সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৭৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।

মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন, মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।

সুওয়াল:   ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খ-ন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো- … ৪. ইসলামী স্বর্ণযুগে এবং তৎপরবর্তীতে ফুক্বাহায়ে কিরাম ও হাদীছ বিশারদগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। তাই তা হযরত মুফতিয়ানে কিরামের ঐক্যমতে বিদয়াত। (নাঊযুবিল্লাহি মিনাল কাযিবীন) এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাট হাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।  (ধারাবাহিক) জাওয়াবঃ   হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য শুধু ডাহা মিথ্যাই নয় বরং সম্পূর্ণরূপেই মনগড়া, দলীলবিহীন ও বিভ্রান্তিকর। শুধু তাই নয়, তার পাশাপাশি স্বয়ং আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম, ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের প্রতি মিথ্যারোপ করার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। স্মর্তব্য যে, হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।  (১) স্বর্ণযুগে কেউ ফরজ নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি।  (২) তৎপরবর্তিতে অর্থাৎ স্বর্ণযুগের পর থেকে অদ্যবধি ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করেননি।   (৩) সকল মুফতিয়ানে কিরাম ঐক্যমত হয়ে ফতওয়া দিয়েছেন যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদয়াত বা নাজায়িয।  (নাঊযুবিল্লাহ) উল্লেখ্য, হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবরা তাদের উল্লিখিত তিনটি বক্তব্যের কোন একটিও নির্ভরযোগ্য কিতাবের ইবারত বা দলীল দ্বারা প্রমাণ করতে পারেনি এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও তা প্রমাণ করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। সুতরাং এমনিতেই তাদের উল্লিখিত বক্তব্যগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও পরিত্যাজ্য বলে সাব্যস্ত হয়। এরপরও আমরা তাদের উল্লিখিত প্রতিটি বক্তব্য দলীলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট ও কুফরীমূলক বলে প্রমাণ করবো। ইনশাআল্লাহ।  হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের দ্বিতীয় বক্তব্য হলো- (২) তৎপরবর্তিতে অর্থাৎ স্বর্ণযুগের পর থেকে অদ্যবধি ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করেননি।  এর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, “স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরজ নামাযের পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নিয়ে হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন” এটা হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পর অন্য কোন দলীলের কোনই প্রয়োজন নেই। বরং এ ক্ষেত্রে অন্য কোন দলীল তালাশ করা কুফরী বৈ কিছুই নয়। দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, “ফুক্বাহায়ে কিরামগণের ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরয নামাযের পর মুনাজাত করেননি।” হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য চরম মিথ্যা, বানোয়াট ও ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের শানে সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল। কারণ তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে একটি দুর্বল থেকে দূর্বলতম দলীলও পেশ করতে পারেনি এবং তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোশেশ করলেও উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল তারা পেশ করতে পারবে না। পক্ষান্তরে অনুসরনীয় সকল মুহাদ্দিছীনে কিরাম ও ফুক্বাহায়ে কিরাম যে ফরয নামাযের পর মুনাজাত করাকে সমর্থন করেছেন, মুস্তাহাব সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছেন এবং নিজেরাও করেছেন তার বহু প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। যা অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে ও অনেক সংখ্যাতেই পত্রস্থ হয়েছে। শুধু তাই নয়, হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের কথিত মুরুব্বীরাও “ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। নিম্নে তার কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো-  (পঞ্চম অংশ) উক্ত “ফতওয়ায়ে রহীমিয়া” ৪ খ-, ২২৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………….

অর্থঃ “ফরয নামাযের পর ইমাম ও মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার মধ্যে বহু ফযীলত রয়েছে। আর এটার সুন্নতি পদ্ধতি হলো ইমাম ও মুক্তাদী অল্প আওয়াজে মুনাজাত করবে।”  “ইখতিলাফে উম্মত আওর ছিরাতে মুস্তাকীম”-এর ১২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………….

অর্থঃ “শরীয়তের নির্দেশ হলো, যে সকল ইবাদত সম্মিলিতভাবে করা হয়, এরপর মুনাজাতও সম্মিলিতভাবে করবে।”  “কিফায়াতুল মুফতী”-এর ৩য় খ- ২৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

  উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………….

 অর্থঃ “সুন্নত এবং নফল নামাযের পরও একাকী বা সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা প্রত্যেকের জন্য জায়িয। তবে শর্ত হলো- জরুরী বা সুন্নতে মুয়াক্কাদা মনে করা যাবেনা। আর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার উত্তম পদ্ধতি হলো- ফরয নামাযের পর সুন্নত ও নফল নামাযের পূর্বে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা।” (নাফায়িসুল মারগুবা) গত তিন সংখ্যা ও বর্তমান সংখ্যায় প্রদত্ত দলীল আদিল্লাহ’র ভিত্তিতে এটাই সাব্যস্ত হয় যে, অনুসরনীয় সকল ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরাম “ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন”। আর করেছেন বলেই তাঁরা তাঁদের কিতাবসমূহে ফরয নামাযের পর মুনাজাতের স্বপক্ষে বা সমর্থনে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করেছেন এবং ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। সুতরাং হাটহাজারী মৌলভী ছাহেব যে লিখেছে “তৎপরবর্তিতে অর্থাৎ স্বর্ণযুগের পর থেকে অদ্যবধি ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করেননি।” তাদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, গুমরাহীমূলক ও দলীলবিহীন বলে প্রমাণিত হলো।   (চলবে)

মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব গুলবাগ, ঢাকা। সুওয়ালঃ  “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফিকাহ্ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।”  (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খ-, পৃ. ১৮০) এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা  তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।   জাওয়াবঃ “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতোয়া দারুল উলুম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গুমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গুমরাহ করার  জন্য যথেষ্ট। কারণ আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফিকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে  তা উত্তম বলা হয়েছে।  অর্থাৎ আযানের পর  পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা  তাছবীব করার জন্য  الصلاة الصلاة   (আছ্ ছলাহ! আছ্ ছলাহ!)    নামায! নামায! অথবা  قامت قامت  (ক্বামাত! ক্বামাত!) নামায আসন্ন, নামায আসন্ন, অথবা  التنحنح (আত্তানাহ্নুহ্) গলা খাকড়ানো, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে আহবান করা বা তাছবীব করা সুন্নত, উত্তম ও মুস্তাহ্সান। যার আরো কিছু প্রমাণ নিম্নে পেশ করা হলো- (ধারাবাহিক) “বিনায়া ফী শরহিল হিদায়া” কিতাবের ২য় খণ্ডের ১১২ পৃষ্টায়  উল্লেখ আছে,

العلماء المتأخرون استحسنوا التثويب فى الصلوات كلها ظهور التوانى فى اامور الدينية.

অর্থঃ “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ  দ্বীনী কাজে তথা বিশেষ করে নামাযে মানুষের অলসতা বা গাফলতী  প্রকাশের কারণেই সকল নামাযেই তাছবীব করা মুস্তাহ্সান বলেছেন ।”  “আইনী শরহে হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৫০ পৃষ্টায়  উল্লেখ আছে,

استحان المتأخرين التثويب فى كل الصلوات ليس بلفظ معين وا شرطوا غير ذلك اللفظ بل ما ذكروا متعارف.

 অর্থঃ “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের  মতে   সকল নামাযেই তাছবীব করা মুস্তাহ্সান ।  তবে তাছবীব করার  ক্ষেত্রে   নির্দিষ্ট  কোন  শব্দ নেই।  এবং ঐ নির্দিষ্ট  শব্দ ব্যতীত আর কোন শব্দকে শর্ত করেননি। বরং তাছবীব করার ক্ষেত্রে  “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ যা উল্লেখ করেছেন, তা হলো তাছবীব প্রত্যেক শহরের  পরস্পরের পরিচিত শব্দ দিয়েই করতে হবে।” “হিদায়া মায়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

 أبويوسف رحمه الله تعالى خصهم بذلك لزيادة اشتفالهم بامور المسلمين كيا تفوتهم الجماعة و هذا القاضى والمفتى.

 অর্থঃ “ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি  তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র মুসলমানগণের ইছলাহী কাজে নিয়োজিত  ব্যক্তি যেমন- কাজী সাহেব, মুফতী সাহেব  ইত্যাদি ব্যক্তিগণকে যে  খাছ করেছেন, তার কারণ হলো মুসলমানদের  ইছলাহী কাজে তাঁদের ব্যস্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তাঁদের জামায়াত যেন ফউত হয়ে না যায়।”  (কিন্তু এটার উপর ফতওয়া নয়। বরং তাছবীব করার ব্যাপারে মুল ফতওয়া হলো তাখছীছ ছাড়াই আম-খাছ সকল মানুষকে সকল নামাযেই তাছবীব করবে। এটার উপরই ফতওয়া।”) “বিনায়া ফী শরহিল হিদায়া” কিতাবের ২য় খণ্ডের ১১২ পৃষ্টায়  আরো উল্লেখ আছে,

وفى شرح مختصر الكرخى للقدورى: ويثوب وهو فائم كالاذان فى قول أبى حنيفة رحمة الله عليه وأبى يوسف رحمة الله عليه قال الحسن وفيهقول يسكت بعد الاذان ساعة حتى يقول حى على الصلوة حى على الفلاح وبه ناخذ.

অর্থঃ “শরহে মুখতাছার র্কাখী লিল্-কুদূরী” কিতাবে উল্লেখ আছে, ইমাম আবূ হানীফা  রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর এক ক্বওল মতে তাছবীবও আযানের মত দাঁড়িয়ে দিবে। অর্থাৎ আযান যেভাবে দাঁড়িয়ে দেয় তাছবীবও সেভাবে দাঁড়িয়ে দিতে হবে।  তবে হযরত হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, তাছবীব করার ব্যাপারে একটা মত আছে, তা হলো আযানের পর কিছুক্ষণ সময় চুপ থাকবে, অতঃপর  حى على الصلوة وحى على الفلاح. (হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্) বলে তাছবীব করবে। আর  وبه ناخذএই মতটি আমরা গ্রহণ করেছি। অর্থাৎ আযানের পর কিছুক্ষণ সময় চুপ থাকবে অতঃপর  حى على الصلوة وحى على الفلاح. (হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্) বলে তাছবীব করবে। এরই উপর   ফতওয়া।”  “আইনী শরহে হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৫০-৫৫১ পৃষ্টায়  উল্লেখ আছে,

  وقال أبو يوسف رحمة الله تعالى لا أرى بأسا أن يقول المؤذن للامير فى الصلوات كلها السلام عليك أيها الامير ورحمة الله وبركاته حى على الصلاة حى على الفلاح الصلاة يرحمك الله واستبعده محمد رحمه الله تعالى لأن الناس سواسية فى امر الجماعة.

অর্থঃ “ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহিঞ্জবলেন, মুয়াজ্জিন সাহেব যদি আযানের পর  সকল  নামাযেই আমীর-উমারাদেরকে اسلام عليك أيها الامير حى على الصلاة وحى على الفلاح. (আস্সালামু আলাইকা আইয়্যুহাল আমীর, হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্) الصلاة  (আছ্ ছলাহ يرحمك الله (ইয়ারহামুকাল্লাহু) বলে তাছবীব করে, তাহলে আমি এতে কোন অসুবিধা মনে করি না। তবে ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর  উক্ত মতকে অসম্ভব মনে করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ জামায়াতের আদেশের ব্যাপারে সকল মানুষ সমান। (কাজেই তাছবীব করার ব্যাপারে শুধুমাত্র আমীর-উমরা, মুফতী, কাজী সাহেবদেরকে খাছ করা যায় না। বরং আমভাবে সকল মানুষকে তাছবীব করা মুস্তাহ্সান।”)  (চলবে)  মুহম্মদ  মুশফিকুর  রহমান টাইগার পাস রোড, চট্টগ্রাম সুওয়ালঃ  চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব” …। এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য? জাওয়াবঃ   আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহনযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কারন আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই  আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে নাফরমানের অন্তর্ভূক্ত হবে।  সুতরাং মুয়াজ্জিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া।   হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা জিহালতী ও গুমরাহ্ী বৈ কিছূই নয়।   রেযাখানী  মৌলভী ছাহেবরা  “আযানের  মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গুমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে।  অর্থাৎ রেযাখানীরা আযানের জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে দলীল হিসেবে যে কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে সে সকল কিতাবগুলোতেই আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব বলে উল্লেখ আছে।     নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খ-ন সহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে –  (ধারাবাহিক) রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত দলীল সমুহের খ-ন মূলক আলোচনা  উল্লেখ্য, রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। কারণ তাদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। নিম্নে রেযাখানীদের হুবহু বক্তব্য তুলে ধরে তার সঠিক জবাব উল্লেখ করা হলোঃ  যেমন, রেযাখানীরা বলেছে, “আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব।”  এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য যে, ডাহা মিথ্যা এবং দলীল বিহীন তা আমরা আমাদের মাসিক আল বাইর্য়্যিনাতে বিগত সংখ্যায় প্রমাণ করেছি । কারণ তারা  তাদের বক্তব্যের  স্বপক্ষে দলীল হিসেবে ‘আল ফিক্বহু আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া’ কিতাবের বরাত দিয়েছে,   অথচ আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব। ধরনের কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা, কোন ইবারত তাদের উল্লিখিত “আল ফিক্বহু আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া” কিতাবের ইবারতে উল্লেখ নেই।  সুতরাং প্রমাণিত হলো রেযাখানীদের  বক্তব্যের সাথেঞ্জকিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। অতএব রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের ইবারত  ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে।এট তাদের  প্রথম ধোকা । দ্বিতীয়তঃ জামায়াত যেখানে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্। সেখানে জামায়াতে শরীক হওয়ার জন্য  গমন করা ওয়াজিব হয় কি করে। কারণ নির্ভরযোগ্য সকল ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে এ কথাই উল্লেখ আছে যে, “জামায়াত হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা”। অর্থাৎ জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।            বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাবগুলোতে মূল ফতওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা হিসেবে উল্লেখ আছে। যেমন, বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব-       “বেনায়া” কিতাবের ২য় খ-ে ৩৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ان الجماعة سنة مؤكدة …………… ودل عى ان الجماعة ليست يواجية.

 অর্থঃ “নিশ্চয়ই জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। … আর এটাই দালালত করে যে, জামায়াতে নামায পড়া ওয়াজিব নয়।”  আর “কেউ কেউ যে ওয়াজিব বলেছেন” এর জবাব হলো এখানে ওয়াজিবের অর্থ এই যে, সুন্নতে মুয়াক্কাদাটি ফায়দা দানের ক্ষেত্রে ওয়াজিব। কিন্তু হাক্বীক্বতান বা প্রকৃত অর্থে ওয়াজিব নয়।        যেমন “ফতহুল কাদীর” কিতাবের ১ম খণ্ডের৯৯ পৃষ্ঠায় হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

 لكن يفيد الوجوب كما ذهب اليه عامة مشايخنا.

অর্থাৎ- জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা এটা ওয়াজিবের ফায়দা দিবে। আমাদের অধিকাংশ মাশায়িখগণ এ ফতওয়া দিয়েছেন। “কাশফুল হাকায়িক্ব শরহে কানযুদ্ দাকায়িক্ব” কিতাবের ১ খণ্ডের ০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………….

অর্থঃ “ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ লিখেছেন যে, জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটা ওয়াজিবের নিকটবর্তীর হুকুম রাখে।”   “নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়িল” কিতাবের ২৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

  উদূ লেখা ঢুকবে………………………………………….

অর্থঃ “জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা ওয়াজিবের নিকটবর্তী; এটাই প্রসিদ্ধ বা মশহুর ফতওয়া। ঞ্জ“তিরমিযী শরীফের” ১ম খণ্ডের ৩০ পৃষ্ঠার ২ নং হাশিয়ায় হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,,

وقال ابن حجر لادليل فيه لوجوبالجماعة.

অর্থঃ “ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, জামায়াত ওয়াজিব হওয়ার জন্য এতে কোন দলীল নেই।”          “আইনী” কিতাবের ১ম খন্ডের ৭১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ان الجماعة سنة مؤكدة …… ودل على .. الجماعة ليست بواجبة. অর্থঃ “নিশ্চয়ই জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। … আর এটাই দালালত করে যে, জামায়াতে নামায পড়া ওয়াজিব নয়।” “মিরকাত শরীফের” ৩য় খণ্ডের ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

والاصح انها سنة مؤكدة وعليه الاكثرون.

 অর্থঃ “অধিক ছহীহ্ মতে নিশ্চয়ই জামায়াত অর্থাৎ জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আর এর উপরেই অধিকাংশগণের ফতওয়া।”      অনুরূপ “তুহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী” কিতাবেও জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলা হয়েছে। অতএব আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া হলো, জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। সুতরাং জামায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ হলে, আযান শুনে জামায়াতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা কি করে ওয়াজিব হতে পারে অর্থাৎ ওয়াজিব হতে পারে না।  অতএব রেযাখানীরা যে বলেছে, আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব। ইহা তাদের দলীল বিহীন দ্বিতীয় ধোকা।   কারণ এ ধরনের কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা, কোন ইবারত তাদের উল্লিখিত “আল ফিক্বহু আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া” কিতাবের ইবারতে উল্লেখ নেই।  (চলবে)  খন্দকার সেলিম আহমদ পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল সুওয়াল:  হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।  তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-  ৭. একজন নবীর পক্ষে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সম্ভব নয়।  (নাঊযুবিল্লাহ)া  জাওয়াব: হাটহাজারী মৌলভীরা  যে বলেছে,  একজন নবীর পক্ষে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সম্ভব নয়। তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য অজ্ঞতাসূচক, জিহালতপুর্ণ ও দলীলবিহীন। শুধু তাই নয় বরং কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। কারণ তারা নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব থেকে এর প্রমাণ পেশ করতে পারে নাই এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত পারবেও না। (ইন্শাআল্লাহ) মুলতঃ হাটহাজারী মৌলভীরা ও তাদের সমজাতীয়রা আখিরী নবী,  সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযিলত সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারণেই এ ধরনের কাট্টা কুফরীমুলক মন্তব্য করেছে। কারণ যেখানে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যারা খাদিম ও উম্মত তারাই একই সময়ে একাধিক স্থানে উপস্থিত থাকেন বা উপস্থিত থাকতে পারেন। এর বহু প্রমাণ রয়েছে। যেমন, মালাকুল মউত হযরত আজরাঈল আলাইহিস্ সালাম একই সময়ে একাধিক স্থানে একাধিক লোকের রূহ্ কবয করে থাকেন।  অনুরূপভাবে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যাঁরা উম্মত  তারাও যে একই সময়ে একাধিক স্থানে  উপস্থিত থাকতে পারেন এরও বহু প্রমাণ রয়েছে। যেমন, এ প্রসঙ্গে আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া অর্থাৎ নবীদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু চক্ষু মুবারক বন্ধ করে আরশ, কুরছি, লৌহ, কলম, বেহেশ্ত, দোযখ, জান্নাত, জাহান্নাম সব কিছুই  এক চোখের পলকে উপস্থিত হয়ে দেখেছেন।   সুবহানাল্লাহ্। (নুযহাতুল মাজালিস)    অনুরূপভাবে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ  বিশ্ব বরেণ্য মুহাদ্দিস, ওলীয়ে কামিল, হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দেছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আরবী ভাষায় রচিত “যুবদাতুল আসরার” এবং ফার্সী ভাষায় “যুবদাতুল আসার” কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে,  একবার রমজান মাসে  “মাহ্বুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আজম, হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন বড় পীর আব্দুল ক্বাদীর জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি একই দিনে একই সময়ে ৭০ জনের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে ইফতার করেছেন এবং নিজ বাড়িতেও ইফতার করেছেন। (সুবহানাল্লাহ্)   দ্বিতীয়তঃ  আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যাঁরা খাদিম ও উম্মতের অন্তর্ভূক্ত তাদের অবস্থা যদি এরূপ হয়, তাহলে যিনি আখিরী নবী,  সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্ষমতা কতটুকু হবে? যা সত্যিই চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়, উপলব্ধির বিষয়, অনুভূতির বিষয়। আক্বল -সমঝের বিষয়।      তাছাড়া  হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফাযায়েলের বর্ণনা প্রসঙ্গে শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর স্বরচিত “মাদারেজুন নবুওওয়াত” গ্রন্থের ২য় খন্ডের ৪৫০ পৃষ্ঠায় হায়াতে আম্বিয়া শীর্ষক পরিচ্ছদে উল্লেখ করেন,

 উদূ লেখা ঢুকবে……………………………………………

 অর্থঃ “এরপর যদি বলা হয় যে, আল্লাহ্ পাক হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র শরীর মুবারকে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করেছেন ও এমন এক শক্তি দান করেছেন যে, তিনি যেখানে ইচ্ছা করেন সেখানে স্ব-শরীরে বা অনুরূপ কোন শরীর ধারণ করে অনায়াসে গমণ করতে পারেন। কবরের মধ্যে হোক বা আসমানের উপর হোক এ ধরণের কথা সঠিক ও বাস্তবসম্মত। তবে, সর্বাবস্থায় রওজা শরীফ-এর সাথে বিশেষ সম্পর্ক বজায় থাকে।”     “তাফসীরে রুহুল বয়ান” কিতাবে সূরা মুলকের শেষে বর্র্ণিত আছে,

 قال الا مام الغز الى رحمة الله عليه والرسول عليه السلام له الخيار فى طواف العالم مع ارواح الصحابة لقد راه كثيرمن الاولياء.

  অর্থঃ “হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর রূহসমেত হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জগতে পরিভ্রমণের ইখতিয়ার আছে বিধায় আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম তাকে দেখছেন, দেখেন ও দেখবেন।”    “ফতহুল কবীর” ১ম খন্ডের, ৩৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ان الله تعالى قد رفع لى الدنيا فانا انظر اليها والى ماهو كائن فيها الى يوم القيامة كانما انظر الى كفى هذا.

অর্থঃ “হযরত তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত নঈম ইবনে ওমর রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ পাক এই পৃথিবীকে আমার চোখের সামনে এরূপভাবে রেখেছেন যে, আমি এ সমগ্র পৃথিবীকে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার মধ্যে যা কিছু সৃজিত হবে তদসমূহকে এমনভাবে দেখি যেন তা সবই আমার হাতের মধ্যে।” (অনুরূপ শরহে মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া কিতাবে উল্লেখ আছে)         মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ “মিরকাত শরীফে” আল্লামা হযরত ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

 وقال الغزالى رحمة الله عليه سلم عليه اذا دخلت فى المتجد فانه عليه السلام يحضرفى المسجد.

অর্থঃ “হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, আপনি যখন মসজিদে প্রবেশ করবেন তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামকে সশ্রদ্ধ সালাম দিবেন। কারণ তিনি মসজিদসমূহে হাযির আছেন।”  যদি তাই হয়, তাহলে পৃথিবীতে লক্ষ- লক্ষ, কোটি-কোটি, মসজিদ আছে।  পৃথিবীর সেই  লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি, মসজিদসমূহে একই সময়ে উপস্থিত থাকলে, একই সময়ে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত থাকা অসম্ভব হয় কি করে?    মুলতঃ দুনিয়াস্থিতঃ অনু-পরমানুর প্রতিও হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সার্বক্ষণিক মুবারক দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে। আর  মসজিদ, নামায, তিলাওয়াতে কুরআন শরীফ, ছলাত-সালাম, মাহ্ফিলে মীলাদ শরীফ পাঠ, নাতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠের মাহ্ফিলে বিশেষ করে নেককারদের নামাযে জানাযায়  এক কথায় যে কোন সময়, যে কোন অবস্থায়, যে কোন স্থানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ব-শরীরে  বা মেছালী শরীরে হাযির বা উপস্থিত  হতে পারেন এবং ইচ্ছা অনুযায়ী হয়েও থাকেন। আল্লাহ্ পাক  হাটহাজারী মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সমজাতীয়দেরকে আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান-মান, মর্যদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযিলত সর্ম্পকের্ চিন্তা-ফিকির করার, উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। আমীন।  (চলবে)  মুসাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা। সুওয়াল:     অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না।  …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো।  উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই। উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো- ….. (৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী। জাওয়াব:    প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।  তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো- ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লেখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খ-মূলক জবাব (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো-  (৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবী সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা দলীলবিহীন। কারণ গত দুই সংখ্যায় প্রদত্ত হক্বানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতিমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে তাঁরাই হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী। অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের কথিত আলিমদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলীসমূহের কোনটাই বিদ্যমান নেই। আমরা যদি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি তবে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। যেমন হক্বানী আলিম হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে, ১. দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করা। অথচ ছয় উছূলীদের কথিত আলিমরা নবী-রসূল, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমসহ দ্বীন ইসলামের অনেক বিষয়েই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেনা বরং তার খিলাফ আক্বীদা পোষণ করে। অর্থাৎ তাদের কথিত আলিমদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী এমনকি কুফরীমূলক অনেক আক্বীদাও রয়েছে। যেমন- ৬. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আক্বীদা হলো, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ভুল ত্রুটি করেছেন, যা তাদের আমীর, মুরুব্বী এমনকি হযরতজীদের বয়ানে শোনা যায় ও লেখনীতে পাওয়া যায়। যেমন- “হযরতজীর কয়েকটি স্মরণীয় বয়ান” নামক কিতাবের ৫৩-৫৫ পৃষ্ঠার বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে, “কিছু ছাহাবী ওহুদ যুদ্ধে ভুলের স্বীকার হয়ে চীজ-আসবাব (গণীমতের মাল)-এর দিকে দৃষ্টি দিয়ে, গিরিপথ থেকে সরে এসে রাসূলের নির্দেশ অমান্য করায় ওহুদ যুদ্ধে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে…..।” অর্থাৎ কিছু সাহাবী অর্থলোভী ছিলেন, যার জন্যে ওহুদ যুদ্ধে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ অমান্য করেন। (নাউযুবিল্লাহ) ৭. নবীদের সম্পর্কে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আরেকটি কুফরী আক্বীদা হলো, হিদায়েতের ক্ষেত্রে মূর্খরাই সমধিক উপযুক্ত। যেক্ষেত্রে নবীগণ এবং আলেমরা ফেল করে, সেখানেও মূর্খরা কৃতিত্ব দেখায়। এ প্রসঙ্গে ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী লিখিত “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ১১৬ পৃষ্ঠায় একথা লেখা আছে যে, “….. অনেক স্থলে নবীগণ পর্যন্ত হিদায়েতে বিরাট সংকটে ও বিপদে পড়িয়াছিলেন, তাই অনেক স্থলে বিরাট আলেমও ফেল পড়িতেছে। কিন্তু মূর্খগণ তথায় দ্বীন জয় করিতেছে।” ৮. ছয় উছূলীদের আরেকটি কুফরী আক্বীদা হলো- মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী লিখিত “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, লক্ষাধিক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মধ্যে অধিকাংশই মূর্খ ছিলেন। (নাউযুবিল্লাহ) (অনুরূপ শরীয়তের দৃষ্টিতে তাবলীগী নেছাব, যার মূল হযরত জাকারিয়া (রঃ) প্রণীত-১৩ পৃষ্ঠা, তাবলীগী জামায়াতের প্রধানের তর্ক ও ইচ্ছা নামক কিতাবের ৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে)   ৯. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের সমর্থনপুষ্ট প্রায় কিতাবেই একথা লেখা আছে যে, নবী আলাইহিস সালামগণ কোন কোন ক্ষেত্রে ভুল করেছিলেন। যেমন- হযরত আদম আলাইহিস সালাম গন্দম খেয়ে  ভুল করেছিলেন ও হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম দাওয়াত না দিয়ে ভুল করেছিলেন ইত্যাদি। (মালফুযাতে শায়খুল হাদীছ পৃষ্ঠা ২৩১, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- মাওলানা ইসমাইল হোসেন, দেওবন্দী পৃষ্ঠা ৬১)  ১০. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক দ্বারা লিখিত, “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৭৫ ও ১২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, ভোট দান প্রচলিত তাবলীগের ৬নং উছূলের মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ ভোট দেয়াও তাবলীগের অন্তর্ভূক্ত। (নাউযুবিল্লাহ) ১১. তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে- মূর্খ লোক চিল্লা দিলে আলেমের চেয়ে বেশী ফযীলত প্রাপ্ত হয়, আর মূর্খ লোক ইছলাহ্ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য তিন চিল্লা দরকার এবং তাবলীগ জামায়াত প্রসঙ্গে “তেরো দফা” নামক কিতাবে ৭ পৃষ্ঠায় যা মুযাম্মিলুল হক উল্লেখ করেছেন, “মূর্খ লোক আমীর হওয়ার জন্য তিন চিল্লাহ্ যথেষ্ট, আর আলেমের জন্য প্রয়োজন সাত চিল্লার।” (নাউযুবিল্লাহ) ১২. মলফূযাতের ৪৩ পৃষ্ঠার ৪২নং মলফূযে এবং নবুওয়ত ও মাওঃ ইলিয়াছ নামক কিতাবের ৩০-৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “মুসলমান দু’প্রকার- একদল প্রচলিত তাবলীগের জন্য হিজরত করবে, দ্বিতীয় দল নুছরত বা সাহায্য করবে, এ দু’দলই মুসলমান। অর্থাৎ তাদের আক্বীদা হলো, যারা প্রচলিত তাবলীগও করবেনা আর তাবলীগকারীদেরকে সাহায্যও করবেনা, তারা মুসলমান নয়।” (অনুরূপ তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- মোঃ ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী ১৭৪ পৃষ্ঠা, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন? (লেখক- ওবায়দুল হক) ২১ পৃষ্ঠা, হযরতজীর কয়েকটি স্বরণীয় বয়ান, ২য় খন্ড ১১ পষ্ঠায় উল্লেখ আছে।) ১৩. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের লিখিত কিতাবে একথা উল্লেখ আছে যে, মূর্খ হোক, আলেম হোক, ধনী হোক, দরিদ্র হোক, সকল পেশার সকল মুসলমানের জন্য তাবলীগ করা ফরজে আইন। (নাউযুবিল্লাহ) (হযরতজীর মাল্ফূযাত-৪ পৃষ্ঠা-৭, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৫৩, তাবলীগে ইসলাম পৃষ্ঠা-৩, পস্তী কা ওয়াহেদ এলাজ পৃষ্ঠা-২২           (চলবে)

 নায়ক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা। সুওয়াল:   হানাফী মাযহাবে –  (১)  নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে। (২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা। (৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়। (৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে। (৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা। (৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে। (৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে। (৮) ইক্বামত আযানের মতোই। আযানে লফ্য বা শব্দগুলো যেরুপ জোড়া জোড়া তদ্রুপ ইক্বামতেও, তবে ইক্বামত আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদ্ক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে। (৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে। (১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে। (১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন। (১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি। কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই। অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন। জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবিহক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে। (৮) ইক্বামত আযানের মতোই। আযানে লফ্য বা শব্দগুলো যেরুপ জোড়া জোড়া তদ্রুপ ইক্বামতেও, তবে ইক্বামত আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদ্ক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে। এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইল্ম্ রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে। অতএব, হানাফী মাযহাবে “ইক্বামত আযানের মতোই। আযানে যেমন লফ্য বা শব্দগুলো জোড়া জোড়া তদ্রুপ ইক্বামতেও লফ্য বা শব্দগুলো জোড়া জোড়া, তবে ইক্বামত আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদ্ক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে” সে বর্ণনা হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।  যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

عن عبد الله بن زيد رضى الله تعاى عنه قال الاذان مثنى مثنى والاقامة مثنى مثنى.

অর্থঃ “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেণ, আযানের শব্দগুলি দু’বার করে এবং ইক্বামতের শব্দগুলিও দু’বার করে।” (তিরমিযী শরীফ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আরো বর্ণনা করেন যে-

كان اذان رسول اله صلى الله عليه وسلم شفعا شنعا فى الاذان والاقامة.

অর্থঃ “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আযান ও ইক্বামত উভয়টি জোড়া জোড়া শব্দে দেয়ার নির্দেশ করেছেন।” (তিরমিযী শরীফ) হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن الاسودبن زيد رضى اله تعالى عنه قال ان بلايك كان يثنى الاذان ويثنى الاقامة.

অর্থঃ “হযরত আসওয়াদ ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আযানের শব্দগুলি দু’বার দু’বার এবং ইক্বামতের শব্দগুলি দু’বার দু’বার করে দিতেন।” (তহাবী শরীফ) অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মনোনীত ও  ইসলামের প্রথম মুয়ায্যিন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আযান ও ইক্বামত উভয়ই জোড়া জোড়া শব্দে দিতেন।  আযানে যেমন প্রথমে ‘আল্লাহু আকবার’ চারবার, ‘আশ্হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ দু’বার, ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মার্দা রসূলুল্লাহ’ দু’বার, ‘হাইয়্যা আলাছ্ ছলাহ’ দু’বার, ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ দু’বার, পূণরায় ‘আল্লাহু আকবার’ দু’বার এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ একবার ইক্বামতও তদ্রুপ তবে ইক্বামতে দু’বার ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলার পর অতিরিক্ত দু’বার ক্বদ্ক্বামাতিছ্ ছলাহ বলতে হবে।  যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

عن ابى محدورة رضى الله تعاى عنه قال ان النبى صلى اله عليه وسلم علمه الاقامة سمع عشرة كلمة.

অর্থঃ “হযরত আবূ মাহযূরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ইক্বামতের কালিমা বা বাক্য ১৭টি শিক্ষা দিয়েছেন। (তিরমিযী শরীফ) অর্থাৎ আযানের ১৫টি বাক্য এবং ইক্বামতের জন্য অতিরক্তি ২টি বাক্য মোট ১৭টি। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

عن ابن محذورة رضى الله تعالى عنه قال علمنى رسول الله صى الله عيه وسلم الاقامة مثنى مثنى الله اكبر الله اكبر، الله اكبر الله اكبر اشهد ان لا اله الا الله اشهد ان لا اله الا الله اشهد ان محكدا رسول الله اشهد ان محمدا رسول الله، حى عى اصوة حى عى الصلوة حى عى الفلاح حى على الفلاح قد قامت اصلوة قد قامة اصلوة الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله.

অর্থঃ “হযরত আবূ মাহযূরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ইক্বামত শিক্ষা দিয়েছেন দু’বার, দু’বার বা জোড়া জোড়া শব্দে। তাহলোঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। আশাহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাহ। আশহাদু আন্না মুহাম্মার্দা রসূলুল্লাহ, আশাহাদু আন্না মুহাম্মার্দা রসূলুল্লাহ। হাইয়্যা আলাছ্ ছলাহ, হাইয়্যা আলাছ্ ছলাহ। হাইয়্যা আলাল ফালাহ, হাইয়্যা আলাল ফালাহ। ক্বদ্ক্বামাতিছ্ ছলাহ, ক্বদ্ক্বামাতিছ ছলাহ। আল্লাহু আকবার, আল্লাহ আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” (তহাবী শরীফ)  (চলবে)

ডাঃ মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন ৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট,

দ্বিতীয় তলা, জানাইকা এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪

সুওয়ালঃ  কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাউযুবিল্লাহ) এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান- আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি। জাওয়াবঃ   হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত। কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভূক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।  নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফ এবং বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।  মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহু, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা। এ সম্পর্কে কতিপয় বর্ণনা এখানে পেশ করা হলো- ১৪. যদি আল্লাহ তায়ালার মকবূল ও মনোনীত বান্দা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা গ্রহণ নাজায়িয হয়, তাহলে জানাযার নামাযও নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। কারণ জানাযার নামায ওসীলার উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত। যেমন জানাযার নামাযে প্রাপ্ত বয়স্ক মৃত ব্যক্তির জন্য আমরা নিজেরা ওসীলা হয়ে দুয়া করি।

اللهم اغفر لحينا وميتنا وشاهدنا وغائبنا وصغيرنا وكبيرنا وذكرنا وانثنا الخ.

 অর্থঃ “হে আল্লাহ পাক! আপনি ক্ষমা করুন আমাদের মধ্যে যারা জীবিত ও মৃত, উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড়, পুরুষ ও মহিলা।”  এবং অপ্রাপ্ত মৃতদেরকে আমরা নিজেদের ওসীলা গ্রহণ পূর্বক দুয়া করি।

اللهم ادعله لنا فرطا واجعنا اجرا وذخرا واجعله لنا شافعا ومشفعا.

 অর্থঃ “হে আল্লাহ পাক! এ শিশুকে কিয়ামত দিবসে আমাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে পথপ্রদর্শক করুন এবং আমাদের জন্য তাকে ছওয়াবের ওসীলা ও পূণ্যের ভা-ার স্বরূপ করুন। এবং তাকে আমাদের সুপারিশকারী ও সুপারিশ কবূলযোগ্য করুন।” ১৫. মসজিদে নববী শরীফে এক রাকায়াত নামাযের ছওয়াব পঞ্চাশ রাকায়াতের সমান কেন? অন্যান্য মসজিদগুলো কি আল্লাহ তায়ালার ঘর নয়? শুধু এ কারণে এ ছওয়াব বৃদ্ধি হয়েছে যে, মসজিদে নববী শরীফ-এর সম্পর্ক যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে। তিনি সেখানে আরাম ফরমাচ্ছেন অর্থাৎ সেখানেই উনার রওযা শরীফ অবস্থিত। অনুরূপভাবে বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফে কয়েক হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম অবস্থান করছেন অর্থাৎ তথায় উনাদের রওযা শরীফ ও মাযার শরীফ অবস্থিত। ফলে, সেখানেও এক রাকায়াত নামায আদায় করলে পঞ্চাশ হাজার রাকায়াত নামায আদায়ের ছওয়াব হয়ে থাকে। কা’বা শরীফ ওখানেও একটা পূণ্যের ছওয়াব একলক্ষ। এ ফযীলত এ কারণে যে, কা’বা শরীফ নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের স্থান। এবং উনার পূর্বপুরুষ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ কর্তৃক কা’বা শরীফ নির্মিত ও সংস্কারকৃত। এছাড়া কা’বা শরীফ উনাদের নিদর্শনাবলী ও অনুসৃত বিষয়াদির দ্বারা বেষ্টিত তথা যমযম কুপ, মাক্বামে ইব্রাহীম, ছাফা-মারওয়া, মীনা, মুযদালিফা, আরাফা ইত্যাদি। এগুলোর ওসীলায় ছওয়াব অধিক হয়ে গেছে। ১৬. অন্যান্য মসজিদসমূহে প্রথম সারির মর্যাদা বেশী। কিন্তু মসজিদে নববী শরীফে তৃতীয় সারির ছওয়াব অধিক। অন্যান্য মসজিদগুলোতে সারির ডানদিকে উত্তম। কিন্তু মসজিদে নববী শরীফে সারির বাম দিক উত্তম কেন জানেন? এ কারণে যে, তৃতীয় সারি রওযা শরীফের অত্যন্ত নিকটে এবং রওয়া শরীফ মসজিদে নববীর বাম দিকে অবস্থিত।  বুঝা গেল, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র সত্ত্বা মকবূলিয়াত বা কবুল যোগ্য হওয়ার ক্ষেত্রে মহান ওসীলা।

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন শিশির, সদর নোয়াখালী।

সুওয়ালঃ  আশুরাকে কেন্দ্র করে কিছু লোক নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ সম্পর্কে এলোমেলো বক্তব্য পেশ করে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম গন্ধম খেয়ে ভুল করেছিলেন ইত্যাদি।  এখন আমার প্রশ্ন হলো- সত্যিই কি নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ভুল-ত্রুটি করেছিলেন অথবা করেননি? সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ    আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ কখনও ভুল করেননি। ইচ্ছাকৃত তো নয়ই, অনিচ্ছাকৃতও নয়। অর্থাৎ নবী আলাইহিমুস সালামগণ কোন ভুলই করেননি। (শরহে আক্বাইদে নসফী, ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, আক্বাইদে হাক্কাহ) অর্থাৎ সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণই ছিলেন আল্লাহ্ পাক-এর খাছ ও মনোনীত বান্দাহ্গণের অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কুরআন শরীফের একাধিক স্থানে ইরশাদ  হয়েছে,    نوحى اليهم.  অর্থঃ- “আমি তাঁদের (নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের) প্রতি ওহী পাঠাতাম।” (সূরা ইউসূফ-১০৯, নহল-৪৩, আম্বিয়া-৭) অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের যাবতীয় কার্যাবলীই ওহীর দ্বারা (আল্লাহ পাক কর্তৃক) পরিচালিত হতো। যার পরিপ্রেক্ষিতে আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে,

الانبياء عليهم السلام كلهم معصومون.

  অর্থঃ- “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ মা’ছূম বা নিস্পাপ।” (ফিকহুল আকবার, শরহে আক্বাঈদে নছফী) আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে,

الانبياء عليهم السلام كلهم منزهون عن الصفائر والكبائر والكفر والقبائح.

অর্থঃ- “সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণই ছগীরা, কবীরা, কুফরী এবং অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র।” (ফিকহুল আকবার) অতএব, যারা নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ভুল সম্পর্কে বলে থাকে, আক্বাইদ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই তারা তা বলে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন। (নাউযুবিল্লাহ্) মূলতঃ তাদের একথা সঠিক নয়। প্রকৃত ঘটনা হলো- আল্লাহ পাক যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালামকে আদেশ করেছিলেন যে,

لا تقربا هذه الشجرة.

অর্থঃ- “তোমরা এই (গন্দমের) গাছের নিকটবর্তী হয়ো না।” (সূরা বাক্বারা-৩৫) তখন তাঁরা আল্লাহ পাক-এর এ আদেশ অনুযায়ী সে গাছের নিকটবর্তী হননি। বরং উক্ত গাছের অনুরূপ বিপরীত দিকের অন্য একটি গাছ দেখিয়ে, ইবলিস শয়তান এসে হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালামকে মিথ্যা কছম খেয়ে বলেছিল যে, যদি আপনারা এ গাছের ফল খান, তবে আপনারা ফেরেশ্তা হয়ে যাবেন অথবা স্থায়ীভাবে বেহেশ্তে বসবাস করতে পারবেন। কোন কোন বর্ণনা মোতাবেক, তখন হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালাম সে গাছ হতে ফল এনে শরবত বানিয়ে হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে খাইয়েছিলেন। অপর বর্ণনায়, ফল কেটে খাইয়েছিলেন। এ ঘটনা হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং যা অজান্তে সংঘটিত হয়, তা কি করে ভুল বা অপরাধ হতে পারে? বাস্তবিক তা কখনই ভুল  হতে পারেনা। (সমূহ তাফসীরের কিতাব)  এর মেছালস্বরূপ উল্লেখ করা যায়- হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শাহাদতের ঘটনা। তিনি যে শাহাদত বরণ করেছিলেন, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। তাঁকে ইসলামের শত্রুরা শহীদ করার জন্য একে একে পাঁচবার বিষ পান করায়। কিন্তু আল্লাহ পাক-এর রহ্মতে তিনি প্রত্যেক বারই বেঁচে যান। ষষ্ঠবার তাঁকে শহীদ করার জন্য তাঁর পানির কলসিতে, যে কলসির মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখতেন, (যেন তার ভিতর কিছু ফেলা না যায়,) সেই কাপড়ের উপর শত্রুরা হিরক চূর্ণ বিষ তাঁর অজান্তে মিশিয়ে দিয়েছিল। তিনি গভীর রাত্রিতে হিরক চূর্ণ বিষ মিশ্রিত পানি কলসি থেকে ঢেলে পান করেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। যা তাঁর অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিল। (সিররুশ্ শাহাদাতাঈন, শুহাদায়ে কারবালা, সীরতে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা)  এখন প্রশ্ন উঠে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাঁর শাহাদাতকে আত্মহত্যা বলতে হবে, না ভুল করার কারণে ইন্তিকাল করেছেন, তা বলতে হবে?  মূলতঃ উপরোক্ত দু’টির কোনটিই বলা যাবেনা। যদি কেউ কোন একটিও বলে, তবে সে মিথ্যা তোহ্মত দেয়ার গুণাহে গুণাহ্গার হবে, যা কুফরীর শামিল হবে। তদ্রুপ হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর ঘটনাও। যা তাঁর অজান্তে সংঘটিত হলো। অনুরূপ অন্যান্য নবী নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ-এর ঘটনাও। মানুষ সঠিক ইতিহাস না জানার কারণে এবং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে, নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের শানে বেয়াদবীমূলক কুফরী কথাবার্তা বলে থাকে।  হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সাথে কতটুকু আদব রক্ষা করতে হবে, সে প্রসঙ্গে কিতাবে, ইমামুত তরীক্বত ওয়াশ্ শরীয়ত, হযরত ইমাম র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ঘটনা উল্লেখ করা হয়, যিনি তাঁর যামানায় আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ছিলেন। যিনি ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ছিলেন। তিনি একবার স্বপে¦ দেখেন আল্লাহ পাক-এর নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালামকে। দেখে প্রশ্ন করেছিলেন, হে আল্লাহ্ পাক-এর নবী হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালাম! আপনার অন্তরে যদি আল্লাহ পাক-এর মহব্বত সত্যিকার ভাবেই প্রবল হতো, তাহলে আপনি কি করে আপনার ছেলে হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালাম-এর জুদায়ীর (বিচ্ছেদের) কারণে তাঁর মহব্বতে চল্লিশ বছর যাবত কেঁঁদে কেঁদে আপনার চক্ষু নষ্ট করেছিলেন? একথা বলার সাথে সাথে গায়েব থেকে নেদা (আওয়াজ) হলো, “হে র্সারী সাক্তী!

(নাঊযুি মুখ সামলিয়ে নবীদের শানে কথা বল।” এরপর হযরত ইউসুফ আলাইহিস্ সালামকে তাঁর সামনে পেশ করা হলে তিনি বেহুশ হয়ে পড়ে যান এবং এভাবে একাধারা তের দিন, তের রাত্রি বেহুশ থাকার পর হুঁশ ফিরে পান। তখন গায়েব থেকে পুনরায় নেদা হয়, “আল্লাহ পাক-এর নবীদের শানে আদবের খিলাফ কথা বললে এরূপই অবস্থা হয়ে থাকে।” (তাযকিরাতুল আওলিয়া) উপরোক্ত ওয়াকেয়ার আলোকে প্রতিভাত হয় যে, আদব কত সূক্ষ্ম জিনিস এবং হযরত নবী আলাইহিস্ সালামগণের ক্ষেত্রে কি পরিমাণ আদবের সাথে কথা বলতে হবে এবং তাঁদের সাথে বেয়াদবির কি পরিণতি? সত্যিই তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়। বেয়াদব সম্পর্কে হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………

  অর্থঃ- “বেয়াদব আল্লাহ পাক-এর রহ্মত থেকে বঞ্চিত।” (মসনবী শরীফ) অতএব, প্রতীয়মান হয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রতি কতটুকু আদব রক্ষা করা দরকার। উল্লেখ্য যে, হযরত র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমামুজ্জামান, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ও আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ওলী হওয়া সত্বেও তাঁর প্রতি সতর্কবাণী ও সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছে। মূলতঃ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ভুল করা তো দূরের কথা, কোন প্রকার অপছন্দনীয় কাজও তাঁরা করতেন না। বরং সর্ব প্রকার অপছন্দনীয় কাজ থেকেও বেঁচে থাকতেন বা পবিত্র থাকতেন, সে প্রসঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র  সীরত মুবারক থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়- “একবার আল্লাহ পাক-এর রসূল  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুজরা শরীফে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাত করার অনুমতি চাইলেন। এ সংবাদ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট পৌঁছালেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে ব্যক্তিকে অপেক্ষা করতে বল। একথা বলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পাগড়ী মুবারক, জামা বা কোর্তা মুবারক ইত্যাদি গুছগাছ করে নিলেন। এমন কি হুযরা শরীফ থেকে বের হওয়ার মূহুর্তে পানির গামলাতে নিজের চেহারা মুবারক দেখে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। তা দেখে সে সময় হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিও কি এরূপ করেন? তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “কিরূপ করি?” হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, “এরূপ পরিপাটি।” এর জবাবে আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হ্যাঁ, আমরা আল্লাহ্ পাক-এর নবী। আমাদের কোন কাজ কারো অপছন্দ হলে, সে ঈমান হারা হয়ে যাবে।” (আল্ মুরশিদুল আমীন) অতএব, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ যে কতটুকু অপছন্দনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকতেন, এ হাদীছ শরীফের বর্ণিত ঘটনা তারই প্রমাণ। তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে বা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ভুল-ত্রুটি করেছিলেন? বস্তুতঃ এরূপ আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী। তদ্রুপ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সম্পর্কে ও তাঁদের শানের খিলাফ কোন অর্থ গ্রহণ করা যাবেনা বরং এমন অর্থ ব্যবহার বা গ্রহণ করতে হবে, যাতে তাঁদের শান সমুন্নত থাকে। উল্লেখ্য যে, আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফ বর্ণনা কারীদেরকে রাবী বলা হয়। এই রাবীগণের মধ্যে যাঁরা প্রথম শ্রেণীর, তাঁদেরকে বলা হয় ছেক্বাহ্ রাবী।  হাদীছ বিশারদগণ, ছেক্বাহ্ রাবী হওয়ার জন্য যে মানদন্ড নির্ধারণ করেছেন, তার মধ্যে মূল বিষয় হচ্ছে- (১) আদালত ও (২) জব্ত। জব্ত হচ্ছে- প্রখর স্মরণশক্তি। তা এমন যে, একবার শুনলে আর ভুলেনা। আর আদালত-এর মধ্যে চারটি শর্ত রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হলো দু’টি। যথা- (ক) তাক্বওয়া, (খ) মুরুওওয়াত।  (ক) তাক্বওয়া হচ্ছে- কুফরী, শেরেকী, বিদ্য়াতী, ফাসিকী কাজ থেকে বেঁচে থাকার সাথে সাথে কবীরাহ্ গুণাহ্ থেকে, এমনকি ছগীরাহ্ গুণাহ্ও বার বার করা থেকে বেঁচে থাকা। (খ) আর মুরুওওয়াত হচ্ছে- অশালীন, অশোভনীয়, অপছন্দনীয়, এমনকি দৃষ্টিকটু কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন- রাস্তায় হেঁটে হেঁটে খাদ্য খাওয়া, রাস্তায় অট্টহাস্য করা, চিৎকার করা ইত্যাদি। (তাদরীবুর রাবী, মুকাদ্দামাতুশ শায়খ, মীযানুল আখবার)  এখন ফিকিরের বিষয় এই যে, হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী ছেক্বাহ্ রাবী যদি এত গুণ ও যোগ্যতাসম্পন্ন এবং তাক্বওয়াধারী হন অর্থাৎ হাদীছ বিশারদ উম্মতে মুহম্মদীর নিকট যদি ছেক্বাহ্ রাবী হিসেবে হাদীস বর্ণনাকারী হওয়ার জন্য ছগীরাহ্ গুণাহ্ বার বার না করা ও দৃষ্টিকটু সাধারণ অপছন্দনীয় কাজও না করা শর্ত হয়, তাহলে যাঁরা আল্লাহ পাক-এর নবী হবেন এবং আল্লাহ্ পাক-এর কালাম বর্ণনা করবেন, তাঁদের জন্য আল্লাহ্ পাক কি মানদন্ড নির্ধারণ করেছেন বা তাঁদের ক্ষেত্রে কতটুকু মা’ছূম ও মাহ্ফুজ হওয়া নির্দিষ্ট করেছেন তা অনুধাবনীয়।

অতএব, যে কোন লোকের জন্যই নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শানের বিন্দুমাত্র খেলাফ কথাবার্তা বলা সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। এ ধরণের কুফরী আক্বীদা থেকে বেঁচে থাকা সমস্ত মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরজ ।   সাইয়্যিদা খালেদা বেগম মাহিগঞ্জ, রংপুর সুওয়ালঃ   বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশে নববর্ষ উপলক্ষে পহেলা তারিখে যেমন- পহেলা বৈশাখ, পহেলা জানুয়ারী ইত্যাদি তারিখে ভাল ভাল খাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়, এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত? আর শরীয়তে কোন নির্দিষ্ট দিনে ভাল খাওয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে কি? জাওয়াবঃ   শরীয়তের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ, পহেলা জানুয়ারীতে ভাল খাওয়ার জন্য আলাদাভাবে কোন তাগিদ করা হয়নি। বরং দশই মুর্হরমে প্রত্যেক পরিবারের প্রধান ব্যক্তিকে তার পরিবারের সদস্যদেরকে ভাল খানা খাওয়ানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।       সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

من وسع على عياله فى النفقة يوم عاشوراء وسع الله عليه سائر سنته.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি তার পরিবারবর্গকে আশুরার দিন অর্থাৎ দশই মুর্হরমে ভাল খাদ্য খাওয়াবে, আল্লাহ্ পাক তাকে এক বৎসরের জন্য স্বচ্ছলতা দান করবেন।” (তবারানী,মা ছাবাতা বিস্ সুন্নাহ)

এ সম্পর্কে কিতাবে একটি ওয়াকেয়া বর্ণিত রয়েছে- “এক ব্যক্তি ছিল গরীব, দিনমজুর। একবার অসুস্থতার কারণে তিনি তিন দিন যাবত কাজ করতে পারলেন না। চতুর্থ দিন ছিল আশুরার দিন। তিনি আশুরার দিনে ভাল খাওয়ার ফজিলত সম্পর্কে জানতেন। তখন ছিল কাজীদের(বিচারক) যুগ। কাজী সাহেব ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তার কাছে আশুরার ফজিলতের কথা বলে এবং নিজের অসুস্থতা ও পরিবারের তিনদিন যাবত অভুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করে ১০ সের আটা, ১০ সের গোশ্ত ও দুই দিরহাম চাইলেন। কাজী ছাহেব তাকে যোহরের সময় আসতে বললেন। যোহরের সময় কাজী ছাহেব বললেন, আছরে আসতে। কিন্তু এরপরে আসরের সময় মাগরিব এবং মাগরিবের সময় সরাসরি না করে দিলেন। দুঃখে অধীর হয়ে লোকটি তখন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ীর দিকে রওয়ানা হল। পথে ছিল এক খৃষ্টানের বাড়ী। লোকটিকে কাঁদতে দেখে উক্ত খৃষ্টান তাঁকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করল। কিন্তু বিধর্মী বিধায় খৃষ্টানকে প্রথমে কিছু বলতে চাইলেন না। অতঃপর খৃষ্টানের অধীর আগ্রহের কারণে তিনি আশুরার ফযীলত ও তার বর্তমান দূরবস্থার কথা ব্যক্ত করলেন। খৃষ্টান ব্যক্তি তখন উৎসাহী হয়ে তাকে আশুরার সম্মানার্থে ১০সের আটা, ১০সের গোস্ত, ২ দিরহাম এবং অতিরিক্ত আরও ২০ দিরহাম দিল এবং বললো যে, “তোমাকে আমি আশুরার সম্মানার্থে প্রতিমাসে এ পরিমাণ হাদিয়া দিব।”     ঐ ব্যক্তি তখন তা নিয়ে বাড়ীতে গেল এবং খাবার তৈরী করে ছেলে-মেয়েসহ আহার করল। অতঃপর দোয়া করলো, “আয় আল্লাহ্ পাক! যে ব্যক্তি আমাকে সন্তুষ্ট করলো, আমার ছেলে-মেয়েদের মুখে হাসি ফুটালো, আল্লাহ্ পাক! আপনি তার দিল খুশী করে দিন, তাকে সন্তুষ্ট করে দিন।”     ঐ রাত্রে কাজী ছাহেবকে স্বপে¦ দেখানো হলো যে, কাজী ছাহেবকে বলা হচ্ছে, “হে কাজী! তুমি মাথা উত্তোলন করো।” মাথা তুলে কাজী দেখতে পেলেন যে, তার সামনে দুটি বেহেশ্তের বালাখানা। একটি স্বর্ণের, আরেকটি রৌপ্যের। কাজী ছাহেব বললেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! এটা কি?” গায়েবী আওয়াজ হলো, “এ বালাখানা দু’টি তোমার ছিল। কিন্তু এখন আর তোমার নেই। কারণ তোমার কাছে যে গরীব লোকটা এসেছিল, তাকে তুমি সাহায্য করার ওয়াদা করে ওয়াদা ভঙ্গ করেছ। এজন্য এ বালাখানা দু’টি এখন একজন খৃষ্টান লোকের।” কাজী ছাহেব বললেন, “আল্লাহ্ পাক! কোন সে খৃষ্টান?” কাজী ছাহেবকে বলা হলো যে, “অমুক খৃষ্টান।” অর্থাৎ স্বপে¦র মধ্যেই খৃষ্টানের পরিচয় ও ঠিকানা কাজী ছাহেবকে জানানো হলো।

অতঃপর ঘুম থেকে উঠে ওজু ও নামায আদায় করে কাজী ছাহেব সেই ঠিকানা মোতাবিক খৃষ্টানের বাড়ীতে গেলেন। খৃষ্টান কাজী ছাহেবকে দেখে বিস্ময়াভিভূত হলো। কাজী ছাহেবকে খৃষ্টান বললো, “আপনি এত সকালে কি জন্য এলেন?” কাজী ছাহেব বললেন, “হে খৃষ্টান ব্যক্তি! তুমি গতরাত্রে কি কোন নেক কাজ করেছ?” খৃষ্টান ব্যক্তি বলতে নারাজ। তিনি বললেন, “কি ব্যাপার হয়েছে, আগে বলেন তারপর বলবো।” তখন কাজী ছাহেব  নিজের স্বপে¦র কথা খুলে বললেন যে, “এই ঘটনা ঘটেছে এবং তুমি নিশ্চয়ই গরীব লোকটাকে সাহায্য করেছ।” তখন খৃষ্টান ব্যক্তি তা স্বীকার করল। কাজী ছাহেব বললেন যে, “তুমি তো খৃষ্টান, তুমি মারা গেলে জাহান্নামে যাবে। তুমি তো এই বালাখানা পাবেনা। তোমার এটা নিয়ে কি ফায়দা হবে? তুমি তোমার এই নেক কাজ এক লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে আমার নিকট বিক্রি করে দাও এবং তুমি তার কাছে প্রত্যেক মাসে যে ওয়াদা করেছ আমি তাকে তা দিয়ে দিব।” খৃষ্টান ব্যক্তি বললো, “এটা কখনও সম্ভব নয়। হে কাজী ছাহেব! আপনি সাক্ষী থাকেন, আমি কলেমা শরীফ পড়ে মুসলমান হয়ে গেলাম।” (সুবহানাল্লাহ্)    অতএব এটা ফিকির করার কথা যে, আশুরাকে সম্মান করার কারণে আল্লাহ্ পাক উক্ত খৃষ্টানকে ঈমান দিয়ে দিলেন এমনকি জান্নাত নসীব করলেন।    {দলীলসমূহঃ- (১) জামিউল ফাওয়ায়িদ, (২) তবারানী, (৩) বায়হাক্বী, (৪) ইবনে হাব্বান, (৫) মুসনাদে ফিরদাউস লিদ্ দায়লামী, (৬) মা ছাবাতা বিস্ সুন্নাহ্ ইত্যাদি। }  মুছাম্মত ফাতিমাতুয্ যহ্রা উলিপুর, কুড়িগ্রাম সুওয়াল:    আশুরা উপলক্ষে কয়টি রোযা রাখা সুন্নত? জানতে বাসনা রাখি। জাওয়াবঃ   হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

 صوموا يوم عاشوراء وخالفوا فى اليهود صوموا قبله يوما او بعده يوما.

 অর্থ ঃ- “তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং (এ ব্যাপারে) ইহুদীদের বিপরীত কর। তোমরা আশুরার আগের দিনে অথবা পরের দিনেও রোজা রাখো।”    এ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আশুরার উদ্দেশ্যে দু’টি রোযা রাখা সুন্নত। মুর্হরমের ৯ ও ১০ তারিখ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ। তবে উত্তম হলো ৯ ও ১০ তারিখ রোযা রাখা। শুধু ১০ই মুর্হরম আশুরার উদ্দেশ্যে ১টি রোযা রাখা মাকরূহ্। কারণ ইহুদীরা সেদিনটিতে রোজা রেখে থাকে।       {দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) মুসলিম, (৩) মিশকাত, (৪) তিরমিযী, (৫) মুয়াত্তা মালিক, (৬) জামিউল ফাওয়ায়িদ, (৭) মসনদে ফিরদাউস লিদ্ দায়লামী, (৮) মা ছাবাতা বিস্ সুন্নাহ্, (৯) মুসনাদে আহমদ ইত্যাদি)  মুহম্মদ কামরুল হাসান, বাসাবো, ঢাকা সুওয়াল:   হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর শাহাদতকে কেন্দ্র করে অনেকে জলীলুল ক্বদর ছাহাবী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দোষারোপ করে থাকে। এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত? দয়া করে জানাবেন। জাওয়াবঃ  কোন নবী-রসূল আলাইহিস্ সালামকে যেমন কোন ব্যাপারে দোষারোপ করা জায়েয নেই তদ্রুপ কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকেও কোন ব্যাপারে দোষারোপ করা জায়েয নেই।       এ বিষয়ে আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

ولا تزر وازرة وزرى اخرى

অর্থঃ- “একজনের পাপের বোঝা অপরজন বহন করবেনা।” (সূরা আনয়াম-১৬৪)

এ আয়াত শরীফের তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সন্তানের অপরাধের জন্য পিতাকে এবং পিতার অপরাধের জন্য সন্তানকে দায়ী করা বৈধ নয়। যেমন, কাবিলের অপরাধের জন্য হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে, কেনানের  অপরাধের জন্য হযরত নূহ আলাইহিস্ সালামকে দায়ী করা বৈধ নয়। তেমনি ইয়াযীদের অপরাধের জন্য হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দায়ী করাও বৈধ নয়। বরং সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।

আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

ليغيظبهم الكفار.

 অর্থঃ “কাফিররাই তাঁদের (হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের) প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে।” (সূরা ফাতাহ্-২৯)        আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে

من غاظ اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم فهو كافر.

অর্থঃ “যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, সে কাফির।” (নাসীমুর রিয়ায)   এখানে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার যে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদরের দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মর্মান্তিক শাহাদতে মুসলিম উম্মাহ্র অন্তর ব্যাথাতুর হবে তা চরম সত্য কথা এবং এটি ঈমান মজবুতীর আলামতও বটে। কিন্তু এজন্য হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জলীলুল ক্বদর ছাহাবী তাঁকে দোষারোপ করা কস্মিনকালেও শরীয়ত সম্মত হতে পারে না।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

 لاتسبوا اصحابى فلو ان احد كم انفق مثل احد ذهب ما بلغ مذ احدهم ولا نصيفه.

অর্থঃ “তোমরা আমার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে গালী দিওনা। কেননা যদি তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় দান কর, তবুও ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের এক মূদ্ (১৪ ছটাক) বা অর্ধ মূদ্ (৭ ছটাক) গম দান করার ফযীলতের সমপরিমাণ ফযীলত অর্জন করতে পারবে না।” (বুখারী শরীফ)

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে যে,

         فمن سبهم فعليه لعنة الله والملئكة والناس اجمعين ولا يقبل الله منهم صرفا ولاعدلا.

অর্থঃ “যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে গালী দেয়, তাদের প্রতি ফেরেশ্তা, মানুষ ও সকল মাখলুকাতের লা’নত এবং তাদের কোন ফরয ও নফল ইবাদত আল্লাহ পাক কবুল করবেন না।” (মুযাহিরে হক্ব)

যারা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দোষারোপ করে মূলতঃ তারা তাঁর মহান মর্যাদা সম্পর্কে নেহায়েতই জাহিল, অজ্ঞ।

স্মরণযোগ্য যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবীগণের মধ্যে একজন বিশেষ শ্রেণীর ছাহাবী যাকে উলুল আযম বা জলীলুল ক্বদর ছাহাবী বলা হয়। তিনি ছিলেন আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, কাতিবীনে ওহীর সদস্য, হাদীস শরীফের রাবী, ফক্বীহ্ ইত্যাদি মর্যাদার অধিকারী। তাঁর ইল্মের পূর্ণতা, হিদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা, তাঁর দ্বারা লোকদের হিদায়েত লাভ, কিতাব শিক্ষাদান এবং জাহান্নাম থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তায়ালার নিকট দুয়া করেছেন।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

اول جيش يغزون البحر قد اوجبوا.

অর্থঃ “আমার উম্মতের প্রথম যে দল সমুদ্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব।” (বুখারী শরীফ)           হযরত ইমাম তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ২৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম সমুদ্র যুদ্ধের মাধ্যমে কাবরাসের উপর আক্রমণ করেন এবং কাবরাস তিনিই বিজয় করেন।”     হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মর্যাদা-মর্তবার মধ্যে অন্যতম মর্যাদা হলো, তিনি ছিলেন একজন আদিল বা ইন্সাফগার খলীফা। তাঁর ন্যায় বিচার ও ইন্সাফ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবী হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “আমার দৃষ্টিতে হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, এরপর হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর চেয়ে অধিক ন্যায় বিচারক কেউ নেই।”     এক ব্যক্তি  হযরত মুয়াফা ইবনে ইমরান রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বললো, ন্যায় বিচারের দিক দিয়ে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? একথা শুনে তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, “হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি কোন প্রকার কিয়াস করা যাবে না। হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবী, কাতিবে ওহী ও আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ‘আমীন’ (আমানতদার)।”আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শ্রেষ্ঠ, না হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি শ্রেষ্ঠ? তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর কছম! হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ঘোড়ায় চড়ে জিহাদে যেতেন, তখন ঘোড়ার নাকে যে ধুলোবালিগুলো প্রবেশ করতো, সে ধুলোবালিগুলোও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বহুগুণে শ্রেষ্ঠ।” (ফতওয়ায়ে হাদীছিয়াহ)       সুতরাং এত সব মর্যাদা ও মর্তবার পরও যারা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, তাঁকে নাকেছ বলে গালী দেয়, তাদের জন্যে হযরত ইমাম শিহাবুদ্দীন খাফ্ফাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কথাই অধিক প্রযোজ্য। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে গালী দেয়, নাকেছ বলে, সমালোচনা করে, সে হাবিয়া দোযখের কুকুরসমূহের মধ্য হতে একটি কুকুর।”

উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শুধু ছাহাবীই ছিলেন না, বরং উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, জলীলুল ক্বদর ছাহাবী ও খলীফা ছিলেন। সুতরাং হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহুসহ সকল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সম্পর্কে সাবধানে কথা বলতে হবে। মূলত তাঁদের সকলের প্রতিই সুধারণা পোষণ করতে হবে, মুহব্বত করতে হবে এবং তাঁদেরকে অনুসরণ-অনুকরণও করতে হবে।

কেননা তাঁরা হলেন দ্বীনের ইমাম এবং হাবীবে খোদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শের বাস্তব প্রতিফলন। এইজন্য তাঁরা যেভাবে ঈমানের স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং আমলে যেভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, ঠিক সেভাবেই ঈমানের স্বীকৃতি দেয়া এবং আমলে নিয়োজিত হওয়া পরবর্তী উম্মতের দায়িত্ব-কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে,

امنوا كما امن الناس.

অর্থঃ- “তোমরা ঈমান আন যেভাবে অন্যান্য লোক অর্থাৎ ছাহাবা-ই-কিরাম ঈমান এনেছেন।” (সূরা বাক্বারা-১৩)           আল্লাহ্ পাক  হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম সম্পর্কে ইরশাদ করেন,

رضى الله عنهم ورضوا عنه.

 অর্থঃ- “ আল্লাহ্ পাক তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট।” (সূরা তওবা-১০০) তিনি আরো ইরশাদ করেন,

والذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم.

  অর্থঃ- “আল্লাহ্ ঐ সকল বান্দাগণের প্রতিও সন্তুষ্ট  যারা হযরত ছাহাবা-ই-কিরামকে  উত্তম রূপে অনুসরণ করেন।” (সূরা তওবা-১০০)      আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

 اصحابى كالنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم

 অর্থঃ- “আমার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ তারকা সাদৃশ্য, তাঁদের যে কাউকে তোমরা অনুসরণ করবে, তোমরা হিদায়েত প্রাপ্ত হবে।” (মিশকাত শরীফ)

অতএব, আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভ করতে চাইলে অবশ্যই ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে এবং তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, সমালোচনা করা ও নাকেস বলা হতে বিরত থাকতে হবে।

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ