সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৬৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আমজাদ আলী, বাইতুল মোর্কারম মার্কেট

মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন,  মিরপুর, ঢাকা।

ডাঃ মুহম্মদ লুৎফর রহমান, মুন্সিগঞ্জ সদর।

সুওয়ালঃ ২০০৭ ঈসায়ী সনে দেশে আসন্ন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছিল। এতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দিয়েছে খিলাফত মজলিস দলের একাংশের চেয়ারম্যান তথা কথিত শাইখুল হাদীছ  মাওলানা আজিজুল হক ছাহেব। শর্তারোপ করেছে পাঁচ দফা দাবি পূরণের। দাবিগুলো হচ্ছে-

(১) কুরআন-সুন্নাহ ও শরীয়ত বিরোধী কোনও আইন প্রণয়ন করা হবে না।

(২) কওমী মাদ্রাসা সনদের সরকারি স্বীকৃতি যথাযথ বাস্তবায়ন করা হবে।

আইন করা হবে-

(৩) হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী।

(৪) নবী-রসূল ও ছাহাবায়ে কিরামের সমালোচনা ও কুৎসা রটনা করা দ-নীয় অপরাধ।

(৫) সনদপ্রাপ্ত হক্কানী আলিমরা ফতওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করেন। সনদবিহীন কোনও ব্যক্তি ফতওয়া দিতে পারবেন না। (সমূহ জাতীয় দৈনিক)

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কথিত শাইখুল হাদীছ ছাহেবের উল্লিখিত পাঁচ দফা দাবি পূরনের শর্তে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়াটা কতটুকু কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়ত সম্মত হয়েছে? দয়া করে সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ    ‘আবূ জাহিলকে’ চিনেনা পৃথিবীতে এরূপ মুসলমান খুজে পাওয়া দুস্কর হবে। ‘আবূ জাহিল’ তার নাম কখনোই ছিলনা, তার নাম ছিল ‘আবুল হিকাম’ অর্থাৎ জ্ঞানীর পিতা বা মহা পণ্ডিত হিসেবেই সে কাফিরদের নিকট অধিক মশহুর ছিল সে এতটাই পণ্ডিত ছিল যে আরব দেশে কোন বিচার হতো না ‘আবুল হিকাম’ কে ছাড়া।

আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘দ্বীনে হক্ব’ প্রচার শুরু করলেন, ‘মহা পণ্ডিত’ নিজ স্বর্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে এবং স্বার্থ হাছিরের লক্ষ্যে ইসলামকে হক্ব বা সত্য জানা ও বুঝার পরও দ্বীনে হক্বের বিরোধিতা করলো এবং বাতিল মতবাদ বা কুফরী শিরকীর মধ্যে দৃঢ় রইল।

রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবিবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সঙ্গত কারণেই মহা পণ্ডিত ‘আবুল হিকামের’ নাম পরিবর্তন করে ‘আবূ জাহিল’ তথা মুর্খের পিতা বা ‘মহা মুর্খ’ রাখলেন। সে থেকে অদ্যবধি সাড়া বিশ্ববাসী তাকে ‘আবূ জাহিল’ বলেই সম্বোধন করে আসছে।

উপরোক্ত ঘটনা থেকে প্রমাণিত হলো, জেনে শুনে হক্বের বিরোধতিা করলে হক্বের সাথে নাহক্বকে মিশ্রিত করলে, নিজ স্বার্থ রক্ষায় নাহক্ব মত-পথ অনুসরণ করলে তার নাম পরিবর্তন করে যথপোযুক্ত নামে সম্বোধন করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

সাড়া বিশ্বে সুন্নত যিন্দাকারী মাসিক আল বাইয়্যিনাত আল্লাহ পাক-এর রহমতে বহু পূর্বেই অনেকের ক্ষেত্রেই এরূপ সুন্নত আদায় করেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো- সুওয়ালে উল্লেখিত তথাকথিত ‘শাইখুল হাদীছ’।

মাসিক আল বাইয়্যিনাতে তাকে সম্বোধন করা হয় ‘শাইখুল হদছ’ হিসেবে। প্রশ্ন উঠতে পারে কেন তাকে ‘শাইখুল হদছ’ হিসেবে সম্বোধন করা হলো?

অবশ্য এর জবাবও মাসিক আল বাইয়্যিনাতের মতামত বিভাগে বহুবার দেয়া হয়েছে। আমরা মূল আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে পুনরায় উক্ত বিষয় আলোচনা করবো যাতে করে সুওয়ালে উল্লেখিত বিষয়গুলো বুঝতে আমাদের সহজ হবে।

(ধারাবাহিক)

তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হককে

শাইখুল হদছবলার কারণ-৩

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে বা অনুসরন করে সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)

এ হাদীছ  শরীফের আলোকে নিম্নে শাইখুল হদসের আমলের ফিরিস্তি তুলে ধরা হলো এবং কি কারণে তাকে শাইখুল হদছ বলা হয় তার বর্ণনা দেয়া হলো-

৩. কুশপুত্তলিকা দাহ

(দিতীয় অংশ)

এছাড়া যাদু বিশ্বাস করাও কুফরী শুধু তাই নয়, যাদু সংশ্লিষ্ট গণক,  জ্যোতিষ, মুনাজ্জিম এদেরকে বিশ্বাস করাও কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। যেমন এ প্রসঙ্গে মেশকাত শরীফে বর্ণিত হয়েছে, একদিন বাদ ফজর হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আজকে কিছু লোক ঈমানদার হয়েছে, আর কিছু লোক কাফের হয়ে গিয়েছে। হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কারা ঈমানদার হলো, আর কারা কাফের হলো?     তিনি বললেন গত রাত্রে বৃষ্টি হয়েছে- যারা এ বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ্ পাক-এর ইচ্ছায় বৃষ্টি হয়েছে তারা ঈমানদার হয়েছে। আর যারা এ বিশ্বাস করবে যে, গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবে বৃষ্টি হয়েছে তারা কাফের হয়ে গিয়েছে।  হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

من اتى عرافا فساله عن شيئ فلم يقب له صلوة اربعين ليلة.

অর্থঃ-“যে ব্যক্তি কোন যাদুকর, জ্যোতিষ, গণক ইত্যাদির কাছে যেয়ে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করে তাহলে তার চল্লিশ দিনের ইবাদত কবুল হবেনা আর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যদি বিশ্বাস করে তাহলে সে কাফের হবে।”

আরো বর্ণিত আছে,

من اقتبس بابا من علم النجوم فقد اقتبس بابا من علم السحر المنجم كاهن والكاهن ساحر والصاحر كافر.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি নুজুম শাস্ত্রের একটি অধ্যায় শিক্ষা করলো সে যেন যাদুবিদ্যার একটি অধ্যায় শিক্ষা করলো। মুনাজ্জিম হলো কাহিন, কাহিন হলো সাহির আর সাহির হলো কাফির।” (মুনাজ্জিম, কাহেন, সাহের-এর অর্থ হলো জ্যোতিষ, গণক, যাদুকর ভবিষ্যৎ বক্তা, গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব বর্ণনাকারী ইত্যাদি।

অতএব যারা কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে তারা সে কুফরী কাজটিই করেছে।

আরো উলেখ্য যে, কুশপুত্তলিকা তৈরি করা প্রকৃতপক্ষে মূর্তি নির্মাণ করারই নামান্তর। আর তথাকথিত ইসলামী ঐক্যজোট নেতৃবৃন্দ সে কাজটিই করেছে। তারা ক্লিনটনের মুখোশ, হাত-পা ইত্যাদি নকলভাবে তৈরী করে ক্লিনটনের মূর্তি তৈরী করেছে। অর্থাৎ তারা খৃষ্টানদের ন্যায় ঘৃণা প্রকাশার্থে ক্লিনটনের কুশপুত্তলিকা বা মূর্তি তৈরী করেছে। যা স্পষ্টতঃ পৌত্তলিকতা এবং অতঃপর তারা পৌত্তলিক তথা হিন্দুদের মত তা দাহও করেছে। অথচ শরীয়তে কঠোরভাবে মূর্তি নির্মাণ করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং মূর্তি নির্মাণকারীদের ভয়াবহ পরিণতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

যেমন,  প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه اخبره ان رسول الله صلى الم قال ان الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيمة يقال لهم احيوا ما خلقتم.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, “যারা প্রাণীর মূর্তি তৈরী করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। এবং তাদেরকে বলা হবে, যে মূর্তিগুলো তোমরা তৈরী করেছ, সেগুলোর মধ্যে প্রাণ দান কর।” (বুখারী শরীফ)

          হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে,

عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال ان اصحاب هذه الصور الذين يصنعو نها يعذبون يوم القيمة ويقال لهم احيوا ما خقتم.

অর্থঃ “হযরত ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় প্রাণীর মূর্তি তৈরীকারীদের ক্বিয়ামাতের দিন শাস্তি দেয়া হব্রে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যে মূর্তিগুলো তৈরী করেছ, তার মধ্যে প্রাণ দান কর।” (নাসাঈ শরীফ)

          অন্য হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

عن عائشة رضى الله تعالى عنها عن النبى صلى الله عليه وسلم قال ان اشد الناس عذابا يوم القيمة الذين يصاهون بخلق الله.

অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত বা আকৃতি তৈরী করবে।” (মিশকাত শরীফ)

এছাড়াও হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, স্বয়ং হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

بعثت لكسر المزامير والاصنام.

অর্থঃ- “বাদ্যযন্ত্র ও মূর্তি ধ্বংস করার জন্য আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে।”

অন্য হাদীস শরীফে তিনি ইরশাদ করেন,

ان الله بعثنى رحمة للعالمين وهدى للعالمين وامرنى ربى عزوجل بمحق امعازف والمزامير والاوثان والصليب وامر الجاهلية.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক আমাকে প্রেরণ করেছেন সমস্ত জাহানের জন্য রহমতস্বরূপ এবং হেদায়েতস্বরূপ। আর আদেশ করেছেন বাদ্যযন্ত্র, মূর্তি, ত্রুশ ও জাহেলী কাজসমূহ ধ্বংস করার জন্য।” (আবু দাউদ, আহ্মদ)

অতএব ইসলামী ঐক্য জোট নেতৃবৃন্দসহ যারাই এ কুফরী ও হারাম কাজে জড়িত ছিল কিম্বা সমর্থন যুগিয়েছিল তাদের সকলকেই খাছ তওবা করতে হবে।

কারণ কোন মুসলমান কুফরী করলে সে শরীয়তের দৃষ্টিতে মুরতাদ হয়ে যায়। আর শরীয়তে মুরতাদের যে হুকুম দেয়া হয়েছে তা খুবই কঠিন। অতএব প্রত্যেক মুসলমানের কুফরী করা হতে সতর্ক বা সাবধান থাকা উচিৎ। নিম্নে শরীয়তের দৃষ্টিতে মুরতাদের ফায়সালা বর্ণনা করা হলো।

মুরতাদের মাসয়ালা হলো, তার স্ত্রী তালাক হয়। (যদি সে বিবাহিত হয়ে থাকে), হজ্ব বাতিল হয় (যদি সে হজ্ব করে থাকে) এবং সে কাফির হয়। অর্থাৎ তার সকল নেক আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। তওবা না করা পর্যন্ত সে ঈমানদার হবেনা। বিবাহ না দোহ্রালে স্ত্রীর সাথে সংসার করা যাবেনা। যদি সংসার করে তবে ব্যভিচারের গুনাহ্ হবে। সন্তান হলে তা হালাল হবেনা। যদি হজ্বের সামর্থ্য থাকে তবে পূণরায় তাকে হজ্ব করতে হবে, যদিও সে পূর্বে হজ্ব করে থাকে। তা না করলে কবিরা গুনাহ্ হবে। তার ওয়ারিশ সত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য এবং যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে। অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। কেননা হাদীস শরীফে রয়েছে, তিন কারণে মৃত্যুদন্ড দেয়া জায়েয। যথা- (ক) ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। (খ) ঐ ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিনী যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা। (গ) যে অন্যায়ভাবে কাউকে কতল করে। (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্, মসনদে শাফেয়ী, মসনদে বাজ্জার, মুস্তাদরেকে হাকেম)

আর এরা মারা যাবার পর যারা এদের জানাযার নামাজ পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাজে সাহায্য-সহযোগীতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানগণের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। এমনকি মুসলমানের ন্যায়ও দাফন করা যাবে না। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে। কোরআন শরীফে বলা হয়েছে,

ان الذين كفروا وماتوا وهم كفار فن يقب من احدهم ملء الارض ذهبا ولو افتدى به اولئك لهم عذاب اليم وما لهم من نصرين.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই যারা কাফের এবং কুফরী অবস্থায় মারা গিয়েছে, তারা যদি জমিন (কুফরীর পরিবর্তে) পরিপূর্ণ স্বর্ণ তার ফিদিয়া বা কাফ্ফারা বাবদ দেয় (আমার থেকে বাঁচার জন্য), তা কখনো গ্রহণ করা হবেনা। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি বা আযাব এবং তাদের জন্য সাহায্যকারী নেই। (সূরা  আলে ইমরান-৯১)

অতএব, এরূপ স্পষ্ট ও শক্ত হারাম ও কুফরী কাজে যে মশগুল তাকে  কোন বিবেকবান ‘শাইখুল হাদীছ’ বলে সম্বোধন করতে পারে কি? কস্মিনকালেও না। বরং তাকে ‘শাইখুল হদছ’  বলে সম্বোধন করাই যুক্তিযুক্ত অর্থাৎ সে হাক্বীক্বতেই ‘শায়খুল হদছ’ বা হারাম, নাজায়েয ও কুফরী কাজের গুরু। (চলবে)

মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।

মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন

মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।

সুওয়াল:  ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খ-ন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো-

….. ৩. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম একটি নিম্ন শ্রেণীর কাজকেও বর্ণনা করতে সংকোচবোধ করেননি। আর মুনাজাত এমন এক কাজ যা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযান্তে প্রকাশ্যভাবে পাঁচবার যদি করতেন তবে কেন তার কোন বর্ণনা করা হয়নি। …….

এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।

(ধারাবাহিক)

জাওয়াব:   “ফরয নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার স্বপক্ষে কোন বর্ণনা নেই” হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন। কারণ পূর্ববর্তী সংখ্যায় প্রদত্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমানিত হয়েছে যে, “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করার স্বপক্ষে একটি, দুটি নয় বরং অসংখ্য ফে’লী ও ক্বওলী হাদীছ শরীফ রয়েছে। যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজেও ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন। আর হাদীছ শরীফে রয়েছে বলেই অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ তথা ফক্বীহগণ নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে এমনকি হাটহাজারী মৌলভীদের মুরুব্বীরাও তাদের কিতাবে “ফরয নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব-সুন্নত বলে” ফতওয়া দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরাসহ সমস্ত দেওবন্দী মৌলভীরা যাকে হক্কানী আলিম, উস্তাজুল আসাতিযা, মুহাদ্দিছগণের মাথার তাজ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ বলে মুখে ফেনা তুলে তাদের সেই কথিত শায়খুল হাদীছ আযীযুল হক্ব তার লিখিত “মোসলেম শরীফ ও অন্যান্য হাদীছের ছয় কিতাব” নামক গ্রন্থের ২৭১-২৯০ পৃষ্ঠায় ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা যে খাছ সুন্নত ও ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত তা ছাবিত করেছেন। শুধু তাই নয়, ফরয নামাযের পর মুনাজাতের প্রমাণ সরাসরি কুরআন শরীফের অসংখ্য আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যায়ও রয়েছে। যার প্রমাণ আপনারা মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর গত কয়েক সংখ্যায় পেয়েছেন।

শুধু   অসংখ্য ফে’লী হাদীছ শরীফ ও উক্ত আয়াত শরীফেই নয় বরং অসংখ্য ক্বওলী হাদীছ শরীফেও স্বয়ং আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয নামাযের পর দোয়া করার কথা ব্যক্ত করেছেন। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن انس بن مالك رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال ما من عبد يبسط كفيه فى دبر كل صلوة يقول اللهم الهى …….. الا كان حقا على الله ان لايرد يديه خائبتين.

অর্থঃ- “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন কোন বান্দা প্রত্যেক নামাযের পর উভয় হাত উঠিয়ে বলবে- আয় আল্লাহ্ পাক! …………… তখন আল্লাহ্ পাক-এর দায়িত্ব হয়ে যায়, তাকে খালি হাতে না ফিরানো।” (আল আমালুল্ ইয়াওমি ওয়াল্ লাইল্ লিইবনিস সিন্নী)

عن ابى امامة رضى الله تعالى عنه قال قيل يارسول الله صلى الله عليه وسلم اى الدعاء اسمع قال جوف الليل الاخر ودبر الصلوات المكتوبات.

অর্থঃ- “ হযরত আবূ উমামা বাহিলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন দোয়া তাড়াতাড়ি কবূল হয়? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, শেষ রাতের এবং প্রত্যেক ফরয নামাযের পরের দোয়া।” (মিশকাত শরীফ ৮৯ পৃষ্ঠা, মিরকাত, আশয়াতুল্ লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানাজীহ, তিরমিযী শরীফ, তুহফাতুল্ আহওয়াযী, আরিদ্বাতূল্ আহওয়াযী, উরফুশ্ শাযী)

عن عقبة بن عامر رضى الله تعالى عنه قال امرنى رسول الله صلى الله عليه وسلم ان اقرأ بالمعوذات فى دبر كل صلوة.

          অর্থঃ- “হযরত উকবা ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে প্রত্যেক নামাযের পর ‘মুয়াব্বিযাত’ পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন।” (মিশকাত শরীফ ৮৯ পৃষ্ঠা, মিরকাত, আশয়াতুল্ লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তা’লীকুছ্ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানাজীহ, মুসনাদু আহমদ ইবনে হাম্বল, আবূ দাউদ শরীফ, বযলুল্ মাজহুদ, আউনুল মা’বূদ, শরহু আবী দাউদ লিবদরিদ্দীন আইনী, নাসাঈ শরীফ, সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী, বাইহাক্বী শরীফ)

عن على رضى الله عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم على اعواد هذا المنبر يقول من قرأاية الكرسى فى دبركل صلوة لم يمنعه من دخول الجنة الا الموت ومن قرأها حين ياخذ مضجعه امنه الله على داره ودار جاره واهل دويرات حوله.

অর্থঃ- “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি, তিনি এই মিম্বরের কাঠে দাঁড়িয়ে বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পর ‘আয়াতুল কুরসী’ পড়বে, তার বেহেশ্তে প্রবেশ করতে মউত ছাড়া আর কিছুই বাধা দিতে পারবে না (অর্থাৎ মউতের বিলম্বই তার বাধা মাত্র।) আর যে ব্যক্তি শয়নকালে এটা পড়বে, আল্লাহ্ পাক তার ঘর, তার প্রতিবেশীর ঘর এবং আশে পাশের আরো কতক ঘরকে নিরাপদে রাখবেন।” (মিশকাত শরীফ ৮৯ পৃষ্ঠা, মিরকাত, আশয়াতুল্ লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তা’লীকুছ্ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ, বাইহাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান)

عن سعد رضى الله تعالى عنه انه كان يعلم بنيه هؤلاء الكلمات ويقول ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يتعود بهن دبر اصلوة اللهم انى اعوذبك من الجبن واعوذبك من البخل واعوذبك من ارذك العمر واعوذبك من فتنة الدنيا وعذاب القبر.

অর্থঃ- “হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি তাঁর সন্তানগণকে এ কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিতেন এবং বলতেন, নিশ্চয়ই হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের পর এসকল বাক্য দ্বারা আল্লাহ্ পাক-এর নিকট আশ্রয় চাইতেন। “আয় আল্লাহ্ পাক! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কাপুরুষতা হতে, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কৃপনতা হতে, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই অকর্মন্য বয়স হতে এবং আপনার নিকট আশ্রয় চাই দুনিয়ার ফিত্না ও কবরের শাস্তি হতে।” (মিশকাত শরীফ ৮৮ পৃষ্ঠা, মিরকাত, আশয়াতুল্ লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানাজীহ, বুখারী শরীফ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল্ কারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী)

          উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও তার ব্যাখ্যায় প্রদত্ত ইমাম-মুজতাহিদগণের বক্তব্য ও বর্ণিত হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, “ফরয নামাযের পর দোয়া বা মুনাজাত করা” মহান আল্লাহ্ পাক ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরই নির্দেশ।

কাজেই, হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবরা যে লিখেছে, “ফরয”  নামাযের পর মুনাজাতের কোন বর্ণনা উল্লেখ নেই” তাদের এ কথা ডাহা মিথ্যা, মনগড়া ও দলীল বিহীন বলে প্রমাণিত হলো।

মোট কথা হলো, ফরয নামাযের পর মুনাজাত করার বর্ণনা যেরূপ কুরআন শরীফে রয়েছে তদ্রুপ অসংখ্য ফে’লী ও ক্বওলী হাদীছ শরীফেও রয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের সমগোত্রীয়দের কিতাবেও সেগুলো উল্লেখ রয়েছে। হাটহাজারী মৌলবীরা যেহেতু হাদীছ শরীফ সম্পর্কে অজ্ঞ তাই তারা সকল বর্ণনা খুজে পায়না।

হাটহাজারী খারিজী মৌলবীদের নিকট আমাদের প্রশ্ন আমরা তো প্রমাণ করে দিলাম যে ফরয নামাযের পর মুনাজাত করার বর্ণনা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে রয়েছে। “কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে ফরয নামাযের পর মুনাজাত করতে নিষেধ করা হয়েছে।” এ রকম একখানা জঈফ বর্ণনাও কি কেউ দেখাতে পারবে? কস্মিনকালেও পারবেনা। তাহলে কিসের ভিত্তিতে ফরয নামাযের পর মুনাজাত করাকে বিদয়াত নাজায়িয বলে ফতওয়া দেয়? এটা কি শরীয়তে হস্তক্ষেপ করার শামিল নয়? তাহলে কি তারা নব্য কাদিয়ানী?

মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব  গুলবাগ, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ্ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।”  (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খ-, পৃ. ১৮০)

এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা  তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ  “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতোয়া দারুল উলুম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গোমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গোমরাহ করার  জন্য যথেষ্ট। কারণ আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা উত্তম বলা হয়েছে।  অর্থাৎ আযানের পরঞ্জপুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করার জন্য الصلاة الصلاة (আছ্ ছলাহ! আছ্ ছলাহ!) নামায! নামায! অথবা  قامت قامت (ক্বামাত! ক্বামাত!) নামায আসন্ন, নামায আসন্ন, অথবা  التنحنح(আত্তানাহ্নুহ্) গলা খাকড়ানো, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে আহবান করা বা তাছবীব করা সুন্নত, উত্তম ওমুস্তাহ্সান। যার আরো কিছু প্রমাণ নিম্নে পেশ করা হলো-

(ধারাবাহিক)

“বাদায়েউস্ সানায়ে” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ثم التثويب فى كل بلدة على ما يتعارفونه اما بالتنحنح او بقوه الصلاة الصلاة أو قامت قامت …… لانه ااعلام وااعلام انما يحصل بما يتعارفونه.

অর্থঃ- “তাছবীব প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়ে করতে হয়। যেমন  تنحنح  (তানাহ্নুহ্) করে অর্থাৎ গলা খাকড়ানোর মাধ্যমে অথবা  الصلاة الصلاة  (নামায! নামায!) অথবা قامت قامت (ক্বামাত! ক্বামাত!) (নামায আসন্ন, নামায আসন্ন,) ইত্যাদি শব্দ দিয়ে তাছবীব করতে হয়। কেননা তাছবীবের উদ্দেশ্য হলো মানুষদেরকে নামাযের কথা ভালভাবে জানিয়ে দেয়া। আর মানুষদেরকে নামাযের কথা ভালভাবে জানিয়ে দেয়াটা হাছিল হয় প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দের মাধ্যমে।”

“শরহুল আইনী আ’লা কান্যিদ দাক্বায়িক” কিতাবের ১ম খন্ডের ২৬ পৃষ্ঠার হাশিয়ায়  উল্লেখ আছে,

ويثوب فى جميع الصلاة والتشويب العود الى الاعلام بعد الاعلام.

অর্থঃ- “সমস্ত নামাযেই তাছবীব করবে। আর    আযানের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার পর পুনরায় মানুষদেরকে নামাযের কথা জানিয়ে দেয়াকেই তাছবীব বলা হয়।”

“শরহে বিক্বায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৩৫ পৃষ্ঠার ৭ নং হাশিয়ায়  উল্লেখ আছে,

اعلم ان التثويب هو الاعلام بعد الاعلام بنحو الصلوة خير من انوم او حى على الصلوة او الصلوة حاضرة او نحو ذلك باى لسان كان.

অর্থঃ-  “ জেনে রাখ ! নিশ্চয়ই আযানের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার পর পুনরায়   الصلوة خيرمن النوم(আছ্ ছলাতু খইরুম মিনান নাউম) এর মাধ্যমে, অথবা الصلوة حاضرة  (হাইয়া আলাছ্ ছলাহ্) এর মাধ্যমে, অথবা  الصلوة حاضرة (আছ্ ছলাতু হাদ্বিরাহ্) এর  মাধ্যমে, অথবা অনুরূপ শব্দ গুলো যে কোন ভাষার মাধ্যমে মানুষদেরকে  নামাযের কথা জানিয়ে দেয়াকেই “তাছবীব”  বলে।”

“শামী” কিতাবের ১ম খন্ডের ৩৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

التشويب العود الى الاعلام بعد الاعلام ………… بأن يمكث بعد الأذان قدر عشرين أية ثم يثوب ثم يمكث كذلك ثم يقيم … كل الصلوات لظهور التوانى فى الأمور الدينية.

অর্থঃ- “আর “তাছবীব” হলো, আযানের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার পর পুনরায়  (আযান ও ইক্বামতের মাঝে প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়ে) মানুষকে নামাযের কথা জানিয়ে দেয়া। … আর আযানের পর মানুষ যেন বিশ আয়াত পরিমাণ পড়তে পারে এ পরিমাণ সময় অপেক্ষা করে  পুনরায় নামাযের জন্য মানুষদেরকে  তাছবীব করা, অতঃপর  অনুরূপ পরিমাণ সময় অপেক্ষা করে ইক্বামত দেয়া।…আর দ্বীনী কাজে তথা নামাযে মানুষের অলসতা বা গাফলতী প্রকাশের কারণেই প্রত্যেক নামাযেই “তাছবীব” করা মুস্তাহ্সান বা উত্তম।”

“নূরুল ঈযাহ্” কিতাবের ৬১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ويثوب كقوه بعد الاذاب الصلوة الصلوة يا مصلين.

অর্থঃ- “আযানের পর মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে

الصلوة الصلوة يا مصلين

বলে তাছবীব করবে। অর্থাৎ আযানের পর মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে এ ভাবে তাছবীব করবে যে, হে মুছল্লীগণ নামাযের জন্য আসুন।  নামাযের জন্য আসুন।”

“মারাকিউল ফালাহ”  কিতাবে উল্লেখ আছে,

ويثوب بعد الا ذان فى جميع الأوقات لظهور التوانى فى الامور الدينية فى الأصح وتسويب كل بلد حسب ما تعارفه أهلها.

অর্থঃ- “الاصح অধিক বিশুদ্ধ মতে  দ্বীনী কাজে তথা নামাযে মানুষের অলসতা বা গাফলতী প্রকাশের কারণেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সকল ওয়াক্তেই আযানের পর পুনরায় মানুষদেরকে নামাযের জন্য তাছবীব করবে।  আর এই তাছবীব প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়েই করতে হবে। অর্থাৎ যে ধরণের শব্দ দিয়ে তাছবীব করলে শহর বাসী বুঝতে পারে, সে ধরণের শব্দ দিয়েই তাছবীব করতে হবে।”

“নূরুল ঈযাহ্” কিতাবের ৬১ পৃষ্ঠার ৪নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

احدثه علماء الكوفة بين الاذان والاقامة حى على الصوة مرتين حى على الفلاح مرتين واطق فى فظ التثويب فافاد انه يس له لفظ يختصه بل تثويب كل بلد على ما تعارفوه اما بالتنحنح او الصوة الصلوة او قامت قامت.

অর্থঃ-  “উলামায়ে কূফী রহমাতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাছবীব” করার যে নিয়ম প্রচলন করেছেন তা হলো, আযান ও ইক্বামতের মাঝে দু’বার حى عى الصلوة   (হাইয়া আলাছ্ ছলাহ্) এবং দু’বার حى على الفلاح (হাইয়া আলাল্ ফালাহ্) বলবে।  আর তাছবীব করার ক্ষেত্রে সাধারণত এ ধরণের শব্দ গুলোই ব্যবহার হয় হয়। তবে মুল কথা হলো তাছবীব করার জন্য খাছ করে নির্দিষ্ট কোন শব্দ নেই। বরং  “তাছবীব করার জন্য  প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়ে করতে হয়। যেমন  -تنحنح(তানাহ্নুহ্) করে অর্থাৎ গলা খাকড়ানোর মাধ্যমে অথবা  الصلاة الصلاة  (নামায! নামায!) অথবা قامت قامت (ক্বামাত! ক্বামাত!) (নামায আসন্ন, নামায আসন্ন,) ইত্যাদি শব্দ দিয়ে তাছবীব করতে হয়। কেননা তাছবীবের উদ্দেশ্য হলো মানুষদেরকে নামাযের কথা ভালভাবে জানিয়ে দেয়া। আর মানুষদেরকে নামাযের কথা ভালভাবে জানিয়ে দেয়াটা হাছিল হয় প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দের মাধ্যমে।”

“খুলাছাতুল ফতওয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ولا بأس بالتثويب فى سائر الصلوات فى زماننا وتثويب لك بلدة ما تعارفه أهل تلك البلدة ويجوز تخصيص كل من كان مشغولا بمصالح المؤمنين كان لقاضى وامغتى وامدرس.

অর্থঃ- “আমাদের যমানায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সকল ওয়াক্তেই আযানের পর পুনরায় মানুষদেরকে নামাযের জন্য তাছবীব করাতে কোন অসুবিধা নেই। সুতরাং এই তাছবীব প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়েই করতে হবে। অর্থাৎ যে ধরণের শব্দ দিয়ে তাছবীব করলে শহর বাসী বুঝতে পারে, সে ধরণের শব্দ দিয়েই তাছবীব করতে হবে। তবে খাছ করে প্রত্যেক বিশেষ ব্যক্তি যারা মু’মীনদের ইছলাহী কাজে মশগুল আছেন যেমন , কাজী, মুফতী  মুর্দারিস তাদেরকেও (বেশী বেশী করে জানিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে) তাছবীব করা জায়িয আছে। তবে মুল ফতওয়া হলো  তাখছীছ ছাড়াই আম-খাছ সকল মানুষকে সকল নামাযেই তাছবীব করবে। আর এটার উপরই ফতওয়া। (চলবে)

মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান

টাইগার পাস রোড, চট্টগ্রাম

 সুওয়াল:     চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব” …।

এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?

জাওয়াবঃ  আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে  এবং ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহনযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে।

নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খ-ন সহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-

(ধারাবাহিক)

আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া যেহেতু ওয়াজিব, সেহেতু এই ওয়াজিব তরক কারিরাই  নাফরমানের অন্তর্ভুক্ত হবে।

যেমন, “উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ৫ম খন্ডের ১১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

عن عبد الله رضى الله تعالى عنه قال من الجفاء ان تسمع المؤذن ثم لا تقول مثل ما يقو انتهى ولا يكون من الجفاء الا ترك اواجب ةترك المستحب ليس من الجفاء.

অর্থঃ-ঞ্জ“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ঐ ব্যক্তি নাফরমানের অন্তর্ভূক্ত যে মুয়াজ্জিনের আযান শুনে অথচ মুয়াজ্জিন যা বলে অনুরূপ বলে না। আার (আযানোর মৌখিক জাওয়াব দেয়া যেহেতু ওয়াজিব, সেহেতু) এই ওয়াজিব তরককারীরাই নাফরমানের অন্তর্ভূক্ত হবে। মুস্তাহাব তরককারী নাফরমানের অন্তর্ভূক্ত নয়। অতএব, আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব নয়। বরং আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। আর এই ওয়াজিব তরককারীরাই নাফরমানের অন্তর্ভূক্ত।” (মুছান্নিফে ইবনে আবি শাইবা)

সুতরাং প্রমাণিত হলো, মুয়াজ্জিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে নাফরমানের অন্তর্ভূক্ত হবে। সেটাই উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো।

তাছাড়া আযানের মৌখিক জবাব দেয়া যে ওয়াজিব এবং এটা যে প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত তার আরো প্রমাণ-

যেমন,“মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ১৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وهذا مبنى عى وجوب الاجابة بالقول.

অর্থঃ- “আর এটাই অর্থাৎ বর্ণিত হাদীছ শরীফ মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ।”

 “শামী” কিতাবের ১ম খন্ডের ৩৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

القول بوجوب الاجابة باللسان.

অর্থাৎ- “মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া, আযান  শ্রবণকারী সকলের জন্যই ওয়াজিব।”

“গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৮৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে……………………………………………………….

অর্থঃ- “সুস্পষ্ট বর্ণনার ভিত্তিতে মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। কেননা হাদীছ শরীফের মধ্যে স্পষ্টভাবে আদেশ করা হয়েছে যে, যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আযান শুন, তখন তোমরাও তদ্রুপ বল, যেরূপ মুয়াজ্জিন বলে।” যেমন “বাহ্রুর রায়েক” কিতাবে উহার সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে এবং মুছান্নেফ রহমতুল্লাহি আলাইহি মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব হিসেবে ছাবেত করেছেন। আর  “নাহ্রুল ফায়েক” কিতাবে “মুহীত” ও অন্যান্য কিতাব থেকে বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে, মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব এবং ইহাকে শক্তিশালী মত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই মতকে প্রথম মতের উপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে অর্থাৎ মৌখিক বা  শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া যেহেতু  আযান শ্রবণকারী সকলের জন্যই ওয়াজিব, সেহেতু আযান শ্রবণকারীরা সালামের জবাব দিবেনা এবং অন্যকেও সালাম দিবেনা। কুরআন শরীফ পাঠ করবেনা, বরং কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বন্ধ করে আযানের জবাব দিবে। আর আযানের জবাব দেয়া ব্যতীত কোন কাজেই মশগুল হবেনা।”

“মাজমাউল আনহুর ফী শরহে মুলতাকাল আবহুর” কিতাবের  ১ম খন্ডের ৭৮ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

…………… باللسان قي واجسة ………….. فاله المصنف لكن رجح فى البحر والنهر القول بالوجوب.

অর্থঃ- “মুখে মুয়াজ্জিনের আযানের জবাব ঞ্জদেয়া  ওয়াজিব বলা হয়েছে,…..মুছান্নেফ রহমতুল্লাহি আলাইহি  বলেছেন, তবে “বাহ্রুর রায়েক” ও “নাহ্রুল ফায়েক” কিতাবের  ترجيح)তরজীহ্প্রাপ্ত) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া হলো মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।” (অনুরূপ“বদরুল মুত্তাক্বা  ফী শরহে মুলতাক্বা” কিতাবে উল্লেখ আছে)

“ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

উদূ লেখা ঢুকবে……………………………………………………….

অর্থঃ- “আযানের সময় শ্রোতাদের সকলের জন্যই মৌখিক আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।ঞ্জআর আযানের জাওয়াব এভাবে দিবে যে, আযানে যা বলা হয় তাই বলবে।….আর ইহাই صحيح বা বিশুদ্ধমত।

(চলবে)

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

সুওয়াল:  হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

৬. পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয। কারণ, তারা সামনে উপস্থিত। আর মীলাদে দাঁড়ানো জায়িয নেই। কারণ, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত।  (নাউযুবিল্লাহ)

এখন আমার সুওয়াল হলো, মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম  বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত?

জাওয়াব:  মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও স্ববিরোধী। প্রথমতঃ তারা বলেছে, “পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয।”

এ বক্তব্য দ্বারা স্বীকার করতে বাধ্য হলো যে,  তা’যীম বা সম্মানার্থে ক্বিয়াম  জায়িয। অথচ এর পূর্বে তারা বরাবরই বলে বা লিখে এসেছে যে, ক্বিয়াম বলতেই বিদয়াত বা নাজায়িয।

তারা আরো প্রমাণ করলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণের হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে ক্বিয়াম  করা বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ গুলো সঠিকই রয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ তারা বলেছে, “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত। তাই ক্বিয়াম  করা যাবে না।” তাদের এ বক্তব্যও অজ্ঞতাসূচক ও দলীলবিহীন। তারা নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব থেকে এর প্রমাণ পেশ করতে পারে নাই এবং পারবেও না ইন্শাআল্লাহ।

মুলতঃ মীলাদ শরীফের যে ক্বিয়াম তার সাথে উপস্থিত থাকা বা না থাকার কোন শর্ত নেই। মীলাদ শরীফের যে ক্বিয়াম  করা হয় তা মূলত আদব, শরাফত ও মুহব্বতের কারণেই করা হয়। কেননা সালাম পেশ করার সময় দাঁড়িয়ে পেশ করাই হচ্ছে আদব, শরাফত ও মুহব্বতের আলামত। হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা ক্বিয়াম সম্পর্কে নিহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারনেই ক্বিয়াম সম্পর্কে এরূপ বক্তব্য পেশ করেছে।তাই নিম্নে ক্বিয়ামের প্রকারভেদ সহ ক্বিয়াম সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো।

২. সুন্নত ক্বিয়াম

শরীয়তের দৃষ্টিতে কয়েকটি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ‘ক্বিয়াম করা’ বা দাঁড়ানো সুন্নত। যেমন-

ধারাবাহিক

আলিম-উলামা, পীর-মাশায়িখ, উস্তাদ, পিতা-মাতা, দ্বীনি নেতৃস্থানীয় সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে ক্বিয়াম করা বা দাড়ানো সুন্নত।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قدم زيد بن احارثة امدينة ورسول الله صلى اله عليه وسم فى بيتى فاتاه فقرع الباب فقام اليه رسول الله صلى الله عليه وسلم عريانا يجر ثوبه والله ما رايته عريانا قبله ولا بعده فاعتنفه وقبله.

অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মদীনা শরীফে আগমন করলেন, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ঘরেই অবস্থান করছিলেন। হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমার ঘরে কড়া নাড়লে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ শরীর মুবারকের কাপড় (চাদর) মুবারক গুছগাছ করে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তার সাথে মুয়ানাকা করলেন ও বুছা দিলেন। হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, আমি এর পূর্বে ও পরে কখনো তাঁকে এরূপ করতে দেখিনি। (তিরমিযী শরীফ)

হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ আছে,

عن عائشة رضى الله تعالى عنها انها قالت مارايت اجذا كان اشبه سمتا وهديا ودلا وقال الحسن حديثا وكلام ولم يذكر الحسن اسمت والهدى والدل برسول الله صلى اله عليه وسلم من فاطمة كرم الله وجهها كانت اذا ذخت عليه قام اليها فاخذ بيدها وقبلها واحلسها فى مجلسه وكان اذا دخل عليها قامت ايه فاخذت بيده فقبلته واجلسته فى مجلسها.

অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর চেয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে শারীরিক গঠন বা সৌন্দর্যে অন্য কাউকে এত সামঞ্জস্যপূর্ণ দেখিনি। হযরত  হাসান শুধুমাত্র কথা বার্তায় সামঞ্জস্যতার কথাই বলেছেন। কিন্তু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে শারীরিক গঠনঞ্জবা আকৃতি-প্রকৃতিতে সামঞ্জস্যতার  কথা বলেননি। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যখন আসতেন, তখন তিনি তাঁর মুহব্বতে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং তাঁর হাত ধরে চুমু খেয়ে নিজ আসনে বসাতেন। অনুরূপ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর ঘরে আসতেন তখন ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাঁর প্রতি তা’যীম প্রকাশার্থে দাঁড়িয়ে যেতেন। তাঁর হাত ধরে, চুমু খেয়ে নিজ আসনে বসাতেন।” (আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

উল্লিখিত হাদীছ শরীফের ভিত্তিতে দু’প্রকার ক্বিয়ামের প্রমাণ পাওয়া গেল। (১) ক্বিয়ামে হুব্বী, (২) ক্বিয়ামে তা’যীমী অর্থাৎ সম্মান প্রকাশার্থে ক্বিয়াম করা। অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের জন্যে যে ক্বিয়াম করেছেন তা হচ্ছে ক্বিয়ামে হুব্বী। আর  হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ,  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্যে যে ক্বিয়াম করেছেন তা হচ্ছে ক্বিয়ামে তা’যীমী।  সুতারাং উভয়টাই সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।                (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়াল:    অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-

জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না।  …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো।  উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

….. “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” ….

কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব:    প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলো উল্লেখ করার সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো।

প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ

বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ২৪

(দ্বিতীয় অংশ)

অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,

عن عائشة رضى الله تعالى عنها كانت اذا دخلت عليه قام اليها فاخذ يدها فقبلها واجلسها فى مجلسه وكان اذا دخل عليها قامت له فاخذت بيده فقبلته واجلسته فى مجلسها.

অর্থঃ- হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট যেতেন, তখন তিনি (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেয়ের মুহব্বতে) দাঁড়িয়ে যেতেন এবং তাঁর হাতে বুছা দিয়ে নিজের স্থানে বসাতেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর নিকট যেতেন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাত মুবারক বুছা দিয়ে নিজের স্থানে বসাতেন। (আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত, মিরকাত, বযলুল মাজহুদ, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী)

অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن محمد بن هلال رحمه الله تعالى عن ابيه ان النبى صلى الله عليه وسلم كان اذا خرج قمنا له حتى يدخل بيته اخرجه البزار ورجاه ثقات.

অর্থঃ “হযরত মুহম্মদ বিন হিলাল রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ঘর হতে বের হতেন, তখন আমরা দাঁড়িয়ে যেতাম এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি স্বীয় ঘরে প্রবেশ না করতেন (আমরা দাঁড়িয়ে থাকতাম)। এ হাদীছ শরীফখানা বায্যার বর্ণনা করেছেন, যার রাবী অত্যন্ত শক্তিশালী। (বায্যার,মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ, ফিক্বহুস্ সুনানে ওয়াল আছার)

“বুখারী শরীফেরব্যাখ্যা গ্রন্থ “ইশরাদুস্সারী”-এর ৯ম খ-, ১৫৫ পৃষ্ঠায়” ছহীহ্ সনদে “হযরত উসামা ইবনে শারীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন,

قمنا الى النبى صلى الله عليه وسلم فقبنا يده.

অর্থঃ “আমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীম-এর জন্যে দাঁড়িয়ে তাঁর হস্ত মুবারকদ্বয় চুম্বন দিলাম।”

যদি তাই হয়ে থাকে, তবে একথা কি করে বিশ্বাস করা যেতে পারে যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত মীলাদ শরীফের মজলিসে স্বশরীরে উপস্থিত হলেন অথচ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ ক্বিয়াম করেননি।

এখন কেউ আবার এ প্রশ্নও করতে পারে যে, মেনে নিলাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বশরীরে উক্ত মীলাদ শরীফের মজলিসে উপস্থিত হওয়ার কারণে তাঁর সম্মানার্থে ক্বিয়াম করেছেন। কিন্তু বর্তমান মীলাদ শরীফের সকল মজলিসেই কি আল্লাহ পাক-এর হাবীব উপস্থিত হন? যদি উপস্থিত না হন তবে ক্বিয়াম করা হয় কেন?

এর জবাবে বলতে হয় যে, মূলতঃ মীলাদ শরীফে যে ক্বিয়াম করা হয় তা শুধু সুন্নতই নয়, বরং আদব, শরাফত ও তা’যীম বা সম্মানার্থেই করা হয়। অর্থাৎ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ‘সালাম’ পেশ করার সময় ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে ‘সালাম’ দেয়াই সুন্নত ও আদব। চাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত থাকুন, আর অনুপস্থিত থাকুন। সর্বাবস্থায় দাঁড়িয়ে সালাম দেয়াই সুন্নত, আদব, শরাফত ও ভদ্রতা।

স্মর্তব্য যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বাবস্থায় তা’যীম বা সম্মান করতে হবে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এ পৃথিবীতে থাকাবস্থায় যে ভাবে তা’যীম বা সম্মান করতে হত, তাঁর ওফাত মুবারকের পরও সমানভাবে তা’যীম বা সম্মান করতে হবে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপস্থিতিতে যেমন সম্মান করতে হত, তাঁর অনুপস্থিতেও ঠিক তদ্রুপ সম্মান করতে হবে। হযরত ক্বাজী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সুপ্রসিদ্ধ কিতাব ‘শিফা শরীফে’ বর্ণনা করেছেন,

ان حرمة النبى صلى الله عليه وسلم بعد موته وتوقيره وتعظيمه لازم كما كان حال حياته وذالك عند ذكره صلى الله عليه وسلم وذكر حديث وسنته وسماع اسمه وسيرته ومعاملة اله وعترته.

অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিছাল শরীফের পর তাঁর ইজ্জত, সম্মান, মর্যাদা ঠিক তেমনভাবে অবশ্যকরণীয় কর্তব্য হবে; যেমন তাঁর জীবদ্দশায় কর্তব্য ছিল এবং তা করতে হবে যখনই তাঁর আলোচনা, তাঁর পরিবারের আচার ব্যবহার আলোচনার সময়ে।” (শিফা ২য় খ- পৃঃ ৪০)

অতএব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীম-তাকরীম পৃথিবীতে থাকাকালে যেমন ছিল ঠিক তেমনিভাবে তাঁর বিছাল শরীফের পরও থাকবে।

(চলবে)

নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক

ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

সুওয়াল:   হানাফী মাযহাবে –

(১)  নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।

(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।

(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।

(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।

(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।

(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।

(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।

(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো জোড়া জোড়া এবং আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।

(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।

(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে ইত্যাদি।

কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।

অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবিহক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে।

(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।

এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইল্ম্ রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।

অতএব, হানাফী মাযহাবে ‘জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে কাতার সোজা করে দাঁড়ায়, এ বর্ণনা হাদীছ শরীফেই রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن انس بن مالك رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى اله عليه وسلم اقيموا صفوفكم وتراضوا.

অর্থঃ “হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা কাতার সোজা কর এবং পরস্পরে (গায়ে গায়ে) মিলিত হয়ে দাঁড়াও। (বুখারী শরীফ)

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن انس رضى الله تعالى عنه قال قا رسول الله صلى الله عليه وسلم سورا صفولكم فان تسوية الصفوف من اقامة الصلوة وفى رواية اخرى من تمام اصلوة.

অর্থঃ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা কাতার সোজা কর। নিশ্চয়ই কাতার সোজা করা নামায প্রতিষ্ঠা করার অন্তর্ভুক্ত। অপর এক রিওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে, “কাতার সোজা করা নামায পূর্ণ করারই শামিল।” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن النعمان بن بشير رضى الله تعالى عنه قال كان رسول اله صلى الله عليه وسلم يسوى صفوفنا حتى كانما يسوى بها القداح.

অর্থঃ “হযরত নু’মান বিন বশীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাতার সোজা করতেন যেন উহার সহিত তিনি তীর সোজা করছেন। (মুসলিম শরীফ)

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى مسعود الانصارى رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عيه وسلم يمسح منا كبنا فى الصلوة ويقول استووا.

অর্থঃ “হযরত আবু মাসউদ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জামায়াতে নামায আদায়ের প্রাক্কালে আমাদের বাহু সমূহকে পরস্পর মিলিয়ে দিতেন এবং বলতেন, সোজা হযে দাঁড়াও। (মসুলিম শরীফ)

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن انس رضى الله تعالى عنه قال قا رسول الله صلى الله عليه وسلم رسوا صفولكم وحاذوا بالاعناق.

অর্থঃ “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা কাতারসমূহে পরস্পরে মিলিয়ে দাড়াবে এবং তোমাদের কাঁধসমূহকে সমপর্যায়ে বা বরাবর সোজা রাখবে। (আবূ দাউদ শরীফ)

মূলতঃ জামায়াতে নামায পড়ার সময় কাতার সোজা করার জন্য জোড় তাকীদ আরোপ করা হয়েছে। এ কারণে কোন হাদীছ শরীফে একে অপরের সাথে মিলিয়ে অর্থাৎ গায়ে গায়ে মিলিয়ে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে। কোন হাদীছ শরীফে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে, কোন হাদীছ শরীফে বাহু বাহু মিলিয়ে, আবার কোন হাদীছ শরীফে পায়ে পায়ে মিলিয়ে দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, দু’ পায়ের মাঝে অতিরিক্ত ফাঁকা করে দাঁড়ালে পরস্পরে মিলিয়ে দাঁড়ানো সম্ভব হয় না। এ কারণে স্বাভাবিক নিয়মে দাঁড়াতে হবে। উহার পরিমান নিচে চার আঙ্গুল এবং উপরে আধ হাত বলে ইমামগণ উল্লেখ করেছেন। তাঁরা আরো উল্লেখ করেছেন, পায়ের সম্মুখ দিকে না মিলিয়ে পায়ের গোড়ালী বা টাখনুর সাথে মিলিয়ে দাঁড়াবে। যেহেতু সকলের পা সমান নয় তাই পায়ের সম্মুখ দিক মিলিয়ে দাঁড়ালে কাতার সোজা হবে না।  (চলবে)

ডাঃ মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন

৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা

এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪

সুওয়ালঃ  কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাউযুবিল্লাহ)

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান- আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।

জাওয়াবঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।

কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মুতাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলিগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভূক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে বহু আয়াত শরীফ ইরশাদ হয়েছে। তারমধ্যে বেশ কিছু আয়াত শরীফ বিগত সংখ্যাগুলোতে পেশ করেছি। একইভাবে নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে। তারমধ্যে কতিপয় হাদীছ শরীফ এখানে পেশ করা হলো।

ধারাবাহিক

১০. মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর নিকট হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জুব্বা মুবারক ছিল এবং তিনি বলতেন,

هذه جبة رسول الله صلى اله عليه وسلم كانت عند عائشة رضى الله تعاى عنها فلما تضت قبضمتها وكان النبى صلى اله عيه وسلم يلبسها فنحن تغسلها للمرضى يستشفى بها.

অর্থ- এ জুব্বা মুবারক হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর নিকট ছিল। তাঁর বিদায়ের পর আমি এটা নিয়েছি। এ জুব্বা মুবারক হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিধান করতেন। আর এখন আমরা এ কাজ করি যে, মদীনা শরীফে যে ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হয়ে যায় তাকে এটা ধুয়ে পান করাই। এতে সে আরোগ্য হয়ে যায়।

অর্থাৎ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মুবারকের সাথে স্পর্শিত জুব্বা মুবারককে আরোগ্যের ওসীলা মনে করে এটা ধুয়ে পান করতেন।

১১. নাসায়ী শরীফে বর্ণিত আছে যে, ইহুদীদের একদল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর পবিত্র খিদমতে উপস্থিত হয়ে মুসলমান হলো। এবং আরজ করল যে, আমাদের  নগরীতে ইবাদতখানা হচ্ছে “বি’আ” (ইহুদীদের উপাসনাগার)। আমরা ইচ্ছা করছি যে, এটা ভেঙ্গে মসজিদ নির্মাণ করব-

فاستوهبناه من فضل طهوره فدعا بماء فتوضأ وتمضمض ثم صبه لنا فى اداوة وامرنا فقال اخرجوا فاذا اتيتم ارضكم فاكسروا فاكسروا بيعتكم وانضحوا مكا نعا بهذا اماء فاتخذوها مسجدا.

অর্থ- আমরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে তাঁর “গাসালা মুবারক” (ব্যবহারকৃত পানি)  এর জন্য ফরিয়াদ করলাম। তখন তিনি পানি আনিয়ে ওযু করলেন এবং কুল্লি করলেন। আর কুল্লি ও ওযুর এ পানিটুকু একখানা পাত্রে ঢেলে আমাদেরকে দান করলেন এবং নির্দেশ দিলেন- যাও, আপন বি’আতে এ পানি ছিটে দাও এবং ঐখানে মসজিদ নির্মাণ কর।

অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যবহৃত পানি হচ্ছে আভ্যন্তরীণ অপবিত্রতা দূর করার ওসীলা।

১২. “ইবনুল বার রহমতুল্লাহি আলাইহি, কিতাবুল ইস্তিশাব ফি মা’রাফাতিল আছহাবে” লিখেছেন যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বিদায়ের সময় ওছীয়ত করেছেন- “আমাকে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একখানা কাপড় দান করেছিলেন। আমি এ দিনের (অর্থাৎ মৃত্যুর দিন) জন্য রেখেছি। এ কাপড়খানা যেন আমার কাফনের নিচে রাখা হয়।

وخذ ذلك الشعر والاظفار فاجعله فى فمى وعلى عينى ومواضع السجود منى.

অর্থ “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর এ চুল মুবারক ও নখ মুবারক নাও এবং এগুলো আমার মুখে চক্ষুদ্বয়ে ও সিজদার স্থানে রেখে দিও।”

অর্থাৎ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তবারুকসমূহকে কবরে শান্তির ওসীলা মনে করে নিজেদের কবরসমূহে নিয়ে যান।

১৩. ইমাম দায়লামী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘মুসনাদুল ফিরদাউসে” বর্ণনা করেছেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সম্মানিতা মাতা হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদকে স্বীয় কোর্তা মুবারক দিয়ে কাফন দিয়েছেন এবং বেশ কিছুক্ষণ তাঁর কবরে শুয়ে আরাম করেছেন। এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন,

انى البستها لتلبس من ثياب الجنة واصطجعت معها فى قبرها لاخفف عنها ضعظة القبر.

অর্থাৎ- “আমি আমার চাচী ছাহেবাকে স্বীয় কোর্তা মুবারক এজন্য পরিধান করিয়েছি, যাতে তাঁকে জান্নাতের পোশাক পরিধান করানো হয়। এবং তাঁর কবরে এজন্য আরাম করেছি, যাতে তিনি কবর সংকোচন হতে নিরাপত্তা পান।”

অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক পোশাক বেহেশ্তী পোশাক অর্জনের ওসীলা। এবং যে স্থানে তাঁর “ কদম মুবারক” পড়বে, ওটা মুছীবত থেকে নিরাপদ হয়ে যায়।   (চলবে)

মুহম্মদ আহমাদুর রহমান,

পটিয়া, চট্টগ্রাম।

মুহম্মদ মাসউদুল হক (ফাহিম)

সোনাইমুরি, নোয়াখালী।

সুওয়াল:  পটিয়া জমিরিয়া খারিজী মাদ্রাসার অখ্যাত পত্রিকা অক্টোবর+নভেম্বর/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় সমস্যা ও সমাধান বিভাগে নিন্মোক্ত সমস্যা ও তার সমাধান ছাপা হয়।

সমস্যা: (১) গেল ৩ জুলাই ২০০৫ ঈসায়ী দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম কওমী মাদ্রাসার সরকারী স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেছে, এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু বৈধ এবং কি তার হুকুম? ‘চোখ দু’টি যিনা করে’ এর অর্থ কি?

সমাধান: (১) স্মরণ রাখা উচিত যে, মহিলাদের চেহারা মূলত সতরের অন্তর্ভূক্ত নয়। যার ইঙ্গিত পবিত্র কুরআন শরীফের মধ্যে পরিস্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে।  সেই জন্য নামাযের মধ্যে হজ্বের মধ্যে এবং হাকীমের সামনে সাক্ষ্য দেয়ার সময় চেহারা খোলা রাখা জায়েয ও বৈধ। কিন্তু যেহেতু মহিলাদের চেহারা ফিৎনা-ফাসাদের মূল, সেই জন্য ওলামায়ে কেরাম বিশেষ জরুরত ব্যতিত বেগানা পুরুষদের সামনে চেহারা খোলা রাখা বা তা দেখা নাজায়েয বলেছেন। সুতরাং সমস্যায় উল্লেখিত ঘটনায় যেই সমস্ত শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেছে তা যেহেতু দ্বীনি ও জাতীয় জরুরতের জন্যই করেছে এবং তার মধ্যে যেহেতু কোন ফিৎনার আশংকা ছিলনা সেহেতু ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে তাতে কোন অসুবিধা হয়নি।। আর হাদীছ শরীফের মধ্যে যে ‘চোখ দু’টি যিনা করে’ বলা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা হচ্ছে যদি কামভাবের সাথে দৃষ্টি করা হয় বা ফিৎনার আশংকা থাকে।

তাদের উল্লিখিত সমাধানের প্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো আমরা জানতে ইচ্ছুক তা হলো-

১. মহান আল্লাহ পাক কি সত্যিই বেগানা পুরুষকে বেগানা মহিলার চেহারা দেখার অনুমতি দিয়েছেন?

২. কোন সূরার কত নং আয়াত শরীফে বেগানা মহিলার চেহারা দেখা জায়িয হওয়ার অনুমতি রয়েছে?

৩. নামায, হজ্জ সাক্ষ্যদান ইত্যাদি সময়ে চেহারা খোলা রাখা বৈধ এটা কতটুকু সঠিক? এর কি কোন ব্যাখ্যা রয়েছে?

৪. “আল্লাহ পাক চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত করেননি কিন্তু উলামায়ে কিরাম চেহারা খোলা রাখাকে নাজায়িয বলেছেন” তাদের এ বক্তব্য দ্বারা কি এই  প্রমাণিত হয় না যে, উলামায়ে কিরাম আল্লাহ পাক-এর বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছেন। (নাঊযুবিল্লাহ)

৫. খারেজী মাদ্রাসার সরকারী স্বীকৃতি দ্বীনি জরুরতের মধ্যে পরে কি? আর এরূপ জরুরতে বেপর্দা হওয়ার অনুমতি আছে কি?

৬. যদি ফিৎনার কোন আশংকা না থাকে তবে কি বেপর্দা হওয়া বা বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাত করা জায়িয রয়েছে?

৭. “চোখের যিনা হলো বেগানা লোককে দেখা,” এ হাদীছ শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা কি? যদি খাহেশাতের সাথে দৃষ্টি না দেয় তবেও কি তা ব্যাভিচার বলে গণ্য হবে?

উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতের সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা মুলতঃ হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের চেলা বা উলামায়ে ‘ছূ’এর অন্তর্ভুক্ত। তাই তারা নিজেদের কথিত শীর্ষস্থানীয় উলামাদের বাঁচাতে নির্লজ্জভাবে কুরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করেছে, আল্লাহ পাক, তাঁর রসূল ও হক্কানী উলামায়ে কিরামকে দোষারূপ করেছে, বেপর্দাকে সুকৌশলে জায়িয করে শরীয়ত পাল্টে দিয়ে নতুন শরীয়ত প্রকাশ করে নব্য কাদিয়ানী হিসেবে নিজেদেরকে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয় বিস্তারিতভাবে ও দলীলের মাধ্যমে পর্যালোচনা করলে এটাই সুস্পষ্ট প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবহিকভাবে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

(ধারাবাহিক)

৩. নামায, হজ্জ সাক্ষ্যদান ইত্যাদি সময়ে চেহারা খোলা রাখা বৈধ এটা কতটুকু সঠিক? এর কি কোন ব্যাখ্যা রয়েছে?

এর জবাবে বলতে হয় যে, পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা তাদের কথিত শীর্ষস্থানীয় মৌলবী ছাহেবদের সাবেক মহিলা ও বেপর্দা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা-সাক্ষাত কথা-বার্তা, মিটিং ইত্যাদি প্রকাশ্য হারাম কাজগুলোকে জায়িয করার উদ্দেশ্যে নামায, হজ্জ, সাক্ষ্যদান ইত্যাদি বিষয়গুলোকে টেনে এনে বা উল্লেখ করে এক দিক থেকে চরম জালিয়াতী বা প্রতারণার পরিচয় দিয়েছে। অপর দিক থেকে কুরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করে কাট্টা কুফরী করেছে।

উল্লেখিত বিষয়গুলোর ব্যাখ্যামূলক  আলোচনা করলে এটাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে। যেমন প্রথমে নামায সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, “নামাযের সময় মহিলাদের চেহারা খোলা রাখা বৈধ, মূলত নামাযের সময় মহিলাদের চেহারা খোলা রাখা শুধু বৈধ নয় বরং ফরজেরও অন্তর্ভূক্ত। কেননা নামাযের সময় যদি মহিলারা চেহারা ঢেকে রাখে তবে তার নামাযই হবে না। তাই বলে শরীয়তের কোথাও একথা বলা হয় নাই যে, নামাযের সময় গায়রে মাহরাম বা বেগানা পুরুষকে মহিলাদের চেহারা দেখানো বৈধ। বরং শরীয়তের ফতওয়া হলো নামাযের মধ্যে যদি কোন বেগানা পূরুষ মহিলার চেহারা দেখে তবে তার নামায ফাসেদ বা বাতিল হয়ে যাবে। অর্থাৎ নামাযের মধ্যে হোক আর নামাযের বাইরে হোক প্রত্যেক অবস্থাতেই গায়রে মাহরামদের সামনে মহিলাদের চেহারাসহ সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ফরজ। চেহারা খোলা রাখা তো দূরের কথাই একটি চুলও যদি বেগানা পুরুষ দেখে তবে কবীরা গুনাহ হবে।

মূলত: তারা সতর আর পর্দাকে এক করে দিয়েছে। অথচ সতর আর পর্দা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় যেমন পুরুষদের নামাযের ছতর হলো নাভির নিচ থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গ। অর্থাৎ এ পরিমাণ অঙ্গ নামাযের সময় ঢাকা ফরয।

আর মহিলাদের নামাযের সতর হলো মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জির উপর অর্থাৎ হাতের পাতা এবং দু’পায়ের গিড়া থেকে নিচ পর্যন্ত ব্যতীত সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ। অর্থাৎ নামাযের সময় মুখমণ্ডল ও হাতের পাতা দু’পায়ের পাতা ছাড়া সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ফরয। যেমন, নামাযের সতর সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ আছে,

ويستر عورته والعورة من الرجل ما تحت السرة الى الر كبة والركبة عورة دون السرة. وبدن المرأة الحرة كله عورة الارجهها وكفيها وما كان عورة من الرجل فهو عورة من الامة وبطنها وظهرها عورة وما سوى ذلك من بدنها ليس بعورة ومن لم يجد ما يزيل به النجاسة صلى معها ولم يعد ومن لم يجد ثوبا صلى عربانا فاعدا يومى بالر كسوع واسجود. فان صلى قائما اجراة والاول افضل.

অর্থঃ- “নামাযের সময় ছতর ঢাকতে হবে। পুরুষের ছতর হলো নাভির নিচ থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গ। হাটু ছতরের অন্তর্ভুক্ত কিন্তু নাভী ছতর নয়। স্বাধীনা নারীর মুখমণ্ডল ও হাতদ্বয়ের পাতা ছাড়া সমস্ত শরীর ছতর। দাসীর ছতর পুরুষের ছতরের মতই, তবে তার পেট ও পিঠ ছতরের মধ্যে শামিল। ইহা ছাড়া দাসীর দেহের আর কোন স্থান ছতর নয়। যে ব্যক্তি নাজাসাত বা নাপাকী দূর করার জন্য কোন কিছু না পায়, সে ঐ নাপাকীসহ নামায পড়বে, এতে নামায পুনরায় দোহরাতে হবে না। যার কোন কাপড় নেই, সে বসে নামায পড়বে এবং ইশারার মাধ্যমে রুকূ’ ও সিজদা করবে। যদি দাঁড়িয়ে নামায পড়ে, তবে জায়িয হবে। কিন্তু প্রথম মতটিই উত্তম, অর্থাৎ বসে ইশারার সাথে রকূ’, সিজদা করে নামায পড়াই উত্তম বা আফযাল। (কুদূরী ২৩ পৃষ্ঠা, আত্ তানক্বীহুয্ যুরূরী ২৩ পৃষ্ঠা, হিদায়াহ্ মায়াদ দিরায়াহ ১ম জিঃ ৯২, ৯৩, ৯৪, ৯৫, ৯৬ পৃষ্ঠা, ফতহুল ক্বদীর, কিফায়াহ্, শরহুল্ ইনায়াহ, হাশিয়ায়ে চলপী ১ম জিঃ ২২৩, ২২৪ পৃষ্ঠা)

العورة للرجل من تحت السرة حتى تجاوز ركبتبه فسرته ليس بعورة عند علما ئنا الثلاثة، وركبته عورة عند علمائنا جميعا هكذا فى المحيط. بدن الحرة عورة الا وجهها وكفيها وقدميها كذا فى المتون.

অর্থঃ- “পুরুষের নামাযের ছতর হলো নাভির নিচ থেকে দু’হাটুর নিচ পর্যন্ত অঙ্গ। নাভী ছতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। ইহা আমাদের তিন ইমাম তথা হযরত ইমাম আবূ হানীফা, আবূ ইউসূফ ও মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম-এর অভিমত। আমাদের সকল ইমামগণের মতে হাটু ছতরের অন্তর্ভুক্ত। যেমনটি ‘মুহীত’ নামক কিতাবে আছে। স্বাধীনা মহিলার মুখমণ্ডল, হাতদ্বয় এবং দু’পায়ের পাতাদ্বয় ছাড়া সমস্ত শরীর ছতরের অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপ ‘মাতূন’ নামক কিতাবে আছে। (আল ফাতাওয়াল্ আলমগীরিয়া ১ম জিঃ ৫৮ পৃষ্ঠা, মুহীত, মাতূন)

এছাড়াও নিম্নবর্ণিত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে অনুরূপভাবে ছতরের বর্ণনা দেয়া হয়েছে, “তানবীরুল্ আবছার, আদ্ দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, শামী, হাশিয়াতুত্ তাহতাবী, কাযীখান, তাতারখানিয়া, বায্যাযিয়া, আইনুল হিদায়াহ, নূরুল হিদায়াহ, শরহে বিকায়া, কানযুদ্ দাকাইক, আল বাহরুর রাইক, মিনহাতুল খালিক, নূরুল ঈযাহ, মারাকিউল ফালাহ, মালাবুদ্দা মিনহু ইত্যাদি।

মূল কথা হলো, সতর আর পর্দা এক নয় বরং ‘সতর’ এবং ‘পর্দার’ মধ্যে অনক পার্থক্য বিদ্যমান। যথা-

‘সতর’ এর পরিচয়ঃ ‘সতর’ বলা হয়, যা মাহরাম পুরুষদের (যাদের সাথে দেখা করা জায়িয এবং বিবাহ হারাম) সম্মুখেও উম্মুক্ত বা খোলা জায়িয নয়।’ মহিলাদের ‘সতর’ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম। যেমন (১) মহিলাদের সামনে মহিলাদের ‘সতর’ হচ্ছে নাভির উপর থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত, (২) মাহ্রাম পুরুষদের সামনে মাথা হাত, পা, গলা ইত্যাদি খোলা রাখতে পারবে, (৩) নামাযের সময় চেহারা, হাতের কব্জি ও পায়ের গিড়া পর্যন্ত খোলা রাখতে পারবে। কারণ এগুলো সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। “হিজাব বা পর্দা” শব্দটি মাহরামদের ব্যাপারে ব্যবহৃত হবেনা। বরং গাইরে মাহরামদের ব্যাপারে ব্যবহৃত হবে।

          হিজাব বা পর্দার পরিচয়ঃ ‘নারী গাইরে মাহরাম পুরুষদের থেকে এবং গাইরে মাহ্রাম পুরুষ (যাদের সাথে বিবাহ হালাল কিন্তু দেখা করা হারাম) নারীদের থেকে সম্পূর্ণভাবে অন্তরায় থাকাকেই “হিজাব বা পর্দা” বলা হয়।’ তাই একজন মহিলার আপাদমস্তক তথা সম্পূর্ণ শরীরের সামান্য অংশও বেগানা পুরুষদের জন্য দেখা হারাম। মহিলাদের কণ্ঠস্বর অন্য পুরুষদেরকে শুনানো হারাম। একজন পুরুষেরও আপাদমস্তক তথা সম্পূর্ণ শরীরের সামান্য অংশ বেগানা মহিলার জন্য দেখা হারাম। তবে প্রয়োজনে বেগানা পুরুষদের কণ্ঠস্বর মহিলারা শুনতে পারবে। যেমন: পর্দার আড়াল থেকে ওয়াজ, নছীহত শুনা ইত্যাদি।

কাজেই পটিয়া খারেজী মাদরাসার মৌলবী ছাহেবরা আমভাবে নামাযের সময় চেহারা খোলা রাখাকে বৈধ বলে এবং সতরকে পর্দা হিসেবে উল্লেখ করে চরম জালিয়াতী ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে।  (চলবে)

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ