মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন। মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।
সুওয়াল: ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খ-ন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো- … ৪. ইসলামী স্বর্ণযুগে এবং তৎপরবর্তীতে ফুক্বাহায়ে কিরাম ও হাদীছ বিশারদগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। তাই তা হযরত মুফতিয়ানে কিরামের ঐক্যমতে বিদয়াত। (নাঊযুবিল্লাহি মিনাল কাযিবীন) এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাট হাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি। (ধারাবাহিক) জাওয়াব: হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য শুধু ডাহা মিথ্যাই নয় বরং সম্পূর্ণরূপেই মনগড়া, দলীলবিহীন ও বিভ্রান্তিকর। শুধু তাই নয়, তার পাশাপাশি স্বয়ং আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম, ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের প্রতি মিথ্যারোপ করার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। স্মর্তব্য যে, হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। (১) স্বর্ণযুগে কেউ ফরজ নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। (২) তৎপরবর্তিতে অর্থাৎ স্বর্ণযুগের পর থেকে অদ্যবধি ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করেননি। (৩) সকল মুফতিয়ানে কিরাম ঐক্যমত হয়ে ফতওয়া দিয়েছেন যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদয়াত বা নাজায়িয। (নাউযুবিল্লাহ) উল্লেখ্য, হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবরা তাদের উল্লিখিত তিনটি বক্তব্যের কোন একটিও নির্ভরযোগ্য কিতাবের ইবারত বা দলীল দ্বারা প্রমাণ করতে পারেনি এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও তা প্রমাণ করতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ। সুতরাং এমনিতেই তাদের উল্লিখিত বক্তব্যগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও পরিত্যাজ্য বলে সাব্যস্ত হয়। এরপরও আমরা তাদের উল্লিখিত প্রতিটি বক্তব্য দলীলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট ও কুফরীমূলক বলে প্রমাণ করবো। ইনশাআল্লাহ। হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের তৃতীয় বক্তব্য হলো- (৩) সকল মুফতিয়ানে কিরাম ঐক্যমত হয়ে ফতওয়া দিয়েছেন যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদয়াত বা নাজায়িয। (নাউযুবিল্লাহ) এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা, দলীলবিহীন ও হক্কানী-রব্বানী উলামায়ে কিরাম বা ফুক্বাহায়ে কিরামগণের প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল। কারণ সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত একখানা সুন্নত আমলকে হক্কানী ফুক্বাহায়ে কিরামগণ ঐক্যমত হয়ে কখনোই নাজায়িয বা বিদয়াত বলতে পারেন না। তবে সত্য কথা হলো হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের ন্যায় বিভ্রান্ত দুই একজন নামধারী ফক্বীহ মুনাজাতকে নাজায়িয বিদয়াত বলে সমাজে ফিৎনা সৃষ্টি করেছে। পক্ষান্তরে হক্কানী-রব্বানী ফুক্বাহায়ে কিরামগণ একমত হয়ে ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতকে জায়িয ও সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যার বহু প্রমাণ আমরা বিগত সংখ্যাগুলোতে পেশ করেছি। এখানেও কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো- ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব “আইনুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৬৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..
অর্থঃ “এবং নামাযের পরে মুনাজাত করাই সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। হযরত আবূ উমামাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, কোন্ দোয়া অধিক কবূলযোগ্য? তিনি উত্তর দিলেন, শেষ রাত্রের মধ্যখানে এবং ফরয নামাযের পরে মুনাজাত কবূল হয়। আর হযরত মুগীরা ইবনে শো’বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক নামাযের পর মুনাজাত করতেন। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি এটা ‘তারীখুল আওসাত্ব’ কিতাবে বর্ণনা করেন।” আইনুল হিদায়া ১ম জিঃ, ৬৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..
অর্থঃ “প্রত্যেক ফরয নামাযের পর মুনাজাত করার আদেশ রয়েছে, কেননা ফরয নামাযের পর মুনাজাত কবূল হওয়ার স্থান। (অর্থাৎ এরপর মুনাজাত কবূল হয়।।” মিনহাজুল উম্মাল ও আকায়িদুস সুন্নিয়া, তুহ্ফাতুল মারগুবাত কিতাবে উল্লেখ আছে,
ان الدعاء بعد الصلوة المكتوبة منون.
অর্থঃ “নিশ্চয় ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা সুন্নত।” তাহ্যীবুল আয্কার র্লিরমলী, তুহ্ফাতুল মারগুবাত কিতাবে উল্লেখ আছে,
قد اجمع العلماء على استحباب الذكر والدعاء بعد الصلوت وجاءت فيه احاديث كثيرة.
অর্থঃ “আলিমগণ একমত যে, নামাযের পর যিকির ও মুনাজাত করা মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।” মাফাতিহুল জিনান, তুহ্ফাতুল মারগুবাহ্ ও সায়াইয়াহ্ কিতাবে উল্লেখ আছে,
(يدعو) بعد المكتوبة اى قبل السنة.
অর্থঃ “ফরয নামাযের পর, সুন্নতের পূর্বে সকলে মুনাজাত করবে।” তুহ্ফাতুল মারগুবাহ্ কিতাবে উল্লেখ আছে,
وفى شرعة الاسلام ويغتنم اى المصلى الدعاء بعد المكتوبة كذا فى التحفة المرغوبة.
অর্থঃ “শরয়াতুল ইসলাম কিতাবে বর্ণিত রয়েছে- মুছল্লীগণ ফরয নামাযের পর মুনাজাত করাকে গণীমত মনে করবে।” ফতওয়ায়ে সূফীয়াহ্ কিতাবে উল্লেখ আছে,
عن البستى. انه قال فى تفير قوله تعالى فاذا قضيتم الصلوة فاذ كروا الله ……. اى اذ كروا الله تعالى واد عوا بعد الفراغ من الصلوة.
অর্থঃ- “হযরত বুস্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ পাক-এর কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ
-فاذا قضيتم الصلوة فاذ كروا
الله এর তাফসীরে বলেন, অর্থাৎ তোমরা নামায শেষ করে আল্লাহ পাক-এর যিকির কর এবং তাঁর নিকট মুনাজাত কর।” আল ইক্মাল লি আব্দিল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহ্লভী, ইস্তিহবাবুদ্ দাওয়াত, ইমদাদুল ফতওয়া কিতাবে উল্লেখ আছে,
وان منها الدعاء اثر الصلوة وانكر الامام ابن عرفة وجود الصلاف فى ذالكى وقال لا اعرف فيه كراهة دعاء الامام عقب الصلوة وتأمين الحاضرين على دعائه.
অর্থঃ “এবং নিশ্চয় নামাযের পরক্ষণ মুনাজাত কবূলের উত্তম স্থান। ইমাম ইবনে আরফা এ বিষয়ে কোন মতানৈক্য আছে বলে মনে করেন না। তিনি আরো বলেন, নামাযের পর ইমাম ছাহেবের মুনাজাত ও এর উপর উপস্থিতগণের আমীন বলার মধ্যে কোন মাকরূহ্ আছে বলে আমি মনে করিনা।” (চলবে)
মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব গুলবাগ, ঢাকা।
সুওয়ালঃ “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ্ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খ-, পৃ. ১৮০) এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতোয়া দারুল উলুম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গোমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গোমরাহ করার জন্য যথেষ্ট। কারণ আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে তা উত্তম বলা হয়েছে। অর্থাৎ আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করার জন্য الصلاة الصلاة (আছ্ ছলাহ! আছ্ ছলাহ!) নামায! নামায! অথবা قامت قامت (ক্বামাত! ক্বামাত!) নামায আসন্ন, নামায আসন্ন, অথবা التنحنح(আত্তানাহ্নুহ্) গলা খাকড়ানো, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে আহবান করা বা তাছবীব করা সুন্নত, উত্তম ওমুস্তাহ্সান। যার আরো কিছু প্রমাণ নিম্নে পেশ করা হলো- (ধারাবাহিক) “আশরাফুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৩৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..
অর্থঃ “ফজরের নামাযে আযান ও ইক্বামতের মাঝে দু’বার
حى على الصلواة. حى على الفلاح.
(হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্) বলে সকল মানুষদেরকে নামাযের জন্য তাছবীব করা উত্তম।” কেননা ফজরের ওয়াক্তটা হলো ঘুম ও গাফলতির সময়।” “উমদাতুর রিয়ায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে,
التثويب عند المتأخرين مستحسن.
অর্থঃ “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে সকল নামাযেই তাছবীব করা মুস্তাহ্সান।” “বিনায়া ফী শরহিল হিদায়া” কিতাবের ২য় খ-ের ১১২ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে,
استحسان المتأخرين التثويب فى كل الصلوات ليس بلفظ معين ولا شرطوا غير ذلكى اللفظ بل ما ذ كروا متعارف.
অর্থঃ “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ সকল নামাযেই তাছবীব করা মুস্তাহ্সান বলেছেন । তবে তাছবীব করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন শব্দ নেই। এবং ঐ নির্দিষ্ট শব্দ ব্যতীত আর কোন শব্দকে শর্ত করেননি। বরং তাছবীব করার ক্ষেত্রে “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ যা উল্লেখ করেছেন, তা হলো তাছবীব প্রত্যেক শহরের পরস্পরের পরিচিত শব্দ দিয়েই করতে হবে।” “শরহে মুখতাছার র্কাখী লিল্-কুদূরী” কিতাবে উল্লেখ আছে,
ويثوب وهو قائم كالا ذان فى قول أبى حنيفة رحمة الله عليه وأبى يوسف رحمة الله عليه قال الحسن وفيه قول يسكت بعد الاذان ساعة حتى يقول حى على الصلوة حى على الفلاح وبه ناخذ.
অর্থঃ “ইমাম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর এক ক্বওল মতে তাছবীবও আযানের মত দাঁড়িয়ে দিবে। অর্থাৎ আযান যেভাবে দাঁড়িয়ে দেয় তাছবীবও সেভাবে দাঁড়িয়ে দিতে হবে। তবে হযরত হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, তাছবীব করার ব্যাপারে একটা মত আছে, তা হলো আযানের পর কিছুক্ষণ সময় চুপ থাকবে, অতঃপর
حى على الصلوة وحى على الفلاح.
(হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্) বলে তাছবীব করবে। আর وبه ناخذএই মতটি আমরা গ্রহণ করেছি। অর্থাৎআযানের পর কিছুক্ষণ সময় চুপ থাকবে, অতঃপর
حى على الصلوة وحى على الفلاح.
(হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্) বলে তাছবীব করবে। এরই উপর ফতওয়া। “আইনী শরহে হিদায়া” কিতাবের ১ম খ-ের ৫৫০-৫৫১ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে,
أبو يوسف رحمة الله تعالى خصهم بذلكى لزيأدة اشتغالهم بامور المسلمين كيلا تفوتهم الجماعة وعلى هذا القاضى والمفتى.
অর্থঃ “ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র মুসলমানগণের ইছলাহী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন-কাজী সাহেব, মুফতী সাহেব ইত্যাদি ব্যক্তিগণকে যে খাছ করেছেন, তার কারণ হলো মুসলমানদের ইছলাহী কাজে তাঁদের ব্যস্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তাঁদের জামায়াত যেন ফউত হয়ে না যায়।” (কিন্তু এটার উপর ফতওয়া নয়। বরং তাছবীব করার ব্যাপারে মুল ফতওয়া হলো তাখছীছ ছাড়াই আম-খাছ সকল মানুষকে সকল নামাযেই তাছবীব করবে। এটার উপরই ফতওয়া।”) ( চলবে)
মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান টাইগার পাস রোড, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব” …। এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য? জাওয়াবঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহনযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কারন আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে নাফরমানের অন্তর্ভূক্ত হবে। সুতরাং মুয়াজ্জিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া। হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা জিহালতী ও গোমরাহ্ী বৈ কিছূই নয়। রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গোমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। অর্থাৎ রেযাখানীরা আযানের জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে দলীল হিসেবে যে কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে সে সকল কিতাবগুলোতেই আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব বলে উল্লেখ আছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খ-ন সহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে – (ধারাবাহিক) রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত দলীল সমুহের খ-ন মূলক আলোচনা উল্লেখ্য, রেযাখানীরা তাদের মুখপত্রে উল্লেখ করেছে, একটি মাসিক পত্রিকায় “র্দুরুল মুখতার ফী শারহি তানবীরুল আবছার কিতাবের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে- “যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। যদিও সে নাপাক অবস্থায় থাকে।” এর জবাবে বলতে হয় যে, যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। যদিও সে নাপাক অবস্থায় থাকে।” মাসিক পত্রিকার এ বক্তব্যই সঠিক, গ্রহণযোগ্য ও দলীল ভিত্তিক। কারণ যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। যদিও সে নাপাক অবস্থায় থাকে।” এ বক্তব্য শুধুমাত্র “র্দুরুল মুখতার” কিতাবেরই নয়। বরং উক্ত বক্তব্য বিশ্বখ্যাত, সর্বজনমান্য অনেক বড় বড় ফিক্বাহের কিতাবেই উল্লেখ আছে, যেমন, “দুররুল মুখতার ফি শরহে তানবীরুল আবছার” কিতাবে উল্লেখ আছে,
ويجيب وجوبأ ………… من سمع الاذان ولو جنبا …….. بان يقول بلسانه.
অর্থঃ “যে ব্যক্তি আযান শুনবে ….. তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব, যদিও সে জুনুব বা নাপাক অবস্থায় থাকে।” “খোলাছাতুল ফতওয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ومن سمع الا ذان فعليه ان يجيب وان كان جنبأ.
অর্থঃ “যে ব্যক্তি আযান শুনবে, তার উপর ওয়াজিব হলো, মৌখিক আযানের জবাব দেয়া যদিও সে জুনুব বা নাপাক অবস্থায় থাকে।” “গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..
অর্থঃ- “ঐ সকল ব্যক্তিদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব, যে সকল ব্যক্তিরা আযান শুনবে। যদিও সে জুনুব বা নাপাক অবস্থায় থাকে।” “বাহ্রুর রায়িক” কিতাবের ১ম খ-ের ২৫৯ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
وفى الخلاصة ومن سمع الاذان فعليه ان يجيب وان كان جنبا.
অর্থঃ “খুলাছাতুল ফতওয়াঞ্জনামক কিতাবে উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি আযান শুনবে তার জন্য ওয়াজিব হলো আযানের জাওয়াব দেয়া যদিও সে জুনূব বা নাপাক অবস্থায় থাকে।” তাছাড়া হাদীছ শরীফে কাউকে পাক-নাপাক নির্দিষ্ট করা হয়নি। বরং আমভাবে বলা হয়েছে, যে আযান শুনবে সেই আযানের জবাব দিবে। চাই সে নাপাক অবস্থায় থাকুক অথবা পবিত্র অবস্থায় থাকুক। যেমন হাদীছ শরীফের ছহীহ কিতাব “বুখারী শরীফের” ১ম খন্ডের ৮৬ পৃষ্ঠায় ও মুসলিম শরীফের ১ম খন্ডের ১৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن ابى سعيدن الخدرى رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عيله وسلم قال اذا سمعتم النداء فقولوا مثل ما يقول المؤذن.
অর্থঃ “হযরত আবূ সাঈদ খুদরীঞ্জরদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুয়াজ্জিন যা বলে, তোমরাও তাই বল।” (অনুরূপ “তিরমিযী শরীফের” ১ম খ- ২৯ পৃষ্ঠা “আবূ দাউদ শরীফ”-এর ১ম খন্ড ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,) অতএব, প্রমাণিত হলো, যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। যদিও সে নাপাক অবস্থায় থাকে।” মাসিক পত্রিকার এ বক্তব্যই সঠিক, গ্রহণযোগ্য ও দলীল ভিত্তিক। কারণ উক্ত বক্তব্য শুধুমাত্র “র্দুরুল মুখতার” কিতাবেরই নয়। বরং উক্ত বক্তব্য বিশ্বখ্যাত, সর্বজনমান্য অনেক বড় বড় ফিক্বাহের কিতাবেই উল্লেখ আছে। (প্রয়োজনে বিস্তারিত ফতওয়া পেশ করা হবে ইন্শাআল্লাহ্) অপর পক্ষে রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গোমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। (চলবে)
খন্দকার সেলিম আহমদ পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল
সুওয়াল: হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো- ৭. একজন নবীর পক্ষে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সম্ভব নয়। (নাউযুবিল্লাহ) জাওয়াব: হাটহাজারী মৌলভীরা যে বলেছে, একজন নবীর পক্ষে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সম্ভব নয়। তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য অজ্ঞতাসূচক, জিহালতপুর্ণ ও দলীলবিহীন। শুধু তাই নয় বরং কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। কারন তারা নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব থেকে এর প্রমাণ পেশ করতে পারে নাই এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত পারবেও না। (ইন্শাআল্লাহ। মুলতঃ হাটহাজারী মৌলভীরা ও তাদের সমজাতীয়রা আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান-মান, মর্যদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযিলত সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারণেই এ ধরনের কাট্টা কুফরী মুলক মন্তব্য করেছে। কারণ যেখানে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যারা খাদিম ও উম্মত তারাই একই সময়ে একাধিক স্থানে উপস্থিত থাকেন বা উপস্থিত থাকতে পারেন। এর বহু প্রমাণ রয়েছে। যেমন, মালাকুল মউত হযরত আজরাঈল আলাইহিস্ সালাম একই সময়ে একাধিক স্থানে একাধিক লোকের রূহ্ কবয করে থাকেন। অনুরূপভাবে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যাঁরা উম্মত তারাও যে একই সময়ে একাধিক স্থানে উপস্থিত থাকতে পারেন এরও বহু প্রমাণ রয়েছে। যেমন, এ প্রসঙ্গে আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া অর্থাৎ নবীদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু চক্ষু মুবারক বন্ধ করে আরশ, কুরছি, লৌহ, কলম, বেহেশ্ত, দোযখ, জান্নাত, জাহান্নাম সব কিছুই এক চোখের পলকে উপস্থিত হয়ে দেখেছেন। সুবহানাল্লাহ্। (নুযহাতুল মাজালিস) অনুরূপভাবে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ বিশ্ব বরেণ্য মুহাদ্দিস, ওলীয়ে কামিল, হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দেছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আরবী ভাষায় রচিত “যুবদাতুল আসরার” এবং ফার্সী ভাষায় “যুবদাতুল আসার” কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, একবার রমজান মাসে “মাহ্বুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আজম, হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন বড় পীর আব্দুল ক্বাদীর জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি একই দিনে একই সময়ে ৭০ জনের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে ইফতার করেছেন এবং নিজ বাড়িতেও ইফতার করেছেন। (সুবহানাল্লাহ্) দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যাঁরা খাদিম ও উম্মতের অন্তর্ভূক্ত তাদের অবস্থা যদি এরূপ হয়, তাহলে যিনি আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্ষমতা কতটুকু হবে? যা সত্যিই চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়, উপলব্ধির বিষয়, অনুভূতির বিষয়। আক্বল -সমঝের বিষয়। তাছাড়া হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফাযায়েলের বর্ণনা প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর স্বরচিত “মাদারেজুন নবুওওয়াত” গ্রন্থে লিখেছেন,
উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………..
অর্থঃ “হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্মরণ করুন, তাঁর প্রতি দরূদ পেশ করুন, তাঁর যিকির করার সময় এমনভাবে অবস্থান করুন যেন তিনি আপনার সামনে জীবিতাবস্থায় উপস্থিত আছেন, আর আপনি তাঁকে দেখছেন। আদব, মর্যাদা ও শ্রদ্ধা অক্ষুন্ন রেখে ভীত ও লজ্জিত থাকুন এবং এ ধারণা পোষণ করবেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে দেখছেন, আপনার কথাবার্তা শুনছেন। কেননা তিনি আল্লাহ্ পাক-এর গুণাবলীতে গুণান্বিত। আল্লাহ্ পাক-এর একটি গুণ হচ্ছে, আমি (আল্লাহ্ পাক) আমার স্মরণকারীর সঙ্গে অবস্থান করি।” ইমাম আযম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি “কাসিদায়ে নু’মান” নামক প্রশংসামূলক কাব্যগ্রন্থে বলেছেন,
واذا سمعت فعنكى تو لا طيا واذا نظرت ولا ارى الاكى.
অর্থঃ “হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বলছেন, “হে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যখনই আমি কিছু শুনি শুধু আপনার প্রশংসাই শুনি আর যখন কোন দিকে তাকাই তখন আপনি ছাড়া আর কিছুই আমার দৃষ্টিগোচর হয়না।” অর্থাৎ হযরত ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি কুফা নগরে অবস্থানকালীন সময় চতুর্দিকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখতে পেতেন। হযরতুল আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি “এনতেবাহুল আয্কিয়া ফি হায়াতিল আওলিয়া” নামক গ্রন্থের ৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
النظر فى اعمال امته والا ستغفار لهم من السئات والدعاء بكشف البلاء عنهم والتردد فى اقطار الارض والبر كة فيها وحضور جنازة من صالحى امته فان هذه الا مور من اشغاله كما وردت بذ لكى الحديث والاثار.
অর্থঃ “উম্মতের বিবিধ কর্ম-কান্ডের প্রতি দৃষ্টি রাখা, তাদের পাপরাশি ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদেরকে বালা-মুছিবত থেকে রক্ষা করার জন্য দু’আ করা, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আনাগোনা করা ও বরকত দান করা এবং নিজ উম্মতের কোন নেক বান্দার ওফাত হলে তাঁর জানাযাতে অংশগ্রহণ করা এগুলো হচ্ছে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যস্ততার কাজ। অসংখ্য হাদীছ শরীফ থেকেও এসব কথার সমর্থন পাওয়া যায়।” অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত ক্ষমতায় হাযির জানা জায়েয রয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষে একই সময়ে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত থাকা অসম্ভব হয় কি করে? মুলতঃ দুনিয়াস্থিতঃ অনু-পরমানুর প্রতিও হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সার্বক্ষণিক মুবারক দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে। আর মসজিদ, নামায, তিলাওয়াতে কুরআন শরীফ, ছলাত-সালাম, মাহ্ফিলে মীলাদ শরীফ পাঠ, নাতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠের মাহ্ফিলে বিশেষ করে নেককারদের নামাযে জানাযায় এক কথায় যে কোন সময়, যে কোন অবস্থায়, যে কোন স্থানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ব-শরীরে বা মেছালী শরীরে হাযির বা উপস্থিত হতে পারেন এবং ইচ্ছা অনুযায়ী হয়েও থাকেন। আল্লাহ্ পাক হাটহাজারী মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সমজাতীয়দেরকে আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান-মান, মর্যদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযিলত সর্ম্পকের্ চিন্তা-ফিকির করার, উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। আমীন। (চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা। সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই। উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো- ….. (৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী। জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো- ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লেখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খ-মূলক জবাব (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো- (৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবী সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা দলীলবিহীন। কারণ গত দুই সংখ্যায় প্রদত্ত হক্বানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতিমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে তাঁরাই হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী। অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের কথিত আলিমদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলীসমূহের কোনটাই বিদ্যমান নেই। আমরা যদি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি তবে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। যেমন হক্বানী আলিম হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে, ১. দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করা। অথচ ছয় উছূলীদের কথিত আলিমরা নবী-রসূল, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমসহ দ্বীন ইসলামের অনেক বিষয়েই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেনা বরং তার খিলাফ আক্বীদা পোষণ করে। অর্থাৎ তাদের কথিত আলিমদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী এমনকি কুফরীমূলক অনেক আক্বীদাও রয়েছে। যেমন- ৬. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আক্বীদা হলো, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ভুল ত্রুটি করেছেন, যা তাদের আমীর, মুরুব্বী এমনকি হযরতজীদের বয়ানে শোনা যায় ও লেখনীতে পাওয়া যায়। যেমন- “হযরতজীর কয়েকটি স্মরণীয় বয়ান” নামক কিতাবের ৫৩-৫৫ পৃষ্ঠার বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে, “কিছু ছাহাবী ওহুদ যুদ্ধে ভুলের স্বীকার হয়ে চীজ-আসবাব (গণীমতের মাল)-এর দিকে দৃষ্টি দিয়ে, গিরিপথ থেকে সরে এসে রাসূলের নির্দেশ অমান্য করায় ওহুদ যুদ্ধে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে…..।” অর্থাৎ কিছু সাহাবী অর্থলোভী ছিলেন, যার জন্যে ওহুদ যুদ্ধে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ অমান্য করেন। (নাউযুবিল্লাহ) ১৪. মাওলানা ইলিয়াছ সাহেবের মাল্ফুযাতসহ আরো কিছু কিতাবে লেখা আছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত অনন্য ধর্মীয় তরীক্বা, যা সকল দ্বীনী আন্দোলনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত, যার থেকে ভাল তরীক্বা আর হতে পারেনা। নাউযুবিল্লাহ। (হযরতজীর মাল্ফূযাত-২৯ পৃষ্ঠা-২২, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৮৫, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন পৃষ্ঠা-৪৯, তাবলীগ জামায়াতের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত ১ম; খন্ড, পৃষ্ঠা-৫৬) ১৫. টঙ্গীর ইজ্তেমা এলে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের প্রায় লোক সাধারণ লোকদের মাঝে একথা প্রচার করে থাকে যে, “বিশ্ব ইজ্তেমাই হচ্ছে- গরীবের হজ্ব। কেননা টঙ্গীর বিশ্ব ইজ্তেমায় গেলে হজ্বের ছওয়াব পাওয়া যায়। (নাউযুবিল্লাহ) ১৬. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের অনেকের আক্বীদা হলো যে, ধুমপান করা মোবাহ্। (নাউযুবিল্লাহ) যার কারণে তাদের অনেককেই ধূমপান করতে দেখা না গেলেও তাদের মধ্যে যারা ধুমপান করে, তাদের প্রতি বিশেষ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে দেখা যায়না। তাদের সাপ্তাহিক বয়ান এবং বার্ষিক ইজ্তেমায়ও নয়। তদুপরি তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা- ইলিয়াস ছাহেবের বক্তব্যে ধুমপান দ্বারা বা হুক্কা-পানি দ্বারা যাতে দাওয়াতীদিগকে আপ্যায়ন করা হয়, সে পরামর্শ রয়েছে। যা “হজরতজী মাওঃমুহম্মদ ইলিয়াছ” নামক কিতাবের ১৪৪ পৃষ্ঠায় (মূল- সৈয়দ আবুল হাসান নদভী, সংকলক- মুহীউদ্দীন খান, সম্পাদক- মাসিক মদীনা) লিপিবদ্ধ রয়েছে। (চলবে)
নায়ক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক ঢাকা,
সেনানিবাস, ঢাকা।
সুওয়াল: হানাফী মাযহাবে – (১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে। (২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা। (৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়। (৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে। (৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা। (৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে। (৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে। (৮) ইক্বামত আযানের মতোই। আযানে লফ্য বা শব্দগুলো যেরুপ জোড়া জোড়া তদ্রুপ ইক্বামতেও, তবে ইক্বামত আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদ্ক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে। (৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে। (১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে। (১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন। (১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি। কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই। অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন। জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবিহক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে। (৮) ইক্বামত আযানের মতোই। আযানে লফ্য বা শব্দগুলো যেরুপ জোড়া জোড়া তদ্রুপ ইক্বামতেও, তবে ইক্বামত আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদ্ক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে। এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইল্ম্ রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে। (দ্বিতীয় অংশ) ইক্বামত আযানেরই প্রতিধ্বনি। যদি আযান অনুপস্থিত ব্যক্তিদের আহ্বানের জন্য হয়ে থাকে, তাহলে উপস্থিত ব্যক্তিদের আহ্বানের জন্য বিবেক এটা বলে যে, আযান ও ইক্বামত একই ধরনের হতে হবে। হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে আযান ও ইক্বামতের প্রতিটি বাক্য দু’বার করে বলতে হবে। শুধু তাকবীরের বাক্য চারবার বলতে হবে। তিনি উভয়ের ব্যাপারে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়িদ ইবনে আবদে রব্বিহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ দলীল হিসেবে পেশ করেন। যা তারজী’ ও ইফরাদ উভয়কে বাতিল করে থাকে। আবূ দাউদ শরীফে এ হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। বিস্তারিত ইবনে আবী শায়বা ছহীহ সনদের দ্বারা এক রিওয়ায়েত বর্ণনা করে বলেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে হাযির হয়ে বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে সবুজ চাদর পরিধান করা অবস্থায় দেখি। তিনি দেয়ালের উপর দাড়িয়ে দু’বার দু’বার প্রতিটি বাক্য উচ্চারণ করে আযান ও ইক্বামত দিচ্ছেন। আর এ বিষয়ে হাদীছ শরীফ মুতাওয়াতির পর্যন্ত পৌঁছেছে যে, হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইনতিকাল পর্যন্ত আযান ও ইক্বামতে প্রতিটি বাক্য দু’বার করে উচ্চারণ করতেন। দ্বিতীয়তঃ আবূ দাউদ, নাসায়ী দারিমী ও অন্যান্য হাদীছ শরীফগ্রন্থে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফেও আযানের শব্দ দু’বার বলে উল্লেখ আছে। তৃতীয়তঃ আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় মুয়ায্যিন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর আযান এ বিষয়ে শক্তিশালী দলীল। কেননা তাঁর আযানে তারজী’ ছিল না। চতুর্থতঃ নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দ্বিতীয় মুয়ায্যিন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর আযানেও তারজী’ ছিল না। একইভাবে কূবা মসজিদের মুয়ায্যিন হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর আযানেও তারজী’ ছিল না। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
عن ابن بريدة رضى الله تعالى عنه ان رجلا من الانصار مر بر سول الله صلى الله عليه وسلم فرأه حزينا وكان الرجل اذا طعم يجمع اليه فانطلق حزينا بما راى من حزن رسول الله صلى الله عليه وسلم فتركى طعامه وما كان يجتمع اليه ودخل مسجده يصلى فبينما هو كذلكى اذا نعس فاتاه ات فى النوم فقال هل علمت مما حزن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لا قال فهو لهذا التأذين فأته فمره ان يأمر بلالا ان يؤذن فعلمه الاذان الله اكبر الله اكبر مرتين اشهد ان لا اله الا الله مرتين اشهد ان محمدا رسول الله مرتين حى على الصلوة مرتين حى على الفلاح مرتين الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله ثم علمه الاقامة مثل ذلكى وقال فى اخره قد قامت الصلوة قد قامت الصلوة مرتين الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله كاذان الناس واقامتهم فاقبل الانصرى فقعد على باب النبى صلى الله عليه وسلم فمر ابو بكر فقال اتأذن لى وقد راى مثل ذلكى فاخبر به النبى صلى الله عليه وسلم ثم استأذن للانصارى فدخل فاخبر بالذى راى فقال النبى صلى الله عليه وسلم قد اخبر نا ابو بكر مثل ذلكى فامر بلالا يؤذن بذلكى.
অর্থঃ হযরত ইবনে বুরায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, একজন আনছারী ছাহাবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে হাযির হলেন এবং তাঁকে চিন্তাযুক্ত দেখতে পেলেন। এ ব্যক্তি (আনছারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) ধনী ও সম্পদশালী ছিলেন। দরিদ্র লোকজন তাঁর বাড়িতে জমা হতো। তিনি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চিন্তাযুক্ত দেখে সেখান থেকে চলে গেলেন। পানাহার ত্যাগ করে এবং আত্মীয়-স্বজন ও তাঁর নিকট আগত লোকজন ছেড়ে তিনি মহল্লার মসজিদে গিয়ে নামায পড়া আরম্ভ করেন। এ অবস্থায় তাঁর তন্দ্রা এসে যায় এবং স্বপ্নে দেখেন যে, কোন একজন ব্যক্তি এসে তাঁকে বলল, আপনি কি জানেন রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন চিন্তিত হয়েছেন? তিনি বললেন, না। তখন আগন্তুক বললেন, এ আযানের ব্যাপারে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। আপনি তাঁর কাছে যান এবং বলুন, তিনি যেন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আযান দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। অতঃপর ঐ ব্যক্তি তাঁকে এভাবে আযান শিক্ষা দিলেন
الله اكبر الله اكبر (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার) দু’বার করে চারবার।
اشهدان لا اله الا الله
(আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) দুবার
اشهد ان محمدا رسول الله
(আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ) দু’বার। حى على الصلوة (হাইইয়া আলাছ্ছলাহ) দু’বার। حى على الفلاح (হাইইয়া আলাল ফালাহ) দু’বার।
الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله
(আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।) অতঃপর তাকে একইভাবে ইক্বামত শিক্ষা দেন এবং আযানের শেষে অর্থাৎ হাইইয়া আলাল ফালাহ-এর পর
قد قامت الصلوة. قد قامت الصلوة مرتين الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله.
(ক্বদ্ক্বামাতিছ্ ছলাহ, ক্বদ্ক্বামাতিছ্ ছলাহ) দু’বার। (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) সংযোগ করেন। (বর্ণনাকারী বলেন) যেভাবে বর্তমানে লোকজন আযান ও ইক্বামত দিয়ে থাকে। অতঃপর এ আনছারী (হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়িদ ইবনে আবদে রব্বিহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) মসজিদ থেকে বের হয়ে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরজা মুবারকে বসেন। ইতোমধ্যে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সেখানে আগমন করেন। আনছারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁকে বললেন, আমার জন্য একটু অনুমতি প্রার্থনা করুন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও এ স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তা বর্ণনা করেন। অতঃপর আনছারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে অনুমতি দেয়া হল। তখন আনছারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রবেশ করলেন এবং স্বপ্নে যা দেখেছিলেন, তা বর্ণনা করলেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও অনুরূপ স্বপ্নের কথা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে এভাবে আযান দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।” (মুসনাদে ইমাম আয’ম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি) সাধারণতঃ আযানের বিধান প্রবর্তন করা হয় অনুপস্থিত মুছল্লীদেরকে মসজিদে জামায়াতে হাযির হওয়ার জন্য। আর ইক্বামতের উদ্দেশ্য উপস্থিত মুছল্লীদেরকে জানিয়ে দেয়া যে, জামায়াত শুরু হচ্ছে। তাই ইক্বামত অপেক্ষা আযান উচ্চ বা বুলন্দ আওয়াযে দেয়ার নিয়ম। এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে- যখন আনছারী ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আযানের কালামগুলি স্বপ্নে দেখে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানালেন তখন আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন-
ان صاحبكم قد راى رؤيا فاخبرج مح بلال الى المسجد فالقها عليه وليناد بلال فانه اندى صوتا.
অর্থঃ নিশ্চয়ই তোমাদের যিনি ছাহিব হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও সেটা দেখেছেন অতঃপর তিনি হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সাথে নিয়ে মসজিদে গেলেন অতঃপর তাঁকে আযানের বাক্যগুলি জানালেন। তখন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বুলন্দ আওয়াজে আযান দিলেন। মূলত তিনি ছিলেন বুলন্দ আওয়াজের অধিকারী। (ইবনে মাজাহ)
ডাঃ মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন ৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা,
জানাইকা এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪
সুওয়ালঃ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাউযুবিল্লাহ) এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান- আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি। জাওয়াবঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত। কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভূক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়। নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফ এবং বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে। মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহু, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা। এ সম্পর্কে কতিপয় বর্ণনা এখানে পেশ করা হলো- ১৭. বুযুর্গ বান্দা তথা নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও ওলী-আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা এমন বিষয় সেটা মুসলমান তো বটে কাফির, মুশরিক, মুনাফিক এমনকি জীব-জন্তু পর্যন্ত বিশ্বাস করতো। দেখুন সূরা যুখরূফ-এর ৪৯ ও ৫০ নম্বর আয়াত শরীফ। ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের লোকদের উপর যখন আযাব-গযব আসতো তখন তারা আল্লাহ পাক-এর নবী ও রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম-এর নিকট দুয়ার জন্য নিবেদন করতো। ইরশাদ হয়েছে-
وقالوا يايه الساحر ادع لنا ربكى بما عهد عند كى اننا لمهتدون. فلما كشفنا عنهم العذاب.
অর্থঃ “তারা বললো, হে যাদুকর! (নাউযুবিল্লাহ) আপনি আমাদের জন্য আপনার পালনকর্তার নিকট সে বিষয় দুয়া করুন যার ওয়াদা তিনি আপনাকে দিয়েছেন। আমরা অবশ্যই সৎপথ অবলম্বন করবো। (হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম-এর দুয়ার বদৌলতে) আল্লাহ পাক তাদের থেকে আযাব অপসারিত করে দেন।” অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
ولما وقع عليهم الرجز قالوا يموسى ادع لنا ربكى بما عهد عندكى لئن كشفت عنا الرجز لنؤمنن لكى ولنرسلن معكى بنى اسرائيل.
অর্থঃ “এবং যখন তাদের উপর গযব আসতো তারা বলতো, হে মূসা আলাইহিস্ সালাম! আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট আমাদের জন্য দুয়া করুন আপনার সাথে তিনি যে অঙ্গীকার করেছেন সে অঙ্গীকার মুতাবিক। আপনি যদি আমাদের উপর থেকে এ গযব সরিয়ে দেন তাহলে অবশ্যই আপনার উপর আমরা ঈমান আনবো এবং আপনার সাথে বনী-ইসরাইলদেরকে যেতে দিব। (সূরা আ’রাফ-১৩৪) ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে, প্রথমবার যখন ফিরআউনের সম্প্রদায়ের উপর গযব হিসেবে দুর্ভিক্ষ চেপে বসে এবং হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম-এর দুয়ায় তা রহিত হয়ে যায়, কিন্তু তারা নিজেদের ঔদ্ধত্য বিরত হয় না, তখন হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম প্রার্থনা করেন, হে আমার প্রতিপালক, এরা এতই ঔদ্ধত যে, দুর্ভিক্ষের আযাবেও প্রভাবিত হয়নি; নিজেদের কৃত প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছে। এবার তাদের উপর এমন কোন আযাব চাপিয়ে দিন, যা হবে তাদের জন্য বেদনাদায়ক এবং আমাদের জাতির জন্য উপদেশের কাজ করবে ও পরবর্তীদের জন্য যা হবে শিক্ষণীয়। তখন আল্লাহ পাক প্রথমে তাদের উপর নাযিল করেন গযব হিসেবে তুফান। প্রখ্যাত মুফাস্সিরগণের মতে তুফান অর্থ পানির তুফান অর্থাৎ, জলোচ্ছাস। তাতে ফিরআউনের সম্প্রদায়ের সমস্ত ঘর-বাড়ী ও জমি-জমা জলোচ্ছাসের আবর্তে এসে যায়। না থাকে কোথাও শোয়া-বসার জায়গা, না থাকে জমিতে চাষ-বাসের কোন ব্যবস্থা। আরো আশ্চর্যের বিষয় ছিল এই যে, ফিরআউন সম্প্রদায়ের সঙ্গেই ছিল বনী-ইসরাঈলদেরও জমি-জমা ও ঘর-বাড়ী। অথচ বনী-ইসরাঈলদের ঘর-বাড়ী, জমি-জমা সবই ছিল শুষ্ক। সেগুলোর কোথাও জলোচ্ছ্বাসের পানি ছিল না, অথচ ফিরআউন সম্প্রদায়ের জমি ছিল অথৈ পানির নীচে। এই জলোচ্ছ্বাসে ভীত হয়ে ফিরআউন সম্প্রদায় হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম-এর নিকট প্রার্থনা করল যে, আপনার প্রতিপালকের দরবারে দুয়া করুন যাতে এ আযাব দূর হয়ে যায়, তাহলে আমরা ঈমান আনব এবং বনী-ইসরাঈলদেরকে মুক্ত করে দিব। হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম-এর দুয়ায় জলোচ্ছ্বাসের তুফান রহিত হয়ে গেল। উল্লেখিত আয়াত শরীফের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হলো যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম এবং উনাদের যারা প্রকৃত নায়িব বা ওয়ারিছ হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের দুয়ার ওসীলায় আল্লাহ পাক বান্দাদের উপর থেকে আযাব-গযব দূরিভুত করে দেন। (চলবে)