মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক
গুলবাগ, ঢাকা।
সুওয়ালঃ “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর
অর্থঃ- “উলামায়ে মুতাআখিরীন হাহি আলাইহিমগণ প্রত্যেক নামাযেই “তাছবীব” করাকে মুস্তাহসান বা উত্তম বলেছেন। আর আযানের পর আযান ও ইকামতের মাঝে প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়ে পূনরায় (মানুষকে) নামাযের কথা জানিয়ে দেয়াকেই “তাছবীৰ” বলা
হয় ।
“কানযুদ দাক্কারিক ” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৬-২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ্ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাছবীর বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে his pratl was pray full এবং sell তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৮0 )
এখন আমার সুওয়ান হলো- “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীর করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উচ্চ বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিকাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত
করবেন।
জাওয়ারঃ “আবানের পর পুনরায় মুহুরীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য ঠিক হয়নি। ত তাই নয় বরং তার পেশরুক্ষ দর্শী “তোয়া দারুল উলুম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং তন ও অন্ধ হয়েছে। আর তাদের এ ফতওয়া গুমরাহীমণক হয়েছে। যা মানুষকে গোমরাহ করার জন্য যথেষ্ট। কারণ আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীর করাকে ফিকাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়নি। বরং আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফেকাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা উত্তম বলা হয়েছে।
অর্থাৎ আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করার জন্য will (গলা খাকড়ানো), hall all (নামার। নামায।) ও
(কামাত! কামাত।) ইত্যাদি শব্দ দিয়ে আহবান করা বা তাছবীব করা উত্তম।
(ধারাবাহিক)
যেমন, “মাজমাউল আনহুর কী পরহে সুলতাকাল আবহর” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৭৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
واستحسن المتأخرون التثويب في كل الصلوات هو الاعلام بعد الاعلام بحسب ما تعارفه كل بلدة بين الاذانين التشويريب وهو العود الى الاعلام بعد الاعلام وانما أطلقه تنبيها على ما استحسنه المتأخرون من التشويب فى كل الصلوات لظهور التواني في الامور الدينية
অর্থঃ- “তাছবীব” বলা হয় আযানের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার পর পুনরায় মানুষদেরকে নামাযের কথা জানিয়ে দেয়া। আর সাধারণত সতর্কতার জন্যই তাছবীর করা হয়, যা উলামায়ে মুতাআখখিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বর্তমানে দ্বীনী কাজে মানুষের অলসতা বা গাফলতা প্রকাশের কারণেই প্রত্যেক নামাযেই “ভাবীর” করা সপ্তাহসান বা উত্তম বলেছেন।”
“রমযুল হাকারি ক” কিতাবে উল্লেখ আছে,
الاذان والاقامة حي على الصلاة بین التثويب. مرتين حي على الفلاح مرتين وتثويب كل بلد على ما تعارفوا اما بالتنحنح أو بالصلاة الصلاة أو قامت قامت وما استحسنه المتأخرون وهو التثويب في سائر الصلوات لزيادة غفلة الناس.
অর্থঃ- “আযান ও ইকামতের মাঝে দু’বার (হাইয়া আলাহ্ ছলাহ) এবং দু’বার তে (হাইয়া আলাল ফালাহ) বলে তাছবীর করবে। তবে প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়ে যেমন
– (তানাহ্নুহ) করে অর্থাৎ গলা খাকড়ানোর মাধ্যমে অথবা
تنحنح
রুলার মাধ্যমে অথবা ও (কামাত! কামাত:) (নামায় আসন্ন, নামায আসন্ন, ) বলার মাধ্যমে তাছবীব
করাই উত্তম। আর “উলামায়ে মুতাআপৃখিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ দ্বীনী কাজে তথা নামাযে মানুষের অলসতা তথা গালতী বৃদ্ধির কারণেই সকল নামাযেই তাছবীর করাকে মুস্তাহসান বলেছেন।”
খন্দকার সেলিম আহমদ পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল
সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-কি সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।
তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিজে দেখ করা হলো-
৬ পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয। কারণ, তারা সামনে উপস্থিত। আর মীলাদে দাঁড়ানো জায়িয নেই। কারণ, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত।
(নাউযুবিল্লাহ)
এখন আমার সুওয়াল হলো, মীলাদ শরীফ-এর কিয়াম বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সমত? কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আকীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ মীলাদ শরীফ-এর বিয়াম বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও স্ববিরোধী ।
কারণ তাদের বক্তব্যের প্রথম অংশে তারা বলেছে, “পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয। *
তাদের উক্ত বক্তব্যের প্রথম অংশের জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারী মৌলভী সাহেবরা পরিশেষে উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা স্বীকার করতে বাধ্য হলো যে, তা’যীম বা সম্মানার্থে কিয়াম জায়িয। অথচ এর পূর্বে তারা বরাবরই বলে বা লিখে এসেছে যে, কিয়াম বলতেই বিদয়াত বা নাজায়িয।
হাটহাজারী মৌলভী সাহেবরা উপরোক্ত বক্তব্য যারা আরো প্রমাণ করলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তা’য়ালা আনহুমগণের হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে কিয়াম করা বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ গুলো সঠিকই রয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ তারা বলেছে, “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত। তাই কিয়াম করা যাবে না।” তাদের এ বক্তব্যও অজ্ঞতাসূচক ও দলীলবিহীন। তারা নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব থেকে এর প্রমাণও পেশ করতে পারে নাই এবং পারবেও না ইনশাআল্লাহ ।
মূলতঃ মীলাদ শরীফের যে কিয়াম তার সাথে উপস্থিত থাকা বা না
থাকার কোন শর্ত নেই। মীলাদ শরীফের যে ক্বিয়াম করা হয় তা মূলত আদব শরাফত ও মুহব্বতের কারণেই করা হয়। কেননা সালাম পেশ করার সময় দাঁড়িয়ে পেশ করাই হচ্ছে আদব, শরাফত ও মুহব্বতের আলামত । হাটহাজারীর মৌলভীরা কিয়াম সম্পর্কে নিহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারনেই কিয়াম সম্পর্কে এরূপ বক্তব্য পেশ করেছে। তাই নিজে কিরামের প্রকারভেদ সহ কিয়াম সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো।
কিয়ামের প্রকারভেদ ও আহকাম
قیام کرن
কিয়াম শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- অর্থাৎ কিয়াম করা বা দাঁড়ানো। (কামূস আল মুহীত, তাকুল উরুস, লিসানুল আরব, মিছবাহুল লুগাত, আল মুনজিम)
আর কিয়াম শব্দের ইন্ডেলাহী বা পরিভাষিক অর্থ হচ্ছে, আখিরী রসূল ইয়ূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি “সালাম” পাঠকালে তা’যীমার্ধে বা মুহব্বতে কিয়াম করা বা দাঁড়ানো। এছাড়াও মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে প্রায়ই বিয়াম করতে হয়। তাই ইসলামী শরীয়ত কিয়ামকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছে। যেমন (১) করব বিরাম (2) সুন্নত কিয়াম (৩) মুস্তাহাব কিয়াম (8) হারাম বিয়াম (5) কিয়া ।
সুন্নত কিয়াম
শরীয়তের দৃষ্টিতে কয়েকটি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ‘কিয়াম করা’ বা দাঁড়ানো সুন্নত। যেমন-
(১) পবিত্র “রমযম” কুপের পানি দাঁড়িয়ে পান করা সুন্নত। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُمَا قَالَ شَرِبَ النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَائِمًا مِنْ
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুমা বলেন, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমযমের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিষ শরীফী, ইবনে মাজাহ শরীফ, মসনদে আহমদ বিন হাম্বল, নাসাঈ শরীফ)
(২) অঙ্গু করার পর অন্তুর অবশিষ্ট পানি থেকে কিছু পানি দাঁড়িয়ে পান করা সুন্নত। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ أَنَّهُ صَلَّى الظهرَ ثُمَّ قَعَدَ فِي حَوَائِجِ النَّاسِ فِي رَحْبَةِ الْكُوفَةِ حَتَّى حَضَرَتْ صَلَاةَ الْعَصْرِ ثُمَّ أُتِيَ بِمَاء فَشَرِبَ وَغَسَلَ وَجْهَهُ وَذَكَرَ رَأْسَهُ ثُمَّ قامَ فَشَرِبَ فَضْلَهُ وَهُوَ قائم تم ثُمَّ قالَ إِنَّ نَاسًا يُكْرَهُونَ الشِّرْبَ قِيَامًا وَإِنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَنَعَ مِثلَ مَا وَرِجْلَيْهِ
অর্থঃ হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একবার যোহরের নামায আদায় করে কুফা নগরের প্রসস্ত এক জায়গায় জনগণের প্রয়োজনে বসলেন। ফলে আছরের নামাযের
সময় হয়ে গেল। তাই ওযু করার জন্য ওযুর পানি আনা হলো তিনি কিছু পানি পান করলেন এবং মুখ ও হাত ধৌত করলেন। মাথা ও পায়ের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন এবং অযুর অবশিষ্ট পানি থেকে কিছু পানি দাঁড়িয়ে পান করলেন। অতঃপর বললেন কেউ কেউ (ওষুর অবশিষ্ট পানি) দাঁড়িয়ে পান করাকে অপছন্দ করে থাকে। অথচ হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপভাবেই (ওযুর অবশিষ্ট পানি) দাঁড়িয়ে পান করতেন যেরূপভাবে আমি দাঁড়িয়ে পান করলাম।” (বুখারী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ, মসনদে আহমদ বিন ान) (চলবে)
মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান
টাইগার পাস রোড, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহতার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব” … ।
এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ আধানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের আকীদা-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহনযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে।
আমরা পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডন সহ সঠিক ও গ্রহনযোগ্য ফতওয়া পেশ করে যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ্।
(ধারাবাহিক)
আযানের মৌখিক জবাব দেয়া যে ওয়াজিব এবং এটা যে প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত তার আরো প্রমাণ
যেমন, “আল ফিকুল হানাফী ফী ছাওবিল জাদীদ” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
و قوله عليه الصلاة والسلام (إِذَا سَمِعْتُم الْمُؤَذِنَ فَقُولُوا مِثلُ مَا يَقُولُ ( دليل على وجوب إجابة المؤذن ، لأن ظاهر الأمر
الوجوب ولا توجد قرينة تصرفه عن
الوجوب .
অর্থঃ- “আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে গজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে সুস্পষ্টভাবে আদেশ করেছেন যে, “যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আযান শুনবে, তখন মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে, তদ্রুপ তোমরাও বল।” এই হাদীছ শরীফখানা দলীল হিসেবে ছাবিত করে যে, মুয়াজ্জিনের আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব। কেননা হাদীছ শরীফে এ শব্দটি প্রকাশ্য
ভাবে ~~~ 1 (আমর) যা (2) ওয়াজিব অর্থ প্রদান করে। আর
1 (৩) ওয়াজিব-এর মধ্যে সুস্পষ্টভাবে করীনা প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত ওয়াজিব থেকে বিরত থাকা যাবে না।
“ফিক্হুল ইসলামী ওয়া আসিয়াকুর” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
جب في الراجح عند الحنفية لمن سمع الاذان باللسان وهو الظاهر عند
অর্থঃ- “হানাফী মাযহাবের !ে, (রাজেহ্) অর্থাৎ তারজীহপ্রাপ্ত বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া হলো যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের জন্যই…. মৌখিক বা শাব্দিকভাবে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।” আর হানাফী মাযহাবের এটাই জাহের রেওয়ায়েত।”
“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৫৯ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ
وفي المحيط يجب على السامع للأذان الاجابة و يقول مكان حي على الصلاة لاحول ولاقوة الا بالله ومكان حي على الفلاح ماشاء الله كان ما لم يشاء لم
অর্থ- “মুহীত কিতাবে উল্লেখ আছে, আযান শ্রোতাদের জন্য ওয়াজিব হলো, আযানের জাওয়াব দেয়া। তবে এতে এর স্থলে সম এর স্থলে বলবে ….আছে মাম, বলবে। আর সেনা এলে
الفـ ماشاء الله كان مالم يشـ
“ফতওয়ায়ে তাতারখানীয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫২৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ
ومن سمع
الأذان فعليه أن يجيب قال عليه السلام :
من لم يجب الأذان فلا صلاة له
অর্থ:- “যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের উপর ওয়াজিব হলো মৌখিকভাবে আযানের জবাব দেয়া। কারণ সুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আযানের জবাব দিবেনা তার কোন নামায নেই।”
সুওয়ালঃ
মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, চট্টগ্রাম ।
মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন
মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।
‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খণ্ডন করতে গিয়ে যে জাওয়ার প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন ২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো-
৩. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম একটি নিম্ন শ্রেণীর কাজকেও বর্ণনা করতে সঙ্কোচবোধ করেননি। আর মুনাজাত এমন এক কাজ যা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযান্তে প্রকাশ্যভাবে পাঁচবার যদি করতেন তবে কেন তার কোন বর্ণনা করা হয়নি।
এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী ওহাবী মৌলভীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।
(ধারাবাহিক)
জাওয়াবঃ “ফরয নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার স্বপক্ষে কোন বর্ণনা নেই” হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন। কারণ পূর্ববর্তী সংখ্যায় প্রদত্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমানিত হয়েছে যে, “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করার স্বপক্ষে একটি-দুটি নয় বরং অসংখ্য ফেনী ও কুণ্ডলী হাদীছ শরীফ রয়েছে। যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজেও ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন। আর হাদীছ শরীফে রয়েছে বলেই অনুসরনীয় ইমাম, মুজতাহিদ তথ্য ফকীহগণ নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে এমনকি হাটহাজারী মৌলভীদের মুরুব্বীরা তাদের কিভাবে “ফরজ নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব সুন্নত বলে” ফতওয়া দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরাসহ সমস্ত দেওবন্দী মৌলভীৱা যাকে – হক্কানী আলিম, উস্তাজুল আসাতিয়া, ‘মুহাদ্দিছগণের মাথার তাজ’ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ বলে মুখে ফেনা তুলে তাদের সেই কথিত শায়খুল হাদীছ আযীযুল হক তার লিখিত “মোসলেম শরীফ ও অন্যান্য হাদীছের হয় কিস্তাব” নামক গ্রন্থের ২৭১-২৯০ পৃষ্ঠায় ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা যে খাছ সুন্নত ও ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত তা ছাবেত করেছেন। যার প্রমাণ আপনারা মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর গত কয়েক সংখ্যায় পেয়েছেন।
স্মর্তব্য, শুধু তাই নয়, ফরয নামাযের পর মুনাজাতের প্রমাণ সরাসরি কুরআন শরীফের অসংখ্য আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যায়ও
রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন তাঁর পবিত্র কালামে পাকে বলেন,
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّى فَإِنِّي قَرِيْبٌ أُجِيْبُ
دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ.
অর্থঃ- “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার বান্দাগণ যখন আপনার কাছে জিজ্ঞাসা করে, আমার ব্যাপারে, মূলতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যাঁরা দোয়া করে, তাঁদের দোয়া কবুল করে নেই, যখনই আমার কাছে দোয়া করে।” (সূরা বাকারা-১৮৬)
অত্র আয়াতে কারীমায় ১৬১নি) ‘যখনই দোয়া করবে’ এর দ্বারা অন্যান্য সময়ের মত জানাযা নামাযের পরের সময়টিও অন্তর্ভুক্ত। যা এই আয়াতের হুকুম থেকে খালি নয়। তাই, জানাযা নামাযের পরও দোয়া কবুল হওয়ার বিষয়টি এই আয়াতে দৃষ্টি গোচর হয়। তাই জানাযা নামাযের পর দোয়া করা জায়িয।
তাফসীরুল মাযহারী ১০ম জিঃ ২৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
( فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبٌ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ وَ قَتَادَةُ وَالضَّحَاكَ وَمُقَاتِلُ وَالْكَلْبِى إِذا فَرَغَتَ مِنَ الصَّلوة الْمَكْتُوبَةِ أَوْ
وقالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ
مُطْلَقِ الصَّلوةِ فَانْصَبْ إِلَى رَبِّكَ فِي الدُّعَاءِ
وَارْغَبْ إِلَيْهِ فِى الْمَسْئَلَةِ يَعْنِي قَبْلَ السَّلَام بَعْدَ التَّشَهدِ أَوْ بَعْدَ السَّلام.
অর্থঃ- “তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমার নিকট দোয়া কর, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো।” (সূরা মু’মিন-৬০)
অস্ত্র আয়াতে কারীমায় আল্লাহ পাক আমভাবে যে কোন সময়, যে কোন স্থানে দোয়া করতে বলেছেন এবং তা কবুল করে নেয়ারও ওয়াদা দিয়েছেন। এই আয়াতের হুকুম অন্যান্য সময়ের মত জানাযা নামাযের পরেও প্রযোজ্য। তাই প্রমাণিত হয় যে, জানাযা নামাযের পর একাকী বা সম্মিলিত দোয়া-মুনাজাত করা জায়ি ।
শুধু তাই নয়, নিম্নোক্ত আয়াত শরীফ ও তার ব্যাখ্যার প্রদত্ত বক্তব্য দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, ছলাতুল জানাযা বা জানাযা নামাযের পর দোয়া করার ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ পাক তাঁর কালামে পাকে স্পষ্টভাবেই নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ পাক নিম্নোক্ত আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
فَإِذَا فَرَغْتَ فَانصَبْ وَإِلى رَبِّكَ فَارْعَبْ.
অর্থঃ- “অতএব, যখন অবসর পান পরিশ্রম করুন। এবং আপনার রবের প্রতি মনোনিবেশ করুন।” (সূরা ইনশিরাহ্ ৭,৮)
উল্লিখিত আয়াত শরীফদ্বয়ের তাফসীরে আমভাবে সকল প্রকার ফরয নামাযের পর দোয়া করার কথা বলা হয়েছে। আর সকল মুফাসসিরীন, মুহাদ্দিসীন, ফুকাহা-ই-কিরাম, উলামা-মাশাইখ, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এ বিষয়ে একমত যে, জানাযা নামায ফরযে কিফায়াহ মূলক নামায। ফরয দু’প্রকার, যথাঃ (১) ফরযে আইন, (২) ফরয়ে কিফায়াহ। ফরযে আইন-এর মত ফরযে কিফায়াহ মূলক জানাযা নামাযের পরেও মুনাজাত করা জায়িয। নিম্নে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য “তাফসীর গ্রন্থ” সমূহ থেকে উক্ত আয়াত শরীফের ছহীহ্ ও নির্ভুল তাফসীর বা ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো-
আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী ৪র্থ জিঃ ১৯৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ
على اربعة اقوال
الثاني اذا فرغت من الصلوة فانصب للدعاء.
….. এখানে চারটি উক্তি
অর্থঃ- (a)
বা ব্যাখ্যা রয়েছে দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হলো, যখন আপনি নামায থেকে
ফারেগ হবেন, তখন দোয়ার মধ্যে মনোনিবেশ করুন।*
অর্থ:- ( ) হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা, হযরত কৃতাদা, যাহ্হাক, মুকাতিল ও কালবী রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন, খখন ফরয নামায অথবা যে কোন নামায পড়ে ফেলেন, তখন আপনার রবের কাছে দোয়ায় আত্মনিয়োগ করুন এবং তাঁর দিকে মনোনিবেশ করুন সুওয়ালের (প্রার্থনার) জন্য। তাশাহহুদের পর সালামের পূর্বে কিংবা সালামের পরে।* (চলবে)
ডাঃ মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন ৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট,
দ্বিতীয় তলা, জানাইকা এনওয়াই, ১১৪৩২, ইএসএ-২০৩৪
সুওয়ালঃ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়ি কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাউযুবিল্লাহ)
এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-কিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান- আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।
জাওয়াবঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয়। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অদ্ভুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।
কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরকার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, কাদিয়ানী, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, সালাফী, লা-মाহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয় ।
নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে বহু আয়াত শরীফ ইরশাদ হয়েছে। তারমধ্যে কতিপয় আয়াত শরীফ এখানে পেশ করা
হলো।
৬. ইরশাদ হয়েছে,
(ধারাবাহিক)
أُولئِكَ الَّذِيْنَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَى رَبِّهِم الوَسِيلَةَ أَيُّهُمُ اقَرَبُ وَيَرْجُونَ وَيَخَافُونَ عَذَابَة.
অর্থঃ ঐ মকবুল বান্দাগণ, মুর্তিপূজারীরা যাঁদের উপাসনা করছে, তাঁরা নিজে স্বীয় প্রতিপালকের নিকট ওসীলা তালাশ করছেন যে, তাঁদের মধ্যে কে অধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত। (তাঁরা) তাঁর করুনার আশা রাখেন এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করেন। (সূরা বনী ঈসরাইল – ৫৭ )
অর্থাৎ, যে কাফিররা নেক বান্দাদের পূজা করছিল, তাঁদের মধ্যে প্রত্যেকে আল্লাহ পাক-এর নিকট অধিক নৈকট্য প্রাপ্তির ওসীলা তালাশ করছেন। আল্লাহ তায়ালা এ ওসীলা তালাশের উপর আপত্তি করেননি।
৭. ইরশাদ হয়েছে,
যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি দিতাম।” (সূরা ফাতহ – ২৫)
অর্থাৎ, মক্কা শরীফের কাফিররা আযাব হতে নিরাপদে থাকার কারণ এই যে, তাদের এলাকায় কিছু সংখ্যক মুসলমান রয়ে গিয়েছিল অর্থাৎ শহরে আল্লাহ পাক-এর নেক বান্দাদের অস্তিত্ব, বেধীনের নিরাপত্তার ওসীলা হয়ে থাকে।
৮. ইরশাদ হয়েছে,
قَالَ الَّذِيْنَ غَلَبُوا عَلَى أَمْرِهِمْ لَنَتَّخِذَنَّ عَلَيْهِمْ
অর্থঃ “বিজয়ী লোকেরা বলল যে, আমরা “আছহাবে কাহাফ” এর পাশে মসজিদ নির্মাণ করবো।” (সূরা কাহফ – ২১)
অর্থাৎ, বুযুর্গদের কবরসমূহের নিকট মসজিদ নির্মাণ করা উত্তম, যাতে তাঁদের ওসীলায় নামাযের মধ্যে বরকত হয়, এবং অধিক কবুল হয়।
কুরআন শরীফ আছহাবে কাহাফের গুহার পাশে মসজিদ নির্মাণের ঘটনা বর্ণনা করেছে এবং তা খণ্ডন করেনি। যারা বুঝা যাচ্ছে যে, তাদের এ কাজ আল্লাহ তায়ালার পছন্দ হয়েছে।
৯. ইরশাদ হয়েছে,
إذهبوا بِقَمِيصِى هذا فَالقُوهُ عَلَى وَجْهِ أَبَى يأت بصيراً.
অর্থঃ “হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম আপন ভাইদের বললেন যে, আমার জামা নিয়ে যাও এবং আমার সম্মানিত পিতার চেহারার উপর রাখ, তাঁর চক্ষুদ্বয় দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন হয়ে যাবে।” (সূরা ইউসুফ-৯৩)
অর্থাৎ, বুযুর্গগণের পোষাক-এর ওসীলায় দুঃখ দূর হয়ে যায় ও আরোগ্য লাভ হয়।”
১০. ইরশাদ হয়েছে,
لم وَلَوْلاً رِجالٌ مُّؤْمِنُونَ وَنِسَاءٌ مُّؤْمِنَتٌ تعلَمُوهُمْ أنْ تَطَمُوهُمْ فَتُصِيبَكُم مِّنْهُم تَعَربي تغير علم اليُدْخِلَ اللهُ فِي رَحْمَتِهِ مَنْ يَشَاء لَو تَزَكَّلُوا لَعَذَّبْنَا الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْهُمْ عَذَابًا
قد نَرى تَقَلبَ وَجْهِكَ فِى فَلَنُوَلِينَّكَ قِبْلَةٌ تَرضها.
অর্থঃ “যদি কিছু সংখ্যক মুসলমান পুরুষ ও কিছু সংখ্যক মুসলমান স্ত্রীলোক না হতো, যাদেরকে তোমরা জাননা। (যদি এ বিষয়ের আশংকা না হতো) যে, তোমরা তাঁদেরকে নিষ্পেষণ করে ফেলতে। অতঃপর তোমাদের উপর ধ্বংস এসে পড়তো তাদের অজ্ঞাতসারে। কিন্তু, এতে বিলম্ব এ জন্য হয়েছে যাতে আল্লাহ পাক যাকে চান আপন রহমতের মধ্যে প্রবেশ করাবেন। যদি ঐ মুসলমান কাফিরদের থেকে পৃথক হয়ে যেত তবে আমি কাফিরদেরকে
মাহে যিলহজ্জ- ১৪২৭ হিজরী
অর্থ: “আমি আপনার চেহারা মুবারক আসমানের দিকে ফিরাতে বারংবার প্রত্যক্ষ করছি। তাই আমি আপনাকে ঐ কিবলার প্রতি ফিরিয়ে দিচ্ছি, যার প্রতি আপনি রাজী আছেন।” (সুরা বাকারা- ১৪৪ )
অর্থাৎ, কিবলা পরিবর্তন শুধু এজন্য হয়েছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এটা ইচ্ছা ছিল।”
কা’বা শরীফ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় কিবলা হয়েছে। যখন কা’বা শরীফ সূর পাক ছছাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুখাপেক্ষী তখন অন্যান্যদের কী প্রশ্ন থাকতে পারে?
(চলবে)
(১৬১ তম সংখ্যা)
জানুয়ারী-২০০৬১ঈসায়ী
সুওয়ালঃ
নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।
হানাফী মাযহাবে
মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৪৮
(১) নামাযের মুছলায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং
নামাযের নিয়ত করে থাকে।
(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা। (৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা
বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।
(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে ।
(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা। (৬) ফরয নামায়ের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে। (৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয়
রাকায়াতে সূরা-কিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।
(৮) ইকামত আযানের মতোই তবে ইকামতে লক্ষ্য বা শব্দগুলো জোড়া জোড়া এবং আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার কৃদামাতিছ ছলাহ বলে ।
(১) তারাবীহর নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।
(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে । (১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আধানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন । (১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদকাতুল ফিতর আদায় করে । ইত্যাদি।
কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই ।
অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে স্বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমা ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। এ সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবিহক জাওয়াব পেশ করা হলো।
(১) হানাফী মাযহাবে নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।
এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।
অতএব, নামাযের মুছাল্লায় অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে যে দু’য়া পড়তে হবে এবং নামাযের নিয়ত করতে হবে তার প্রমাণ হাদীছ শরীফেই রয়েছে। যেমন জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দু’য়া পড়া সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ عَلِي رَضِيَ الله تَعَالَى عَنْهُ اَنَّ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا قَامَ إِلَى الصلوةِ قَالَ إِنِّي وَجَهتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمواتِ وَالْاَرْضَ حَنِيفاً وَمَا اَنَا مِنَ
المشركين
অর্থ:- “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামায পড়তে দাঁড়াতেন তখন তিনি বলতেন,
إنّى وَجَهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوتِ
والأرض حنيقاً وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ.
উচ্চারণঃ “ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া নিরাবী ফাতারাস্ সামাওয়াতি ওয়াল্ আবৃদ্ধা হানীফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন।”
অর্থাৎ- “নিশ্চয়ই আমি তাঁর দিকে মুখ করলাম যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃতপক্ষে আমি মুশরিকদের দলভুক্ত নই।” (তিরমিযী শরীফ)
এ দু’য়া নামাযের বিছানায় দাঁড়িয়ে কিবলামুখী হয়ে পাঠ করতে হয়। আর নামাযের নিয়ত করা সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ الله تَعَالَى عَنْهُ قال قال رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِي
مانولى.
অর্থঃ- “হযরত উমর ফারূক রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই প্রতিটি আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ মানুষের প্রতিটি কাজ-কর্ম তার নিয়ত অনুযায়ী হয়ে থাকে। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তার আমলের প্রতিদান তাই পায় যা সে নিয়ত করে থাকে।” (বুখারী শরীফ)
এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় জমহুর উলামায়ে কিরামের অভিমত হলো, সকল প্রকার আমল বা কাজই নিয়তের উপর নির্ভরশীল। নিয়ত ব্যতীত কোন কাজই শুদ্ধ হবেনা। (চলবে)