মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম। মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন। মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।
সুওয়াল: ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খ-ন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো- … ৪. ইসলামী স্বর্ণযুগে এবং তৎপরবর্তীতে ফুক্বাহায়ে কিরাম ও হাদীছ বিশারদগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। তাই তা হযরত মুফতিয়ানে কিরামের ঐক্যমতে বিদয়াত। (নাঊযুবিল্লাহি মিনাল কাযিবীন) এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাট হাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি। (ধারাবাহিক) জাওয়াব: হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য শুধু ডাহা মিথ্যাই নয় বরং সম্পূর্ণরূপেই মনগড়া, দলীলবিহীন ও বিভ্রান্তিকর। শুধু তাই নয়, তার পাশাপাশি স্বয়ং আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম, ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের প্রতি মিথ্যারোপ করার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। স্মর্তব্য যে, হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। (১) ইসলামী স্বর্ণযুগে কেউ ফরজ নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। (২) তৎপরবর্তীতে অর্থাৎ ইসলামী স্বর্ণযুগের পর থেকে অদ্যবধি ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করেননি। (৩) সকল মুফতিয়ানে কিরাম ঐক্যমত হয়ে ফতওয়া দিয়েছেন যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদয়াত বা নাজায়িয। (নাউযুবিল্লাহ) উল্লেখ্য, হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবরা তাদের উল্লিখিত তিনটি বক্তব্যের কোন একটিও নির্ভরযোগ্য কিতাবের ইবারত বা দলীল দ্বারা প্রমাণ করতে পারেনি এবং শুধু হাটহাজারী মৌলভীরাই নয় ক্বিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও কেউ তা প্রমাণ করতে পারবেনা। সুতরাং এমনিতেই তাদের উল্লিখিত বক্তব্যগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও পরিত্যাজ্য বলে সাব্যস্ত হয়। এরপরও আমরা তাদের উল্লিখিত প্রতিটি বক্তব্য দলীলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট ও কুফরীমূলক বলে প্রমাণ করবো। ইনশাআল্লাহ। যেমন হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের প্রথম বক্তব্য হলো- (১) ইসলামী স্বর্ণযুগে কেউ ফরজ নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। (নাউযুবিল্লাহ) হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য যে ভুল, মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া ও দলীলবিহীন তা গত কয়েক সংখ্যার আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবেই প্রতিভাত হয়েছে। অথাৎ অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন। যদি তাই হয়ে থাকে তবে তাদের উক্ত বক্তব্য রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল নয় কি? আর উনাদের প্রতি মিথ্যারোপ করা কুফরী নয় কি? হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে সে যেন জমিনে থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়। (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ) হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের দ্বিতীয় বক্তব্য হলো- (২) তৎপরবর্তিতে অর্থাৎ ইসলামী স্বর্ণযুগের পর থেকে অদ্যবধি ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করেননি। এর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, “স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয নামাযের পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নিয়ে হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন” এটা হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পর অন্য কোন দলীলের কোনই প্রয়োজন নেই। বরং এ ক্ষেত্রে অন্য কোন দলীল তালাশ করা কুফরী বৈ কিছুই নয়। দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, “ফুক্বাহায়ে কিরামগণের ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরয নামাযের পর মুনাজাত করেননি।” হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্য চরম মিথ্যা, বানোয়াট ও ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের শানে সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল। কারণ তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে একটি দুর্বল থেকে দূর্বলতম দলীলও পেশ করতে পারেনি এবং তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোশেশ করলেও উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল তারা পেশ করতে পারবে না। পক্ষান্তরে অনুসরনীয় সকল মুহাদ্দিছীনে কিরাম ও ফুক্বাহায়ে কিরাম যে ফরয নামাযের পর মুনাজাত করাকে সমর্থন করেছেন এবং নিজেরাও করেছেন তার বহু প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে। যা অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে ও অনেক সংখ্যাতেই পত্রস্থ হয়েছে। এখানেও কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো- (দ্বিতীয় অংশ) যেমন এ প্রসঙ্গে “নুজহাতুল মাজালিস লি আবদিল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহ্লভী” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে,
كان فى زمن النبى صلى الله عليه وسلم رج يقال له ابو دجانة فاذا صلى الصبح خرج من المسجد سريعا ولم يحضر الدعاء فسأله النبى صلى الله عيه وسلم من ذالك فقال ان جارى له نخلة يسقط رطبها فى دارى ليامن الهواء فاسبق اولدى قبل ان يستيقظوا فاطرحه فى داره فقال النبى صلى اه عليه وسلم صا حبها يعنى نخلتك بعثر نخلات فى الجنة عروقها من ذهب احمر وزببرجد اخضر واغصانها من اللؤلؤ الابيض فقال ا ابيع حاصرا الغائب فقا ابو بكره الصديق رضى اله تعاى عنه قد اشتريتها منه بعشر نخات فى مكان كذا .. الخ.
অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় হযরত আবূ দাজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নামক এক ব্যক্তি ছিল। তিনি একদিন ফজরের নামায (জামায়াতে) আদায় করে, মুনাজাতে শরীক না হয়ে দ্রুতবেগে মসজিদ হতে বের হয়ে গেলেন। পরবর্তীতে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবূ দাজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন যে, (তুমি কেন মুনাজাতে হাজির না থেকে তাড়াতাড়ি চলে গেলে?) হযরত আবূ দাজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উত্তর দিলেন- আমার প্রতিবেশীর একটি খেজুর গাছ রয়েছে, রাত্রিবেলায় ঝড়ে উক্ত গাছের খেজুর আমার সীমানায় পড়ে, আমার সন্তানগণ ঘুম হতে উঠার পূর্বেই আমি সেখানে পৌঁছে যাই এবং উক্ত খেজুরগুলো কুড়ায়ে তার সীমানায় পৌঁছে দেই। (যেন আমার সন্তানগণ উক্ত খেজুর খেয়ে পরের হক্ব নষ্ট না করে) অতঃপর রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবূ দাজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর উত্তর শুনে, উক্ত খেজুর গাছের মালিককে বললেন- তোমার খেজুর গাছটি বেহেশ্তী লাল, সোনালী ও সবুজ, হলুদ শিকড় ও সাদা মুতি-জহরতের ডালা বিশিষ্ট দশটি খেজুর গাছের বিণিময়ে আমার নিকট বিক্রি করে দাও। সে ব্যক্তি বললো- আমার বিদ্যমান গাছটিকে অদৃশ্য গাছের বিনিময়ে বিক্রি করবোনা। তখন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তাহলে আমি আমার অমুক স্থানের দশটি খেজুর গাছের বিনিময়ে এই খেজুর গাছটি (হযরত আবূ দাজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জন্যে) কিনে নিলাম …. ।” (সুবহানাল্লাহ্) উক্ত ঘটনার মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, বলা হয়েছে- ولم يحضر فى الدعاء. অর্থাৎ- “হযরত আবূ দাজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুনাজাতে উপস্থিত না হয়ে দ্রুতবেগে চলে গেলেন।” একথা বলা হয়নি যে,
ولم يدع অর্থাৎ- “মুনাজাত করলেন না।” সুতরাং এতে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, তখন আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করছিলেন।
মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব গুলবাগ, ঢাকা।
সুওয়ালঃ “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ্ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খ-, পৃ. ১৮০) এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতোয়া দারুল উলুম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গোমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গোমরাহ করার জন্য যথেষ্ট। কারণ আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা উত্তম বলা হয়েছে। অর্থাৎ আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করার জন্য الصلاة الصلاة (আছ্ ছলাহ! আছ্ ছলাহ!) নামায! নামায! অথবা قامت قامت(ক্বামাত! ক্বামাত!) নামায আসন্ন, নামায আসন্ন, অথবা التنحنح (আত্তানাহ্নুহ্) গলা খাকড়ানো, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে আহবান করা বা তাছবীব করা সুন্নত, উত্তম ওমুস্তাহ্সান। যার আরো কিছু প্রমাণ নিম্নে পেশ করা হলো-
(ধারাবাহিক)
যেমন, “আপ্কে মাসায়িল আওর উনকা হাল” কিতাবের ১৬৫ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………..
অর্থঃ- “আযানের পর পুনরায় মানুষদেরকে সকল নামাযের জন্য আহবান করাকে বা তাছবীব করাকে উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ মুস্তাহ্সান বা উত্তম বলেছেন।” “কাশফুল হাকায়িক” কিতাবের ১ম খ-ের ১৬১ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………..
অর্থঃ- “ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহিঞ্জবলেন, আমীর-উমারা, উজীর এবং মুসলমান হাকীমদের জন্য সকল নামাযেই তাছবীব করা উত্তম। কেননা এই সকল ব্যক্তিগণ সাধারণত কাজ কর্মে মশগুল থাকেন। এজন্য তাদেরকে তাছবীবের মাধ্যমে নামাযের কথা জানিয়ে দেয়া হবে। এবং আমির-উমারাদেরকে তাছবীব করার জন্য এ ধরণের শব্দগুলো ব্যবহার করা যায় যেমন,
أيها الأمير حى عمى الصلاة وحى على الفلاح. (আইয়্যুহাল আমীরু হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্) الصلواة (আছ্ ছলাহ) رحمك الله (রহিমাকাল্লাহু) এবং এ ধরণের অন্যান্য শব্দগুলোও ব্যবহার করা যায়। কিন্তু ইমাম মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত বক্তব্যের ব্যাপারে বলেন, শরীয়তে ধনী-গরিব, রাজা-প্রজার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সকলেই সমান। (কাজেই তাছবীব শুধু আমীর-উমারাদের বা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যই খাছ নয় বরং আম-খাছ সকলের জন্যই প্রযোজ্য)।” মুলকথা হলো তাছবীব করার ব্যাপারে ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি শুধুমাত্র আমীর-উমারা অথবা মুসলমানগণের ইছলাহী কাজে বা সর্বসাধারণের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন-কাজী সাহেব, মুফতী সাহেব ইত্যাদি ব্যক্তিগণকে যে খাছ করেছেন, তার উপর ফতওয়া নয়। বরং তাছবীব করার ব্যাপারে মুল ফতওয়া হলোঃ (من غير تخصيص) তাখছীছ ছাড়াই আম-খাছ সকল মানুষকে সকল নামাযেই তাছবীব করবে। এটার উপরই ফতওয়া।”)
মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান টাইগার পাস রোড, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব” …। এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
জাওয়াবঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহনযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খ-ন সহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে- (ধারাবাহিক) রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত দলীল সমুহের খ-ন মূলক আলোচনা উল্লেখ্য, রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। কারণ তাদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। নিম্নে রেযাখানীদের হুবহু বক্তব্য তুলে ধরে তার সঠিক জবাব উল্লেখ করা হলোঃ যেমন, রেযাখানীরা বলেছে, “আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব।” প্রথমতঃ রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য যে, ডাহা মিথ্যা ও দলীল বিহীন এবং তাদের বক্তব্যের সাথে কিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই তা আমরা আমাদের মাসিক আল বাইর্য়্যিনাতে বিগত কয়েক সংখ্যায় প্রমাণ করেছি । তারা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসাবে ‘আল ফিক্বহু আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া’ কিতাবের বরাত দিয়েছেঃ ‘অথচ আযান শুনে জামাতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব।’ কিন্তু এধরনের কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা, কোন ইবারত তাদের উল্লিখিত “আল ফিক্বহু আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া” কিতাবের ইবারতে উল্লেখ নেই। সুতরাং প্রমাণিত হলো রেযাখানীদের বক্তব্যের সাথেঞ্জকিতাবের ইবারতের কোন মিল নেই। অতএব রেযাখানীরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কিতাবের ইবারত ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। যা তাদের প্রথম ধোকা । দ্বিতীয়তঃ জামায়াত যেখানে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্। সেখানে জামায়াতে শরীক হওয়ার জন্য গমন করা ওয়াজিব হয় কি করে। কারণ নির্ভরযোগ্য সকল ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে এ কথাই উল্লেখ আছে যে, “জামায়াত হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা”। অর্থাৎ জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাবগুলোতে মূল ফতওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা হিসেবে উল্লেখ আছে। যেমন, বিশ্ব বিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব- “হাশিয়াতুত্ তাহতাবী আলা দুররিল মুখতার” কিতাবের ১ম খন্ডের ২৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।” “কানজুদ দাক্বায়িক” কিতাবে উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।” “কিফায়াতুল আখইয়ার ফি হাল্লি গায়াতিল ইখতিছার” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
صلاة الجماعة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।” “শরহে ইলিয়াস” কিতাবে উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة اى تشبه اواحب فى القوة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা শক্তিতে ওয়াজিবের সাদৃশ্য রাখে। “হাশিয়ায়ে ইয়ানাতুত্ ত্বলিবীন” কিতাবের ২য় খন্ডের ৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
صلاة الجماعة فى اداء مكتوبة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “ফরয নামায জামায়াতে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।” “ফিক্বহুস্ সুন্নাহ্” কিতাবের ১ম খন্ডের ২২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
صلاة الجماعة سنة مؤكدة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।” “বেনায়া শরহে হিদায়া” কিতাবের ২য় খন্ডের ৩৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الجماعة سنة مؤكدة يعنى سنة فى قوة الواجب…… وقال صاحب الدراية تشبه اواجب فى القوة.
অর্থঃ- “জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা ওয়াজিবের শক্তিতে সুন্নত। আর ছাহেবে দেরায়া বলেন, এই সুন্নতে মুয়াক্কাদাটি শক্তিগত দিক দিয়ে ওয়াজিবের সাদৃশ্য রাখে।” “গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খন্ডের ২৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………..
অর্থঃ- “পুরুষ লোকদের জন্য জামায়াতে নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা।” (চলবে)
খন্দকার সেলিম আহমদ পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল
সুওয়াল: হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
পূর্ব প্রকাশিতের পর
৭. একজন নবীর পক্ষে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সম্ভব নয়। (নাউযুবিল্লাহ)!
জাওয়াব: হাটহাজারী মৌলভীরা বলেছে, “একজন নবীর পক্ষে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সম্ভব নয়।” (নাউযুবিল্লাহ) তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য অজ্ঞতাসূচক, জিহালতপুর্ণ ও দলীলবিহীন। শুধু তাই নয় বরং কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। কারন তারা নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব থেকে এর প্রমাণ পেশ করতে পারে নাই এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত পারবেও না। (ইন্শাআল্লাহ। মুলতঃ হাটহাজারী মৌলভীরা ও তাদের সমজাতীয়রা আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান-মান, মর্যদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযিলত সম্পর্কে নেহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারণেই এ ধরনের কাট্টা কুফরী মুলক মন্তব্য করেছে। কারন যেখানে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যারা খাদিম ও উম্মত তারাই একই সময়ে একাধিক স্থানে উপস্থিত থাকেন বা উপস্থিত থাকতে পারেন। যার বহু প্রমাণ রয়েছে। যেমন মালাকুত মাউত হযরত আজরাঈল আলাইহিস্ সালাম একই সময়ে একাধিক স্থানে একাধিক লোকের রুহ্ কবয করে থাকেন। আর হযরত আজরাঈল আলাইহিস্ সালাম হলেন, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাদিম। খাদিমের এ অবস্থা হলে, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিনি মাখদূম উনার অবস্থা কি হবে? সুতরাং হযরত আজরাঈল আলাইহিস্ সালাম -এর পক্ষে যদি একাধিক লোকের রুহ্ কবয জন্য একই সময়ে একাধিক স্থানে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হয়। তাহলে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া আরো অনেক অনেক বেশী সম্ভব হবে। যা বলার অপেক্ষাই রাখেনা অনুরূপভাবে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতের মধ্যে যাঁরা অলী-আল্লাহ্ তারাও যে, একই সময়ে একাধিক স্থানে উপস্থিত থাকতে পারেন। এরও বহু প্রমাণ রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ বিশ্ব বরেণ্য মুহাদ্দিস, ওলীয়ে কামিল, হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দেছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আরবী ভাষায় রচিত “যুবদাতুল আসরার” এবং ফার্সী ভাষায় “যুবদাতুল আসার” কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, একবার রমজান মাসে ৭০ জন লোক প্রত্যেকের অসাক্ষাতে “মাহ্বুবে সোবহানী, কুতুবে রব্বানী, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আজম, হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন বড় পীর আব্দুল ক্বাদীর জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে ইফতারীর জন্য দাওয়াত করলেন। হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি সকলের দাওয়াত গ্রহণ করলেন এবং একই দিনে একই সময়ে ৭০ জনের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে ইফতার করলেন এবং নিজ বাড়িতেও ইফতার করলেন। পরের দিন ৭০ জন লোক বলাবলি করতে লাগলো যে, মাহ্বুবে সোবহানী, কুতুবে রব্বানী, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আজম, হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন বড় পীর আব্দুল ক্বাদীর জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি গতকাল আমার বাড়িতেই ইফতার করেছেন। আরেকজন বলেন, না, বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি আমার বাড়িতে ইফতার করেছেন। অন্যজন বলেন, না, বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি আমার বাড়িতে ইফতার করেছেন। আর হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর খাদেম বলেন যে, হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি কারো বাড়িতে ইফতার করেন নি। বরং তিনি তাঁর নিজ বাড়িতে ইফতার করেছেন। মাহ্বুবে সোবহানী, কুতুবে রব্বানী, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আজম, হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন বড় পীর আব্দুল ক্বাদীর জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুবারক কানে যখন এ কথা পৌঁছল তখন খাদেমকে ডেকে নিয়ে একটি গাছের নিচে বসে আল্লাহ্ পাক-এর যিকিরে মশগুল হয়ে যান। কিছুক্ষণ পরে মাহ্বুবে সোবহানী, কুতুবে রব্বানী, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আজম, হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন বড় পীর আব্দুল ক্বাদীর জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি খাদেমকে ডেকে বললেন, হে খাদেম! তুমি মাথা উঠিয়ে দেখ? হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কথায় খাদেম উপরে মাথা উঠিয়ে দেখেন, গাছের প্রতিটি ডালে এক একজন মাহ্বুবে সোবহানী, কুতুবে রব্বানী, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আজম, হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন বড় পীর আব্দুল ক্বাদীর জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বসে যিকির করছেন। এবং গাছের নিচেও হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি বসে আছেন। এরূপ দেখে খাদেমের বিশ্বাস হয়ে যায় যে, একই দিনে একই সময়ে ৭০ জনের বাড়িতে ইফতার করা মাহ্বুবে সোবহানী, কুতুবে রব্বানী, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউসুল আজম, হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন বড় পীর আব্দুল ক্বাদীর জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পক্ষে অসম্ভব ও অবাস্তব নয়। বরং বাস্তব ও চিরসত্য। খাদেম সেটা স্বচক্ষে, বাস্তবে ও চাক্ষুস দেখে অন্তরে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে নেন। অতএব প্রমাণিত হলো যে, একজন অলী-আল্লাহ্-এর পক্ষে যদি একই দিনে একই সময়ে একাধিক মাহফিলে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হয়, তাহলে যিনি নবীদের নবী, যিনি রসূলদের রসূল, যিনি সৃষ্টির মূল যাঁকে সৃষ্টি না করলে কিছূই সৃষ্টি হতো না। সেই আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষে একাধিক মীলাদ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া অসম্ভব হয় কি করে? অতএব, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যাঁরা খাদিম ও উম্মতের অন্তর্ভূক্ত তাদের অবস্থা যদি এরূপ হয়, তাহলে যিনি আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্ষমতা কতটুকু হবে? যা সত্যিই চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়, উপলব্ধির বিষয়, অনুভূতির বিষয়। সাধারণ আক্বল -সমঝের বিষয়।
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়- জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই। উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো- ….. (৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো- ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লেখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খণ্ডনমূলক জবাব (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো- (৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি? আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবী সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা দলীলবিহীন। কারণ শরীয়ত হক্কানী আলিম হওয়ার জন্য যে শর্তারোপ করেছে তন্মধ্যে প্রথমই হলো-আক্বীদা বিশুদ্ধ থাকা। অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরী আক্বীদা রয়েছে। যার প্রমাণ আপনারা বিগত সংখ্যাগুলোতে দেখতে পেয়েছেন। যাতে প্রচলিত ছয় উছূলীদের প্রায় ২৫টি কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরী আক্বীদা দলীলসহ উল্লেখ করতঃ তা খ-ন করে ছহীহ আক্বীদা তুলে ধরা হয়েছে। এর পরও তারা কি করে বলতে পারে যে, ছয় উছূলীরা হক্কানী আলিম? মূলতঃ তারা যেহেতু কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ তাই তারা হক্কানী আলিম কাকে বলে জানে না। নিম্নে শরীয়তের দৃষ্টিতে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচতি তুলে ধরা হলো- হক্কানী আলিম-এর পরিচয় “উল্লেখ্য, عالم (আলিমুন) শব্দটি বাবে سمع-يسمع থেকে اسم فاعل বা কর্তৃবাচক। এর লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হলো- একজন জ্ঞানী পুুরুষ। আর ইস্তিলাহী বা পারিভাষিক অর্থে – আলিম তাকেই বলে, যিনি দ্বীনি ইল্ম তথা ইল্মে ফিক্বাহ ও ইল্মে তাছাউফের অধিকারী। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি আলিম হতে হলে প্রথমতঃ তাকে ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফ উভয়টাই অর্জন করতে হবে। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
العلماء ورثة الانبياء وان الانبياء لم يورثوا دينارا ولادرهما وانما ورثوا العلم.
অর্থঃ “নিশ্চয় আলিমগণ নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ। আর নিশ্চয় নবী আলাইহিমুস্ সালামগণ কোন দীনার-দিরহাম রেখে যাননি। বরং ইল্ম রেখে গেছেন।” (তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ্, আহ্মদ, মিশকাত, মায়ারিফুস্ সুনান, উরফুশ শাযী, বযলুল মাজহুদ, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ত্বীবী, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব) উল্লেখ্য যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ওয়ারিছ স্বত্ব হিসেবে দু’প্রকার ইল্ম রেখে গেছেন। অর্থাৎ ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাসাউফ। যে প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
العلم علمان فعلم فى القلب فذاك العلم النافع وعلم على اللسأن فذالك حجة الله عزوجل عى ابن ادم.
অর্থঃ-“ইল্ম দু’প্রকার। (১) ক্বাল্বী ইল্ম (ইল্মে তাসাউফ) যা উপকারী ইল্ম, (২) জবানী ইল্ম (ইল্মে ফিক্বাহ্) যা আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য দলীল স্বরূপ।” (দারিমী, বাইহাক্বী, দাইলামী, তারগীব ওয়াত তারহীব, তারীখ, আব্দুল বার, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত আশয়াতুল, লুময়াত, শরহুত্ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব) উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়ারিছ স্বত্ব হিসেবে ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাসাউফ উভয়টিই রেখে গেছেন। কাজেই যে ব্যক্তি উভয়টিই শিক্ষা করলো, সে ব্যক্তিই নায়িবে রসূল বা হাক্বীক্বী আলিম। উপরোল্লিখিত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় ইমামে রব্বানী, মাহ্বুবে সুবহানী, কাইয়ুমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব “মাকতুবাত শরীফে” উল্লেখ করেন,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………..
অর্থঃ- “আলিমগণ নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ।” এ হাদীস শরীফে বর্ণিত আলিম তারাই, যাঁরা নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের রেখে যাওয়া ইল্মে আহ্কাম (ইল্মে ফিক্বাহ্) ও ইল্মে আসরার (ইল্মে তাসাউফ) উভয় প্রকার ইল্মের অধিকারী। অর্থাৎ তিনিই প্রকৃত ওয়ারিছ বা স্বত্বাধিকারী। আর যে ব্যক্তি শুধুমাত্র এক প্রকার ইল্মের অধিকারী, সে ব্যক্তি নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রকৃত ওয়ারিছ নন। কেননা পরিত্যক্ত সম্পত্তির সকল ক্ষেত্রে অংশীদারী হওয়াকেই ওয়ারিছ বলে। আর যে ব্যক্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তির কোন নির্দিষ্ট অংশের অধিকারী হয় তাকে গরীম বলে। অর্থাৎ সে ওয়ারিছ নয় গরীমের অন্তর্ভুক্ত।” হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মিশকাত শরীফের বিখ্যাত শরাহ্ “মিরকাত শরীফে” উল্লেখ করেন যে, মালিকী মায্হাবের ইমাম হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
من تفقه ولم يتصوف فقد تفسق ومن تصوف ولم يتفقه فقد تزندق ومن جمع بينهما فقد تحقق.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করলো, কিন্তু ইল্মে তাছাউফ শিক্ষা করলো না, সে ফাসিক। আর যে ব্যক্তি ইল্মে তাছাউফ শিক্ষার বা হাছিলের দাবী করলো কিন্তু ইল্মে ফিক্বাহ্ গুরুত্ব দিলনা বা অবজ্ঞা করলো সে যিন্দিক (কাফির)। আর যে ব্যক্তি উভয়টি শিক্ষা করলো, সে মুহাক্কিক তথা হক্কানী আলিম।” অর্থাৎ যে ইল্মে ফিক্বাহ্ শিখলো, কিন্তু ইল্মে তাসাউফ শিখলোনা, সে হচ্ছে ফাসিক। আর যে বলে আমি মা’রিফাত করি বা ইল্মে তাসাউফ করি কিন্তু শরীয়ত বা ফিক্বাহ্ স্বীকার করেনা, সে হচ্ছে যিন্দিক। আর যিনি উভয়টাই শিক্ষা করলেন, তিনি হচ্ছেন মুহাক্কিক অর্থাৎ হাক্বীক্বী আলিম। (চলবে)
নায়ক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।
সুওয়াল: হানাফী মাযহাবে – (১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে। (২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা। (৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়। (৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে। (৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা। (৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে। (৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে। (৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো জোড়া জোড়া এবং আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে। (৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে। (১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে। (১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন। (১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি। কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই। অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবিহক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে। (৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে। এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইল্ম্ রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে। অতএব, হানাফী মাযহাবে তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’ বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা ক্বিরায়াত শেষে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে দুয়া কুনূত পড়ে সে বর্ণনা হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
عن ابى سمة قال سألت عن عائشة رضى الله تعالى عنها عن صلوة رسول اله صلى اله عليه وسلم فقالت كان يصلى ثلث عشر ركعة يصلى ثمان ركعات ثم يوتر وفى رواية ثم يصلى ثلثا ثم يصلى ركعتين وهو جاس.
অর্থঃ তাবিয়ী হযরত আবূ সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর নিকট আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর (রাতের বেলার) নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে তের রাকায়াত নামায পড়তেন। আট রাকায়াত নফল (তাহাজ্জুদ নামায) পড়তেন। অতঃপর তিন রাকায়াত বিতির পড়তেন। তারপর বসে দু’ রাকায়াত (হাল্কি) নফল পড়তেন। (বুখারী, মুসলিম, নাসায়ী) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى ابن كعب رضى اله تعالى عنه ان رسول اه صلى اله عليه وسلم كان يوتر بثلث ركعات وكان يقرأ فى الاولى بسبح اسم ربك الا على وفى الثانية بقل يا ايها الكافرون وفى الثالثة بقل هوا الله احد و عن عائشة رضى اله تعالى عنها مثله.
অর্থঃ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতির নামায তিন রাকায়াত পড়তেন। তিনি প্রথম রাকায়াতে (সূরা ফাতিহার পর) ‘সাব্বিহিস্মা রব্বিকাল আ’লা’ সূরা পাঠ করতেন, দ্বিতীয় রাকায়াতে ‘কুল ইয়া আইইয়ুহাল কাফিরূন’ পাঠ করতেন এবং তৃতীয় রাকায়াতে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ পাঠ করতেন। (তিরমিযী, নাসায়ী) হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عن ابن مسعود رضى اله تعالى عنه قال قال رسول اله صلى اله عليه وسلم وتر الليل ثلث كوتر النهار صلوة المغرب.
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, রাতের বিতির তিন রাকায়াত যেমন দিনের বিতির মাগরিবের নামায তিন রাকায়াত। (মুছান্নাফ- ইবনে আবী শায়বা)
عن احسن قال اجمع المسلمون على ان الوتر ثلث لا يسلم الا فى اخرهن.
অর্থঃ হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণসহ সকল মুসলমান অর্থাৎ ছাহাবা এবং তাবিয়ী সকলেই একমত যে, বিতির নামায তিন রাকয়াত এবং তিন রাকায়াত শেষে সালাম ফিরাতেন। (মুছান্নাফ-ইবনে আবী শায়বা)
قال القاسم رأينا اناسا منذ ادركنا يوترون بثلث.
অর্থঃ তাবিয়ী হযরত ক্বাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমি অসংখ্য ছাহাবাদেরকে দেখেছি, তাঁরা সকলেই বিতির নামায তিন রাকায়াত আদায় করতেন। (বুখারী শরীফ) চলবে।
ডাঃ মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন ৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪
সুওয়ালঃ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাউযুবিল্লাহ) এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান- আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।
জাওয়াবঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত। কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভূক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়। নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফ এবং বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে। মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহু, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা। এ সম্পর্কে কতিপয় বর্ণনা এখানে পেশ করা হলো- ১. পিতা-মাতার ওসীলায় সন্তান লাভ হয়ে থাকে, ওস্তাদের ওসীলায় জ্ঞান, শায়খ বা মুর্শিদের ওসীলায় আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য লাভ, মালাকুল মউত আলাইহিস্ সালাম-এর ওসীলায় মৃত্যু। অর্থাৎ, আল্লাহ পাক বান্দাকে একেক ওসীলায় একেক নিয়ামত দান করেন। একারণেই কুরআনুল কারীম, ঈমান ও হিদায়েত দানের লক্ষ্যে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠানো হয়েছে। ২. আম বা সাধারণ বান্দাদের আমলসমূহ মকবুল হওয়া সন্দেহজনক। আর নবী ও ওলীগণের আমলসমূহ মকবূল হওয়া নিশ্চিত। যদি সন্দেহজনক আমলসমূহ ওসীলা হতে পারে তাহলে নিশ্চিত আমলসমূহ এবং মকবুল বান্দাগণ অতি উত্তম পর্যায়ের ওসীলা হবেন না কেন? মূলতঃ ওসীলারও ওসীলা হলেন হযরত আম্বিয়া ও আওলিয়ায়ে কিরামগণ। অর্থাৎ, বান্দার আমলসমূহ উনাদের ওসীলায় শুদ্ধ ও কবুল হয়ে থাকে। যে সব আমল উনাদের অনুসরণে করা না হবে তা আল্লাহ পাক-এর নিকট কবুলও হবে না এবং ওসীলা হিসেবেও গন্য হবে না। এদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন,
اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم.
অর্থঃ তোমরা আল্লাহ পাককে ইতায়াত কর, আল্লাহ পাক-এর হাবীবকে ইতায়াত কর এবং তোমাদের মধ্যে যিনি উলিল আমর অর্থাৎ যিনি আল্লাহ পাক-এর মতে মত এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথে পথ হয়েছেন তাঁর ইতায়াত কর। ৩. নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমণের তিনশ বছর পূর্ব পর্যন্ত কা’বা শরীফে মুর্তি রাখা ছিল। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হস্ত মুবারকে সেই মুর্তি সরিয়ে কা’বা শরীফকে পুত-পবিত্র করা হয়েছে। যাতে এটা প্রমাণিত হয় যে, কা’বা শরীফ যেটা আল্লাহ তায়ালার ঘর সেটাও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা ছাড়া পবিত্র হয়নি। তাহলে মহিমান্বিত সত্ত্বার ওসীলা ব্যতীত উম্মত কিভাবে পবিত্রতা লাভ করতে পারে এবং মকবুল হতে পারে? ৪. দ্বীন ইসলামে প্রথমে ‘বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ’ ক্বিবলা ছিল। অতঃপর নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক ইচ্ছায় ‘মক্কা মুয়ায্যামা’ ক্বিবলা হয়েছে। যাতে এ কথা জানা যায় যে, ঐ কা’বা শরীফ যেটা তামাম দুনিয়ার নামাযীদের ক্বিবলা সেটা ক্বিবলা সাব্যস্ত হয়েছে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলাতেই। ৫. আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
واتبع سبيل من اناب الى.
অর্থঃ ঐ ব্যক্তির অনুসরণ কর যিনি আমার দিকে রুজু হয়েছেন। অর্থাৎ যিনি আল্লাহওয়ালা হয়েছেন। আর সকল ওলী বা আল্লাহওয়ালাগণই ওসীলা মেনে থাকেন। কাজেই, ওসীলা মানা বা স্বীকার করাই সত্য ও সঠিক পথ। (চলবে)
মুহম্মদ আহমাদুর রহমান, পটিয়া, চট্টগ্রাম
মুহম্মদ মাসউদুল হক (ফাহিম) সোনাইমুরি, নোয়াখালী
সুওয়াল: পটিয়া জমিরিয়া খারিজী মাদ্রাসার অখ্যাত পত্রিকা অক্টোবর+নভেম্বর/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় সমস্যা ও সমাধান বিভাগে প্রদত্ত একটি সমাধানের প্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো আমরা জানতে ইচ্ছুক তা হলো- ৫. খারেজী মাদ্রাসার সরকারী স্বীকৃতি দ্বীনি জরুরতের মধ্যে পরে কি? আর এরূপ কথিত জরুরতে বেপর্দা হওয়ার অনুমতি আছে কি? ৬. যদি ফিৎনার কোন আশংকা না থাকে তবে কি বেপর্দা হওয়া বা বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাত করা জায়িয রয়েছে? ৭. “চোখের যিনা হলো বেগানা লোককে দেখা,” এ হাদীছ শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা কি? যদি খাহেশাতের সাথে দৃষ্টি না দেয় তবেও কি তা ব্যাভিচার বলে গণ্য হবে? উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা মুলতঃ হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা বা উলামায়ে ‘ছূ’-এর অন্তর্ভুক্ত। তাই তারা নিজেদের কথিত শীর্ষস্থানীয় উলামাদের বাঁচাতে নির্লজ্জভাবে কুরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করেছে। আল্লাহ পাক, তাঁর রসূল ও হক্কানী উলামায়ে কিরামকে দোষারূপ করেছে। বেপর্দাকে সুকৌশলে জায়িয করে শরীয়ত পাল্টে দিয়ে নতুন শরীয়ত প্রকাশ করে নব্য কাদিয়ানী হিসেবে নিজেদেরকে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয় বিস্তারিতভাবে ও দলীলের মাধ্যমে পর্যালোচনা করলে এটাই সুস্পষ্ট প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবহিকভাবে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো- (ধারাবাহিক) ৫. খারিজী মাদ্রাসার সরকারী স্বীকৃতি দ্বীনি জরুরতের মধ্যে পরে কি? আর এরূপ জরুরতে বেপর্দা হওয়ার অনুমতি শরীয়তে আছে কি? এর জবাবে বলতে হয় যে, খারিজী মাদ্রাসার সরকারী স্বীকৃতি কখনোই দ্বীনি জরুরতের মধ্যে পরে না। এটাকে দ্বীনী জরুরত বলা কুফরী। কারণ মাদ্রাসা, ইলম ও উলামায়ে কিরামগণ কখনোই সরকারী স্বীকৃতির মুখাপেক্ষি নন। এরূপ স্বীকৃতির জন্য আলিম নামধারী যেসব ব্যক্তিরা রাজা-বাদশা, আমীর-উমরা বা মন্ত্রীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে এমনকি বেগানা মহিলার সাথে সাক্ষাত করে হাদীছ শরীফে এদেরকেই উলামায়ে ‘ছূ’ হিসেবে লা’নত করা হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن انبس رضى اله تعالى عنه قال قال رسول اله صلى اله عيه وسلم وي لامتى من عماء السوء يتخذون هذ العلم تجارة يبيعونها من امراء زمانهم ربحا انفسهم لااربح الله تجارتهم.
অর্থঃ- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, উলামায়ে ‘ছূ’দের কারণে আমার উম্মতের ক্ষতিসাধন হবে অর্থাৎ জাহান্নামী হবে। তারা ইল্মকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করতঃ তাদের যুগের শাসকদের নিকট থেকে অর্থ ও পদ লাভের প্রচেষ্টা চালাবে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সকল উলামায়ে ছূ’দের বিরুদ্ধে এই বলে দুয়া করেন যে, “আয় আল্লাহ পাক! যারা নিজেদের ইল্ম দ্বারা দুনিয়াবী সরকারের সাথে ব্যবসা করতে চায় তাদের ব্যবসায় বরকত দিবেন না।” (কানযুল উম্মাল) তাছাড়া দ্বীনী হোক বা দুনিয়াবী হোক কোন জরুরতে বেপর্দা হওয়ার সুযোগ ইসলামে নেই। কারণ আল্লাহ পাক স্পষ্টভাবেই পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
واذا سألتموهن متاعا فاسئلوهن من وراء حجاب.
অর্থাৎ, “যদি তোমাদের বেগানা মহিলা নিকট কিছু জরুরতই হয় তবে তোমরা অবশ্যই তা পর্দার আড়াল থেকে চাবে।” অর্থাৎ সর্বাবস্থায়ই পর্দা-রক্ষা করতে হবে। কোন অজুহাতেই বেপর্দা হওয়া যাবে না। কাজেই তারা যে বলেছে “তারা দ্বীনী জরুরতে বেগানা মহিলার সাথে সাক্ষাত করেছে” তাদের একথা সম্পূর্ণই মনগড়া, বানানো, প্রতারণামূলক ও কাট্টা মিথ্যা হয়েছে। আর যেহেতু তারা হালাল মনে করেই বেগানা মহিলার সাথে সাক্ষাত করেছে তাই হারামকে হালাল মনে করার কারণে কাট্টা কুফরী হয়েছে। এ থেকে খালিছ তওবা না করা পর্যন্ত তাদের থেকে ইলম অর্জন করা, তাদের পিছনে নামায পড়া, তাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা জায়িয হবে না। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
فانظروا عمن تأخذون دينكم.
অর্থাৎ “তোমরা লক্ষ্য রেখো কার নিকট থেকে ইলম অর্জন করছো, কাকে অনুসরণ করছো, কার পিছনে নামায পড়ছো।” অর্থাৎ তার আক্বীদা বিশুদ্ধ কিনা ও আমল শরীয়ত সম্মত কিনা তা ভালভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। অতএব, পটিয়া খারিজী মৌলবীদের উপরোক্ত বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা, মনগড়া, প্রতারণামূলক ও দলীলবিহীন প্রমাণিত হলো। (চলবে)
মুহম্মদ মুহিউদ্দীন, চাঁদপুর।
সুওয়ালঃ রমযান শরীফে ই’তিকাফ করার মাসয়ালা জানতে চাই?
জাওয়াবঃ রমযান মাসের শেষ দশদিন অর্থাৎ ২০ তারিখ বাদ আছর ও ২১ তারিখ মাগরিবের পূর্ব হতে ঈদের বা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা পর্যন্ত ই’তিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। অর্থাৎ ৩০শে রমযানের দশদিন কিংবা ২৯শে রমযানের নয়দিনের এক মিনিট কম হলেও সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া ই’তিকাফ আদায় হবেনা। প্রত্যেক মসজিদে এলাকার তরফ হতে একজন ই’তিকাফ করলেই সকলের পক্ষ হতে আদায় হয়ে যাবে। আর যদি কেউ ই’তিকাফ না করে তাহলে এলাকাবাসী সকলেই গুনাহগার হবে। (আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, দুররুল মুখতার ইত্যাদি)
মুহম্মদ আল আমীন, নরসিংদী
সুওয়ালঃ রমাদ্বানের কোন তারিখে শবে ক্বদর হয়ে থাকে? জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব: ‘রমাদ্বান’ মাসের শেষ দশদিনের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদর নিহিত। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
تحروا يلة القدر فى الوتر من العشر الاواخر من رمضان.
অর্থঃ “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা রমাদ্বানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে শবে ক্বদর তালাশ করো।” (বুখারী শরীফ) এখানে উল্লেখ্য, ২৭ তারিখে শবে ক্বদর হওয়ার পক্ষে ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একটি নির্ভরযোগ্য মত থাকার কারণে হানাফীগণ যদিও উক্ত তারিখে বিশেষভাবে শবে ক্বদর তালাশ করে থাকেন। কিন্তু হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, “প্রকৃতপক্ষে রমাদ্বানের শেষ দশকের প্রত্যেক বিজোড় রাতেই শবে ক্বদর তালাশ করা উচিত। যেহেতু তা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। মূলত বান্দা উম্মত শবে ক্বদর তালাশ করবে কি কারণে, যেহেতু তা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ এবং সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। যদি তাই হয় তাহলে রমাদ্বানের শেষ দশকের প্রত্যেক বেজোড় রাতেই সজাগ থেকে সেটা তালাশ করা উম্মতের দায়িত্ব-কর্তব্য। এ রাতের ফযীলত সম্পর্কে আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
انا انزنه فى ليلة القدر. وما ادرك ما ليلة القدر. ليلة القدر خيرمن الف شهر. تنزل الملئكة والروح فيها باذن ربهم من كل امر. سلم هى حتى مطلع الفجر.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আমি কুরআন শরীফ নাযিল শুরু করেছি ক্বদরের রাতে। ক্বদরের রাত কি, তা আপনার জানা রয়েছে যে, ক্বদরের রাত হলো হাজার মাস (৮৩ বছর ৪ মাস) অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এ রাতে হযরত জিব্রীল আলাইহিস্ সালাম ফেরেশ্তাদেরকে নিয়ে স্বীয় রবের নির্দেশক্রমে প্রত্যেক কাজের জন্য সালাম বা শান্তির পয়গাম নিয়ে অবতীর্ণ হন এবং ফজর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে।” এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
من قام ليلة القدر ايمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه.
অর্থঃ যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখ্লাছের সাথে শবে ক্বদরে ইবাদত-বন্দিগী করবে তার অতীত জীবনের সমস্ত গুণাহখতা ক্ষমা করা হবে। (বুখারী শরীফ)
মুহম্মদ হাসান মুবাশ্বির খান, রাজশাহী
সুওয়ালঃ যাকাত কাদের উপর ফরয?
জাওয়াবঃ যারা মালেকে নেছাব বা ছাহেবে নেছাব, তাদের উপর যাকাত ফরয। আর মালেকে নেছাব বা ছাহেবে নেছাব বলতে বুঝায়, যে মুসলমান, স্বাধীন, বালেগ বা বালেগার নিকট ‘হাওয়ায়েজে আছলিয়াহ্ (নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, মাল-সামানা) বাদ দিয়ে কর্জ ব্যতীত নিজ মালিকানাধীনে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ মূল্য (যা বর্তমানে ৫৫০ টাকা তোলা হিসেবে ২৮,৮৭৫ টাকা) পূর্ণ এক বছর থাকে, তাহলে তার উপর যাকাত ফরয। (দলীলসমূহঃ (১) আলমগীরী, (২) আইনুল হেদায়া, (৩) বাহরুর রায়েক, (৪) ফতওয়ায়ে আমিনীয়া ইত্যাদি।)
মুহম্মদ হাসান রফিক, গাজীপুর
সুওয়ালঃ আপন আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কাকে কাকে যাকাত দেয়া যাবে?
জাওয়াবঃ নিজের পিতা, দাদা, পুত্র, নাতী, স্ত্রী, স্বামী ইত্যাদি পরস্পর পরস্পরকে যাকাত দিতে পারবে না। তবে পুত্রবধু, জামাতা, বিমাতা, স্ত্রীর অন্য ঘরের সন্তান অথবা স্বামীর অন্যান্য স্ত্রীর সন্তানদেরকে যাকাত দেয়া যায়। আর পিতা-মাতা যদি অভাবগ্রস্থ হয়, তবে হিলা করে অর্থাৎ যাকাতের হক্বদার এমন কোন ব্যক্তিকে যাকাতের মালিক করে উক্ত মালিক যাকাতদাতার পিতা-মাতাকে হাদিয়া হিসেবে প্রদান করলে তা জায়িয হবে; তবে তা মাকরূহ্। অনুরূপভাবে হিলা করে নিজের সন্তানকেও যাকাত দেয়া মাকরূহের সাথে জায়িয। (দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, আলমগীরী)
মুসাম্মদ ফাতিমাতুয্ যোহরা, কুমিল্লা
সুওয়ালঃ খাঁদযুক্ত সোনা-চান্দির যাকাতের হুকুম কি? জাওয়াবঃ সোনা-চান্দির মধ্যে খাঁদ থাকলে এবং সোনা-চান্দির পরিমাণ বেশী হলে একে সোনা-চান্দি হিসাবেই যাকাত দিতে হবে, যদি তা নেছাব পরিমাণ হয়। আর যদি নেছাব পরিমাণ না হয়, তবে এর মূল্য হিসাব করে অন্যান্য মালের সাথে মিলিয়ে নেছাব পূর্ণ হলে যাকাত আদায় করতে হবে। যদি সোনা-চান্দি কম হয় ও খাঁদ বেশী হয় এবং উভয় মিলে যদি এক নেছাব বা তার চেয়ে বেশী হয়, তবুও যাকাত দিতে হবে। খাদযুক্ত সোনা-চান্দি এত কম হয় যে, উভয়টি মিলেও এক নেছাব হয়না কিন্তু তার দ্বারা ব্যবসা করা হয়, তবে উহা ব্যবসার মালের নেছাব হিসাবে হলে যাকাত দিতে হবে; অন্যথায় যাকাত দিতে হবেনা। (দুররুল মুখতার)
মুহম্মদ আরিফুল ইসলাম, যশোর
সুওয়ালঃ জমির ফসলের যাকাত বা ওশর আদায় করার জন্য বৎসর পূর্ণ হওয়া ও নেছাব পরিমাণ মাল হওয়া শর্ত কিনা?
জাওয়াবঃ ওশর বা জমির যাকাত আদায় করার জন্য বৎসর পূর্ণ হওয়া ও নেছাব পরিমাণ মাল হওয়া শর্ত নয়। বরং একই জমিতে প্রতি মৌসুমে যে পরিমাণ ফসলই হোক তার দশ ভাগের একভাগ যাকাত আদায় করা ফরয। তবে যদি পরিশ্রম করে ফসল ফলানো হয়, তখন বিশ ভাগের এক ভাগ ফসলের যাকাত দিতে হবে। (দুররুল মুখতার)
মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম, বাইতুল মোর্কারম, ঢাকা
সুওয়ালঃ এ বছর সদ্কাতুল ফিত্র কত?
জাওয়াবঃ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সদ্কাতুল ফিত্রের পরিমাণ সম্পর্কে ইরশাদ করেন,
صاع من م بر على كل اثنين.
অর্থঃ- “প্রতি দু’জনের জন্য এক ‘সা’ গম। অর্থাৎ একজনের জন্য অর্ধ ‘সা’।” (আবূ দাউদ, বযলুল মাযহুদ) আমাদের হানাফী মায্হাব মুতাবিক অর্ধ ‘সা’ বলতে ১ সের সাড়ে ১২ ছটাক বুঝানো হয়েছে, যা গ্রাম হিসাবে ১৬৫৭ গ্রাম (প্রায়) হয়। প্রমাণঃ – অর্থ সা’ = ১ সের ১২ ছটাক = ১৬ +১২ ছটাক [১ সের = ১৬ ছটাক] = ২৮ ছটাক = ২৮ *৫ [১ ছটাক = ৫ তোলা] = ১৪২ তোলা = ১৪২ তোলা * ১১.৬৩ গ্রাম [১ তোলা= ১১.৬৩ গ্রাম] = ১৬৫৭ গ্রাম (প্রায়) কাজেই, যাদের উপর ছদ্কাতুল ফিত্র ওয়াজিব অর্থাৎ ঈদের দিন ছুব্হে ছাদিকের সময় যাদের নিকট নেছাব পরিমাণ (সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রূপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য যা বর্তমানে ৫৫০ টাকা তোলা হিসেবে ২৮,৮৭৫ টাকা) সম্পদ থাকে, তাদের প্রত্যেকক্যেই উল্লিখিত ১ সের সাড়ে ১২ ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা তার মূল্য দান করতে হবে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় আটার দাম বিভিন্ন রকম। কাজেই যাদের উপর ছদ্কাতুল ফিত্র ওয়াজিব, তাদেরকে তাদের নিজ নিজ এলাকার বর্তমান মূল্য হিসাবে একসের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য দিতে হবে। এ বছর ঢাকা শহরে ৪০.০০ টাকা কেজি হিসাবে এক সের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য- ৬৮.০০ টাকা (প্রায়)। যেমন, বাজারে ১ কেজি বা ১০০০ গ্রাম ওজনের যে প্যাকেটগুলো পাওয়া যায় তাতে সাধারণতঃ ২৫গ্রাম কম থাকে। সে হিসেবে ৯৭৫ গ্রাম আটার মূল্য হলো- ৪০.০০ টাকা। তাহলে প্রতি গ্রাম আটার মূল্য হয়- ৪০.০০ # ৯৭৫ = ০.০৪১০২৫৬ টাকা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য- (১৬৫৭ * ০.০৪১০২৫৬) = ৬৭.৯৮ টাকা প্রায়। = ৬৮ টাকা এর কম দেয়া যাবেনা। তবে ইচ্ছা করলে বেশী দিতে পারবে।
মুহম্মদ নো’মান, মুন্সিগঞ্জ
সুওয়ালঃ ঈদের রাতের ফযীলত কি?
জাওয়াবঃ বছরে পাঁচ রাতে দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয়। তার মধ্যে দু’ঈদের দু’রাত। এ রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দিগী, তাস্বীহ্ পাঠ, কুুরআন শরীফ তিলাওয়াত, দুরূদ শরীফ ও যিকির-আয্কার করে রাত অতিবাহিত করা অতি উত্তম। দিলের নেক মকসুদসমূহ আল্লাহ্ পাক-এর নিকট জানালে আল্লাহ পাক তা কবুল করবেন। হাদীছ শরীফে আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আয্হার রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদতে মশগুল থাকবে, যেদিন অন্য সমস্ত দিল মরবে, সেদিন তার দিল মরবে না।” এর অর্থ হলো- ক্বিয়ামতের দিন অন্যান্য দিল পেরেশানীতে থাকলেও দু’ঈদের রাতে জাগরণকারী ব্যক্তির দিল শান্তিতে থাকবে। (তবারানী শরীফ)
মুহম্মদ হুমায়ুন কবীর, বরিশাল
সুওয়ালঃ ঈদের নামায কখন পড়া সুন্নত? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াবঃ সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে (অর্থাৎ মাকরূহ্ ওয়াক্ত শেষ হবার পর থেকে অথবা সূর্য উদয়ের শুরু থেকে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী ২৩মিঃ পর) ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যাহওয়াতুল কুবরা বা যাওয়াল অথবা শরয়ী অর্ধদিন বা দ্বিপ্রহর অর্থাৎ সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হবার পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। ফজরের ওয়াক্ত শেষ হবার পর ২৩মিঃ পর্যন্ত মাকরূহ্ ওয়াক্ত এবং এরপর ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং যোহরের ওয়াক্ত শুরু হবার ১ ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে। সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে অর্থাৎ মাকরূহ্ ওয়াক্ত যা ঘড়ির হিসাব অনুযায়ী ২৩মিঃ অতিক্রম হবার পূর্বে ঈদের নামায আদায় করলে নামায হবে না এবং যোহরের নামাজের ওয়াক্ত হবার পূর্বের ১ ঘন্টা যা মাকরূহ্ ওয়াক্ত নামে পরিচিত অর্থাৎ যাহওয়াতুল কোবরা বা সূর্যের এস্তাওয়া আরম্ভ হবার পর ঈদের নামায আদায় করলে তা আদায় হবে না। ঈদের নামায কোন্ সময় আদায় করলে তা সুন্নত হবে সে সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “ঈদের দিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামায পড়ে হুজরা শরীফে যেয়ে সকাল সকাল গোসল করতেন এবং ঈদুল ফিত্র হলে বেজোড় সংখ্যক (৩,৫,৭) খোরমা, খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। আর ঈদুল আযহার সময় কিছু না খেয়ে সরাসরি ইদগাহে যেতেন এবং ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হবার সাথে সাথে ঈদের নামায আদায় করতেন এবং তারপর খুতবা দিতেন ও নছীহত করতেন।” “হযরত আবুল হোয়ায়রেস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আমর ইবনে হাযম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নাজরানের গভর্ণর থাকা অবস্থায় চিঠি দিয়ে আদেশ করেছেন, ঈদুল আযহার নামায খুব সকাল সকাল পড়বে এবং ঈদুল ফিত্রের নামায ঈদুল আযহার চেয়ে অল্প একটু দেরীতে পড়বে এবং নামাযের পরে মানুষকে নছীহত করবে।” কাজেই, ঈদের নামায সকাল সকাল পড়া সুন্নত। ঈদের নামাজের সন্মানার্থে এবং ঈদের নামায যাতে আদায়ে দেরী না হয়, সেজন্য ঈদের দিন ইশরাকসহ অন্যান্য নফল নামায পড়া নিষিদ্ধ
সাইয়্যিদা সফুরা তাসনীমা, কুড়িগ্রাম
সুওয়ালঃ মহিলারা ঈদের নামায পড়তে পারবে কিনা?
জাওয়াব: মহিলাদের জন্য ঈদ ও জুমুয়ার নামায নেই। কারণ, ঈদ ও জুমুয়ার নামাযের জন্য জামায়াত শর্ত। হানাফী মাযহাব মতে, ইমাম ব্যতীত কমপক্ষে তিনজন মুছল্লী থাকতে হবে। অন্যথায় ঈদ ও জুমুয়া আদায় হবে না। আর ফতওয়া হচ্ছে, মহিলাদের জন্য ঈদ হোক, জুমুয়া হোক, পাঞ্জেগানা হোক, তারাবীহ্ হোক কোন নামাযই জামায়াতে আদায় করার জন্য মসজিদ ও ঈদগাহে যাওয়া জায়িয নেই। তা আম ফতওয়া মতে মাকরূহ তাহরীমী আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী। অতএব, মহিলারা ঈদের নামাযে গেলে কঠিন গুনাহে গুনাহ্গার হবে। (এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে আল বাইয়্যিনাতের ১১তম সংখ্যা পাঠ করুন, সেখানে প্রায় ৬৫টি দলীল পেশ করা হয়েছে।) {দলীলসমূহ: উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, দুররুল মুখতার, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া, খুলাছাতুল ফতওয়া, ফতহুল ক্বাদীর, আলমগীরী)
মুসাম্মত মমতাজ বেগম, চান্দিনা, কুমিল্লা।
সুওয়ালঃ কেউ কেউ বলে, রমজানের কাযা রোযা এবং শাওয়াল মাসের নফল রোযা শাওয়াল মাসে একই দিনে একত্রে উভয় রোযার নিয়ত করে রাখলে, একই সঙ্গে উভয় রোযা আদায় হয়ে যাবে এবং একই সঙ্গে উভয় রোযার ছওয়াব পাবে। তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক? জাওয়াবঃ যারা বলে, ছুটে যাওয়া রমজানের ক্বাযা রোযা এবং শাওয়ালের নফল রোযা একই সঙ্গে আদায় করলে আদায় হবে এবং ছওয়াবও পাবে তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, ভুল ও দলীলবিহীন। সঠিক ফতওয়া হলো, রমজানের ক্বাযা রোযা এবং শাওয়ালের নফল রোযা একই দিনে একত্রে নিয়ত করে রাখলে কস্মিনকালেও উভয় রোযা আদায় হবে না এবং একইসঙ্গে উভয় রোযার ছওয়াবও পাবেনা।
বরং শুধুমাত্র রমজানের ক্বাযা রোযা আদায় হবে। শাওয়ালের নফল রোযা আদায় হবে না। কেননা রমজান মাসের ছুটে যাওয়া ফরয রোযার ক্বাযা আদায় করা ফরয। আর শাওয়াল মাসের রোযা হলো নফল।
কাজেই নফলের নিয়ত দ্বারা ফরয অথবা ফরজের নিয়ত দ্বারা নফল আদায় হয় এ কথা বলা চরম জিহালত ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে একই সঙ্গে ফরয ও নফল উভয়ের নিয়ত করলে ফরয আদায় হবে, নফল আদায় হবে না এবং ছওয়াবও পাবেনা। এটাই মূল ফতওয়া। এর বিপরীত মত পোষণ করা গোমরাহী। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৯৬তম সংখ্যা পাঠ করুন। {দলীলসমূহঃ ফতওয়ায়ে আলমগীরী, জখীরা, সিরাজুল ওহ্হাজ, মুহীত, ছরখছি কাজীখান, হিন্দিয়া ইত্যাদি।}