মুহম্মদ আমজাদ আলী, বাইতুল মোর্কারম মার্কেট
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মিরপুর, ঢাকা
ডাঃ লুৎফর রহমান, মুন্সিগঞ্জ
সুওয়ালঃ ২০০৭ ঈসায়ী সনে দেশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। যাতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দিয়েছিল খিলাফত মজলিস দলের একাংশের চেয়ারম্যান তথা কথিত শাইখুল হাদীছ মাওলানা আজিজুল হক ছাহেব। শর্তারোপ করেছিল পাঁচ দফা দাবি পূরণের। দাবিগুলো হচ্ছে-
(১) কুরআন-সুন্নাহ ও শরীয়ত বিরোধী কোনও আইন প্রণয়ন করা হবে না।
(২) কওমী মাদ্রাসা সনদের সরকারি স্বীকৃতি যথাযথ বাস্তবায়ন করা হবে।
আইন করা হবে-
(৩) হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী।
(৪) নবী-রসূল ও ছাহাবায়ে কিরামের সমালোচনা ও কুৎসা রটনা করা দ-নীয় অপরাধ।
(৫) সনদপ্রাপ্ত হক্কানী আলিমরা ফতওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করেন। সনদবিহীন কোনও ব্যক্তি ফতওয়া দিতে পারবেন না। (সমূহ জাতীয় দৈনিক)
এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কথিত শাইখুল হাদীছ ছাহেবের উল্লিখিত পাঁচ দফা দাবি পূরনের শর্তে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়াটা কতটুকু কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়ত সম্মত? দয়া করে সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ ‘আবূ জাহিলকে’ চিনেনা পৃথিবীতে এরূপ মুসলমান খুজে পাওয়া দুস্কর হবে। ‘আবূ জাহিল’ তার নাম কখনোই ছিলনা, তার নাম ছিল ‘আবুল হিকাম’ অর্থাৎ জ্ঞানীর পিতা বা মহা প-িত হিসেবেই সে কাফিরদের নিকট অধিক মশহুর ছিল সে এতটাই প-িত ছিল যে আরব দেশে কোন বিচার হতো না ‘আবুল হিকাম’ কে ছাড়া।
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘দ্বীনে হক্ব’ প্রচার শুরু করলেন, ‘মহা প-িত’ নিজ স্বর্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে এবং স্বার্থ হাছিরের লক্ষ্যে ইসলামকে হক্ব বা সত্য জানা ও বুঝার পরও দ্বীনে হক্বের বিরোধিতা করলো এবং বাতিল মতবাদ বা কুফরী শিরকীর মধ্যে দৃঢ় রইল।
রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবিবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সঙ্গত কারণেই মহা প-িত ‘আবুল হিকামের’ নাম পরিবর্তন করে ‘আবূ জাহিল’ তথা মুর্খের পিতা বা ‘মহা মুর্খ’ রাখলেন। সে থেকে অদ্যবধি সাড়া বিশ্ববাসী তাকে ‘আবূ জাহিল’ বলেই সম্বোধন করে আসছে।
উপরোক্ত ঘটনা থেকে প্রমাণিত হলো, জেনে শুনে হক্বের বিরোধতিা করলে হক্বের সাথে নাহক্বকে মিশ্রিত করলে, নিজ স্বার্থ রক্ষায় নাহক্ব মত-পথ অনুসরণ করলে তার নাম পরিবর্তন করে যথপোযুক্ত নামে সম্বোধন করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
সাড়া বিশ্বে সুন্নত যিন্দাকারী মাসিক আল বাইয়্যিনাত আল্লাহ পাক-এর রহমতে বহু পূর্বেই অনেকের ক্ষেত্রেই এরূপ সুন্নত আদায় করেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো- সুওয়ালে উল্লেখিত তথাকথিত ‘শাইখুল হাদীছ’।
মাসিক আল বাইয়্যিনাতে তাকে সম্বোধন করা হয় ‘শাইখুল হদছ’ হিসেবে। প্রশ্ন উঠতে পারে কেন তাকে ‘শাইখুল হদছ’ হিসেবে সম্বোধন করা হলো?
অবশ্য এর জবাবও মাসিক আল বাইয়্যিনাতের মতামত বিভাগে বহুবার দেয়া হয়েছে। আমরা মূল আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে পুনরায় উক্ত বিষয় আলোচনা করবো যাতে করে সুওয়ালে উল্লেখিত বিষয়গুলো বুঝতে আমাদের সহজ হবে।
(ধারাবাহিক)
তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হককে
‘শাইখুল হদছ’ বলার কারণ- ৪
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে বা অনুসরন করে সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)
এ হাদীছ শরীফের আলোকে নিম্নে শাইখুল হদসের আমলের ফিরিস্তি তুলে ধরা হলো এবং কি কারণে তাকে শাইখুল হদছ বলা হয় তার বর্ণনা দেয়া হলো-
৪. পেপার পত্রিকায় ছবি দেয়া ও টিভিতে প্রোগ্রাম করা
তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আযীযুল হকের অসংখ্য হদছ বা নাপাক অর্থাৎ হারাম, নাজায়িয ও শরীয়ত বিরোধী আমলের একটি অন্যতম আমল হচ্ছে পেপার পত্রিকায় ছবি দেয়া ও টিভিতে প্রোগ্রাম করা। অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে তা সুস্পষ্ট হারাম। এটাকে হালাল মনে করা কুফরী।
“বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ” ইত্যাদি সমস্ত বিশ্বস্ত হাদীছ শরীফের কিতাবসমূহে “ছবি তোলা শক্ত হারাম” বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ)
عن معاوية رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان من اشد اهل النار يوم القيامة عذابا المصورون.
অর্থঃ- “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।” (মুসলিম শরীফ)
عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال ان اصحاب هذه الصور الذين يصنعونها يعذبون يوم القيمة ويقال لهم احيوا ما خلقتم.
অর্থঃ “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় প্রাণীর ছবি তৈরীকারীদের ক্বিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যে ছবিগুলো তৈরী করেছ তার মধ্যে প্রাণ দাও (কিন্তু তারা প্রাণ দিতে সক্ষম হবেনা)।” (নাসায়ী শরীফ)
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صور صورة عذبه الله حتى ينفخ فيها يعنى الروح وليس ينافخ فيها.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, আল্লাহ্ পাক তাকে ঐ ছবির মধ্যে প্রাণ না দেয়া পর্যন্ত শাস্তি দিবেন। কিন্তু সে তার মধ্যে প্রাণ দিতে সক্ষম হবে না।” (তিরমিযী শরীফ) (চলবে)
মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন
মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।
সুওয়াল: ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খ-ন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো-
… ৪. ইসলামী স্বর্ণযুগে এবং তৎপরবর্তীতে ফুক্বাহায়ে কিরাম ও হাদীছ বিশারদগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। তাই তা হযরত মুফতিয়ানে কিরামের ঐক্যমতে বিদয়াত। (নাঊযুবিল্লাহি মিনাল কাযিবীন)
এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাট হাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।
(ধারাবাহিক)
জাওয়াব: হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য শুধু ডাহা মিথ্যাই নয় বরং সম্পূর্ণরূপেই মনগড়া, দলীলবিহীন ও বিভ্রান্তিকর। শুধু তাই নয়, তার পাশাপাশি স্বয়ং আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম, ফক্বীহ ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের প্রতি মিথ্যারোপ করার কারণে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
স্মর্তব্য যে, হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। (১) স্বর্ণযুগে কেউ ফরজ নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। (২) তৎপরবর্তিতে অর্থাৎ স্বর্ণযুগের পর থেকে অদ্যবধি ফুক্বাহায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিছীনে কিরামগণের কেউ তথা একজনও ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করেননি। (৩) সকল মুফতিয়ানে কিরাম ঐক্যমত হয়ে ফতওয়া দিয়েছেন যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদয়াত বা নাজায়িয। (নাউযুবিল্লাহ)
উল্লেখ্য, হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবরা তাদের উল্লিখিত তিনটি বক্তব্যের কোন একটিও নির্ভরযোগ্য কিতাবের ইবারত বা দলীল দ্বারা প্রমাণ করতে পারেনি এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও তা প্রমাণ করতে পারবেনা। সুতরাং এমনিতেই তাদের উল্লিখিত বক্তব্যগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও পরিত্যাজ্য বলে সাব্যস্ত হয়। এরপরও আমরা তাদের উল্লিখিত প্রতিটি বক্তব্য দলীলভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট ও কুফরীমূলক বলে প্রমাণ করবো। ইনশাআল্লাহ। যেমন হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের প্রথম বক্তব্য হলো-
(১) স্বর্ণযুগে কেউ ফরজ নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়অলা আনহুমগণের কেউ ফরজ নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেননি। (নাউযুবিল্লাহ)
এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের এ বক্তব্য স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের অন্তর্ভুক্ত। কারণ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ফরজ নামাযের পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণসহ অর্থাৎ সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন তা হাদীছ শরীফ দ্বারাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
যেমন এ প্রসঙ্গে মুছান্নিফ ইবনে আবী শায়বায় ইরশাদ হয়েছে,
عن الاسود العامرى عن ابيه قال. صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجر فلما سلم انصرف ورفع يديه ودعا.
অর্থঃ হযরত আসওয়াদ আমিরী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ফজর নামায আদায় করলাম, যখন তিনি সালাম ফিরালেন ঘুরে বসলেন এবং উভয় হাত মুবারক উঠায়ে মুনাজাত করলেন।”..
“ইলাউস সুনান” কিতাবের ৩য় জিঃ ১৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ما اخرجه الحافظ ابو بكر بن ابى شيبة فى مصنفه عن الاسود العامرى عن ابيه قال. صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجر فلما سلم انصرف ورفع يديه ودعا.
অর্থঃ- “হাফিয আবু বকর ইবনে আবী শায়বা তাঁর “মুছান্নাফে” যা বর্ননা করেছেন। হযরত আসওয়াদ আমিরী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ফজর নামায আদায় করলাম, যখন তিনি সালাম ফিরালেন ঘুরে বসলেন এবং উভয় হাত মুবারক উঠায়ে মুনাজাত করলেন।”..
হাটহাজারী মৌলভী ছাহেব ও দেওবন্দীদের গুরু বা মুরুব্বী আশরাফ আলী থানবী ছাহেব-এর “ইমদাদুল ফতওয়া” কিতাবের ১ জিঃ ৭৯৭, ৭৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ما اخرجه الحافظ ابو بكر بن ابى شيبة فى مصنفه عن الاسود العامرى عن ابيه قال صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الفجر فلما سلم انصرف ورفع يديه ودعا.
অর্থঃ- হাফিয আবু বকর ইবনে আবী শায়বা তাঁর “মুছানাœফে” যা বর্ননা করেছেন। হযরত আসওয়াদ আমিরী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ফজর নামায আদায় করলাম, যখন তিনি সালাম ফিরালেন ঘুরে বসলেন এবং উভয় হাত মুবারক উঠায়ে মুনাজাত করলেন।”..
জা’ফর আহমদ ওছমানী-এর “ইমদাদুল আহকাম” কিতাবের ১ জিঃ ২৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………………………..
অর্থঃ- “সুওয়াল- যায়েদ বলে যে, ফরজ নামাজসমূহের পর হাত উঠায়ে মুনাজাত করা, হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত নেই, তাই এটা বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্। যায়েদের একথাটি কিরূপ? মুনাজাতের প্রমাণ থাকলে হাদীস শরীফ পেশ করবেন।
জাওয়াব- হ্যাঁ ‘সিহাহ্ সিত্তার’ বর্ণনায় এটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। কিন্তু “মুছান্নিফ ইবনে আবী শায়বায়” একটি বর্ণনা রয়েছে, যার মধ্যে ফরজ নামাজের পর হাত উঠায়ে মুনাজাত করার কথা উল্লেখ রয়েছে। এ হাদীস শরীফ “ইলাউস সুনান” কিতাবেও উল্লেখ রয়েছে।” (চলবে)
মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব
গুলবাগ, ঢাকা।
সুওয়ালঃ “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ্ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খ-, পৃ. ১৮০)
এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতোয়া দারুল উলুম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গোমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গোমরাহ করার জন্য যথেষ্ট। কারণ আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা উত্তম বলা হয়েছে। অর্থাৎ আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করার জন্য الصلاة الصلاة (আছ্ ছলাত! আছ্ ছলাত!) নামায! নামায! অথবা قامت قامت (ক্বামাত! ক্বামাত!) নামায আসন্ন, নামায আসন্ন, অথবা التنحنح (আত্তানাহ্নুহ্) গলা খাকড়ানো, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে আহবান করা বা তাছবীব করা সুন্নত, উত্তম ওমুস্তাহ্সান। যার আরো কিছু প্রমাণ নিম্নে পেশ করা হলো-
(ধারাবাহিক)
যেমন, “হাশিয়াতুত তাহ্তাবী আ’লা দুররিল মুখতার” কিতাবের ১ম খ-ের ১৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………………………..
অর্থঃ- “আযান ও ইকামতের মাঝে প্রত্যেক জামায়াত বিশিষ্ট নামাযে, সকল মানুষকেই তাছবীব করবে
(من غير تخصيص)তাখছীছ ছাড়াই আমীর-উমারা অথবা সর্বসাধারণের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন-কাজী সাহেব যা হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন। অর্থাৎ তাছবীব শুধু আমীর-উমারাদের বা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যই খাছ নয় বরং আম-খাছ সকলের জন্যই প্রযোজ্য)।”
মুলকথা হলো তাছবীব করার ব্যাপারে ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি শুধুমাত্র আমীর-উমারা অথবা মুসলমানগণের ইছলাহী কাজে বা সর্বসাধারণের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন-কাজী সাহেব, মুফতী সাহেব ইত্যাদি ব্যক্তিগণকে যে খাছ করেছেন, কিন্তু এটার উপর ফতওয়া নয়। বরং তাছবীব করার ব্যাপারে মুল ফতওয়া হলো
(من غير تخصيص)তাখছীছ ছাড়াই আম-খাছ সকল মানুষকে সকল নামাযেই তাছবীব করবে। আর এটার উপরই ফতওয়া।
“কাশফুল হাকায়িক” কিতাবের ১ম খ-ের ১৬১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………………………..
অর্থঃ- “আযান ও ইক্বামতের মাঝে দ্বিতীয়বার (মুছল্লিদেরকে নামাযের জন্য) আহবান করাকে তাছবীব বলে।… আর প্রত্যেক নামাযেই “আযান ও ইক্বামতের মাঝে দু’বার উচ্চ আওয়াযে
حى على الصلوة وحى على الفلاح.
(হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্) অথবা الصلواة الصلواة (আছ্ ছলাত! আছ্ ছলাত!) অথবা قامت قامت (ক্বামাত! ক্বামাত!) শব্দসমুহ ব্যবহার করে তাছবীব করবে অথবা প্রত্যেক শহরের পরিচিত যে শব্দগুলো রয়েছে যা মানুষদেরকে নামাযের কথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে, নামাযের সময় হয়েছে; এধরণের শব্দগুলোই তাছবীব করার জন্য ব্যবহার করবে।”
“হাশিয়াতুত তাহ্তাবী আ’লা মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ১ম খ-ের ১৩২-১৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ويثوب…. بعد الا ذان على الاصح . فى جميع الاوقات استحسنه المتأخرون.
অর্থঃ- الاصحঅধিক বিশুদ্ধ মতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সকল ওয়াক্তেই আযানের পর পুনরায় মানুষদেরকে নামাযের জন্য তাছবীব করবে। আর এই “তাছবীব” করাকে “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ মুস্তাহ্সান বলেছেন।”
“নূরুল ঈযাহ্” কিতাবের ৬১ পৃষ্ঠার ৪নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
التثويب العود الى الاعلام بعد الاعلام ووقته بعد الاذان على الصحيح وفسره فى رواية الحسن بان يمكت بعد الاذان قدر عشرين اية ثم يثوب ثم يمكث كذ لك ثم يقيم.
অর্থঃ- “তাছবীব” হলো, আযানের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার পর পুনরায় (আযান ও ইক্বামতের মাঝে প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়ে) মানুষদেরকে নামাযের কথা জানিয়ে দেয়া। আর
صحيحবা বিশুদ্ধ মতে তাছবীব করার ওযাক্ত হলো আযানের পর। যা হযরত হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর বর্ণনায় বর্ণিত আছে যে, মানুষ যেন বিশ আয়াত পরিমাণ পড়তে পারে এ পরিমাণ সময় অপেক্ষা করে পুনরায় নামাযের জন্য মানুষদেরকে তাছবীব করা অতঃপর অনুরূপ পরিমাণ সময় অপেক্ষা করে ইক্বামত দেয়া।”
“নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়িল” কিতাবের ১৭০-১৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………………………..
অর্থঃ- “আযানের পর তাছবীব অর্থাৎ মুছল্লিদেরকে জামায়াতে নামায পড়ার জন্য ডাকা। ্এ পদ্ধতি কুফার উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিমগণ প্রচলন করেছেন। অর্থাৎ ঞ্জআযানের পর পুনরায় মুছল্লিদেরকে জামায়াতে নামায পড়ার জন্য ডাকা বা তাছবীব করার প্রচলন কুফার উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিমগণ করেছেন। আর ইমাম আবূ ইউসুফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে এই তাছবীব করাতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা তাছবীবটা জরুরী কাজে নিয়োজিত লোকদের জন্য ফায়দা জনক। যেমন আমীর-উমারা এবং কাজী, মুফতী ইত্যাদি ব্যক্তি। আর “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ প্রত্যেক নামাযেই “তাছবীব” করাকে মুস্তাহ্সান বলেছেন।
“কাশফুল হাকায়িক” কিতাবের ১ম খ-ের ১৬১ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………………………..
অর্থঃ- “আর উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এই তাছবীব” করাকে মুস্তাহ্সান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বলেছেন যে, প্রত্যেক মুছল্লিদেরকে এই তাছবীবের মাধ্যমে সতর্ক করে দিতে হবে। কারণ বর্তমান যমানায় গাফলতি এবং দ্বীনী কাজে তথা নামাযে মানুষের অমনোযোগী ও অলসতা প্রকাশের কারণেই দ্বিতীয়বার (মানুষদেরকে এই তাছবীবের মাধ্যমে নামাযের কথা) জানিয়ে দেয়া উত্তম যে, আযান হয়েছে, নামায প্রস্তুত।”
“নূরুল ঈযাহ্” কিতাবের ৬১ পৃষ্ঠার ৪নং হাশিয়ায় আরো উল্লেখ আছে,
وافاد انه لا يخص صلواة بل هو فى سائر الصلوات وهو اختيار المتأخرين لزيادة غفلة الناس.
অর্থঃ- “মুলকথা হলো তাছবীব করার জন্য খাছ করে বা নির্দিষ্ট কোন নামায নেই। বরং সকল নামাযেই তাছবীব করবে। আর দ্বীনী কাজে তথা নামাযে মানুষের অলসতা বা গাফলতী প্রকাশের কারণেই প্রত্যেক নামাযেই “তাছবীব” করাকে “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ মুস্তাহ্সান বলেছেন।” (চলবে)
মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান
টাইগারপাস রোড, চট্টগ্রাম
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব” …।
এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
জাওয়াবঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহনযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে।
নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খ-ন সহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-
(ধারাবাহিক)
যেমন, “নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়িল” কিতাবের ১৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………………………..
অর্থঃ- “প্রকাশ্য বর্ণনা অনুযায়ী মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। তাহলে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রকাশ্য হুকুমের ইত্বায়াত হবে। কেননা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, “যখন তোমরা মুয়ায্যিনের আযান শুন, তখন মুয়ায্যিন যেরূপ বলে তোমরাও তদ্রুপ বল। আর হাদীস শরীফের প্রকাশ্য হুকুম থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে কোন কারণ নেই ।”
“নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়িল” কিতাবের ১৭৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………………………..
অর্থঃ- “আযান শ্রোতা (আযান অবস্থায়) কুরআন শরীফ পাঠ করবেনা, অন্য কাউকে সালাম দিবেনা, সালামের জবাব দিবেনা, এবং আযানের জবাব দেয়া ব্যতীত অন্য কোন কাজেই মশগুল হবে না। যদি কুরআন শরীফ পড়তে থাকে, আর এ অবস্থায় আযান শুরু হয়, তাহলে আযান শুনা মাত্রই কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বন্ধ করে আযানের জবাব দিবে।” (এক কথায় আযানের জবাব দেয়া ব্যতীত কোন কাজই করা যাবেনা।)
“নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়িল” কিতাবের ১৭৩ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………………………..
অর্থঃ- “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া আযান শ্রোতা সকলের উপরই ওয়াজিব।ঞ্জআর আযানের জাওয়াব এভাবে দিবে যে, মুয়ায্যিন আযানে যে শব্দগুলো বলে, আযান শ্রোতা মুয়ায্যিনের উক্ত আযানের শব্দগুলোই পুনরায় বলবে। তবে মুয়ায্যিন যখন
حى على الصلوة وحى على الفلاح.
(হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্) বলে, তখন আযান শ্রোতা
حى على الصلوة وحى على الفلاح
এর জাওয়াবে
لاحول ولاقوة الا باالله العلى العظيم.
বলবে। এবং ফজরের আযানে মুয়ায্যিনের কাছ থেকে যখন
الصلوة خير من النوم (আছ্ ছলাতু খইরুম মিনান নাঊম) শুনবে, তখন আযান শ্রোতা صدقت وبررت (ছদাক্তা ও বার্রাতা) বলবে।”
“নাফউল মুফতী ওয়াস্ সায়িল” কিতাবের ১৭৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………………………..
অর্থঃ- “যখন শ্রোতা আযান শুনছে এবং সেঞ্জঞ্জপথ চলছে, তাহলে এক্ষেত্রে শ্রোতা একটু সময় থামবে এবং আযানের জাওয়াব দিবে।”
“ফিক্বহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু” কিতাবের ১ম খ-ের ৫৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
يجب فى الراجح عند الحنفية لمن سمع الاذان …… فالاجابة انما هى باللسان وهو الظاهر عند الحنفية.
অর্থঃ- “হানাফী মাযহাবের راجح (রাজেহ্) অর্থাৎ তারজীহ্প্রাপ্ত বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া হলো যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের জন্যই…. মৌখিক বা শাব্দিকভাবে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।” আর হানাফী মাযহাবেরএটাই জাহের রেওয়ায়েত।”
“আইনুল হিদায়া” কিতাবের নেছফে আউয়াল খন্ডের ৩৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………………………..
অর্থঃ- “আল্লামা ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, হাদীছ শরীফের প্রকাশ্য বর্ণনা অনুযায়ী মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। কেননা হাদীস শরীফের সুস্পষ্ট বর্ণনার দ্বারা ওয়াজিব ছাবেত হয়। আর ওয়াজিব না হওয়ার ব্যাপারে কোন কারণ নেই এবং আল্লামা ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহাও লিখেছেন যে, মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া যে ওয়াজিব, ইহা “খোলাছাতুল ফতওয়া” এবং “তোহ্ফা” কিতাবের মধ্যেও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত মুছান্নেফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমিও এটাকে সুস্পষ্টভাবে মনে করি যে, মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। ইহা “নেহায়া” ও “মুহীতে সারাখসী” কিতাবের মধ্যে উল্লেখ আছে এবং “গারায়েব” কিতাবেরও মধ্যে উল্লেখ আছে যে, মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া আযান শ্রবণকারী সকলের জন্যই ওয়াজিব। ইহাই صحيح সহীহ ও বিশুদ্ধ ফত্ওয়া।”
“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খ-ের ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
يجب على على السامعين عند الاذان الاجابة وهى ان يقول مثل ما قال المؤذن…… وهو الصحيح.
অর্থঃ- “আযানের সময় আযান শ্রোতাদের সকলের জন্যই মৌখিক আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। আর আযানের জাওয়াব এভাবে দিবে যে, আযানে মুয়ায্যিন যা বলে আযান শ্রোতা তাই বলবে।….. ইহাইصحيح বা বিশুদ্ধ মত।”
“হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী আলা দুররিল মুখতার” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وعلى المعتمد يجيت لاللسان.
অর্থঃ- “ وعلى المعتمدনির্ভরযোগ্য মতে মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।”
আহমদ ইয়ার খান লিখিত “মিরয়াতুল মানাজীহ্” কিতাবের ১ম খ-ের ৪০৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
উদূ লেখা ঢুকবে…………………………………………………………..
অর্থঃ- “ححيح বা বিশুদ্ধ কথা এই যে, প্রথমে আযান শুনার পর সমস্ত দুনিয়াবী কথাবার্তা থেকে চুপ থাকবে এবং মৌখিক আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।”
(চলবে)
খন্দকার সেলিম আহমদ
পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল
সুওয়াল: হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।
তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
৬. পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয। কারণ, তারা সামনে উপস্থিত। আর মীলাদে দাঁড়ানো জায়িয নেই। কারণ, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত। (নাউযুবিল্লাহ)
এখন আমার সুওয়াল হলো, মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত?
জাওয়াব: মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও স্ববিরোধী। প্রথমতঃ তারা বলেছে, “পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয।”
এ বক্তব্য দ্বারা স্বীকার করতে বাধ্য হলো যে, তা’যীম বা সম্মানার্থে ক্বিয়াম জায়িয। অথচ এর পূর্বে তারা বরাবরই বলে বা লিখে এসেছে যে, ক্বিয়াম বলতেই বিদয়াত বা নাজায়িয।
তারা আরো প্রমাণ করলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণের হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ গুলো সঠিকই রয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ তারা বলেছে, “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত। তাই ক্বিয়াম করা যাবে না।” তাদের এ বক্তব্যও অজ্ঞতাসূচক ও দলীলবিহীন। তারা নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব থেকে এর প্রমাণ পেশ করতে পারে নাই এবং পারবেও না ইন্শাআল্লাহ।
মুলতঃ মীলাদ শরীফের যে ক্বিয়াম তার সাথে উপস্থিত থাকা বা না থাকার কোন শর্ত নেই। মীলাদ শরীফের যে ক্বিয়াম করা হয় তা মূলত আদব, শরাফত ও মুহব্বতের কারণেই করা হয়। কেননা সালাম পেশ করার সময় দাঁড়িয়ে পেশ করাই হচ্ছে আদব, শরাফত ও মুহব্বতের আলামত। হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা ক্বিয়াম সম্পর্কে নিহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারনেই ক্বিয়াম সম্পর্কে এরূপ বক্তব্য পেশ করেছে। তাই নিম্নে ক্বিয়ামের প্রকারভেদ সহ ক্বিয়াম সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো।
২. সুন্নত ক্বিয়াম
শরীয়তের দৃষ্টিতে কয়েকটি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ‘ক্বিয়াম করা’ বা দাঁড়ানো সুন্নত। যেমন-
(ধারাবাহিক)
আলিম-উলামা, পীর-মাশায়িখ, উস্তাদ, পিতা-মাতা, দ্বীনি নেতৃস্থানীয় সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে ক্বিয়াম করা বা দাড়ানো সুন্নত।
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্বখ্যাত কিতাব “আল আযকার” কিতাবের ২২৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,
واما اكرام الداخل بالقيام فالذى نختاره انه مستحب لمن كان فيه فضيلة ظاهرة من علم او صلاح اوشرف اوولاية مصحبة بصياتة او له ولادة اورحم مع سن ونحو ذالك ويكون هذا القيام للبر والاكرام والاجترام لا للرياء الاعظام وعلى هذا الذى اخترناه استمر عمل السلف والخلف.
অর্থঃ- “প্রবেশকারী বা আগমনকারীর সম্মানার্থে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানোকে আমরা মুস্তাহাব সুন্নত হিসেবে গ্রহণ করেছি। কারণ আগমনকারী ইলম্, যোগ্যতা, সামাজিকভাবে মর্যাদাবান, সন্তান বা বয়োজ্যোষ্ঠ আত্মিয় ইত্যাদির কারণে সম্মান পাওয়ার উপযুক্ত। তাই আগমনকারীর জন্য যে কিয়াম করা হয় তা শুধুমাত্র সম্মান বা তা’যীমার্থেই করা হয়। রিয়া বা বড়ত্ব প্রকাশের জন্য নয়। পূর্ববর্তী পরবর্তী সকল ছালিহীনগণই আমাদের এমতানুযায়ী আমল করেছেন।”
বিশ্বখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী আল হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ “মিরকাত শরহে মিশকাত” কিতাবের ৪র্থ খ-ের ৫৮ পৃষ্ঠায় লিখেন,
وفيه ايماء الى ندب القينام لتعظيم الفضلاء والكبراء.
অর্থঃ- উল্লিখিত হাদীছ শরীফে এটাই বুঝানো হয়েছে যে, শ্রদ্ধেয় ও মর্যাদাবান ব্যক্তিদের প্রতি তা’যীম বা সম্মান প্রদর্শনার্থে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো মুস্তাহাব সুন্নত।
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা এটাই ছাবিত হয় যে, কারো মুহব্বতে তা’যীম বা সম্মানার্থে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সুন্নাতে ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম।
উল্লেখ্য, মীলাদ শরীফে যে কিয়াম করা হয় তা মুহব্বত ও তা’যীমার্থেই করা হয়। সুতরাং মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়ামও এ অর্থে সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
দ্বিতীয়তঃ কোন প্রকার সুসংবাদ বা শুভ সংবাদ শ্রবণ করতঃ দাঁড়িয়ে যাওয়া বা ক্বিয়াম করা সুন্নত।
এ প্রসঙ্গে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ “মুসনাদু আহমদ”-এ বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেন যে, “হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিছাল মুবারক লাভ করার পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন, এমনকি কারো কারো অন্তরে নানা প্রকার চিন্তা-ফিকিরের উদ্রেক হতে লাগলো। তার মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। এমনি অবস্থায় আমি এক দালানের ছায়াতলে বসে ছিলাম। হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সেখানে আসলেন এবং আমাকে সালাম দিলেন, কিন্তু আমি তা বুঝতে পারিনি। অতঃপর তিনি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট তা জানালেন যে, আপনি শুনে আশ্চর্য হবেন যে, আমি হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কে সালাম দিলাম অথচ তিনি আমার সালামের জবাব দিলেন না। তখন তাঁরা উভয়েই আমার নিকট আসলেন এবং হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনার ভাই উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আপনাকে সালাম দিয়েছেন আপনি তাঁর সালামের জবাব দিলেন না কেন? আপনার এ অবস্থা হয়েছিল কেন? আমি জবাব দিলাম না এরূপ তো আমি করিনি।
হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ পাক-এর শপথ করে বলেন, হ্যাঁ অবশ্যই আপনি এরূপ করেছেন। তখন আমি বললাম তবে আমি ব্যাপারটি উপলদ্ধি করতে পারিনি যে আপনি আমার দিক দিয়ে গিয়েছেন এবং আমাকে সালাম করেছেন। তখন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন যে, হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঠিকই বলেছেন। তাহলে আপনাকে কি কোন বিষয় অবিভূত করে রেখেছিল? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে বিষয়টি কি? আমি বললাম, আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিছাল মুবারক দান করলেন অথচ আমি জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারলাম না। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছি। হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
فقمت اليه قلت له بابى انت وامى انت احق بها قال ابو بكر قلت يارسول الله ما نحاة هذا الامر فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قبل منى الكلمة التى عرضت على عمى فردها على فهى له نجاة.
(একথা শুনে) আমি হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর দিকে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং বললাম আমার পিতা-মাতা আপনার জন্যে কুরবান হোক। নিশ্চয়ই আপনিই এ ব্যাপারে অধিকতর হক্বদার। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করেছি, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কিভাবে এ শাস্তি থেকে নাযাত পাওয়া যাবে? জবাবে রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- আমার চাচা আবূ তালিবকে যে “কালিমা শরীফ” গ্রহণ করতে বলেছিলাম যা তিনি গ্রহণ করেননি, সে কালিমা শরীফ যে আন্তরিকভাবে বা খালিছভাবে গ্রহণ করবে। সেটাই হবে তার নাজাতের মাধ্যম।” (অনুরূপ বর্ণনা মিশকাত শরীফেও রয়েছে।)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ থেকে এটাই ছাবিত হলো যে, কোন প্রকার সুসংবাদ বা শুভ সংবাদ শুনে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে যাওয়া সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ বা আগমনের সংবাদ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুসংবাদ বা শুভ সংবাদ। সুতরাং তাওয়াল্লুদ শরীফে আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ বা আগমনের সুসংবাদ বা শুভ সংবাদ শ্রবণ করতঃ ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে যাওয়া সুন্নত প্রমাণিত হলো।
(চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার
সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত
মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-
জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।
উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-
….. “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” ….
কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।
তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”
আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলো উল্লেখ করার সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো।
প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ
বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ২৪
(তৃতীয় অংশ)
এ জন্যে হযরত ক্বাজী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাবে হযরত আবূ ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বক্তব্যকে উল্লেখ করেছেন,
واجب على كل مؤمن متى ذكرة او ذكر عنده ان يخضع ويخشع ويتوفر ويسكن من حر كته ويأخذ فى هيبته واجلاله بما كان يأخذ به نفسه لو كان بين يديه ويتدب بما ادبنا الله به.
অর্থঃ- “প্রতিটি মু’মিনের জন্যে ওয়াজিব হল যে, যখনই সে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথা আলোচনা করবে বা তাঁর নিকট আলোচনা করা হবে, তখন যেন অত্যন্ত বিনয়ী হয়ে যায় এবং নড়া চড়া বন্ধ করে ভাবমুগ্ধ অবস্থায় চুড়ান্ত আদব সহকারে এমনভাবে সম্মান প্রদর্শন করবে যেমন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বশরীরে তার সম্মুখে উপস্থিত হলে করতো এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মুখে যেমন আদব করার নির্দেশ আল্লাহ পাক আমাদেরকে প্রদান করেছেন। ঠিক তেমনিভাবে আদব প্রদর্শন করতে হবে।” (শিফা ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা- ৪০)
বর্ণিত আলোচনা থেকে যে দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়, সে পরিপ্রেক্ষিতে দৃঢ়তার সাথে বলতে হয় যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আলোচনার সময়ে দাঁড়িয়ে যাওয়া ওয়াজিব। যেহেতু সম্মানিকে তার সামনে যেমন সম্মান করা হয়, তার আড়ালেও তেমনভাবে সম্মান করতে হয়। যেমন ইসলামী শরীয়তের বহুল পরিচিত একটি মাসয়ালাকে এ বিষয়টি সহজভাবে বুঝার জন্যে দৃষ্টান্ত হিসাবে পেশ করা যেতে পারে।
বাইতুল্লাহ শরীফের সামনে অবস্থানকালে যেমন বাইতুল্লাহ্র দিকে সম্মুখ বা পিঠ দিয়ে ইস্তিনজার জন্যে বসা নিষেধ। তেমনিভাবে হাজার হাজার মাইল দূর দেশ হতেও ইস্তিনজার সময় বাইতুল্লাহ শরীফের দিকে সম্মুখ বা পিঠ দিয়ে বসা নিষেধ।
যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى ايوب ان النبى صلى الله عليه وسلم قال اذا أتيتم الغائط فلاتستقبلوا القبلة ولا تستدبروها ببول ولا غائط ولكن شرقوا او غربوا قال ابو ايوب فقد منا الشام فوجدنا مراحيض قد بنيت قبل القبلة فتنحرف عنها ونستغفر الله قال نعم.
অর্থঃ “হযরত আবূ আইয়ুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, যখন তোমরা ইস্তেঞ্জাখানায় যাবে, তখন ক্বিবলার দিকে তোমাদের সম্মুখ বা পিঠ করবেনা বরং পূর্ব বা পশ্চিম দিকে করে দিও। হযরত আইয়ুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমরা যখন শাম দেশে গেলাম, তখন দেখি সেখানে বাথরুমগুলো ক্বিবলামুখী করে তৈরী করা হয়েছে। আমরা ঘুরে বসে কাজ সমাধা করতাম এবং আল্লাহ পাক-এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতাম। হযরত ছুফিয়ান ইবনে উয়ায়নাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হ্যাঁ।” (মুসলিম, বুখারী, তিরমিযী)
‘বাইতুল্লাহ শরীফ’ হল ‘শিয়ারুল্লাহ’ যা মুসলমানের ক্বিবলাহ এ জন্যে এ ঘরকে সম্মান করতে হয়। এ ঘরের উপস্থিতিতে যেভাবে সম্মুখ ভাগ বা পিঠ দিয়ে বসে ইস্তিনজা করা যায় না। ঠিক একইভাবে সামনে না হলেও আল্লাহ পাক-এর ঘর ক্বিবলাকে সম্মান করতে হয়। হাজার হাজার মাইল দুরেও সম্মুখ বা পিঠ দিয়ে বসে ইস্তিনজা করা জায়িয নয়। এই মাসয়ালার ভিত্তিতে বলা যায় যে, রসূলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি কোন মুসলমানের সামনে স্বশরীরে এসে হাজির হন তখন এমন কোন মুসলমান আছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সামনে আসতে দেখেও সে তার নিজের আসনে বসে থাকবে, দাঁড়িয়ে তা’যীম বা সম্মান প্রদর্শন করবে না? যদি তখন দাঁড়িয়ে যাওয়া আদব হয় ও জায়িয হয়, বরং শরীয়ত অনুযায়ী তখন দাড়ানো ফরজের অন্তর্ভূক্ত। তবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুপস্থিতেও দাঁড়িয়ে তাঁকে তা’যীম বা সম্মান প্রদর্শন করা জায়িয হবে না কেন? বরং দাঁড়িয়ে যাওয়া ফরয-ওয়াজিব। তাই মীলাদ শরীফে তাঁর বিলাদত শরীফের কথা শুনে দাঁড়িয়ে যাওয়া হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি তা’যীম বা সম্মান প্রদর্শনেরই নামান্তর।
এ প্রসঙ্গে মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর খলীফা মাওলানা শামছুল হক্ব ফরীদপুরী তার “তাছাওউফ তত্ত্ব” নামক কিতাবের ৪১ পৃষ্ঠায় লিখেছে, “…….. হযরত (মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সালাম করার সময় বসিয়া বসিয়া সালাম করা শরীফ তবীয়তের লোকের কাছে বড়ই বেয়াদবী লাগে। সেই জন্য রওযা শরীফের সামনে নিজেকে হাযির ধ্যান করিয়া খাড়া হইয়া সালাম করাতে কোনই দোষ হইতে পারেনা। যেমন মদীনা শরীফে রওযা শরীফের সামনে সালাম করার সময় সকলেই দাঁড়াইয়া সালাম করিয়া থাকেন।”
মাওলানা শামসুল হক ফরীদপুরীর উক্ত বক্তব্য দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, মীলাদ শরীফে যে ক্বিয়াম করা হয়, তা মুহব্বত, আদব, শরাফত ও তা’যীমার্থে করা হয়। এখানে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপস্থিত হওয়া না হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। তাছাড়া ক্বিয়াম বিরোধীরা কি এরূপ একখানা দলীল পেশ করতে পারবে? যেখানে উল্লেখ আছে যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম দেয়ার সময় দাঁড়িয়ে সালাম দেয়া নিষেধ বা নাজায়িয। মূলতঃ একখানা দলীলও তারা পেশ করতে পারবেনা। যদি তাই হয়ে থাকে তবে ক্বিয়াম করাকে বা দাঁড়িয়ে সালাম দেয়াকে কি করে নাজায়িয ও বিদয়াত বলা যেতে পারে? বস্তুতঃ মীলাদ শরীফে ক্বিয়াম করা হচ্ছে, খাছ সুন্নত ও আদব-এর অন্তর্ভুক্ত। এটাকে বিদয়াত, নাজায়িয বলা সুস্পষ্ট কুফরী।
বর্ণিত হাদীছ শরীফদ্বয়ের উপরোক্ত বিস্তারিত ব্যাখ্যামূলক আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণও মীলাদ শরীফের মজলিস করেছেন শুধু তাই নয় বরং মীলাদ শরীফের মজলিসে সন্তুষ্টি ও খুশি প্রকাশ করেছেন এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব সেটাকে পূর্ন সমর্থন করেছেন। শুধু তাই নয় উক্ত মজলিসের অশেষ ফযীলত বর্ণনা করে উম্মতদেরকে মীলাদ শরীফের মজলিস করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। আরো প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ যে মীলাদ শরীফের মজলিস করেছেন, সে মজলিসের সাথে বর্তমান মীলাদ শরীফের ‘তরতীবগত’ সামান্য পার্থক্য ছাড়া মৌলিক বিষয়ে কোন পার্থক্যই নেই। তাই মীলাদ শরীফের মজলিস হচ্ছে খাছ সুন্নতে ছাহাবা-এর অন্তর্ভুক্ত।
মূলতঃ কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, তাফসীর ও ফিক্বাহের অসংখ্য কিতাবের দলীল-প্রমাণ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, মীলাদ শরীফ পাঠ করা সুন্নাতুল্লাহ্, সুন্নতে রসূল, সুন্নতে সাহাবা ও সুন্নতে উম্মত তথা মুস্তাহ্সান। (চলবে)
নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক
ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।
সুওয়াল: হানাফী মাযহাবে –
(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।
(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।
(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।
(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।
(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।
(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।
(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।
(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো জোড়া জোড়া এবং আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।
(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।
(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।
(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।
(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।
কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।
অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবিহক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে।
(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।
এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইল্ম্ রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।
অতএব, হানাফী মাযহাবে সূরা ফাতিহা শেষে ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে সে বর্ণনা বা প্রমাণ অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারাই ছাবিত রয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن وائل بن حجر رضى الله تعالى عنه قال ان النبى صلى الله عليه وسلم قرأغير المغضوب عليهم ولاالصلالين فقال امين وخفض بها صوته وفى رواية اخفى بها صوته.
অর্থঃ “হযরত ওয়ায়িল বিন হজর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা ফাতিহা পাঠ শেষ করে আমীন বলতেন এবং তা অনুচ্চ আওয়াজে তথা চুপে চুপে বলতেন। (তিরমিযী শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى وائل رضى الله تعالى عنه قال كان عمر وعلى لا يجمران بسم الله الرحمن الرحيم ولا بالتعوذ ولا بامين.
অর্থঃ “হযরত আবূ ওয়ায়িল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিস্মিল্লাহ, আউযুবিল্লাহ ও আমীন চুপে পাঠ করতেন। (তহাবী শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن عمربن الخطاب رضى الله تعالى عنه انه يخفى الامام اربعة اشياء التعوذ والبسملة وامين وسبحانه.
অর্থঃ হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, ইমাম চারটি জিনিস চুপে পাঠ করবে। ১. আউযুবিল্লাহ, ২. বিস্মিল্লাহ, ৩. আমীন, ৪. সুবহানাল্লাহ। (বায়হাক্বী, তবারানী)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه قال يخفى الامسام ثلاثا التعوذ وبسم الله الرحمن الرحيم وامين.
অর্থঃ “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, ইমাম তিনটি জিনিষ চুপে পাঠ করবে। ১. আউযুবিল্লাহ, ২. বিস্মিল্লাহ, ৩. আমীন। (আমানিউল আহবার)
উপরোক্ত বর্ণনার মাধ্যমে ছাবিত বা প্রমাণিত হয়েছে যে, ইমাম, মুক্তাদী সকলের জন্যেই সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর চুপে চুপে আমীন বলা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। (চলবে)
ডাঃ মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন
৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা
এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪
সুওয়ালঃ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাউযুবিল্লাহ)
এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান- আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।
জাওয়াবঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।
কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মুতাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলিগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভূক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে বহু আয়াত শরীফ ইরশাদ হয়েছে। তারমধ্যে বেশ কিছু আয়াত শরীফ বিগত সংখ্যাগুলোতে পেশ করেছি। একইভাবে নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে। তারমধ্যে কতিপয় হাদীছ শরীফ এখানে পেশ করা হলো।
ধারাবাহিক
১৪. মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে,
عن انس بن مالك رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا صلى الغداة جاء خدم المدينة بانيتهم فيها المناء فما ياتى باناء الا غمس يده فيها.
অর্থ- হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ফজরের নামায পড়তেন তখন মদীনা শরীফের শিশুরা পাত্রসমূহে পানি নিয়ে আসত। এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেকের পাত্রে হাত মুবারক ডুবাতেন।
অর্থাৎ মদীনাবাসীগণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাত মুবারকের বরকতকে রোগাক্রান্তদের আরোগ্য লাভের ওসীলা মনে করতেন এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাদেরকে নিষেধ করতেন না। বরং স্বীয় হাত মুবারক পানিতে ডুবিয়ে দিতেন।
১৫. মুসলিম শরীফ ও বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে,
عن سعيد الخلدرى رضى الله تعالى عنه. عن النبى صلى الله عليه وسلم قال ياتى زمان فيغزو فئام من الناس فيقال فيكم من صاحب النبى صلى الله عليه وسلم فيقال نعم فيفتح عليه.
অর্থ- হযরত সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মানুষের উপর এমন এক যুগ আসবে যে, তারা জিহাদ করবে। তাদেরকে জিজ্ঞাসিত করা হবে তোমাদের মধ্যে রসূলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন ছাহাবী আছে? উত্তর দেয়া হবে হ্যাঁ। ঐ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ওসীলায় বিজয় লাভ হবে।
অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর প্রিয় বান্দাদের ওসীলায় জিহাদে বিজয় অর্জিত হয় এবং তাঁদের ওসীলা গ্রহণের নির্দেশ রয়েছে।
অত্র হাদীছে তাবিয়ীন ও তাবি তাবিয়ীনের ওসীলার কথাও উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার ওলীগণের ওসীলায় বিজয় ও সাহায্য অর্জিত হয়।
১৬. বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে,
عن مصعب بن سعد رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى اله عليه وسلم هل تنصرون وترزقون الا بضعفا ئكم.
অর্থঃ- হযরত মুছআব ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের বিজয় লাভ হতো না এবং জীবিকা অর্জিত হতো না কিন্তু অসহায় ঈমানদারদের বরকতে ও ওসীলায়।
অথাৎ গরীব অসহায়দের ওসীলায় বৃষ্টি হয়, জীবিকা অর্জিত হয়, বিজয় ও সাহায্য লাভ হয়।
১৭. তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ ও মিশকাত শরীফ ইত্যাদিতে বর্ণিত আছে,
عن انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم شفاعتى لاهل الكبائر من امتى.
অর্থঃ- হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার সুপারিশ ও শাফায়াত আমার উম্মতের কীবরা গুনাহকারীদের জন্য।”
এর ব্যাখ্যায় আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি “লুময়াত শরহে মিশকাত” এর মধ্যে বলেন,
اى لوضع السيئات واما الشفاعة لرفع الدرجات فلكل من الاتقياء والاولياء.
অর্থঃ- পাপীদের জন্য ক্ষমা করে দেয়ার সুপারিশ করা হবে। কিন্তু মরতবা ও মর্যাদা উচ্চ করার শাফায়াত তো প্রত্যেক পরহিযগার ও ওলীর জন্য রয়েছে।
অর্থাৎ- প্রত্যেক স্তরের ঈমানদার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিও ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলার মুখাপেক্ষী। অসংখ্য অসৎ মানুষও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুপারিশ দ্বারা বেহেশ্তি হয়ে যাবে। এবং কোন ওলীও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বেপরোয়া নন।(অর্থাৎ প্রত্যেকেই তাঁর মুহ্তাজ
১৮. ইবনে মাজাহ শরীফে বর্ণিত আছে,
عن عثمان بن عفان رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يثفع يوم القيامة ثلثة الانبياء ثم العلماء ثم الشهداء.
অর্থঃ- হযরত উছমান ইবনে আফফান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ক্বিয়ামত দিবসে তিন সম্প্রদায় শাফায়াত করবেন। ১. আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ২. উলামায়ে হক্কানী রব্বানীগণ ও ৩. শহীদগণ।
অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যমে উলামায়ে হক্কানী রব্বানীগণ ও শহীদগণ সকল মসুলমানদের জন্য মুক্তির ওসীলা।
১৯. তিরমিযী শরীফ, দারিমী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ ও মিশকাত শরীফে বর্ণিত আছে,
عن عبد الله بن شقيق رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول يدخل الجنة بتفاعة رجل من امتى اكثرمن بنى تميم.
অর্থঃ- আব্দুল্লাহ ইবনে শাক্বীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি শুনেছি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার একজন উম্মতের সুপারিশে বনী তামীম গোত্রের বেশ সংখ্যক মানুষ বেহেশ্তে যাবে।
এর ব্যাখ্যায় “মিরকাত শরহে মিশকাত” এ আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
قيل الرجل عثمان بن عفان وقيل اويس قرنى وقيل غيره.
অর্থঃ কোন কোন উলামায়ে কিরামগণ বলেন, ঐ ব্যক্তি হলেন হযরত উছমান গণী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আর কেউ বলেন, ঐ ব্যক্তি হলেন হযরত উয়াইস আল ক্বরনী রহমতুল্লাহি আলাইহি। আর কেউ বলেন, অন্য কোন বুযুর্গ হবেন।
অর্থাৎ- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতও নাজাতের ওসীলা।
২০. “শরহুস্ সুন্নাহ” নামক হাদীছ শরীফ গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, একবার হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোথা হতে তাশরীফ নিচ্ছিলেন তখন একটি উট যা ক্ষেতে কর্মরত ছিল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখল আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাটু মুবারকের উপর মুখ রেখে ফরিয়াদ জানালো।
সরকারে দো-আলম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মালিককে ডেকে বললেন,
انه شكى كشرة العمل وقلة العلف فاحسنوا اليه.
অর্থাৎ, এ উটটি অভিযোগ করছে যে, তুমি এর দ্বারা অতিরিক্ত কাজ নিয়ে থাক এবং খাদ্য কম দিয়ে থাক। এর সাথে সদ্ব্যবহার করবে।
অর্থাৎ বুদ্ধিহীন জীবও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রয়োজন মিটানোর ওসীলা মনে করে। তাই যে মানুষ হয়ে “ওসীলাকে” অস্বীকার করবে, সে উটের চেয়েও অধিকতর বিবেকহীন বা নির্বোধ নয় কি? অবশ্যই।
২১. বুখারী শরীফে বর্ণিত রয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় আবু লাহাবের শাস্তি কিছু হ্রাস হয়েছে। কেননা তার বাঁদী হযরত ছুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুধ পান করিয়েছিলেন।
অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা এমন নিয়ামত, যার উপকার আবু লাহাবের ন্যায় কাট্টা কাফির মরদুদও পেয়েছে। আর মুসলমানরা তো অবশ্যই লাভ করেছে, করছে ও করবে।
২২. বুখারী শরীফে মসজিদ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হজ্জে যাবার পথে ঐ সকল স্থানে নামায পড়তেন, যে সব স্থানে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্জের সময় নামায পড়েছিলেন। বুখারী শরীফে এসব স্থানেরও উল্লেখ রয়েছে। বুঝা গেলো, যে স্থানে বুযূর্গব্যক্তি ইবাদত করেন ঐ স্থানটি কবুলিয়াতের (গ্রহণযোগ্যতার) ওসীলা হয়ে যায়। (চলবে)
মুহম্মদ আহমাদুর রহমান রহমান, পটিয়া, চট্টগ্রাম
মুহম্মদ মাসউদুল হক (ফাহিম) সোনাইমুরি, নোয়াখালী
সুওয়াল: পটিয়া জমিরিয়া খারিজী মাদ্রাসার অখ্যাত পত্রিকা অক্টোবর+নভেম্বর/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় সমস্যা ও সমাধান বিভাগে নিন্মোক্ত সমস্যা ও তার সমাধান ছাপা হয়।
সমস্যা: (১) গেল ৩ জুলাই ২০০৫ ঈসায়ী দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম কওমী মাদ্রাসার সরকারী স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেছে, এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু বৈধ এবং কি তার হুকুম? ‘চোখ দু’টি যিনা করে’ এর অর্থ কি?
সমাধান: (১) স্মরণ রাখা উচিত যে, মহিলাদের চেহারা মূলত সতরের অন্তর্ভূক্ত নয়। যার ইঙ্গিত পবিত্র কুরআন শরীফের মধ্যে পরিস্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে। সেই জন্য নামাযের মধ্যে হজ্বের মধ্যে এবং হাকীমের সামনে সাক্ষ্য দেয়ার সময় চেহারা খোলা রাখা জায়েয ও বৈধ। কিন্তু যেহেতু মহিলাদের চেহারা ফিৎনা-ফাসাদের মূল, সেই জন্য ওলামায়ে কেরাম বিশেষ জরুরত ব্যতিত বেগানা পুরুষদের সামনে চেহারা খোলা রাখা বা তা দেখা নাজায়েয বলেছেন। সুতরাং সমস্যায় উল্লেখিত ঘটনায় যেই সমস্ত শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেছে তা যেহেতু দ্বীনি ও জাতীয় জরুরতের জন্যই করেছে এবং তার মধ্যে যেহেতু কোন ফিৎনার আশংকা ছিলনা সেহেতু ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে তাতে কোন অসুবিধা হয়নি।। আর হাদীছ শরীফের মধ্যে যে ‘চোখ দু’টি যিনা করে’ বলা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা হচ্ছে যদি কামভাবের সাথে দৃষ্টি করা হয় বা ফিৎনার আশংকা থাকে।
তাদের উল্লিখিত সমাধানের প্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো আমরা জানতে ইচ্ছুক তা হলো-
১. মহান আল্লাহ পাক কি সত্যিই বেগানা পুরুষকে বেগানা মহিলার চেহারা দেখার অনুমতি দিয়েছেন?
২. কোন সূরার কত নং আয়াত শরীফে বেগানা মহিলার চেহারা দেখা জায়িয হওয়ার অনুমতি রয়েছে?
৩. নামায, হজ্জ সাক্ষ্যদান ইত্যাদি সময়ে চেহারা খোলা রাখা বৈধ এটা কতটুকু সঠিক? এর কি কোন ব্যাখ্যা রয়েছে?
৪. “আল্লাহ পাক চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত করেননি কিন্তু উলামায়ে কিরাম চেহারা খোলা রাখাকে নাজায়িয বলেছেন” তাদের এ বক্তব্য দ্বারা কি এই প্রমাণিত হয় না যে, উলামায়ে কিরাম আল্লাহ পাক-এর বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছেন। (নাঊযুবিল্লাহ)
৫. খারেজী মাদ্রাসার সরকারী স্বীকৃতি দ্বীনি জরুরতের মধ্যে পরে কি? আর এরূপ জরুরতে বেপর্দা হওয়ার অনুমতি আছে কি?
৬. যদি ফিৎনার কোন আশংকা না থাকে তবে কি বেপর্দা হওয়া বা বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাত করা জায়িয রয়েছে?
৭. “চোখের যিনা হলো বেগানা লোককে দেখা,” এ হাদীছ শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা কি? যদি খাহেশাতের সাথে দৃষ্টি না দেয় তবেও কি তা ব্যাভিচার বলে গণ্য হবে?
উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতের সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা মুলতঃ হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা বা উলামায়ে ‘ছূ’এর অন্তর্ভুক্ত। তাই তারা নিজেদের কথিত শীর্ষস্থানীয় উলামাদের বাঁচাতে নির্লজ্জভাবে কুরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করেছে, আল্লাহ পাক, তাঁর রসূল ও হক্কানী উলামায়ে কিরামকে দোষারূপ করেছে, বেপর্দাকে সুকৌশলে জায়িয করে শরীয়ত পাল্টে দিয়ে নতুন শরীয়ত প্রকাশ করে নব্য কাদিয়ানী হিসেবে নিজেদেরকে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয় বিস্তারিতভাবে ও দলীলের মাধ্যমে পর্যালোচনা করলে এটাই সুস্পষ্ট প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবহিকভাবে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
(ধারাবাহিক)
৩. নামায, হজ্জ সাক্ষ্যদান ইত্যাদি সময়ে চেহারা খোলা রাখা বৈধ এটা কতটুকু সঠিক? এর কি কোন ব্যাখ্যা রয়েছে?
(দ্বিতীয় অংশ)
দ্বিতীয়তঃ হজ্বের কথা বলা হয়েছে যে, হজ্বের সময় মহিলাদের চেহারা খোলা রাখা বৈধ।
পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবদের এ বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা ও প্রতারণার শামিল। মূলত: হজ্বের সময় মহিলাদের চেহারা খোলা রাখার কোন নির্দেশ শরীয়তে নাই। বরং শরীয়তের নির্দেশ হলো মহিলাদের হজ্বের সময়েও গায়রে মাহরামদের থেকে নিজ চেহারাকে হিফাজত করতে হবে।
আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদেরকে ইহরাম অবস্থায়ও শরঈ পর্দা করতে বলেছেন তবে নেকাব বা কাড় যেন মুখম-ল বা চেহারার মধ্যে সরাসরি স্পর্শ না করে। তবে নেকাব ব্যবহার করতে কোথাও নিষেধ করেননি বরং আদেশ করেছেন।
মুলতঃ ইহ্রাম অবস্থায়ও মহিলাদের চেহারার কোন অংশই পরপুরুষকে দেখানো জায়িয হবেনা। তাই মহিলারা ইহরাম অবস্থায়ও নেকাব ব্যবহার করবে। তবে এরূপভাবে ব্যবহার করবে যেন নেকাব মুখম-ল বা চেহারা স্পর্শ না করে এবং তার চেহারাও ঢেকে থাকে।
অনেকে মনে করে থাকে যে হজ্জের সময় বা ইহরাম অবস্থায় মুখম-ল বা চেহারা খোলা রাখা যাবে তাতে কোন গুনাহ হবে না। (নাঊযুবিল্লাহ)
মুলতঃ তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণই ভুল ও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী। কেননা হাদীছ শরীফে এসেছে,
عن عائشة رضى الله عنها قالت كنا مع النبى صلى الله عليه وسلم محرمات فكنا اذا مر بنا الرجال سدلت احدانا خمارها من على راسها على وجهها فاذا جاوزنا كشفناه.
অর্থাৎ, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মুহরিমাতগণ একদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। এমন সময় আমাদের নিকট দিয়ে কিছু বেগানা পুরুষ যাচ্ছিল। আমি আমাদের মধ্যে একজনের মাথার ওড়না তার মাথা থেকে মুখম-ল বা চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিলাম যখন তারা চলে গেল তখন আমরা তার চেহারা খুলে দিলাম।”
উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইহরাম অবস্থায়ও পরপুরুষকে চেহারা দেখানো জায়িয নেই। কাজেই এরূপভাবে নেকাব ব্যবহার করবে যাতে নেকাব চেহারা স্পর্শ না করে এবং চেহারাও সম্পূর্ণ ঢেকে থাকে।
কাজেই পটিয়ার খারেজী মৌলবী ছাহেবরা হজ্বের ক্ষেত্রেও আমভাবে মহিলাদের চেহারা খোলা রাখাকে জায়িয বলে চরম প্রতারণা ও কাট্টা কুফরী করেছে।
তৃতীয়ত: বিচারকের সামনে স্বাক্ষদানের সময় বেগানা মহিলার চেহারা দেখাকে পটিয়ার খারেজী মৌলবী ছাহেবরা বৈধ বলে চরম জিহালতীর প্রকাশ ঘটিয়েছে এবং জনগনের সাথে চরম প্রতারণা করেছে। কারণ শরীয়ত আমভাবে স্বাক্ষদানের সময় বেগানা মহিলার চেহারা দেখার অনুমতি দেয় নাই। কারণ যদি মহিলাদের মাধ্যমেই স্বাক্ষ্যদানের বিষয়টা ফায়ছালা করা সম্ভব হয় তবে সেক্ষেত্রে বেগানা পুরুষকে চেহারা দেখানো বা দেখা কি করে জায়িয হতে পারে? কস্মিনকালেও তা জায়িয নেই। যেমন বর্তমান যামানায় যেহেতু অনেক মহিলা ডাক্তার রয়েছে তাই মহিলারা পুরুষ ডাক্তার দেখানো জায়িয নেই। তবে যদি এরূপ হয় যে এমন রোগ হয়েছে যে রোগের কোন মহিলা ডাক্তার নেই তবে সেক্ষেত্রে শুধু মা’জূর হিসেবে যতটুকু দেখা প্রয়োজন ততটুকু স্থান পুরুষ ডাক্তারকে দেখাতে পারবে এর বেশী দেখালে কবীরা গুনাহ হবে।
স্মতর্ব্য যে, ইসলামী শরীয়ত মহিলা আসামীকে শাস্তি দেয়ার সময়ও সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে বা বোরকা পরিয়ে এবং বসিয়ে শাস্তি দেয়ার বা বেত্রঘাত করার নির্দেশ দিয়েছে, যেন কোন ভাবেই বেপর্দা না হয়। তাহলে স্বাক্ষদানের ক্ষেত্রে আমভাবে মহিলার চেহারা দেখাকে বৈধ বলা কি করে সঠিক ও গ্রহণ যোগ্য হতে পারে?
মূলত: উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, পাটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা প্রতারণা মূলক ও কুরআন শরীফের আয়াতের অপব্যাখ্যার শামিল। আর কুরআন শরীফের আয়াতের অপব্যাখ্যা করা কাট্টা কুফরীর অন্তূর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قال فى القران رايه فليتبوأ مقعده من النار. وفى رواية من قال فى القران بغير علم فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ সম্পর্কে মনগড়া কথা বলে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়। অপর রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ সম্পর্কে ইলম্ ব্যতীত অর্থাৎ বিনা প্রমাণে মনগড়া কোন কথা বলে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান দোযখে করে নেয়।” (তিরমিযী, মিশকাত, মিরকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
من فسر القران برايه فقد كفر.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের মনগড়া ব্যাখ্যা করলো, সে কুফরী করলো।” (ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন)
কাজেই পটিয়া খারিজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য যে কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। তা আর বলার অপেক্ষাই রাখে না।
(চলবে)