সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৫৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন, ঢাকা

মুহম্মদ লুৎফর রহমান, মুন্সিগঞ্জ

মুহম্মদ আলী রায়হান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সুওয়ালঃ  দৈনিক নয়াদিগন্ত, সংগ্রাম ও ইনকিলাবে শহীদুল্লাহ বারী নামের এক ব্যক্তি পবিত্র ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রসঙ্গে আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর দেয়াল লিখনী ও ফতওয়া নিয়ে বেশকিছু মন্তব্য করেছে। যেমন সে বলেছে,

১। ঈদে মিলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা সম্পর্কে আল বাইয়্যিনাত-এর পক্ষ থেকে প্রথমে সুন্নত, ওয়াজিব ও পরে ফরয বলা হয়েছে এবং এরপরে কোন্ পর্যায়ে ফতওয়া দেয়া হবে তা নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে।

সে আরো বলেছে,

২। ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা ফরয এ ফরয সম্পর্কে- (ক) আল্লাহ পাক নিজে কিছু বলেননি। (খ) আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু বলেননি। (গ) শুধু তাই নয়, ছাহাবায়ে কিরামের যুগ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি এ ফরয কাজটির প্রতি উম্মতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেননি।

এখন আমাদের সুওয়াল হলো- “ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা সম্পর্কে” উক্ত ব্যক্তির মন্তব্য কতটুকু সঠিক? তা জানার জন্য অনুরোধ করছি।

জাওয়াবঃ  উল্লিখিত দৈনিক পত্রিকাত্রয়ের বরাতে শহীদুল্লাহ বারী নামীয় ব্যক্তিটি ‘ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ প্রসঙ্গে আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর ফতওয়া ও দেয়াল লিখনী সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছে তা সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন-সুন্নাহ্ খিলাফ।

মূলতঃ যারা ওহাবী, খারিজী, মওদুদী, জামায়াতী, লা-মাযহাবী, দেওবন্দী ও তাবলীগী গং তারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান-মান, ফযীলত-মর্যাদার বিষয় কখনই বুঝবেনা, বুঝতে পারে না। যেমন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাক্বীক্বত সম্বন্ধে যদি কোন চতুষ্পদ জন্তুকে বুঝানো হয় এবং শত-সহস্র দলীলও পেশ করা হয় তবুও সে কিন্তু বুঝতে সক্ষম হবেনা। বরং সে হয়ত মুখ ছিটকিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করবে।

তাহলে যারা চতুষ্পদ জন্তু অপেক্ষা নির্বোধ তাদের পক্ষে কি করে আল্লাহ পাক-এর হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ-এর হাক্বীক্বত বুঝা সম্ভব হবে? কখনই সম্ভব হতে পারেনা।

এ প্রসঙ্গে “সূরা আ’রাফ”-এর ১৭১ নম্বর আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

لقد ذرانا لجهنم كثيرا من الجن والا نس لهم قلوب لا يفقهون بها ولهم اعين لا يبصر ون بها ولهم اذان لايسمعون بها اولئك كالانعام بل هم اضل اولئك هم الغفلون.

অর্থঃ- “আমি জিন-ইনসানের মধ্য হতে অনেককে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। অর্থাৎ অনেকেই বদআমলের কারণে জাহান্নামী হবে। তাদের অন্তর থাকার পরও তারা বুঝেনা, চক্ষু থাকার পরও তারা দেখেনা এবং কান থাকার পরও তারা শুনেনা। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো। বরং তার চেয়েও নির্বোধ। এবং তারা হচ্ছে চরম গাফিল অর্থাৎ তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে চরম জাহিল। তাঁদের যিকির ও ছানা-ছিফত করার ব্যাপারে অমনোযোগী।”

যার কারণে যামানার তাজদীদী মুখপত্র ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফে’ ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহ্র অসংখ্য, অগণিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করার পরও সেই নির্বোধদের চু-চেরা বা মন্তব্য রয়ে গেছে।

পত্রিকান্তে প্রকাশ সুওয়ালে উল্লিখিত নির্বোধ মন্তব্য করেছে,

১। “ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা সম্পর্কে আল বাইয়্যিনাত-এর পক্ষ থেকে প্রথমে সুন্নত, ওয়াজিব ও পরে ফরয বলা হয়েছে এবং এরপরে কোন্ পর্যায়ে ফতওয়া দেয়া হবে …. ।”

এর জাওয়াব হচ্ছে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে তা সত্যই বলা হয়েছে এবং শরীয়তের দলীল- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দলীল-আদিল্লাহ্র ভিত্তিতেই বলা হয়েছে যে, “ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা তথা আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশী প্রকাশ করা সুন্নত।” এটা হচ্ছে আম ফতওয়া। কেননা আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমনে সকলেই আনন্দ ও খুশী প্রকাশ করেছিলেন। যেমন এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে,

ولد من لولاه ماخلق الوجود ولا يصور والد ولا مولود ولد يوم الا ثنين لاثنى عشر ليلة خلون من الربيع الاول فاصبحت بطبا واستبشرت اهل السموت بولادته وفازت امنة بسعادته وخرت الاصنام على رئوسها وايقنت الكهنة بخز يها وبؤسها ونطق الضب بر سا لته واقر الذئب بنبوته وجلالته فله النسب الرفيع المشرف فهو محمد بن عبد الله ابن عبد المطلب ابن هاشم سيد بنى عد نان وخير ال حين ربى عند جده يتيما ورضع ثديى حليمة فصارا حليما فمن عظم ليلة مولده بما امكنه من التعظيم والاكرام كان من الفائزين بدار السلام.

অর্থঃ- “এ মুবারক দিনে এমন এক মহান ব্যক্তির আগমন ঘটেছে যিনি না হলে ক্বায়িনাতের কিছুই সৃষ্টি হতো না। সৃষ্টি হতো না কোন পিতার, না কোন সন্তানের। সেই মহান ব্যক্তির মুবারক আগমন বা বিলাদতের শুভক্ষণে খুশীতে আলোড়িত হয়েছিলো পবিত্র মক্কা শরীফের কংকরময় মরুভূমি। মহা উল্লাস আর আনন্দে মেতে উঠেছিলো হারাম শরীফও। তাঁর বিলাদত শরীফে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছিলেন আসমানের ফেরেশ্তাকূল। তাঁর সৌভাগ্যে ধন্য হন হযরত আমিনা আলাইহাস্ সালাম। তাঁর আগমনে খান খান হয়ে ভেঙ্গে পড়েছিলো প্রতিমাগুলি। বুঝতে পেরেছিলো জ্যোতিষীরা তাদের লাঞ্ছনা ও দুর্ভাগ্য অনিবার্য। তাঁর রিসালতের রহস্য জানিয়ে দিয়েছিলো গুঁইসাপ। তাঁর নুবুওওয়াত ও মহত্বের কথা স্বীকার করেছিলো জঙ্গলী বাঘ। তাঁর বংশ অতি অভিজাত ও সম্মানিত। তিনি হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিন হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম বিন হযরত আব্দুল মুতাল্লিব আলাইহিস্ সালাম বিন হযরত হাশিম আলাইহিস্ সালাম; যিনি ছিলেন আদনান গোত্রের সর্দার। তিনি ইয়াতীম অবস্থায় স্বীয় দাদা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস্ সালাম-এর কাছে স্বসম্মানে লালিত-পালিত হন। তাঁকে দুধ পান করান হযরত হালিমা সা’দিয়া আলাইহাস্ সালাম। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর হাবীব, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ দিবসকে তা’যীম করবে এবং সে উপলক্ষে খুশী প্রকাশ করবে সে চিরশান্তিময় জান্নাতের অধিকারী হবে।” (ইবনু লুবাতা)

অতএব, ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা আম ফতওয়া হিসেবে সুন্নত বলা হয়েছে। আর খাছ ফতওয়া হচ্ছে ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা ফরয।

আর প্রকৃতপক্ষে সুন্নতগুলি পালন করাও ফরয। যেমন, এ প্রসঙ্গে হাম্বলী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার ফতওয়া দিলেন যে, “সুন্নতগুলি পালন করা ফরয।” তিনি যখন এ ফতওয়া দিলেন তখন তাঁর সময়কার যারা ইমাম, মুজতাহিদ ও ফক্বীহ ছিলেন তাঁরা তাঁর নিকটে আসলেন। এসে বললেন, ‘হে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি! আমরা আপনাকে ইমাম, মুজতাহিদ ও ফক্বীহ মনে করি। অথচ আপনি কি করে সুন্নতকে ফরয ফতওয়া দিলেন? এর স্বপক্ষে আপনার কোন দলীল আছে কি? কারণ আল্লাহ পাক তো বলেছেন,

هاتوا برها نكم ان كنتم صدقين.

অর্থঃ- “তোমরা যদি সত্যবাদী হও তাহলে দলীল পেশ করো।” (সূরা বাক্বারা-১১১)

হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “হ্যা, এ ব্যাপারে ক্বিত্য়ী বা অকাট্য দলীল রয়েছে। অর্থাৎ কুরআন শরীফ থেকে দলীল রয়েছে। তা হলো, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

ما اتكم الرسول فخذوه وما نهكم عنه فانتهوا واتقوا الله ان الله شديد العقاب.

অর্থঃ- “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছেন তোমরা তা গ্রহণ কর আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাক। এ ব্যাপারে আল্লাহ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।”ঞ্জ(সূরা হাশর-৭)

এ আয়াত শরীফের দ্বারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতগুলি পালন করা ফরয প্রমাণিত হয়েছে।”

তিনি যখন আয়াত শরীফ পেশ করলেন তখন যে সকল ইমাম, মুজতাহিদ ও ফক্বীহ আগমন করেছিলেন তাঁরা স্বীকার করলেন যে, সত্যিই সুন্নতগুলি পালন করা ফরয।

আবার হাদীছ শরীফের দিকে যদি লক্ষ্য করা হয়, তাহলে সুন্নতগুলি পালন করা ওয়াজিবও প্রমাণিত হবে। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عليكم بسنتى وسنة لخلفاء الرا شدين المهدين تمسكوا بها وعضوا عليها بنواحذ.

অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার সুন্নত এবং হিদায়েতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীনগণের সুন্নত পালন করা তোমাদের জন্য অপরিহার্য তথা ওয়াজিব। তোমরা মাড়ির দাঁত দিয়ে মজবুতভাবে তা আঁকড়ে ধরো।” (আহমদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

কাজেই বুঝা গেলো, একই মাসয়ালা বর্ণনার দিক থেকে যদিও ভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে কিন্তু গুরুত্বের দিক থেকে তা ভিন্ন নয়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে-

(১)

দাড়ি রাখা সুন্নত। এটা হচ্ছে আম ফতওয়া। অর্থাৎ সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ দাড়ি রেখেছেন সে কারণে বলা হয় দাড়ি রাখা সুন্নত। কিন্তু খাছ ও মূল ফতওয়া হচ্ছে দাড়ি রাখা ফরয-ওয়াজিব। এক মুষ্ঠির নিচে দাড়ি কাটা, ছাটা ও মুণ্ডন করা হারাম ও কবীরা গুণাহ। এ বিষয়ে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৩০-৩৪তম সংখ্যায় হাদীছ শরীফ, তাফসীর, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবের ইবারাতসহ ১২৫টি দলীলের দ্বারা বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে।

(২)

হজ্জ ও উমরাহর একটা ওয়াজিব হচ্ছে মাথার চুল ছোট করা কিংবা চুল মুণ্ডন করা। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হজ্জ ও উমরাহ্ করতে গিয়ে যারা চুল ছোট করবে তাদের জন্য আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার দু’য়া করেছেন। আর যারা চুল মুণ্ডন করবে তাদের জন্য দু’য়া করেছেন তিনবার। এর কারণ হচ্ছে, যারা চুল ছোট করবে তাদের কেবল ওয়াজিব আদায় হবে। আর যারা চুল মুণ্ডন করবে তাদের ওয়াজিব আদায় হওয়ার সাথে সাথে সুন্নতও আদায় হয়ে যাবে।

কেননা, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার হজ্জ ও চারবার উমরাহ করেছিলেন। তিনি হজ্জ ও উমরাহ পালনকালে স্বীয় মাথা মুবারক মুণ্ডন করেছিলেন। তাই তিনি মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্য তিনবার দু’য়া করেছেন।

(৩)

নামাযের একটা ফরয হচ্ছে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করা। কিন্তু সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব এবং সূরা ফাতিহার সাথে আরেকটা সূরা পড়াও ওয়াজিব। নামাযে সুন্নত পরিমাণ ক্বিরায়াত পাঠ করলে, নামাযে ক্বিরায়াতের ব্যাপারে সুন্নত আদায়ের সাথে সাথে ফরয ও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।

এখন সূরা ফাতিহা এবং তার সাথে অপর একটি সূরা উভয়টিই পড়া যদি ওয়াজিব হয় তাহলে সূরা-ক্বিরায়াত পড়া যে ফরয তা কোথায় গেল? মূলতঃ সূরা ফাতিহা পাঠ করা হোক অথবা অপর একটি সূরা পাঠ করা হোক ওয়াজিব আদায় হওয়ার সাথে সাথে ফরযও আদায় হয়ে যাবে। এখানে ফরয এবং ওয়াজিব এক সাথেই রয়েছে। যার কারণে ফরয ও ওয়াজিব একসাথেই আদায় হয়ে যায়।

আর ওয়াজিব শব্দ দ্বারা ফরযও উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال خطبا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال يا ايها الناس قد فرض عنيكم الحج فحجوا فقال رجل يا رسول الله ا كل عام فسكت حتى قالها ثلثا فقال لو قلت نعم لوجبت ولما استطعتم.

অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে খুৎবা দিলেন। অতঃপর বললেন, হে মানুষেরা! নিশ্চয়ই তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা হজ্জ কর। তখন একজন ছাহাবী বললেন, হে আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! প্রতি বছরই কি হজ্জ করা ফরয? আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ করে থাকলেন। আর উক্ত ছাহাবী একে একে তিনবার জিজ্ঞাসা করলেন যে, প্রতি বছরই কি হজ্জ করা ফরয? অতঃপর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম তাহলে لوجبت “অবশ্যই তা ওয়াজিব হয়ে যেত।” আর তোমাদের পক্ষে পালন করা সম্ভব হতোনা।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

এখানে দেখা যাচ্ছে, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াজিব শব্দ ব্যবহার করে ফরযকে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জিজ্ঞাসার প্রতিত্তোরে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তোমাদের জন্য প্রতি বছরই হজ্জ করা ওয়াজিব হয়ে যেত তথা ফরয হয়ে যেত।

উল্লেখ্য, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে বর্ণিত আমর বা আদেশসূচক সম্বোধন দ্বারা ফরয-ওয়াজিব দু’টিই উদ্দেশ্য। যার কারণে অনেকগুলো মাসয়ালার ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একজন মুজতাহিদ যেটাকে ওয়াজিব বলেছেন আরেকজন মুজতাহিদ সেটাকে ফরয বলেছেন। আবার কোন আমলই যেহেতু সুন্নত থেকে খালি নয় সেহেতু আরেকজন মুজতাহিদ সেটাকে সুন্নত বলেছেন। যার একটি উদাহরণ হচ্ছে দাড়ি রাখার মাসয়ালাটি।

প্রকৃতপক্ষে ফরয-ওয়াজিব শব্দ দু’টি হচ্ছে সমার্থবোধক। কাজেই একই মাসয়ালা ফরয-ওয়াজিব বলা হয়েছে তাকীদ্ বা গুরুত্ব বুঝানোর জন্য। আর সেটা বলা হয়েছে, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের আদেশ-নির্দেশের ভিত্তিতে।

কাজেই, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফের পক্ষ থেকে ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা প্রথমে সুন্নত, ওয়াজিব ও পরে ফরয বা ফরয-ওয়াজিব বলা হয়েছে তা কুরআন-সুন্নাহ্র ভিত্তিতেই। সুতরাং তা নিয়ে কটাক্ষ করার কোনই সুযোগ নেই। বরং কটাক্ষ করা মানেই কুরআন-সুন্নাহ সম্পর্কে কটাক্ষ করা যা কাট্টা কুফরী।

সেই নির্বোধ আরো বলেছে,

২।  (ক) আল্লাহ পাক নিজে কিছু বলেননি। (খ) আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু বলেননি। (গ) শুধু তাই নয়, ছাহাবায়ে কিরামের যুগ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি এ ফরয কাজটির প্রতি উম্মতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেননি?

এর জাওয়াবে বলতে হয়, হ্যাঁ, সে যা বলেছে ঠিকই বলেছে। কারণ, সে তো চতুষ্পদ জন্তু অপেক্ষা নির্বোধ। যেখানে চতুষ্পদ জন্তু কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ পড়লে বা তাকে পড়ালে তার পক্ষে বুঝা সম্ভব নয় তাহলে যে বা যারা চতুষ্পদ জন্তু অপেক্ষা নির্বোধ সে বা তারা কি করে তা বুঝবে? কখনই বুঝতে পারেনা।

যেমন, একবার এক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আপনি নাকি তাঁর কাছে সবচেয়ে প্রিয়, পছন্দনীয় এবং তিনি সর্বদা আপনার ছানা-ছিফত বর্ণনা করেন। কিন্তু আবু জাহিল তার বিপরীত বলে, এটার কি কারণ?’

আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘ঠিকই আছে। যে যেরকম সে তদ্রুপই বর্ণনা করে থাকে। হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জাহিরী ও বাতিনী স্বচ্ছতা এবং পরিশুদ্ধতার কারণেই তিনি উত্তম বর্ণনা করেছেন। আর আবু জাহিলের জিহালতী ও গোমরাহীর কারণে সে বিপরীত বলেছে।’

এ প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত রয়েছে, “একবার সুলতান মাহমূদ আল্লাহ পাক-এর খালিছ এবং লক্ষ্যস্থল ওলী হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবার শরীফে আসলেন। আলোচনার এক পর্যায়ে আল্লাহ পাক-এর ওলী বললেন, আমার পীর ছাহেব সুলতানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে আল্লাহ পাক এমন মর্যাদা-মর্তবা দান করেছেন, যে ব্যক্তি তাঁকে দেখেছে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে।

একথা শুনে সুলতান মাহমূদ বললেন, হুযূর! আপনার পীর ছাহেবের মর্যাদা কি তাহলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বেশী? কারণ, আবু জাহিল, আবু লাহাব তো আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছিলো কিন্তু তারপরও তারা তো জাহান্নামী হয়ে গেছে।

একথা শুনে আল্লাহ পাক-এর ওলী ধমক দিয়ে বললেন, হে সুলতান! মুখ সামলিয়ে কথা বলো। মূলতঃ আবু জাহিল, আবুল লাহাব প্রমুখ কাফির-মুশরিকরা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হিসেবে দেখেনি। তারা দেখেছিলো তাদের ভাই, ভাতিজা ইত্যাদিরূপে। যদি তারা সত্যিই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ পাক-এর নবী, রসূল ও হাবীব হিসেবে দেখতো তাহলে  তারা ঈমান এনে ছাহাবী হয়ে যেত এবং সুউচ্চ জান্নাত লাভ করতো।” (মাশায়িখে নকশ্বন্দ)

মুলতঃ ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেছেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শুধু তাই নয়, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যুগ থেকে এ পর্যন্ত ইমাম, মুজতাহিদ ও আওলিয়া কিরামগণ এ বিষয়ে উম্মতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। অর্থাৎ ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন এবং পালন করার জন্য উৎসাহিত করেছেন।

(ক)

স্বয়ং আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফে খুশী প্রকাশ করার জন্য বলেন, আদেশ-নির্দেশ করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন,

قل بفضل الله وبر حمته فبذ لك فليفرحوا هو خير مما يجمعون.

অর্থঃ- “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন, কুরআন শরীফ দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে তাঁর প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দিয়েছেন, সেজন্য তারা যেন খুশী প্রকাশ করে। এটাই উত্তম সে সবকিছু থেকে যা তোমরা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করো।” (সূরা ইউনুস-৫৮)

অর্থাৎ তোমরা যত আমল কর তা থেকে সবচাইতে উত্তম আমল হলো নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের জন্য খুশী প্রকাশ করা।

কালামুল্লাহ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম দুয়া করেছিলেন,

ر بنا انزل علينا ما ئدة من السماء تكون لنا عيدى لا ولنا واخر نا واية منك وارز قنا وانت خير الرز قين. قال الله انى منز لها عليكم. فمن يكفر بعد منكم فانى اعذ به، عذابا لاا عذ به احدا من العلمين.

অর্থঃ- “আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশ্তী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি অর্থাৎ খাদ্যসহ খাঞ্চাটি যেদিন নাযিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশী) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন। নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। আল্লাহ পাক বললেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করবো। অতঃপর যে ব্যক্তি সে খাদ্যসহ খাঞ্চাকে ও তার নাযিলের দিনকে ঈদ বা খুশীর দিন হিসেবে পালন করবেনা বরং অস্বীকার করবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিব, যে শাস্তি সারা ক্বায়িনাতের অপর কাউকে দিবনা।” (সূরা মায়িদা-১১৪,১১৫)

হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর উক্ত দুয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করেছিলেন। আর খাদ্যসহ খাঞ্চা ও তার নাযিলের দিনটিকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তাঁর উম্মতদেরকে নিয়ে খুশীর দিনরূপে উদ্যাপন করেছিলেন।

এখানে উল্লেখ্য, সামান্য খাদ্যসহ এক খাঞ্চা ও তার নাযিলের দিনটি যদি হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম এবং তাঁর উম্মতের জন্য খুশীর কারণ ও খুশীর দিন হয়ে যায় এবং সে খাদ্যসহ খাঞ্চা ও তার নাযিলের জন্য খুশী প্রকাশ না করলে এবং তার নাযিলকৃত দিনটিকে খুশীর দিন হিসেবে পালন না করলে কঠিন শাস্তির যোগ্য হয়, তাহলে যিনি সৃষ্টির মুল, যিনি সারা আলমের জন্য রহমত, যাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করা হতোনা এমনকি স্বয়ং হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এরও আগমন হতোনা সেই আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল  মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অজুদ মুবারকের জন্য কিরূপ খুশী প্রকাশ করা প্রয়োজন এবং উনার ‘বিলাদত শরীফ’-এর দিনটিকে কিরূপ খুশীর দিন হিসেবে উদ্যাপন করা উচিত? যদি কেউ নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অজুদ মুবারকের জন্য খুশী প্রকাশ না করে এবং উনার বিলাদত শরীফ-এর দিনে খুশী প্রকাশ না করে, তাহলে সে কিরূপ কঠিন শাস্তির যোগ্য হবে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।

(খ)

হাদীছ শরীফের ছহীহ কিতাব “বুখারী, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক” ইত্যাদি কিতাবে ‘জুমুয়া এবং আরাফার দিনকে’ ঈদের দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি জুমুয়ার দিনকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও মহান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তার কারণ স্বরূপ হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর সৃষ্টি, জান্নাত থেকে যমীনে প্রেরণ এবং আল্লাহ পাক-এর সাক্ষাতে গমন করার কথা বলা হয়েছে। এ তিনটি হচ্ছে মূল কারণ। এছাড়া চতুর্থ কারণ বলা হয়েছে, জুমুয়ার দিনে একটি সময় রয়েছে যে সময় আল্লাহ পাক বান্দার দুয়া কবুল করেন আর পঞ্চম কারণ কারণ বলা হয়েছে, এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।”

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عبيد بن السباق مرسلا قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم فى جمعة من الجمع يا معشر المسلمين ان هذا يوم جعله الله عيدا.

অর্থঃ- “হযরত ওবায়েদ বিন সাব্বাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক জুমুয়ার দিনে বলেন, হে মুসলমান সম্প্রদায়! এটি এমন একটি দিন যাকে আল্লাহ্ পাক ঈদস্বরূপ নির্ধারণ করেছেন।” (ইবনে মাজাহ্, মুয়াত্তা মালিক, মিশকাত)

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه انه قرأ “اليوم اكملت لكم د ينكم” الا ية و عنده يهودى فقال لو نز لت هذه الا ية علينا لاتخذ ناها عيدا فقال ابن عبا س فانها نزلت فى يوم عيدين فى يوم جمعة ويوم عرفة.

অর্থঃ- “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একবার

اليوم اكملت لكم دينكم الاية.

 “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম” এ আয়াত শরীফটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। তখন তাঁর নিকট এক ইহুদী ছিল সে বলে উঠলো, “যদি এই আয়াত শরীফ আমাদের ইহুদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো, আমরা আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে “ঈদ” বলে ঘোষণা করতাম।” এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, এ আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যেদিন একসাথে দু’ঈদ ছিল- (১) জুমুয়ার দিন এবং (২) আরাফার দিন।” (তিরমিযী)

عن ابى لبا بة بن عبد المنذر قال قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الجمعة سيد الايام واعظمها عند الله وهو اعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر فيه خمس خلال خلق الله فيه ادم واهبط الله  فيه ادم الى الارض وفيه توفى الله ادم وفيه ساعة لايسأل العبد فيها شيئا الا اعطاه ما لميسأل حراما وفيه تقوم السا عة ما من ملك مقرب ولا سماء ولا لرض ولا رياح ولا جبال ولا بحر الا هو مشفق من يوم الجمعة.

অর্থঃ- “হযরত আবূ লায়লা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, জুমুয়ার দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ্ পাক-এর নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিত্রের দিন অপেক্ষাও আল্লাহ্ পাক-এর নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে, (১) এ দিনে আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সৃষ্টি করেছেন, (২) এ দিনে তাঁকে যমীনে প্রেরণ করেছেন, (৩) এ দিনে তাঁকে ওফাত দান করেছেন, (৪) এ দিনটিতে এমন একটি সময় রয়েছে যে সময়টিতে বান্দা আল্লাহ্ পাক-এর নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন যে পর্যন্ত না সে হারাম কিছু চায় এবং (৫) এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। এমন কোন ফেরেশ্তা নেই, আসমান নেই, যমীন নেই, বাতাস নেই, পাহাড় নেই, সমুদ্র নেই, যে জুমুয়ার দিন সম্পর্কে ভীত নয়।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত)

হাদীছ শরীফের বিশুদ্ধ কিতাব “মুসতাদ্রাকে হাকিমে” বর্ণিত হয়েছে, “হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম যখন যমীনে আসলেন, মুখতালিফ রেওয়ায়েত তিনি যমীনে এসে দু’শ থেকে তিনশ বছর পর্যন্ত আল্লাহ পাক-এর নিকট কান্নাকাটি, দুয়া, ইস্তিগ্ফার করলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি এই বলে দুয়া করলেন যে,

يا رب اغفرلى بحق محمد سلى الله عليه وسلم قال الله تعالى كيف عرفت محمدا صلى الله عليه وسلم قال ادم عليه السلام لما خلقتنى بيد ك ونفخت فى عن روحك فر فعت رأسى فرأ يت على قوام العرش مكتوبا لا اله الا الله محمد رسول الله فعلمت انك لم تضف الى اسمك الا احب الخلق اليك قال الله صدقت يا ادم لولاه ما خلقتك وفى رواية اخرى ماخلقت سماء ولا ارضا ولا جنا ولا انسا. الخ

অর্থঃ- “আয় আল্লাহ পাক! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় আমার দুয়া কবুল করুন।” আল্লাহ পাক বললেন, “হে আদম আলাইহিস্ সালাম! আপনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিভাবে চিনলেন?” হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম বললেন, “আয় আল্লাহ্ পাক! যখন আপনি আপনার কুদরতী হাত মুবারকে আমাকে সৃষ্টি করলেন এবং আমার মধ্যে রূহ ফুঁকে দিলেন, তখন আমি আমার মাথা উপরের দিকে উত্তোলন করি এবং আরশের স্তম্ভের মধ্যে লেখা দেখি, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্’ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন আমি বুঝলাম যে, যাঁর নাম মুবারক আপনার মুবারক নামের সাথে সংযুক্ত করেছেন তিনি আপনার খুব প্রিয়।” আল্লাহ্ পাক বললেন, “আপনি সত্য কথাই বলেছেন। কারণ তিনি যদি না হতেন অর্থাৎ আমি যদি তাঁকে সৃষ্টি না করতাম তবে আপনাকেও সৃষ্টি করতাম না।” অন্য বর্ণনায় এসেছে, “বেহেশ্ত-দোযখ, আসমান-যমীন, লৌহ-কলম, জিন-ইনসান ইত্যাদি কিছুই সৃষ্টি করতাম না।”

উপরোক্ত হাদীছ শরীফসমূহের আলোকে এখন বলতে হয় যে, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর জন্য যদি শুক্রবারের মর্যাদা রোযার ঈদ ও কুরবানীর ঈদের চেয়ে বেশী হয় তাহলে যেই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি না করলে হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকেও সৃষ্টি করা হতো না, আসমান-যমীন, লৌহ-কলম, জিন-ইনসান, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি কোনকিছুই সৃষ্টি করা হতো না, কোন বিশেষ সময়ও হতো না এবং ক্বিয়ামতও সংঘটিত হতো না

তাহলে সেই আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের দিন, বিছাল শরীফের দিন সোমবার এবং ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফের ফযীলত যে শুক্রবারের চেয়ে কত লক্ষ-কোটি গুণ বেশী হবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

তাই, এ দিনকে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ বা সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ বলা হয়েছে। এবং ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, এ দিন উপলক্ষে খুশী প্রকাশ করা প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফরয।

ছহীহ “বুখারী শরীফ”-এর হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব ও মাহবুব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত লাভের সুসংবাদে কট্টর কাফির আবু লাহাব তার বাঁদী হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে আযাদ করে দিয়েছিলো; যার কারণে আল্লাহ পাক প্রতি সোমবার দিনে তার কবরের আযাব হালকা করে দেন এবং তার ডান হাতের দু’অঙ্গুলী দিয়ে সুমিষ্ট ঠান্ডা পানি প্রবাহিত করেন যা পানে তার বিগত সপ্তাহের আযাব-গযবের কষ্ট দূর হয়ে যায়।

স্মরণযোগ্য যে, আবূ লাহাব কাট্টা কাফির হওয়া সত্বেও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশী প্রকাশ করে স্বীয় বাঁদীকে আযাদ করার কারণে যদি আল্লাহ পাক-এর বিশেষ অনুগ্রহের অধিকারী হতে পারে।

তাহলে যারা উম্মতে মুহম্মদী তাঁরা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ উপলক্ষে যদি নিজেদের সাধ্য-সামর্থ অনুযায়ী খুশী প্রকাশ করেন, তাঁরা যে আল্লাহ পাক-এর অফূরন্ত নিয়ামতের অধিকারী হবেন তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

(গ)

হযরত ছাহাবায়ে কিরামের যুগ থেকে এ পর্যন্ত ইমাম, মুজতাহিদ ও আওলিয়া কিরামগণ উম্মতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। অর্থাৎ ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন এবং পালন করার জন্য উৎসাহিত করেছেন।

যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كنان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشر ون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفا عتى.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদিন তাঁর নিজগৃহে সমবেত ছাহাবীগণকে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশী প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-এর প্রশংসা তথা তাছবীহ্-তাহ্লীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর ছলাত-সালাম তথা দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে তাঁকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশী প্রকাশ করতে দেখে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

حلت لكم شفاعتى.

অর্থাৎ- তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান্ নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহ্মদী পৃষ্ঠা ৩৫৫ )

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى درداء رضى الله تعالى عنه انه، مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عا مر الانصارى وكان يعلم وقائع ولا دته صلى الله عليه وسلم لا بنائه وعشيريه ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفر ون لك من فعل فعلك نجى نجتك.

অর্থঃ- “হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একবার তিনি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম-এর সাথে হযরত আবু আমের আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু-এর ঘরে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি তাঁর সন্তানাদি এবং আত্মীয় স্বজন, জ্ঞাতী-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম-এর বিলাদত শরীফের ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে তাঁকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন।) তিনি লোকজনের বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশী প্রকাশ করতে দেখে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাঁর রহমতের দরজা তোমার জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ তোমার মত এরূপ কাজ করবে, তোমার মত সেও নাযাত (ফযীলত) লাভ করবে।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান্ নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহ্মদী পৃষ্ঠা ৩৫৫)

বুঝা গেলো, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানাতেই ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালিত হয়েছে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে মাহফিলের আয়োজন করেছেন এবং সে মাহফিলে স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত হয়ে শাফায়াত, ক্ষমা, রহমত বর্ষণ ও নাজাতের সুসংবাদ দান করেছেন।

তাঁদের জন্যই কেবল সুসংবাদ নয় বরং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যারা ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করবে তাঁদের জন্যও একই সুসংবাদ দিয়েছেন। যার কারণে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিছাল শরীফের পর খুলাফায়ে রাশিদীনের চার খলীফাই তাঁদের খিলাফতকালে ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের ক্ষেত্রে বিশেষ উৎসাহ ও গুরুত্ব প্রদান করেছেন।

যেমন, এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ “আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

قال ابو بكرن الصد يق رضى الله عنه من أ نفق در هما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم كان رفيقى فى الجنة.

অর্থঃ- “হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” (সুবহানাল্লাহ্)

وقال عمر رضى الله عنه من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم فقد احيا الإسلام.

অর্থঃ- “হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যথাযথ তা’যীম করলো ও তা মর্যাদার সাথে পালন করলো সে মূলতঃ ইসলামকেই পূনরুজ্জীবিত করলো।” (সুবহানাল্লাহ্)

وقال عثمان رضى الله عنه من أنفق درهما على قراءة مو لد النبى صلى الله عليه وسلم فكا نما شهد غزوة بدر وحنتن.

অর্থঃ- “হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে এক দিরহাম খরচ করলো, সে মূলতঃ বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” (সুবহানাল্লাহ্)

وقال على رضى الله عنه وكرم الله وجهه من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم وكان صببا لقرا ئته لا يخرج من الد نيا إلا بالا يمان ويد خل الجنة بغير حساب.

অর্থঃ- “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো ও পালন করলো সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সুবহানাল্লাহ্)

একইভাবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পরবর্তী তাবিয়ীগণের যুগে বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি শতাধিক ছাহাবায়ে কিরামগণের সাক্ষাত পেয়েছিলেন, যিনি ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খলীফা ও ছাত্র ছিলেন। তিনি বলেন,

وددت لو كان لى مثل جبل أحد ذ هبا فانفقته على قرائه مولد النبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থঃ- “আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে তা মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ব্যয় করতাম।” (সুবহানাল্লাহ্)

এরপরে মাযহাবের ইমামগণও ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করেছেন। যেমন বর্ণিত রয়েছে,

قال الا مام الشا فعى رحمه الله من جمع لمولد النبى صلى الله عليه وسلم إخوانا وهيأ طعاما واخلى مكا نا وعمل إحسانا وصار سببا لقرائته بعثه الله يوم القيا مة مع الصد يقين والشهداء والصا لحين ويكون فى جنات النعيم.

অর্থঃ- “হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে লোকজন একত্রিত করলো এবং খাদ্য তৈরী করলো ও জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং উত্তমভাবে (তথা সুন্নাহ ভিত্তিক) আমল করলো তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক, শহীদ, ছালিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং তাঁর ঠিকানা হবে জান্নাতে নাঈমে।” (সুবহানাল্লাহ্)

এরপর আল্লাহ পাক-এর বিশিষ্ট ওলী হযরত ইমাম মারূফ কারখী রহমতুল্লাহি আলাইহি ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের ফযীলত বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন,

من هيا طعا ما لا جل قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم وجمع اخو انا واو قد سرا جا ولبس جد يدا وتبخر وتعطر تعظيما لمولد النبى صلى الله عليه وسلم حشره الله يوم القيا مة مع الفر قة الاولى من النبيين وكان فى اعلى عليين.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খাদ্য প্রস্তুত করবে এবং মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে মুসলমান ভাইদের একত্রিত করবে, (আলো দানের উদ্দেশ্যে) প্রদীপ বা বাতি জ্বালাবে, নতুন পোশাক পরিধান করবে, (সুগন্ধির উদ্দেশ্যে) ধুপ জ্বালাবে এবং আতর-গোলাপ মাখবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তার হাশর-নশর করবেন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রথম দলের সাথে এবং সে সুউচ্চ ইল্লীনে অবস্থান করবে।” (সুবহানাল্লাহ)

এরপর মুসলমানদের মধ্যে পৃথিবীতে সবচেয়ে যিনি বেশী কিতাব লিখেছেন। যিনি তাঁর যামানায় মুজাদ্দিদ ও সুলতানুল আরিফীন ছিলেন। হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

قال سلطان العارفين الا مام جلال الدين السيوطى قدس الله سره ونور ضر يحه فى كتابه المسمى بالوسا ئل فى شرح الشمائل ما من بيت أو مسجد أومحلة قرئ فيه مولد النبى صلى الله عليه وسلم إلا حفت الملائكة ذلك البيت أو المسجد أو المحلة وصلت الملائكة على أهل ذلك المكان وعمهم الله تعالى بالر حمة والر ضوان وأما المطوقون با لنور يعنى جبرا ئيل وميكا ئيل وإسرا فيل وعزرائيل عليهم السلام فإ نهم يصلون على من كان سببأ لقرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থঃ- “সুলতানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “ওসায়িল ফী শরহি শামায়িল” নামক কিতাবে বলেন, যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় বা মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্যাপন করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাক-এর ফেরেশ্তাগণ বেষ্টন করে নেন। আর তাঁরা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক তাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশ্তা, অর্থাৎ হযরত জিব্রাঈল, মীকাঈল, ইসরাফিল ও আজরাইল আলাইহিমুস্ সালাম মীলাদ শরীফ পাঠকারীর উপর বা মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্যাপনকারীর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন। (সুবহানাল্লাহ্)

এরপর এই উপমহাদেশে যিনি হাদীছ শাস্ত্রের প্রচার-প্রসার করেছেন, ইমামুল মুফাস্সিরীন ওয়াল মুহাদ্দিছীন ওয়াল ফুক্বাহা হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

من عظم ليلة مولده بما لمكنه من التعطيم والاكرام كان من الفايزين بدار السلام.

অর্থঃ- যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ দিবসকে তা’যীম করবে এবং সে উপলক্ষে খুশী প্রকাশ করবে সে চিরশান্তিময় জান্নাতের অধিকারী হবে।”

কুরআন ও সুন্নাহর দলীলভিত্তিক উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার জন্য স্বয়ং আল্লাহ পাক বলেছেন এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, খুলাফায়ে রাশিদীন, ছাহাবায়ে কিরামসহ ইমাম, মুজতাহিদ, ফক্বীহ সকলেই ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন এবং পালন করার জন্য উম্মাহকে উৎসাহ প্রদান করেছেন।

সুতরাং, ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা ফরয-ওয়াজিব এটা কুরআন-সুন্নাহরই ফতওয়া। এ ফতওয়ার বিরোধিতা করা অবশ্যই কুফরী। যারা এর বিরোধিতা করবে তারা অবশ্যই কাফিরের অন্তর্ভুক্ত হবে।

(দলীলসমূহঃ ১)  আহকামুল কুরআন জাস্সাস, (২) রুহুল মায়ানী, (৩) রুহুল বয়ান, (৪) কুরতুবী, (৫) কবীর, (৬) তাবারী, (৭) যাদুল মাছীর, (৮) মাযহারী, (৯) ইবনে কাছীর, (১০) খাযিন, (১১) বাগবী, (১২) দুররুল মনছূর, (১৩) ইবনে আব্বাস, (১৪) বুখারী, (১৫) মুসলিম (১৬) আহমদ,  (১৭) তিরমিযী, (১৮) আবূ দাউদ, (১৯) ইবনে মাজাহ্ (২০) মুয়াত্তা মালিক, (২১) মুস্তাদরাকে হাকিম, (২২) দারিমী, (২৩) বাইহাক্বী, (২৪) মিশকাত,  (২৫) ফতহুল বারী, (২৬) উমদাতুল কারী, (২৭) ইরশাদুস সারী, (২৮) ফতহুল মুলহিম, (২৯) শরহে নববী, (৩০) শরহে তিরমিযী, (৩১) আওনুল মা’বুদ, (৩২) বযলুল মাযহুদ, (৩৩) মিরকাত, (৩৪) আশয়াতুল লুময়াত, (৩৫) লুময়াত, (৩৬) শরহুত্ ত্বীবী, (৩৭) তালিকুছ্ ছবীহ, (৩৮) মুযাহিরে হক্ব, (৩৯) কিতাবুত্ তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান্ নাযীর, (৪০) সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা, (৪১) দুররুল মুনাজ্জাম (৪২) হাবীউল ফতওয়া, (৪৩) মাওলুদুল কবীর, (৪৪) ইশবাউল কালাম, (৪৫) মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, (৪৬) আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম, (৪৭) খছায়িছুল কুবরা, (৪৮) ওসায়িল ফী শরহিশ্ শামায়িল, (৪৯) রিসালায়ে মওদুদ, (৫০) মাসাবাতা বিস্ সুন্নাহ্, (৫১) মকতুবাত শরীফ, (৫২) হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী, (৫৩) মজমুয়ায়ে ফতওয়া ইত্যাদি।}

  মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।

মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন, মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।

সুওয়াল:  ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খণ্ডন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো-

….. ৩. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম একটি নিম্ন শ্রেণীর কাজকেও বর্ণনা করতে সংকোচবোধ করেননি। আর মুনাজাত এমন এক কাজ যা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযান্তে প্রকাশ্যভাবে পাঁচবার যদি করতেন তবে কেন তার কোন বর্ণনা করা হয়নি। …….

এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।

জাওয়াব: “ফরয নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার স্বপক্ষে কোন বর্ণনা নেই” হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন। কারণ পূর্ববর্তী সংখ্যায় প্রদত্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমানিত হয়েছে যে, “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করার স্বপক্ষে একটি, দুটি নয় বরং অসংখ্য ফে’লী ও ক্বওলী হাদীছ শরীফ রয়েছে। যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজেও ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন। আর হাদীছ শরীফে রয়েছে বলেই অনুসরনীয় ইমাম, মুজতাহিদ তথা ফক্বীহগণ নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে এমনকি হাটহাজারী মৌলভীদের মুরুব্বীরা তাদের কিতাবে “ফরজ নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব-সুন্নত বলে” ফতওয়া দিয়েছেন।

(ধারাবাহিক)

উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরাসহ সমস্ত দেওবন্দী মৌলভীরা যাকে হক্কানী আলিম, উস্তাজুল আসাতেযা, মুহাদ্দিছগণের মাথার তাজ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ বলে মুখে ফেনা তুলে তাদের সেই কথিত শায়খুল হাদীছ আযীযুল হক্ব তার লিখিত “মোসলেম শরীফ ও অন্যান্য হাদীছের ছয় কিতাব” নামক গ্রন্থের ২৭১-২৯০ পৃষ্ঠায় ফরজ নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা যে খাছ সুন্নত ও ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত তা ছাবেত করেছে। নিম্নে ‘মুনাজাত’ সম্পর্কিত তার সম্পূর্ণ বক্তব্যটি উল্লেখ করা হলো।

(চতুর্থ অংশ)

মুনাজাত বিরোধীদের আরও একটি আপত্তি হইলো, সকলের একত্রে মুনাজাত করা। কিন্তু এই আপত্তি মোটেই সমর্থনীয় নয়।

সমবেত মুনাজাত শরীয়ত মতে অতি সুন্দরই বটেঃ

ইমাম ছাহেবের সাথে সকলে দু’হাত উঠিয়ে উত্তোলন করে দোয়ায় শরিক হবে। এটাকে আপত্তিজনক মনে করা নিতান্তই বাতুলতা। এর পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণাদি রয়েছে। যেমন, ‘আহসানুল ফতওয়া’ এবং ‘মাআরেফুস্ সুনান’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,

لا يجتمع ملأفيد عو بعضهم ويومن بعضهم الا اجابهم

সমবেত জামায়াতে কিছু লোক দোয়া করলো, কিছু লোক আমীন বললো, আল্লাহ পাক অবশ্যই এই দোয়া কবুল করেন।”

প্রিয় পাঠক! নিজেই বিচার করুন। নফল, ফরয বা কোন সময়ের নির্ধারণ ছাড়া সমবেত দোয়া সম্পর্কে কবুল হওয়ার সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। এস্থলে খুঁটি ধরে থাকা যে, ফরয নামাযের পরে দোয়ার কথা ত বলা হয়নি এরূপ আপত্তি কি ঠিক? যখন নির্ধারণ ছাড়া শুধু সমবেত দোয়া বলা হয়েছে তখন এতে ফরয নামাযের পর সমবেত দোয়াও শামিল থাকবে। ফরয নামায ত দুয়া কবুল হওয়ার বিশেষ সময় ও স্থান।

সমবেত দুয়ায় সাধারণ লোকদের বিশেষ উপকারের সুযোগ থাকে। সকলের মধ্যে যদি আল্লাহ তায়ালার একজন বিশিষ্ট বান্দা থাকেন যার দুয়া আল্লাহ ফেরত দিবেন না, অবশ্যই কবুল করবেন,; সেই ক্ষেত্রে আল্লাহর ঐ প্রিয় বান্দার ওসিলায় তার দুয়ার সঙ্গে সকলের দুয়াই কবুল হয়ে যাওয়ার আশা করা যায়। এমনকি নিজেদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত ভাল লোককেই ইমাম বানানো হয়, তার দুয়ার সাথে সাধারণ মানুষ শুধু আমীন, আমীন বললেও তারা সকলেই ঐ দুয়ায় শামিল গণ্য হবে। উল্লিখিত হাদীছ শরীফে স্পষ্টরূপেই তা ব্যক্ত হলো। এতদ্ভিন্ন বুখারী শরীফ, ১০৭ পৃষ্ঠায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, ‘আমীন’ দুয়াই বটে।

পবিত্র কুরআন শরীফ ১১ পারা ১৪ রুকুতে ফিরআউনের ধ্বংসের জন্য হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও হযরত হারুন আলাইহিস সালাম-এর বদদুয়ার বর্ণনা রয়েছে। সেই বদদুয়ার মূল বাক্যসমূহকে আল্লাহ তায়ালা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম-এর বাক্যরূপে উল্লেখ করার পর হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও হযরত হারুন আলাইহিস সালাম উভয়কে সান্তনা দানে বলেছেন, “ তোমাদের উভয়ের বদদুয়া কবুল করা হলো। তাফসীরকারগণ লিখেছেন, হযরত মূসা আলাইহি সালাম ও হযরত হারুন আলাইহিস সালাম উভয়ে সমবেতভাবে মুনাজাত করেছিলেন- হযরত মুসা আলাইহিস সালাম মূল বদদুয়া পাঠ করে যাচ্ছিলেন, আর হযরত হারুন আলাইহিস সালাম আমীন, আমীন বলছিলেন। শুধু আমীন বলা দ্বারাই আল্লাহ তায়ালা এ বদদুয়া হযরত হারুন আলাইহিস সালাম-এর পক্ষে গণ্য করা পূর্বক উভয়কে সম্বোধন করে বলেছেন-

قد اجيبت دعوتكما

 “আপনাদের উভয়ের বদদুয়া কবুল করা হলো। সুতরাং শুধু ‘আমীন’ বলে পূর্ণ দুয়ার অধিকারী সাব্যস্ত হওয়া নিতান্তই সুস্পষ্ট বটে।

বর্তমান যুগে সমবেত দুয়ার ত বিশেষ প্রয়োজন। কারণ, ইসলামের শিক্ষা হতে বঞ্চিত জন-সাধারণ দুয়া-কালামে অজ্ঞ। বিশষতঃ স্বয়ং আল্লাহ পাক এবং তাঁর রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক রকম সুন্দর সুন্দর, বরং জরুরী দুয়া শিক্ষা দিয়েছেন। ইলম-কালামহীন লোকগণ সেই সব দুয়া মোটেই জানে না, তাদের জন্য উহা শিক্ষা করে নেওয়ার বাস্তবতা যে, নাই তাও সকলেরই জানা। এমতাবস্থায় ঐসব অজ্ঞ মুসলমানরা তাদের ইমামের সঙ্গে সমবেত দুয়ায় অন্ততঃ আমীন, আমীন বলে শরীক হওয়ার সুযোগকে হারালে আল্লাহর দরবারে দৈনন্দিন তাদের দুয়ার কী ব্যবস্থা হবে? পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে তারা প্রতি দিন পাঁচ বার দুয়ার যে সহজ সুলভ সুযোগ পায় এই সৌভাগ্য হতে তাদের বঞ্চিত করা ভাল কাজ না মন্দ কাজ তা পাঠকই চিন্তা করবেন। আমাদের মুরুব্বি আলিম-বুজুর্গগণ দ্বারা যে, আমাদের সারা দেশে পাঞ্জেগানা এবং জুমুয়া ও ঈদের নামাযের জামায়াতের সঙ্গে মুনাজাত চালু হয়েছে তা জনগণকে উক্ত সৌভাগ্যের অংশীদার করার জন্যই ছিল যার প্রতি স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আকৃষ্ট করে গেছেন। উহা বন্ধ করা বস্তুতঃ জনসাধারনকে একটি বিশেষ নেক আমল করার সৌভাগ্য হতে বঞ্চিত করা।

জামায়াতের নামাযে মুনাজাত করার প্রমাণে দ্বিতীয় আরও একটি হাদীছ শরীফ পেশ করা হচ্ছে। হাদীছ শরীফটি তিরমিযী শরীফ ২-৪৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে, যথাস্থানে উহার অনুবাদ হবে; মুনাজাতের অংশটির উদ্ধৃতি এস্থানে দেয়া হলো।

হাদীছ শরীফঃ হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

ولا يؤم قوما فيخص نفسه بدعوة دونهم فان فعل فقد خانهم.

 “কোন ব্যক্তি লোকদের ইমাম হলে মুক্তাদীদের বাদ দিয়ে শুধু নিজের জন্য দুয়া করবে না। যদি তা করে, তবে সেই ইমাম মুক্তাদীদের প্রতি খিয়ানতকারক বিশ্বাসঘাতক সাব্যস্ত হবে।”

পাঠক! আলোচ্য হাদীছ শরীফে ইমামের দুয়া বলতে নামাযের আভ্যন্তরীন দুয়া কখনও উদ্দেশ্য হতে পারে না। কারণ, নামাযের মধ্যে “সালামের পূর্বে তাশাহহুদের দুয়া’ পরিচ্ছেদে ৮৯৪ নং হতে ৯০২ নং পর্যন্ত মাত্র একটি হাদীছ শরীফ ছাড়া অবশিষ্ট ৮ হাদীছ শরীফেই যে সব দুয়ার বর্ণনা রয়েছে উহা সবই ইমামের নিজের জন্য রূপের। বিশেষতঃ স্বয়ং আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নামাযের মধ্যে পড়ার যে দুয়া শিক্ষা দিয়েছিলেন, যা বুখারী শরীফসহ হাদীছ শরীফের সব কিতাবেই আছে; সেই দুয়াও একমাত্র প্রত্যেকের নিজের জন্যই; উক্ত দুয়া ইমামও পড়বে এবং তা শুধু নিজের জন্যই হবে। সুতরাং আলোচ্য হাদীছ শরীফে ইমামের যে দুয়ার কথা রয়েছে উহা কখনও নামাযের ভিতরস্থ দুয়া সম্পর্কে হতে পােের না, উহা অবশ্যই নামায সমাপ্তে হবে এবং তাই প্রচলিত মুনাজাত। লক্ষ্যণীয় বিষয় যে, অত্র হাদীছ শরীফে জামায়াতের সাথে ফরজ নামায সম্পর্কীয় দুয়ার বিষয়ই রয়েছে, নতুবা ইমাম হওয়ার উল্লেখ কেন হবে?

মুনাজাত বিরোধীদের দুটি চটকদার যুক্তি আছে মনে হয়, যা আপাত দৃষ্টিতে চটকদার বলে কিন্তু গভীরভাবে মূল্যায়ন করলে তার অন্ত:সারশূন্যতা প্রতিভাত হয়। প্রথম কথা- নামাযের পরে আমাদের প্রচলিত মুনাজাত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুদীর্ঘ জীবনে তার আমলে তথা কর্মে ঐরূপ মুনাজাত বর্ণিত পাওয়া যায় না, এ প্রচারণার দ্বারা মুনাজাতের প্রতি মনে দ্বিধা সৃষ্টি হওয়া নিতান্তই স্বাভাবিক। এই কথাটি আপাত দৃষ্টিতে যুক্তি সংগত মনে হয়, কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে কথাটিই সত্য নয়।

কোন আলিম যিনি হাদীছ শরীফ ও ফিকাহ শাস্ত্রের নিয়ম-বিধি অবগত আছেন তিনি এই উক্তি মোটেই করতে পারেন না। বিষয়টি বিশ্লেষণরূপে করে ও দলীল সহযোগে করা হবে যাতে আলেম নন এরূপ লোকেরাও গভির দৃষ্টি ব্যয়ে বুঝিতে পারবেন। (চলবে)

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

সুওয়াল:  হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

৫. “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, চার মাযহাবের ইমাম রহতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে নিয়ে শুরু করে ৭০০ (সাতশত) বছর পর্যন্ত কোন নবী প্রেমিক নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে বা মুহববতে ক্বিয়াম করেননি।”

এখন আমার সুওয়াল হলো, মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব:   “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, চার মাযহাবের ইমাম রহতুল্লাহি আলাইহিমগণ সম্পর্কে হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ডাহামিথ্যা, জিহালতপূর্ণ ও দলীলবিহীন। কারণ মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর বিগত সংখ্যায় প্রমাণ করা হয়েছে যে, সরাসরি হাদীছ শরীফেই উল্লেখ আছে যে, স্বয়ং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর  তা’যীমার্থে বা সম্মানে যথাযথ আদবের সহিত  দাঁড়িয়েছেন বা ক্বিয়াম করেছেন।

সুতরাং যেখানে হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত আছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর  তা’যীমার্থে বা সম্মানে যথাযথ আদবের সহিত  দাঁড়িয়েছেন বা ক্বিয়াম করেছেন। সেখানে আর কোন দলীলের অপেক্ষা রাখেনা।

তারপরেও কম আক্বল ও কম বুঝদের জন্য উল্লেখ্য যে, এরপরেও অনেক দলীল-আদিল্লাহ্ দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, মাযহাবের ইমাম, মুজতাহিদীন, সলফে-ছালিহীন, বুযুর্গানেদ্বীন, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ  নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে বা মুহববতে মীলাদ-ক্বিয়াম করেছেন।” যা মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর বিগত সংখ্যায় প্রমাণ করা হয়েছে। এ সংখ্যায় আরো কিছু দলীল আদিল্লাহ্ নিম্নে পেশ করা হলো-

  ইজমা, ক্বিয়াস তথা ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার  কিতাব থেকেও মীলাদ-ক্বিয়ামের অনেক প্রমাণ রয়েছে

যেমন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীম করা সম্পর্কে আল্লামা কাজী আয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “কিতাবুশ শিফায়” উল্লেখ করেন,

اعلم ان حرمة النبى صلى الله عليه وسلم يعد موته وتوقيره وتعظيمه لازم كما كان حال حيا ته وذالك عند ذكره صلى الله وذكر حديثه وسنته وسماع اسمه وسيرته.

অর্থঃ- “জেনে রাখ! সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাতের পর তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা বা তা’যীম-তাক্রীম করা ঐরূপই ওয়াজিব, যেরূপ হায়াত মুবারকে ওয়াজিব ছিল। কাজেই তাঁর বরকতময় জীবনী শ্রবণকালে, পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকালে, নাম মুবারক উচ্চারণকালে ও তাঁর বরকতময় ও উৎকৃষ্টতম আখলাকের কথা শ্রবণকালে, তাঁর প্রতি তা’যীম-তাক্রীম বা সম্মান প্রদর্শন করা ওয়াজিব।”

আর এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, মীলাদ শরীফে যে ক্বিয়াম করা হয়, তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন বা তা’যীম-তাক্রীম করার জন্যেই করা হয়।

আর ১৫৮তম সংখ্যার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ছাহেব, গাঙ্গুহী ছাহেবসহ সকল ওলামায়ে দেওবন্দের পীর ও মুর্শিদ শায়খুল আরব ওয়াল আ’যম, আল্লামা হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বয়ং নিজেই মীলাদ-ক্বিয়াম করেছেন, যা তিনি তাঁর “হাফ্তে মাসায়েল ও মরকুমাতে ইমদাদিয়া” কিতাবে  উল্লেখ করেছেন।

তাছাড়া বড় কাটারা ও লালবাগ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী ছাহেব ক্বিয়াম সম্পর্কে তাঁর “তাসাউফ তত্ত্ব” কিতাবে লিখেন যে, “মীলাদ শরীফের মধ্যে ক্বিয়াম করা আদব, শরাফত বা ভদ্রতা।”

 উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীমার্থে বা সম্মানে   ক্বিয়াম করার প্রমাণ সরাসরি হাদীছ শরীফে রয়েছে। অর্থাৎ হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত যে, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হযরত ছাহাবায়ে কিরামকে তা’যীমার্থে ‘ক্বিয়াম’ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীমার্থে ‘ক্বিয়াম’ করেছেন। শুধু তাই নয়, তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, মাযহাবের ইমাম  ইমাম-মুজতাহিদীন, সলফে-ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ক্বাওল ও আমল দ্বারাও তা’যীমী ক্বিয়াম প্রমাণিত। যা বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্-ফতওয়ার কিতাবসহ অন্যান্য অনেক কিতাবেই উল্লেখ আছে।

তাহলে এতসব সুস্পষ্ট ও অকাট্য দলীল-আদিল্লাহ্ থাকার পরও কি করে একথা বলা সঠিক হতে পারে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ, তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, চার মাযহাবের ইমাম রহতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে নিয়ে শুরু করে ৭০০ (সাতশত) বছর পর্যন্ত কোন নবী প্রেমিক নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে বা মুহববতে ক্বিয়াম করেননি।”  (নাউযুবিল্লাহ)

কাজেই, ক্বিয়াম সম্পর্কিত  হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা, মনগড়া, দলীলবিহীন, কুফরী ও প্রতারণামূলক।

প্রদত্ত সুওয়াল-জাওয়াবের টীকা ভাষ্যঃ

(ক) বিগত সংখ্যায় বলা হয়েছে, মিশকাত শরীফে বর্ণিত হাদীছ দ্বারাই প্রমাণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সম্মানে দাঁড়ানোকে অপছন্দ করেননি। বরং মিশকাত শরীফে বর্ণিত হাদীছ শরীফেই উল্লেখ আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ক্বিয়াম করেছেন বা দাঁড়িয়েছেন এবং তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে দাঁড়ানো বা ক্বিয়াম করার ব্যাপারে নির্দেশও দিয়েছেন।

(খ) বর্তমান সংখ্যায়  দেয়া জবাবের মূল কথা হলো, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ, তাবিয়ীন, তাবে তাবিয়ীন, মাযহাবের ইমাম, মুজতাহিদীন, খলফে ছালিহীন, বুযুর্গানে দ্বীন, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাঁরা সকলেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানেই বা মুহববতে মীলাদ-ক্বিয়াম করেছেন।

(গ) হাটহাজারীর মৌলভীরা বলেছে, “পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয। কারণ, তারা সামনে উপস্থিত। আর মীলাদে দাঁড়ানো জায়িয নেই। কারণ, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত।”  (নাউযুবিল্লাহ) তাদের উক্ত বক্তব্য যে সম্পূর্ণই মনগড়া ও জিহালতপূর্ণ তা  পরবর্তী সংখ্যায় প্রমাণ করা হবে ইনশাআল্লাহ। (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়াল:   অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-

জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না।  …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো।  উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

….. “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” ….

কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব:  প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

(ধারাবাহিক)

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলো উল্লেখ করার সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো।

প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ

বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ২২

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা প্রচার করে থাকে যে, “পীর ছাহেবদের দ্বারা দ্বীনের ব্যাপক খেদমত কখনোই সম্ভব নয়। তাই তারা পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া বা ইল্মে তাছাউফ চর্চা করাকে মোটেও গুরুত্ব দেয় না। একথার সত্যতা তাদেরই লোক দ্বারা লিখিত “আয়নায়ে তাবলীগ” নামক কিতাবের (লেখক- মুহম্মদ দাউদ আলী) নিম্নোক্ত বক্তব্য দ্বারাও প্রমাণিত হয়। তারা লিখেছে- “তাবলীগের মধ্যে পীর-মুরীদীর প্রচলন সম্ভব নহে, কেননা পীর-মুরীদীর দ্বারা সাধারণতঃ গন্ডিবদ্ধ একটা দলের সৃষ্টি হইয়া থাকে। ….. এইরূপ একটা দলের দ্বারা ব্যাপক কোন কাজ করা সম্ভব নহে। …. তাই বাধ্য হইয়া তাবলীগ এই পথ এড়াইয়া চলিয়া থাকে।”

(তৃতীয় অংশ)

চতুর্থতঃ বলতে হয়, তারা যে লিখেছে, “পীর-মুরীদীর দ্বারা গন্ডিবদ্ধ দলের সৃষ্টি হয় যা দ্বারা ব্যাপকভাবে দ্বীনের কাজ করা সম্ভব নয়।”

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের এ বক্তব্যটিও সম্পূর্ণ অবান্তর, জিহালতপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর। সাথে সাথে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম ও পীর-মাশায়িখগণের প্রতি অপবাদ স্বরূপ।

কারণ পীর-মুরীদী বা তাছাউফ নতুন উদ্ভূত কোন বিষয় বা আমল নয়। বরং তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমল দ্বারাই অকাট্যভাবে প্রমাণিত। যেমন তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে বাইয়াত করিয়েছেন এবং ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফের তা’লীম দিয়েছেন।

তদ্রুপ পীর-মাশায়িখগণ রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সেই ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফের ওয়ারিছ হওয়ার কারণে অর্থাৎ হাক্বীক্বী নায়িবে রসূল হওয়ার কারণে তারা রসূলের সুন্নত অনুকরণে বাইয়াত করান এবং ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাছাউফের তা’লীম দেন।

শুধু তাই নয়, সাইয়্যিদুল মুরাসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও নববী সুন্নতের ধারায় বাইয়াত করেছেন।

যেমন হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বাইয়াত গ্রহণ করেন।

অনুরূপ তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন অর্থাৎ খাইরুল কুরুনের সকলেই বাইয়াত হওয়ার সে নববী তরীক্বা অব্যাহত রাখেন। বর্তমান পীর-মাশায়িখগণও সে নববী তরীক্বার পূর্ণ অনুসারী।

অতএব, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের এ বক্তব্য- “পীর-মুরীদীর দ্বারা একটি গন্ডিবদ্ধ দলের সৃষ্টি হয়” সরাসরি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম, হযরত তাবিয়ীন ও তাবে-তাবিয়ীনগণের প্রতি অপবাদ স্বরূপ।

কেননা তাদের বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় যে, উল্লিখিত সকলেই বাইয়াত করার কারণে বা ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফের তা’লীম, দেয়ার কারণে একটি গন্ডিবদ্ধ দলের সৃষ্টি করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ্ মিন্ যালিক)

মূলতঃ এটি সম্পূর্ণই কুফরীমূলক বা ঈমান হানীকর বক্তব্য বা আক্বীদা।

অতঃপর প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বত্তব্য হলো, পীর-মুরীদীর দ্বারা ব্যাপক কাজ করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ পীর-মাশায়িখগণের দ্বারা ব্যাপকভাবে দ্বীনের খেদমত করা সম্ভব নয়।” তাদের এ বক্তব্যটিও পীর-মাশায়িখগণের প্রতি মিথ্যা অপবাদের শামিল হওয়ার সাথে সাথে ইতিহাসকে অস্বীকার করার শামিল।

কারণ, দ্বীনের খিদমত বা দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রে পীর-মাশায়িখগণের অবর্ণণীয় অবদানের ইতিহাস কারো পক্ষে কস্মিনকালেও অস্বীকার করা সম্ভব নয়।

আর ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় যে, পৃথিবীতে পীর-মাশায়িখগণের ওসীলাতেই দ্বীন টিকে রয়েছে এবং সবসময় টিকে থাকবে। কারণ যখনই মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে, হিদায়েত থেকে দূরে সরে গেছে এবং বিদ্য়াত-বেশরা ও ওলামায়ে ‘ছু’ বা দুনিয়ালোভী আলিমদের কারণে যখন দ্বীনের ভিতর নানান বিদ্য়াত-বেশরা ও কুফরী মতবাদ প্রবেশ করেছে, তখনই আবির্ভাব ঘটেছে, মহান মুজাদ্দিদ, পীর-মাশায়িখগণের। যারা অক্লান্ত কোশেশ, অবর্ণনীয় রিয়াজত-মুশাক্কাত বা ব্যাপক তাবলীগ, তা’লীম ও তালক্বীণের মাধ্যমে মানুষদেরকে করেছেন হিদায়েত, দেখিয়েছেন হক্ব মত-পথ এবং দ্বীনকে করেছেন সম্পূর্ণ বিদ্য়াত-বেশরা ও কুফরীমুক্ত।

যেমন, এ প্রসঙ্গে অসংখ্য অগণিত পীর-মাশায়িখগণের মধ্যে কয়েকজনের অবদানের ইতিহাস আলোচনার অপেক্ষা রাখে।

          প্রথমেই বলতে হয় মায্হাবের ইমামগণের কথা। যাঁরা ইল্মে ফিক্বাহ্র ভিত্তি স্থাপনকারী, অর্থাৎ যাঁদের অক্লান্ত কোশেশের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি ইল্মে ফিক্বাহ্ ভিত্তিক চারটি মায্হাব। যার ফলে সকলেই অতি সহজেই কুরআন-সুন্নাহ্কে পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে পারছি। অথচ তাঁদের প্রত্যেকেই পীর-মুরীদী করেছেন। যেমন ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পীর ছাহেব ছিলেন হযরত ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি  ও হযরত ইমাম জাফর ছাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পীর ছাহেব ছিলেন হযরত ইমাম নাফে’ রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পীর ছাহেব ছিলেন হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি। হযরত ইমাম আহ্মদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পীর ছাহেব ছিলেন হযরত আবু হামযাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি  এবং হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

অনুরূপ ছাহেবাইন  অর্থাৎ হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি  ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং বিখ্যাত ছূফী, হযরত ইমাম দাউদ ত্বাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি সকলেই ছিলেন ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ছাত্র মুরীদ ও খলীফার অন্তর্ভূক্ত।  (চলবে)

মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব

গুলবাগ, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ্ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়। ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ।”  (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৮০)

এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা  তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ “আযানের পর পুনরায় মুছল্লীদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। শুধু তাই নয় বরং তার পেশকৃত দলীল “ফতোয়া দারুল উলুম”-এর ফতওয়াও শুদ্ধ নয়। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। আর তাদের এ ফতওয়া গুমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গোমরাহ করার  জন্য যথেষ্ট। কারণ আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়নি। বরং আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা উত্তম বলা হয়েছে।  অর্থাৎ আযানের পর  পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা  তাছবীব করার জন্য التنحنح (গলা খাকড়ানো), الصلاة الصلاة  (নামায! নামায!) ও قامت قامت  (ক্বামাত! ক্বামাত!) ইত্যাদি শব্দ দিয়ে আহবান করা বা তাছবীব করা উত্তম।

(ধারাবাহিক)

 যেমন,  “বাহ্রুর রায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৬০-২৬১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

التثويب العود الى الاعلام بعد الاعلام… انه ليس له لفظ يخصه بل تثويب كل بلد على ما تعارفوه اما بالتنحنح أو بقوله الصلاة الصلاة أو قامت قامت لأ نه للمبا لغة فى الاعلام انما يحصل بما تعارفوه… انه لا يخص صلاة بل هو فى سائر الصلوات وهو اختيار المتأ خرين لزيادة غفلة الناس.

অর্থঃ-  “তাছবীব বলা হয় (আযানের মাধ্যমে)  জানিয়ে দেয়ার পর পুনরায় মানুষদেরকে (আযান ও ইক্বামতের মাঝে) নামাযের কথা জানিয়ে দেয়া। …আর তাছবীব করার জন্য নির্দিষ্ট কোন শব্দ নেই। বরং প্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ দিয়ে  তাছবীব করবে।  যেমন  التنحنح (গলা খাকড়ানোর মাধ্যমে), الصلاة الصلاة  (নামায! নামায!) ও قامت قامت (ক্বামাত ! ক্বামাত!) ইত্যাদি শব্দ দিয়ে তাছবীব করবে বা আহবান করবে।  কেননা  তাছবীবের উদ্দেশ্য হলো মানুষদেরকে  ভাল করে নামাযের কথা জানিয়ে দেয়া।  আর ইহা যে স্থানে যেভাবে  পরিচিত শব্দ আছে, সেভাবেই জানিয়ে দেয়াই যথেষ্ট। … সুতরাং এই তাছবীব কোন নামাযের জন্য নির্দিষ্ট নয়। বরং সমস্ত নামাযেই তাছবীব করবে। এটাই উলামায়ে মুতাআখ্খেরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মত। কেননা মানুষের গাফলতি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই সকল নামাযেই তাছবীব করা হয়।

 “মুলতাকাল আবহুর” কিতাবে উল্লেখ আছে,

واستحسن المتأخرون التثويب فى كل الصلوات

অর্থঃ- “উলামায়ে মুতাআখ্খেরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ প্রত্যেক  নামাজেই  “তাছবীব” করাকে মুস্তাহ্সান বা উত্তম বলেছেন।

“হাশিয়াতুত তাহ্তাবী আ’লা দুররিল মুখতার”  কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৮৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ويثوب… بين الاذان والاقامة بان يمكث بعد الاذان قدر عشرين اية ثم يثوب ثم يمكث كذلك ثم يقيم…

অর্থঃ- “আযান ও ইকামতের মাঝে মাগরিব ব্যাতীত প্রত্যেক নামাযের তাছবীব করবে এভাবে যে, আযানের পর নামাযে বিশ আয়াত পড়া যায় এ পরিমান সময় অপেক্ষা  করে  তাছবীব করবে । অতঃপর অনুরূপ (নামাযে বিশ আয়াত পড়া যায় এ পরিমান) সময় অপেক্ষা  করে ইক্বামত দিবে।

“শরহে ইলইয়াছ” কিতাবে উল্লেখ আছে,

التثويب …بين الاذان والاقامة حسن فىكل صلوة الافى صلوة المغرب

অর্থঃ- “মাগরিবের নামায ব্যাতীত সকল নামাযেই আযান ও ইক্বামতের মাঝে তাছবীব করা উত্তম।

          “শরহুন নিকায়া”  কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৩৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

والتثويب وهو الاعلام بالصلوة بين الاذان والاقامة بحسب ما تعار فه اهل كل بلد من لفظه حسن فى كل صلوة لتوانى الناس فى الامور الد ينية.

অর্থঃ-“আযান ও ইক্বামতের মাঝেঞ্জপ্রত্যেক শহরের পরিচিত শব্দ অনুযায়ী পুনরায় মানুষদেরকে নামাযের কথা জানিয়ে দেয়াকেই তাছবীব বলে। আর দ্বীনী কাজে মানুষের গাফলতী তথা শিথিলতার কারণে   প্রত্যেক  নামাযেই  “তাছবীব” করা উত্তম।

“গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اذان اور اقامت مین بلاوے سب نمازیون کو بدون تخصیص امیر وغیرہ کے سب نما زون مین جسطرح کہ انکے بلا نے کی عادت بو تثویب یعنی اعلام بعد الاذان کا طریقۃ یہ بی کہ بعد اذان بفدر بیس ایت پڑھنے کے ٹھرجائےپھر بلاوے اسطرح کہ الصلواۃ یاکھے کہ چلو نماز تیار بے یا جسطرح کا رواج بو پھر اسکے بعد بقدر بیس ایت کے توقف کرے پھر اقامت کھے کذا فی البحر مگر مغرب مین تٹویب نھین

অর্থঃ- “আযান ও ইকামতের মাঝে আমীর-উমরাসহ সকল নামাযীকে সকল নামাযেই তাছবীব করবে। (অর্থাৎ তাছবীব শুধু আমীর-উমারাদের বা বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যই খাছ নয় বরং আম-খাছ সকলের জন্যই প্রযোজ্য) যেভাবে নামাযীকে আহবান করার  নিয়ম প্রচলন আছে। আর তাছবীব এ নিয়মে করবে অর্থাৎ  আযানের পর নামাযীকে এ নিয়মে নামাযের কথা জানিয়ে দিবে যে, আযানের পর নামাযে বিশ আয়াত পড়া যায় এ পরিমান সময় দেরী করে পুনরায়  তাছবীব করবে বা আহবান করবে এভাবে যে,  الصلاة الصلاة  (নামাজ! নামাজ!)  অথবা বলবে নামাযের জন্য চলুন জামায়াত প্রস্তুত অথবা শহরে যেভাবে প্রচলন আছে সেভাবেই তাছবীব করবে। এরপর নামাযে বিশ আয়াত পড়া যায় এ পরিমান সময় দেরী করে ইকামত বলবে। যেমন ইহা বাহ্রুর রায়েকে বর্ণিত আছে। তবে মাগরীর নামাযে তাছবীব নাই।

“ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

نثویب متا خرین کے نزدیک مغرب کے سوا بر نماز مین بھتر بے یہ شرح نقا یۃ مین لکھا بے جو ابو المکارم کی تصنیف بے اور تٹویب اسکو کھنے بین کہ موذن اذان اور اقامت کے در میان مین پھر اعلام کرے بر شھر کی ئثویب وبان کے دسئور کے موافق وتی بے یا کھنکار نے یا صنواۃ صلواۃ یا قا مت قامت کا لفظ کھنے مے تثویب اسلیے بے کہ اچھی طرحسے اعلام بر جانے اوریہ بات جسطرح جھان کا دستور بو اس سے حاصل بو جاتی بے یہ کافی مین لکھا بے

অর্থঃ- “উলামায়ে মুতাআখ্খেরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের নিকট মাগরীব ব্যতীত প্রত্যেক (ফজর, জুহর, আছর ও এশার) নামাজের “তাছবীব” করা উত্তম। ইহা  শরহে নেক্বায়ার মধ্যে লিখা রয়েছে। যা শায়েখ আবূ মাকারিম-এর লিখিত কিতাব। আর “তাছবীব” উহাকে বলা হয় যে, মুয়াজ্জিন আযান ও ইক্বামতের মাঝে পূনরায় (মানুষকে) নামাযের কথা জানিয়ে দেয়া। প্রত্যেক শহরের তাছবীব ঐ জায়গার পদ্ধতি অনুযায়ী হবে। অথবা  গলা খাকড়ানোর মাধ্যমে, অথবা আস্ সালাত! আস্ সালাত! অথবা ক্বমাত! ক্বমাত!  শব্দ বলে তাছবীব করবে। তাছবীবের উদ্দেশ্য হলো ভাল করে জানিয়ে দেয়া। এবং ইহা যে স্থানে যেভাবে নিয়ম সেভাবে দেয়াই যথেষ্ট।” অর্থাৎ যে দেশের লোক যে ভাষা জানে বা যেভাবে উপলব্ধি করতে পাবে সে ভাষায় তাছবীব করবে। ইহা কাফীতে উল্লেখ আছে।”

(চলবে)

মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান

টাইগার পাস রোড, চট্টগ্রাম।

সুওয়ালঃ  চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব” …।

এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?

তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের আক্বীদা-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে  এবং ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহনযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে।

আমরা পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডন সহ সঠিক ও গ্রহনযোগ্য ফতওয়া পেশ করে যাচ্ছি ইন্শাআল্লাহ্।

(ধারাবাহিক)

আযানের মৌখিক জবাব দেয়া যে ওয়াজিব এবং এটা যে প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত তার আরো প্রমাণ

হযরতুল আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি “শরহু সুনানি আবী দাউদ” কিতাবের ২য় খণ্ডের ৪৭৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,

وقال أ صحا بنا الإ جا بة واجبة على السا معين، لأن الأ مر يدل على الوجوب ….. وينبغى أن لا يتكلم السا مع قى حال الأ ذان والإ قامة، ولا يقرأ القر ان، ولايسلم ، ولا يرد السلام، ولايشتغل بشئ من الأ عمال سوى الإ جابة ولو كان فى قرائة القران ينبغى أن  يقطع القرا ئة ويسمع الأذان ويجيب

অর্থঃ- “আমাদের হানাফী মাযহাবের আছহাবগণ বলেছেন,  আযান শ্রোতাদের সকলের জন্যই আযানের  মৌখিক  জবাব দেয়া ওয়াজিব। কেননা قولوا  শব্দটি لمر  (আমর বা আদেশসূচক) যা আমলকে ওয়াজিব হিসাবে প্রমাণ করে। … সুতরাং আযান ও ইক্বামতের সময় শ্রোতাগণ কোন কথা বলবে না। কুরআন শরীফ পাঠ করবেনা, অপর কাউকে সালাম দিবেনা,ঞ্জসালামের জাওয়াব দিবে না এবং আযানের জবাব দেয়া ব্যতীত কোন কাজেই মশগুল হবে না। যদি আযানের সময় কুরআন শরীফ পাঠ করতে থাকে, তাহলে উচিত হবে  কুরআন শরীফ পাঠ বন্ধ করে আযান শ্রবন করা এবং আযানের জওয়াব দেয়া।” অনুরূপ ‘উমদাতুল ক্বারী’ কিতাবের ৫ম খণ্ডের ১১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।

“বদরুল মুত্তাক্বা  ফী শরহে মুলতাক্বা” কিতাবে উল্লেখ আছে,

اجابة المؤذن باللسان قيل واجبة. ….. قاله المنصنف لكن رجح فى البحر وللنهر القول بالو جوب.

অর্থঃ- “মুখে মুয়াজ্জিনের আযানের জবাব ঞ্জদেয়া  ওয়াজিব বলা হয়েছে,…..মুছান্নেফ রহমতুল্লাহি আলাইহি  বলেছেন, তবে “বাহ্রুর রায়েক” ও “নাহ্রুল ফায়েক” কিতাবের   ترجسيح )তরজীহ্প্রাপ্তঁত্ম বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত ফতওয়া হলো মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।” অনুরূপ “মাজমাউল আনহুর ফি শরহে মুলতাকাল আবহুর” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৭৮ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে।

“আওজাযুল মাসালিক” কিতাবের ২য় খণ্ডের ৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

(فقولوا) أمر وجوب كما نقله الطحاوى عن قوم من السلف

অর্থঃ- “হাদীছ শরীফের ইবারতে  উল্লিখিত فقولوا শব্দটি امر  (আমর বা আদেশসূচক) যা আমলকে ওয়াজিব করে। অর্থাৎ মৌখিকভাবে মুয়াজ্জিনের আযানের জাওয়াব দেয়া  ওয়াজিব।  যেমন, ইমাম ত¦হাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি সলফে-ছালিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের এক জামায়াত থেকেও বর্ণনা করেছেন।

আহমদ ইয়ার খান লিখিত “মিরয়াতুল মানাজীহ্” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪০৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

صحیح یہ بے کہ پھلی اذان سننے پر دنیاوی باتوں سے خاموش بو جانا اور جوابا کلمات اذان ادا کر نا واجب بے

অর্থঃ- صحيح” বা বিশুদ্ধ কথা এই যে, প্রথমে আযান শুনার পর সমস্ত দুনিয়াবী কথাবার্তা থেকে চুপ থাকবে এবং মৌখিক আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। ”

“আশ্য়াতুল লুময়াত” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

واجابت موذن واجب ست

অর্থঃ- “মুয়াজ্জিনের আযানেরঞ্জঞ্জজাওয়াবঞ্জদেয়া ওয়াজিব।”

“আশ্রাফুত তাওদ্বীহ্” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اذان کی اجابت قو لیہ بھی واجب بے

অর্থঃ-ঞ্জ“আযানেরঞ্জমৌখিকঞ্জজাওয়াবঞ্জদেয়াও ওয়াজিব।”

“উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ৫ম খণ্ডের ১২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ينبغى لمن سمع الاذان ان يقول كما يقول المؤذن حتى يفرغ من اذانه وهو مذهب اهل الظاهر ايضا وقال الثورى وابو حنيفة وابو يو سف ومحمد واحمد فى الاصح

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আযান শুনবে তার জন্য মুয়াজ্জিনের আযানের অনুরূপ  মৌখিক  জাওয়াব দেয়া উচিত অর্থাৎ ওয়াজিব। এমনকি  মুয়াজ্জিন যতক্ষন পর্যন্ত তার আযান থেকে ফারেগ না হবে ততক্ষন পর্যন্ত আযান শ্রোতা  মুয়াজ্জিনের আযানের অনুরূপ  মৌখিক  জাওয়াব দিবে এটা আযান শ্রোতার উপর  ওয়াজিব।  আর এটাই আহলে জাহিরের মত। অনুরূপ ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আবূ ইউসূফ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, মুহম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, সুফিয়ান ছাওরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং আহমদ  রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর  الاصح অধিক ছহীহ্ মতে আযান শ্রতাদের জন্য  মুয়াজ্জিনের আযানের অনুরূপ  মৌখিক  জাওয়াব দেয়া  ওয়াজিব।

“ফতহুল বারী” কিতাবের ২য় খণ্ডের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اصتدل به على وجوب اجسا بة المؤذن حكاه الطحاوى عن قوم من السلف وبه قال الحنفية

অর্থঃ- “হাদীছ শরীফের ইবারতে  উল্লিখিত فقولوا শব্দটির ভিত্তিতে দলীল গ্রহণ করা হয়েছে যে, মৌখিকভাবে মুয়াজ্জিনের আযানের জাওয়াব দেয়া  ওয়াজিব।  এটা ইমাম ত¦হাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি সলফে-ছালিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের এক জামায়াত থেকেও বর্ণনা করেছেন। আর হাদীছ শরীফের ইবারতে  উল্লিখিত فقولوا শব্দটির ভিত্তিতে দলীল গ্রহন করে  আমাদের হানাফীগণ  বলেন,  মৌখিকভাবে মুয়াজ্জিনের আযানের জাওয়াব দেয়া  ওয়াজিব। ”

(চলবে)

নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক

ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

সুওয়াল: হানাফী মাযহাবে –

(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।

(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।

(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।

(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।

(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।

(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।

(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।

(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো জোড়া জোড়া এবং আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।

(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।

(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।

কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।

অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

(ধারাবাহিক)

জাওয়াব: বিগত সংখ্যায় অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে।

মূলতঃ ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ছানা-সিফত বেমেছাল। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। সকলেই তাঁকে ইমামে আ’যম হিসেবে মেনে নিয়েছেন। তাঁর বেমেছাল বুযুর্গী সম্মানের কারণে প্রায় সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়া কিরামগণ তো বটেই এমনকি অন্যান্য মাযহাবের ইমামগণ পর্যন্ত তাঁর মর্যাদার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

যেমন মালিকী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি বলেন, “ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এমন এক ব্যক্তি তিনি একটা কাঠের খুঁটিকে যদি স্বর্ণের খুঁটি বলে দলীল-প্রমাণ পেশ করেন, পৃথিবীর কোন ব্যক্তির সাধ্য নেই যে, উক্ত খুঁটিকে সে কাঠের খুঁটি প্রমাণ করতে পারে।”  (সুবহানাল্লাহ)

শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

الفقهاء كل عيال ابى حنيفة رحمة الله عليه.

অর্থাৎ- “সমস্ত ফক্বীহগণ ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কাছে সন্তানতুল্য।” (সুবহানাল্লাহ)

বর্ণিত রয়েছে, হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন কোন মাসয়ালার বিষয়ে সমস্যার সম্মুখিন হতেন তখন তিনি ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযার শরীফে এসে যিয়ারত করে সেখানে হানাফী মাযহাব মুতাবিক দু’রাকায়াত নামায পড়তেন। অতঃপর হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ওসীলা দিয়ে আল্লাহ পাক-এর দরবারে তাঁর সমস্যা জানাতেন। আল্লাহ পাক সাথে সাথে তাঁর দু’য়া কুবল করতেন। অর্থাৎ মাসয়ালার যে সমস্যারর জালে আবদ্ধ হয়ে তিনি সেখানে যেতেন ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ওসীলার বরকতে তা খুলে যেত। অতঃপর সুদূর বাগদাদ শরীফ থেকে স্বীয় স্থান ফিলিস্তিনে প্রত্যাবর্তন করতেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজেইে বলেন,

انى لاتبرك با بى حنيفة رحمة الله عليه اجيئى الى قبره فاذا عرضت لى حا جة صليت ركعتين وسأ لت الله تعالى عند قبره فتقضى سريعا.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আমি ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বরকত হাছিল করি। আমার যখন কোন সমস্যা দেখা দেয় তখন আমি তাঁর মাযার শরীফে এসে প্রথমে দু’রাকায়াত নামায আদায় করি। অতঃপর তাঁর ওসীলা দিয়ে আল্লাহ পাক-এর নিকট সমস্যা সমাধানের জন্য প্রার্থনা করি। অতঃপর অতি সত্ত্বর তার সমাধান হয়ে যায়।” (মুকাদ্দিমা, শামী ১ম খণ্ড, ৫৫ পৃষ্ঠা)

ক্বাদিরিয়া ত্বরীকার ইমাম সাইয়্যিদুল আওলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি হাম্বলী মাযহাবের মুকাল্লিদ হওয়া সত্বে হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ হওয়ার জন্য ইরাদা বা ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন।

চীশ্তিয়া ত্বরীক্বার ইমাম সুলত্বানুল হিন্দ গরীবে নেওয়াজ হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন হানাফী মাযহাবের অনুসারী।

নকশ্বন্দিয়া ত্বরীক্বার ইমাম খাজায়ে খাজেগাঁ হযরত সাইয়্যিদ বাহাউদ্দীন মুহম্মদ নকশ্বন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন।

নকশ্বন্দিয়া মুজাদ্দিদিয়া ত্বরীক্বার ইমাম আফযালুল আওলিয়া হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ হওয়ার কারণে আল্লাহ পাক-এর শুকরিয়া আদায় করেন এবং হানাফী মাযহাবের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যখন ইমাম মাহদী আলাইহিস্ সালাম প্রকাশ হবেন তাঁর হিদায়তের কাজে সহায়তা করার জন্য জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে পাঠানো হবে। তিনি যেহেতু জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল যার কারণে তিনি কোন মাযহাব অনুসরণ করে চলবেন না বরং নিজেই ইজতিহাদ করে চলবেন। কিন্তু দেখা যাবে তাঁর ইজতিহাদ আর ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ইজতিহাদ এক হয়ে যাবে, যার ফলে লোকজন তাঁকে হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ বলে মনে করবে। (সুবহানাল্লাহ)

পৃথিবীর ইতিহাসে যাঁরা প্রথম শ্রেণীর মুহাদ্দিছ তাঁদের একজন হচ্ছেন ইমামুল মুহাদ্দিছীন ফক্বীহুল উম্মত হযরত নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হানাফী মাযহাবের অনুসারী হওয়ার কারণে নিজেকে ধন্য মনে  করেন।

ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যেমন ফিক্বাহ শাস্ত্রের ইমাম ছিলেন তেমনি ইলমে মারিফাত বা তাছাউফ শাস্ত্রের  তাকমীলে পৌঁছেন এবং স্বীয় পীর ছাহেব ক্বিবলার তরফ থেকে খিলাফতও লাভ করেন।

ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি কতবড় মুত্তাক্বী ছিলেন সে সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্র কিতাব “জামির্উ রূমুয’-এ বর্ণিত রয়েছে যে, ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রথম জীবনে প্রায় বিশ বৎসর ওযুর সময় পায়ের অঙ্গুলীসমূহ উপর দিক থেকে খিলাল করেছেন। পরবর্তীতে যখন তাহ্ক্বীক্ব হলো যে, “ওযু করার সময় পায়ের অঙ্গুলীসমূহ নীচের দিক থেকে বাম হাতের কনিষ্ঠা বা ছোট আঙ্গুল দিয়ে ডান দিক থেকে বাম দিকে খিলাল করে সোজা একটা টান দেয়া মুস্তাহাব-সুন্নত।”

তখন তিনি পিছনের প্রায় বিশ বৎসরের নামায পুণরায় ক্বাযা আদায় করেন। (সুবহানাল্লাহ্)

উল্লেখ্য, শরীয়তে সুন্নত বা মুস্তাহাব তরক্বের কারণে নামায দোহরানো ওয়াজিব না হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র সুন্নতের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করার উদ্দেশ্যেই অঙ্গুলী খিলালের উক্ত সুন্নত বা মুস্তাহাব আদায় করাসহ প্রায় বিশ বৎসরের নামায দোহরায়ে আদায় করেন। (চলবে)

 সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল জাওয়াব