সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন, ঢাকা
খন্দকার মুহম্মদ জাকির হুসাইন, চাঁদপুর
মুনযির মুহম্মদ গিয়াসুদ্দীন, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম
সুওয়ালঃ সম্প্রতি ১৪২৭ হিজরী মাহে রমযান শরীফের
রোযা ও ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা নিয়ে মুফতে আমিনী ওরফে কমিনী ও তার সমজাতীয় গং মিথ্যা তথ্য প্রচার করে। এতে দেশের ধর্মপ্রাণ অনেক মুসলমান নামায-রোযা পালনের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির শিকার হয়েছেন।
এখন আমাদের সুওয়াল হলো, যারা এ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে শরীয়তের বিধানে তাদের কি শাস্তি হওয়া উচিত? দয়া করে জানাবেন।
জাওয়াবঃ রমযান ও ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে মুফতে আমিনী ওরফে কমিনী ও তার সমজাতীয় উলামায়ে ‘ছু’ গং মিথ্যা তথ্য প্রচার করে মানুষের নামায-রোযা নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে সেটা প্রকাশ্য কুফরী হয়েছে।
চাঁদ দেখার ব্যাপারে শরীয়তের বিধানঃ রমযান মাসের চাঁদ তালাশ করতে হবে ২৯শে শা’বান। সেদিন যদি চাঁদ দেখা যায় তাহলে রমযান মাস শুরু হলো। রাতে সুন্নতে মুয়াক্কাদা তারাবীহ নামায পড়তে হবে এবং দিনের বেলা ফরয রোযা রাখতে হবে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে অথবা অন্য কারণে যদি ২৯ তারিখ চাঁদ দেখা না যায় তাহলে শা’বান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করতে হবে। সেদিন আর রমযান মাস গণ্য করে রাতে তারাবীহ নামায পড়া ও দিনে রোযা রাখা যাবে না।
যদি ৩০শে শা’বানকে কেউ রমযান মাস গণ্য করে রাতে তারাবীহ নামায পড়ে ও দিনে রোযা রাখে তাহলে সেটা হবে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাফরমানী ও বিরোধিতার শামিল। যা প্রকাশ্য কুফরী। কারণ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
إِنَّمَا النَّبِيُّ زِيَادَةٌ فِي الْكُفْرِ অর্থঃ “নিশ্চয়ই নাসী তথা মাসকে আগে-পিছে করা কুফরী বৃদ্ধির কারণ।” (সূরা তওবা-৩৭)
আয়াত শরীফে সরাসরিই উল্লেখ রয়েছে যে, মাসকে আগে-পিছে করা অর্থাৎ যেটা রমযান মাস নয় সেটাকে রমযান মাস হিসেবে গণ্য করা এবং যেটা রমযান মাস সেটাকে রমযান মাস গণ্য না করে শাওয়াল মাস হিসেবে গণ্য করা কুফরী।
আর হাদীছ শরীফে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤيَتِهِ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاكْمِلُوا عِدَّةَ شَعْبَانَ تَلْثِينَ.
অর্থঃ “তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে রোযা ভঙ্গ কর অর্থাৎ ঈদ কর। কোন কারণে যদি তোমরা চাঁদ দেখতে না পাও তাহলে শা’বান মাস ৩০ দিন পূর্ণ কর।” (বুখারী ও মুসলিম)
তিনি আরো তাকিদ দিয়ে ইরশাদ করেন
, لَا تَصُومُوا حَتَّى تَرَوُا الْهِلَالَ وَلَا تُفْطِرُوا حتى تروه
অর্থঃ “তোমরা রমযানের চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রাখবেনা এবং শাওয়ালের চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা ছাড়বেনা বা ঈদ করবেনা।” (বুখারী ও মুসলিম)
অর্থাৎ, রমযান মাসের চাঁদ দেখে রোযা রাখতে হবে এবং শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখে রোযা ছাড়তে হবে তথা ঈদ করতে হবে। আর আরবী মাস যেহেতু ২৯ বা ৩০ দিনে হয়ে থাকে সেহেতু ২৯ তারিখে কোন কারণে চাঁদ দেখা না গেলে মাসকে ৩০ দিন পূর্ণ করতে হবে। এটা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সরাসরি নির্দেশ।
কাজেই, আল্লাহ পাক-এর কালামের খিলাফ বা বিরোধিতা করা যেমন কুফরী তেমনি আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফের খিলাফ বা বিরোধিতা করাও কুফরী। এ মর্মে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে ইরশাদ করেন,
لوْ تَرَكْتُمْ سُنَةٌ نَبِيِّكُمْ لَكَفَرْتُمْ অর্থঃ “যদি তোমরা তোমাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ বা হাদীছকে পরিত্যাগ বা অস্বীকার কর তাহলে অবশ্যই তোমরা কাফির হয়ে যাবে।” (আবু দাউদ)
এবারের রোযা ও ঈদের চাঁদ দেখার বিষয়ে সকলেই ওয়াকিফহাল যে, ২৯ শা’বান শনিবার দিন সারাদেশে মেঘ, বৃষ্টি, নিম্নচাপ ছিল এমনকি যে চরজব্বার বা সন্দ্বীপে চাঁদ দেখা গেছে বলে খবর ছড়ানো হয়েছিল সেখানেও দিনভর নিম্নচাপ ও অবিরাম বৃষ্টি ছিল। যার কারণে সেখানকার কোন লোক চাঁদও দেখেনি এবং কেউ রোষাও রাখেনি। শুধু তাই নয় শনিবার আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও মালদ্বীপেও চাঁদ দেখা যায়নি। এ খবর জাতীয় দৈনিকগুলোতে ছাপা হয়েছে।
কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহল, সৃষ্টির মাঝে নিকৃষ্ট জীব উলামায়ে ‘ছু’ ও তার অনুসারীরা চাঁদ দেখেছে বলে জাজ্বল্য মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছে। মূলত: এটাই স্বাভাবিক। কারণ হাদীছ শরীফে এদেরকেই মিথ্যাবাদী দাজ্জাল আখ্যা দেয়া হয়েছে। (আবু দাউদ শরীফ)
আবার ২৯শে রমযান সারাদেশে আকাশ ছিল একেবারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। লাখ লাখ মানুষ ঈদের চাঁদ তালাশ করেছে কিন্তু কেউ কোথাও চাঁদ দেখতে সক্ষম হয়নি। যার কারণে মানুষ ৩০ রোযা পূর্ণ করেছে। কিন্তু সেই মিথ্যাবাদী দাজ্জাল গোষ্ঠী চাঁদ দেখেছে বলে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে এবং ৩০শে রমযান সকালবেলা ফরয রোযা ভেঙ্গে তাদের অনুসারীদের নিয়ে ঈদের নামায আদায় করে। (নাউযুবিল্লাহ)
রোযার দিনে ফরয রোযা ভেঙ্গে ঈদের নামায পড়া এত বড় হারাম ও কুফরী গুণাহ করাটা কেবল কাফিরদের দ্বারাই সম্ভব।
উল্লেখ্য, প্রথমতঃ তাদের কুফরী হলো, তারা রমযান মাসে রোযা ভঙ্গ করে আল্লাহ পাক-এর আদেশ অমান্য করেছে। যেমন আল্লাহ পাক
আদেশ করেন,
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ.
অর্থঃ “যে ব্যক্তি রমযান মাস পাবে সে যেন তারমধ্যে রোযা রাখে।” (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)
দ্বিতীয়তঃ তাদের কুফরী হলো, তারা রমযান মাসে ঈদের নামায আদায় করেছে। অথচ ঈদের নামাযের আদেশ হলো শাওয়াল মাসে।
তৃতীয়তঃ সর্বোপরি তাদের কুফরী হলো, তারা নাসী তথা মাসকে আগে-পিছে করেছে।
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
إِنَّمَا الشَّيْءُ زِيَادَةٌ فِي الْكُفْرِ
অর্থঃ “নিশ্চয়ই নাসী তথা মাসকে আগে-পিছে করা কুফরী বৃদ্ধির
কারণ।” (সূরা তওবা-৩৭)
শরীয়তের ফায়ছালা হলো, যারা প্রকাশ্যে কুফরী করে তারা মুরতাদ হয় অর্থাৎ তাদের উপর মুরতাদের হুকুম বর্তায়। আর যাদের উপর মুরতাদের হুকুম বর্তায় তাদেরকে তওবার জন্য তিনদিন সময় দেয়ার বিধান। অর্থাৎ তাদেরকে তিনদিনের মধ্যেই কৃত কুফরী থেকে প্রকাশ্যে তওবা করতে হবে। তওবা করলে ক্ষমা পাবে। অন্যথায় কুরআন ও সুন্নাহ তথা শরীয়তের বিধানে তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। এছাড়া মুরতাদের বিগত জীবনের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। হজ্জ করে থাকলে বাতিল হয়ে যাবে। বিয়ে করে থাকলে তাও বাতিল বা বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। ওয়ারিছ সত্ত্বও বাতিল হয়ে যাবে। মুরতাদ মারা গেলে তার গোসল, কাফন, দাফন, জানাযা কোনটিই দেয়া জায়িয নেই। বরং তাকে কুকুর, শুকর ও শৃগালের মতো গর্তে পুঁতে রাখতে হবে। এ সমস্ত হচ্ছে মুরতাদের বিধান।
উল্লেখ্য, এখানে যেহেতু খিলাফত নেই, তাই তওবা না করেও তারা এখনও বহাল তবিয়তে আছে। এরপরও যদি এরা মুসলমান হিসেবে থাকতে চায় তাহলে তাদের ফয়ছালা হলো, যারা ২৯শে শা’বান শনিবার রমযানের চাঁদ না দেখা সত্ত্বেও রোযা রেখেছে তাদের সকলকে তওবা- ইস্তিগফার করতে হবে। কারণ তারা নাসী করে অর্থাৎ মাসকে আগে- পিছে করে কুফরী গুনাহ করেছে। আর যারা ৩০শে রমযান মঙ্গলবার ফরয রোষা নিয়ত করে রাখার পর তা ভেঙ্গে ঈদ করেছে তাদেরকে তওবা-ইস্তিগফার করার পাশাপাশি উক্ত দিনের রোযার পরিবর্তে একটা রোযা কাযা করতে হবে আর কাফফারা বাবদ একাধারা বা লাগাতার ৬০টি রোযা রাখতে হবে। যদিও তারা উলামায়ে ‘ছ’দের বিভ্রান্তির কারণে রোযা রেখে থাকে ও ভেঙ্গে থাকে। আরো উল্লেখ্য, মুফতে আমিনী ওরফে কমিনী এবং তাঁর সমজাতীয় উলামায়ে ছু’ যারা রয়েছে, তাদের পিছনে নামায পড়লে নামায শুদ্ধ হবে না। কারণ তারা কুফরী করেছে। যারা কুফরী করে তারা মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে যায়। আর শরীয়ত ইমামের জন্য মুসলমান হওয়ার শর্ত আরোপ করেছে।
কাজেই, এসব উলামায়ে ছু’ যে মসজিদের ইমামতীর দায়িত্বে রয়েছে, সে মসজিদের কমিটি ও মুছল্লীদের দায়িত্ব-কর্তব্য হবে অতিসত্ত্বর তাদেরকে ইমামতী থেকে অব্যাহতি দিয়ে কোন নেককার, পরহেযগার ইমাম নিয়োগ করা। অন্যথায় কমিটি ও মুছল্লী সকলেই হারাম ও কুফরী গুনাহে গুনাহগার হবে।
উক্ত উলামায়ে ছু’রা যদি তাদের কৃত সকল কুফরী ও হারাম থেকে প্রকাশ্যে খালিছ ইস্তিগফার-তওবা করে ফিরে আসে তখন কমিটি ও মুছল্লীরা তাদেরকে ইমাম হিসেবে রাখতে পারবে এবং তাদের পিছনে নামায পড়তে পারবে। অন্যথায় তাদের পিছনে নামায পড়া কখনই জায়িয হবে না। নামায পড়লে নামায আদায় হবেনা। (চলবে)
মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম। মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন
মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।
সুওয়ালঃ
‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী
সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খণ্ডন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’
বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো-
…… ৩. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম একটি নিম্ন শ্রেণীর কাজকেও বর্ণনা করতে সংকোচবোধ করেননি। আর মুনাজাত এমন এক কাজ যা
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযাস্তে প্রকাশ্যভাবে পাঁচবার যদি করতেন তবে কেন তার কোন বর্ণনা করা হয়নি।
এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।
জাওয়াবঃ ‘ফরয নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার স্বপক্ষে কোন বর্ণনা নেই” হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন। কারণ পূর্ববর্তী সংখ্যায় প্রদত্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমানিত হয়েছে যে, “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করার স্বপক্ষে একটি, দুটি নয় বরং অসংখ্য ফে’লী ও ক্বওলী হাদীছ শরীফ রয়েছে। যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজেও ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন। আর হাদীছ শরীফে রয়েছে বলেই অনুসরনীয় ইমাম, মুজতাহিদ তথা ফক্বীহগণ নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে
এমনকি হাটহাজারী মৌলভীদের মুরুব্বীরা তাদের কিভাবে “ফরজ নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব-সুন্নত বলে” ফতওয়া দিয়েছেন।
(ধারাবাহিক)
উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরাসহ সমস্ত দেওবন্দী মৌলভীরা যাকে হক্কানী আলিম, উস্তাজুল আসাতেযা, মুহাদ্দিছগণের মাথার তাজ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ বলে মুখে ফেনা তুলে তাদের সেই কথিত শায়খুল হাদীছ আযীযুল হকু তার লিখিত “মোসলেম শরীফ ও অন্যান্য হাদীছের ছয় কিতাব” নামক গ্রন্থের ২৭১-২৯০ পৃষ্ঠায় ফরজ নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা যে খাছ সুন্নত ও ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত তা ছাবেত করেছেন। নিম্নে ‘মুনাজাত’ সম্পর্কিত তার সম্পূর্ণ বক্তব্যটি উল্লেখ করা হলো।
(চতুর্থ অংশ)
মুনাজাত বিরোধীদের আরও একটি আপত্তি হইলো, সকলের একত্রে মুনাজাত করা। কিন্তু এই আপত্তি মোটেই সমর্থনীয় নয়। সমবেত মুনাজাত শরীয়ত মতে অতি সুন্দরই বটেঃ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুই প্রকার হাদীছ শরীফ আছে ১. বৃওলী তথা বাচনিক হাদীছ শরীফ, অর্থাৎ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজ জবান মুবারকে যা বর্ণনা করেছেন-মৌখিকরূপে কোন কাজের আদেশ-নিষেধ করিয়াছেন বা উহার প্রতি নির্দেশ বোধক অথবা আকর্ষণ সৃষ্টির বাক্য প্রয়োগ করিয়াছেন। ২. ফে’লী বা আমলী তথা কর্ম বর্ণনার হাদীছ শরীফ। অর্থাৎ আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই আমল বা কাজ করেছেন বলে কোন ছাহাবীর উক্তি ও বর্ণনা। উভয় প্রকার হাদীছ শরীফই গ্রহণযোগ্য, অবশ্যই গ্রহণীয়। কিন্তু উম্মতের জন্য শরীয়তের মাসয়ালা নির্ধারণে প্রথম প্রকার হাদীছ অগ্রগণ্য ও অধিক গুরুত্বের অধিকারী। এমনকি কোন বিষয়ে যদি এরূপ দুই প্রকার দু’টি হাদীছ শরীফের বিরোধ দেখা যায় সেই ক্ষেত্রে হাদীছ ও ফিক্বাহ শাস্ত্রের বিধান মতে প্রথম প্রকার হাদীছ শরীফটি অগ্রগণ্য হবে এবং উম্মতের জন্য শরীয়তের মাসয়ালা এর ভিত্তিতেই সাব্যস্ত হবে। এই বিধানটির যৌক্তিকতাও গভীর দৃষ্টিতে অনেকেই উপলব্ধি করতে পারবেন।
উল্লিখিত দুই প্রকার দু’টি হাদীছ শরীফের একটি বিষয়ে বিরোধ লক্ষন করুন এবং আলোচ্য বিধানের দ্বারা মাসয়ালা সাব্যস্ত করার নজির দেখুন-
তৈরী পায়খানার ভিতরে বা আড়ালের স্থানে কিবলার দিকে মুখ করে বা পিঠ দিয়ে মল ত্যাগ করার বিষয়ে দুই প্রকার দু’টি বিরোধমান হাদীছ শরীফ বুখারী শরীফসহ সব কিতাবেই বিদ্যমান রয়েছে। একটি হাদীছ শরীফ কুণ্ডলী বাচনিক যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন, মল ত্যাগের সময় কিবলার দিকে মুখ করা বা পিছ দেয়া। অত্র হাদীছ শরীফে তৈরী পায়খানার ভিতর বা খোলা জায়গা কোনটিরই উল্লেখ না থাকায় হাদীছটি উভয় ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য সাব্যস্ত করা হয়েছে। সে মতে তৈরী পায়খানার ভিতরও মল ত্যাগকালে ক্বিবলার দিকে পিঠ দেয়া নিষিদ্ধ হয়। এর বিপরীত দ্বিতীয় প্রকারের একটি হাদীছ শরীফ বুখারী শরীফসহ সব কিতাবেই আছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আমি একদিন ঘরের ছাদে উঠলাম। সেখান থেকে দেখতে পেলাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ছাদবিহীন) তৈরী পায়খানার ভিতরে মল ত্যাগে বসে আছেন। তাঁর পিঠ মুবারক ক্বিবলার দিকে
ছিলো।’
প্রথম হাদীছ শরীফটি বাচনিক হওয়ায় শাস্ত্রীয় বিধান মতে দ্বিতীয় হাদীছ শরীফটির উপর অগ্রগণ্য করা পূর্বক আমাদের সমস্ত ফেড়ার কিতাবে লেখা আছে এবং সকলেই জানেন যে, তৈরী পায়খানার ভিতরেও মল ত্যাগকালে কিবলার দিকে পিঠ দেয়া নিষিদ্ধ।
দ্বিতীয় হাদীছ শরীফটি আমলী তথা কর্ম বর্ণনা শ্রেণীর হওয়ায় উন্মতের জন্য মাসয়ালা সাব্যন্তের ক্ষেত্রে বাচনিক হাদীছ শরীফের বিরুদ্ধে গৃহিত হয়নি।
প্রকাশ থাকে যে, প্রথম হাদীছ শরীফটিতে একটি বিষয় বিশেষ লক্ষ্যণীয়, প্রথম হাদীছ শরীফটির মর্ম খোলা জায়গা সম্পর্কে সীমাবদ্ধ বলে হাদীছ শরীফে উল্লেখ না থাকায় হাদীছ শরীফটিকে তৈরী পায়খানার ভিতর সম্পর্কেও প্রয়োগ করা পূর্বক এটা দ্বারা খোলা জায়গা ও তৈরী পায়খানা উভয় ক্ষেত্রের জন্য আমাদের ফিকাহবিদগণ সর্বসম্মতরূপে নিষেধাজ্ঞার মাসয়ালা সাব্যস্ত করেছেন।
এখন আমাদের মুনাজাত পক্ষের ৯২২নং হাদীছ শরীফ এবং নম্বর বিহীন তিরমিযী শরীফের ১-৪৭ পৃষ্ঠা হইতে উদ্ধৃত দ্বিতীয় প্রমাণরূপে হাদীছ শরীফ- উভয় হাদীছ শরীফের প্রত্যেকটিই লক্ষ্য করুন, সেটা প্রথম প্রকার তথ্য ‘কুওলী’ অর্থাৎ বাচনিক হাদীছ শরীফ।
মোনাজাতের পক্ষে বাচনিক শ্রেণীর হাদীছ শরীফ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয় শ্রেণীর হাদীছ শরীফ বিদ্যমান না থাকার ছুতা ধরে প্রচলিত মোনাজাত অস্বীকার করা হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহ শাস্ত্রের সর্বসমম্মত বিধান ও নিয়মকে লঙ্ঘন করা বটে। শুধু কৃগুলী বা বাচনিক হাদীছ শরীফ মাসয়ালা প্রমাণিত ও সাবাস্ত করায় যথেষ্টই নয় অগ্রগণ্যও বটে।
আমলী হাদীছ শরীফ না থাকার ভূতায় যারা মুনাজাত বিরোধী
তাদেরকে একটি বিশেষ অনুরোধ জয়নাই। ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ দুই রাকায়াত নফল নামায যা সর্বসম্মতরূপে সমর্থনীয়। এর পক্ষে বুখারী শরীফসহ সব কিতাবেই প্রথম প্রকারের তথা ‘কুণ্ডলী’ অর্থাৎ বাচনিক হাদীছ শরীফ বিদ্যমান রয়েছে। আপনারা মেহেরবানী পূর্বক হাদীছ শরীফের ভাণ্ডারে খোঁজ করুন, তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায পড়ার পক্ষে হুদ্র পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কর্ম কি পরিমাণ দেখাতে পান? অথচ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘ দশ বৎসরে তাঁর মসজিদে কত জুমুয়ার নামায পড়েছেন? কত হাজার বার মসজিদে এসে বিভিন্ন ওয়াজ-নছিহত করেছেন? বিভিন্ন প্রয়োজন সমাধানে মসজিদে তাশরীফ এনেছেন? কারণ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সব রকম কার্যের একমাত্র কেন্দ্র তাঁর মসজিদ ছিলো। এত হাজার, বরং লক্ষ লক্ষ বার মসজিদে প্রবেশ করার সাথে হয় পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায কত বার পড়েছেন তার হিসাব করে দেখুন।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরে তাঁর খলীফা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর সাম্যক ব্রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর ও মদীনা শরীফে পেকে খেলাফত চালিয়েছেন, খেলাফতের কাজকর্ম মসজিদ হতেই চ্যালত। তাঁরা সকলেই চব্বিশ বছরের অধিককাল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মসজিদে জুমুয়ার নামায পড়ার জন্য হাজার হাজার শোকের সম্মুখে মসজিদে এসেছেন এবং আরও যে কত লক্ষ বার লোক সম্মুখে মসজিদে আসিয়াছেন তাহাদের কারো থেকে তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায পড়ার আমল বর্ণিত আছে কি? লক্ষ লক্ষবার মসজিদে প্রবেশের সাথে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়ার আমল কি পরিমাণ বর্ণিত আছে তা তলিয়ে না দেখে কৃষ্ণলী তথা বাচনিক হাদীছ বিদ্যমান থাকার ভিত্তিতে তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাযকে সর্বসম্মতরূপে মুস্তাহাব গণ্য করা হয়েছে যা মোনাজাত বিরোধীপণও স্বীকার করেন। কিন্তু তারাই আমলী হাদীছ শরীফ বর্ণিত না থাকার ছুতা ধরে প্রচলিত মোনাজাতের বিরুদ্ধে তোলপাড় করে চলেছেন- এটা আশ্চর্য্যের বিষয় নয় কি?
মোনাজাত বিরোধীদের অপর কথাটির সারমর্ম হলো তারা একটি আশ্চর্যজনক দাবী রাখিয়া থাকেন। বিতর্কিত মোনাজাত বিষয়টিতে কয়েকটি বন্ধু বয়েছে। (১) ফরজ নামাযের পর, (২) হস্তদ্বয় উত্তোলন পূর্বক, (৩) সমবেতরূপে দোয়া করা।
এই সব বিষয় এক সঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দেখিয়ে দেয়ার দাবী ও চাপ তারা প্রয়োগ করেন, ভিন্ন ভিন্ন হাদীছ শরীফে প্রত্যেকটি বিষয় দেখে নিয়েও তারা শান্ত ও ক্ষ্যান্ত হননা। তাঁদের এই কার্যক্রম দিবালোকের ন্যায় প্রমাণ করে দেয় যে, দলীল-প্রমাণের সম্মুখে নিরুত্তর হতবাক ব্যক্তির ভূমিকায় তাঁরা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও আজগৰী দাবীর আড়ালে সত্যকে এড়িয়ে যাওয়ায় সচেষ্ট।
পাঠক। লক্ষ করুন, ‘আযান’ ইসলামের একটি প্রতিক বস্তু। এতে কতিপয় বিষয় রয়েছে, (১) ওযুর সাথে আযান দিবে (২) আযান দেয়ার সময় উভয় কানের ছিদ্রে আঙ্গুল প্রবেশ করবে (৩) হাইয়্যা আলাচ্ছালাহ, হাইয়্যা আলাল ফালাহ বলার সময় মুখ ডান ও বাম দিকে ফিরাবে। আযানের এই আকার-আকৃতি এক সঙ্গে এক হাদীছ শরীফে কেউ দেখাতে পারবে কি?
নামাযের আকার-আকৃতি বিভিন্ন ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতের সমব্যয়। ঐসব বিষয়বস্তুর বর্ণনা একসঙ্গে এক হাদীছ শরীফে কেউ দেখাতে সক্ষম হবে কি? এধরণের শত শত শরীয়তের হুকুম রয়েছে। কোন দিন কেউ সেটা সম্পর্কে আলোচ্য দাবীর ন্যয় আজগবী অবান্তর দাবী করেনি। প্রচলিত মোনাজাত সম্পর্কে ঐরূপ দাবী উত্থাপন করা নিরুত্তর ও হতবাক হওয়ার আলামত নয় কি?
মোনাজাত বিরোধীদের আরও একটি কৌশলগত পয়েন্ট আছে। তারা বলে যে, মোনাজাতকে যদি উত্তম বা মোস্তাহাব গণ্য করাও হয়, তুবও তা প্রয়োজনভুক্ত নয়। আর ঐরূপ বস্তুকে প্রয়োজনীয় মনে করা নাজায়িষ। বিশেষতঃ যখন তা না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সৃষ্টি হয়
মোনাজাত বিরোধীরা অন্যান্য নফল, মোস্তাহাব, সুন্নতের ক্ষেত্রে এই নীতিই অনুসরণ করেন। অনেক উত্তম ও মোস্তাহাৰ কাজ আছে যা তাঁরা অনবরত করে চলেছেন, কদাচিতও তা ছাড়েননা, ছাড়িলে প্রতিবাদই নয় বিপদও নিশ্চয় আসবে। ঐসব ক্ষেত্রেও তারা মোনাজাত ত্যাগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হননা।
বস্তুত এই পরামর্শটি নিতান্তই সত্য যে, কোন উত্তম বা মোস্তাহার কাজকে যেন লোকেরা প্রয়োজনীয় মনে না করে তার জন্য মৌখিকরূপে বুঝাইতে থাকা যথেষ্ট।….” (চলবে)
খন্দকার সেলিম আহমদ পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল
সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
৬. পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয। কারণ, তারা সামনে উপস্থিত। আর মীলাদে দাঁড়ানো জায়িয নেই। কারণ, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত। (নাউযুবিল্লাহ)
এখন আমার সুওয়াল হলো, মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সঙ্গত? কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ভুল, অশুদ্ধ, দলীলবিহীন ও স্ববিরোধী। কারণ তাদের বক্তব্যের প্রথম অংশে তারা বলেছে, “পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয।”
তাদের উক্ত বক্তব্যের প্রথম অংশের জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারী মৌলভী সাহেবরা পরিশেষে উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা স্বীকার করতে বাধ্য হলো যে, তা’যীম বা সম্মানার্থে কিয়াম জায়িয। অথচ
এর পূর্বে তারা বরাবরই বলে বা লিখে এসেছে যে, কিয়াম বলতেই বিদয়াত বা নাজায়িয।
হাটহাজারী মৌলভী সাহেবরা উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা আরো প্রমাণ করলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণের হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে কিয়াম করা বা দাঁড়ানো সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ গুলো সঠিকই রয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ তারা বলেছে, “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত। তাই ক্বিয়াম করা যাবে না।” তাদের এ বক্তব্যও ডাহামিথ্যা ও দলীলবিহীন। তারা নির্ভরযোগ্য কোন কিতাব থেকে এর প্রমাণও পেশ করতে পারে নাই এবং পারবেও না। ইনশাআল্লাহ্
মুলতঃ মীলাদ শরীফের যে কিয়াম তার সাথে উপস্থিত থাকা বা না থাকার কোন শর্ত নেই। মীলাদ শরীফের যে কিয়াম করা হয় তা মূলত আদব শরাফত ও মুহব্বতের কারণেই করা হয়। কেননা সালাম পেশ করার সময় দাঁড়িয়ে পেশ করাই হচ্ছে আদব, শরাফত ও মুহব্বতের আলামত। হাটহাজারীর মৌলভীরা ক্বিয়াম সম্পর্কে নিহায়েত অজ্ঞ হওয়ার কারনেই কিয়াম সম্পর্কে এরূপ বক্তব্য পেশ করেছে। তাই নিম্নে কিয়ামের প্রকারভেদ সহ ক্বিয়াম সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো।
ক্বিয়ামের প্রকারভেদ ও আহকাম
বিয়াম । শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- – قسام کرنا کیا هونا অর্থাৎ ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো। (কামুস আল মুহীত, তাজুল উরুস, লিসানুল আরব, মিছবাহুল লুগাত, আল মুনজিদ)
আর কিয়াম শব্দের ইন্ডেলাহী বা পরিভাষিক অর্থ হচ্ছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি “সালাম” পাঠকালে তা ‘যীমার্থে বা মুহব্বতে কিয়াম করা বা দাঁড়ানো। এছাড়াও মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে প্রায়ই ক্বিয়াম করতে হয়। তাই ইসলামী শরীয়ত ক্বিয়ামকে কয়েকটি ভাগে ভাগ। করেছে। যেমন (১)
ফরয কিয়াম (২) সুন্নত ক্বিয়াম (৩) মুস্তাহাব ক্বিয়াম (৪) হারাম ক্বিয়াম (৫) মাকরূহ কিয়াম।
ফরয কিয়াম
নামাযের আরকান সমূহের মধ্যে একটি রোকন হচ্ছে ক্বিয়াম। অর্থাৎ প্রত্যেক ফরয নামাযে ও ওয়াজিব নামাযে কিয়াম করা বা দাঁড়ানো ফরয। এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, حافِظُوا عَلَى الصَّلَواتِ وَالصَّلوةِ الْوُسْطَى وَقَوْمُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ
অর্থঃ- “সকল নামায সমূহকে হিফাযত কর বিশেষ করে মধ্যবর্তী
নামাযের জন্য যত্নবান হও। আর একান্ত বিনয়ের সাথে মহান আল্লাহ পাক-এর সামনে “কিয়াম” কর বা দণ্ডায়মান হও।” (সূরা বাক্বারা-২৩৮)
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব “ফতওয়ায়ে আলমগীরী”-কিতাবের ১ম খণ্ডের ৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, ومنها “القيام” وهو فرض في صلاة الفرض والوتر
كذا في الجوهرة অর্থঃ- নামাযের শর্ত সমূহের মধ্যে একটি শর্ত হলো “কিয়াম”। ফরয ও বিতর নামাযে ক্বিয়াম করা ফরয। অনুরূপ “জাওহারা” নামক কিভাবেও উল্লেখ আছে।” (চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়ালঃ
অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩
ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-
জিজ্ঞাসাঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে
আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের
সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক
গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু
চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম
পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই। উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে
আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-
“(৩) প্রচলিত হয় উছুলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল
নেই, এটা কতটুকু সত্য?”….
কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহয়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ প্রচলিত ছয় উছুলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও
দলীলবিহীন হয়েছে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব
দেয়া হলো-
(ধারাবাহিক)
প্রচলিত ছয় উছুলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছুলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”
আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছুলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, প্রচলিত ছয় উছুলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও
কৃষ্ণরীমূলক বক্তব্যগুলো উল্লেখ করার সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো।
প্রচলিত ছয় উছুলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ২২
প্রচলিত ছয় উজ্জ্বলী তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা প্রচার করে থাকে যে, “পীর ছাহেবদের দ্বারা দ্বীনের ব্যাপক খেদমত কখনোই সম্ভব নয়।
তাই তারা পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া বা ইলমে তাছাউফ চর্চা করাকে মোটেও গুরুত্ব দেয় না। একথার সত্যতা তাদেরই লোক দ্বারা লিখিত “আয়নায়ে তাবলীগ” নামক কিতাবের (লেখক- মুহম্মদ দাউদ আলী) নিম্নোক্ত বক্তব্য দ্বারাও প্রমাণিত হয়। তারা লিখেছে- “তাবলীগের মধ্যে পীর-মুরীদীর প্রচলন সম্ভব নহে, কেননা পীর-মুরীদীর দ্বারা সাধারণতঃ গন্ডিবদ্ধ একটা দলের সৃষ্টি হইয়া থাকে।…. এইরূপ একটা দলের দ্বারা ব্যাপক কোন কাজ করা সম্ভব নহে।…. তাই বাধ্য হইয়া তাবলীগ এই পথ এড়াইয়া চলিয়া থাকে।”
(চতুর্থ অংশ)
চতুর্থতঃ বলতে হয়, তারা যে লিখেছে, “পীর-মুরীদীর দ্বারা গণ্ডিবদ্ধ দলের সৃষ্টি হয় যা দ্বারা ব্যাপকভাবে দ্বীনের কাজ করা সম্ভব নয়।”
অতঃপর বলতে হয় তরীক্বার ইমামগণের কথা। যাদের ওসীলায় ইলমে তাছাউফের ভিত মজবুত হয়েছে। যা প্রচাবিত ও প্রসারিত হয়ে ব্যাপকভাবে আম জনগণের নিকট পৌছেছে। যেমন কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর। অথচ তা জমা করেন আফজালুন নাস হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। অতঃপর কিতাব আকারে লিপিবদ্ধ করে হযরত উসমান যিন নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আম জনগণের নিকট পৌছে দেয়ার কারণে তিনি ‘জামিউল কুরআন’ হিসেবে মশহুর হন। তদ্রুপ প্রতিটি তরীক্বাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু হয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণের মাধ্যমে তরীক্বার ইমাম -মুজতাহিদগণের নকট পৌঁছে। অতঃপর ইমাম-মুজতাহিদগণ তরীক্বার সবকগুলোকে সুবিন্যাস্তভাবে কিতাব বং অযীফা আকারে লিপিবদ্ধ
করেন। তাছাউফের বিষয় সমূহকে সর্বপ্রথম সুবিন্যস্তভাবে দিস্তাব আকারে লিপিবদ্ধ করেন, ইমাম আবুল কাসিম কুশাইরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত রেসালা, “রেসালায়ে কোশাইরিয়াতে।”
অতঃপর গাউসুল আ’যম বড় পীর আব্দুল কাদির জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শায়খ আহমদ রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুলতানুল হিন্দ খাজা মুঈনুদ্দীন চীশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, খাজা বাহাউদ্দীন নক্শবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও আফজালুল আওলিয়া শায়খ আহমদ ফারুকী মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ প্রত্যেক তরীকার ইমামগণই নিজ নিজ তরীক্বার সবকগুলোকে আরো সুবিন্যাস্ত ও সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ করে কিতাব বা অর্থীফা আকারে সাধারণ জনগণের নিকট ব্যাপকভাবে পৌঁছে দিয়ে তরীক্বার ইমাম হিসেবে মশহুর হন।
অতএব, যাঁদের দ্বারা ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফের ভিত স্থাপিত বা মজবুত হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হয়েছেন এবং খিলাফত প্রাপ্ত হয়ে মুরীদ করিয়েছেন। তাঁদের মাধ্যমেও দ্বীনের ব্যাপক ও অবর্ণনীয় খিদমত হয়েছে, যা কারোই অজানা নয়।
যেমন হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে চিনেনা বা তাঁর নাম জানেনা এমন মুসলমান খুব কম পাওয়া যাবে। এ মহান মুজাদ্দিদও ছিলেন একজন জগৎ বিখ্যাত ওলী আল্লাহ বা পীর। কিতাবে লিখা হয়, সে যামানায় যদি এ মহান মুজাদ্দিদের আবির্ভাব না হতো, তবে দ্বীন ইসলাম গ্রীক দর্শনের দিকে ধাবিত হতো।
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি শরীয়তের অকাট্য দলীলের মাধ্যমে এবং অক্লান্ত পরিশ্রম বা কলমী ও যবানী তাবলীগ, তা’লীম- তালক্বীনের ফলশ্রুতিতে ইসলাম পূণরায় ইসলামের দিকে ফিরে আসে। মানুষ বিদয়াত-বেশরা ও কুফরী থেকে মুক্ত হয়ে লাভ করে সত্যিকারের হিদায়েত। যার ফলে মানুষ আজো তাঁকে স্মরণ করে “হুজ্জাতুল ইসলাম” বা ইসলামের অকাট্য দলীল হিসেবে।
অনুরূপ গাউসুল আযম বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যাঁর সুমহান তাজদীদের ওসীলায় মৃতপ্রায় দ্বীন
যিন্দা হয়। যার ফলশ্রুতিতে তিনি ‘মুহিউদ্দীন’ বা ‘দ্বীন যিন্দাকারী’ লজ্ববে ভূষিত হন।
তদ্রুপ সুলতানুল হিন্দ খাজা মুঈনুদ্দীন চীশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যার দাওয়াত ও তাবলীগের উসীলায় হিন্দুস্থানের প্রায় এক কোটিরও বেশী বিধর্মী ঈমান লাভ করে এবং হিন্দুস্থানে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যার ফলশ্রুতিতে তিনি আজো ‘মুঈনুদ্দীন’ বা ‘দ্বীনের সাহায্যকারী’ নামে মশহুর হয়ে আছেন।
আফজালুল আওলিয়া শায়খ আহমদ ফারুকী সেরহিন্দী মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি বাদশাহ্ আকবরের দ্বীনে ইলাহীর ন্যায় কুফরী মতবাদকে সমূলে উৎপাটন করে সঠিক দ্বীন মানুষের নিকট পৌঁছে দিয়ে ‘মুজাদ্দিদে আলফে সানী’ হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
অনুরূপ আরো অসংখ্য, অগণিত মহান মুজাদ্দিদগণ, তাঁদের নিজ-নিজ যামানায় মহান মুজাদ্দিদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এবং তাঁদের প্রত্যেকেই পীর-মুরীদী করেছেন। তাঁদের দ্বারা পৃথিবীতে দ্বীনের যে খিদমত হয়েছে, তা ভাষায় বর্ণনা করে শেষ করার মত নয়।
এখন প্রশ্ন জাগে, তাঁরা পীর-মুরীদী করার পরও যদি তাঁদের দ্বারা দ্বীনের এত ব্যাপক খিদমত হতে পারে। তবে বর্তমানেও পীর-মুরীদীর মাধ্যমে ব্যাপক কাজ করা কেন সম্ভব হবেনা?
তাহলে কি প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মনে করে যে, ‘উল্লিখিত মহান মুজাদ্দিদগণের দ্বারা দ্বীনের ব্যাপক খিদমত হয়নি?’
যদি তারা তা মনে করে থাকে, তবে তা স্পষ্ট ভ্রান্তি ও ঘৃণ্য মিথ্যাচারিতা। আর যদি তারা স্বীকার করে থাকে যে, তাঁদের দ্বারা ব্যাপক দ্বীনের খিদমত হয়েছে, তবে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের কথিত বক্তব্য “পীর-মুরীদীর দ্বারা ব্যাপক কাজ সম্ভব নয়”- তা সম্পূর্ণই বিভ্রান্তিকর প্রমাণিত হয়।
বস্তুতঃ উল্লিখিত ওলীআল্লাহ বা পীর ছাহেবগণের মাধ্যমে দ্বীনের যে খিদমত হয়েছে, তা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের দ্বারা কল্পনাও করা যায়না বরং সত্য কথা বলতে গেলে এ কথাই বলতে হয় যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের মাধ্যমে দ্বীনের হাক্বীক্বী খিদমত তো হচ্ছেইনা উপরন্তু শরীয়ত বিরোধী আত্বীদা ও আমলের কারণে মানুষ ঈমান আমল শুন্য হয়ে গোমরাহীতে নিপতিত হচ্ছে। আর তারাই মূলতঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা ও আমল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে
একটি গন্ডিবদ্ধ দলের সৃষ্টি করেছে। মূলতঃ পীর-মুরীদী এড়িয়ে বা পরিহার করে দ্বীনের ব্যাপক খিদমত করার আশা করা, দুরাশা বৈ কিছুই নয়।
সুতরাং উপরোক্ত বিস্তারিত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটিই সাব্যস্ত হলো যে, পীর-মুরীদী সম্পর্কে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য মারাত্মক আপত্তিকর, মনগড়া, বিভ্রান্তিমূলক ও
কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী হওয়ার কারণে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। সাথে সাথে লোকদেরকে দ্বীন ইসলামের অর্ধেক ইলম, ইলমে তাছাউফের প্রতি নিরুৎসাহিত করার শামিল। এ ধরণের আপত্তিকর ও 47 fire ) 2012 و 1999 প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিব।
(চলবে)
মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক, গুলবাগ, ঢাকা।
সুওয়ালঃ “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ শাস্ত্রের পরিভাষা: এাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।” (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৮০)
এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের পর পুনরায় মুহুল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিকাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ “আষানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত অর্থঃ বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতোয়া দারুল উলুম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। আর তাদের এ ফতওয়া গুমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গোমরাহ করার জন্য যথেষ্ট। কারণ আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফিকাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়নি। বরং আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফেকাহবিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা উত্তম বলা হয়েছে। অর্থাৎ আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য (1) التنحنح 33 339 21 7 227 الصلاة الصلاة )নামায়! নামায়! ও قامت قامت )কামাত! ক্বামাত!) ইত্যাদি শব্দ দিয়ে আহবান করা বা তাছবীব করা উত্তম।
(ধারাবাহিক) যেমন, “শরহে বিকায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৩৫ পৃষ্ঠার ৭নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
ما اختاره المتاخرون ان التثويب مستحسن في جميع الصلوات لجميع الناس الظهور التكامل في امور الدين لاسيما في الصلواة ويستثنى منه المغرب.
অর্থঃ- ‘উলামায়ে মুতাআখখিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের গ্রহনীয় মত এই যে, মাগরিব ব্যতীত সকল নামাযে সকল মানুষের
জন্য তাছবীব করা মুস্তাহসান।” (অর্থাৎ “আযান ও ইকামতের মাঝে আমীর-উমরাসহ সকল নামাযীকে সকল নামাযেই তাছবীব করবে। কেননা তাছবীব শুধু আমীর-উমারাদের বা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যই খাছ নয় বরং আম-খাছ সকলের জন্যই প্রযোজ্য) কারণ দ্বীনী কাজে তথা বিশেষ করে নামাযে মানুষের অলসতা বা গাফলতী প্রকাশের কারণেই প্রত্যেক নামাযেই “তাছবীব” করা হয়।”
“আওজাযুল মাসালিক” কিভাবের ২য় খণ্ডের ২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
والتشويب في الفجر حي على الصلاة وحي على الصلاح مرتين بين الآذان والإقامة حسن لأنه وقت نوم وغفلة … والمآخرون استحنوه في الصلوات كنها لظهوره التواني في الأمور الدينية – “আযান ও ইক্বামতের মাঝে
حي على الصلاة وحي على الفلاح (হাইয়া আলাছ গুলাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ) দু’বার করে ফজর নামাযে তাছবীব করা উত্তম, কেননা ফজরের ওয়াক্তটা হলো ঘুম ও গাফলতির ওয়াক্ত।… আর ‘উলামায়ে মুতাআখিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেন, দ্বীনী কাজে মানুষের গাফলতী তথা শিখিলতা প্রকাশের কারণে প্রত্যেক নামাযেই “তাছবীব” করা মুস্তাহসান বা উত্তম।
“মিরকাত শরীফ” কিতাবের ২য় খণ্ডের ১৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
واستحسن المتأخرون التثويب في الصلوات كلها. অর্থঃ- “উলামায়ে মুতাআপ্তেরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ প্রত্যেক নামাযেই “তাছবীব” করাকে
মুস্তাহসান বা উত্তম বলেছেন।
আল কৃদ্ধ’ কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে
ويكره التثويب في غيرها وخلافا لما استحبه متأخرو الحنفية وبعد الأذان
অর্থঃ- “ফজর ব্যতীত অন্যান্য নামাযে তাছবীব বা উলামায়ে মুতাক্বাদ্দিমীনগণের মতে মাকরূহ। তবে হানাফী মাযহাবের উলামায়ে মুতাআখিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজর ব্যতীত অন্যান্য নামাযেও আযানের পর তাছবীব করা মাকরুহ নয়। বরং হানাফী মাযহাবের উলামায়ে মুতাআখিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ফজর ব্যতীত অন্যান্য নামাযেও আযানের পর তাছবীব করা মুস্তাহাব।” (কারণ দ্বীনী কাজে তথা বিশেষ করে নামাযে মানুষের অলসতা বা গাফলতী প্রকাশের কারণেই প্রত্যেক নামাযেই “তাছবীব” করা হয়।”)
“আল আযীয শরহে ওয়াজীয” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وروى أنه يمكن بعد الاذان بقدر عشرين آيه ثم يقول حي على الصلاة حي على الفلاح مرتين وقال إنه التثويب অর্থঃ- “আযানের পর নামাযে বিশ আয়াত পড়া যায় এ পরিমান সময়
অপেক্ষা করবে। অতঃপর দু’ বার ১حي على الصلا )হাইয়া আলাছ হলাহ) এবং حی علی الفلاح )হাইয়া আলাল ফালাহ) বলে মানুষদেরকে নামাযের জন্য আহবান করবে। এটাকেই তাছবীব বলে।”
“বদরুল মুত্তাক্বা ফী শরহে মুলতাকা” কিতাবে উল্লেখ আছে,
واستحسن المتأخرون التتويب هو العود الى الاعلام بين الاذان والاقامة بما تعارفوه في كل الصلوات الظهور الثواني في الأمور الدينية
অর্থঃ- “উলামায়ে মুতাআখখেরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ প্রত্যেক নামাযেই “তাছবীব” করাকে মুস্তাহসান বা উত্তম বলেছেন। আর “তাছবীব” বলা হয়, আযান ও ইকামতের মাঝে প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়ে পুনরায় (মানুষকে) নামাযের কথা জানিয়ে দেয়া। কেননা দ্বীনী কাজে মানুষের অলসতা বা গাফলতী প্রকাশের কারণেই প্রত্যেক নামাযেই “তাছবীব” করা
মুস্তাহসান বা উত্তম।”
“মাওয়াহিবুল জালীল লি শারহে মুখতাছার খলীল” কিভাবের ২য় খণ্ডের ৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
واستحب أبو حنيفة أن يثوب في الصبح بين الأذان
والإقامة
অর্থঃ- “ইমাম আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ফজরে আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে মুস্তাহাব বলেছেন।”
(চলবে)
মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান টাইগার পাস রোড, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত
মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ ও রদ্দুল মুহতার” A TO THE TE A CAR মুস্তাহাব”…।
এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা “আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ আয়ানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের আকীদা-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে we are as to To ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডন সহ সঠিক ও গ্রহনযোগ্য ফতওয়া পেশ করে যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ।
(ধারাবাহিক)
আযানের মৌখিক জবাব দেয়া যে ওয়াজিব এবং এটা যে প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত তার আরো প্রমাণ যেমন, ফিক্বাহর বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব “বাহরুর রায়েক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
والظاهر ان الاجابة باللسان واجبة لظاهر الأمر في قوله صلى الله عليه وسلم اذا سمعتم المؤذن فقولوا مثل ما يقول .
অর্থঃ- “জাহের রেওয়ায়েত অনুযায়ী নিশ্চয়ই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। কারণ হাদীছ শরীফে আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্টভাবে আদেশ করেছেন যে, যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আযান শুনবে তখন মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে তোমরাও তদ্রুপ বল।”
“মাজমাউল আনহুর ফী শরহে মুলতাকাল আবহুর” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৭৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
أنه ينبغي ان يجيب المستمع ويقول مثل ما قال المؤذن
অর্থঃ- “নিশ্চয় আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই উচিত অর্থাৎ ওয়াজিব হলো আযানের মৌখিক জবাব দেয়া এবং আযান শ্রবণকারীর সকলেই অনুরূপভাবে আযানের জবাব বলবে যেরূপ মুয়াজ্জিন বলে।”
“আল ফিকুচুল হানাফী ফী ছাওবিল জাদীদ” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
إذا سمع أحد الأذان … أمسك عن الكلام ، ولو تلاوة القرآن وقال مثل مقالة المؤذن بتمامها … فعن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال إذا سمعتم النداء فقولوا مثل ما يقول المؤذن
অর্থঃ- ” যখন মুয়াজ্জিনের আযান শুনবে … তখন সমস্ত প্রকার কথা-বার্তা থেকে বিরত থাকবে যদিও তা কুরআন শরীফ তিলাওয়াত হয়। এবং মুয়াজ্জিনের আযানের অনুরূপ পুরাপুরিভাবে মৌখিক আযানের জাওয়াব দিবে। কেননা হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নিশ্চই রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমরা আযান
শুনবে, তখন মুয়াজ্জিন যা বলে, তোমরাও তাই বলো।”
“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৫৯ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে, الاذان فعليه ان يجيب وفي الخلاصة ومن سمع | وان كان جنيا
অর্থঃ- “খুলাহাতুল ফতওয়া নামক কিতাবে উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি আযান শুনবে তার জন্য ওয়াজিব হলো আযানের জাওয়াব দেয়া যদিও সে জুনুব অবস্থায় থাকে।”
“জাওহারাতুন নাইয়ারাহ” কিতাবের ১ম খন্ডের ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وينبغى السامع الاذان أن لا يتكلم في حال الاذان والاقامة ولا يشتغل بشيئ سوى الاجابة .
অর্থ:-“আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই উচিত হবে অর্থাৎ ওয়াজিব যে, সে আযান ও ইকামতের সময় কোন প্রকার কথা-বার্তা বলবেনা এবং মৌখিক আযানের জবাব দেয়া ব্যতীত কোন কাজে মশগুল হবেনা।”
“ফতওয়ায়ে কাজীখান” কিতাবে উল্লেখ আছে,
من سمع الاذان فعليه ان يجيب قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من لم يجب الاذان فلا صلاة له
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আযান শুনবে তাদের সকলের উপর ওয়াজিব হলো ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আযানের জবাব দিবেনা তার কোন নামায নেই।”
water a year a freless খন্ডের ৭৮ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
اجابة المؤذن باللسان قبل واجبة قاله المصنف لكن رجح في البحر ….. والنهر القول بالوجوب. অর্থঃ- “মুখে মুয়াজ্জিনের আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব বলা হয়েছে…… মুছান্নেষ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, তবে “বাহরুর
রায়েক” ও “নাহরুল ফায়েক” কিতাবের ( ترجیح তরজীহপ্রাপ্ত) বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া হলো মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।”
“গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খন্ডের ১৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اور واجب ھی جواب دینا زبان سے اسکو جسنے اذان کو منا اگر چه وه جنب هو
অর্থঃ- “ঐ সকল ব্যক্তিদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব, যে সকল বাক্তিরা আযান শুনবে। যদিও সে নাপাকি অবস্থায় থাকে।”
“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৫৯ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
لا يقرأ السامع ولا يسلم ولا يرد السلام ولا يشتغل بشئ سوى الاجابة ولو كان السامع بقرأ يقطع القراءة ويجيب
অর্থঃ- “আযান শ্রোতাদের উচিত হবে যে, আযানের সময় শ্রোতাগণ কুরআন শরীফ পাঠ করবেনা, অপর কাউকে সালাম দিবেনা, সালামের জাওয়াব দিবে না। এবং আযানের জবাব দেয়া ব্যতীত কোন কাজেই মশগুল হবে না। যদি আযানের সময় কুরআন শরীফ পাঠ করতে থাকে, তাহলে উচিত হবে কুরআন শরীফ পাঠ বন্ধ করে আধানের
জওয়াব দেয়া।” (চলবে)
নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক
ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।
সুওয়ালঃ হানাফী মাযহাবে-
(১) নামাষের মুহল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।
(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।
(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।
(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।
(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা। (৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে। (৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং
তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ত্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।
(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো জোড়া জোড়া এবং আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার কুদক্বামাতিছ ছলাহ বলে।
(৯) তারাবীহর নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।
(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।
(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আধানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন ।
(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদকাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।
কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কে
দলীল-প্রমাণ নেই। অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে
জাওয়াবঃ বিগত সংখ্যায় অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। মূলতঃ ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ছানা-সিফত বেমেছাল। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।
(ধারাবাহিক)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে, ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কোটি-কোটি টাকার ব্যবসা ছিল। সে জামানায় আজকের থেকে প্রায় সাড়ে বার’শ বছর, তের’শ বছর আগেকার কথা। তিনি একবার এক দোকানে তাঁর এক কর্মচারীর কাছে কিছু কাপড় বিক্রি করার জন্য দিলেন। তার মধ্যে একটা কাপড়ে কিছু দোষ ছিল। তিনি বলে দিয়েছিলেন যে, ‘দেখ এ কাপড়টা যখন বিক্রি করবে, তখন বলে দিও যে কাপড়ের মধ্যে দোষ আছে।’ কিন্তু সেই বিক্রেতা (তাঁর অবশ্য কোন খারাপ উদ্দেশ্য ছিলনা, ভুলে গিয়েছিলেন) দোষযুক্ত কাপড়টা বিক্রি করে ফেললেন, দোষের কথা বলতে মনে ছিলনা। ঐদিন ঐ দোকানে কাপড় বিক্রি হয়েছিলো ত্রিশ হাজার দিরহাম। হযরত ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন আসলেন, তখন বললেন, হে ব্যক্তি। তুমি কত দেরহামের মাল বিক্রি করলে? কর্মচারী জবাব দিলেন, ‘ত্রিশ হাজার দেরহাম।’ আচ্ছা, ‘ঐ কাপড়টা কি বিক্রি হয়েছে? হ্যাঁ বিক্রি হয়েছে।’ ‘কাপড়ের দোষের কথা বলেছিলে?’ কর্মচারী বললেন যে, ‘হযূর! আমার তো মনে নেই, আমি ভুলে গিয়েছিলাম।’ হযরত ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তুমি সর্বনাশ করেছ। এ পয়সা আমার জন্যে খাওয়া জায়িয হবেনা।’ তিনি সেই ত্রিশ হাজার দিরহাম দান করে দিলেন। (সুবহানাল্লাহ)
ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন কুরআন শরীফের হাফিষ, তিনি প্রতি রমযান মাসে ৬১ বার পুরো কুরআন শরীফ খতম করতেন; দিনে এক খতম, রাতে এক খতম এবং পুরো তারাবীহ নামাযে এক খতম।
তিনি হাকিমে হাদীছ ছিলেন, অর্থাৎ সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম্ রাখতেন, যার কারণে তিনি বলেন, হাদীছ শরীফের খিলাফ আমার কোন বিষয় কারো দৃষ্টিগোচর হলে সে যেন হাদীছ শরীফ অনুযায়ী আমল করে। অর্থাৎ ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর যাবতীয় বিষয়ের ফায়ছালা হাদীছ শরীফের ভিত্তিতে ছিল, যার কারণে তাঁর কোন বিষয় হাদীছ শরীফের খিলাফ প্রমাণ করা কারো পক্ষে সম্ভব হয়নি এবং কিয়ামত অবধি সম্ভব হবেনা।
এ প্রসঙ্গে ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জীবদ্দশায় ঘটিত একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কিতাবে উল্লেখ আছে যে, “আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার একই বছর হজ্বে যান। হজ্ব উপলক্ষে হযরত ইমাম আৰু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন তাওয়াফ করছিলেন, তখন কোন এক ব্যক্তি আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট হযরত ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহিকে দূর থেকে লক্ষ্য করে বা ইশারা দিয়ে দেখিয়ে বললো যে, “হে আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি। এই সেই ইমাম আ’যম কুফী যিনি আপনার নানাজানের (হাদীছ শরীফ-এর) ■ বিরুদ্ধে ফতওয়া দেন।” আল্লাহ পাক প্রদত্ত খোদায়ী ইলম ও সূক্ষ্ম সমঝের কারণে হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিষয়টি বুঝতে বাকী রইল না। তাই হজ্বের কাজ সমাধা করে হযরত ইমাম আয’ম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি আওলাদে রাসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট আসলেন এবং তাঁকে সালাম দিলেন। কিন্তু আওলাদে রাসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি সালামের জবাব দিলেন না বরং চেহারা মুবারক ফিরিয়ে নিলেন। হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি সবিনয়ে এর কারণ জানতে চাইলেন।
জবাবে আওলাদে রসূল, হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “আপনিই কি সেই ইমাম আবু হানীফা কুফী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি আমার নানাজানের (হাদীছ শরীফ-এর) বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়ে থাকেন। জবাবে ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আমি যদি সত্যিই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফের বিরুদ্ধে ফতওয়া দিতাম, তবে হাদীছ শরীফে রয়েছে, মেয়েদের অসুস্থতার সময় নামায ক্বাষা করতে হয়না। কিন্তু রোযার ক্বাযা করতে হয়। অথচ নামাযের গুরুত্ব রোযা থেকে অনেক বেশী। যদি আমি হাদীছ শরীফ-এর বিরোধিতা করতাম, তবে ফতওয়া দিতাম যে, নামায কাষা করতে হবে, রোযা ক্বাযা করতে হবেনা কিন্তু আমি তা বলিনা। আবার সম্পত্তি বা ওয়ারিছসত্ত্ব বণ্টনের ব্যাপারে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের ফতওয়া হলো- মেয়েরা সম্পত্তির একভাগ পাবে। আর ছেলেরা দু’ভাগ পাবে। যদি আমি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের বিরুদ্ধেই ফতওয়া দিতাম, তবে ফতওয়া দিতাম, মেয়েরা সম্পত্তির দু’ভাগ পাবে, আর ছেলেরা পাবে একভাগ। কারণ মেয়েরা দুর্বলা ও অবলা। কিন্তু আমি তা বলি না। আর লটারীকে আমি নাজায়িয ফতওয়া দেই, যা শরীয়তেরই ফতওয়া। অথচ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে যাওয়ার সময় উন্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ থেকে একজনকে নিয়ে যেতেন, তা ফয়সালা করতেন লটারীর মাধ্যমে। আমি সে লটারীকে জায়িয ফতওয়া দেই। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে আমি হাদীছ শরীফের বিরুদ্ধে ফতওয়া দিলাম কোথায়?” একথা শুনে আওলাদে রসূল হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দিকে দৃষ্টি করলেন ও তাঁর কপাল মুবারকে চুমু খেলেন এবং বললেন, “হে ইমাম আ’যম! আপনার গভীর ইলম ও সুক্ষ্ম সমঝ আপনাকে সকলের নিকট শত্রু বানিয়েছে।”
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বুঝতে হলে তার বাস্তব দৃষ্টিান্ত হচ্ছেন বর্তমান পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীকত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, হাকিমুল হাদীছ, হুজ্জাতুল ইসলাম, সুলত্বানুল আরিফীন, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, আওলাদের রসূল, রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী। তিনি প্রায়ই বলেন, “আমার কোন বিষয়- আক্বীদা হোক, আমল হোক, বক্তব্য হোক, লিখনী হোক প্রভৃতি শরীয়তের উদ্বুল বা দলীল কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াসের খিল।ক যে কেউ প্রমাণ করতে পারলে আমি তৎক্ষনাত তা ছেড়ে দিব এবং যা শরীয়ত সম্মত বলে প্রমাণিত হবে তাই গ্রহণ করবো।”
কিন্তু আজ পর্যন্ত কারো সাহস হয়নি যে, হযরত মুজাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রদত্ব চ্যালেঞ্জের মুকাবিলা করা। মূলতঃ তাঁর যাবতীয় বিষয়ই কুরআন-সুন্নাহর দ্বারা পরিচালিত।
উল্লেখ্য, আল্লাহ পাক যাদেরকে যামানার মুজাদিদ ও ইমাম হিসেবে মনোনীত করেন তাঁদের পক্ষেই কেবল সত্যবাদীতার চ্যালেঞ্জ প্রদান করা সম্ভব। যদিও কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, গোমরাহ ও বিদয়াতীরা তা অস্বীকার ও অমান্য করে থাকে। (অসমাপ্ত)
ডাঃ মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন নিউ ইয়র্ক, আমেরিকা
সুওয়ালঃ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িষ কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাউযুবিল্লাহ)
এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-কিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয’ থাকলে তার দলীল-আদীল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান- আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।
জাওয়াবঃঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।
কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসুল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরকার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, কাদিয়ানী, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে বহু আয়াত শরীফ ইরশাদ হয়েছে। তারমধ্যে কতিপয় আয়াত শরীফ এখানে পেশ করা হলো।
১. ইরশাদ হয়েছে,
وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَفرك الرسول لَوَجَدُوا اللهَ تَوَّابًا رَّحِيمًا.
অর্থঃ “যদি লোকেরা নিজেদের আত্মাসমূহের উপর অত্যাচার করে (হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।) আপনার দরবার শরীফে এসে হাযির হয়ে যায় এবং আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আপনিও তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তাহলে নিঃসন্দেহে তারা আল্লাহ তায়ালাকে তওবা কবুলকারী, মেহেরবান রূপে পাবেন।” (সূরা নিসা-৬৪)
অর্থাৎ, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক গুনাহগারের জন্য কিয়ামত অবধি মাগফিরাত (ক্ষমা) এর ওসীলা। وিظلم )অর্থাৎ যারা যুলুম করেছে) এর মধ্যে কোন শর্তারোপ নেই বরং সাধারণ অনুমতি রয়েছে।
২. ইরশাদ হয়েছে, أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيْلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ.
অর্থঃ “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ পাককে ভয় কর এবং তাঁর প্রতি ওসীলা তালাশ কর এবং তাঁর পথে জিহাদ বা কোশেশ কর; অবশ্যই তোমরা সফলকাম হবে।” (সূরা মায়িদা-৩৫)
অর্থাৎ, আমলসমূহ ছাড়াও আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দাদের ওসীলা তালাশ করা অপরিহার্য। কেননা আয়াত শরীফে আমলসমূহের কথাতো اتقوا الله )আল্লাহকে ভয় কর) এর মধ্যে উল্লেখিত হয়েছে এরপর ওসীলা তালাশ বা গ্রহণ করার হুকুম করা হয়েছে। তাই বুঝা গেল যে, ওসীলা হচ্ছে আমলসমূহের অতিরিক্ত। ৩. ইরশাদ হয়েছে,
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةٌ تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكَّيْهِمْ بهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلُونَكَ سَكَنُ لَهُمْ:
অর্থঃ “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মুসলমানের সম্পদরাজির ছদকা গ্রহণ করুন এবং তা দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করুন, আর তাদের জন্য দুয়া করুন; নিশ্চয়ই আপনার দুয়া তাদের অন্তরের প্রাশান্তির কারণ।” (সূরা তওবা- ১০৩)
অর্থাৎ, ছদক্কা, খয়রাত, সৎকর্মসমূহ পবিত্রতার ওসীলা বা মাধ্যম হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়; বরং পবিত্রতা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুগ্রহের মাধ্যমে অর্জিত হয়।”
যেমন ইরশাদ হয়েছে,
لَقَدْ مَنَ الله عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُوا عَلَيْهِمْ أَيْتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَبَ وَالْحِكْمَةَ.
অর্থঃ ‘আল্লাহ পাক মু’মিনদের প্রতি ইহসান করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়েছেন। তিনি তাদেরকে আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শোনান এবং তাদেরকে পবিত্র করেন। আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন।” (সূরা আলে ইমরান- ১৬৪)
৪. ইরশাদ হয়েছে,
وكَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ.
অর্থঃ তারা (ইহুদী ও খ্রিষ্টান) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শুভাগমনের পূর্বে তাঁর ওসীলা দিয়ে বিজয় লাভের দুয়া করতো।” (সূরা বাক্বারা- ৮৯)
অর্থাৎ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শুভাগমনের পূর্বে আহলে কিতাব তথা ইহুদী-খ্রিষ্টানরা তাঁর ওসীলায় যুদ্ধসমূহে বিজয় লাভের দুয়া করতো। কুরআন শরীফ তাদের এ কর্মের উপর আপত্তি করেনি বরং সমর্থন ও নির্দেশ করেছে যে, তাঁর ওসীলায় তোমরা দুয়া প্রার্থনা কর এবং তাঁর উপর ঈমান আনয়ন কর।
৫. ইরশাদ হয়েছে,
فتلَقَّى آدَمُ مِنْ رَبِّهِ كَلِمَةٍ فَتَابَ عَلَيْهِ
অর্থঃ হযরত আদম আলাইহিস সালাম স্বীয় পরওয়ারদিগারের পক্ষ থেকে কতক কালিমা (প্রার্থনাবাক্য) পেয়েছেন, যেগুলোর ওসীলা দিয়ে দুয়া করা মাত্র আল্লাহ তায়ালা তাঁর দুয়া কবুল করেছেন।” (সূরা বাক্বারা- ৩৭)
হযরত মুফাস্স্সিরীনে কিরামগণ হাদীছ শরীফের উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামের ওসীলায় দুয়া করেছেন, যা কবুল হয়েছে। অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণেরও ওসীলা।
(চলবে)