মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন। মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।
সুওয়াল: ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খণ্ডন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো- … ৪. ইসলামী স্বর্ণযুগে এবং তৎপরবর্তীতে ফুক্বাহায়ে কিরাম ও হাদীছ বিশারদগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। তাই তা হযরত মুফতিয়ানে কিরামের ঐক্যমতে বিদয়াত। (নাঊযুবিল্লাহি মিনাল কাযিবীন) এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাট হাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি। (ধারাবাহিক) জাওয়াব: হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য শুধু ডাহা মিথ্যাই নয় বরং সম্পূর্ণরূপেই মনগড়া, দলীলবিহীন ও বিভ্রান্তিকর। শুধু তাই নয়, তার পাশাপাশি স্বয়ং আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম, ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের প্রতি মিথ্যারোপ করার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। স্মর্তব্য যে, হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। (১) স্বর্ণযুগে কেউ ফরজ নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। (২) তৎপরবর্তিতে অর্থাৎ স্বর্ণযুগের পর থেকে অদ্যবধি ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করেননি। (৩) সকল মুফতিয়ানে কিরাম ঐক্যমত হয়ে ফতওয়া দিয়েছেন যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদয়াত বা নাজায়িয। (নাউযুবিল্লাহ) উল্লেখ্য, হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবরা তাদের উল্লিখিত তিনটি বক্তব্যের কোন একটিও নির্ভরযোগ্য কিতাবের ইবারত বা দলীল দ্বারা প্রমাণ করতে পারেনি এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও তা প্রমাণ করতে পারবেনা। সুতরাং এমনিতেই তাদের উল্লিখিত বক্তব্যগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও পরিত্যাজ্য বলে সাব্যস্ত হয়। এরপরও আমরা তাদের উল্লিখিত প্রতিটি বক্তব্য দলীলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট ও কুফরীমূলক বলে প্রমাণ করবো। ইনশাআল্লাহ। হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের দ্বিতীয় বক্তব্য হলো- (২) তৎপরবর্তিতে অর্থাৎ স্বর্ণযুগের পর থেকে অদ্যবধি ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করেননি। এর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, “স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয নামাযের পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নিয়ে হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন” এটা হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পর অন্য কোন দলীলের কোনই প্রয়োজন নেই। বরং এ ক্ষেত্রে অন্য কোন দলীল তালাশ করা কুফরী বৈ কিছুই নয়। দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, “ফুক্বাহায়ে কিরামগণের ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরয নামাযের পর মুনাজাত করেননি।” হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য চরম মিথ্যা, বানোয়াট ও ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের শানে সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল। কারণ তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে একটি দুর্বল থেকে দূর্বলতম দলীলও পেশ করতে পারেনি এবং তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোশেশ করলেও উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল তারা পেশ করতে পারবে না। পক্ষান্তরে অনুসরনীয় সকল মুহাদ্দিছীনে কিরাম ও ফুক্বাহায়ে কিরাম যে ফরয নামাযের পর মুনাজাত করাকে সমর্থন করেছেন, মুস্তাহাব সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছেন এবং নিজেরাও করেছেন তার বহু প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। যা অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে ও অনেক সংখ্যাতেই পত্রস্থ হয়েছে। শুধু তাই নয়, হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের কথিত মুরুব্বীরাও “ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছেন। নিম্নে তার কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো- (চতুর্থ অংশ)
“ফতওয়ায়ে দেওবন্দ”-এর ৪র্থ খণ্ড, ১৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
امام جس وقت نماز سے فارغ ھو مع مقتدیوں کے سب اکھٹے دعا مانگیں.
অর্থঃ “ইমাম ছাহেব যখন নামায শেষ করবেন, তখন মুক্তাদীগণকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করবেন।”
“আশ্রাফী বেহেশ্তী জিওর” কিতাবের ১১ খণ্ড, ৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
بعد نماز ختم کر چکنے کے دونوں ھا تھ سیںہ تک اٹھا کر پھیلانے اور اللھ تعالی سے اپنے لنے دعا مانگے اور امام ھو نو تو تمام مقتد یوں کے لنے بھی اور بعد دعا مانگ چکنے کے دونوں ھاتھ منہ پر پھیر لے. مقتدی خوہاپنی دعا مانگے یا امام کی دعا سنانی دے تو خواہ سب امین امین کھتے رھیں.
অর্থঃ “নামায শেষ করার পর উভয় হাত সীনা পর্যন্ত উঠাবে এবং আল্লাহ পাক-এর নিকট নিজের জন্য মুনাজাত করবে। আর ইমাম হলে সকলের জন্য মুনাজাত করবে, মুনাজাত শেষে উভয় হাত দ্বারা মুখ মাসেহ্ করবে। মুক্তাদীগণ নিজ নিজ দোয়া চাইবে অথবা ইমাম ছাহেবের মুনাজাত শোনা গেলে তার সাথে সকলে ‘আমীন, আমীন’ বলবে।” “ফতওয়ায়ে রহীমিয়া”-এর ১ম খণ্ড, ২১৫-২১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
مسنون یہ ھے کہ جس طرح فرض نماز جماعت سے پر ھی ھے دعا بھی جما عت کے سا تھ. کی جائے یعنی امام اور مقتدی سب مل کر دعا مانگیں ….. ان حضرت صلی اللہ عليہ و سلم. صحا بہ کرام اور سلف صا لحین رضی اللہ عنھم کا طریقہ یہ تھاکہ فرض نماز جماعت سے ادا فرماکر دعا بھی جماعت کے سا تھ (اماماور مقتدی سب ملکر) مانگا کر تے نھے.
অর্থঃ “নামায যেভাবে জামায়াতের (সম্মিলিতভাবে) সাথে আদায় করা হয়, মুনাজাতও তদ্রুপ সম্মিলিতভাবে করা সুন্নত। অর্থাৎ ইমাম ও মুক্তাদী সকলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করবে ….। আখিরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ও সল্ফে ছলিহীনগণের সুন্নত তরীক্বা এটাই ছিল যে, তাঁরা ফরয নামায জামায়াতে আদায় করার পর (ইমাম ও মুক্তাদী সকলে সম্মিলিতভাবে) মুনাজাত করতেন।” (চলবে) মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব গুলবাগ, ঢাকা। সুওয়ালঃ “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ্ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৮০) এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতোয়া দারুল উলুম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গোমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গোমরাহ করার জন্য যথেষ্ট। কারণ আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে উত্তম বলা হয়েছে। অর্থাৎ আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করার জন্য الصلاة الصلاة (আছ্ ছলাহ! আছ্ ছলাহ!) নামায! নামায! অথবা قامت قامت (ক্বামাত! ক্বামাত!) নামায আসন্ন, নামায আসন্ন, অথবা التنحنح (আত্তানাহ্নুহ্) গলা খাকড়ানো, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে আহবান করা বা তাছবীব করা সুন্নত, উত্তম ওমুস্তাহ্সান। যার আরো কিছু প্রমাণ নিম্নে পেশ করা হলো- (ধারাবাহিক)ঞ্জ যেমন, “আইনী শরহে হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
والتثويب فى الفجر حى على الصلاة حى على الفلاح مر تين بين الاذان والاقا مة حسن لانه وقت نوم وغفلة.
অর্থঃ “ফজরের নামাযে আযান ও ইক্বামতের মাঝে দু’বার
حى على الصلاة. حى على الفلاح
(হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্) বলে সকল মানুষদেরকে নামাযের জন্য তাছবীব করা উত্তম।” কেননা ফজরের ওয়াক্তটা হলো ঘুম ও গাফলতির সময়।”
“বিনায়া ফী শরহিল হিদায়া” কিতাবের ২য় খণ্ডের ১১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وهذا التثو يب محدث أ حد ثه علماء الكو فة بعد عهد الصحا بة رضى الله تعالى عنهم لظهور التوا نى وتغير أ حوال الناس.
অর্থঃ “আর এই তাছবীব নতুন প্রচলন যা, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পর কুফার উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ মানুষের অবস্থা পরিবর্তন এবং তাদের মধ্যে ইবাদতে গাফলতী ও অলসতা প্রকাশ পাওয়ার কারণেই এই তাছবীবের প্রচলন করেন। অর্থাৎ প্রথম যামানায় ঘুমের গাফলতী থেকে সতর্ক করার জন্য তাছবীব করা হতো। আর এই যামানায় মানুষের মধ্যে জাগ্রত অবস্থাতেই গাফলতী ও সুস্তী-কাহেলী পয়দা হয়েছে।” (অতএব বর্তমান যামানায় তাছবীবের গুরুত্ব আরো বেশী।
“আইনী শরহে হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ومعناة أى معنى التثويب العود الى الا علام وهذا معناه الشرعى …. وهو لى التثويب على حسب ما تعار فوه أى ما تعار فه أ هل كل بلدة من التنحنح أو قوله الصلاة الصلاة أو قو له قامت قا مت لانه للمبالغة فى الا علام وانما يحصل ذلك بما تعار فوه.
অর্থঃ “তাছবীবেরঞ্জশরয়ী অর্থ হলো (আযানের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার পর) পুনরায় মানুষদেরকে নামাযের কথা জানিয়ে দেয়া। …………আর এই তাছবীব প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়েই করতে হবে। যেমন, التنحنح (আত্তানাহ্নুহ্) গলা খাকড়ানো অথবা الصلاة الصلاة (আছ্ ছলাহ! আছ্ ছলাহ!) নামায! নামায! অথবা قامت قامت (ক্বামাত! ক্বামাত!) নামায আসন্ন, নামায আসন্ন, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে তাছবীব করতে হবে। কেননা মানুষদেরকে নামাযের কথা ভালভাবে জানিয়ে দেয়ার জন্যই তাছবীব করা হয়। আর মানুষদেরকে নামাযের কথা ভালভাবে জানিয়ে দেয়াটা হাছিল হয় প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দের মাধ্যমে।” “আইনুল হিদায়া” কিতাবের নিছফে আউয়াল খণ্ডের ৩৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে
اور تثویب کرنا فجر میں بعد اذان کے دوبار حی علی الصلوة حی علی الفلاح کے ساتہ اذان واتامت کے در میان میں بھتر بے. یعنی اذان کمہ کر توقف کر کے افا مت واذان کے بیچ میں پھر ان دو کلمہ سے پکارنا بمتر بے اس جھت سے کہ وہ رقت خواب وغفاب کا بے.
অর্থঃ “ ফজরে আযানের পর আযান ও ইক্বামতের মাঝে দু’বার
حى على الصلاة وحى على الفلاح.
(হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্ ) ঞ্জ বলা উত্তম। অর্থাৎ আযান দেয়ার পর কিছুক্ষণ সময় চুপ থাকা অতঃপর আযান ও ইক্বামতের মাঝে আবার ঐ দু’টি বাক্য অর্থাৎ
حى على الصلاة وحى على الفلاح.
( হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্ ) ঞ্জ বলা উত্তম। এর কারন এইযে, উক্ত সময়টা হলো ঘুম ও গাফলতির সময়। অর্থাৎ প্রথম যামানায় ঘুমের গাফলতী থেকে সতর্ক করার জন্য তাছবীব করা হতো। আর এই যামানায় মানুষের মধ্যে জাগ্রত অবস্থাতেই গাফলতী ও সুস্তী-কাহেলী পয়দা হয়েছে।” বিধায় বর্তমান যামানায় তাছবীবের গুরুত্ব আরো বেশী। সেহেতু “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে বর্তমান যামানায় সকল নামাযেই তাছবীব করা মুস্তাহ্সান।” (চলবে)
মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান টাইগার পাস রোড, চট্টগ্রাম। সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব” …। এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য? জাওয়াবঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহনযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কারন আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে নাফরমানের অন্তর্ভূক্ত হবে। সুতরাং মুয়াজ্জিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া। হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা জিহালতী ও গোমরাহ্ী বৈ কিছূই নয়। রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গোমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। অর্থাৎ রেযাখানীরা আযানের জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে দলীল হিসেবে যে কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে সে সকল কিতাবগুলোতেই আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব বলে উল্লেখ আছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডন সহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে – (ধারাবাহিক) রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত দলীল সমুহের খণ্ডন মূলক আলোচনা উল্লেখ্য, রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। কারণ তাদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। নিম্নে রেযাখানীদের হুবহু বক্তব্য তুলে ধরে তার সঠিক জবাব উল্লেখ করা হলোঃ যেমন, রেযাখানীরা বলেছে, “আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব।” এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য যে, ডাহা মিথ্যা এবং দলীল বিহীন তা আমরা আমাদের মাসিক আল বাইর্য়্যিনাতে বিগত সংখ্যায় প্রমাণ করেছি যে, তাদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। কারণ তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসাবে ‘আল ফিক্বহু আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া’ কিতাবের বরাত দিয়েছে, অথচ আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব। এধরনের কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা, কোন ইবারত তাদের উল্লিখিত “আল ফিক্বহু আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া” কিতাবের ইবারতে উল্লেখ নেই। সুতরাং প্রমাণিত হলো রেযাখানীদের বক্তব্যের সাথেঞ্জকিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। অতএব রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের ইবারত ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। ইহা তাদের প্রথম ধোকা । দ্বিতীয়তঃ জামায়াত যেখানে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্। সেখানে জামায়াতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব হয় কি করে। কারণ নির্ভরযোগ্য সকল ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে এ কথাই উল্লেখ আছে যে, “জামায়াত হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা”। অর্থাৎ জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাবগুলোতে মূল ফতওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা হিসেবে উল্লেখ আছে। যেমন, বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব- “হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ১৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وعلى القول با نها سنة هى اكد من سنة الفجر وهى سنة عين.
অর্থঃ “এই ক্বওলের উপর ফতওয়া যে, নিশ্চয়ই জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আর এটাকে ফযরের নামাযের দু’রাকায়াত সুন্নতের চেয়েও বেশী তাক্বীদ করা হয়েছে। আর এটাই হলো সুন্নতে আইনী।”
“মালাবুদ্দা মিনহু” কিতাবের ৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
جماعت در نماز باى پنجگا نہ فرض است نزدا حمد رحمۃ اللہ علیہ لیکں نماز منفر د بم صحیح است ونزد شافعی رحمۃ اللہ علیہ جما عت فرض كفایہ است ونزد ابی حنیفہ رحمۃ اللہ علیہ ومالک رحمۃ اللہ علیہ جماعت سنت مو کدہ است قریب واجب.
অর্থঃ “ইমাম আহ্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে জামায়াত ফরয। তবে একাকী ব্যক্তির নামাযও ছহীহ্ হবে। ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে জামায়াত ফরযে ক্বিফায়া। ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে জামায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদা, ওয়াজিবের কাছাকাছি।”
কেউ কেউ ওয়াজিব বলেছে। এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, “হাশিয়ায়ে আলা মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ১৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ومنهم من قال انها فرض كفاية وبه قال الكر خى رحمة الله عليه والطحا وى رحمة الله عليه وجماعة من اصحا بنا وقيل انها فرض عين وهو قول الامام احمد رحمة الله عليه.
অর্থঃ “যারা জামায়াতে নামায আদায় করা ওয়াজিব বলেছেন। তাদের থেকে কেউ কেউ আবার জামায়াতকে ফরযে কিফায়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেমন, ইমাম কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আমাদের আসহাবগণ থেকে একটি জামায়াত। আর ফরযে আইনও বলেছেন। যেমন, ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। আর ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এক মতে ফরযে কিফায়া।”
“আল ফিক্বহুল ইসলামিয়্যূ ওয়া আদিল্লাতুহু” কিতাবের ২য় খন্ডের ১৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
فقال الحنفية والما لكية الجما عة فى الفرا ئض غير الجمعة سنة مؤ كدة للر جال.
অর্থঃ “হানাফী এবং মালিকীগণ বলেন, জুমুয়া ব্যতীত ফরয নামাযসমূহ জামায়াতে আদায় করা পুরুষ লোকের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা।” (চলবে)
খন্দকার সেলিম আহমদ পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল
সুওয়াল: হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।
তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
৭. একজন নবীর পক্ষে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সম্ভব নয়। (নাউযুবিল্লাহ)
জাওয়াব: হাটহাজারী মৌলভীরা যে বলেছে, একজন নবীর পক্ষে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সম্ভব নয়।
তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য অজ্ঞতাসূচক, জিহালতপুর্ণ ও দলীলবিহীন। শুধু তাই নয় বরং কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। কারন তারা নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব থেকে এর প্রমাণ পেশ করতে পারে নাই এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত পারবেও না। (ইন্শাআল্লাহ। মুলতঃ হাটহাজারী মৌলভীরা ও তাদের সমজাতীয়রা আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান-মান, মর্যদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযিলত সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারণেই এ ধরনের কাট্টা কুফরী মুলক মন্তব্য করেছে। কারণ যেখানে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যারা খাদিম ও উম্মত তারাই একই সময়ে একাধিক স্থানে উপস্থিত থাকেন বা উপস্থিত থাকতে পারেন। এর বহু প্রমাণ রয়েছে।
যেমন, মালাকুল মউত হযরত আজরাঈল আলাইহিস্ সালাম একই সময়ে একাধিক স্থানে একাধিক লোকের রূহ্ কবয করে থাকেন।
অনুরূপভাবে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যাঁরা উম্মত তারাও যে একই সময়ে একাধিক স্থানে উপস্থিত থাকতে পারেন এরও বহু প্রমাণ রয়েছে। যেমন, এ প্রসঙ্গে আফযালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া অর্থাৎ নবীদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু চক্ষু মুবারক বন্ধ করে আরশ, কুরছি, লৌহ, কলম, বেহেশ্ত, দোযখ, জান্নাত, জাহান্নাম সব কিছুই এক চোখের পলকে উপস্থিত হয়ে দেখেছেন। সুবহানাল্লাহ্। (নুযহাতুল মাজালিস)
অনুরূপভাবে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ বিশ্ব বরেণ্য মুহাদ্দিস, ওলীয়ে কামিল, হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দেছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আরবী ভাষায় রচিত “যুবদাতুল আসরার” এবং ফার্সী ভাষায় “যুবদাতুল আসার” কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে,
একবার রমজান মাসে “মাহ্বুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আজম, হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন বড় পীর আব্দুল ক্বাদীর জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি একই দিনে একই সময়ে ৭০ জনের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে ইফতার করেছেন এবং নিজ বাড়িতেও ইফতার করেছেন। (সুবহানাল্লাহ্)
দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যাঁরা খাদিম ও উম্মতের অন্তর্ভূক্ত তাদের অবস্থা যদি এরূপ হয়, তাহলে যিনি আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্ষমতা কতটুকু হবে? যা সত্যিই চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়, উপলব্ধির বিষয়, অনুভূতির বিষয়, আক্বল -সমঝের বিষয়।
তাছাড়া “আশয়াতুল লুমুয়াত” গ্রন্থের কিতাবুস্ সালাত-এর তাশাহুদ অধ্যায়ে ও ‘মাদারেজুন্ নুবুওওয়াত” গ্রন্থের ১ম খন্ডের ১৩৫ পৃষ্ঠায় হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফাযায়েলের বর্ণনা প্রসঙ্গে হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,
وبعضے عرفاگفتاند کہ ایں خطاب بجھت سریان حقیقت محمد یاست در ذرانر مو جودات وافراد نمکنات پس انحضرت درذرات مصلیاں موجودوحاضراست پس مصلی را باید کہ ازیں معنی اگاہ باشد وازیں شھود غافل نہ بوتا انوار فرب داسرار معرفت منورد فانز گردد.
অর্থঃ “কোন কোন আরিফ ব্যক্তি বলেছেন, তাশাহুদে ‘আস্সালামু আলাইকা আইয়্যূহান্ নাবিয়্যূ বলে হুযুর পাকঞ্জছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করার রীতির এ জন্যই প্রচলন করা হয়েছে যে, ‘হাক্বীক্বতে মুহম্মদীয়া ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মূল সত্ত্বা সৃষ্টিকুলের অনুপরমাণূতে এমনকি সম্ভবপর প্রত্যেক কিছুতেই ব্যাপৃত। সুতরাং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযীগণের সত্ত্বার মধ্যে বিদ্যমান ও হাযির আছেন। নামাযীর এ বিষয়ে সচেতন হওয়া বা এ বিষয়ের প্রতি অমনোযোগী না হওয়াই বাঞ্ছনীয়, যাতে নামাযী নৈকট্যের নূর লাভে ও মারিফাতের গুপ্ত রহস্যাবলী উন্মোচনে সফলকাম হতে পারে।
হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন,
وخوطب عليه السلام كا نها اشارة الى انه تعالى يكشف له عن المصلين من امته حتى يكون كالحا ضر يشهد لهم بالعقل اعمالهم وليكون تذ كر حضوره سببا لمز يد الخشوع والخضوع.
অর্থঃ “নামাযে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে। এটা যেন এক কথারই ইঙ্গিতবহ যে, আল্লাহ্ পাক তাঁর হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতদের মধ্যে নামাযীদের অবস্থা তাঁর কাছে এমনভাবে উদ্ভাসিত করেছেন যেন তিনি তাদের মধ্যে হাযির বা উপস্থিত থেকেই সবকিছু দেখতে পাচ্ছেন, তাদের আমলসমূহ অনুধাবন করছেন। এ সম্বোধনের আরও একটি কারণ হচ্ছে তাঁর এ হাযির হওয়ার (উপস্থিতির) ধারণা অন্তরে অতিমাত্রায় বিনয় ও নম্রতার সৃষ্টি করে।”
হযরত আল্লামা সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ان اعتقد الناس ان روحه ومثا له فى وقت قرأة المولود وختم ز مضان وقر اءة القصا ئد يحضر جاز.
অর্থঃ “যদি কেউ বিশ্বাস পোষণ করে যে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র রূহ ও তাঁর “জিস্মে মিছালী” মীলাদ পাঠের সময়, রমজানে খতমে কুরআনের সময় এবং নাতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠ করার সময় উপস্থিত হন তবে এ বিশ্বাস পোষণ করা অবশ্যই জায়েয।” (তাফসীরে রুহুল বয়ান” )
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হলো যে, দুনিয়াস্থিতঃ অনু-পরমানুর প্রতিও হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সার্বক্ষণিক দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে। আর নামায, তিলাওয়াতে কুরআন শরীফ, ছলাত-সালাম, মাহ্ফিলে মীলাদ শরীফ পাঠ, নাতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠের মাহ্ফিলে বিশেষ করে নেককারদের নামাযে জানাযায় এক কথায় যে কোন সময়, যে কোন অবস্থায়, যে কোন স্থানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ব-শরীরে বা মেছালী শরীরে হাযির বা উপস্থিত হতে পারেন এবং হয়েও থাকেন। তবে একথা সর্বসিদ্ধ যে, এটা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এখতিয়ারের মধ্যে। তিনি কারো অধীন নন। তিনি একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর অধীন।
আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, আল্লাহ্ পাক ইল্ম ও কুদরতের দ্বারা হাযির ও নাযির। জাত হিসেবে নয়।
আর হুূযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিফত হিসেবে হাযির-নাযির বা উপস্থিত এবং জাত হিসেবে আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত ক্ষমতায় যে কোন সময়, যে কোন অবস্থায়, যে কোন স্থানে স্ব-শরীরে বা মেছালী শরীরে হাযির-নাযির বা উপস্থিত হতে পারেন ও হয়ে থাকেন।
আল্লাহ্ পাক হাটহাজারী মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সমজাতীয়দেরকে আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান-মান, মর্যদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযিলত সর্ম্পকের্ চিন্তা-ফিকির করার, উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। আমীন। (চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী-
ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-
জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।
উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-
….. (৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?
কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।
তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লেখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খণ্ডমূলক জবাব (৪)
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো-
(৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?
আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবী সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা দলীলবিহীন। কারণ গত দুই সংখ্যায় প্রদত্ত হক্বানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতিমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে তাঁরাই হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী।
অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের কথিত আলিমদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলীসমূহের কোনটাই বিদ্যমান নেই। আমরা যদি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি তবে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। যেমন হক্বানী আলিম হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে, ১. দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করা। অথচ ছয় উছূলীদের কথিত আলিমরা নবী-রসূল, ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমসহ দ্বীন ইসলামের অনেক বিষয়েই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেনা বরং তার খিলাফ আক্বীদা পোষণ করে। অর্থাৎ তাদের কথিত আলিমদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী এমনকি কুফরীমূলক অনেক আক্বীদাও রয়েছে। যেমন-
১. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গারে হেরায় চিল্লা দেয়ার উছীলাই কোরআন ও নুবুওওয়াত প্রাপ্ত হয়েছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে বিবৃত হয়েছে- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪০ দিন পর্যন্ত “গারে হেরা” পর্বতে থাকিয়া আল্লাহ্র ধ্যান ও যেকেরে চিল্লা দিলেন, যাহার ফলে তিনিও কোরআন ও নুবুওওয়াত প্রাপ্ত হইলেন। (নাউযুবিল্লাহ) (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৮৯, লেখক ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী)
২. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আক্বীদা হলো যে, দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঈমানের তাবলীগ করে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের ঈমানকে পরিপোক্ত করেছেন। যেমন তাদের কিতাবে লিখিত হয়েছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম…. দীর্ঘকাল পর্যন্ত ঈমানের তাবলীগ করে প্রথমে ঈমানকে পরিপোক্ত করিয়াছেন ……। (নাউযুবিল্লাহ) (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৭০ লেখক- ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী)
৩. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আক্বীদা হলো, উম্মতে মুহম্মদীর কারামত আর পূর্ববর্তী নবীদের মো’যেযা সমান কথা। যেমন এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে লিখিত রয়েছে যে, “পূর্বেকার নবীদের মো’যেযা আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতের কারামত একই সমান।” (নাউযুবিল্লাহ) (মালফুযাতে শায়খুল হাদীছ পৃষ্ঠা-৩৬, মূল- মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী, অনুবাদক- আঃ জলীল)
৪. হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম সম্পর্কে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আক্বীদা হলো যে, দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার কারণে আল্লাহ্ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস্ সালামকে বিপদে ফেলেছিলেন এবং তিনি সেখানে নিজের অপরাধ স্বীকার করে চল্লিশ দিন কাঁদা-কাটার পর আল্লাহ্ পাক তাঁর অপরাধ ক্ষমা করেন। এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, “দাওয়াত বন্ধ করার কারণে, আল্লাহ্ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস সালামকে অবশ্য গযবে ফেলিলেন …….।” “……. হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেটে ৪০ দিন আবদ্ধ থাকিয়া নিজ ক্রটি স্বীকার করিয়া তওবা …. করার কারণে বিপদ হইতে উদ্ধার পাইলেন।” (নাউযুবিল্লাহ) (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব-লেখক ইসাইল হোসেন দেওবন্দী পৃঃ৬২ ও ৮৯)
৫. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আক্বীদা হলো- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম দীর্ঘকাল পর্যন্ত তাবলীগ করেই ঈমানকে পরিপোক্ত করেছেন। তাই ঈমান পরিপোক্ত ও ছাহাবায়ে কিরামদের মত কাজ করতে হলে প্রচলিত তাবলীগ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তদের বিশিষ্ট আমীর, মাওলানা ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী লিখিত “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৭০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ঈমান দীর্ঘকাল তাবলীগ করার কারণেই পরিপোক্ত বা মজবুত হয়েছে। তাই যার ঈমানের দাওয়াতের আমল নাই, তার ঈমান থাকিতে পারেনা। (চলবে)
ডাঃ মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন ৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা,
জানাইকা এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪
সুওয়ালঃ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাউযুবিল্লাহ)
এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান- আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।
জাওয়াবঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।
কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভূক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফ এবং বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।
মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহু, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা। এ সম্পর্কে কতিপয় বর্ণনা এখানে পেশ করা হলো-
১১. দুনিয়া হলো আখিরাতের ক্ষেত। এখান থেকেই আখিরাতের সম্বল বা পাথেয় সংগ্রহ করে নিতে হবে। আবার দুনিয়া হলো আখিরাতের নমুনা। এখানকার অবস্থাসমূহ প্রত্যক্ষ করে আখিরাতের অবস্থা নিরূপণ করতে হয় এ কারণে কালামুল্লাহ শরীফে দুনিয়ার অবস্থাসমূহ দ্বারা আখিরাতের দলীল গ্রহণ করা হয়েছে।
উদাহরণ স্বরূপ বাদশা একজন। তাঁর প্রধান উযীর একজনই থাকেন। অতঃপর গভর্ণরদের মাধ্যমে তাঁর নির্দেশাবলী প্রজাপর্যন্ত পৌঁছে থাকে।
তদ্রুপ আল্লাহ পাক এক। তাঁর হাবীব নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও একজন। অতঃপর হযরত আওলিয়ায়ে কিরামগণের ইতায়াত বা অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীবের নির্দেশ তথা কুরআন ও সুন্নাহ’র আহকাম হাক্বীক্বীভাবে প্রতিপালন ও বাস্তবায়ন হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে ইঙ্গিত করেই কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
اطيعوا الله واطيعوا الر سول واولى الامر منكم.
অর্থঃ তোমরা আল্লাহ পাক-এর ইতায়াত কর, আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াত কর এবং যাঁরা উলিল আমর অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর মতে মত এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীবের পথে পথ হয়েছেন তাঁদের ইতায়াত কর। (সূরা নিসা-৫৯)
সুতরাং যারা নবী-রসূল ও আওলিয়ায়ে কিরামকে ওসীলা স্বীকার করে না তারা কুরআন ও সুন্নাহ তথা ইসলাম পালন করে না।
১২. আল্লাহ পাক-এর রহমত ব্যতীত কারো পক্ষে কোন নেক কাজ করা সম্ভব নয় এবং তাঁর রহমত ব্যতীত কোন পাপ কাজ থেকেও বেঁচে থাকা সম্ভব হয় না। এবং এই রহমত ব্যতীত কারো পক্ষে জান্নাতে প্রবেশ করাও সম্ভব হবে না। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ما من احد يدخل الجنة الا بر حمة الله تعا لى.
অর্থাৎ, “আল্লাহ পাক-এর রহমত ব্যতীত কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (মিশকাত শরীফ)
আল্লাহ পাক রহমান, রহীম। যা সূরা ফাতিহার মধ্যে তিনি ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ পাকই বান্দার উপর রহমত নাযিল করেন বা দান করেন। কিন্তু এই রহমত বান্দা সরাসরি আল্লাহ পাক থেকে লাভ করতে পারবে না। সেটা লাভ করতে হলে যিনি আল্লাহ পাক-এর হাবীব, যাঁকে আল্লাহ পাক সারা আলমের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন, যিনি রহমতসহ সব নিয়ামতের বণ্টনকারী তাঁর ওসীলা বা মাধ্যমে লাভ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
انما انا قا سم والله يعطى
অর্থঃ “নিশ্চয়ই আমি হলাম বণ্টনকারী আর আল্লাহ পাক হলেন দানকারী।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)
অতঃপর আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়ারিছ হিসেবে হযরত আওলিয়ায়ে কিরামগণ সেই রহমতের পরিপূর্ণ হিস্সা লাভ করেন। যার ফলে তাঁদের শানে ইরশাদ হয়েছে
ان رحمت الله قريب من المحسنين.
অর্থঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর রহমত মুহসিনীন বা আল্লাহওয়ালাগণের নিকটবর্তী।” (সূরা আরাফ-৫৬)
অর্থাৎ ছাহাবীগণ ব্যতীত সকলের জন্য রহমত হাছিলের ওসীলা বা মাধ্যম হচ্ছেন হযরত আওলিয়ায়ে কিরামগণ। তাঁদের ছোহবতে সেটা হাছিল হয়ে থাকে।
কাজেই, যারা ওসীলা মানে না, তারা আল্লাহ পাক-এর রহমত থেকে বঞ্চিত। ফলে, তারা হিদায়েত থেকেও বঞ্চিত এবং জান্নাত থেকেও বঞ্চিত হবে।
১৩. হাক্বীক্বী বান্দা ও উম্মত হতে হলে ফয়েয হাছিল করতে হয়। আল্লাহ পাক-এর হাবীব আল্লাহ পাক-এর গুণে গুণান্বিত, ফয়েযে ফয়যিয়াব এবং হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ সকলেই এ গুণে গুণান্বিত ছিলেন। কিন্তু উম্মত নবী কিংবা নায়িবে নবীগণের ওসীলা ব্যতীত কি করে সেই ফয়েয হাছিল করবে? কারণ যখন দুর্বল-সবল থেকে ফয়েয গ্রহণের ইচ্ছা করবে তখন মধ্যখানে এমন ওসীলার প্রয়োজন হয় যিনি সবল থেকে ফয়েয গ্রহণে ও দুর্বলদের ফয়েয দানে সক্ষম। যেমন রুটি পাক করতে হলে মধ্যখানে তাবা’র প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ রুটি আগুণ থেকে মাধ্যম ব্যতিরেকে ফয়েয গ্রহণে অক্ষম। তদ্রুপ خلق الانسان ضعيفا শক্তিহীন, দুর্বল সৃষ্টি মানুষ الله قوى عزيز অধিক শক্তিশালী, পরাক্রমশীল আল্লাহ পাক থেকে মাধ্যম ব্যতীত ফয়েয গ্রহণ করাটা একেবারে অসম্ভব।
এজন্য খালিক্ব ও মাখলূক্ব, প্রতিপালক ও প্রতিপালিতের মধ্যখানে এমন এক মহান মাধ্যমের প্রয়োজন ছিল যিনি আল্লাহ পাক থেকে ফয়েয গ্রহণে ও মাখলূক্বকে ফয়েয দানে সক্ষম হন। এ মহান ওসীলা হচ্ছেন নূরে মুজুাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যিনি একদিকে খালিক্ব মালিক আল্লাহ পাক-এর সাথে মিলিত। অন্যদিকে মাখলূক্ব বা সৃষ্টির অন্তর্ভূক্ত।
হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সরাসরি আল্লাহ পাক-এর হাবীব থেকে ফয়েয হাছিল করে হাক্বীক্বী বান্দা ও উম্মত হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই ফয়েয হাছিল করতে হলে আল্লাহ পাক-এর হাবীবের যাঁরা হাক্বীক্বী নায়িব হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম তাঁদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ ও ছোহবত ইখতিয়ারের মাধ্যমে হাছিল করতে হবে।
অতএব, যারা হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালাম ও হযরত আওলিয়ায়ে কিরামগণকে ওসীলা স্বীকার করবে না তারা কস্মিনকালেও হাক্বীক্বী বান্দা ও উম্মত হতে পারবে না। (চলবে)
নায়ক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।
সুওয়াল: হানাফী মাযহাবে –
(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।
(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।
(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।
(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।
(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।
(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।
(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।
(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো জোড়া জোড়া এবং আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।
(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।
(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।
(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।
(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।
কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।
অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবিহক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে।
(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।
এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইল্ম্ রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।
অতএব, হানাফী মাযহাবে তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’ বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা ক্বিরায়াত শেষে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে দুয়া কুনূত পড়ে সে বর্ণনা হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।
(তৃতীয় অংশ)
বিতির নামাযে তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ শেষে (তাকবীরে তাহ্রীমার ন্যায়) তাকবীর বলে হাত উঠিয়ে অতঃপর দুয়া কুনূত পাঠ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى بن كعب رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقرأ فى الثا لثة بقل هو الله احد ويقبت قبل الركوع وفيما رواه البخارى فى جز ئه عن عند الله رضى الله تعالى عنه انه كان يقرأ فى اخر ركعة من الو تر قل هو الله احد ثم ير فع يد يه فيقنت قبل الر كوع.
অর্থঃ হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতির নামাযের তৃতীয় রাকায়াতে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ সুরা পাঠ করতঃ রুকুর পূর্বে দুয়া কুনূত পাঠ করতেন এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতির নামাযের শেষ (তৃতীয়) রাকায়াতে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ সূরা পাঠ করতঃ হাত উঠিয়ে এরপর দুয়া কুনূত পাঠ করতেন। (বুখারী, নাসায়ী)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن ابى عثمان قال كنا وعمر يؤم الناس ثم يقنت بنا عند الر كوع ير فع يد يه حتى يبد ؤ كفاه. كذا ثبت رفع اليد ين للقنوت قبل الر كوع عن ابن عمر و على وابى درداء رواه البخارى فى جز ئه با سناد صحيح.
অর্থঃ ইমাম বুখারী ছহীহ সনদে হযরত আবূ উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন, হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমাদেরকে ইমামতি করে নামায পড়াতেন এবং রুকুর পূর্বে হাত উঠিয়ে তারপর দুয়া কুনূত পড়ে রুকু করতেন।
এমনিভাবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমুখ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম হতে ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি রুকুর পূর্বে দুয়া কুনূতের জন্য হাত উঠানোর আমল বর্ণনা করেছেন। (আত্-তালখীছ, মায়ারিফুস্ সুনান)
তিন রাকায়াত বিতির নামায শেষ করার পর সালাম ফিরাতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
عن عا ئشة رضى الله تعالى عنها قالت كان النبى صلى الله عليه وسلم لا يسلم فى ركعتى الو تر وفى رواية يوتر بثلث لا يسلم الا فى اخر هن نسا ئى شر يف، طحا وى شريف ورواه الحا كهم بسند على شرط الشيخين.
অর্থঃ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন রাকায়াত বিতির নামায আদায় করতেন। দু’ রাকায়াতের পর সালাম ফিরাতেন না। বরং তৃতীয় রাকায়াত আদায় করার পর সালাম ফিরাতেন। নাসায়ী শরীফ, তহাবী শরীফ এবং হাকিম বুখারী ও মুসলিম-এর সনদে উক্ত হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন।
عن ابى زياد عن الفقهاء السعة المد ينة (1) سعيد بن المسيب (2) عر وة بن الز بير (3) قا سم بن محمد (4) ابو بكر بن عبد الر حمن (5)عبيد الله بن عبد الله (6) سليمان بن يسار (7) خارجة بن زيد ان الوتر ثلث لا يسلم الا فى اخرهن.
অর্থঃ হযরত আবু যিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, মদীনা শরীফের প্রসিদ্ধ সাতজন ফক্বীহ- ১. হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি, ২. হযরত উরওয়াহ ইবনে যুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি, ৩. হযরত ক্বাসিম ইবনে মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ৪. হযরত আবু বকর ইবনে আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি, ৫. হযরত উবায়দুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, ৬. হযরত সুলায়মান ইবনে ইয়াসার রহমতুল্লাহি আলাইহি, ৭. হযরত খারিজাহ ইবনে যায়িদ রহমতুল্লাহি আলাইহি সকলেই বর্ণনা করেছেন যে, বিতির নাময তিন রাকয়াত এবং সর্বশেষে সালাম ফিরাতে হবে।
হাদীছ শরীফের উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা সাব্যস্ত হলো যে, বিতির তিন রাকয়াতই পড়তে হবে। দু’ রাকয়াতের পর বৈঠক করে তাশাহ্হুদ পাঠ করে দাঁড়াতে হবে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা- ক্বিরায়াত পাঠ করতঃ আল্লাহু আকবার বলে হাত উঠিয়ে তারপর হাত বেঁধে দুয়া কুনূত পাঠ করে রুকুতে যেতে হবে। অতঃপর নিয়ম মাফিক সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করতে হবে।
মুহম্মদ আহমাদুর রহমান, পটিয়া, চট্টগ্রাম মুহম্মদ মাসউদুল হক, সোনাইমুরি, নোয়াখালী
সুওয়াল: পটিয়া জমিরিয়া খারিজী মাদ্রাসার অখ্যাত পত্রিকা অক্টোবর+নভেম্বর/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় সমস্যা ও সমাধান বিভাগে প্রদত্ত একটি সমাধানের প্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো আমরা জানতে ইচ্ছুক তা হলো-
৭. “চোখের যিনা হলো বেগানা লোককে দেখা,” এ হাদীছ শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা কি? যদি খাহেশাতের সাথে দৃষ্টি না দেয় তবেও কি তা ব্যাভিচার বলে গণ্য হবে?
উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা মুলতঃ হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা বা উলামায়ে ‘ছূ’-এর অন্তর্ভুক্ত। তাই তারা নিজেদের কথিত শীর্ষস্থানীয় উলামাদের বাঁচাতে নির্লজ্জভাবে কুরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করেছে, আল্লাহ পাক, তাঁর রসূল ও হক্কানী উলামায়ে কিরামকে দোষারূপ করেছে, বেপর্দাকে সুকৌশলে জায়িয করে শরীয়ত পাল্টে দিয়ে নতুন শরীয়ত প্রকাশ করে নব্য কাদিয়ানী হিসেবে নিজেদেরকে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয় বিস্তারিতভাবে ও দলীলের মাধ্যমে পর্যালোচনা করলে এটাই সুস্পষ্ট প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবহিকভাবে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
(ধারাবাহিক)
৭. “চোখের যিনা হলো বেগানা লোককে দেখা,” এ হাদীছ শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা কি? যদি খাহেশাতের সাথে দৃষ্টি না দেয় তবেও কি তা ব্যাভিচার বলে গণ্য হবে?
এর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, হ্যাঁ যদি খাহেশাতের সাথে দৃষ্টি নাও দেয় তবুও তা ব্যভিচার বলে গণ্য হবে। কারণ কুরআন শরীফ-হাদীছ শরীফের কোথাও একথা উল্লেখ নাই যে, খাহেশাতের সাথে দৃষ্টি না দিলে গুণাহ হবেনা। বরং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে কোন শর্ত শারায়েত ছাড়াই অর্থাৎ আমভাবেই বলা হয়েছে যে, বেগানা পুরুষ বেগানা মহিলার দিকে ও বেগানা মহিলা বেগানা পুরুষের দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম, কবীরাহ গুণাহ ও ব্যভিচারের অন্তর্ভূক্ত।
যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
قل للمؤ منين يغضوا من ابصا رهم ويحفظوا فر وجهم ذلك از كى لهم ان الله خبير بما يصنعون. وقل للمؤ منت يغضضن من ابصار هن ويحفظن فر و جهن ولا يبد ين زينتهن.
অর্থঃ “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি মু’মিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তারা যা করে তার খবর রাখেন। আর আপনি মু’মিনাদেরকে বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে ও তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর-৩০,৩১)
আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن بريدة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلى يا عنى لا تتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليست لك الا خرة.
অর্থঃ “হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, দৃষ্টিকে অনুসরণ করোনা। প্রথম দৃষ্টি (যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয় তা) ক্ষমা করা হবে; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।” অর্থাৎ প্রতি দৃষ্টিতে একটি কবীরা গুণাহ্ লেখা হয়ে থাকে। (আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, দারিমী, মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن الحسن مر سلا قال بلغنى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعن الله النا ظر والمنظور اليه.
অর্থঃ “হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, আমার নিকট এই হাদীছ শরীফ পৌছেছে, যে দেখে এবং দেখায় তার প্রতি আল্লাহ পাক-এর লা’নত।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাক এবং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাদীছ শরীফে আমভাবেই বা কোন শর্ত-শারায়েত ছাড়াই পুরুষদেরকে বেগানা মহিলার দিকে এবং মহিলাদেরকে বেগানা পুরষের দিকে দৃষ্টি দিতে নিষেধ করেছেন। কোথাও খাহেশাতের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি যে হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে যে, “চোখের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি দেয়া” সে হাদীছ শরীফেও খাহেশাতের কথা উল্লেখ নাই।
যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه فال قال رسول الله صلى اله عليه وسلم العينا ن زناهما النظر والاذ نان زناهما الاستماع واللسان ز ناه الكلام واليد زناها البطش والرجل ز ناها الخطى والقلب يهوى ويتمنى ويضدق ذلك القرج ويكذ به.
অর্থঃ “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “চোখের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি করা, কানের ব্যভিচার হলো শ্রবণ করা, মুখের ব্যভিচার হলো কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হলো স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হলো ধাবিত হওয়া, অন্তর চায় ও আকাঙ্খা করে এবং লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য অথবা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।” (বুখারী, মুসলিম, কানযুল উম্মাল)
খাহেশাত ছাড়া দৃষ্টি দেয়াও যে নিষেধ তা নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত হয়। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ام سلمة رضى الله تعالى عنها انها كا نت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمو نة رضى الله عنهما اذ اقبل ابن ام مكتوم فد خل عليه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجبا منه فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم اليس هو اعمى لايبصر نا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افعميا وان انتما الستما تبصر انه.
অর্থঃ “হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, একবার তিনি এবং হযরত মাইমূনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলেন। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলেন অন্ধ ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মু’মিনীনগণকে বললেন, আপনারা দু’জন তাঁর থেকে পর্দা করুন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না। উত্তরে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনারাও কি অন্ধ? আপনারাও কি তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন না?” (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদত্ম
এখানে ফিকিরের বিষয় যে, কুরআন শরীফে যাদেরকে ‘মু’মিনগণের মা’ বলা হয়েছে, যাদের ব্যাপারে অন্তরে কোন প্রকার খারাপ চিন্তাও উদয় হওয়া সম্ভব নয়। এবং যাদের দ্বারা ফিৎনারঞ্জবা খায়েশাতের সামান্যতমও আশংকা নেই তাদেরকেও পর্যন্ত আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেগানা পুরুষের দিকে দৃষ্টি দিতে নিষেধ করেছেন।”
অতএব, অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইচ্ছাকৃতভাবে খাহেশাত ছাড়া দৃষ্টি দিলেও ব্যভিচার ও কবীরা গুণাহ হবে। যারা বলে ‘খাহেশাত ছাড়া দৃষ্টি দিলে ব্যভিচারের গুনাহ হবে না, তারা কুরাআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ সম্পর্কে নেহাতই অজ্ঞ এবং কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের অপব্যাখ্যাকারী।
দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, পটিয়া খারিজী মৌলবী ছাহেবদের কথিত শীর্ষস্থানীয় মৌলবীরা যে খাহেশাতের সাথে দৃষ্টি দেয়নি এটা তারা জানলো বা বুঝলো কিভাবে? তবে কি তারা আল্লাহ পাক-এর ন্যয় অন্তরের খবর জানার দাবিদার? নাকি তাদের দাবী মতে তাদের কথিত শীর্ষস্থানীয় মৌলবীরা নপুংসক? মূলতঃ তাদের কথিত শীর্ষস্থানীয় মৌলবীরা যে খাহেশাতের সাথেই দৃষ্টি দিয়েছে বা মহিলা প্রধান মন্ত্রীর সাথে দেখা করার সময় তাদের খাহেশাতকে সংবরণ করতে পারেনি তা তাদের কথিত শীর্ষস্থানীয় মৌলবীদের একজন তথা কথিত শাইখুল হাদীছ আযীযুল হক্বের বক্তব্য দ্বারাই প্রমানিত হয়। যেমন সে তার লিখিত ‘আল কুরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা’ নামক বইয়ের ১৩৫ পৃষ্ঠায় লিখেছে, “দৈহিক মিলনের ফাঁক থাকুক আর না থাকুক, আর থাকলে তো কথাই নেই, আকর্ষণ (খাহেশাত) এতো প্রবল ও তীব্র হয় যে, সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, মুনি মোহন্ত, দরবেশ, কেউ আত্মসংবরণ করতে পারেনা।”
অর্থাৎ, তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আযীযুল হক্বসহ তাদের শীর্ষস্থানীয় কোন মৌলবী সে সময় খাহেশাতকে সংবরণ করতে পারেনি। অর্থাৎ তারা খাহেশাতের সাথেই দৃষ্টি দিয়েছিল।
মুহম্মদ আব্দুল হান্নান, শান্তিবাগ, ঢাকা
সুওয়ালঃ আমরা জানি, ছবি তোলা হারাম এবং বেপর্দা হওয়াও হারাম। কিন্তু বর্তমানে পুরুষ ও মহিলাকে হজ্জ করতে হলে বিশেষ করে এ দু’টি হারাম কাজের স্বীকার হতে হয়। এমতাবস্থায় হজ্জ করার ক্ষেত্রে শরীয়তের কি হুকুম? জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াবঃ স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তাঁর কালাম পাকে এবং স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব রহমাতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাদীছ পাকে হজ্জের বিধি-বিধান সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। সেই সমষ্টিগত বর্ণনা থেকে উম্মতে মুহম্মদীর প্রতি জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয সাব্যস্ত হয়েছে। এবং এ ক্ষেত্রে শর্ত করা হয়েছে পথের সামর্থ্য ও নিরাপত্তার।
পথের সামর্থ্য বলতে “সাংসারিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর হজ্জে যাওয়া ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারর্গের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্বল ও পাথেয় থাকা এবং যানবাহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকা।” আর পথের নিরাপত্তা বলতে “সুস্থ থাকা এবং জান-মাল, ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা থাকা।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
ولله على الز س حج البيت من استطاع اليه سبيلا.
অর্থঃ “আল্লাহ পাক-এর জন্যেই মানুষের প্রতি হজ্জ করা ফরয- যার পথের সামর্থ্য ও নিরাপত্তা রয়েছে।” (সূরা আলে ইমরান-৯৭)
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
فمن فرض فيهن الحج فلا رفث ولافسوق ولاجد ال فى الحج.
অর্থঃ “যে ব্যক্তির প্রতি হজ্জ ফরয সে যেন হজ্জ পালন করতে গিয়ে নির্জনবাস ও তার সংশ্লিষ্ট কোন কাজ না করে এবং কোন প্রকার ফাসিকী বা নাফরমানীমূলক কাজ না করে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে।” (সূরা বাক্বারা-১৯৭)
আয়াত শরীফে স্পষ্টরূপে বলা হয়েছে যে, হজ্জ করতে গিয়ে যদি ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা না থাকে তথা হজ্জ করতে গিয়ে যদি কাউকে হারাম ও কুফরী কাজ করতে হয় তাহলে তার উপর হজ্জ ফরয হবে না। যেমন ছবি তোলা, পর্দা লঙ্ঘণ করা উভয়টি শক্ত হারাম ও কবীরা গুণাহ এবং চরম ফাসিকী ও নাফরমানীমূলক কাজ। সুতরাং হজ্জের অজুহাতে এই হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ করা কখনই শরীয়তসিদ্ধ নয়। বরং সর্বক্ষেত্রে এ হারাম কাজে বাধা প্রদান করা প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে দেখে সে যেন তা হাত দ্বারা বাধা দেয়। যদি সে তা হাত দ্বারা বাধা দিতে না পারে তাহলে সে যেন তা যবান দ্বারা বাধা দেয়। যদি যবানের দ্বারাও বাধা দিতে না পারে তাহলে যেন অন্তরে তা ঘৃনা করে দূরে সরে থাকে। আর এটাই সবচেয়ে দূর্বল ঈমানের পরিচয়। এরপর ঈমানের আর শরিষা পরিমাণও অবশিষ্ট নেই। (মুসলিম শরীফ)
অর্থাৎ ক্ষমতা থাকলে প্রথমত: শক্তি বা বল প্রয়োগ করে ছবি ও বেপর্দা বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ সেই ক্ষমতা যদি না থাকে তাহলে যবানে বা মুখে বলতে হবে বা জানিয়ে দিতে হবে যে, ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া হারাম। হজ্জসহ সর্বক্ষেত্রে ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়া হারাম ও কবীরা গুণাহ। জায়িয মনে করা কুফরী। কাজেই মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ এবং হজ্জের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল স্থান থেকে সি. সি. টিভি ও ক্যামেরা সরিয়ে নেয়া হোক। তৃতীয়তঃ যদি যবানে বলার ক্ষমতাও না থাকে তাহলে ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়াকে অন্তর থেকে হারাম ও গুণাহ্র কাজ স্বীকার করে তা থেকে দূরে সরে থাকতে হবে। আর এটা হচ্ছে একেবারে দূর্বল ঈমানদারের পরিচয়। এরপরে ঈমানের আর কোন স্তর নেই। অর্থাৎ যারা হাতেও বাধা দিবে না, যবানেও প্রতিবাদ করবে না এবং সেই হারাম কাজকে অন্তরে খারাপ জেনে বিরত বা দূরেও সরে থাকবে না বরং সেটাকে সমর্থন করবে এবং তাতে জড়িত হবে হাদীছ শরীফ মোতাবেক তাদের ঈমান নেই। তাহলে ছবি তুলে ও বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা কি করে জায়িয হতে পারে?
অতএব, কেউ যদি সত্যিই শরীয়তের নির্দেশ অনুযায়ী হজ্জ করতে চায় তাহলে তাকে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘোষণাকৃত ছবি তোলা ও বেপর্দাসহ সর্বপ্রকার হারাম কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি হজ্জ করতে গিয়ে ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া অথবা অন্য কোন হারাম কাজে জড়িত হতে হয় তাহলে হজ্জ ফরয হবে না। যেমন কোন মহিলা যদি সারা পৃথিবীর মালিকও হয়, আর তার যদি কোন মাহ্রাম না থাকে তাহলে তার উপর হজ্জ ফরয হবে না। কারণ মাহ্রাম ব্যতীত হজ্জে গেলে তার দ্বারা হারাম কাজ হওয়ার আশংকা বিদ্যমান।
কেউ কেউ কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে বলে, “জরুরত বা মা’জুরতার কারণে হারামটা মুবাহ হয়ে যায়। তাই হজ্জের জন্য ছবি তুললে কোন গুণাহ হবে না। কারণ তা জরুরতবশতঃ তোলা হয়। এর জবাবে বলতে হয় যে, হজ্জের ক্ষেত্রে তাদের উক্ত বক্তব্য আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ হজ্জের জন্য ছবি তোলাটা কখনই মা’জুরের পর্যায়ে পড়ে না। কেননা হজ্জ করার জন্য সরকার বা অন্য কারো পক্ষ থেকে বাধ্য করা হয়নি এবং ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা না থাকায় যেখানে হজ্জই ফরয নয় সেখানে কি করে সে মা’জুর হলো? এখন কোন মহিলা যদি বলে, আমার সম্পদ রয়েছে কিন্তু মাহরাম নেই এক্ষেত্রে আমি মা’জুর, সুতরাং মাহরাম ছাড়াই হজ্জ করবো। তার এ কথা কি শরীয়তে গ্রহণযোগ্য হবে? কস্মিনকালেও নয়। কারণ মাহ্রাম ছাড়া তার উপর হজ্জই ফরয নয়। আর যদি হজ্জ ফরয না হয় তাহলে সে মা’জুর হলো কিভাবে? বরং কোন সরকারের পক্ষ থেকে হজ্জের ক্ষেত্রে ছবি তোলাকে আবশ্যক করাটা হজ্জের ফরয সাকিত বা রহিত হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম একটি কারণ বা বাধা। যেটা হাদীছ শরীফে ‘সুলত্বানে জায়ির বা যালিম শাসক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মুহম্মদ হারুনুর রশীদ, টাঙ্গাইল
সুওয়ালঃ হজ্ব পালনের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার আমলের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি?
জাওয়াবঃ হ্যাঁ, পুরুষ ও মহিলার আমলের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। তন্মধ্যে জরুরী কিছু পার্থক্য বর্ণনা করা হলো।
(১) হজ্জে পুরুষেরা মাথা খোলা রাখবে মহিলারা মাথা ঢেকে রাখবে।
(২) পুরুষেরা তালবিয়া পাঠ করবে উচ্চস্বরে আর মহিলারা তালবিয়া পাঠ করবে নিম্নস্বরে।
(৩) পুরুষেরা তাওয়াফের সময় রমল করবে মহিলারা রমল করবেনা।
(৪) ইজতেবা পুরুষেরা করবে মহিলাদের করতে হয়না।
(৫) সাঈ করার সময় পুরুষেরা মাইলাইনে আখজারাইনের মধ্যস্থানে দৌড়াবে। মহিলারা দৌড়াবেনা।
(৬) পুরুষেরা মাথা কামাবে মহিলারা শুধু মাথার চুল এক অঙ্গুলি বা এক ইঞ্চি পরিমাণ ছাটবে।
(৭) বিদেশী পুরুষ হাজী সাহেবদের জন্য তাওয়াফে বিদা করা ওয়াজিব। বিদেশী মহিলা হাজীদের জন্যও ওয়াজিব। তবে প্রাকৃতিক কারণে মহিলারা অসুস্থ হয়ে পড়লে এ ওয়াজিব তাদের জন্য সাকেত হয়ে যায়।
(৮) পুরুষদের জন্য সেলাই করা কাপড় নিষিদ্ধ মহিলারা সেলাই করা কাপড় পরিধান করতে পারবে।
মুহম্মদ আখতারুজ্জামান, ঢাকা
সুওয়ালঃ হজ্জ আদায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানে যে আলাদা আলাদা দোয়া-দুরূদ ও তাসবীহ্ পড়ার নিয়ম রয়েছে তা প্রায় অনেক হাজী ছাহেবদের পক্ষেই আদায় করা সম্ভব হয়না। তার কারণ হচ্ছে- (১) স্মরণ শক্তির অভাব, (২) সময়ের স্বল্পতা ও (৩) অধিক ব্যস্ততা ইত্যাদি।
এক্ষেত্রে তাদের জন্য এমন কোন আমল আছে কি যা হাজী ছাহেবরা সহজে আদায় করতে পারবে?
জাওয়াবঃ হ্যাঁ, যে সমস্ত হাজী ছাহেবরা হজ্বের বিস্তারিত দোয়া-দুরূদ ও তাসবীহ্ ইত্যাদি পাঠ করতে অপারগ তাদের জন্য সবচেয়ে সহজ আমল হচ্ছে তারা প্রতি কদমে, প্রতি মাকামে ও প্রতি স্থানে শুধু দরূদ শরীফ পাঠ করবে। আর দরূদ শরীফের মধ্যে সবচেয়ে সহজ দুরূদ শরীফ হলো-
صلى الله عليه وسلم.
উচ্চারণঃ “ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”।
আর যদি কোন হাজী ছাহেবদের পক্ষে সম্ভব হয় তাহলে উক্ত দুরূদ শরীফ পাঠ করার ফাঁকে ফাঁকে যা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ দোয়া, তা পাঠ করতে পারে। দোয়াটি হচ্ছে-
لا اله الا الله وحده لاشر يك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيىء قد ير.
উচ্চারণঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু লাহুল মূলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির।”
মুহম্মদ শুয়াইবুদ্দীন, লালমনির হাট
সুওয়াল ঃ কুরবানী কার উপর ওয়াজিব?
জাওয়াবঃ যিলহজ্জ মাসের দশ, এগার, বার অর্থাৎ দশ তারিখের সুবহে সাদিক হতে বার তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নেসাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়েজে আসলিয়াহ্ (নিত্য প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। উল্লেখ্য যে, যদি কারো নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং তা যদি নেসাব পরিমাণ হয়, যেমন- কারো পাঁচটি ঘর আছে, একটির মধ্যে সে থাকে আর তিনটির ভাড়া দিয়ে সে সংসার চালায় আর একটি অতিরিক্ত, যার মূল্য নেসাব পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে তার উপরে কুরবানী ওয়াজিব হবে।
{দলীলসমূহঃ আলমগীরী, শামী, আইনুল হিদায়া, ফতহুল কাদীর, গয়াতুল আওতার, শরহে বিকায়া, বাহর, দুররুল মুখতার, কাযিখান ও ইনায়া ইত্যাদি।
মুহম্মদ আল আমীন, নরসিংদী
সুওয়াল ঃ কুরবানীর পশু যবেহ করার সুন্নতী পদ্ধতি এবং নিয়ত জানালে খুশি হবো।
জাওয়াবঃ কুরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর কুবানীর করতে হবে। আর কুরবানীর করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরিভাগ এবং কক্তনালীর মাঝামাঝি স্থানে যেন জবেহ করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মূখভাগে দু’টি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দু’টি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দু’টি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবেনা। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বেজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। কুরবানীর নিয়ত :- (যবেহ করার পূর্বে)
انى وجهت وجهى للذى فطر السموات والارض حنيفا وما انا من المشر كين ان صلابى ونسكى ومحياى ومما تى لله رب العلمين لا شريك له وبذ لك امرت وانا من المسلمين اللهم منك ولك.
উচ্চারণঃ- ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া ইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। লা শারীকালাহু ওয়া বি যালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা। এ দোয়া পড়ে بسم الله الله اكبر বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলে জবেহ করতে হবে। জবেহ করার পর এ দোয়া পড়বে
اللهم تقبله منى كما تقبلت من حبيبك سيد نا محمد صلى الله عليه وسلم وخليلك ابرا هيم عليه السلام.
উচ্চারণঃ- আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খালীলিকা ইব্রাহীমা আলাইহিস সালাম।
যদি নিজের কুরবানী হয়, তবে منى (মিন্নী) বলতে হবে। আর যদি অন্যের কুরবানী হয়, তবে من (মিন) শব্দের পর যার বা যাদের কোবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি অন্যের সাথে শরীক হয়, তাহলে منى (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর من (মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে, তাহলে জবেহ করার সময় শুধু বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলে কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে অবশ্যই প্রত্যেক জবেহকারীর উচিৎ উপরোক্ত নিয়ত শিক্ষা করা। কেননা উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে কুরবানী করা সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত।
{দলীলসমূহঃ আহমদ, আবূ দাউদ, তিরমীযী, দারিমী ইবনে মাযাহ, বজলূল মযহুদ, মিশকাত, মিরকাত, মুযাহেরে হক্ব, লুমায়াত, ত্বীবী, তালিক্ছ্ ুছবীহ, আশয়াতুল লুমুয়াত, আলমগীরী, শামী, দুররুল মুখতার, আইনুল হিদায়া ও বাহর ইত্যাদি।
মুছাম্মত শুমাইয়া আক্তার (সুমি) বাগেরহাট, খুলনা।
সুওয়ালঃ বর্তমান সময়ে কোন ব্যক্তি যদি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে ছাগল, বকরী, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি কুরবানী দেয় অথবা গরু, মহিষ, উটের সাত নামের মধ্যে যদি এক নাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারকে দেয়, তবে উক্ত নামের গোশ্তের হুকুম কি? এটা কি সকলে খেতে পারবে? অথবা এ গোশ্ত অছিয়তকৃত গোশ্তের হুকুমের অন্তর্ভূক্ত হবে কি না?
জাওয়াবঃ হ্যাঁ, উক্ত কুরবানীকৃত গোশ্ত সকলে খেতে পারবে। আর এটা অছিয়তকৃত গোশ্তের হুকুমের অন্তর্ভূক্ত হবে না। কেননা হাদীছ শরীফে আছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বিশেষভাবে কুরবানী করার জন্যে যে নির্দেশ দিয়েছেন এটা তাঁর জন্যই খাছ।
বর্তমান সময়ে কোন ব্যক্তি যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ থেকে কুরবানী দেয়, তবে এটা তার ফযীলত, তথা বারাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহ্মত, মাগফিরাত, নাজাত সর্বোপরি আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভ করা ও তার কুরবানী কবুল হওয়ার একটি উসীলা।
কাজেই আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ থেকে যদি কেউ কুরবানী দেয়, তবে উক্ত কুরবানীকৃত গোশ্ত সকলেই খেতে পারবে।
{দলীলসমূহঃ আবূ দাউদ, তিরমীযী, বযলুল মজহুদ, শরহে তিরমীযী, মিশকাত, মিরকাত, লুমায়াত, আশয়াতুল লুমায়াত, ত্বীবী, তালিক ও মুযাহিরে ইত্যাদি।}
আহমদুল্লাহ, কুষ্টিয়া
সুওয়ালঃ যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি এক নামে কুরবানী দিয়ে গোশ্ত বন্টন করে নিতে পারবে কিনা?
জাওয়াবঃ হ্যাঁ, যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি, এমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কুরবানী দিয়ে গোশ্ত বন্টন করে নিতে পারবে। তবে কোরবানীর পশু গরু, মহিষ ও উটে সাত নাম এবং দুম্বা, মেষ বা ভেড়া, বকরী, খাসিতে এক নাম দেয়ার হুকুম রয়েছে।
গরু, মহিষ, উটে সাত নামের বেশী দিলে কুরবানী দুরুস্ত হবেনা। আর সাত নামের কমে কুরবানী করলে দুরুস্ত হবে। আর ছাগল, দুম্বা, ভেড়া এক নামের বেশী কুরবানী করলে কারো কুরবানী দুরুস্ত হবেনা।
যেমন- যদি ৪০ জন ব্যক্তি ২০০ টাকা করে ৮০০০ টাকা দিয়ে একটা গরু কিনে সাত নামে বা তার থেকে কম নামে কুরবানী করে গোশ্ত বন্টন করে নেয়, তাতেও কুরবানী শুদ্ধ হবে। এজন্য উত্তম ও আদব হচ্ছে- এক নাম দিলে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম দেয়া। এরপর অন্য কারো নাম দিলে যাদের মাধ্যমে কুরবানীর বিধান চালু হয়ে আসছে, যেমন- হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম, হযরত ইসমাইল আলাইহিস্ সালাম,, হযরত হাজেরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাঁদের নামে কুরবানী দেয়া উত্তম। আরো বেশী নামে কুরবানী দিলে হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালাম,, আহ্লে বায়েত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর নামেও কুরবানী করা যেতে পারে।
তদ্রুপ একটা খাসি তিনজনে মিলে পয়সা দিয়ে খরীদ করে, যদি এক নামে কুরবানী করে গোশ্ত বন্টন করে নেয়, তবে সে কুরবানীও শুদ্ধ হবে।
{দলীলসমূহঃ শামী, আলমগীরী ফতহুল ক্বাদীর, কাযীখান ইত্যাদি।}
মুহম্মদ সিদ্দিকুর রহমান, ভোলা
সুওয়ালঃ ওয়াজিব ও নফল কুরবানী, ওলীমা ও আক্বীকা এক সাথে জায়িয হবে কিনা?
জাওয়াবঃ হ্যাঁ, জায়িয হবে।
{দলীলসমূহঃ শামী, আলমগীরী ইত্যাদি।}
মুহম্মদ সামছুদ্দীন, নাটোর
সুওয়ালঃ মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করা জায়িয কিনা?
জাওয়াবঃ কুরবানী আল্লাহ্ পাক-এর নামে করতে হবে। যেমন- بسم الله الله اكبر.
উচ্চারণঃ “বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আক্বার” বলে কুরবানী করতে হবে।
এখন যদি কেউ কোন ব্যক্তির নামে, হোক সে জীবিত অথবা মৃত-এর নামে করে, যেমন- “বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার”-এর পরিবর্তে আব্দুর রহীম, আব্দুল করীম, বকর, যায়েদ, আমর ইত্যাদি নামে কুরবানী করে, তাহলে কুরবানী অশুদ্ধ হবে। উক্ত পশুর গোশ্ত খাওয়াও হারাম হবে ও সাথে সাথে কুফরী ও কবীরা গুণাহ্ হবে। মূলতঃ কুরবানী একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর নামেই করতে হবে। তবে পশুতে সাত নাম ও এক নাম দেয়ার কথা যে উল্লেখ করা হয়েছে, তাহলো- সাতজন অথবা একজন (চাই তারা জীবিত হোক অথবা মৃত হোক)-এর তরফ থেকে বা পক্ষ থেকে আল্লাহ্ পাক-এর নামে কুরবানী করা।
এ মাসয়ালাটি না বুঝার কারণে অনেকে সরাসরি বলে থাকে, কোরবানীর পশুতে মৃত পূর্ব পুরুষদের নাম দেয়া যাবেনা।
{দলীলসমূহঃ আলমগীরি, শামী, নূরুল হিদায়া, বাজ্জাজিয়া, কাযীখান ইত্যাদি।}
মুসাম্মত ফাতিমা আখতার নাজিম খান, কুড়িগ্রাম
সুওয়ালঃ আইয়ামে নহর বা কুরবানীর দিনে কুরবানীর পশু কুরবানী করার পূর্বে অথবা কুরবানী করার সময়ে হাঁস, মুরগী, কবুতর ইত্যাদি যবেহ্ করা জায়িয আছে কি?
জাওয়াবঃ মুসলমানদের আইয়ামে নহর বা কুরবানীর দিনে যারা মজুসী বা অগ্নী উপাসক তারা তাদের ধর্মীয় বিধান মোতাবেক হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে থাকে। এখন যদি কোন মুসলমান তাদের সাথে মুশাবা বা সাদৃশ্য রেখে কুরবানীর দিন হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে, তাহলে সেটা হারাম হবে। কারণ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- “যে, যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত।” (আহমদ, আবূ দাঊদ)
আর যদি কোন মুসলমান সাধারণভাবে উক্ত সময়ে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে, তাহলে সেটা মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে, যেহেতু এটাও মোশাবাহ্ হয়ে যায়।
আর যদি কোন মুসলমান খুব জরুরতে হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবেহ্ করে, তাহলে সেটাও মাকরূহ্ তান্যিহী হবে। আর এমন কোন মুসলমান, যার উপর কুরবানী ওয়াজিব অথবা ওয়াজিব নয়, তারা যদি কোরবানীর দিন হাঁস, মুরগী ইত্যাদি খেতে চায়, তাহলে তারা যেন সুব্হে সাদিকের পূর্বেই সেটা যবেহ্ করে, কেটে, পাক করে রেখে দেয় অথবা শুধু যবেহ্ করে, কেটে রেখে দিবে পরে পাক করলেও চলবে।
{দলীলসমূহঃ শামী, আলমগীরি, ফতহুল ক্বাদীর, শরহে হিদায়া ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আব্দুল মালেক, পিরোজপুর
সুওয়ালঃ হালাল পশুর কোন কোন অংশ খাওয়া নিষিদ্ধ?
জাওয়াবঃ কুরবানী বা হালাল পশুর ৮টি জিনিস খাওয়া যাবেনা। (১) দমে মাছফুহা বা প্রবাহিত রক্ত হারাম, (২) অন্ডকোষ, (৩) মুত্রনালী, (৪) পিত্ত, (৫) লিঙ্গ, (৬) যোনি, (৭) গদুদ বা গুটলী মাকরূহ্ তাহ্রীমী, (৮) শিরদাড়ার ভিতরের মগজ, এটা কেউ মাকরূহ্ তাহ্রীমী, আবার কেউ মাকরূহ্ তান্যিহী বলেছেন।
{দলীলসমূহঃ শামী, মাতালেবুল মু’মিনীন, উমদাতুল কালাম ইত্যাদি।}
মুহম্মদ সাব্বির হুসাইন, পাবনা
সুওয়ালঃ কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করে সে টাকা মসজিদ কিংবা ঈদগাহের ইমামকে দেয়া জায়িয হবে কিনা?
জাওয়াবঃ মসজিদ ও ঈদগাহে ইমামতি করা বাবদ উক্ত টাকা ইমাম ছাহেবকে দেয়া জায়িয হবেনা। অবশ্য ইমাম ছাহেব যদি ফিৎরা ও কুরবানীর ছাহেবে নেছাব না হন, তাহলে দান হিসেবে উক্ত টাকা নিতে পারেন। কিন্তু ছাহেবে নেছাব হলে, তা নিতে পারবেন না। আর চামড়া বিক্রয় না করে পুরো চামড়াটিই যদি ইমামকে দান হিসেবে দেয়া হয়, তবে ইমাম ধনী হলেও তা নিতে পারবেন। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)
মুহম্মদ সাইফুল্লাহ, চাঁদপুর
সুওয়ালঃ কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়েয আছে কি?
জাওয়াবঃ কুরবানীর পশু অথবা অন্য যে কোন হালাল পশুই হোক, তা যবেহ্ করার পূর্বে চামড়া বিক্রি করা জায়িয নেই। এমনিভাবে বাঁটে দুধ থাকতে, ঝিনুকে মুক্তা থাকতে, মেষের পিঠে লোম থাকতে, সে দুধ, মুক্তা, লোম বিক্রি করা নাজায়িয। (ফতওয়ায়ে শামী)
মুহম্মদ মুনির হুসাইন, ফরিদগঞ্জ
সুওয়ালঃ যে সকল মাদ্রাসার লিল্লাহ্ বোডিংয়ে যাকাত, ফিৎরা ও কোরবানীর চামড়া তোলা হয়, সে লিল্লাহ্ বোডিংয়ে উক্ত মাদ্রাসার শিক্ষকগণ খেতে পারবে কিনা? এবং সে টাকা দ্বারা শিক্ষকদের বেতন দেয়া ও ছাত্রদের থাকা ও পড়ার জন্য মাদ্রাসা ঘর তৈরী করা জায়িয হবে কিনা? বিস্তারিত জানিয়ে উপকৃত করবেন।
জাওয়াবঃ যাকাত, ফিৎরা, কুরবানীর চামড়া বা তার মূল্য ইত্যাদি গরীব, মিস্কীন ও ইয়াতীমদের হক্ব অর্থাৎ ওয়াজিব সদ্কা (আদায় হওয়ার জন্য) গরীব, মিস্কীন ও ইয়াতীমদেরকে তার (সদ্কার) মালিক করে দেয়া শর্ত। তাই যে সকল মাদ্রাসায় লিল্লাহ্ বোডিং অর্থাৎ গরীব, মিস্কীন ও ইয়াতীম ছাত্র রয়েছে, সে সকল মাদ্রাসায় যাকাত, ফিৎরা ও কোরবানীর চামড়া বা তার মূল্য দেয়া যেরূপ জায়েয, তদ্রুপ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের জন্য তা লিল্লাহ্ বোডিংয়ে গ্রহণ করাও জায়েয।
উল্লেখ্য, উক্ত সদ্কার টাকা দিয়ে শুধুমাত্র ছাত্রদেরকে খাওয়ালেই চলবেনা বরং ছাত্রদেরকে তা’লীম দেয়ার জন্য ওস্তাদ বা শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে ও ছাত্রদের থাকার জন্য ঘরের দরকার রয়েছে, আর তার জন্যে টাকা-পয়সারও জরুরত রয়েছে। তাই সম্মানিত ফক্বীহ্গণ এরূপ সদ্কার ব্যাপারে একটি সুন্দর সমাধান বা ফায়সালা দান করেছেন। অর্থাৎ তাঁরা বলেছেন, “সদ্কার টাকা হিলা করা হলে, তা দ্বারা ওস্তাদদের বেতন দেয়া, খাওয়ার ব্যবস্থা করা ও মাদ্রাসার জন্য ঘর তৈরী করা সবই জায়েয।”
আর হিলার পদ্ধতি হলো- মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কোন গরীব, মিস্কীন বা ইয়াতীমকে উক্ত সদ্কার টাকাগুলোর মালিক করে দিবে। অতঃপর উক্ত গরীব, মিস্কীন ও ইয়াতীম সে টাকাগুলো মাদ্রাসায় দান করে দিবে।
অতএব, শুধুমাত্র উক্ত ছূরতেই সদ্কার টাকা দিয়ে ওস্তাদদের বেতন দেয়া, খাওয়ার ব্যবস্থা করা ও মাদ্রাসার জন্য ঘর তৈরী করা জায়েয ও শরীয়তসম্মত।
{দলীলসমূহঃ শামী, দুররুল মুখতার, আলমগীরী, আইনুল হিদায়া, নাওয়াদেরুল ফতওয়া ইত্যাদি।}
মুহম্মদ কবীর হুসাইন, বরিশাল
সুওয়ালঃ অনেকে বলে থাকে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হয়, তার গোশ্ত পিতা-মাতা খেতে পারবে না, এটা শরীয়তসম্মত কিনা? জানালে খুশী হবো।
জাওয়াবঃ যারা বলে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হয় তার গোশ্ত পিতা-মাতা খেতে পারবেনা তাদের সে কথা শরীয়ত সম্মত নয়। শরীয়তের মাসয়ালা হলো, আক্বীকার পশুর গোশ্তের হুকুম কুরবানীর পশুর গোশ্তের হুকুমের মত। কাজেই, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হবে তার গোশ্ত পিতা-মাতাসহ সকলেই খেতে পারবে, এটাই শরীয়তসম্মত মাসয়ালা বা ফতওয়া। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)
মুহম্মদ আব্দুল কাদির, খিলগাঁও, ঢাকা
সুওয়ালঃ কোন ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব। সে তার নিজের নামে কুরবানী না দিয়ে মৃত বা জীবিত পিতা-মাতার নামে কুরবানী দিলে তার নিজের কুরবানী আদায় হবে কিনা? জাওয়াবঃ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে মালেকে নেছাব প্রত্যেকের উপর আলাদাভাবে কুরবানী করা ওয়াজিব। যার উপর কুরবানী ওয়াজিব তাঁর পক্ষ থেকেই কুরবানী করতে হবে। যার উপর কুরবানী ওয়াজিব সে তার নামে কুরবানী না করে মৃত বা জীবিত অপরের নামে কুরবানী করলে ওয়াজিব তরকের কারণে সে কঠিন গুণাহে গুণাহগার হবে। যদিও বাবা, মা এর নামে কুরবানী করে। যাদের প্রতি কুরবানী ওয়াজিব নয়।
(দলীলসমূহঃ সমূহ হাদীছ শরীফ, তাফসীর শরীফ ও ফিক্বাহর কিতাব দ্রষ্টব্য)
বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১৫৩তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ পাঠ করুন।
মুহম্মদ খবীরুল ইসলাম, দিনাজপুর
সুওয়ালঃ ঈদুল আযহার নামায কখন পড়া সুন্নত? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াবঃ সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে (অর্থাৎ মাকরূহ্ ওয়াক্ত শেষ হবার পর থেকে অথবা সূর্য উদয়ের শুরু থেকে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী ২৩মিঃ পর) ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যাহওয়াতুল কুবরা বা যাওয়াল অথবা শরয়ী অর্ধদিন বা দ্বিপ্রহর অর্থাৎ সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হবার পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে।
ফজরের ওয়াক্ত শেষ হবার পর ২৩মিঃ পর্যন্ত মাকরূহ্ ওয়াক্ত এবং এরপর ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং যোহরের ওয়াক্ত শুরু হবার ১ ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে অর্থাৎ মাকরূহ্ ওয়াক্ত যা ঘড়ির হিসাব অনুযায়ী ২৩মিঃ অতিক্রম হবার পূর্বে ঈদের নামায আদায় করলে নামায হবে না এবং যোহরের নামাজের ওয়াক্ত হবার পূর্বের ১ ঘন্টা যা মাকরূহ্ ওয়াক্ত নামে পরিচিত অর্থাৎ যাহওয়াতুল কোবরা বা সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হবার পর ঈদের নামায আদায় করলে তা আদায় হবে না।
ঈদের নামায কোন্ সময় আদায় করলে তা সুন্নত হবে সে সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “ঈদের দিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামায পড়ে হুজরা শরীফে যেয়ে সকাল সকাল গোসল করতেন এবং ঈদুল ফিত্র হলে বেজোড় সংখ্যক (৩,৫,৭) খোরমা, খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। আর ঈদুল আযহার সময় কিছু না খেয়ে সরাসরি ইদগাহে যেতেন এবং ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হবার সাথে সাথে ঈদের নামায আদায় করতেন এবং তারপর খুতবা দিতেন ও নছীহত করতেন।”
“হযরত আবুল হোয়ায়রেস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আমর ইবনে হাযম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নাজরানের গভর্ণর থাকা অবস্থায় চিঠি দিয়ে আদেশ করেছেন, ঈদুল আযহার নামায খুব সকাল সকাল পড়বে এবং ঈদুল ফিত্রের নামায ঈদুল আযহার চেয়ে অল্প একটু দেরীতে পড়বে এবং নামাযের পরে মানুষকে নছীহত করবে।” কাজেই, ঈদের নামায সকাল সকাল পড়া সুন্নত। ঈদের নামাজের সন্মানার্থে এবং ঈদের নামায যাতে আদায়ে দেরী না হয়, সেজন্য ঈদের দিন ইশরাকসহ অন্যান্য নফল নামায পড়া নিষিদ্ধ
মুসাম্মত মাহমুদা ফিরদাউসী, রাঙ্গামাটি
সুওয়ালঃ কুরবানীর কিছুদিন আগে নাকি হাত ও পায়ের নখ কাটা, মোছ ছাটা এবং মাথার চুল ইত্যাদি কাটা যায় না? কুরবানী করার পর কাটতে হয়! কথাটা কতটুকু সত্য? বিস্তারিত জানাবেন।
জাওয়াবঃ হ্যাঁ, যারা কুরবানী দেয়ার নিয়ত রাখেন, তাদের পক্ষে যিলহজ্জের চাঁদ ওঠার পর থেকে এই চাঁদের দশ তারিখ কুরবানীকরা পর্যন্ত মাথার চুল হাতের ও পায়ের নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ام سلمة قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من راى هلال ذى الحجة واراد ان يضحى فلا ياخذ من شعره ولا من اظفاره.
অর্থঃ “হযরত উম্মে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি যিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখলো এবং কুরবানী করার নিয়ত করলো, সে যেন (কুরবানীনা করা পর্যন্ত) তার শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটে।” (মুসলিম শরীফ)
মূলতঃ ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো এই যে, যারা কুরবানী করবে এবং যারা কুরবানী করবেনা, তাদের উভয়ের জন্যই উক্ত আমল মুস্তাহাব ও ফযীলতের কারণ। আর এ ব্যাপারে দলীল হলো এ হাদীছ শরীফ- যেমন হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,
عن عبد الله بن عمرو قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم امرت بيوم الاضحى عيدا جعله الله لهذه الا مة قال له رجل يا رسول الله ارايت ان لم اجد الا منيحة انثى افاضحى بها قال لا ولكن خذ ةن شعر ك واظفار ك ونقص شار بك وتحلق عا نتك فذ لك تمام اضحيتك عند الله.
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- আল্লাহ্ পাক-এর রযসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি কুরবানীর দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ্ পাক উক্ত দিনটিকে এই উম্মতের জন্য ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলো হে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি যদি একটি মাদী মানীহা (উটনী) ব্যতীত অন্য কোন পশু কুরবানীর জন্য না পাই, তাহলে আপনি কি (আমাকে) অনুমতি দিবেন যে, আমি উক্ত মাদী মানীহাকেই কুরবানী করবো। জবাবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, না- তুমি উক্ত পশুটিকে কুরবানী করবেনা। বরং তুমি কুরবানীর দিনে তোমার (মাথার) চুল ও হাত-পায়ের নখ কাটবে। তোমার গোঁফ খাট করবে এবং তোমার নাভীর নীচের চুল কাটবে, এটাই আল্লাহ্ পাক-এর নিকট তোমার পূর্ণ কুরবানী অর্থাৎ এর দ্বারা তুমি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট কুরবানীর পূর্ণ ছওয়াব পাবে।” (আবু দাউদ শরীফ)
উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে যে, যারা কুরবানী করবেনা, তাদের জন্যও যিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানী করার আগ পর্যন্ত নিজ শরীরের চুল, নখ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব। আর যে ব্যক্তি তা কাটা থেকে বিরত থাকবে, সে একটি কুরবানীর সওয়াব পাবে।
{দলীলসমূহঃ- নাসাঈ, মিশকাত, শরহে নববী, বজলুল মাযহুদ, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহেরে হক্ব ইত্যাদি।}
মুহম্মদ মিজানুর রহমান, লক্ষীপুর
সুওয়ালঃ তাকবীরে তাশ্রীক কাকে বলে? এবং তা কতবার বলতে হয়?
জাওয়াবঃ পবিত্র জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর যে তাকবীর পাঠ করা হয় তাকেই তাকবীরে তাশরীক বলে। জামায়াতে বা একাকী, মুসাফির অথবা মুকীম, শহর অথবা গ্রামে প্রত্যেককেই প্রতি ফরয নামাযের পর উক্ত তাকবীর পাঠ করতে হবে।
“দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “তাকবীরে তাশরীক একবার বলা ওয়াজিব, তবে যদি (কেউ) একাধিকবার বলে, তাহলে তা ফযীলতের কারণ হবে। আর “ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবে উল্লেখ আছে,
وقل ثلاث مرات
অর্থঃ- কেউ কেউ বলেছেন (তাকবীরে তাশ্রীক) তিনবার।”
“গায়াতুল আওতার শরহে দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে,
اورواجب ھے تکبیر تشریف صحبح تر قر قول میں ایکبار بسبب اسکے ما مور ھونے کے اور اگر زبا دہ کھے ایکبار سے نو ہو گا ثواب.
অর্থঃ- “বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে (আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ থেকে) আদিষ্ট হওয়ার কারণে একবার তাকবীরে তাশ্রীক বলা ওয়াজিব। আর যদি একবারের চেয়ে অতিরিক্ত বলে তবে সওয়াবের অধিকারী হবে।”
উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, একবার তাকবীরে তাশ্রীক বলা ওয়াজিব এবং তিনবার বলা মুস্তাহাব।
{দলীলসমূহঃ শামী, আইনী, আলমগিরী, হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী, রদ্দুল মুহ্তার, দুররুল মুখতার ইত্যাদি।}