মুহম্মদ আমজাদ আলী, বাইতুল মোর্কারম মার্কেট
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মিরপুর, ঢাকা।
ডাঃ মুহম্মদ লুৎফর রহমান, মুন্সিগঞ্জ সদর।
সুওয়ালঃ ২০০৭ ঈসায়ী সনে দেশে আসন্ন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দিয়েছে খিলাফত মজলিস দলের একাংশের চেয়ারম্যান তথা কথিত শাইখুল হাদীছ মাওলানা আজিজুল হক ছাহেব। শর্তারোপ করেছে পাঁচ দফা দাবি পূরণের। দাবিগুলো হচ্ছে-
(১) কুরআন-সুন্নাহ ও শরীয়ত বিরোধী কোনও আইন প্রণয়ন করা হবে না।
(২) কওমী মাদ্রাসা সনদের সরকারি স্বীকৃতি যথাযথ বাস্তবায়ন করা হবে।
আইন করা হবে-
(৩) হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী।
(৪) নবী-রসূল ও ছাহাবায়ে কিরামের সমালোচনা ও কুৎসা রটনা করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
(৫) সনদপ্রাপ্ত হক্কানী আলিমরা ফতওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করেন।
সনদবিহীন কোনও ব্যক্তি ফতওয়া দিতে পারবেন না।
(সমূহ জাতীয় দৈনিক)
এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কথিত শাইখুল হাদীছ ছাহেবের উল্লিখিত পাঁচ দফা দাবি পূরনের শর্তে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়াটা কতটুকু কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়ত সম্মত হয়েছে? দয়া করে সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ ‘আবূ জাহিলকে’ চিনেনা পৃথিবীতে এরূপ মুসলমান খুজে পাওয়া দুস্কর হবে। ‘আবূ জাহিল’ তার নাম কখনোই ছিলনা, তার নাম ছিল ‘আবুল হিকাম’ অর্থাৎ জ্ঞানীর পিতা বা মহা পণ্ডিত হিসেবেই সে কাফিরদের নিকট অধিক মশহুর ছিল সে এতটাই পণ্ডিত ছিল যে আরব দেশে কোন বিচার হতো না ‘আবুল হিকাম’ কে ছাড়া।
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘দ্বীনে হক্ব’ প্রচার শুরু করলেন, ‘মহা পণ্ডিত’ নিজ স্বর্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে এবং স্বার্থ হাছিরের লক্ষ্যে ইসলামকে হক্ব বা সত্য জানা ও বুঝার পরও দ্বীনে হক্বের বিরোধিতা করলো এবং বাতিল মতবাদ বা কুফরী শিরকীর মধ্যে দৃঢ় রইল।
রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবিবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সঙ্গত কারণেই মহা পণ্ডিত ‘আবুল হিকামের’ নাম পরিবর্তন করে ‘আবূ জাহিল’ তথা মুর্খের পিতা বা ‘মহা মুর্খ’ রাখলেন। সে থেকে অদ্যবধি সাড়া বিশ্ববাসী তাকে ‘আবূ জাহিল’ বলেই সম্বোধন করে আসছে।
উপরোক্ত ঘটনা থেকে প্রমাণিত হলো, জেনে শুনে হক্বের বিরোধতিা করলে হক্বের সাথে নাহক্বকে মিশ্রিত করলে, নিজ স্বার্থ রক্ষায় নাহক্ব মত-পথ অনুসরণ করলে তার নাম পরিবর্তন করে যথপোযুক্ত নামে সম্বোধন করা খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
সাড়া বিশ্বে সুন্নত যিন্দাকারী মাসিক আল বাইয়্যিনাত আল্লাহ পাক-এর রহমতে বহু পূর্বেই অনেকের ক্ষেত্রেই এরূপ সুন্নত আদায় করেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো- সুওয়ালে উল্লেখিত তথাকথিত ‘শাইখুল হাদীছ’।
মাসিক আল বাইয়্যিনাতে তাকে সম্বোধন করা হয় ‘শাইখুল হদছ’ হিসেবে। প্রশ্ন উঠতে পারে কেন তাকে ‘শাইখুল হদছ’ হিসেবে সম্বোধন করা হলো?
অবশ্য এর জবাবও মাসিক আল বাইয়্যিনাতের মতামত বিভাগে বহুবার দেয়া হয়েছে। আমরা মূল আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে পুনরায় উক্ত বিষয় আলোচনা করবো যাতে করে সুওয়ালে উল্লেখিত বিষয়গুলো বুঝতে আমাদের সহজ হবে।
(ধারাবাহিক)
তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হককে
‘শাইখুল হদছ’ বলার কারণ-২
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে বা অনুসরন করে সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)
এ হাদীছ শরীফের আলোকে নিম্নে শাইখুল হদসের আমলের ফিরিস্তি তুলে ধরা হলো এবং কি কারণে তাকে শাইখুল হদছ বলা হয় তার বর্ণনা দেয়া হলো-
২. হরতাল
যারা ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফের অধিকারী এবং আল্লাহ্ পাককে ভয় করেন ইল্মে অনুযায়ী আমল করেন, সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ করেন তাঁরাই প্রকৃত আলিম। আর আলিমগণের মধ্যে যারা বিশেষভাবে হাদীছ শরীফে অভিজ্ঞ তাদেরকে মুহাদ্দিছ বলে। আবার মুহাদ্দিছগণের মধ্যে যারা বিশেষ শ্রেণীর মুহাদ্দিছ তাদেরকে শাইখুল হাদীছ বলে।
উল্লেখ্য যে, আলিম বা শাইখুল হাদীছ তো দূরের কথা ইসলামের নামে সাধারণ মু’মিন-মুসলমানের জন্যও হরতাল করা জায়েয নেই বরং সম্পূর্ণ হারাম এবং ক্ষেত্র বিশেষে কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কেননা হরতাল হচ্ছে বিধর্মীদের উদ্ভাবিত তর্জ-তরীক্বা।
হরতালের অর্থ ও উৎপত্তির ইতিহাস
হরতাল শব্দের অর্থ- বিশৃঙ্খলা, অত্যাচার, স্বেচ্ছাচার, অবাধ্যতা, অরাজকতা, প্রতিবন্ধকতা, প্রতিরোধ ইত্যাদি।
হরতালের ব্যাখ্যায় বলা হয়, বিক্ষোভ প্রকাশের জন্য যানবাহন, হাট-বাজার, দোকানপাট, অফিস-আদালত ইত্যাদি বন্ধ করা।
হরতাল গুজরাটি শব্দ। ‘হর’ অর্থ প্রত্যেক। ‘তাল’ অর্থ তালা। অর্থাৎ প্রতি দরজায় তালা।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রাচীনকাল হতেই দাবী আদায়ের কৌশল হিসেবে নানা প্রকার পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। যেমন, আমেরিকার ফিলাডেলফিয়াতে ১৭৮৬ সালে ছাপাখানার কর্মচারীরা, জার্মানে ১৯২০ সালে রাজনৈতিক কারণে, বৃটেনে ১৯২৬ সালে কয়লা শ্রমিকরা, এছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকার নানা স্থানে বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের দাবী আদায় করার জন্য যে কৌশল অবলম্বন করেছিল, তার নাম দেয়া হয়েছে স্ট্রাইক।
আর ভারত উপমহাদেশে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, বৃটিশদের রাউলাট আইন বাতিল করার জন্য তার প্রতিবাদে যে পদ্ধতি অবলম্বন করে, তার নাম দেয়া হয় হরতাল। এ হরতাল পালিত হওয়ার কথা ছিল ১৯১৮ সালের ৩০শে মার্চ। পরে এ তারিখ পিছিয়ে ৬ই এপ্রিল করা হয়। ফলে কোন স্থানে ৩০শে মার্চ আবার কোন স্থানে ৬ই এপ্রিল সর্ব প্রথম হরতাল পালিত হয়।
বলাবাহুল্য, হরতাল গুজরাটি শব্দ। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দু, সে দাবী আদায়ের পদ্ধতির নামকরণ করে হরতাল।
মূলতঃ স্ট্রাইক শব্দের প্রবর্তক হলো, ইহুদী-নাছারা। আর হরতাল শব্দের প্রবর্তক হলো, মুশরিক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।
হরতাল হারাম হওয়ার কারণসমূহ
(১) বিজাতীয়দের উদ্ভাবিত পন্থা- হরতাল হচ্ছে, ইসলামী রীতিনীতি বর্হিভূত গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি বিজাতীয় ধ্যান-ধারণা ও অপকৌশল। যাতে শান্তি তো না-ই বরং অশান্তির পথকে প্রশস্ত করে। তাই এটি কোন মুসলমানের জন্য অনুসরনীয় নয়। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن عمر رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে। হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মসনদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই ছাবেত হলো যে, বিজাতীয় বিধর্মীদের কোন নিয়ম-নীতি, আমল-আখলাক ও সীরত-ছূরত কোনটাই অনুসরণ-অনুকরণ করা যাবেনা। যদি কেউ করে তবে সে ইহ্কালে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং পরকালেও তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে, যাদেরকে সে অনুসরণ করবে। কাজেই হরতাল কোন মতেই জায়েয নেই।
(২) জনজীবনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি -করে হরতাল হারাম হওয়ার আর একটি কারণ হলো, এটা মানুষের স্বাভাবিক কাজ-কর্মকে ব্যহত করে, জনজীবনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। এবং তা মানুষের কষ্টের কারনও বটে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
لاتفسدوا فى الارض.
অর্থঃ- “তোমরা যমীনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করোনা।”(সূরা বাক্বারা/১১)
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ايذاء المسلم كفر.
অর্থঃ- “কোন মুসলমানকে কষ্ট দেয়া কুফরী।”
হরতাল এক ধরণের জুলুম, যা শুধু ব্যক্তি পর্যায়েই নয় বরং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও হয়।
কাজেই হরতাল করা জায়েয নেই, তা সম্পূর্ণরূপে হারাম।
(৩) জান-মালের ক্ষতি- হরতালের ফলে জান-মালের ক্ষতি হয়। মানুষের সম্পদের ক্ষতি হয়, গাড়ী ভাংচুর করা হয়, গরীব সাধারণের আয়ের সম্বল রিক্সা ভেঙ্গে দিয়ে আয়ের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। হরতালের ফলে হতাহতও সংঘটিত হয়ে থাকে। যাদের হরতাল ডাকার কারণে এ সমস্ত নিহত-আহত হবে, তারাই হত্যাকারী হিসেবে সাব্যস্ত ও দায়ী হবে।
কুরআনুল করীমে ইরশাদ হয়েছে,
ومن يقتل مؤ منا متعمدا فجزاؤه جهنم خالدا فيها.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে।” (সুরা নিসা-৯৩)
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال سباب المسلم فسوق وقتاله كفر.
অর্থঃ- “ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসিকী, আর ক্বতল করা কুফরী।” (বুখারী, মুসনদে আহমদ)
হরতালের দ্বারা ব্যক্তিগত জান-মালের ক্ষতি তো হয়ই এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও ঘটে। কাজেই হরতাল করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়েয ও হারাম।
(৪) একজনের অন্যায়ের শাস্তি অন্যকে দেয়া হয়-হরতাল যে কারণে করা হয়, অর্থাৎ অপরাধীকে শাস্তি দেয়া; তা মোটেই হয়না। বরং অপরাধী অর্থনৈতিক ও মানবিক সব দিক থেকেই বহাল তবিয়তে অবস্থান করে থাকে। কিন্তু শাস্তি ভোগ করে জনসাধারণ, যারা অপরাধী নয়। অথচ হরতালের ফলে একজনের অপরাধের শাস্তি অন্যজনকে চাপিয়ে দেয়া হয়, এটা ইসলামের বিধান নয়। বরং আল্লাহ্ পাক-এর হুকুম হলো,
ولا تزر وازرة وزر اخرى.
অর্থঃ- “একজনের গুণাহ্র বোঝা অন্যজন বহন করবে না।” (সূরা আনয়াম-১৬৪)
অর্থাৎ একজনের অপরাধের শাস্তি আরেকজনকে দেয়া যাবেনা, যা মূলতঃ নিষেধ। কাজেই শরীয়তের দৃষ্টিতে হরতাল সম্পূর্ণ হারাম।
(৫) হারাম পন্থায় ইসলাম কায়েমের চেষ্টা-হারাম উপায়ে ইসলাম প্রচারের কথা কুরআন-সুন্নাহ্র কোথাও নেই। ইসলাম প্রচার করতে হলে আল্লাহ্ পাক-এর বিধান অনুযায়ী করতে হবে। যেমন আল্লাহ্ পাক কুরআনুল করীমে ইরশাদ করেন,
وان احكم بينهم بما انزل الله ولا تتبع اهواءهم.
অর্থঃ- “তারা আপনার নিকট কোন মোকদ্দমা নিয়ে আসলে, তার ফায়সালা শরীয়ত অনুযায়ী করুন। আর তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না।” (সূরা মায়িদা-৪৯)
এ আয়াত শরীফ হতে বুঝা যায় যে, সর্ববিধ ক্ষেত্রেই আল্লাহ্ পাক-এর বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করতে হবে। আর যারা আল্লাহ্ পাক-এর বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করবেনা, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক বলেন,
ومن لم يحكم بما انزل الله فا ولئك هم الكفرون.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক যা নাযিল করেছেন, তদানুযায়ী যারা ফায়সালা করেনা, তারা কাফির।” (সূরা মায়িদা-৪৪)
অতএব, এ সমস্ত হারাম কাজকে যারা শরীয়তসম্মত মনে করে, তারা আলিম বা শাইখুল হাদীছ হওয়া তো দূরের কথা, সাধারণ মুসলমান হিসেবেও বিবেচিত নয়। বরং তারা শরীয়তের দৃষ্টিতে মুরতাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে। কারণ ইসলামী আক্বাইদ ইচ্ছে, কোন হারাম বিষয়কে হালাল বলা সম্পূর্ণ কুফরী এবং কোন অনৈসলামিক কার্যকলাপকে ইসলামিক কার্যকলাপ হিসেবে শামীল করা সেটাও কাট্টা কুফরী। শরীয়তের মাসয়ালা হচ্ছে- “যে কুফরী করে, সে মুরতাদ হয়ে যায়।
সূতরাং এ ধরনের সুস্পষ্ট হারাম নাজায়েয ও কুফরী কাজে যে সর্বদা মশগুল প্রকৃত পক্ষে সে শাইখুল হদছ নয় কি? এর পরও কি তারা বলবে যে, কেন তাকে শাইখুল হদছ বলা হয়? (চলবে)
মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন
মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।
সুওয়াল: ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খণ্ডন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো-
….. ৩. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম একটি নিম্ন শ্রেণীর কাজকেও বর্ণনা করতে সংকোচবোধ করেননি। আর মুনাজাত এমন এক কাজ যা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযান্তে প্রকাশ্যভাবে পাঁচবার যদি করতেন তবে কেন তার কোন বর্ণনা করা হয়নি। …….
এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।
(ধারাবাহিক)
জাওয়াব: “ফরয নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার স্বপক্ষে কোন বর্ণনা নেই” হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন। কারণ পূর্ববর্তী সংখ্যায় প্রদত্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমানিত হয়েছে যে, “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করার স্বপক্ষে একটি, দুটি নয় বরং অসংখ্য ফে’লী ও ক্বওলী হাদীছ শরীফ রয়েছে। যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজেও ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন। আর হাদীছ শরীফে রয়েছে বলেই অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ তথা ফক্বীহগণ নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে এমনকি হাটহাজারী মৌলভীদের মুরুব্বীরাও তাদের কিতাবে “ফরয নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব-সুন্নত বলে” ফতওয়া দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরাসহ সমস্ত দেওবন্দী মৌলভীরা যাকে হক্কানী আলিম, উস্তাজুল আসাতিযা, মুহাদ্দিছগণের মাথার তাজ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ বলে মুখে ফেনা তুলে তাদের সেই কথিত শায়খুল হাদীছ আযীযুল হক্ব তার লিখিত “মোসলেম শরীফ ও অন্যান্য হাদীছের ছয় কিতাব” নামক গ্রন্থের ২৭১-২৯০ পৃষ্ঠায় ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা যে খাছ সুন্নত ও ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত তা ছাবিত করেছেন। যার প্রমাণ আপনারা মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর গত কয়েক সংখ্যায় পেয়েছেন।
স্মর্তব্য, শুধু তাই নয়, ফরয নামাযের পর মুনাজাতের প্রমাণ সরাসরি কুরআন শরীফের অসংখ্য আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যায়ও রয়েছে।
(তৃতীয় অংশ)
তাফসীরুল্ বাইযাবী ২য় জিঃ ৬০৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(فاذا فر غت فانصب) ……. قيل …… فاذا فر غت من الصلاة فانصب بالد عاء.
অর্থঃ- “(فاذا فر غت فانصب) …….. কেউ কেউ বলেন, …….. যখন নামায থেকে অবসর হবেন তখন দোয়ার দিকে মশগুল হবেন।”
তাফসীরুন্ নীশাপূরী ৩০ জিঃ ১১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(فاذا فر غت فانصب) قال قتادة والضحاك ومقا تل اذا فر غت من الصلاة المكتوبة فا نصب اى اتعب للد عاء.
অর্থঃ- “(فاذا فر غت فانصب) হযরত ক্বতাদা, যাহ্হাক, মুকাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেন, যখন ফরয নামায পড়ে অবসর হবেন, তখন দোয়ার জন্য কোশেশ করবেন।”
তাফসীরে র্দুরে মাছূন ৬ষ্ঠ জিঃ ৫৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(فاذا فرغت فانصب) عن ابن عباس رضى الله عنه وقتادة: فاذا فرغت من صلاتك فانصب فى الدعاء.
অর্থঃ- “(فاذا فر غت فانصب) হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও ক্বতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যখন আপনার নামায থেকে ফারেগ হবেন, তখন দোয়ার মধ্যে পূর্ণভাবে আত্মনিয়োগ করুন।”
তাফসীরে তানবীরুল্ মাক্বাস ৬ষ্ঠ জিঃ ৩২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(فاذا فرغت فانصب) … ويقال اذا فرغت من الصلاة المكتو بة فانصب فى الدعاء.
অর্থঃ- “(فاذا فر غت فانصب) ……. বলা হয়, যখন ফরয নামায পড়ে অবসর হবেন তখন দোয়ার মধ্যে আত্মনিয়োগ করবেন।”
তাফসীরুল্ লুবাব ২০তম জিঃ ৪০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(فاذا قر غت فانصب) ……… عن ابن عباس رضى الله عنه: فاذا فر غت من صلاتك فانصب فى الد عاء.
অর্থঃ- “(فاذا فر غت فانصب) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিতঃ যখন আপনি আপনার নামায থেকে খালি হবেন তখন দোয়ার জন্য কোশেশ করুন।”
তাফসীরুল্ কাশ্শাফ ৪র্থ জিঃ ২২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(فاذا فرغت فانصب) وعن ابن عباس رضى الله عنه فاذا فر غت من صلاتك فاجتهد فى الد عاء.
অর্থঃ- “(فاذا فر غت فانصب) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত যে, যখন আপনি আপনার নামায থেকে ফারেগ হবেন তখন দোয়ার দিকে আত্মনিয়োগ করুন।”
আত্ তাসহীল লিউলূমীত্ তানযীল ২য় জিঃ ৫৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(فاذا فر غت فانصب) وقيل اذا فر غت من الضلاة فانصب فى الدعاء.
অর্থঃ- “(فاذا فرغت فا نصب) কেউ বলেন, যখন নামায থেকে অবসর হবেন তখন দোয়ার জন্য কোশেশ করবেন।”
তাফসীরে ফতহুল্ ক্বদীর ৫ম জিঃ ৪৬৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن ابن عباس رضى الله عنه فى قوله (فاذا فر غت فانصب) الا ية قال: اذا فر غت من الصلاة فانصب فى الدعاء واسأل الله وارغب اليه.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু فاذا فر غت فانص ب এর তাফসীরে বলেন, যখন নামায থেকে ফারেগ হবেন তখন দোয়ার জন্য কোশেশ করবেন। আর আল্লাহ্ পাক-এর কাছে চাইবেন এবং তাঁর প্রতি পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করবেন।”
যাদুল মাসীর ফী ইল্মিত্ তাফসীর ৮ম জিঃ ২৭৩ পৃষ্ঠায়
(فاذا فر غت فا نصب) …. وفى معنى الكلام ستة اقوال …. والثانى فاذا فرغت من الصلاة فانصب فى الدعاء- قاله ابن عباس والضحاك ومقاتل.
অর্থঃ- (فاذا فر غت فانصب) ……… অত্র আয়াতের ছয়টি ব্যাখ্যা রয়েছে, দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হলো, যখন নামায থেকে ফারেগ হবেন, তখন দোয়ার জন্য আত্মনিয়োগ করুন। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত যাহ্হাক ও মুক্বাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহিমা এটা বলেছেন।”
তাফসীরে ক্বাদিরী ২য় জিঃ ৬০২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(فاذا فرغت فانصب) یا جب نمازسے تو فارغ ھوتو کوشش کر دعامیں.
অর্থঃ- “(فاذا فر غت فا نصب) যখনই নামায থেকে ফারেগ হবে, তখনই দোয়ার জন্য কোশেশ করবে।”
মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব
গুলবাগ, ঢাকা।
সুওয়ালঃ “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ্ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৮০)
এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতোয়া দারুল উলুম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল, অশুদ্ধ ও গোমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গোমরাহ করার জন্য যথেষ্ট। কারণ আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা উত্তম বলা হয়েছে। অর্থাৎ আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করার জন্য التنحنح (গলা খাকড়ানো), الصلاة الصلاة (নামায! নামায!) ও قامت قامت (ক্বামাত! ক্বামাত!) ইত্যাদি শব্দ দিয়ে আহবান করা বা তাছবীব করা উত্তম। যার আরো কিছু প্রমাণ নিম্নে পেশ করা হলো-
(ধারাবাহিক)
“বাদায়েউস্ সানায়ে” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৪৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
التثويب الذى يصنعه الناس بين الأذان والاقامة فى صلاة الفجر حى على الصلاة حى على الفلاح مر تين حسن لأنهم استحسنوه وقد قال صلى الله عليه وسلم ما راه المؤمنون قبيحا فهو عند الله قبيح.
অর্থঃ- “আযান ও ইক্বামতের মাঝে মানুষ (অর্থাৎ উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ) যে তাছবীবের প্রচলন করেছেন, তাহলো ফজরে দু’বার
حى على الصلاة حى على الفلاح
(হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্) বলে তাছবীব করা উত্তম। কেননা “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ সকল নামাযেই “তাছবীব” করাকে মুস্তাহ্সান বা উত্তম বলেছেন। আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুমিনগণ যেটাকে হাসান বা উত্তম মনে করেছেন সেটা আল্লাহ পাক-এর নিকটেও হাসান বা উত্তম। আর মু’মিনগণ যেটাকে কবীহ্ বা নিন্দনীয় মনে করেছেন সেটা আল্লাহ্ পাক-এর নিকটেও কবীহ্ বা নিন্দনীয়।”
“ফতওয়ায়ে তাতারখানীয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وعن أ بى حنيفة رحمه الله أنه ينبغى للمؤ ذن أن يمكث بعد الأذان قدر ما يقرأ الإ نسان عشرين اية ثم يثوب.
অর্থঃ- “ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে, মুয়াজ্জিনের উচিত হবে আযানের পর মানুষ যেন বিশ আয়াত পরিমাণ পড়তে পারে এ পরিমাণ সময় অপেক্ষা করা অতঃপর পুনরায় নামাযের জন্য মানুষদেরকে তাছবীব করা।”
“শরহুল আইনী আ’লা কান্যিদ দাক্বায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
التثويب … بين الاذان والاقامة حى على الصلاة مر تين حى على الفلاح مر تين وتثويب كل بلد على ما تعار فوا اما بالتنحنح أو بالصلاة الصلاة أو قامت قامت وما استحسنه المتأ خرون وهو التثويب فى سائر الصلوات لزيادة غفلة الناس.
অর্থঃ- “আযান ও ইক্বামতের মাঝে দু’বার حى على الصلاة (হাইয়া আলাছ্ ছলাহ) এবং দু’বার حى على الفلاح (হাইয়া আলাল ফালাহ্) বলে তাছবীব করবে। তবে প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়ে যেমন تنحنح (তানাহ্নুহ্) করে অর্থাৎ গলা খাকড়ানোর মাধ্যমে অথবা الصلاة الصلاة (নামায! নামায!) বলার মাধ্যমে অথবা قامت قامت (ক্বামাত! ক্বামাত!) (নামায আসন্ন, নামায আসন্ন,) বলার মাধ্যমে তাছবীব করাই উত্তম। আর “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ দ্বীনী কাজে তথা নামাযে মানুষের অলসতা তথা গাফলতী বৃদ্ধির কারণেই সকল নামাযেই তাছবীব করাকে মুস্তাহ্সান বলেছেন।”
“বাদায়েউস্ সানায়ে” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৪৮-১৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ولهذا قال أبو يوسف رحمه الله لاأرى بأ سا أن يقول المؤذن السلام عليك أ يها الامير ورحمة الله وبر كاته حى على الصلاة حى على الفلاح الصلاة ير حمك الله.
অর্থঃ- “এ কারণেই অর্থাৎ তাছবীব করা নেকী ও পরহেযগারীতে সহযোগিতা করার শামিল বিধায় ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, মুয়াজ্জিন যদি আমির-উমরাদেরকে তাছবীব করার জন্য
“السلام عليك أيها الأمير ورحمة الله وبر كاته!
(আস্সালামু আলাইকা আইয়্যুহাল আমীর)
অথবা حى على الصلاة وحى على الفلاح (হাইয়া আলাছ্ ছলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্) অথবা يرحمك الله ” الصلاة (আছ্ ছলাহ- ইয়ারহামুকাল্লাহ্) বলে তাহলে এতে কোন অসুবিধা নেই। অর্থাৎ উক্ত বাক্যগুলো দিয়ে আমীর-উমরাদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা জায়িয আছে। কেননা তাছবীব করাটা
تعا و نوا على البر والتقوى এরই অন্তর্ভুক্ত।”
“মাজমাউল আনহুর ফী শরহে মুলতাকাল আবহুর” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৭৭ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
واستحسن المتأخرون التثويب هو العود الى الاعلام بين الاذان والاقامة بما تعارفوه فى كل الصلوات لظهور التوانى فى الا مور الد ينية.
অর্থঃ- “উলামায়ে মুতাআখ্খেরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ প্রত্যেক নামাযেই “তাছবীব” করাকে মুস্তাহ্সান বা উত্তম বলেছেন। আর আযান ও ইক্বামতের মাঝে প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়ে পূনরায় (মানুষকে) নামাযের কথা জানিয়ে দেয়াকেই “তাছবীব” বলা হয়। কেননা দ্বীনী কাজে মানুষের অলসতা বা গাফলতী প্রকাশের কারণেই প্রত্যেক নামাযেই “তাছবীব” করা মুস্তাহ্সান বা উত্তম।”
সুতরাং মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন যে বলেছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ্ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাছবীব বলা হয় ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” তার এ বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল ও ডাহা মিথ্যা বলেই প্রমাণিত হলো। (চলবে)
মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান
টাইগার পাস রোড, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব” …।
এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের আক্বীদা-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহনযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে।
আমরা পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডন সহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করব ইন্শাআল্লাহ্।
(ধারাবাহিক)
আযানের মৌখিক জবাব দেয়া যে ওয়াজিব এবং এটা যে প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত তার আরো প্রমাণ-
যেমন,“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
يجب على السامعين عند الاذان الادابة وهى ان يقول مثل ما قال المؤذن الا فى حى على الصلوة حى على الفلاح فانه يقول مكان حى على الصلاة لا حول ولاقوة الا بالله العلى العظيم ومكان قوله حى على الفلاح ما شاء الله كان ومالم يشاء لم يكن كذا فى محيط ا لسر خسى و هو الصحيح كذا فى فتاوى الغر ئب وكذا فى قول المؤذن الصلاة خير من النوم لايقول السامع مثله ولكن يقول صد قت وبررت …… ولاينبغى ان يتكلم السامع فى خلال الاذان والاقا مة ولا يشتغل بقر ائة القران ولا بشيئ من الاعمال سوى الاخا بة.
অর্থঃ- “আযানের সময় আযান শ্রোতাদের সকলের জন্যই মৌখিক আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। আর আযানের জাওয়াব এভাবে দিবে যে, আযানে মুয়ায্যিন যা বলে আযান শ্রোতা তাই বলবে। তবে
حى على الصلوة حى على الفلاح
এর জাওয়াবে অনুরূপ শব্দ বলবে না। বরং حى على الصلوة এর জাওয়াবে لاحول ولاقوة الا با لله العلى العظيم বলবে। এবং حى على الفلاح এর জাওয়াবে ما شاء الله كان مالم يشاء لم يكن বলবে। ইহা মুহীতে সারাখ্সীর মধ্যে উল্লেখ আছে। আর ইহাই صحيح বা বিশুদ্ধ মত। ইহা ফতওয়ায়ে গারায়িবের মধ্যে উল্লেখ আছে। অনুরূপ মুয়ায্যিন যখন الصلوة خير من النوم (আছ্ ছলাতু খইরুম মিনান নাঊম) বলবে, তখন শ্রোতা এর জবাবে অনুরূপ শব্দ বলবে না। বরং صد قت وبررت (ছদাক্বতা ও বার্রাতা বলবে।” …. আর আযান ও ইক্বামতের সময় শ্রোতাদের কথা বলা উচিত হবেনা এবং কুরআন শরীফ পাঠ করবেনা এবং আযানের জবাব দেয়া ব্যতীত কোন কাজই করা যাবেনা।”
“দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে,
واما عند نا ويجيب بلسانه مطلقا والظاهر وجوبها باللسان لظا هر الامر فى حديث اذا سمعتم المؤذن فقولوا مثل مايقول كما بسط فى البحر واقوه المصنف وقواه فى النهر ناقلا عن المحيط وغيره بانه على الاول لايرد السلام ولا يسلم ولا يقرأ بل يقطعها ويجيب ولا يشتغل بغير الاجا بة.
অর্থঃ- “আমাদের হানাফী মাযহাব মতে (مطلقا) সাধারণভাবে আযান শ্রবণকারী সকলেই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দিবে। আর জাহের রেওয়ায়েত মোতাবেক মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া আযান শ্রবণকারী সকলের জন্যই ওয়াজিব। কেননা হাদীছ শরীফে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্টভাবে আদেশ করেছেন। “যখন তোমরা মুয়াজ্জিনকে যেরূপ বলতে শুন, তখন তোমরাও তদ্রুপ বল।”
যেমন, “বাহ্রুর রায়িক” কিতাবে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং মুছান্নেফ রহমতুল্লাহি আলাইহি এটাকেই স্বীকৃতি দিয়েছেন যে, “মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া আযান শ্রবণকারী সকলের জন্যই ওয়াজিব।” আর “নাহ্রুল ফায়েক” কিতাবে “মুহীত” এবং অন্যান্য কিতাব থেকে বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে, মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া সকলের জন্যই ওয়াজিব। ইহাই শক্তিশালী মত। তবে প্রথম মতে অর্থাৎ মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া যেহেতু সকলের জন্যই ওয়াজিব, সেহেতু আযান অবস্থায় সালামের জবাব দিবেনা, অন্য কাউকে সালাম দিবেনা, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা যাবেনা। বরং কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বন্ধ করে আযানের জবাব দিবে। এক কথায় আযানের জবাব দেয়া ব্যতীত কোন কাজই করা যাবেনা।”
“তুহ্ফাতুল ফুক্বাহা” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وكذا ينبغى أن لايتكلم فى حال الإذان والإقامة ولا يقرأ القران ولا يشتغل بشىء من الأ عمال سوى الإجا بة ولو ان فى قراءة القران حين سمع الإذان ينبغى أن يقطع القراءة، ويستمع الإذان، ويجيب
অর্থঃ- “আযান শ্রবণকারী সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। সুতরাং আযান ও ইক্বামতের সময় শ্রবণকারী সকলের জন্যই কথা বলা উচিত হবেনা, কুরআন শরীফ পাঠ করবেনা। এমনকি আযান ও ইক্বামতের জবাব দেয়া ব্যতীত কোন কাজেই মশগুল হবে না। আর যদি কুরআন শরীফ পাঠ করা অবস্থায় আযান শুনতে পায়, তাহলে উচিত হবে কুরআন শরীফ পাঠ বন্ধ করে দিয়ে আযান শ্রবণ করা এবং আযানের জবাব দেয়া। ”
“বদরুল মুত্তাক্বা ফী শরহে মুলতাক্বা” কিতাবে উল্লেখ আছে,
اجابة المؤذن باللسان قيل واجبة ….. قاله المصنف لكن رجح فى البحر والنهر القول بالو جوب.
অর্থঃ- “মুখে মুয়াজ্জিনের আযানের জবাব েেদয়া ওয়াজিব বলা হয়েছে, ….. মুছান্নেফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, তবে “বাহ্রুর রায়িক” ও “নাহ্রুল ফায়িক” কিতাবের ترجيح (তারজীহ্প্রাপ্ত) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া হলো মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।”
“বিনায়া ফি হিদায়া” কিতাবের ২য় খন্ডের ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন,
انه يجب عليه الاجابة … وجه الو جوب قوله عليه الصلاة والسلام اذا سمعتم الاذان فقولوا مثل ما يقول المؤذن.
অর্থঃ- “আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই ওয়াজিব মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া …..আর আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব হওয়ার কারণ হলো এই যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে সুস্পষ্ট আদেশ করেছেন যে, যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আযান শুনবে, তখন মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে, তদ্রুপ তোমরাও বল।” (চলবে)
খন্দকার সেলিম আহমদ
পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল
সুওয়াল: হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।
তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
৬. পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয। কারণ, তারা সামনে উপস্থিত। আর মীলাদে দাঁড়ানো জায়িয নেই। কারণ, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত। (নাউযুবিল্লাহ)
এখন আমার সুওয়াল হলো, মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও স্ববিরোধী। কারণ তাদের বক্তব্যের প্রথম অংশে তারা বলেছে, “পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয।”
অর্থাৎ, হাটহাজারী মৌলভী সাহেবরা পরিশেষে উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা স্বীকার করতে বাধ্য হলো যে, তা’যীম বা সম্মানার্থে ক্বিয়াম জায়িয। অথচ এর পূর্বে তারা বরাবরই বলে বা লিখে এসেছে যে, ক্বিয়াম বলতেই বিদয়াত বা নাজায়িয।
হাটহাজারী মৌলভী সাহেবরা উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা আরো প্রমাণ করলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণের হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাদীছ শরীফগুলো সঠিকই রয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ তারা বলেছে, “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত। তাই ক্বিয়াম করা যাবে না।” তাদের এ বক্তব্যও অজ্ঞতাসূচক ও দলীলবিহীন। তারা নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব থেকে এর প্রমাণও পেশ করতে পারে নাই এবং পারবেও না ইন্শাআল্লাহ।
মুলতঃ মীলাদ শরীফের যে ক্বিয়াম তার সাথে উপস্থিত থাকা বা না থাকার কোন শর্ত নেই। মীলাদ শরীফের যে ক্বিয়াম করা হয় তা মূলত আদব, শরাফত ও মুহব্বতের কারণেই করা হয়। কেননা সালাম পেশ করার সময় দাঁড়িয়ে পেশ করাই হচ্ছে আদব, শরাফত ও মুহব্বতের আলামত। হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা ক্বিয়াম সম্পর্কে নিহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারনেই ক্বিয়াম সম্পর্কে এরূপ বক্তব্য পেশ করেছে। তাই নিম্নে ক্বিয়ামের প্রকারভেদসহ ক্বিয়াম সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো।
ক্বিয়ামের প্রকারভেদ ও আহকাম
ক্বিয়াম القيام শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- قیام کر نا – کھڑا ھونا অর্থাৎ ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো। (কামূস আল মুহীত, তাজুল উরুস, লিসানুল আরব, মিছবাহুল লুগাত, আল মুনজিদ)
আর ক্বিয়াম শব্দের ইস্তেলাহী বা পরিভাষিক অর্থ হচ্ছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি “সালাম” পাঠকালে তা’যীমার্থে বা মুহব্বতে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো। এছাড়াও মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে প্রায়ই ক্বিয়াম করতে হয়। তাই ইসলামী শরীয়ত ক্বিয়ামকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছে। যেমন (১) ফরয ক্বিয়াম (২) সুন্নত ক্বিয়াম (৩) মুস্তাহাব ক্বিয়াম (৪) হারাম ক্বিয়াম (৫) মাকরূহ ক্বিয়াম।
সুন্নত ক্বিয়াম
শরীয়তের দৃষ্টিতে কয়েকটি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ‘ক্বিয়াম করা’ বা দাঁড়ানো সুন্নত। যেমন-
(১) পবিত্র “যমযম” কুপের পানি দাঁড়িয়ে পান করা সুন্নত।
(২) অজু করার পর অজুর অবশিষ্ট পানি থেকে কিছু পানি দাঁড়িয়ে পান করা সুন্নত।
(৩) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর “রওযা মুবারক” যিয়ারত করতঃ ‘সালাম’ পেশ করার সময় ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো সুন্নত। (৪) সাধারণ মুসলমানের কবর যিয়ারতকালেও দাঁড়ানো সুন্নত। (৫) আলিম-উলামা, পীর-মাশায়িখ, উস্তাদ, পিতা-মাতা, দ্বীনি নেতৃস্থানীয় সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে ক্বিয়াম করা বা দাড়ানো সুন্নত।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى سعيد ن الخد رى رضى الله عنه ان اهل قريظة لما نزلوا على حكم سعد ار سل اليه صلى الله عليه وسلم فجاء على حمار اقمر فقال النبى صلى الله عليه وسلم قوموا الى سيد كم او الى خير كم فجاء حتى قعد الى رسول الله صلى الله عليه وسلم حد ثنا محمد بن بشار حد ثنا محمد بن جعفر عن شعبة بهذا الحد يث قال فلما كان قر يبا من المسجد قال للانصار قوموا الى سيد كم.
অর্থঃ হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। যখন কুরাইযা বাসী হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে ফায়ছালাকারী হিসেবে মেনে বেড়িয়ে আসলো। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ডেকে পাঠালেন। তিনি একটি সাদা রংয়ের গাধায় চড়ে আসলেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- তোমরা তোমাদের সরদার অথবা সম্মানিত ব্যক্তির সম্মানে দাড়িয়ে যাও। অতঃপর তিনি এসে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট বসে পড়লেন।
মুহম্মদ ইবনে বাশ্শার ও মুহম্মদ ইবনে জা’ফর রহমতুল্লাহি আলাইহিমা হযরত শুবা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, যখন হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মসজিদের নিকটবর্তী হলেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তোমরা তোমাদের সর্দারের সম্মানে ক্বিয়াম কর বা দাঁড়িয়ে যাও।” (আবূ দাঊদ শরীফ, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মুসনাদে আহমদ)
উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় তাজুল মুহাদ্দিছীন, বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাগ্রন্থ “শরহুন নববী লিল মুসলিম” কিতাবের ২য় খণ্ডের ৯৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,
قلت القيام للقادم من اهل الفضل مستحب وقد جاء فيه احاديث ولم يصح فى النهى عنه شئ صريح.
অর্থঃ- আমি বলছি যে, সম্মানিত বা মর্যাদাবান ব্যক্তির আগমনে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে যাওয়া মুস্তাহাব-সুন্নত। এ ব্যাপারে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। কিন্তু নাজায়িয হওয়ার পক্ষে স্পষ্ট কোন বর্ণনা ছহীহভাবে প্রমাণিত নেই।
পাক ভারত উপমহাদেশে হাদীছ শরীফের প্রচার-প্রসারকারী রঈসুল মুহাদ্দিছীন আল্লামা হযরত শাহ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মিশকাত শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ “আশয়াতুল লুময়াত” এ লিখেন,
اجماع کردھاند جماھیر علماء بایں حدیث بر اکرام اھل فضل از علم یا صلاح یا شرف. نووی گفتہ کہ ایں قیام مر اھل راوقت قدوم اوردن ایشاں مستحب است واحادیث دریں باب ورودیا فتہ ودر نھی ازان صر یحا چیز صحیح تہ شدہ از قنیہ ۃل کردہ کہ مکروہ نیست قیام جالس ازبر انے کسے کہ در امدہ است برونے جھت تعظیم.
অর্থঃ এ হাদীছ শরীফের ভিত্তিতে জমহুর উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেন যে, ইল্ম্, মর্যাদা ও যোগ্যতার অধিকারী হওয়ার কারণে তাঁদের সম্মানে ক্বিয়াম করা সুন্নত হওয়ার কথাই হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সম্মানিত ব্যক্তিদের আগমনে তাঁদের প্রতি তা’যীমার্থে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো মুস্তাহাব-সুন্নত। যেহেতু এর স্বপক্ষে বহু হাদীছ শরীফ রয়েছে। বিপক্ষে স্পষ্টতঃ কোন হাদীছ শরীফ বর্ণিত নেই। “কুনিয়া” গ্রন্থে বর্ণিত আছে, কোন আগুন্তুকের সম্মানে বসে থাকা ব্যক্তির ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে যাওয়া মাকরূহ নয়।”
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা এটাই ছাবিত হয় যে, কারো মুহব্বতে তা’যীম বা সম্মানার্থে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নাতে ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম।
উল্লেখ্য, মীলাদ শরীফে যে ক্বিয়াম করা হয় তা মুহব্বত ও তা’যীমার্থেই করা হয়। সুতরাং মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়ামও এ অর্থে সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। (চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার
সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত
মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-
জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।
উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-
….. “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” ….
কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
(ধারাবাহিক)
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”
আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলো উল্লেখ করার সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো।
প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ
বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ২৩
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের অনেকের আক্বীদা হলো যে, ধুমপান করা মোবাহ্। যার কারণে তাদের অনেককেই ধূমপান করতে দেখা না গেলেও তাদের মধ্যে যারা ধুমপান করে, তাদের প্রতি বিশেষ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে দেখা যায়না। তাদের সাপ্তাহিক বয়ান এবং বার্ষিক ইজ্তেমায়ও নয়। তদুপরি তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা- ইলিয়াছ সাহেবের বক্তব্যে ধুমপান দ্বারা বা হুক্কা-পানি দ্বারা যাতে দাওয়াতীদিগকে আপ্যায়ন করা হয়, সে পরামর্শ রয়েছে। যা “হজরতজী মাওঃমুহম্মদ ইলিয়াছ” নামক কিতাবের ১৪৪ পৃষ্ঠায় (মূল- সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী, সংকলক- মুহীউদ্দীন খান, সম্পাদক- মাসিক মদীনা) লিপিবদ্ধ রয়েছে।
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, হুক্কা-পানি সম্পর্কে মাওলানা ইলিয়াছ সাহেবের উপরোক্ত বক্তব্য খুবই আপত্তিকর। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে ধুমপান করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী। আর তাবলীগের স্বার্থে ধুমপান দ্বারা খাতির করার নির্দেশ দেয়ার অর্থ হচ্ছে, মাকরূহ্ তাহ্রীমীর জন্য উৎসাহিত করা এবং মাকরূহ্ তাহ্রীমী কাজকে দ্বীনের কাজে সংশ্লিষ্ট করা। অথচ শরীয়ত মাকরূহ্ তাহ্রীমীর জন্য উৎসাহিত করা তো দূরের কথা বরং তা বিশেষ গুণাহ্র কাজরূপে ঘোষণা করেছে।
মূলতঃ ধুমপানের মাসয়ালাটি ক্বিয়াসী মাসয়ালার অন্তর্ভুক্ত। যার বর্ণনা কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফে সরাসরি উল্লেখ নেই। (আর না থাকাটাই স্বাভাবিক, কেননা বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা ইত্যাদি, যা তামাক দ্বারা তৈরী হয়। তার ব্যবহার আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানার অনেক পরে শুরু হয়েছে।)
ঐতিহাসিক সূত্র মতে আমেরিকার পাশে কিউবা নামক দেশে তামাকের চাষ হতো, সেখান থেকে বাদশাহ্ জাহাঙ্গীরের শাসনামলে জনৈক রাষ্ট্রদুত ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম তামাক নিয়ে আসে। পরবর্তীতে এ উপমহাদেশে ধুমপানের ব্যবহার শুরু হয়। তামাক সম্পর্কে সর্ব প্রথম ফতওয়া প্রদান করেন হিজরী দ্বাদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হযরত শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্ মুহাদ্দিছ দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘দুররে ছামীন’ কিতাবে। তাতে তিনি ধুমপান মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলে ফতওয়া প্রদান করেন এবং তিনিই ধুমপানের সর্বপ্রথম ফতওয়া প্রদানকারী। তারপরে ফতওয়া দেন, হযরত শাহ্ আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি। যা ছহীহ্ হাদীছ শরীফ থেকে ক্বিয়াস করে প্রদান করা হয়েছে। এবং এটিই ছহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য ফতওয়া। যার উপর উলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ একমত।
হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
عن جابر رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من اكل هذه الشجرة المنتنة فلا يقربن مسجد نا فان الملائكة تتأ ذى مما يتأذى منه الانس.
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি এমন দুর্গন্ধযুক্ত বৃক্ষের (কাঁচা পিঁয়াজ বা রসূনের) কিছু খায়, সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটেও না আসে। কেননা যেসব জিনিসের দ্বারা মানুষের সেসব জিনিসের দ্বারা ফেরেশতাগণেরও কষ্ট হয়। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, ফতহুল বারী উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহে নববী, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মিরআতুল মানাজীহ্)
হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে,
عن معاوية بن قرة عن ابيه ان ا لنبى صلى الله عليه وسلم نهى عن هاتين الشجر تين يعنى البصل والثوم وقال من اكلهما فلا يقر بن مسجد نا وقال ان كنتم لا بد اكلهما فاميتوهما طبخا.
অর্থঃ- হযরত মুয়াবিয়া ইবনে র্কুরা রহমতুরৗাহি আলাইহি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দু’টি বস্তু খেতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ পিঁয়াজ ও রসূন এবং বলেছেন, “যে ব্যক্তি তা খায়, সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটেও না আসে।” তিনি আরো বলেছেন, “তোমাদের যদি খেতেই হয়, তাহলে তা রান্না করে দুর্গন্ধ বিনষ্ট করে খাবে।” (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, বযলুল মাজহুদ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্)
উল্লিখিত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত মাওলানা কুতুবুদ্দীন খান দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “যে সকল দুর্গন্ধযুক্ত বস্তুর দ্বারা মানুষের কষ্ট হয়, তার দ্বারা ফেরেশ্তাদেরও কষ্ট হয়।” (মুযাহিরে হক্ব)
সুতরাং কাঁচা পিঁয়াজ, কাঁচা রসূন এবং এ জাতীয় যে সমস্ত কাঁচা দ্রব্য খেলে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়, তা খাওয়া মাকরূহ্ তান্যীহী এবং তা খেয়ে মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।
উল্লেখ্য, এ মাসয়ালার উপর ক্বিয়াস করে ধুমপান করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী এবং ধুমপান করে মসজিদে যাওয়া হারাম ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে। কেননা কাঁচা পিঁয়াজ, কাঁচা রসুন খাওয়া অপেক্ষা ধুমপানে মুখ অনেক বেশী দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে।
এ ছাড়াও ফিক্বাহ্র কিতাবসমূহে ধুমপান মাকরূহ্ তাহ্রীমী হওয়ার ব্যাপারে নিম্নোক্ত কারণসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে। সংক্ষেপে তারমধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে ঃ
১. বিড়ি, সিগারেটে ‘নিকোটিন’ রয়েছে। যা পান করা বিষ পানের নামান্তর।
২. চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
৩. ধুমপানে আর্থিক অপচয় হয়। কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
ان المبذرين كا نوا اخوا نا الشيطين.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।” (সূরা বনী ঈসরাইল-২৭)
৪. ধুমপানে আগুনের ধোঁয়া মুখের ভিতর প্রবেশ করানো হয়, যা জাহান্নামীদের সাথে সদৃশ হয়ে যায়। হাদীছ শরীফে আছে,
كل دخان حرام.
অর্থঃ-“প্রত্যেক ধোঁয়াই (পান করা) হারাম।”
৫. ধুমপান বিধর্মীদের প্রচলিত অভ্যাস। ধুমপানে তাদের মুশাবিহাত বা সাদৃশ্য হয়। হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে বা অনুসরন করে সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)
৬. ধুমপানে মানুষ ও ফেরেশ্তাদের কষ্ট হয়। হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
ايذاء المسلم كفر.
অর্থঃ- “মুসলমানদেরকে কষ্ট দেয়া কুফরী।”
এছাড়াও আরো শত-সহস্র কারণ রয়েছে।
উল্লেখ্য, কেউ কেউ ধুমপান মুবাহ্ ফতওয়া দিয়েছে। তাদের সে ফতওয়া কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ কাঁচা পিঁয়াজ, কাঁচা রসুন বা এ জাতীয় সাধারণ গন্ধযুক্ত খাদ্য খাওয়া যেখানে মাকরূহ্ তান্যীহী, সেখানে বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা ইত্যাদি মারাত্মক দুর্গন্ধযুক্ত দ্রব্য কি করে মুবাহ্ হতে পারে?
অতএব, ধুমপান সম্পর্কে আম হিসেবে শরীয়তের ফতওয়া হচ্ছে মাকরূহ তাহরীমী। আর খাছ ফতওয়া হলো হারাম।
তাছাড়া নিন্মোক্ত কিতাবসমূহেও ধুমপান করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী লেখা হয়েছে- শরহে ওহ্বানিয়া, গায়াতুল আওতার, সুয়ালাতে আসরার, হাদিয়া, তরীকায়ে মুহাম্মদীয়া উসিলায়ে আহ্মদীয়া, নাসিহাতু ইবাদিল্লাহ্ ওয়া উম্মতে রসূলিল্লাহ্, ক্বাওলুস সাবিত, দুররে ছামীন, তারবিহুল জেনান, সুলুহুল ইখওয়ান বি ইযাতে নারিদ্দুখান, তোহ্ফাতুল ইখওয়ান ফি শরবিদ্দুখান, তোহ্ফাতুল মাকাসেদ ওয়ার রাসায়েল, ইমামুল ইখওয়ান ফি তাহ্রীমিদ্দুখান, আল বুরহান ফি তাহ্রীমুদ্দুখান, তাফসীরে রুহুল মা’য়ানী, তিবইয়ান, বোখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মেশকাত শরীফ, মুজাহেরে হক্ব, ফতওয়ায়ে আজিজীয়া, ফতওয়ায়ে আব্দুল হাই লক্ষ্মৌবী, ফতওয়ায়ে আমিনীয়া, ফতওয়ায়ে আশরাফিয়া, ইমদাদুল ফতওয়া, নেহায়া, আইনী, দায়লামী শরীফ, দুররে মোখতার, আল আশবা ওয়ান নাজায়ের, ফতওয়ায়ে আলমগিরী, ফতওয়ায়ে হাম্মাদীয়া, শরহে মাওয়াহেবুর রহ্মান, মাজালেসুল আবরার, কেফায়েতুল মুফতী, আল হালালু ওয়াল হারামু ফিল ইসলাম ইত্যাদি।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে হুক্কা-বিড়ি, সিগারেট তথা ধুমপান আম ফতওয়া মতে মাকরূহ্ তাহ্রীমী আর খাছ ফতওয়া মতে হারাম। সুতরাং ধুমপান সম্পর্কে ইলিয়াছ সাহেবের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, বিভ্রান্তিমূলক ও অত্যন্ত আপত্তিকর।
কাজেই, তাবলীগ জামায়াতের লোকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে, তারা যেন অন্যদেরকে হুক্কা-পানি, সিগারেট বা ধূমপান দ্বারা খাতির না করে এবং নিজেরাও যাতে তা পান না করে। কেননা ছহীহ্ ফতওয়া মোতাবেক ধুমপান করা গুণাহ্ ও আযাবের কারণ।
মুহম্মদ আহমাদুর রহমান,
পটিয়া, চট্টগ্রাম।
মুহম্মদ মাসউদুল হক (ফাহিম)
সোনাইমুরি, নোয়াখালী।
সুওয়াল: পটিয়া জমিরিয়া খারিজী মাদ্রাসার অখ্যাত পত্রিকা অক্টোবর+নভেম্বর/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় সমস্যা ও সমাধান বিভাগে নিন্মোক্ত সমস্যা ও তার সমাধান ছাপা হয়।
সমস্যা: (১) গেল ৩ জুলাই ২০০৫ ঈসায়ী দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম কওমী মাদ্রাসার সরকারী স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেছে, এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু বৈধ এবং কি তার হুকুম? ‘চোখ দু’টি যিনা করে’ এর অর্থ কি?
সমাধান: (১) স্মরণ রাখা উচিত যে, মহিলাদের চেহারা মূলত সতরের অন্তর্ভূক্ত নয়। যার ইঙ্গিত পবিত্র কুরআন শরীফের মধ্যে পরিস্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে। সেই জন্য নামাযের মধ্যে হজ্বের মধ্যে এবং হাকীমের সামনে সাক্ষ্য দেয়ার সময় চেহারা খোলা রাখা জায়েয ও বৈধ। কিন্তু যেহেতু মহিলাদের চেহারা ফিৎনা-ফাসাদের মূল, সেই জন্য ওলামায়ে কেরাম বিশেষ জরুরত ব্যতিত বেগানা পুরুষদের সামনে চেহারা খোলা রাখা বা তা দেখা নাজায়েয বলেছেন। সুতরাং সমস্যায় উল্লেখিত ঘটনায় যেই সমস্ত শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেছে তা যেহেতু দ্বীনি ও জাতীয় জরুরতের জন্যই করেছে এবং তার মধ্যে যেহেতু কোন ফিৎনার আশংকা ছিলনা সেহেতু ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে তাতে কোন অসুবিধা হয়নি।। আর হাদীছ শরীফের মধ্যে যে ‘চোখ দু’টি যিনা করে’ বলা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা হচ্ছে যদি কামভাবের সাথে দৃষ্টি করা হয় বা ফিৎনার আশংকা থাকে।
তাদের উল্লিখিত সমাধানের প্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো আমরা জানতে ইচ্ছুক তা হলো-
১. মহান আল্লাহ পাক কি সত্যিই বেগানা পুরুষকে বেগানা মহিলার চেহারা দেখার অনুমতি দিয়েছেন?
২. কোন সূরার কত নং আয়াত শরীফে বেগানা মহিলার চেহারা দেখা জায়িয হওয়ার অনুমতি রয়েছে?
৩. নামায, হজ্জ সাক্ষ্যদান ইত্যাদি সময়ে চেহারা খোলা রাখা বৈধ এটা কতটুকু সঠিক? এর কি কোন ব্যাখ্যা রয়েছে?
৪. “আল্লাহ পাক চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত করেননি কিন্তু উলামায়ে কিরাম চেহারা খোলা রাখাকে নাজায়িয বলেছেন” তাদের এ বক্তব্য দ্বারা কি এই প্রমাণিত হয় না যে, উলামায়ে কিরাম আল্লাহ পাক-এর বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছেন। (নাঊযুবিল্লাহ)
৫. খারেজী মাদ্রাসার সরকারী স্বীকৃতি দ্বীনি জরুরতের মধ্যে পরে কি? আর এরূপ জরুরতে বেপর্দা হওয়ার অনুমতি আছে কি?
৬. যদি ফিৎনার কোন আশংকা না থাকে তবে কি বেপর্দা হওয়া বা বেগানা মহিলার সাথে দেখা-সাক্ষাত করা জায়িয রয়েছে?
৭. “চোখের যিনা হলো বেগানা লোককে দেখা,” এ হাদীছ শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা কি? যদি খাহেশাতের সাথে দৃষ্টি না দেয় তবেও কি তা ব্যাভিচার বলে গণ্য হবে?
উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতের সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মৌলবী ছাহেবরা মুলতঃ হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জারের চেলা বা উলামায়ে ‘ছূ’এর অন্তর্ভুক্ত। তাই তারা নিজেদের কথিত শীর্ষস্থানীয় উলামাদের বাঁচাতে নির্লজ্জভাবে কুরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করেছে, আল্লাহ পাক, তাঁর রসূল ও হক্কানী উলামায়ে কিরামকে দোষারূপ করেছে, বেপর্দাকে সুকৌশলে জায়িয করে শরীয়ত পাল্টে দিয়ে নতুন শরীয়ত প্রকাশ করে নব্য কাদিয়ানী হিসেবে নিজেদেরকে সাব্যস্ত করেছে। সুওয়ালে উল্লিখিত প্রতিটি বিষয় বিস্তারিতভাবে ও দলীলের মাধ্যমে পর্যালোচনা করলে এটাই সুস্পষ্ট প্রমাণিত হবে। তাই নিম্নে সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর ধারাবহিকভাবে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
ধারাবাহিক
২. কোন সূরার কত নং আয়াত শরীফে বেগানা মহিলার চেহারা দেখা জায়িয হওয়ার অনুমতি রয়েছে?
এর জবাবে বলতে হয় যে, পটিয়া খারেজী মাদরাসার মৌলবী ছাহেবরা যে লিখেছে- “……. কুরআন শরীফে বেগানা মহিলার চেহারা দেখা জায়েজ হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে-…….” তাদের এ বক্তব্য কুরআন শরীফ সম্পর্কে ডাহা মিথ্যার শামিল। যদি কুরআন শরীফে এরূপ কোন ইঙ্গিত থাকতোই তবে তারা তা উল্লেখ করতে পারলোনা কেন?
পটিয়ার খারেজী মৌলবী ছাহেবরা যদি সত্যবাদিই হয়ে থাকে তবে পরবর্তী সংখ্যায় প্রমাণ পেশ করুক কোন্ সূরার কত নং আয়াত শরীফে “বেগানা মহিলার চেহারা দেখাকে জায়িয বলা হয়েছে।”
মূলতঃ কুরআন শরীফের কোথাও এরূপ কোন সুম্পষ্ট আয়াত শরীফ তো দূরের কথাই এরূপ কোন ইঙ্গিতও নাই যদ্দ¦ারা বেগানা-পুরুষের জন্য বেগানা-মহিলার চেহারা দেখা জায়িয প্রমাণিত হয়। পক্ষান্তরে এরূপ অসংখ্য আয়াত শরীফ উল্লেখ করা সম্ভব যদ্দ¦ারা বেগানা-মহিলার চেহারা দেখা বা দেখানো হারাম প্রমাণিত হয়। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা আযহাবের’ ৫৯নং আয়ত শরীফে ইরশাদ করেন,
يا يها النبى قل لازوا جك وبنتك ونساء المؤ منين يد نين عليهن من جلا بيبهن ذلك اد نى ان يعر فن فلا يؤذين وكان الله غفورا رحيما.
অর্থঃ- “হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীনগণকে, কন্যাগণকে এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের মুখমন্ডলের উপর ঝুলিয়ে রাখে। এতে তাদেরকে চিনা সহজ হবে। ফলে তাঁদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” (সূরা আহযাব/৫৯)
মহিলাদের জন্য গায়রে মাহরামদের সম্মুখে মুখমন্ডল বা চেহারাসহ সমস্ত শরীরই ঢেকে রাখা ফরয
উল্লিখিত আয়াত শরীফের মূল বিষয় হলো –
يد نين عليهن من جلا يبهن
“তারা যেন তাদের মুখমন্ডলের উপর ‘জিলবার’ جلباب চাদর বা পর্দা ঝুলিয়ে রাখে। جلباب ‘জিলবাব’ আরবী শব্দ, যা বড় চাদরকে বলা হয়। আর اد ناء ‘ইদনা’ অর্থ নিকটবর্তী ও পেঁচিয়ে রাখা। কিন্তু এরপর على ‘আলা’ শব্দ আসলে এর অর্থ হবে ارخاء ‘ইরখা’ অর্থাৎ উপর দিক হতে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দেয়া। তাই আয়াত শরীফের স্পষ্ট অর্থ হবে, ‘মহিলাগণ যেন তাদের শরীরে পরিহিত চাদরটিকে ভালভাবে পরিধান করে এর একটি অংশ নিজের মুখমন্ডলের উপর ঝুলিয়ে দেয়।’ যাতে চেহারা বা মুখমন্ডল অন্য পুরুষের দৃষ্টি গোচর না হয়। কারণ বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হলে, সমস্ত শরীর ঢেকে রাখার সাথে সাথে চেহারা বা মুখমন্ডলও ঢেকে রাখা প্রত্যেক মু’মিনা ও মুসলিমা মহিলার জন্য ফরযে আইন।
নিম্নে এ আয়াত শরীফের হুকুম সম্পর্কিত আলোচনা বিশ্ববিখ্যাত নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ সমূহ থেকে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলো।
এ প্রসঙ্গে আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৭ম জিঃ ৩৮৩, ৩৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
…… (يا يها النبى قل لازوا جك وبنتك ونساء المؤ منين يد نين) امر بتقد ير اللام اى ليد نين (عليهن من جلابيبهن) جمع جلباب وهى الملحفة التى تشتمل بها المر ءة فوق الدرع والخمار …. قلت يعنى اذن لكن ان تخرجن متجلببا ت قال ابن عباس وابو عبيدة امر نساء المؤ منين ان يغطين رؤسهن ووجوههن بالجلا بيب الا عينا واحدا ليعلم انهن الحرائر.
অর্থঃ- “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণকে, কন্যাগণকে এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন ঝুলিয়ে রাখে) এখানে يد نين শব্দটি উহ্য لام এর সাথে امر ‘আমর’ এর শব্দ। অর্থাৎ ليد نين ‘তারা যেন ঝুলিয়ে রাখে’। (তাদের মুখমন্ডলের উপর নিজেদের চাদরের কিয়দাংশ) جلابيب ‘জালাবীব’ শব্দটি جلباب ‘জিলবাব’ শব্দের جمع বা বহুবচন। ‘জিলবাব’ এমন চাদরকে বলে, যা মহিলারা কামিছ ও ওড়নার উপর সংযুক্ত করে পরিধান করে।
.. আমি বলি- বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার অর্থ হচ্ছে; তোমাদেরকে বড় চাদরে আবৃত হয়ে সমস্ত শরীর ঢেকে বের হতে অনুমতি দেয়া হয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবূ উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তাঁরা যেন তাদের মাথা, মুখমন্ডল, সম্পূর্ণ শরীর চাদর দিয়ে ঢেকে বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে যায়। তবে শুধু চোখ খোলা রাখা যাবে। যাতে পরিচয় করা যায় যে, তারা স্বাধীনা। অনুরূপ তাফসীরুল্ খাযিন, তাফসীরুল্ বাগবী ৫ম জিঃ ২৭৬, ২৭৭ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল্ ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল্ বারীতে উল্লেখ আছে।
তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল ৩য় জিঃ ৪৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(يا يها النبى قل لازواجك وبنا تك ونساء المؤ منين يد نين عليهن من جلا بيبهن الحلباب ما يستر الكل مثل الملحفة عن المبر د ومعنى يد نين عليهن من جلا بيبهن ير خينهم عليهن ويغطين بها وجو ههن واعطافهن. يقال اذا زال الثوب عن وجه المرأة ادن ثوبك على وجهك.
অর্থঃ- “(হে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার আহলিয়া অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীনগণকে, কন্যাগণকে এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের মুখমন্ডলের উপর ঝুলিয়ে রাখে।) ‘জিলবাব’ হচ্ছে, যা সমস্ত শরীর ঢেকে নেয়। যা বড় ধরণের চাদরের অনুরূপ।
يد نين عليهن من جلا بيبهن.
এর অর্থ হলো- তারা যেন তাদের উপর থেকে চাদর ঝুলিয়ে রাখে, তাদের চেহারা সমূহকে চাদর দ্বারা আবৃত করে রাখে। বলা হয়, যখন মহিলাদের চেহারা থেকে কাপড় সরে যাবে, তখন তোমরা কাপড় দ্বারা তার চেহারা ঢেকে দিবে।”
এ প্রসঙ্গে তাফসীরুত্ ত্ববারী ১০ জিঃ ৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।
عن ابن عباس قول يا يها النبى قل لازواجك وبنا تك ونساء المؤ منين يد نين عليهن من جلا ببن امر الله نساء امؤ منين اذا خر جن من بيو تهن فى حاجة ان يغطين وجو ههن من فوق رؤسهن بالجلا بيب ويبد ين عينا واحدة …. سأ لت عبيدة عن قوله قل لازواجك وبنا تك ونساء المؤ منين يد نين عليهن من جلا بيبهن قال فقال بثو به فغطى رأسه ووجهه وابرز ثوبه عن واحدى عينيه.
অর্থঃ- “….হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
يايها النبى قل لازوا جك وبنا تك ونساء المؤمنين يد نين عليهن من جلا بيبهن.
এর তাফসীরে বলেন; এখানে আল্লাহ্ পাক মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যখন তারা বিশেষ কোন প্রয়োজনে তাদের ঘর থেকে বাইরে যাবে, তখন তারা যেন বড় ধরণের চাদর দিয়ে তাদের মাথার উপর দিক থেকে তাদের চেহারা ঢেকে রাখে। তবে একটি চোখ খোলা রাখতে পারবে। …… আমি হযরত উবাইদা রহমতুল্লাহি আলাইহিকে
قل لازوا جك وبنا تك ونساء المؤ منين يد نين عليهن من جلابيبهن
এ আয়াত শরীফের তাফসীর জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি জবাবে এমনভাবে কাজে পরিণত করে দেখিয়ে দিলেন যে, নিজের গায়ের চাদর এমনভাবে পরলেন যাতে সমস্ত মাথা, কপাল ও চেহারা ঢেকে গেল। শুধু একটি চোখ খোলা থেকে গেল।
তাফসীরে গারাইবুল্ কুরআন ওয়া রাগাইবুল্ ফুরক্বান লিন্ নীশাপুরী ১০ম জিঃ ৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(يد نين عليهن) ير خين عليهن يقال للمرأة اذا زل الثوب عن وجهها ادنى ثو بك على وجهك ومعنى التبعيض فى (من جلا بيبهن) ان يكون للمرأة جلابيب.
অর্থঃ- “(তারা যেন ঝুলিয়ে রাখে) মহিলারা যেন নিজের উপর দিয়ে চাদরের একটা অংশ ঝুলিয়ে রাখে। যখন তাদের মুখের উপর থেকে কাপড় সরে যাবে, তখন তোমরা তাদের কাপড় চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিবে। অর্থাৎ কাপড়ের অংশ। (চাদরের কিয়দাংশ) এভাবে মহিলাদেরকে মাথা ও চেহারা ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে।”
তাফসীরে রূহুল্ বয়ান ৭ম জিঃ ২৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(يد نين عليهن من جلابيبن) …. ومن للتبعيض لان المراة ترخى بعض جلبا بها وتتلفع ببعض (والتلفع: جامه بسر تاپاى در كر فت) والمعنى يغطين بها وجوههن وابدانهن وقت خرو جهن من بيوتهن لحا جة ولا يخر جن مكشوفات الوجوه والابدان كالا ماء حتى لا يتعرض لهن السفهاء ظنا بانهن اماء.
অর্থঃ- “(তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ চেহারার উপর ঝুলিয়ে রাখে।) من جلابيبهن এর من ‘মিন’ অব্যয়টি আংশিক অর্থজ্ঞাপক। কেননা মহিলারা প্রশস্ত ওড়নার একটা অংশ সামনে ঝুলিয়ে রাখে যার অর্থ হলো, মহিলারা বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার সময় যা দ্বারা তাদের মুখমন্ডল এবং সমস্ত শরীর ঢেকে রাখে। তারা দাসীদের মত তাদের মুখমন্ডল ও সমস্ত শরীর খোলা রাখে না। যাতে অজ্ঞ লোকেরা ধারণা করার সুযোগ না পায় যে, তারা দাসী।”
তাফসীরে রূহুল মায়ানী ১২ জিঃ ৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(قل لازواجك وبناتك ونساء المؤمنين يد نين عليهن من جلابيبهن) …… الجلا بيب جمع جلباب وهو على ماروى عن ابن عباس الذى يستر من فوق الى اسفل،
অর্থঃ- “(আপনি আপনার আহলিয়াগণকে, কন্যাগণকে এবং মু’মিনগণের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ তাদের চেহারার উপর ঝুলিয়ে রাখে) جلا بيب ‘জালাবীব’ শব্দটি جلباب ‘জিলবাব’ শব্দের বহুবচন। এর মর্ম সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন যে, ‘জিলবাব’ হচ্ছে এমন চাদর যা মাথা থেকে পাঁ পর্যন্ত আপদমস্তক ঢেকে রাখে। (চলবে)
নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক
ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।
সুওয়াল: হানাফী মাযহাবে –
(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।
(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।
(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।
(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।
(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।
(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।
(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।
(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো জোড়া জোড়া এবং আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।
(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।
(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।
(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।
(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।
কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।
অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবিহক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে।
(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।
এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইল্ম্ রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।
অতএব, হানাফী মাযহাবে ইমামের পিছনে মুক্তাদী সুরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করবে না। বরং কোন সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ না করে চুপ করে থাকবে সে বর্ণনা বা প্রমাণ কুরআন শরীফেও বর্ণিত রয়েছে। আর হাদীছ শরীফেতো বর্ণিত রয়েছেই। যেমন-
১. কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
واذا قرئ القران فاستمعوا له وانصتوا لعلكم تر حمون.
অর্থঃ “যখন কুরআন শরীফ পাঠ করা হবে তখন তোমরা চুপ থেকে তা শ্রবন কর। অবশ্যই তোমরা রহমত প্রাপ্ত হবে। (সূরা আ’রাফ- ২০৪)
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় মুজাদ্দিদে আউয়াল, ইমামে আ’যম, হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উক্ত আয়াত শরীফের হুকুম হচ্ছে ইমাম ছাহেব যখন নামাযে ক্বিরায়াত পাঠ করেন তখন মুক্তাদীর জন্য চুপ থেকে তা শ্রবন করা ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত। অনুরূপ ইমাম ছাহেব খুৎবা দানকালে মুছল্লীদের জন্য তা চুপ থেকে শ্রবন করাও ওয়াজিব।
২. আর হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم انما جعل الامام ليتم به اذا كبر الامام فكبروا واذا ركع فاركعوا واذا قرأ فانصتوا.
অর্থঃ হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ইমাম নিযুক্ত করা হয়েছে তার অনুসরণ করার জন্য। সুতরাং ইমাম যখন তাকবীর বলবে তখন তোমরাও তাকবীর বলবে, ইমাম যখন রুকু করবে, তখন তোমরাও রুকু করবে, আর ইমামঞ্জযখন ক্বিরায়াত পাঠ করবে তোমরা তখন চুপ থাকবে। (মুসলিম শরীফ)
৩. হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من كان له امام فقراءة الامام له قراءة.
অর্থঃ হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তির ইমাম থাকবে, তার সূরা ফাতিহা বা অন্য কোন সূরা পাঠ করার প্রয়োজন নেই) কারণ ইমামের ক্বিরায়াতই তার ক্বিরায়াত। (নাসায়ী শরীফ ও ইবনে মাজাহ শরীফ)
৪. হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم انصرف من صلوة جهر فيها بالقراءة فقال هل قرأ منكم معى احدا انفا فقال رجل نعم يا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم انى اقول مالى انازع القران قال فا نتهى الناس عن القراءة مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فيما جهر فيه النبى صلى الله عليه وسلم بالقراءة.
অর্থঃ হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম একবার ফজরের নামাযের সালাম ফিরিয়ে মুক্তাদিদের দিকে মুখ করে বললেন, নামাযের মধ্যে এই মাত্র আমার সাথে তোমাদের কেউ সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করেছ? একজন ছাহাবী উত্তর দিলেন, হে আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি পাঠ করেছি। আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি তোমাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলছি, আমার পিছনে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করে আমার সূরা-ক্বিরায়াত পাঠের সাথে বিবাদ সৃষ্টি করা তোমাদের মোটেই উচিত হবে না। এই হাদীছ শরীফ শোনার পর থেকে উক্ত ছাহাবীসহ অন্যান্য ছাহাবীগণের কেউ আর কখনও ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করতেন না। (আবূ দাউদ শরীফ)
৫. হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عن انس رضى الله تعالى عنه قال صلى بنا رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم اقبل بو جهه فقال اتقر بون والامام يقرأ فسكتوا فسألهم ثلاثا فقالوا انا لنفعل قال لا تفعلوا.
অর্থঃ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন নামায শেষে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, ইমামের ক্বিরায়াত পাঠ করার সময় তোমরা কি ক্বিরায়াত- সূরা ফাতিহা পাঠ কর? সকল ছাহাবী চুপ করে থাকলেন। ছাহাবীগণের উত্তর না পেয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনবার প্রশ্ন করলেন। তৃতীয়বার প্রশ্ন করার পর ছাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ, আমরা পাঠ করি। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিলেন, আর কখনও ইমামের পিছনে তোমরা সূরা ফাতিহা বা অন্য কোন সূরা পাঠ করবে না। (ত্বহাবী শরীফ)
উল্লেখ্য, এ সনদটি বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফের অর্থাৎ উক্ত সনদে বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফে হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। (চলবে)
ডাঃ মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন
৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা
এনওয়াই, ১১৪৩২, ইএসএ-২০৩৪
সুওয়ালঃ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাউযুবিল্লাহ)
এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান- আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।
জাওয়াবঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।
কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, কাদিয়ানী, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভূক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে বহু আয়াত শরীফ ইরশাদ হয়েছে। তারমধ্যে কতিপয় আয়াত শরীফ এখানে পেশ করা হলো।
(ধারাবাহিক)
১১. ইরশাদ হয়েছে,
لا اقسم بهذا البلد. وانت حل بهذا البلد.
অর্থঃ “আমি শপথ করছি এ মক্কা নগরীর এ অবস্থায় যে, হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি এতে তাশরীফ রাখবেন।” (সূরা বালাদ- ১,২)
অর্থাৎ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় মক্কা মুর্কারমার এমন শ্রেষ্ঠত্ব অর্জিত হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা এর শপথ করেছেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে,
والتين والزيتون. وطور سينين. وهذا البلد الامين.
অর্থঃ “শপথ ‘আঞ্জির’, ‘যয়তুন’ ও ‘তুর’ এর এবং ঐ নিরাপত্তাসম্পন্ন নগরীর।” (সূরা ত্বীন -১, ২, ৩)
অর্থাৎ, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম-এর ওসীলায় আঞ্জির ও তুর পর্বতের সম্মান অর্জিত হয়েছে। আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় মক্কা শরীফের এমন বরকত অর্জিত হয়েছে যে, এর শপথ মহান প্রতিপালক করেছেন। এতে আরও প্রমাণিত হলো যে, ওসীলার দ্বারা প্রাণহীন বস্তুগুলোও মর্যাদামণ্ডিত ও উপকৃত হয়।
১২. ইরশাদ হয়েছে,
وقال لهم نبيهم ان اية ملكه ان ياتيكم التا بوت فيه سكينة من ربكم وبقية مما ترك ال موسى وال هرون تحمله الملئكة.
অর্থঃ “হযরত শামবীল আলাইহিস সালাম বনী ইসরাইলকে বললেন যে, হযরত তালুত আলাইহিস সালাম-এর বাদশাহীর প্রমাণ এই যে, তাঁর নিকট “তাবুতে সাকীনা” (প্রশান্তির সিন্ধুক) আসবে যার মধ্যে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ও হযরত হারূন আলাইহিস সালাম-এর “তবারুকসমূহ’ আছে। এটাকে ফেরেশতাগণ বহন করবেন।” (সূরা বাক্বারা- ২৪৮)
অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা বনী ইসরাইলকে এ সিন্ধুক দিয়েছিলেন যার মধ্যে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম-এর সেন্ডেল মুবারক, হযরত হারূন আলাইহিস সালাম-এর দস্তার মুবারক এবং অন্যান্য তবারুকসমূহ ছিল যেটা বনী ইসরাইলীগণ যুদ্ধের অভিযানে সামনে রাখতো, যার বরকতে তারা শত্রুদের উপর বিজয় লাভ করতো।
বুঝা গেল, বুযুর্গগণের তবারুকসমূহের ওসীলায় বিপদাপদ দূরীভূত হয়, সমস্যাবলীর সমাধান হয়।
১৩. ইরশাদ হয়েছে,
انى اخلق لكم من الطين كهيئة الطير فا نفخ فيه فيكون طيرا باذن الله وابرئ الاكمه والا برص.
অর্থঃ “হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ইরশাদ করলেন যে, আমি মাটি দিয়ে পাখীর আকৃতি তৈরী করি। তারপর তারমধ্যে ফুক দেই যদ্বারা সেটা আল্লাহ তায়ালার হুকুমে পাখী হয়ে যায়। এবং অন্ধ ও কুষ্ঠরোগী আরোগ্য লাভ করে।” (সূরা আলে ইমরান- ৪৯)
অর্থাৎ, বুুযুর্গগণের ফুকের ওসীলায় মাটির মধ্যে প্রাণ এসে যায় এবং রোগাক্রান্তগণ আরোগ্য লাভ করেন।
১৪. ইরশাদ হয়েছে,
وما كان الله ليعذ بهم وانت فيهم.
অর্থঃ আল্লাহ পাক তাদেরকে আযাব দেবেন না এ অবস্থায় যে আপনি (হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের মধ্যে থাকছেন। অর্থাৎ মদিনাবাসী আযাব হতে এ কারণে বেঁচে আছে যে, আপনি তাদের মাঝে সসম্মানে উপস্থিত আছেন। (সূরা আনফাল- ৩৩)
অর্থাৎ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতময় সত্ত্বা হচ্ছে আল্লাহ পাক-এর শাস্তি হতে নিরাপত্তার ওসীলা।
১৫. ইরশাদ হয়েছে,
واذ قلتم يا موسى لن نصبر على طعام واحد فادع لنا ربك يخرج لنا مما تنبت الارض.
অর্থঃ আর যখন তোমরা (বনী ইসরাইল) বললে, হে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম! আমরা একই প্রকার খাবার (মান্না ও ছালওয়া) এর উপর কখনও ছবর করব না। স্বীয় রবের নিকট দুয়া করুন, তিনি যেন আমাদের জন্য ভূমির ফসল উৎপাদন করেন। (সূরা বাক্বারা-৬১)
অর্থাৎ, বণী ইসরাইল যখন পরওয়ারদিগারের নিকট কোন আরজি পেশ করতে ইচ্ছা করতো, তখন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম-এর ওসীলায় করতো। (চলবে)