার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছে সুন্নতী সামগ্রী বা সুন্নতী পণ্যের ব্যবসা। কেননা, প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নত মুবারকের অনুসরণ করা উম্মতের জন্য ফরয। আর সুন্নত মুবারক অনুসরণ বা আমল করতে হলে সুন্নতী পণ্য-সামগ্রী সংগ্রহ করতে হবে। কোথা থেকে বা কিভাবে সংগ্রহ করবে, যেখানে পাওয়া যায় বা পাওয়া যাবে সেখান থেকে সংগ্রহ করতে হবে অথার্ৎ কিনে নিতে হবে। আর কিনতে হলে কাউকে বেঁচতে হবে। অর্থাৎ সংগ্রহের অনন্য মাধ্যম হচ্ছে ক্রয়-বিক্রয় বা ব্যবসা।
মোটকথা, সুন্নতী পণ্য সমূহ কেনা-বেচার মাধ্যমে সংগ্রহ করে আমল করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, মুসলমানের জন্য সুন্নতী জীবন-যাপন বা সুন্নতী জিন্দেগী ব্যতীত কোন জিন্দেগী নেই। যে মুসলমান হবে, তাকে অবশ্যই সুন্নত মুবারক পালন করতে হবে বা আমল করতে হবে। আর সুন্নত মুবারক হচ্ছে, মহাসম্মানিত রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য বা অনুসরণ মুবারক।
প্রকাশ থাকে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে উনার উম্মতকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন। কাজেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান এনে অর্থাৎ উনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে কায়িনাতবাসী তথা উম্মত মু’মিন-মুসলমান হবে এবং উনার পরিপূর্ণরূপে আনুগত্য বা অনুসরণ মুবারক করবে। এটাই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
هُوَ الَّذِيْ أَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّهِ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হিদায়েত ও সত্য দ্বীন অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম সহ প্রেরণ করেছেন (অতীতে ওহী দ্বারা নাযিলকৃত) সমস্ত দ্বীনের উপর প্রাধান্য দিয়ে অর্থাৎ মানসূখ বা রদ করে দিয়ে এবং অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে মানবরচিত সমস্ত ধর্ম ও মতবাদকে বাতিল ঘোষণা করে। (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩, পবিত্র সূরা ফাত্হ্ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮, পবিত্র সূরা ছফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ০৯)
মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ উনার ৮ ও ৯ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّاۤ أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيْـرًا .لِتُـؤْمِنُـوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَتُـعَزِّرُوْهُ وَتُـوَقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَّأَصِيْلًا
অর্থ: নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষী বা প্রত্যক্ষকারী, সুসংবাদ দানকারী ও সর্তককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। অতএব (উনার মাধ্যমে কায়িনাতবাসী বা উম্মত) তোমরা ঈমান আনবে যিনি খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। কাজেই উনার তোমরা খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দাও, উনাকে সম্মান মুবারক করো এবং সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়িমীভাবে উনার ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনা করো।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَاۤ أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللهِ
অর্থ: আমি মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এজন্যই প্রেরণ করেছি, মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক আদেশে যেন অবশ্যই উনার আনুগত্য মুবারক করা হয়। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৪)
অর্থাৎ মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য বা অনুসরণ মুবারক উম্মতের জন্য ফরয।
কেননা মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য বা অনুসরণ মুবারক উম্মতের জন্য হিদায়েত লাভ করার মাধ্যম। এ মর্মে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَإِنْ تُطِيْـعُوْهُ تَـهْتَدُوْا
অর্থ: আর তোমরা যদি উনার অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য মুবারক করো তবেই তোমরা হিদায়েত লাভ করবে। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নূর শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৪)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ يُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَـقَدْ أَطَاعَ اللهَ
অর্থ: মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে আনুগত্য করবে, প্রকৃতপক্ষে সে মহান আল্লাহ পাক উনারই আনুগত্য করলো। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৮০)
মূলকথা হচ্ছে, উম্মতের পক্ষে মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য বা অনুসরণ ব্যতীত মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য বা অনুসরণ আদৌ সম্ভব নয়। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য মুবারকের বিষয়টি উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য মুবারকের উপর নির্ভরশীল।
সুতরাং কেউ নামায পড়–ক, যাকাত আদায় করুক, রোযা রাখুক, হজ্জ করুক, কুরবানী করুক, টুপি পরিধান করুক, পাগড়ী পরিধান করুক, রুমাল পরিধান করুক, কোর্তা পরিধান করুক, লুঙ্গি পরিধান করুক, খাবার গ্রহণ করুক, পানিয় গ্রহণ করুক, শয়ন করুক, হাটা-চলা বা চলা-ফেরা করুক, বিবাহ-শাদী করুক ইত্যাদি যে কোন বিষয়ে আমল করতে হলে তাকে অবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করে করতে হবে বা উনারই আনুগত্য করতে হবে। উনার আনুগত্য বা অনুসরণ করলেই সে মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত, ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভে ধন্য হবে। সুবহানাল্লাহ! যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قُلْ إِنْ كُنْـتُمْ تُـحِبُّـوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُـحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَـغْفِرْ لَكُمْ ذُنُـوْبَكُمْ ۗ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
অর্থ: (আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি (উম্মতকে) বলে দিন, তোমরা যদি মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করেই থাক তাহলে আমার (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার) আনুগত্য বা অনুসরণ করো। তখনই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন, তোমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিবেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, দয়ালু অর্থাৎ তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু হয়ে যাবেন। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করলে উনার মুহব্বত ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল হওয়ার সাথে সাথে যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনারও মুহব্বত ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল হবে। সুবহানাল্লাহ! আর এটাই মূলত বান্দা ও উম্মতের চূড়ান্ত কামিয়াবী ও চূড়ান্ত চাওয়া পাওয়ার বিষয়।
স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য বা অনুসরণ করার অর্থ হচ্ছে সুন্নত মুবারক অনুসারে চলা বা সুন্নত মুবারক পালন করা। অর্থাৎ উম্মতের দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নত মুবারকের অনুসরণ করা। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
অর্থ: অবশ্যই তোমাদের জন্য মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে রয়েছে সর্ব উত্তম আদর্শ মুবারক। অর্থাৎ তিনিই একমাত্র অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহ্যাব শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَاۤ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَـهَاكُمْ عَنْهُ فَانْـتَـهُوْا وَاتَّـقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
অর্থ: মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদেরকে যা প্রদান করেছেন তা দৃঢ়ভাবে অঁাকড়ে ধরো বা পালন করো এবং যা থেকে তোমাদেরকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাকো। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা হাশর শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ০৭)
উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার হুকুম বা আদেশ মুবারকের দ্বারা মহাসম্মনিত সুন্নত মুবারক পালন করা ফরযে আইন সাব্যস্ত হয়ে যায়।
মহাসম্মনিত সুন্নত মুবারক পালন করার গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَوْ تَـرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَضَلَلْتُمْ
অর্থ: যদি তোমরা তোমাদের যিনি মহাসম্মানিত নবী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক তরক করো অর্থাৎ পালন না করো তাহলে তোমরা গোমরাহ বা বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। (মুসলিম শরীফ, নাসাঈ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মেশকাত শরীফ, ফতহুল বারী)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَوْ تَـرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَكَفَرْتُمْ
অর্থ: যদি তোমরা তোমাদের যিনি মহাসম্মানিত নবী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক তরক করো অর্থাৎ পালন না করো তাহলে তোমরা কাফির হয়ে যাবে। (আবূ দাউদ শরীফ, মেশকাত শরীফ, ফতহুল বারী ইত্যাদি)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
مَنْ أَطَاعَنِيْ دَخَلَ الْـجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِيْ فَـقَدْ أَبَى
অর্থ: মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে উম্মত আমার আনুগত্য বা অনুসরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার আনুগত্য করবে না, সে আমাকে অস্বীকারকারী অর্থাৎ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, ফতহুল বারী)
কাজেই প্রত্যেক উম্মত জ্বিন-ইনসান, পুরুষ-মহিলা, ছেলে-মেয়ে, ছোট-বড় সকলের জন্য মাথার তালু থেকে পায়ের তলা, হায়াত থেকে মউত প্রতিক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য বা অনুসরণ করা অর্থাৎ সুন্নত মুবারক পালন করা অপরিহার্য কর্তব্য তথা ফরযে আইনের অন্তর্ভুক্ত।
উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতকে বা আখিরী উম্মতকে অর্থাৎ আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং এজন্য আমাদের কর্তব্য হিসেবে ঈমান আনার সাথে সাথে সৎ কাজের আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজে বাধা দেয়ার জন্য নির্দেশ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে ঈমান আনার সাথে সাথে আমাদেরকে আমলে ছলেহ বা নেক কাজ করার জন্য আদেশ মুবারক করা হয়েছে। উক্ত সৎ কাজ এবং আমলে ছলেহ বলতে আসলে সুন্নত মুবারককে বুঝানো হয়েছে। কেননা সুন্নত মুবারকের খিলাফ আমল সৎ কাজ বা আমলে ছলেহের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং সুন্নত মুবারকের খিলাফ আমল হচ্ছে বিদআত। যা কুফর, শিরক, হারাম ও মাকরূহ ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত।
কাজেই উম্মত তথা মুসলমানের জন্য সমস্ত ক্ষেত্রে মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই অনুসরণ অনুকরণ করতে হবে। তিনি যা করতে বলেছেন, ব্যবহার করতে বলেছেন, পরিধান করতে বলেছেন, খেতে বলেছেন, পান করতে বলেছেন, আমল করতে বলেছেন ইত্যাদি করতে হবে এবং যেভাবে করতে বলেছেন সেভাবেই করতে হবে। আর সে সবই সুন্নত মুবারকের অন্তর্ভুক্ত।
অতএব আমাদেরকে দৈনন্দিন জীবনে চলা-ফেরা, উঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া, ঘুম-নিদ্রা ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রে কি কি সুন্নত মুবারক রয়েছে, সেগুলো জানতে হবে এবং সুন্নতী বিষয়গুলি সংগ্রহ করে পালন করতে হবে। এমনিতে তো পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে সুন্নতী সামগ্রী বা পণ্য সমূহ সংগ্রহ করতে হবে এবং আমল করতে হবে। এই সুন্নতী পণ্য সামগ্রী সহজে সংগ্রহ করার লক্ষেই যামানার মহান ইমাম ও মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রাজারবাগ শরীফের সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন আন্তর্জাতিক সুন্নত মুবারক প্রচারকেন্দ্র। সেখানে সমস্ত প্রকার সুন্নতী পণ্য সামগ্রী পাওয়া যায়। সুবহানাল্লাহ! তাই প্রত্যেকের দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে, এখানে সরাসরি এসে বা যোগাযোগ করে সুন্নতী পণ্য সামগ্রী সংগ্রহ করা।
সকলের জ্ঞাতাের্থ কিছু সুন্নতি খাদ্য সামগ্রীর নাম
উল্লেখ করা হলো:
* আমিষ জাতীয়: গোশত (দুম্বা, উট, গরু, মহিষ, খাসী, খরগোশ, ভেড়া, মুরগী, পাখি), চর্বি, ছারীদ, শুকনা গোশত, হারীসাহ, মাছ, সামুদ্রীক মাছ, ডিম, পনির, মাখন, কলিজা, কাবাব।
* শর্করা জাতীয়: ভাত, যব, হাইস, ছাতু, যবের রুটি, গমের রুটি, লবণ, ডাল, বীটরুট।
* মিষ্টি জাতীয়: হালুয়া, তালবীনাহ, ফিরনী, পায়েস, ক্ষীর, মিষ্টি।
* পানীয় জাতীয়: পানি, মধু, দুধ, সিরকা, নাবীয, খেজুর চিপা রস ও আঙ্গুরের রসের মিশ্রিত শরবত।
* তেল জাতীয়: যয়তুনের তেল, কালোজিরার তেল, সরিষার তেল, সানূত, হালাল পশুর চর্বি।
* ফল: খেজুর, খুরমা, জয়তুন, ত্বীন, আনার বা ডালিম, তরমুজ, আঙ্গুর, বরই, কলা, আপেল, মান্না, কুম্বী, সফরজল ও বিভিন্ন জাতের ফল।
* শাক-সবজী: কদু, শশা, ঘৃতকুমারী, মেহেদী, বেগুন, সরিষা, মিষ্টিকুমড়া, মাশরুম, শসা, হেলেঞ্চা শাক, মুলা-গাজর, সোনাপাতা, রায়হান।
* মসলা: পিঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, কিশমিশ, বিহিদানা, সিলক, ঘি, মাখন, জুক্বিনি, গোল মরিচ, কুস্ত, মৌরী, ধনিয়া, জিরা, ডালিয়া, বাদাম, আখরোট, খাযীরাহ, সুমাক।
* ঔষধী গাছ: রায়হান, তুলসী, সোনাপাতা, ঘৃতকুমারী, লজ্জাবতী, কালোজিরা, মেথি।
সুন্নতী কতিপয় তৈজসপত্রের নাম:
১) খাছ সুন্নতী কাঠের পেয়ালা-বাসন।
২) খাছ সুন্নতী বিভিন্ন বাসন, বাটি ও পানপাত্র।
৩) সুফরাহ্ (سُفْرَةٌ) দস্তরখানা।
৪) খাবারের জন্য বড় পাত্র মুবারক (قَصْعَةٌ) ক্বছআহ্।
৫) পানি রাখার বড় মাটির পাত্র (قُـلَّة) কুল্লাহ্।
৬) মাটির ঘড়া-মাটির পাত্র বা মাটির পানির পাত্র।
৭) নাবীয পাত্র মুবারক (اَلسِّقَاءُ) সিক্বা।
৮) পিতলের পাত্র মুবারক (تَـوْرٌ) তাওর।
৯) চুলা ও ডেকচি মুবারক (بُـرْمَةٌ) বুরমাহ।্
১০) চামড়ার পানপাত্র (ظُرُوْفُ الْاَدَمِ) যুরূফুল আদাম।
১১) ঘি রাখার পাত্র (رِقَاقٌ) রিক্বাক্ব।
১২) ছুরি মুবারক (اَلسِّكِّيْنُ) সিককীন।
আরো বিভিন্ন তৈজসপত্র মুবারকের সুন্নত রয়েছে।
লেবাস বা পোশাক-পরিচ্ছেদের সুন্নত মুবারক:
* কোর্তা বা ক্বমীছ: পুরুষদের সুন্নতি কোর্তা লম্বায় “নিছফু সাক্ব” অর্থাৎ হাঁটু ও গিরার মাঝামাঝি হবে। এবং কোনাবন্ধ ও গোল হতে হবে, কোনা ফাঁড়া হতে পারবে না, কারণ কোনা ফাঁড়া সুন্নত নয়। আস্তিন হবে কব্জি পর্যন্ত। অবশ্য কব্জি থেকে সামান্য লম্বাও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এবং গলায় গুট্লী (শুধু কাপড় দিয়ে তৈরী গোলাকৃতি একটি গুটলী যা দ্বারা গলা বন্ধ করা হয়) দেয়া সুন্নত, তবে বোতাম দেয়া সুন্নত নয়। সুন্নতি কোর্তার ক্ষেত্রে সূতি ও মিশরী কাপড় হলো খাছ সুন্নত, অবশ্য মিশরী ব্যতীত অন্য সূতিও খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত হবে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাছ করে সাদা রং পছন্দ করতেন। এছাড়া খয়েরী, সবুজ, ধুসর, ঘিয়া ইত্যাদি রংও সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত।
মহিলাদের ক্বমীছও লম্বায় “নিছফু সাক্ব” অর্থাৎ হাঁটু ও গিরার মাঝামাঝি হবে। তবে মহিলাদের ক্বামীছ কিছুটা লম্বাও হতে পারে। এবং কোনাবন্ধ ও গোল হতে হবে, কোনা ফাঁড়া হতে পারবে না। তবে গলায় গুটলী হবে।
* ইযার বা লুঙ্গি: ইযার তথা সেলাইবিহীন সাদা লুঙ্গি মুবারক পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক। যার দৈর্ঘ্য সাড়ে চার হাত লম্বা এবং প্রস্থ আড়াই হাত। হাঁটু ও গিরার মাঝামাঝি হবে, একটু লম্বা হতে পারে। কিন্তু গিরার নীচে যে অংশের উপর লুঙ্গি ঝুলবে, সে অংশ দোযখে জ্বলবে। যে ব্যক্তি অহঙ্কার বশত: কাপড় ঝুলিয়ে পরবে, ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক তার প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না। পুরুষদের জন্য কোন অবস্থায়ই কোর্তা, ইযার বা লুঙ্গি ও সেলোয়ার গিরার নীচে নামিয়ে পড়া জায়েয নেই। তবে মহিলাদের প্রয়োজনে যায়েজ রয়েছে।
মহিলাদের জন্য খাছ সুন্নাত হলো ক্বামীছের সাথে সেলোওয়ার পরিধান করা এবং ওড়না পরিধান করা। ওড়নার মাপ হলো (৪.৫) সাড়ে ৪ হাত লম্বা ও (২.৫) আড়াই হাত প্রশস্ত। এছাড়া মহিলাদের পর্দার জন্য বোরকা’ পরিধান করা ফরজ। প্রথম জামানায় পর্দার জন্য বড় চাদর পরিধান করা হতো। চাদরের প্রশস্ততা ছিলো পরিধানকারিনী থেকে দেড়/দুই হাত লম্বা। আর লম্বা ছিলো কমপক্ষে ১২/১৪ হাত। পরবর্তীতে মহিলাদের সুবিধার জন্য ইমাম মুজতাহিদগণ বর্তমান প্রচলিত বোরকা’ প্রচলন করেন। সে হিসেবে বর্তমান বোরকা’ও সুন্নাত। তবে বর্তমানে আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, মুত্বহহার, মুত্বহহির, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম তিনি যে বোরকা’র প্রচলন করে যাচ্ছেন সেটাই সর্বোত্তম বোরকা’।
* সুন্নতী টুপি: চার টুকরা বিশিষ্ট সাদা গোল সুতি কাপড়ের এবং মাথার সাথে লেগে থাকে মাথা থেকে উচু হয়ে থাকে না, উপরে এক টুকরা আর চারদিকে তিন টুকরা এমন টুপি পরিধান করা সম্মানিত খাছ সুন্নত মুবারক। কপালের সিজদার স্থান খোলা থাকবে।
* সুন্নতী পাগড়ী: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অধিকাংশ সময় যে পাগড়ী মুবারক ব্যবহার করতেন তা ছিল ৭ হাত লম্বা, যা হুজরা শরীফ হতে বের হওয়ার সময় তিনি পরিধান করে বের হতেন। জিহাদের ময়দানেও এ ধরণের পাগড়ী মুবারক ব্যবহার করতেন। হুজরা শরীফ উনার মধ্যে যে পাগড়ী মুবারক ব্যবহার করতেন তা ছিল ৩ হাত লম্বা। ঈদ, জুমুয়া ও বিশেষ মাহফিলে ১২ হাত লম্বা পাগড়ী মুবারক ব্যবহার করতেন। সব ধরণের পাগড়ীর চওড়া কমপক্ষে আধ হাত আর সর্বোচ্চ দুই হাত হতো।
পাগড়ীর রং : নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কালো, সবুজ, সাদা, ইত্যাদি রং এর পাগড়ী মুবারক পরিধান করতেন। তবে কালো পাগড়ী মুবারক বেশী ব্যবহার করতেন।
* শিমলা: মাথায় পাগড়ী বাধার সময় পাগড়ীর যে অংশটুকু ঘাড়ের দিকে ঝুলিয়ে রাখা হয় তাকে শিমলা বলা হয়। শিমলা চার আঙ্গুল থেকে ১ হাত হওয়া বাঞ্চনীয় এবং তা দু’কাঁধের মধ্যখানে ঝুলিয়ে রাখা উত্তম। শিমলা ছাড়া পাগড়ী পরিধার করা বিজাতীয় লক্ষণ।
* সুন্নতী রুমাল: সম্মানিত পাগড়ীর উপর সাদা রুমাল ব্যবহার করা পবিত্র সুন্নত মুবারক। পবিত্র রুমাল পরিধান করার তরতীব হচ্ছে- সুন্নতী পাগড়ী উনার উপর মাঝ বরাবর রাখতে হবে। অতঃপর সুন্নতী রুমাল উনার ডানপাশ বাম কাধেঁর উপর দিয়ে নীচের দিকে নামিয়ে দিতে হবে। যা পিঠের উপর ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। দুই রকমভাবে পড়া যাবে। যথা- (১) পাগড়ীর সাথে টাইট করে পড়া (২) আলগাভাবে পড়া।
* রুমালের সুন্নতী মাপ: সাধারণত, আড়াই হাত, পৌনে তিন হাত ও তিন হাত বর্গাকৃতি।
* সুন্নতী কেনায়া: সম্মানিত সুন্নতী টুপির নিচে ডিম আকৃতির সাদা সুতি কাপড়ের সুন্নতী কেনায়া পরিধান করা সম্মানিত সুন্নত মুবারক।
* না’লাইন শরীফ বা স্যান্ডেল: দুই পাট বা স্তর বিশিষ্ট দু’খানা ফিতাযুক্ত পশমবিহীন চামড়ার না’লাইন ব্যবহার করা সম্মানিত সুন্নত মুবারক। না’লাইনের ফিতাদ্বয় আড়াআড়ি হওয়া এবং খয়েরী রংয়ের হওয়া খাছ সুন্নত। সুন্নতী না’লাইন পিছন দিকে ফিতা বিশিষ্টও হতে পারে বা ফিতা ছাড়াও হতে পারে।
* না’লাইন পরিধানের নিয়ম: না’লাইন পরিধানের সময় আগে ডান পায়ে পরিধান করতে হবে এবং খোলার সময় আগে বাম পায়ের না’লাইন খুলতে হবে।
মসজিদে প্রবেশের সময় বাম পা না’লাইন থেকে খুলে না’লাইনের উপরে রাখতে হবে। এরপর ডান পা খুলে সরাসরি মসজিদে রাখতে হবে। মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বাম পা দিয়ে বের হয়ে বাম পা না’লাইনের উপর রেখে ডান পায়ে না’লাইন পরতে হবে, অত:পর বাম পায়ে না’লাইন পরতে হবে। আর বাথরুমে প্রবেশের সময় প্রথমে বাম পা প্রবেশ করাতে হবে। তারপর ডান পা বাথরুমে প্রবেশ করাতে হবে।
* চামড়ার মোজা: খয়েরী রংয়ের চামড়ার মোজা ব্যবহার করা খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। না’লাইন পরিধানের ন্যায় মোজাও ডানদিক থেকে পরিধান করতে হয় এবং খোলার সময় বামদিক আগে খুলতে হয়। পরিধান করার আগে মোজা ৩ বার ঝেড়ে পরিধান করা সুন্নত।
* হাত রুমাল / গামছা: হাত রুমাল বা গামছা ব্যবহার করা সুন্নত।
* শীতের পোশাক: শীতের পোশাক পরিধান করাও সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। শীতের সুন্নতী পোশাক হলো- কম্বল, চাদর, শীতের জুব্বা, কানটুপি অর্থাৎ গরমকালে পুরুষ, মহিলা, ছেলে মেয়েরা যে পাতলা কাপড় পরিধান করে। শীতকালে সেই সুন্নতি কাপড়গুলিই মোটা বা পশমী কাপড়ের তৈরী পড়া সুন্নাত।
* চাদর: চাদর পরিধান করা সুন্নত। চাদরের রং হবে সাদা, কালো, সবুজ, ধুসর, গন্দম ইত্যাদি। তবে পুরুষদের জন্য লাল, হলুদ ও গেরুয়া রংয়ের চাদর ব্যবহার জায়িয নেই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চার হাত দৈর্ঘ্য, আড়াই হাত প্রস্থ, কখনো বা ছয় হাত দৈর্ঘ্য এবং সাড়ে তিন হাত প্রস্থ চাদর মুবারক পরিধান করতেন।
* খিরকা বা জুব্বা: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জুমুআহ্, ঈদ বা বিশেষ মজলিসে ক্বমীছ বা কোর্তা মুবারকের উপরে খিরকা বা জুব্বা মুবারক পরিধান করতেন। কালো ও ধুসর রংয়ের জুব্বা পরিধান করা সুন্নত।
* মহিলাদের কিছু সুন্নতি পোশাক-পরিচ্ছদ: ১. সেলোওয়ার, ২. ক্বমীছ বা কোর্তা, ৩. ওড়না, ৪. বোরকা’, ৫. হাত মোজা, ৬. পা মোজা, ৭. গহনা-অলঙ্কার ইত্যাদি।
ঘর-গৃহস্থলি বিষয়ক সুন্নত মুবারক:
* আসবাবপত্র: আসবাবপত্র শব্দের স্বাভাবিক অর্থ হচ্ছে ঘরের দ্রব্যাদী, ঘরে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এক কথায় বলতে গেলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ও ব্যবহারিক জীবনে সামগ্রিক ভাবে যা ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাকে আসবাবপত্র বলা হয়। যেমন: চকি, চাটাই, তোষক ইত্যাদি।
* বিছানা: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছানা মুবারক ছিল বিভিন্ন প্রকার। অর্থাৎ কখনো চামড়ার, কখনো চটের, কখনো কম্বলের, কখনো কাপড়ের চাদরের আবার কখনো বা খেজুর পাতার হতো। চামড়ার বিছানা দু’হাত চওড়া এবং চার হাত লম্বা ছিল।
সুন্নতী আসবাবপত্র ও সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদীর কতিপয় নাম মুবারক:
(১) সম্মানিত সুন্নতী বিছানাপত্র মুবারক; (২) চারপায়া বিশিষ্ট চকি মুবারক- বড় চকি: দৈর্ঘ্য ৪.৫ হাত, প্রস্থ ৩.২৫ হাত, উচ্চতা ১ বিঘত; ছোট চকি: দৈর্ঘ্য ৪.৫ হাত, প্রস্থ ২ হাত, উচ্চতা ১ বিঘত (৩) সারীর বা চারপায়া মুবারক (৪) হাছীর বা খেজুর পাতার চাটাই মুবারক (৫) মিসহ্ বা চটের বিছানা মুবারক (৬) পাটের রশি দ্বারা চারপায়া বিশিষ্ট চকি (৭) চামড়ার বালিশ মুবারক (৮) হাতির দাঁতের ও হাতির হাড়ের চিরুণী মুবারক (৯) চিরুনী (১০) আয়না (১১) মিম্বর শরীফ (১২) খেজুর গাছের লাঠি মুবারক।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: বিস্তারিত জানার জন্য উসওয়াতুন হাসানাহ রেসালা মুবারক ৫ম খণ্ড পাঠ করুন।
মুহম্মদ আব্দুর রহমান
রংপুর
সুওয়াল: একজন ইমাম সাহেব তিনি ইমামতি করছেন, বুকে হাত বেঁধে নামায আদায় করছেন। এই অবস্থায় কোন হানাফী মুছল্লী কি উনার পিছনে ইক্বতিদা করে নামায পড়বে, নাকি একা নামায আদায় করবে?
জাওয়াব: ইমাম যদি শাফিযী মাযহাবের হয়, শাফিয়ী মাযহাবে পুরুষরাও বুকের উপরে হাত বাঁধে তাহলে তার পিছনে নামায পড়তে পারে, অসুবিধা নাই। এটা তাহক্বীক্ব করতে হবে, ইমাম কোন মাযহাবের। আর যদি লা-মাযহাবী হয় তাহলে তার পিছনে নামায শুদ্ধ হবে না। এটা তাহক্বীক্ব করতে হবে। হানাফী মাযহাবে নাভীর নীচে বা নাভী বরাবর হাত বাঁধা হয়। আর শাফিয়ী মাযহাবে হলো বুকের বা সিনার উপরে বাঁধে। আর মালিকী মাযহাবে তারা হাত বাঁধে না। হাম্বলী মাযহাব আর শাফিয়ী মাযহাবের হুকুম একই। আর লা-মাযহাবীরাও হাত বুকের উপর বাঁধে। কিন্তু আক্বীদা দেখতে হবে, আক্বীদা ছাড়াতো নামায শুদ্ধ হবে না। ইমাম সাহেবের আক্বীদা শুদ্ধ না হলে একা একা নামায পড়তে হবে। (তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২৬তম সংখ্যা, তাফসীরে আযীযী, তাফসীরে আহমদিয়াত, জামউল জাওয়ামি’ আল মুসাল্লাম, জাযিযুল মাযাহিব ইত্যাদি)
মুহম্মদ শরীফুল ইসলাম
যশোর
সুওয়াল: আমরা জানি যে, শরীরের ক্ষত স্থান থেকে রক্ত, পুঁজ বা পানি গড়িয়ে পড়লে অজু ভেঙে যায়। এখন, এখানে কি পরিমাণকে নির্দেশ করা হয়েছে? সামান্য পরিমাণ বের হলেই অজু ভেঙে যাবে, নাকি গড়িয়ে পড়াকেই বোঝানো হয়েছে? দেখা যাচ্ছে যে, অধিক পরিমাণে রক্ত বের হচ্ছে, কিন্তু গড়িয়ে পড়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না, আগেই মুছে ফেলা হচ্ছে, এক্ষেত্রে মাসআলা কি?
জাওয়াব: যে পরিমাণ রক্ত পড়লে গড়িয়ে পড়তে পারে বারবার মুছলেও অজু ভেঙ্গে যাবে। আর পুঁজ আর কোন ঘা যদি থাকে সেটা পানি পানি থাক, এটা নাপাক না। কোন ঘা যদি থাকে ঘায়ের মধ্যে কোন রক্ত নাই, পুঁজ নাই, কিন্তু ঘা থাকার কারণে ভিজা ভিজা, সেটা নাপাক না।
শরীরের কোনো ক্ষত স্থান থেকে পুঁজ বা পানি যদি গড়িয়ে পড়ে স্বাভাবিকভাবে ব্যাথা ব্যতিত তবে ওজু ভঙ্গ হবে না। আর যদি ব্যাথার সাথে গড়িয়ে পড়ে তবে ওজু ভঙ্গ হবে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)
মুহম্মদ আব্দুল করীম
নওগাঁ।
সুওয়াল: কিছুদিন পূর্বে কুখ্যাত এক মাসিক পত্রিকায় হজ্জের অজুহাতে ছবি তোলাকে বৈধ বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে দলীল হিসেবে পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ ১৭৩, পবিত্র সূরা আনআম শরীফ ১১৯ ও ১৪৫ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, তীব্র প্রয়োজন হারাম বস্তুকে সাময়িক হালাল করে দেয়। তাই হজ্জের ফরয আদায় করতে হারাম ছবি তোলা সাময়িক বৈধতা পাবে। নাউযুবিল্লাহ! উক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক?
জাওয়াব: উক্ত পত্রিকার বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ বা বিরোধী ও কুফরী হয়েছে। কারণ হারাম বা ফাসিকী কাজ করে তথা ছবি তুলে, বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা যাবেনা। এটা সরাসরি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَمَنْ فَـرَضَ فِيْهِنَّ الْـحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوْقَ وَلَا جِدَالَ فِى الْـحَجِّ ۗ وَمَا تَـفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ يَّـعْلَمْهُ اللّٰـهُ ۗ وَتَـزَوَّدُوْا فَاِنَّ خَيْـرَ الزَّادِ التَّـقْوٰى ۚ وَاتَّـقُوْنِ يَا اُولِى الْاَلْبَابِ
অর্থ: “যার প্রতি হজ্জ ফরয সে যেন হজ্জ পালনকালে অশ্লীল-অশালীন কাজ না করে এবং কোন প্রকার ফাসিকী কাজ না করে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। আর তোমরা যে নেক কাজ করো তা মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন। তোমরা পাথেয় সংগ্রহ করো। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯৭)
বলার অপেক্ষা রাখে না, ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়া প্রকাশ্য ফাসিকী ও অশ্লীল-অশালীন কাজ। উক্ত হারাম কাজ আমভাবে সকলের জন্য নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ পালনকারীদের জন্য খাছভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
কাজেই, হজ্জ করার জন্য ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়া ইত্যাদি হারাম কাজ করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের হুকুম মোতাবেক হারাম। তাছাড়া হজ্জে মাবরূর অর্থাৎ হজ্জ কবুল হওয়ার জন্য শর্তই হচ্ছে সমস্ত প্রকার হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকা।
শুধু তাই নয়, হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য শুধু পাথেয় বা অর্থ-সম্পদ থাকাই শর্ত নয়। বরং আরো অনেক শর্ত রয়েছে। তন্মধ্যে হারাম থেকে বেঁচে থাকাও একটি অন্যতম শর্ত। হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য সমস্ত শর্ত পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কারো প্রতি হজ্জ ফরয হবে না।
মোটকথা, হজ্জ পালনকালে যেখানে সমস্ত হারাম থেকে বেঁচে থাকা শর্ত করা হয়েছে, সেই হারাম কাজ আবার হজ্জের জন্য বৈধ বা হালাল হয় কি করে? কখনই বৈধ হতে পারে না।
এরা এমন গণ্ডমূর্খ যে, মাসয়ালা হচ্ছে এক বিষয়ে আর দলীল দিয়েছে অন্য বিষয়ে। তা হচ্ছে, যখন কেউ হালাল খাদ্যের ব্যবস্থা করতে চরমভাবে নিরুপায় হয়ে যায় অথবা কেউ ৩ দিন অভুক্ত বা না খেয়ে থাকে তখন জীবন বাঁচানোর তাগিদে তার জন্য আবশ্যিক পরিমাণ হারাম খাদ্য গ্রহণ করাটা মুবাহ হয়। কিন্তু তা বৈধ বা হালাল হয়ে যায়না। সেটাই সুওয়ালে উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহ উনাদের মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে।
যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবাক করেন-
اِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْـتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيْرِ وَمَا اُهِلَّ بِهٖ لِغَيْرِ اللّٰـهِ ۖ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْـرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَلَا اِثْمَ عَلَيْهِ ۚ اِنَّ اللّٰـهَ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি মৃত প্রাণী, রক্ত, শূকরের গোশত এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্যের নামে যবাইকৃত পশুকে খাদ্যবস্তু রূপে হারাম ঘোষণা করেছেন। কিন্তু যে অনন্যোপায় অথচ অন্যায়কারী অথবা সীমালঙ্ঘণকারী নয় তার জন্য কোন গুনাহ হবে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭৩)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় সুপ্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারীতে” উল্লেখ রয়েছে যে, যারা ক্ষুধার্তের কারণে অনন্যোপায় (সীমালঙ্ঘন না করে) হারাম বস্তু ভক্ষণ করে তাদের জন্য কোনো গুনাহ হবে না। কেননা তারা অন্যায়কারী নয়, আর এমতাবস্থায় খাদ্য আস্বাদনও তাদের উদ্দেশ্য থাকে না। উদ্দেশ্য থাকে শুধুমাত্র জীবন বাঁচানো। এ রকম নিরুপায় অবস্থায় যতটুকু খাদ্য গ্রহণ করলে মৃত্যুর আশঙ্কা রোধ হয়, ততোটুকুই গ্রহণ করা মুবাহ। এর অতিরিক্ত নয়। এক্ষেত্রে হারাম বস্তুগুলো হালাল বলা কুফরী হবে বরং মুবাহ বলতে হবে মাজুর হিসেবে।
অনুরূপ সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ১১৯ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَمَا لَكُمْ اَلَّا تَأْكُلُوْا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّٰهِ عَلَيْهِ وَقَدْ فَصَّلَ لَكُمْ مَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ اِلَّا مَا اضْطُرِرْتُمْ اِلَيْهِ
অর্থ: যে পশুর উপর (যবেহ কালে) মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উচ্চারিত হয়েছে তা হতে না খাওয়ার ব্যাপারে তোমাদের কি কারণ থাকতে পারে? অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন যেগুলো তোমাদের জন্য হারাম করেছেন। কিন্তু যখন তোমরা নিরুপায় হয়ে যাও তখন হারাম বস্তুগুলোর মাধ্যমে জীবন রক্ষা করতে পারো।”
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় “তাফসীরে মাযহারীতে” উল্লেখ রয়েছে, যখন জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে তখন জীবন রক্ষার জন্য হারাম বস্তু ভক্ষণ করা যেতে পারে। হারাম তখনও হারামই থাকে। কিন্তু জীবন রক্ষার অত্যাবশ্যক তাগিদে তখন হারাম ভক্ষণ করলে গুনাহ হবে না মুবাহ হিসেবে।
একইভাবে, সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ১৪৫ নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قُلْ لَّا أَجِدُ فِيْ مَاۤ اُوحِيَ الَيَّ مُحَرَّمًا عَلٰى طَاعِمٍ يَطْعَمُهٗ إِلَّاۤ اَنْ يَّكُوْنَ مَيْـتَةً اَوْ دَمًا مَّسْفُوْحًا اَوْ لَحْمَ خِنْزِيْرٍ فَانَّهٗ رِجْسٌ أَوْ فِسْقًا اُهِلَّ لِغَيْرِ اللّٰـهِ بِهِ ۚ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْـرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَإِنَّ رَبَّكَ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ
অর্থ: বলে দিন, আমার প্রতি যে পবিত্র ওহী মুবারক নাযিল হয়েছে, উনার মধ্যে লোকেরা যা আহার করে তারমধ্যে হারাম কিছুই আমি পাই না মৃত, প্রবাহমান রক্ত, শূকরের গোশত ব্যতীত। কেননা এসব অপবিত্র অথবা অবৈধ বা নাফরমানী মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্যের নাম নেয়ার কারণে। তবে কেউ অবাধ্য না হয়ে এবং সীমালঙ্ঘণ না করে তা গ্রহণে বাধ্য হলে আপনার প্রতিপালক তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে-
فَمَنِ اضْطُرَّ
অর্থ: হারাম ভক্ষণে বাধ্য হলে
غَيْـرَ بَاغٍ
অর্থ: অবাধ্য না হয়ে
وَلَا عَادٍ
অর্থ: সীমালঙ্ঘন না করে। অর্থাৎ জীবন রক্ষার জন্য প্রবৃত্তির অনুসরণ না করে অবাধ্যতার উদ্দেশ্য না নিয়ে হারামকে হালাল মনে না করে এবং সীমালঙ্ঘন না করে ও প্রয়োজন অনুযায়ী হারাম বস্তু গ্রহণ করতে পারে মুবাহ হিসেবে।
উল্লেখ্য, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল সমূহ ও হারাম সমূহ স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে। তাই কোন হারাম কখনো হালাল হবে না তদ্রুপ কোন হালালও কখনো হারাম হবে না। আর হজ্জের বিষয়টি জীবন বাঁচানোর মতো কোনো বিষয় নয়। তাই হজ্জের ক্ষেত্রে তাদের সেই অজুহাত মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়, বরং সম্পূর্ণরূপেই পরিত্যাজ্য।
যার প্রমাণ তাদের মুরুব্বী তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হক নিজেও। যেমন সে তার লিখিত ‘আল কুরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা’ নামক বইয়ের ৫৬ পৃষ্ঠায় কি লিখেছে দেখুন- “বর্তমানে হজ্জ করতে মহিলাদের যেহেতু পর্দার ক্ষতি হয়, তাই মহিলাদের উপর হজ্জ ফরয হলে, বদলী হজ্জ করানো চাই। কারণ এই হজ্জের ন্যায় বরকতময় ছফরে অনেক মহিলা দেখা যায় মাহরাম পুরুষ ব্যতীত রওয়ানা হয়ে যায়, যা কবীরা গুনাহ ও নাজায়িয। অনেক সময় দেখা যায় মাহরাম সাথে থাকা সত্ত্বেও মহিলারা হজ্জের ছফরে পর্দাহীন চলে ও অনেক অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। তাই বদলী হজ্জ করানোই মহিলাদের জন্য উত্তম। এ সম্পর্কে আল্লামা কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
لَا يَلِيْقُ بِالْـحِكْمَةِ اِيْـجَابٌ فَـرْضٌ عَلٰى وَجْهٍ يَـفُوْتُهٗ فَـرْضٌ اٰخَرُ
অর্থ: এমন হিকমত বা কৌশল অবলম্বন করা উচিত হবে না, যা দ্বারা একটি ফরয আদায় করতে গিয়ে অন্য একটি ফরয ছুটে যায়।” (রাহনুমায়ে হুজ্জাজ)
তাদের উক্ত মুরুব্বীর মতে একজন মহিলার যদি টাকা থাকার পরও বেপর্দা হওয়ার আশঙ্কায় হজ্জে যাওয়া না যায় তবে পুরুষের টাকা থাকার পরও হারাম কাজ অর্থাৎ ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়ার আশঙ্কা থাকা সত্বে তার উপর হজ্জ ফরয হবে কি করে বা সে হজ্জে যাবে কিভাবে?
আওয়ামুন্নাছ অর্থাৎ সাধারণ জনগণ হোক অথবা খাছ লোক হোক কাহারো জন্যই ছবি তুলে বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা জায়িয নেই। আর আখাছ্ছুল খাছ যারা অর্থাৎ আলিম-উলামা, পীর-মাশায়েখ বা হাদীদের জন্য তো কখনোই ছবি তুলে বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা জায়িয নেই।
অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে যেটা হারাম সেটা পবিত্র মক্কা শরীফ-পবিত্র মদীনা শরীফসহ সমগ্র বিশ্বের মৌলবীরা একমত হয়ে জায়িয বললেও তা কখনই জায়িয হবে না, হতে পারে না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ছবি তুলে ও বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা যাবে না, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২১৭ ও ২৫৪তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ পাঠ করুন।
মুহম্মদ আযীযুল ইসলাম
ঢাকা
সুওয়াল: পবিত্র কুরবানীর কিছুদিন আগে নাকি হাত ও পায়ের নখ কাটা, মোছ ছাঁটা এবং মাথার চুল ইত্যাদি কাটা যায় না? পবিত্র কুরবানী করার পর কাটতে হয়! কথাটা কতটুকু সত্য?
জাওয়াব: হ্যাঁ, যারা পবিত্র কুরবানী দেয়ার নিয়ত রাখেন, তাদের পক্ষে পবিত্র যিল হজ্জের চাঁদ উঠার পর থেকে এই চাঁদের দশ তারিখ পবিত্র কুরবানী করা পর্যন্ত মাথার চুল হাতের ও পায়ের নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ السَّادِسَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ رَأَى هِلَالَ ذِي الْحِجَّةِ فَأَرَادَ أَنْ يُّضَحِّيَ فَلَا يَأْخُذُ مِنْ شَعْرِهٖ وَلَا مِنْ أَظْفَارِهٖ حَتّٰى يُضَحِّيَ
অর্থ: “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসের চাঁদ দেখলো এবং কুরবানী করার নিয়ত করলো, সে যেন কুরবানী না করা পর্যন্ত তার শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটে।” (মুসলিম শরীফ, মেশকাত শরীফ ইত্যাদি)
মূলত ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো এই যে, যারা পবিত্র কুরবানী করবে এবং যারা পবিত্র কুরবানী করবে না, তাদের উভয়ের জন্যই উক্ত আমল মুস্তাহাব ও ফযীলতের কারণ। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আমি পবিত্র কুরবানীর দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত দিনটিকে এই উম্মতের জন্য ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আয় মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি যদি একটি মাদী মানীহা (উটনী) ব্যতীত অন্য কোন পশু কুরবানীর জন্য না পাই, তাহলে আপনি কি (আমাকে) অনুমতি দিবেন যে, আমি উক্ত মাদী মানীহাকেই কুরবানী করবো। জবাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, না। আপনি উক্ত পশুটিকে কুরবানী করবেন না। বরং আপনি কুরবানীর দিনে আপনার (মাথার) চুল ও হাত-পায়ের নখ কাটবেন। আপনার গেঁাফ খাট করবেন এবং আপনার অন্যান্য অতিরিক্ত চুল কাটবেন, এটাই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আপনার পূর্ণ কুরবানী অর্থাৎ এর দ্বারা আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পবিত্র কুরবানী উনার পূর্ণ ছওয়াব পাবেন।” (আবু দাউদ শরীফ)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে যে, যাদের কুরবানী করার সামর্থ নেই, তাদের জন্যও পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার চাঁদ দেখার পর থেকে সম্মানিত কুরবানী করার আগ পর্যন্ত স্বীয় চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। আর যে ব্যক্তি তা কাটা থেকে বিরত থাকবে, সে একটি পবিত্র কুরবানীর ছওয়াব পাবে। সুবহানাল্লাহ! {দলীলসমূহ: নাসায়ী শরীফ, মিশকাত শরীফ, শরহে নববী শরীফ, বজলুল মাযহূদ শরীফ, মিরকাত শরীফ, লুময়াত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত শরীফ, শরহুত ত্বীবী শরীফ, তা’লীকুছ ছবীহ শরীফ, মুযাহিরে হক্ব শরীফ ইত্যাদি।}
মুহম্মদ মুসলিমুদ্দীন
মিরপুর, ঢাকা
সুওয়াল: তাকবীরে তাশরীক কাকে বলে? তা কতবার বলতে হয়?
জাওয়াব: পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর যে তাকবীর পাঠ করা হয় তাকেই তাকবীরে তাশরীক বলে। জামায়াতে বা একাকী, মুসাফির অথবা মুকীম, শহর অথবা গ্রামে প্রত্যেককেই প্রতি ফরয নামাযের পর উক্ত তাকবীর পাঠ করতে হবে।
তাকবীরে তাশরীক হলো-
اَللهُ اَكْبَـرُ اَللهُ اَكْبَـرُ لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَـرُ اَللهُ اَكْبَـرُ وَلِلّٰهِ الْـحَمْدُ
“দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “তাকবীরে তাশরীক” একবার বলা ওয়াজিব, তবে যদি (কেউ) একাধিকবার বলে, তাহলে তা ফযীলতের কারণ হবে। আর “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে উল্লেখ আছে-
وَقِيْلَ ثَلَاثُ مَرَّاتٍ
অর্থ: কেউ কেউ বলেছেন (তাকবীরে তাশ্রীক) তিনবার।” “গায়াতুল আওতার শরহে দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে-
اور واجب ہے تکبیر تشریق صحیح ترقول میں ایکبار بسبب اسکے مامور ہونے کے اور اگر زیادہ کہےایکبار سے تو ہوگا ثواب.
অর্থ: “বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে (মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে) আদিষ্ট হওয়ার কারণে একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। আর যদি একবারের চেয়ে অতিরিক্ত বলে তবে ছাওয়াবের অধিকারী হবে।”
উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব এবং তিনবার বলা মুস্তাহাব। {দলীলসমূহ: শামী, আইনী, আলমগীরী, হাশিয়ায়ে তাহতাবী, রদ্দুল মুহতার, দুররুল মুখতার ইত্যাদি।}
মুহম্মদ বিলাল হুসাইন
কাপাসিয়া, গাজীপুর।
সুওয়াল: পবিত্র কুরবানী কার উপর ওয়াজিব? অর্থাৎ পবিত্র কুরবানী উনার নিছাব কি?
জাওয়াব: পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার দশ, এগার, বার অর্থাৎ দশ তারিখের ছুবহে ছাদিক হতে বার তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নিছাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়িজে আছলিয়াহ (নিত্য প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব। উল্লেখ্য যে, যদি কারো নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং তা যদি নিসাব পরিমাণ হয়, যেমন- কারো পাঁচটি ঘর আছে, একটির মধ্যে সে থাকে আর তিনটির ভাড়া দিয়ে সে সংসার চালায় আর একটি অতিরিক্ত, যার মূল্য নিসাব পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে তার উপরেও কুরবানী ওয়াজিব হবে। {দলীলসমূহ: (১) আলমগীরী, (২) শামী, (৩) আইনুল হিদায়া, (৪) ফতহুল কাদীর, (৫) গায়াতুল আওতার, (৬) শরহে বিকায়া, (৭) বাহর, (৮) দুররুল মুখতার, (৯) কাজীখান, (১০) ইনায়া ইত্যাদি।
মুহম্মদ নূরুল হুদা
কিশোরগঞ্জ
সুওয়াল: পবিত্র ঈদুল আযহার দিনের সুন্নতসমূহ জানতে চাই।
জাওয়াব: পবিত্র ঈদের দিনের সুন্নত হলো- ১. খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা ২. গোসল করা ৩. মিস্ওয়াক করা ৪. সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন পোশাক পরিধান করা ৫. আতর ব্যবহার করা ৬. মহল্লার মসজিদে গিয়ে জামায়াতে ফজরের নামায পড়া ৭. ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া ৮. ঈদুল আযহার দিন সকালে কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া ৯. ঈদুল আযহার দিন পবিত্র কুরবানীর গোশত দিয়ে খাওয়া শুরু করা ১০. ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা ১১. সকাল সকাল পবিত্র ঈদের নামায পড়ার জন্য যাওয়া ১২. ঈদের নামায ঈদগাহে গিয়ে পড়া, সম্ভব না হলে মহল্লার মসজিদে গিয়ে ঈদের নামায পড়া। ১৩. নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া:
اَللهُ اَكْبَـرُ اَللهُ اَكْبَـرُ لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَـرُ اَللهُ اَكْبَـرُ وَلِلّٰهِ الْـحَمْدُ
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হাম্্দ। ১৪. সম্মানিত শরীয়ত উনার সীমার মধ্যে থেকে খুশি প্রকাশ করা ইত্যাদি ঈদের সুন্নত। (আলমগীরী, নূরুল ঈজাহ ও অন্যান্য ফিক্বাহর কিতাব)
মুহম্মদ ফরীদুল ইসলাম
নূরানীবাদ
সুওয়াল: পবিত্র ঈদুল আযহা উনার নামায কখন পড়া সুন্নত? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর থেকে (অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর থেকে অথবা সূর্য উদয়ের শুরু থেকে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী ২৩ মিনিট পর) ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যাহওয়াতুল কুবরা বা যাওয়াল অথবা শরয়ী অর্ধদিন বা দ্বিপ্রহর অর্থাৎ সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে।
ফজরের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর ২৩ মিনিট পর্যন্ত মাকরূহ ওয়াক্ত এবং এরপর পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং যুহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর থেকে অর্থাৎ মাকরূহ ওয়াক্ত যা ঘড়ির হিসাব অনুযায়ী ২৩ মিনিট অতিক্রম হওয়ার পূর্বে পবিত্র ঈদের নামায আদায় করলে নামায হবে না এবং যুহরের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বের ১ ঘণ্টা যা মাকরূহ ওয়াক্ত নামে পরিচিত। উক্ত মাকরূহ ওয়াক্তের মধ্যে ঈদের নামায আদায় করলে তা আদায় হবে না।
পবিত্র ঈদের নামায কোন সময় আদায় করলে তা সুন্নত হবে সে সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “পবিত্র ঈদের দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফজরের নামায পড়ে হুজরা শরীফে গিয়ে সকাল সকাল গোসল করতেন এবং ঈদুল ফিতর হলে বিজোড় সংখ্যক (৩, ৫, ৭) খোরমা খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। আর পবিত্র ঈদুল আযহার সময় কিছু না খেয়ে সরাসরি ঈদগাহে যেতেন এবং পবিত্র ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে পবিত্র ঈদের নামায আদায় করতেন। তারপর খুতবা দিতেন এবং নছীহত মুবারক করতেন।”
কাজেই, পবিত্র ঈদের নামায সকাল সকাল পড়া সুন্নত। পবিত্র ঈদের নামাযের সম্মানার্থে এবং পবিত্র ঈদের নামায যাতে আদায়ে দেরি না হয়, সেজন্য ঈদের দিন ইশরাকসহ অন্যান্য নফল নামায পড়া নিষিদ্ধ। (সমূহ ফিক্বহের কিতাব দ্রষ্টব্য)
মুহম্মদ মুঈনুল ইসলাম
ঢাকা।
সুওয়াল: পবিত্র কুরবানী করার সুন্নতী পদ্ধতি এবং নিয়ত জানালে খুশি হবো।
জাওয়াব: পবিত্র কুরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর পবিত্র কুরবানী করতে হবে। আর পবিত্র কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরে নরম স্থানের উপর থেকে গলার মধ্যে একটি উঁচু হাড় রয়েছে: উভয়ের মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মুখভাগে দুটি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দুটি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুটি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবেনা। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বিজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
কুরবানীর নিয়ত: (যবেহ করার পূর্বে)
إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ إِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ اَللّٰهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ
উচ্চারণ: ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানীফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া ইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রব্বিল আলামীন। লা শারীকালাহূ ওয়া বি যালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা। এ দোয়া পড়ে بِسْمِ اللهِ اَللهُ اَكْبَـرُ ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে যবেহ করতে হবে।
যবেহ করার পর এ দোয়া পড়বে-
اَللّٰهُمَّ تَـقَبَّـلْهُ مِنِّىْ كَمَا تَـقَبَّـلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ سَيِّدِنَا مَوْلٰنَا رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخَلِيْلِكَ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ اِبْـرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা রাসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খলীলিকা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।
যদি নিজের কুরবানী হয়, তবে مِنِّى (মিন্নী) বলতে হবে। আর যদি অন্যের কুরবানী হয়, তবে مِنْ (মিন) শব্দের পর যার বা যাদের কুরবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি অন্যের সাথে শরীক হয়, তাহলে مِنِّى (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর مِنْ (মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে, তাহলে যবেহ করার সময় শুধু বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে পবিত্র কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে অবশ্যই প্রত্যেক যবেহকারীর উচিত উপরোক্ত নিয়ত শিক্ষা করা। কেননা উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে পবিত্র কুরবানী করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
{দলীলসমূহ: আহমদ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, দারিমী ইবনে মাযাহ শরীফ, বজলূল মযহুদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, মুযাহেরে হক্ব শরীফ, লুমায়াত শরীফ, ত্বীবী শরীফ, তালিকুছ ছবীহ শরীফ, আশয়াতুল লুমায়াত শরীফ, আলমগীরী শরীফ, শামী শরীফ, দুররুল মুখতার শরীফ, আইনুল হিদায়া ও বাহর শরীফ ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আনীছুর রহমানসদর, চাঁদপুর
সুওয়াল: আইয়ামে নহর বা পবিত্র কুরবানী উনার দিনে কুরবানী উনার পশু কুরবানী করার পূর্বে অথবা পবিত্র কুরবানী করার সময়ে হাঁস, মুরগি, কবুতর ইত্যাদি যবেহ করা জায়িয আছে কি? জাওয়াব: না, জায়িয নেই। কারণ মুসলমানদের আইয়ামে নহর বা পবিত্র কুরবানী উনার দিনে যারা মজুসী বা অগ্নি উপাসক তারা তাদের ধর্মীয় আমল মুতাবিক হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে থাকে। এখন যদি কোন মুসলমান তাদের সাথে মুশাবাহ বা সাদৃশ্য রেখে কুরবানীর দিন হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটা কাট্টা কুফরী হবে। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَـهُوَ مِنْـهُمْ
অর্থ: “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (মিশকাত শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ)
আর যদি কোন মুসলমান সাধারণভাবে উক্ত সময়ে হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটা মাকরূহ তাহরীমী হবে, যেহেতু এটাও মুশাবাহ হয়ে যায়।
আর যদি কোন মুসলমান খুব জরুরতে হাঁস-মুরগি ইত্যাদি যবেহ করে, তাহলে সেটাও মাকরূহ্ তানযীহী হবে। আর এমন কোন মুসলমান, যার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব অথবা ওয়াজিব নয়, তারা যদি পবিত্র কুরবানীর দিন হাঁস, মুরগি ইত্যাদি খেতে চায়, তাহলে তারা যেন ছুবহি ছাদিকের পূর্বেই সেটা যবেহ করে, কেটে, পাক করে রেখে দেয় অথবা শুধু যবেহ করে, কেটে রেখে দিবে পরে পাক করলেও চলবে। (এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৪৪, ৭০, ৭৯, ১০৭তম সংখ্যাগুলি পাঠ করুন।) {দলীলসমূহ: শামী, আলমগীরী, ফতহুল ক্বাদীর, শরহে হিদায়া ইত্যাদি।}
মুহম্মদ জসীমুদ্দীনফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর
সুওয়াল: ওয়াজিব ও নফল কুরবানী, ওলীমা ও আক্বীকা একসাথে করা জায়িয হবে কিনা? জাওয়াব: হঁ্যা, জায়িয হবে। {দলীল: শামী, আলমগীরী ইত্যাদি।}
মুহম্মদ ফযলে রাব্বী, নূরানীগঞ্জ
সুওয়াল: কোন ব্যক্তির উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব। সে তার নিজের নামে অর্থাৎ পক্ষ থেকে পবিত্র কুরবানী না দিয়ে মৃত বা জীবিত পিতা-মাতার নামে অর্থাৎ পক্ষ থেকে কুরবানী দিলে তার নিজের কুরবানী আদায় হবে কিনা?
জাওয়াব: না, আদায় হবে না। আমাদের হানাফী মাযহাব মতে মালিকে নিছাব প্রত্যেকের উপর আলাদাভাবে কুরবানী করা ওয়াজিব। যার উপর কুরবানী ওয়াজিব তার পক্ষ থেকেই কুরবানী করতে হবে। যার উপর কুরবানী ওয়াজিব সে তার নামে কুরবানী না করে মৃত বা জীবিত অপরের নামে কুরবানী করলে ওয়াজিব তরকের কারণে সে কঠিন গুনাহে গুনাহগার হবে। যদিও বাবা-মা উনাদের নামে কুরবানী করে। যাদের প্রতি পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব নয়। (দলীলসমূহ: সমূহ পবিত্র হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ ও ফিক্বাহর কিতাব দ্রষ্টব্য) বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১৫৩তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ পাঠ করুন।
মুহম্মদ মুশাররফ হুসাইন, পলাশ, নূরানীবাদ
সুওয়াল: যাদের উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে এক নামে পবিত্র কুরবানী দিয়ে গোশত বণ্টন করে নিতে পারবে কিনা?
জাওয়াব: হঁ্যা, যাদের উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রে পবিত্র কুরবানী দিয়ে গোশত বন্টন করে নিতে পারবে। তবে পবিত্র কুরবানীর পশু গরু, মহিষ ও উটে সাত নাম এবং দুম্বা, মেষ বা ভেড়া, বকরী, খাসিতে এক নাম দেয়ার হুকুম রয়েছে।
গরু, মহিষ, উটে সাত নামের বেশি দিলে পবিত্র কুরবানী দুরুস্ত হবেনা। আর সাত নামের কমে কুরবানী করলে দুরুস্ত হবে। আর ছাগল, দুম্বা, ভেড়া এক নামের বেশি নামে পবিত্র কুরবানী করলে কারো কুরবানী দুরুস্ত হবেনা।
যেমন- যদি ৪০ জন ব্যক্তি ২০০০ টাকা করে ৮০,০০০ টাকা দিয়ে একটা গরু কিনে সাত নামে বা তার থেকে কম নামে পবিত্র কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তাতেও পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবে।
তদ্রƒপ একটা খাসি তিনজনে মিলে পয়সা দিয়ে খরিদ করে, যদি এক নামে পবিত্র কুরবানী করে গোশত বণ্টন করে নেয়, তবে সে কুরবানীও শুদ্ধ হবে।
এখন প্রশ্ন হলো- যারা সম্মিলিতভাবে টাকা দিয়ে কুরবানী করতে চায়, তারা কার নামে কুরবানী করবে?
এর জাওয়াব হচ্ছে- এরূপ কুরবানীর ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই যেহেতু নিজস্ব নামে কুরবানী করতে চাইবে, কুরবানীর ফযীলত হাছিলের জন্য। আর গরু, মহিষ ও উটে সাত নামের বেশি এবং ছাগল, ভেড়া ও দুম্বাতে এক নামের বেশি দেয়া যায় না। কার নাম দিবে বা কার নাম বাদ দিবে, এ নিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হবে। এছাড়াও যদি কারো নামে দেয়া হয়, অন্য কেউ প্রকাশ্যে আপত্তি না করে কিন্তু অন্তরে সম্মতি না থাকে তাহলে কুরবানী শুদ্ধ হবেনা। কারণ একজনের টাকা দিয়ে অন্যজনের নামে কুরবানী করলে কুরবানী শুদ্ধ হবেনা, টাকাওয়ালার সম্মতি ব্যতীত। এজন্য উত্তম ও আদব হচ্ছে- এক নাম দিলে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে দেয়া। এরপর অন্য কারো নাম দিলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনাদের, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং হযরত আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাম মুবারকে কুরবানী দেয়া উত্তম। আরো বেশি নামে কুরবানী দিলে হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নাম মুবারকেও পবিত্র কুরবানী করা যেতে পারে। {দলীলসমূহ: শামী, আলমগীরি, ফতহুল ক্বাদীর, কাজীখান ইত্যাদি।}
মুহম্মদ তরীকুল ইসলাম, বগুড়া
সুওয়াল: হালাল পশুর কোন কোন অংশ খাওয়া নিষিদ্ধ?
জাওয়াব: পবিত্র কুরবানী বা হালাল পশুর ৮টি জিনিস খাওয়া যাবেনা। (১) দমে মাছফুহা বা প্রবাহিত রক্ত হারাম, (২) অণ্ডকোষ, (৩) মূত্রনালী, (৪) পিত্ত, (৫) লিঙ্গ, (৬) গুহ্যদ্বার, (৭) গদুদ বা গুটলী মাকরূহ তাহরীমী, (৮) শিরদাড়ার ভিতরের মগজ, এটা কেউ মাকরূহ তাহরীমী, আবার কেউ মাকরূহ তানযিহী বলেছেন। {দলীলসমূহ: শামী, মাতালেবুল মু’মিনীন, উমদাতুল কালাম, কিতাব- শাইখুল ইসলাম ইত্যাদি।
মুহম্মদ বেলায়েত হুসাইন
দিনাজপুর
সুওয়াল: লোক দেখানোর জন্য অথবা এলাকায় সুনাম অর্জনের উদ্দেশ্যে বড় গরু পবিত্র কুরবানী দেয়া জায়িয হবে কি? পবিত্র কুরবানী দেয়ার ক্ষেত্রে কি নিয়ত রাখা উচিত?
জাওয়াব: কোন আমলই লোক দেখানোর জন্য কিংবা এলাকায় সুনাম-সুখ্যাতি অর্জনের জন্য করা জায়িয নেই।
কাজেই, পবিত্র কুরবানী হোক অথবা অন্য যে কোন নেক আমলই হোক তা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারকের উদ্দেশ্যেই করতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَمَاۤ أُمِرُوْا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ
অর্থ: আমি তোমাদেরকে আদেশ করছি একমাত্র খালিছভাবে আমার জন্যই ইবাদত করো। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আল বাইয়্যিনাহ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ০৫)
মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন-
لَنْ يَّـنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَّـنَالُهُ التَّـقْوٰى مِنْكُمْ
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পবিত্র কুরবানী উনার পশুর গোশত, রক্ত কিছুই পেঁৗছে না। বরং উনার নিকট পেঁৗছে থাকে তোমাদের তাক্বওয়ার বিষয়টি।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৭)
কাজেই, বড় গরু কুরবানী দেয়ার সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই বড় গরু কুরবানী করা উচিত। তবে উদ্দেশ্য ও নিয়ত বিশুদ্ধ রাখতে হবে।
মুহম্মদ মি’রাজ হুসাইন, নূরপুর।
সুওয়াল: সম্মানিত ইসলাম উনার নামে রাজনৈতিক ফায়দা হাছিলকারী ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাগুলোতে কুরবানী উনার চামড়া দেয়া জায়িয হবে কি?
জাওয়াব: ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে তথা সন্ত্রাসী তৈরিকারী ও সম্মানিত ইসলাম উনার নামে রাজনীতি তথা গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচনকারী মাদরাসাগুলোতে পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না। পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়ার উত্তম স্থান হলো ‘রাজারবাগ মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’।
পবিত্র কুরবানী একটি ঐতিহ্যবাহী শরয়ী হুকুম ও ইসলামী কাজ। যা উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য ওয়াজিব। কাজেই পবিত্র কুরবানী দেয়ার সাথে সাথে পবিত্র কুরবানীর চামড়া সঠিক স্থানে দেয়াও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে সবস্থানে মহান আল্লাহ পাক তিনি আগে ‘ঈমান’ আনার কথা বলেছেন পরে ‘আমলের’ কথা বলেছেন।
এক খোদা তায়ালা উনাকে প্রায় সবাই মানে কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে না মানার কারণেই অর্থাৎ আক্বীদার পার্থক্যের কারণেই পৃথিবীতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি হাজারো বিধর্মী তথা কাফিরের দল রয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় তারা সবাই জাহান্নামী যদি তওবা-ইস্তিগফার করে ঈমান না আনে।
স্মরণীয় যে, শুধু কাফির সম্প্রদায়ই নয়, মুসলমান নামধারী অনেক মালানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, শাইখুল হাদীছ, ইমাম, খতীব তথা অনেক ইসলামী দলও রয়েছে যাদের মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আক্বীদা খারাপ রয়েছে। কাজেই তারা মুসলমান নামধারী হলেও তারা মুসলমানের অন্তভুর্ক্ত নয়। তারা ইসলামী দল নামধারী হলেও আসলে তারা ইসলামী দলের অন্তভুর্ক্ত নয়।
উল্লেখ্য, ইসলামে মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ হারাম। ইসলাম উনার নামে ব্যবসা করা হারাম। ইসলাম উনার নামে গণতান্ত্রিক দল করা হারাম। ইসলাম উনার নামে নির্বাচন করা হারাম। ইসলাম উনার নামে ভোট চাওয়া হারাম।
আরো উল্লেখ্য, বর্তমানে অধিকাংশ মাদরাসাগুলোই হচ্ছে জামাতী, ওহাবী, খারিজী মতাদর্শের তথা সন্ত্রাসী তৈরির সূতিকাগার। পবিত্র ইসলাম উনার দোহাই দিয়ে, পবিত্র ইসলাম উনার নামে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক স্বার্থ ও প্রতিপত্তি হাছিলের প্রকল্প। পবিত্র ইসলাম উনার নামে নির্বাচন করার ও ভোটের রাজনীতি করার পাঠশালা- যা পবিত্র ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম।
কাজেই, কুরবানীর চামড়া কোথায় দেয়া হচ্ছে তা দেখে দিতে হবে। জামাতী, খারিজী, ওহাবী, সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী তথা ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে কুরবানীর চামড়া দেয়া কস্মিনকালেও জায়িয হবে না।
জামাতী, ওহাবী তথা সন্ত্রাসীদের মাদরাসায় পবিত্র কুরবানীর চামড়া দিলে তাতে বদ আক্বীদা ও বদ আমলের প্রচারে সহায়তা করা হবে। তাতে কবীরা গুনাহে গুনাহগার হতে হবে।
মূলত ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসায় কুরবানীর চামড়া, যাকাত-ফিতরা ইত্যাদি দান-ছদকা না দেয়া মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নির্দেশ মুবারক করেন-
وَتَـعَاوَنُـوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّـقْوٰى وَلَا تَـعَاوَنُـوْا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّـقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
অর্থ: “তোমরা নেক কাজে ও পরহেযগারীতে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো। বদ কাজে ও শত্রুতার মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো না। আর এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২)
পত্রিকার সংবাদে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, পবিত্র কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। যা মূলত তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল তথা ধর্মব্যবসার কাজেই ব্যয়িত হয়।
অনুরূপভাবে এমন কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকেও যেমন আনজুমানে মুফিদুল ইসলাম, কোয়ান্টাম এদেরকে পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না, যারা তা আমভাবে খরচ করে থাকে। যেমন রাস্তা-ঘাট, পানির ব্যবস্থা, বেওয়ারিশ লাশ দাফন করার কাজে এবং হিন্দু, বৌদ্ধদেরকে সাহায্য করে। অথচ পবিত্র কুরবানীর চামড়া মুসলমান গরিব মিসকীনদের হক্ব। তা মুসলমান গরিব মিসকিনদের মালিক করে দিতে হবে।
আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র যাকাত উনার একটি রশির জন্যও জিহাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই, পবিত্র যাকাত উনার একটি রশির মতোই পবিত্র কুরবানীর একটি চামড়াও যাতে ভুল উদ্দেশ্যে ও ভুল পথে পরিচালিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لَنْ يَّـنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَّـنَالُهُ التَّـقْوٰى مِنْكُمْ
“পবিত্র কুরবানীর রক্ত ও গোশত কিছুই মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ পেঁৗছায় না। পেঁৗছায় তোমাদের বিশুদ্ধ নিয়ত।” (পবিত্র সূরা পবিত্র হজ্জ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৭)
কাজেই বিশুদ্ধ নিয়তে পবিত্র কুরবানীর চামড়া ঠিক জায়গায় দিতে হবে। অনেকে পাড়ার মাস্তান, গুণ্ডা-পাণ্ডা, ছিনতাইকারী ও হিরোইনখোরদের হাতে রাখার উদ্দেশ্যে তাদেরকে কম দামে পবিত্র কুরবানীর চামড়া দেয়। এতে কিন্তু নিয়ত বিশুদ্ধ হবে না এবং পবিত্র কুরবানীও শুদ্ধভাবে আদায় হবে না।
তাই বর্তমান হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, যামানার মুজতাহিদ ও ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, আওলাদে রসূল, মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, বর্তমানে হক্ব মত-পথ ও সুন্নতী আমলের একমাত্র ও উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো, ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’।
কাজেই, পবিত্র যাকাত-ফিতরা বা পবিত্র কুরবানীর চামড়া দিয়ে যারা ছদকায়ে জারীয়ার ছওয়াব হাছিল করতে চায় উনাদের জন্য একমাত্র ও প্রকৃত স্থান হলো ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’ ৫/১ নং আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা।