মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন, মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।
সুওয়াল: ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খণ্ডন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো-
….. ৩. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম একটি নিম্ন শ্রেণীর কাজকেও বর্ণনা করতে সংকোচবোধ করেননি। আর মুনাজাত এমন এক কাজ যা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযান্তে প্রকাশ্যভাবে পাঁচবার যদি করতেন তবে কেন তার কোন বর্ণনা করা হয়নি। …….
এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।
জাওয়াব: “ফরয নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার স্বপক্ষে কোন বর্ণনা নেই” হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন। কারণ পূর্ববর্তী সংখ্যায় প্রদত্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমানিত হয়েছে যে, “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করার স্বপক্ষে একটি, দুটি নয় বরং অসংখ্য ফে’লী ও ক্বওলী হাদীছ শরীফ রয়েছে। যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজেও ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন। আর হাদীছ শরীফে রয়েছে বলেই অনুসরনীয় ইমাম, মুজতাহিদ তথা ফক্বীহগণ নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে এমনকি হাটহাজারী মৌলভীদের মুরুব্বীরা তাদের কিতাবে “ফরজ নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব-সুন্নত বলে” ফতওয়া দিয়েছেন।
(ধারাবাহিক)
উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরাসহ সমস্ত দেওবন্দী মৌলভীরা যাকে হক্কানী আলিম, উস্তাজুল আসাতেযা, মুহাদ্দিছগণের মাথার তাজ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ বলে মুখে ফেনা তুলে, তাদের সেই কথিত শায়খুল হাদীছ আজিজুল হক্ব তার লিখিত “মোসলেম শরীফ ও অন্যান্য হাদীছের ছয় কিতাব” নামক গ্রন্থের ২৭১-২৯০ পৃষ্ঠায় ফরজ নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা যে খাছ সুন্নত ও ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত তা ছাবেত করেছেন।
নিম্নে ‘মুনাজাত’ সম্পর্কিত তার সম্পূর্ণ বক্তব্যটি ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলো।
(প্রথম অংশ)
নামাযের পরে মুনাজাত করা
যে কোন নামায সমাপ্ত করেই দোয়া এবং মুনাজাত করা সুস্পষ্টরূপে হাদীছ শরীফে উল্লেখ ও বর্ণিত রয়েছে। যথা-
হযরত আবু উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে,
قيل يا رسول الله اى الد عاء اسمع قال جوف اليل الا خر ودبر الصلوات المكتو بات.
“কোন ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন দুয়া অধিক কবুল হয়? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, রাত্রের শেষ অংশে যে দোয়া করা হয় এবং ফরয নামাযসমূহের পরে যে দোয়া করা হয়।”
হযরত ফজল ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
الصلوة مثنى مثنى تشهد فى كل ر كعتين وتخشع وتضرع وتمسكن و تقنع يد يك يقول تر فعهما الى ربك مستقبلا ببطو نهما وجهك وتقول يارب يا رب ومن لم يفعل ذلك فهو خداج.
“নামায দুই দুই রাকায়াত পড়তে হবে প্রত্যেক দুই রাকায়াতের উপরই বসে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করতে হবে। (অর্থাৎ-সরাসরি তিন বা চার রাকায়াত পড়া যাবে না)” নিবেদিত হয়ে কাতরতার সাথে, বিনীতভাবে নামায আদায় করতে হবে। আর (নামায শেষে) দু’হাত আল্লাহ পাক-এর দরবারে উঠাবে এবং দু’হাতের পেটের দিক নিজ চেহারার দিকে রাখবে আর এই অবস্থায় হে পরওয়ারদেগার! হে পরওয়ারদেগার! বলে ডাকতে (এবং নিজের আবেদন-নিবেদন বলতে) হবে। যে ব্যক্তি এসব করবে না সে অঙ্গহীন নামাযী পরিগণিত হবে। (অর্থাৎ তার নামায অঙ্গহীন অসম্পূর্ণ সাব্যস্ত হবে)
অত্র হাদীছ শরীফে নামাযের নফল বা ফরয প্রকার নির্ণয় ব্যতিরেকে নামাযের সাধারণ নিয়মরূপেই আকার-আকৃতি নির্ধারণের সাথে মুনাজাত নামাযের প্রয়োজনীয় বস্তুরূপে উল্লেখ হয়েছে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উল্লিখিত হাদীছ শরীফখানা নফল-ফরয সব রকম নামাযের পরেই প্রচলিত আকার আকৃতিতে হস্তদ্বয় উত্তোলনপূর্বক মুনাজাত করার পক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ। অধিকন্তু মুনাজাত নামাযের আভ্যন্তরীণ অঙ্গ না হলেও তা যে, নামাযের বহিরাঙ্গরূপে নামাযের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেটা এই হাদীছ শরীফে স্পষ্টাক্ষরে উল্লেখ রয়েছে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুনাজাতবিহীন নামাযকে অঙ্গহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন।
যারা মুনাজাত বিরোধী তারাও এই হাদীছ শরীফের প্রমাণকে অস্বীকার করতে পারেন না, মনগড়াভাবে হাদীছ শরীফকে এড়াবার চেষ্টা করে এই বলে যে, এটা নফল নামায সম্পর্কে। অথচ অত্র হাদীছ শরীফে আপনারাও দেখছেন যে, নফল নামাযের উল্লেখ হাদীছটিতে মোটেই নেই। অধিকন্তু এই মনগড়া অর্থ হাদীছ শরীফটির শব্দ ও বাক্যাবলীর সম্পূর্ণ বিপরীত- দুই কারণে।
১. এই হাদীছ শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যবহৃত শব্দ হলো, “আছ-ছলাত” যাহার অর্থ “সব রকম নামায” অথবা নামায বলতে যা বুঝায়।
পাঠক! চিন্তা করুন, সব রকম নামায বা নামায বলতে যা বুঝায় তা কি নফল নামাযে সীমাবদ্ধ, না ফরয নামাযকেও বুঝায়? বরং ফরয নামাযকেই অগ্রাধিকাররূপে বুঝায়। যারা উল্লিখিত হাদীছ শরীফকে নফল নামাযে সীমাবদ্ধ রাখে তারা হাদীছ শরীফের মুল শব্দকে বিকৃত করে এবং তাদের কোন প্রমাণ নেই।
২. উল্লিখিত হাদীছ শরীফে মুনাজাতের আদেশ বর্ণনার সাথে আরও চারটি বিষয়ের আদেশ উল্লেখ রয়েছে প্রতি দুই রাকায়াতের উপরই বসে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করা, পুর্ণ নামাযে নিবেদিত প্রাণ হওয়া, কাতর হয়ে থাকা এবং বিনত হয়ে থাকা। এই চারটি বিষয়কে কোন মানুষ নফল নামাযে সীমাব্ধ বলতে পারে কি? বরং এই অবস্থাগুলি ফরয নামাযে প্রবর্তিত হওয়া নিশ্চয়ই অধিক প্রয়োজন।
আলোচ্য হাদীছ শরীফে উক্ত চারটি বিষয়ের সাথেই পঞ্চম বিষয়টি উল্লেখ আছে মুনাজাত করা এটা কেন শুধু নফল নামাযে সীমাবদ্ধ থাকবে-ফরয নামাযে প্রবর্তিত হবে না?
সরাসরি হাদীছ শরীফের বাক্যাবলী হতে প্রমাণ করা ছেড়ে হাদীছ সংকলক বা ব্যাখ্যাকারগণের মতামত দেখানো হলে আমরা ফরয নামাযে মুনাজাতের পক্ষে এরূপ অসংখ্য দলীল প্রমাণ দেখাতে ইনশাআল্লাহ সক্ষম হব। বুখারী শরীফের প্রসীদ্ধ ব্যাখ্যাকার আনোয়ার শাহ বলেছেন, নামাযের পর মুনাজাত করার পক্ষে ফিক্বাহ শাস্ত্রগণ নফল নামায এবং ফরয নামায একই সঙ্গে রাখিয়াছেন। (ফয়জুল বারী ৪র্থ খণ্ড, ৪১৭ পৃষ্ঠা)
(চলবে)
খন্দকার সেলিম আহমদ
পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল।
সুওয়াল: হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় “মীলাদ-ক্বিয়ামের” সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।
তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
৫. “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, চার মাযহাবের ইমাম রহতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে নিয়ে শুরু করে ৭০০ (সাতশত) বছর পর্যন্ত কোন নবী প্রেমিক নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে বা মুহববতে ক্বিয়াম করেননি।”
এখন আমার সুওয়াল হলো, মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, চার মাযহাবের ইমাম রহতুল্লাহি আলাইহিমগণ সম্পর্কে হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ডাহামিথ্যা, জিহালতপূর্ণ ও দলীলবিহীন।
কারণ মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর বিগত সংখ্যায় প্রমাণ করা হয়েছে যে, সরাসরি হাদীছ শরীফেই উল্লেখ আছে যে, স্বয়ং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীমার্থে বা সম্মানে যথাযথ আদবের সহিত দাঁড়িয়েছেন বা ক্বিয়াম করেছেন।
সুতরাং যেখানে হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত আছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীমার্থে বা সম্মানে যথাযথ আদবের সহিত দাঁড়িয়েছেন বা ক্বিয়াম করেছেন। সেখানে আর কোন দলীলের অপেক্ষা রাখেনা
দ্বিতীয়তঃ “তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, চার মাযহাবের ইমাম রহতুল্লাহি আলাইহিমগণ, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে বা মুহববতে ক্বিয়াম করেননি।” এর কোন দলীল- প্রমাণ হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা পেশ করতে পারেনি। সুতরাং তারা দলীলবিহিন ও মনগড়া ভাবেই বলেছে যে, ….. তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, চার মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ”…… নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে বা মুহববতে ক্বিয়াম করেননি।” অতএব, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবদের উক্ত মনগড়া ও দলীলবিহিন বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তৃতীয়তঃ হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা পরিশেষে বলেছে, ….“৭০০ (সাতশত) বছর পর্যন্ত কোন নবী প্রেমিক নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে বা মুহববতে ক্বিয়াম করেননি।”…
এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য যে ডাহা মিথ্যা তা প্রমাণের জন্য “সীরাতে হালবীয়া” কিতাবের নিম্নোক্ত ইবারতখানাই যথেষ্ট।
যেমন, “সীরাতে হালবীয়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
جرت عادة كثيرة من المحبين اذا سمعوا بذ كر وضعه صلى الله عليه و سلم ان يقا موا لتعظيم النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- “হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছল্লাম-এর হাক্বীক্বী মুহব্বতকারীগণের স্বভাব এটাই ছিল যে, তাঁরা হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের কথা শুনে সাথে সাথেই হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে ক্বিয়াম করেছেন।”
সুতরাং আবারো প্রমাণিত হলো যে, ৭০০ (সাত শত) বছর নয়। বরং হিজরী শতকের পূর্বথেকেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ তথা হাক্বীক্বী মুহব্বতকারীগণ হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীমার্থে বা সম্মানে যথাযথ আদবের সহিত দাঁড়িয়েছেন বা ক্বিয়াম করেছেন। যা খোদ হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত আছে।
যার পরে আর কোন দলীলের প্রয়োজন হয় না। তারপরেও কম আক্বল ও কম বুঝদের জন্য উল্লেখ্য যে, এরপরেও অনেক দলীল-আদিল্লাহ্ দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, মাযহাবের ইমাম, মুজতাহিদীন, সলফে-ছালিহীন, বুযুর্গানেদ্বীন, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে বা মুহববতে মীলাদ-ক্বিয়াম করেছেন।” যেমন, এ প্রসঙ্গে “আন্ নি’মাতুল কুবরা আ’লাল আ’লাম ফী মাওলিদি সাইয়্যিদি উলদে আদম” কিতাবের ৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, “বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি আনহু মীলাদ-ক্বীয়াম-এর ফযীলত সম্পর্কে বলেন,
قال حسن البصرى رضى الله عنه وددت لو كان لى مثل جبل أحد ذهبا فا نفقته على قرا ئة مو لد النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- “(বিশিষ্ট তাবিয়ী) হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকত তাহলে আমি তা নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠ উপলক্ষে ব্যয় করতাম।” (সুবহানাল্লাহ্)
শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি মীলাদ-ক্বীয়াম-এর ফযীলত সম্পর্কে বলেন,
قال الا مام الشا فعى رحمة الله عليه من جمع لمو لد النبى صلى الله عليه وسلم إخوانا وهيأ طعا ما وا خلى مكا نا وعمل إحسا نا وصار سببا لقرا ئته بعثه الله يوم القيا مة مع الصد يقين والشهداء والصا لحين ويكون فى جنات النعيم.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদ শরীফ উপলক্ষে লোকজন একত্রিত করলো এবং খাদ্য তৈরী করলো ও জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং মীলাদ পাঠের জন্য উত্তম ভাবে (তথা সুন্নাহ ভিত্তিক) আমল করলো, আল্লাহ পাক উক্ত ব্যক্তিকে হাশরের দিন ছিদ্দীক, শহীদ, ছালিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং তাঁর ঠিকানা হবে জান্নাতে নাঈমে।” (সুবহানাল্লাহ্)
“হযরত ইমাম মা’রুফ কারখী কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহু রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
قال معروف الكر خى قدس الله سره من هيا طعا ما لا جل قراءة مو لد النبى صلى الله عليه وسلم وجمع اخوا نا واوقد سرا جا ولبس جد يدا وتبخر وتعطر تعظيما لمو لد النبى صلى الله عليه وسلم حشره الله يوم القيا مة مع الفر قة الاولى من النبيين وكان فى اعلى عليين.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম মা’রুফ কারখী কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহু রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফ পাঠের উদ্দেশ্যে খাদ্য প্রস্তুত করবে এবং নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফের সম্মানার্থে মুসলমান ভাইদেরকে একত্রিত করবে, প্রদীপ বা বাতি জ্বালাবে, নতুন পোষাক পরিধান করবে, (সুগন্ধির উদ্দেশ্যে) ধুপ জ্বালাবে এবং আতর-গোলাপ মাখবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তার হাশর-নশর করবেন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রথম দলের সাথে এবং সে সুউচ্চ ইল্লীনে অবস্থান করবে।”
সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
من حضر مو لد النبى صلى الله عليه وسلم وعظم قدره فقد فاز بالإيمان.
অর্থঃ “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফে উপস্থিত হবে এবং যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করবে সে তার ঈমানের দ্বারা সাফল্য লাভ করবে। অর্থাৎ সে বেহেশ্তী হবে। (সুবহানাল্লাহ্) (আন্ নি’মাতুল কুবরা)
তাছাড়া হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা যার কিতাব পড়ে মাওলানা হয়েছে, তাঁর লিখিত কিতাবেই মীলাদ-ক্বীয়াম-এর ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে।
যেমন “সুলতানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “ওসায়িল ফী শরহি শামায়িল” নামক কিতাবে বলেন,
وقال سلطان العار فين الا مام جلال الد ين السيو طى قدس الله سره ونور ضر يحه فى كتا به المسمى بالو سا ئل فى شرح الشما ئل ما من بيت أو مسجد أومحلة قرئ فيه مو لد النبى صلى الله عليه وسلم إلا حفت الملائكة ذلك البيت أوالمسجد أو المحلة وصلت الملا ئكة على أهل ذلك المكان وعمهم الله تعا لى بالر حمة والوضوان وأما المطوقون بالنور يعنى جبرائيل وميكا ئتل وإسرا فيل وعزرائيل عليهم السلام فإ نهم يصلومن على من كان سببا لقرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- “সুলতানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “ওসায়িল ফী শরহি শামায়িল” নামক কিতাবে বলেন, কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় যখন মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয়, তখন সে ঘর অথবা সে মসজিদ অথবা সে মহল্লাকে আল্লাহ পাক-এর ফেরেশ্তাগণ বেষ্টন করে নেন এবং তাঁরা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আল্লাহ পাক তাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশ্তা, অর্থাৎ হযরত জিব্রাঈল, মীকাঈল, ইসরাফীল ও আজরাঈল আলাইহিমুস্ সালাম মীলাদ শরীফ পাঠকারীর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন।” (সুবহানাল্লাহ্)
প্রদত্ত সুওয়াল-জাওয়াবের টীকা ভাষ্যঃ
(ক) বিগত সংখ্যায় বলা হয়েছে, মিশকাত শরীফে বর্ণিত হাদীছ দ্বারাই প্রমাণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সম্মানে দাঁড়ানোকে অপছন্দ করেননি। বরং মিশকাত শরীফে বর্ণিত হাদীছ শরীফেই উল্লেখ আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ক্বিয়াম করেছেন বা দাঁড়িয়েছেন এবং তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে দাঁড়ানো বা ক্বিয়াম করার ব্যাপারে নির্দেশও দিয়েছেন।
(খ) বর্তমান সংখ্যায় দেয়া জবাবের মূল কথা হলো, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ, তাবিয়ীন, তাবে তাবিয়ীন, মাযহাবের ইমাম, মুজতাহিদীন, খলফে ছালিহীন, বুযুর্গানে দ্বীন, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাঁরা সকলেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানেই বা মুহববতে মীলাদ-ক্বিয়াম করেছেন।
(গ) হাটহাজারীর মৌলভীরা বলেছে, “পীর, ওস্তাদ, পিতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী প্রমুখ সম্মানিত ব্যক্তিগণের সম্মানে দাঁড়ানো জায়িয। কারণ, তারা সামনে উপস্থিত। আর মীলাদে দাঁড়ানো জায়িয নেই। কারণ, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপস্থিত।” (নাউযুবিল্লাহ) তাদের উক্ত বক্তব্য যে সম্পূর্ণই মনগড়া ও জিহালতপূর্ণ তা পরবর্তী সংখ্যায় প্রমাণ করা হবে ইনশাআল্লাহ।
(চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার
সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত
মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-
জিজ্ঞাসা: সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।
উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-
….. “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” ….
কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।
তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
(ধারাবাহিক)
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”
আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো।
প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ
বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ২১
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা প্রচার করে থাকে যে, “তাদের ছয় উছুল ভিত্তিক দোয়া ও তাসবীহ পড়াই সুন্নত। যা করলেই যিকিরের হক্ব আদায় হয়ে যায়। এবং তার দ্বারাই অনেক অনেক ফযীলত, রহমত ও বরকত পাওয়া যায়। আর এর দ্বারাই অন্তর ইছলাহ্ হয়। অর্থাৎ তাছাউফ ভিত্তিক ক্বলবী যিকিরের আর দরকার হয়না। অপরদিকে তাদের কথানুযায়ী তাছাউফী বা ক্বলবী যিকির হলো নফল এবং যার ফযীলত নগণ্য। আর এসব কথা নাকি তাদের হযরতজীর মলফুজাত এবং মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দীর “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। ”
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য ও মন্তব্য আদৌ সঠিক নয়। এ ধরণের কথা বিশেষভাবে বিভ্রান্তিকর এবং ইল্মে তাছাউফকে অবজ্ঞা ও ইহানত করার কারণে হক্ব মত, হক্ব পথের খিলাফ।
আর প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যে পরিমাণে ও যেভাবে তিন তাসবীহ্ ও দোয়াসমূহ পাঠ করে, তা সুন্নতের পর্যায়ে পড়েনা। বরং তা নফল হিসেবে গণ্য হয়। যেমন এ প্রসঙ্গে তাদের ‘ছে বাতে ছয় উছুল” নামক কিতাবের (মূল- মাওঃ আশেকে ইলাহী, অনুবাদ- মোঃ মাসউদ আহ্মদ, মুতায়াল্লিম, দারুল উলুম দেওবন্দ) ১৪ পৃষ্ঠায় লিখিত রয়েছে, “…. তবে প্রত্যেকে অন্ততঃ সকালে ও বিকালে কলেমা তৌহিদ, দরূদ শরীফ ও ইস্তেগফার প্রত্যেকটা এক এক তাসবীহ পড়ার অভ্যাস করবে।”
আর “এক মোবাল্লেগের পয়লা নোট বই”-এর ৯ পৃষ্ঠায় লিখিত রয়েছে, “তিন তাসবীহ হইল কলেমা ছওম অর্থাৎ ছোবহানাল্লাহে ওয়াল হামদুলিল্লাহে ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার (এটার সাথে ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিউল আযিম- মিলাইয়া পড়িলে উত্তম হয়) সকালে একশত বার ও বিকালে একশত বার আস্তাগফেরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লে জাম্বিও ওয়া আতুবু ইলাইহি অথবা আস্তাগফেরুল্লা হিল্লাজি লা-ইলাহা- ইল্লাহুয়াল হাইয়্যূল কাইয়্যূম ওয়া আতুবু ইলাইহি- সকালে একশতবার, বিকালে একশত বার। (৩) যে কোন দরূদ শরীফ সকালে একশত বার বিকালে একশত বার।”
আবার পূর্বোক্ত ‘ছে বাঁতে’ কিতাবে আরো উল্লেখ রয়েছে, “হাদীছ শরীফে সময় সময় যে সমস্ত দোয়া পড়ার নির্দেশ এসেছে যেমন, শোওয়ার জায়গায়, মজলিসের শেষে, খাওয়ার আগে ও পড়ে, ঘরে ঢুকতে, ঘর থেকে বের হতে, ছফরের প্রারম্ভে ও ছফর হতে ফিরে আসার পর, সওয়ারীর পিঠে বা গাড়ীর সিটে বসার সময়, নতুন শহর বা বস্তিতে প্রবেশ করার সময় এবং আরও অন্যান্য দোয়া সমূহ মুখস্থ করে যদি ধ্যানের সাথে প্রতিটা ক্ষেত্রে পড়ার অভ্যাস করা যায় তবে সব সময় আল্লাহ্র যিকিরের অনুশীলন হতে পারে।
অর্থাৎ তাদের এই বক্তব্য দ্বারা বোঝা যায় যে, প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের লোকদের মতে উপরোক্ত তিন প্রকার তাসবীহ্ ও দোয়া দ্বারাই যিকিরের হক্ব আদায় হয়ে যায়। যার দ্বারাই তাদের মতে অন্তর ইসলাহ্ হয়।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত কাজ সমূহ লোগাতী অর্থে ঠিকই যিকিরের পর্যায়ে পড়ে কিন্তু হাক্বীক্বী অর্থে যিকিরের ফায়দা তার দ্বারা আদৌ অর্জিত হয়না। যেমন, কুরআন শরীফে ‘ছলাত’ শব্দটি বহু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। কখনো তা ব্যবহৃত হয়েছে রহমত অর্থে, কখনো শান্তি অর্থে, কখনো ইস্তেগ্ফার, তাসবীহ্-তাহ্লীল অর্থে, কখনো দুরূদ শরীফ অর্থে আবার কখনো নামায অর্থে। আর শুধু দুরূদ শরীফ পাঠ করে যেমন নামাযের হক্ব আদায় হয়না যদিও নামাযের মধ্যেই দুরূদ রয়েছে, তেমনি তাসবীহ্ ও দোয়া এক প্রকার যিকির হলেও সে যিকির দ্বারা মূলতঃ ক্বল্বী যিকিরের হক্ব কিছুই আদায় হয়না। কারণ ক্বাল্বী যিকির সম্পূর্ণই ভিন্ন জিনিস। যা করা ফরজ। যে প্রসঙ্গে কুরআন শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
واصير نفسك مع الذ ين يدعون ربهم بالغدوة والعشى يريدون وجهه ولا تعد عينك عنهم تريد زينة الحيوة الد نيا ولا تطع من اغفلنا قلبه عن ذكرنا واتبع هوه وكان امره فرطا.
অর্থঃ- “তাঁদের ছোহবত ইখতিয়ার কর, যাঁরা সকাল-সন্ধ্যায় তাঁদের রবকে ডাকে তাঁর সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য এবং তুমি দুনিয়াবী যিন্দিগীর সৌন্দর্য্য হাছিলের উদ্দেশ্যে তাঁদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবেনা এবং ঐ ব্যক্তির অনুসরণ করবেনা, যার ক্বল্ব আমার যিকির থেকে গাফিল। কেননা সে নিজের নফ্সের অনুসরণ করে এবং তার কাজগুলো শরীয়তের খিলাফ।” (সূরা কাহাফ-২৮) অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য ক্বল্বী যিকির করেনা, তার অনুসরণ ও ছোহ্বত ইখতিয়ার করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, ক্বলবের যিকির জারী না থাকার কারণে সে নফসের পায়রবী করে ফলে সে শরীয়ত বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়।
কুরআন শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে,
ومن يعش عن ذكر الر حمن نقيض له شيطانا.
অর্থঃ- “যার ক্বল্ব আল্লাহ পাক-এর যিকির থেকে গাফিল থাকে, তার জন্য একটি শয়তান মোর্করার বা নির্দিষ্ট হয়ে যায়।” (সূরা যুখ্রুফ-৩৬)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عباس رضى الله تعا لى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الشيطان جاثم على قلب ابن ادم فاذا دكر الله خنس واذا غفل وسوس.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, শয়তান আদম সন্তানের ক্বল্বের উপর বসে থাকে। আদম সন্তান যখন যিকির করে, তখন শয়তান পালিয়ে যায়, আর যখন যিকির থেকে গাফেল থাকে, তখন এসে ওয়াস্ওয়াসা দেয়।” (বুখারী, মিশকাত, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহে কিরমানী, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)
কুরআন শরীফে আরো বর্ণিত আছে যে,
يوم لا ينفع مال ولا بنون الا من اتى الله بقلب سليم.
অর্থঃ- “ক্বিয়ামতের দিন ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি দ্বারা কেউ ফায়দা হাছিল করতে পারবেনা। একমাত্র ঐ ব্যক্তি ফায়দা হাছিল করবে, যে ব্যক্তি পরিশুদ্ধ অন্তর বা ক্বল্বে সলিম নিয়ে আসবে।” (সূরা শুয়ারা-৮৮)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن النعمان بن بشير رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان فى الجسد مضغة اذا صلحت صلح الجسد كله واذا فسدت فسد الجسد كله الا وهى القلب.
অর্থঃ- “হযরত নো’মান ইবনে বাশীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মানুষের শরীরে এক টুকরা গোশ্ত আছে, তা সংশোধন হয়ে গেলে সমস্ত শরীর সংশোধন হয়ে যায়, আর তা বরবাদ হলে সমস্ত শরীর বরবাদ হয়ে যায়। সাবধান! সে গোশ্তের টুকরা হলো ক্বাল্ব।” (বুখারী কিতাবুল ঈমান, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহে কিরমানী, তাইসীরুল ক্বারী)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, প্রত্যেকের জন্যই ক্বলব ইছলাহ বা পরিশুদ্ধ করা ফরজ। আর ক্বলব ইছলাহ বা পরিশুদ্ধ করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ‘ক্বলবী যিকির’ যা মূলতঃ ইলমে তাছাউফের অন্তর্ভুক্ত। যা অর্জন করাও ফরজ। কেননা, ইল্মকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। (ক) ইল্মে জাহির বা ফিক্বাহ (খ) ইল্মে বাতিন বা তাছাউফ। আর বাতিনী ইল্ম অর্জন করার উপায় হলো ক্বল্বী যিকির।
যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن عمر رضى الله تعا لى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم انه كان يقول لكل شىء صقا لة وصقا لة القلوب ذكر الله.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, প্রত্যেক জিনিস পরিস্কার করার যন্ত্র রয়েছে। ক্বল্ব পরিস্কার করার যন্ত্র হলো ক্বল্বী যিকির।” (বুখারী, মিশকাত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)
উপরোক্ত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের আলোকে সকল ইমাম, মুজ্তাহিদ, মুহাক্কিক, মুদাক্কিক এবং উলামায়ে মুতাআখ্খেরীন ও মুতাকাদ্দিমীনগণ ক্বলবী যিকির করাকে ফরয বলে সাব্যস্ত করেছেন। আর কেবলমাত্র হক্কানী মুর্শিদ ক্বিবলা-এর কাছে বাইয়াত হয়ে তা হাছিল করা সম্ভব বিধায়, তাঁরা মুর্শিদ ক্বিবলা-এর কাছে বাইয়াত হওয়াও ফরয বলেছেন।
কারণ মুর্শিদ ক্বিবলা-এর কাছে বাইয়াত হওয়া ব্যতীত কখনো ক্বল্বী যিকির হাছিল করা সম্ভব নয়। আর এই ক্বল্বী যিকির করেই মানুষ ওলী আল্লাহ্ হতে পারে। যাদের শান সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,
الا ان اولياء الله لا خوف عليهم ولاهم يحز نون.
অর্থঃ- “সাবধান! যারা ওলী আল্লাহ্, তাঁদের কোন ভয় নেই, চিন্তা নেই, পেরেশানী নেই।” (সূরা ইউনুস-৬২)
মূলকথা হলো, ক্বিয়ামত পর্যন্ত যদি কেউ তাসবীহ-তাহলীল বা লিসানী যিকির করে তবেও তার ক্বলব্ ইছলাহ বা পরিশুদ্ধ হবেনা। ক্বলব পরিশুদ্ধ করার একমাত্র পথ হচ্ছে হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদ-এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে তরীক্বা মোতাবেক ক্বল্বী যিকির করা।
অতএব, প্রতীয়মান হলো যে, প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের “তাস্বীহ্-তাহ্লীল ও ক্বল্বী যিকির সম্পর্কিত উপরোক্ত বক্তব্য ও মন্তব্য সম্পূর্ণই ভুল। এ ধরণের বক্তব্য ও মন্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকা তাদেরসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য ফরয-ওয়াজিব।
(চলবে)
মুছাম্মত ফাতেমা আক্তার
মতিঝিল, ঢাকা।
সুওয়াল: মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারী-২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-
প্রশ্নঃ হযরত মুহম্মদ (সাঃ) কে যে মাটি দ্বারা তৈরী করা হয়েছে তার অবশিষ্ট মাটি দ্বারা মুজাদ্দেদ আলফেসানী (রহঃ) কে তৈরী করা হয়েছে মর্মে একটা কথা শুনেছি এটা কতটুকু সত্য? কুরআন-হাদীসের আলোকে আলোচনা করলে উপকৃত হবো
উত্তরঃ কথাটা একেবারেই অবান্তর। এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।
এখন আমার সুওয়াল হলো- (ক) তাহলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি মাটির তৈরী?
(খ) যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাটির তৈরী না হন, তাহলে হাদীছ শরীফ যে রয়েছে, “যে সন্তানকে যে স্থানের মাটি দ্বারা তৈরী করা হয়েছে সে স্থানেই তাকে দাফন করা হবে।” তাহলে এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা কি?
(গ) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অবশিষ্ট মাটি দ্বারা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে তৈরী করা সম্পর্কিত মাসিক মদীনার উপরোক্ত বক্তব্যই বা কতটুকু দলীল ভিত্তিক। বিস্তারিত জানিয়ে বিভ্রান্তি দুর করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: ইমামে রব্বানী, মাহ্বূবে সুবহানী, আফযালুল আউলিয়া, কাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কিত মাসিক মদীনার উপরোক্ত বক্তব্য ডাহামিথ্যা ও দলীল বিহীন। কারণ যাদের কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের ইল্ম নেই, তাদের পক্ষেই এধরনের ডাহামিথ্যা ও দলীল বিহীন বক্তব্য দেয়া সম্ভব। আমরা পর্যায়ক্রমে উক্ত তিনটি সুওয়ালেরই দলীল ভিত্তিক জবাব দিব। (ইন্শাআল্লাহ্)
(ধারাবাহিক)
যেমন তৃতীয়তঃ বলা হয়েছে, (গ) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অবশিষ্ট মাটি মুবারক দ্বারা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে তৈরী করা সম্পর্কিত মাসিক মদীনার উপরোক্ত বক্তব্যই বা কতটুকু দলীল ভিত্তিক।
এর জবাবে বলতে হয় যে, ইমামে রব্বানী, মাহ্বূবে সুবহানী, আফযালুল আউলিয়া, কাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কিত মাসিক মদীনার উপরোক্ত বক্তব্য সম্পুর্ণই মিথ্যা ও দলীল বিহীন।
কারণ ইমামে রব্বানী, মাহ্বূবে সুবহানী, আফযালুল আউলিয়া, কাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বয়ং নিজেই তাঁর লিখিত “মাকতুবাত শরীফে” বলেছেন, “আমিও রওজা শরীফের মাটি দ্বারা সৃিষ্ট। অর্থাৎ আমার নাভী মূলেও রওজা শরীফের মাটি মুবারক রাখা হয়েছে। তবে তাঁর মাযার শরীফ সেরহিন্দ শরীফে হওয়ার কারণ হলো হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম-এর যামানায় কাফির-মুশরিকদের ধ্বংস সাধনে সমগ্র পৃথিবী ব্যাপী যে বন্যা হয়েছিল সে বন্যার সময় রওজা শরীফের কিছু মাটি মুবারক সেরহিন্দ শরীফে আসে। তাই তাঁর মাযার শরীফ সেরহিন্দ শরীফেই হয়েছে।
আর শুধু হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-ই- নন। বরং “হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা দুজনও রওজা শরীফের মাটি মুবারক দ্বারা সৃষ্টি। এ কথার অর্থ হলো “তাঁদের সকলের নাভী মুবারকে একই স্থানের মাটি মুবারক রাখা হয়েছে। অর্থাৎ রওজা শরীফের মাটি রাখা হয়েছে।
যেমন, হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে যে,
عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعا لى عنه قال قال ر سول الله صلى الله عليه وسلم ما من مو لود الا وفى سر ته من تر بته التى خلق منها حتى يد فن فيها وا نا وابو بكر وعمر خلقنا من تربة واحدة وفيها ندفن.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, প্রত্যেক সন্তানের নাভীতে মাটির একটি অংশ রাখা হয়, যেখানকার মাটি তার নাভীতে রাখা হয় মৃত্যুর পর সে ঐ স্থানেই সমাধিস্থ হয়ে থাকে। আমি অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর নাভী মুবারকে একই স্থানের মাটি মুবারক রাখা হয়। এবং আমরা একই স্থানে সমাধিস্থ হবো। (মাযহারী, আল মুত্তাফিক ওয়াল মুফতারিক)
শুধু তাই নয়, হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামও সেই একই স্থানে শায়িত হবেন। তাই রওজা শরীফের পাশে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামের জন্যে জায়গা খালি রাখা হয়েছে।
স্মর্তব্য, উক্ত হাদীছ শরীফে মাটি থেকে সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। মূলত: তার ব্যাখ্যা হলো প্রতিটি সন্তানের কবরের স্থান নির্ধারণের জন্যে যেরূপ তাদের কবরের স্থান থেকে মাটি এনে নাভীতে দিয়ে দেয়া হয় ঠিক তদ্রুপ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদূল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর “রওজা শরীফ” নির্ধারণের জন্যেও তাঁর নাভী মুবারকে রওজা শরীফের যে নূরানী ও পবিত্র মাটি মুবারক রাখা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে তা বেহেশ্তের পানি দ্বারা ধৌত করে এবং তার হাক্বীক্বী ছূরত অর্থাৎ নূরে পরিণত করে রাখা হয়েছে। তাই হাদীছ শরীফেও রওজা শরীফের উক্ত মাটি মুবারককে “নূর” বলা হয়েছে।
যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن كعب الا حبار قال لما اراد الله تعا لى ان يخلق محمدا صلى الله عليه وسلم امر جبر يل ان يا تيه با لطينة التى هى قلب الارض وبها ئها ونور ها قال فهبط جبريل فى ملا ئكة الفردوس وملائكة الر فيع الا على فقبض قبضة رسول الله صلى الله عليه و سلم من مو ضع قبره الشر يف وهى بيضاء منيرة فعجنت بماء التسنيم فى معين انهار الجنة حتى صارت كا لدرة البيضاء ………
অর্থঃ- “হযরত কা’ব আহবার রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যখন মহান আল্লাহ্ পাক আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলেন, তখন হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে (তাঁর নাভী মুবারকে রাখার জন্য) এমন খামীর নিয়ে আসার নির্দেশ দিলেন যা মূলতঃ যমীনের আত্মা, ঔজ্জ্বল্য ও ‘নূর’। এ নির্দেশ পেয়ে হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম জান্নাতুল ফিরদাউস ও সর্বোচ্চ আসমানের ফেরেশ্তাদেরকে নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। অতঃপর রওজা শরীফের স্থান থেকে এক মুষ্ঠি স্বচ্ছ নূরানী মাটি নেন। উক্ত মাটি মুবারককে বেহেশ্তের প্রবাহিত ঝরণা সমূহের মধ্যে ‘তাসনীম’ নামক ঝরণার পানি দ্বারা ধৌত করার পর তা একখানা শুভ্র মুক্তার আকার ধারণ করে অর্থাৎ নূরে পরিণত হয়ে যায়। …”
অতএব প্রমাণিত হলো যে, আখিরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাভী মুবারকে যে মাটি রাখা হয়েছে তা মাটির ছূরতে রাখা হয়নি। কারণ তাঁর নূরে মুজাস্সাম শরীর মুবারকে মাটিকে মাটির ছূরতে রাখার কোন অবকাশ নেই। তাই তা পূনরায় তার পূর্বের হাক্বীক্বী ছূরতে পরিবর্তন করে অর্থাৎ মাটিকে নূর বানিয়ে সেই নূরকে নাভী মুবারকে রাখা হয়। সত্যিকার অর্থে তা হলো নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরই একটা অংশ যা প্রকৃতপক্ষে “নূর।”
শুধু তাই নয়, বরং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জিস্ম বা শরীর মুবারকের সব কিছুই যেমন রক্ত মুবারক, ইস্তিঞ্জা মুবারক, কেশ মুবারক ইত্যাদি সবই ‘নূর’। যার কারণে “দুররুল মুখতার” কিতাবে ফতওয়া দেয়া হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সমস্ত কিছু পাক বা পবিত্র। শুধু পাক বা পবিত্রই নয় বরং তা পান করলে বা খেলে যে পান করবে বা খাবে সে জান্নাতী হবে বা তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হবে।
তাই কবি বলেছেন, “আমরা যা খাই তা মল-মূত্র হয়ে বের হয়ে যায়। আর হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা খান তা ‘নূর’ হয়ে যায়।”
সুতরাং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাটির তৈরী হওয়ার প্রশ্নই আসেনা। কারণ তাঁর সৃষ্টি, আগমন ও অবস্থান প্রত্যেকটিই ‘নূর’ হিসেবে। আর মাটিসহ সব কিছুই তাঁর সৃষ্টির পর তাঁরই ‘নূর মুবারক’ থেকে সৃষ্টি হয়েছে।
অতএব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি একই স্থানের মাটি দ্বারা সৃষ্টি” এর সরাসরি অর্থ গ্রহণ করলে আখিরী রসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান ও মানের খিলাফ হবে যা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। মূলতঃ এর ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য তা’বীল বা ব্যাখ্যা হলো, “রওজা শরীফ-এর স্থান নির্ধারণের জন্যে নাভী মুবারকে তা রাখা হয়েছে। তবে তা পূনরায় তার পূর্বের হাক্বীক্বী ছূরতে পরিবর্তন করে অর্থাৎ মাটিকে নূর বানিয়ে সেই নূরকে নাভী মুবারকে রাখা হয়। সত্যিকার অর্থে তা হলো নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরই একটা অংশ যা প্রকৃতপক্ষে “নূর।”
কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মাটির তৈরি বলে বিশ্বাস করা বা বলা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার শামীল। আর এ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা কাট্টা কুফরী। আর যে কুফরী করে সে কাট্টা কাফির ও লা’নতের উপযুক্ত হয়।
যেমন, ইবলিস লা’নতের উপযুক্ত হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
قال ما منعك الا تسجد اذ امر تك قال انا خير منه خلقتنى من نار و خلقته من طين.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক বললেন, (হে ইবলিস আমি যখন তোকে হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সিজদা করতে আদেশ করলাম তখন) কোন জিনিষ তোকে সিজদা করতে নিষেধ করলো। ইবলিস বললো, আমি হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম থেকে উত্তম। কারণ আপনি আমাকে তৈরি করেছেন আগুন থেকে আর হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে তৈরি করেছেন মাটি থেকে।” (সূরা আ’রাফ-১২)
তখন আল্লাহ্ পাক ইবলিসকে বললেন,
فاهبط منها فما يكون لك ان تتكبر فيها فا خرج انك من الصغرين.
অর্থঃ- “তুই এখান থেকে নেমে যা লা’নতের সহিত। এখানে তোর অহংকার করার কোন অধিকার নেই। অতএব তুই বের হয়ে যা। নিশ্চয়ই তুই লাঞ্ছিত, অপমানিত ও হীনতমদের অন্তর্ভূক্ত।” (সূরা আ’রাফ-১৩)
উল্লেখ্য, ইবলিস হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে মাটির তৈরি বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে সিজদা না করায় অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে যথাযথ সম্মান না করার কারণে সে আল্লাহ্ পাক-এর রহ্মত থেকে বিতাড়িত হয়ে মালউনের অন্তর্ভূক্ত হয়ে শয়তানে রাজীম হয়েছে।
অতএব, কেউ যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মাটির তৈরি বলে বিশ্বাস করে ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে যথাযথ সম্মান না করে তাহলে সেও ইবলিসের মত আল্লাহ্ পাক-এর রহ্মত থেকে বঞ্চিত হয়ে মালউনের অন্তর্ভূক্ত হয়ে শয়তানের কায়েম-মকাম হবে।
মূলকথা হলো, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সৃষ্টি, আগমন, অবস্থান, বিদায় ও বর্তমান অবস্থান সর্বাবস্থায়ই তিনি নূর বা নূরে মুজাস্সাম। এটাই আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা। আর এই আক্বীদাই পোষণ করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয।
দ্বিতীয়তঃ নূরে মুজাস্সাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের সকলেরই নাভী মুবারকে একই স্থানের মাটি মুবারক রাখা হয়েছে।
অর্থাৎ রওজা শরীফের মাটি মুবারক রাখা হয়েছে। তবে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মাযার শরীফ সেরহিন্দ শরীফে হওয়ার কারণ হলো হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম-এর সময় বন্যায় রওজা শরীফের কিছু মাটি মুবারক সেরহিন্দ শরীফে আসে। তাই তাঁর মাযার শরীফ সেরহিন্দ শরীফেই হয়েছে।
সুতরাং ইমামে রব্বানী, মাহ্বূবে সুবহানী, আফযালুল আউলিয়া, কাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কিত মাসিক মদীনার উপরোক্ত বক্তব্য সম্পুর্ণই ডাহামিথ্যা ও দলীলবিহীন বলেই প্রমাণিত হলো।
{দলীলসমূহঃ (১) আহ্কামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী, (২) কুরতুবী, (৩) রুহুল মায়ানী, (৪) মাযহারী, (৫) তাবারী, (৬) কবীর, (৭) বায়যাবী, (৮) শায়খ যাদাহ্, (৯) আবী সাউদ, (১০) মায়ানিউত তানযীল, (১১) মাদারিকুত্ তানযীল, (১২) জালালাইন, (১৩) মায়ালিমুত্ তান্যীল, (১৪) যাদুল মাসীর, (১৫) নিশাপুরী, (১৬) রুহুল বয়ান, (১৭) ক্বাদিরী, (১৮) মাওয়ারেদী, (১৯) নাযমুদ্দুরার, (২০) মুদ্বীহুল কুরআন, (২১) দুররুল মানছুর, (২২) দুররুল মাছূন, (২৩) আল জাওয়াহির, (২৪) আত্ তাসহীল, (২৫) ফাতহুল ক্বাদীর, (২৬) হাশিয়াতুশ্ শিহাব, (২৭) মাওয়াহিবুর রহমান, (২৮) হাক্কানী, (২৯) মাজিদী, (৩০) কাশফুর রহমান, (৩১) উছমানী, (৩২) খাযায়িনুল ইরফান, (৩৩) দ্বিয়াউল কুরআন, (৩৪) ক্বাসিমী, (৩৫) আলী হাসান, (৩৬) তাহিরী, (৩৭) নূরুল কুরআন, (৩৮) কামালাইন, (৩৯) হাশিয়ায়ে জুমাল, (৪০) মুছান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক, (৪১) দালায়িলুন নবুওওয়াত, (৪২) ফিরদাউস্ লি দায়লামী, (৪৩) আবু নাঈম, (৪৪) মুসনদে আহ্মদ, (৪৫) হাকিম, (৪৬) শরহুস্ সুন্নাহ্, (৪৭) মিশকাত, (৪৮) মিরকাত, (৪৯) আশয়াতুল লুময়াত, (৫০) মুযাহিরে হক্ব, (৫১) ফয়জুল ক্বাদীর, (৫২) মাওজুআতুল কবীর, (৫৩) খাছায়িছুল কুবরা, (৫৪) মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, (৫৫) শরহে মাওয়াহিব, (৫৬) সীরতে হালবীয়া, (৫৭) নি’মাতুল কুবরা, (৫৮) বুলুগুল আমানী, (৫৯) ইবলুল আসাকির, (৬০) জাওয়াহিরুল বিহার, (৬১) তাহ্ক্বীকুল মাকাম, (৬২) শরফুল আলম, (৬৩) তাওয়ারিখে মুহম্মদী, (৬৪) উমদাতুন নুকূল, (৬৫) বিদায়া ওয়ান নিহায়া, (৬৬) আনওয়ারে মাহমুদীয়া, (৬৭) নুযহাতুল মাজালিস, (৬৮) মাদারিজুন নবুওওয়াত, (৬৯) হাদিয়াতুল মাহ্দী, (৭০) আল আনওয়ার ফী মাওলিদিন্ নাবিয়্যীল মুহম্মদ, (৭১) নূরে মুহম্মদী, (৭২) মকতুবাত শরীফ, (৭৩) হাদিকায়ে নাদিয়া শরহে তরীকায়ে মুহম্মদীয়া, (৭৪) মায়ারিফে মুহম্মদী, (৭৫) ইওয়াকীত, ইত্যাদি।}
{বিঃদ্রঃ এসম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ৬০-৮২তম সংখ্যা এবং বিশেষ করে ৯৪তম সংখ্যা পাঠ করুন। }
মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান
টাইগার পাস রোড, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার উল্লেখ করে আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব” …।
এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য।
তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের আক্বীদা-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহনযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কেননা হাদীছ শরীফে স্বয়ং আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ করেন যে,
قولوا مسل ما يقول المؤذن.
অর্থাৎ তোমরা আযানের জবাবে অনুরূপ বল, যেরূপ মুয়াজ্জিন বলে। উক্ত আদেশ মুবারকে
قولوا শব্দটি امر (আমর)। আর উছূলের কিতাবে বর্ণিত আছে, الامر لو جوب ‘আমর’ আমলকে ওয়াজিব করে দেয়।”
এর উপর ভিত্তি করেই হানাফী ফকীহ্গণ ফতওয়া দেন যে, আযানের মৌখিক জাওয়ার দেয়া ওয়াজিব। যদিও জুনূব অবস্থায় থাকুক। এটাই ছহীহ্, প্রাধান্যপ্রাপ্ত ও গ্রহনযোগ্য মত। তবে কোন কোন কিতাবে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলে উল্লেখ আছে সত্যই । তবে তা তরজীহ্প্রাপ্ত বা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মত নয়। কেননা অনেক কিতাবে একই বিষয়ে একাধিক মত উল্লেখ আছে। তাই বলে সবগুলো যে গ্রহণযোগ্য হবে তা নয়। বরং যে মতের উপর ফতওয়া দেয়া হয়েছে, সে মতটিই গ্রহণযোগ্য।)
যা ইতিপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ” এর অনেক সংখ্যায়, বিশেষ করে ১৩৮ ও ১৩৯ তম সংখ্যায়ও উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব, বিশুদ্ধ ফতওয়া হলো, মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া, আযান শ্রোতাদের সকলের জন্যই ওয়াজিব যা বহু হাদীছ শরীফ ও বিশ্ববিখ্যাত নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে এবং এর উপরই ফতওয়া দেয়া হয়েছে।
‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’-এর উক্ত জাওয়াবকে খণ্ডন করা রেযাখানী ফেরকার মৌলভী সাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ্। এরপরেও রেযাখানী মৌলভী সাহেবরা ‘‘আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব” …।
আমরা পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডন সহ সঠিক ও গ্রহনযোগ্য ফতওয়া পেশ করবো ইন্শাআল্লাহ্
আযানের মৌখিক জবাব দেয়া যে ওয়াজিব এবং এটা যে প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত তার প্রমাণ
উল্লেখ্য, আযানের মৌখিক জবাব দেয়া যে ওয়াজিব তা ছহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত হয়। যেমন হাদীছ শরীফের ছহীহ কিতাব “বুখারী শরীফের” ১ম খন্ডের ৮৬ পৃষ্ঠায় ও মুসলিম শরীফের ১ম খন্ডের ১৬৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن ابى سعيدن الخد رى ى ضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال اذا سمعتم النداء فقو لوا مشل ما يقول المؤذن
অর্থঃ- “হযরত আবূ সাঈদ খুদরীঞ্জরদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুয়াজ্জিন যা বলে, তোমরাও তাই বল।” (অনুরূপ “তিরমিযী শরীফের” ১ম খণ্ড ২৯ পৃষ্ঠা “আবূ দাউদ শরীফ”-এর ১ম খন্ড ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,)
“ইবনে মাজাহ্ শরীফের” ৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا اذن المؤذن فقو لوا مثل قوله.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরাইরাঞ্জরদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন যে, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুয়াজ্জিন যখন আযান দেয়, তখন তোমরা মুয়াজ্জিনের অনুরূপ বল।”
এ হাদীছ শরীফে ব্যাখ্যায় “ইবনে মাজাহ্ শরীফের” ৫৩ পৃষ্ঠার ৩নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
واجابة المؤذن وا جبة ويكره التكلم عند الاذان.
অর্থঃ- “মুয়াজ্জিনের আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব। আর আযানের সময় কথা বলা মাকরূহ তাহ্রীমী।”
“মিশকাত শরীফের” ৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وعن عبد الله ابن عمرو بن العاص رضى الله عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا سمعتم المؤذن فقولوا مثل مايقول.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর বিন আস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম হতে বর্ণিত আছে। তিনি বর্ণনা করেন যে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা মুয়াজ্জিনের আযান শুনবে তখন তোমরাও অনুরূপ বল যা মুয়াজ্জিন বলে।” (অনুরূপ “নাসাঈ শরীফের” ১ম খণ্ডের ১১০ পৃষ্ঠায়, মুয়াত্তা ইবনে মালিক-এর ২৩ পৃষ্ঠায়, মুয়াত্তা ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুসনাদুল ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, শরহু মা’য়ানীল আছার” কিতাবেও উল্লেখ আছে।) ”
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের বর্ণনা অনুসারে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, আযানের শব্দ যা রয়েছে, আযান শ্রবণকারী তাই বলবে। আর বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীছ শরীফে রয়েছে, “হাইয়া আলাছ্ ছলাহ্ ও ফালাহ্ বাক্যদ্বয় শুনে লা-হাওলা-ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্ বলতে হবে।” এটা হাশিয়ায়ে মুয়াত্তা ইমাম মুহম্মদ” কিতাবের ৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে। উক্ত হাদীছ শরীফের বর্ণনা অনুসারে আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও আছহাবে জাওয়াহিরের মত হচ্ছে- মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জাওয়াব দেয়া আযান শ্রোতাদের সকলের জন্যই ওয়াজিব।
অতএব, প্রমাণিত হলো, রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গোমরাহীর পরিচয় দিয়েছে ্এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে। (চলবে)
নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক
ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।
সুওয়াল: হানাফী মাযহাবে –
(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।
(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।
(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।
(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।
(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।
(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।
(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।
(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো জোড়া জোড়া এবং আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।
(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।
(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।
(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।
(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।
কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।
অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: সুওয়ালে উল্লিখিত হানাফী মাযহাবের মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব ধারাবাহিকভাবে পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ।
তবে তার পূর্বে মাযহাব মানা ফরয, মাযহাব না মানা বিদ্য়াত ও গোমরাহী, মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী- সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে প্রদান করা হবে ইনশাআল্লাহ।
(ধারাবাহিক)
কি?য়াস মূলতঃ নতুন কোন বিষয় নয়, বরং স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল?ম তিনি ও কি?য়াস করেছেন। তার প?মাণ নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ-
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال اتى رجل الى النبى صلى الله عليه وسلم فقال ان اختى نذرت ان تحج و انها ما تت فقال النبى صلى الله عليه وسلم لو كان عليها دين اكنت فا قضيه قال نعم قال فا قض دين الله فهو احق با لقضاء.
অর্থঃ- হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন- ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার ভগ্নি হজ্জ করার মানত করেছিলেন কি?‘ আদায় করার পূর্বেই তিনি ইন্তিকাল করেছেন। রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তোমার ভগ্নির উপর কারো ঋণ থাকলে তুমি তা আদায় করতে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার হক আদায় কর। কেননা এটা আদায় করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও কিয়াস করে সমস্যার সমাধান করতেন।
যেমন, হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়,
عنمحمد ابن سيرين رحمة الله عليه قال ان ابا بكر رضى الله تعالى عنه نز لت به قضية لم نجد فى كتاب الله اصلا ولا فى السنة اثرا فقال اجتهد رأيى
অর্থঃ- তাবিয়ী হযরত মুহম্মদ ইবনে সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট যখন কোন মুকাদ্দমা আসতো, প্রথমে কুরআন-সুন্নাহ্ প্রতি নজর দিতেন, সেখানে যদি কোন নির্দেশনা না পেতেন, তাহলে নিজের রায় অনুযায়ী ইজতিহাদ বা কিয়াস করে নিতেন। (আত্ তবাকাতুল কুবরা লি ইবনে সাদ)
অনুরূপ হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নীতি ছিল যে, তিনি ফায়সালা করার জন্য কিতাবুল্লাহ্ ও সুন্নাহ পর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের রায়ের প্রতি নজর দিতেন, সেখানেও না পাওয়া গেলে বলতেন, فيه برايى (অর্থাৎ নিজের রায় মোতাবেক ফায়সালা করতেন)। (দারিমী, মুসতাদরিকে হাকিম)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুষ্পষ্টভাবেই বুঝা যাচ্ছে যে, কিয়াস শুধু শরীয়তের অকাট্য দলীলই নয় বরং কিয়াসের মাধ্যমে মাসয়ালা ছাবিত করা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত
সুতরাং, কি?য়াসের অনুসরণ করাও আমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। শুধু তাই নয়, কি?য়াসের প?তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতগণকে উৎসাহিতও করেছেন। নিম্নের হাদীছ শরীফ থেকে তার ষ্পষ্ট প্রমান পাওয়া যায়। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا حكم الحاكم فا جتهد واصاب فله اجران واذا حكم فاجتهد فا خطا فله اجر واحد.
অর্থঃ- ?হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত আছে, রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, যখন কোন ফায়সালাকারী ফায়সালা করবে, সে যদি কামিয়াব হয়, দ্বিগুণ ছওয়াব পাবে। আর যদি সে ভুল করে, তাহলে একগুণ ছওয়াব পাবে।? (বুখারী শরীফ)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, ক্বিয়াস কুরআন-সুন্নাহ্ সমর্থিত এবং তা শরীয়তের অকাট্য দলীলরূপে পরিগণিত।
সুতরাং কি?য়াস অনুসরণ করার অর্থই হলো- কুরআন-সুন্নাহ্কে অনুসরণ করা। আর ক্বিয়াসের বিরোধিতা করা, কুরআন-সুন্নাহ্ অস্বীকার করারই নামান্তর। (চলবে)
অর্থঃ- হযরত আবু হুরাইরা র?িয়াল?াহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত আছে, রসূল পাক ছল?াল?াহু আলাইহি ওয়া সাল?াম তিনি বলেছেন, যখন কোন ফায়সালাকারী ফায়সালা করবে, সে যদি কামিয়াব হয়, দ্বিগুন ছওয়াব পাবে। আর যদি সে ভুল করে, তাহলে একগুণ ছওয়াব পাবে।? (বুখারী শরীফ)
উপরোক্ত আলোচনা ?ারা এটা ¯??ই প?মাণিত হয় যে, কি?য়াস কুরআন-সুন্নাহ্ সমর্থিত এবং তা শরীয়তের অকাট্য দলীলরূপে পরিগণিত।
সুতরাং কি?য়াস অনুসরণ করার অর্থই হলো- কুরআন-সুন্নাহ্কে অনুসরণ করা। আর কি?য়াসের বিরোধিতা করা, কুরআন-সুন্নাহ্ অস্বীকার করারই নামা??র। (চলবে)
মাষ্টার মুহম্মদ ইমদাদুর রহমান
দিরাই, সুনামগঞ্জ।
সুওয়াল: গত ১লা জুলাই-২০০৬ ঈসায়ী ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় এসেছে, বায়তুল মোর্কারমের খতীব বলেছে, “আগামী নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন আর যারা ভোট দিবেন উভয়ের জন্যই ইসলামে কিছু বিধি-বিধান রয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত। এটি উপযুক্ত ব্যক্তির জন্য ব্যবহার করবে। …. এ সম্পর্কে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জেনে শুনে দল বা ব্যক্তির চাপে অথবা টাকার বিনিময়ে অযোগ্য ও অসৎ লোককে ভোট দিলো সে আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খেয়ানত করলো।”
এখন আমার জানার ও বুঝার বিষয় হলো-
১. আল্লাহ পাক কুরআন শরীফের কোন্ সূরার কত নম্বর আয়াত শরীফে ‘ভোটকে আমানত বলে উল্লেখ করেছেন।’ অর্থাৎ আল্লাহ পাক সত্যিই কি ভোটকে আমানত বলেছেন?
২. খতীব ছাহেব সৎলোককে ভোট দেয়া সম্পর্কিত যে হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছেন তা কোন্ হাদীছ শরীফের কিতাবে উল্লেখ আছে? অর্থাৎ হাদীছ শরীফে ভোট দেয়ার কথা উল্লেখ আছে কি? আর খতীব ছাহেবের উক্ত বক্তব্য সঠিক ও শরীয়তসম্মত হয়েছে কি?
৩. ভোট, নির্বাচন ও প্রার্থী হওয়া সম্পর্কে শরীয়তের বিধান কি?
উল্লিখিত বিষয়গুলোর কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: ভোট, নির্বাচন সম্পর্কিত তথাকথিত খতীব ছাহেবের উপরোক্ত বক্তব্য মোটেও সঠিক ও শরীয়তসম্মত হয়নি। বরং সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন ও কুফরীমূলক হয়েছে।
নিম্নে তথাকথিত খতীব ছাহেবের উল্লিখিত বক্তব্যের কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে শরীয়তসম্মত জাওয়াব দেয়া হলোঃ
তথাকথিত খতীবের প্রথম বক্তব্যের শরীয়তসম্মত জাওয়াব
খতীব বলেছে, “আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত। …”
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, তথাকথিত খতীবের এ বক্তব্য কাট্টা কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ সে সরাসরি আল্লাহ পাক-এর নামেই মিথ্যারোপ করেছে। কেননা, আল্লাহ পাক কুরআন শরীফের কোথাও ভোটকে আমানত বলে উল্লেখ করেননি।
খতীবের প্রতি চ্যালেঞ্জ রইলো, সে প্রমাণ করুক কুরআন শরীফের কোন্ সূরার, কোন্ আয়াত শরীফে ভোটকে আমানত বলা হয়েছে। সে কস্মিনকালেও তা প্রমাণ করতে পারবে না।
কাজেই, ‘আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত’- তথাকথিত খতীবের এ বক্তব্য কাট্টা কুফরী হয়েছে ও আল্লাহ পাক-এর প্রতি চরম মিথ্যারোপ করা হয়েছে।
আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে ইরশাদ করেন,
فمن اظام ممن افترى على الله كذ با ليضل الناس بغير علم ان الله لا يهدى القوم الظامين.
অর্থঃ- “অতএব, সে ব্যক্তি অপেক্ষা বড় যালিম আর কে হবে, যে ব্যক্তি বিনা প্রমাণে আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, মানুষদেরকে বিভ্রান্ত বা পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে; নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেননা।” (সূরা আনয়াম-১৪৪)
অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে তারা যালিম, তারা গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট। সেজন্য তারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে মানুষদেরকে বিনা দলীলে গোমরাহ করতে চায়।
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
ومن اظلم ممن افترى على الله الكذب وهو يدعى الى الا سلام والله لا يهدى القوم الظلمين.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইসলামের প্রতি আহুত হয়েও আল্লাহ পাক সম্পর্কে মিথ্যা বলে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? আর আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেননা।” (সূরা ছফ-৭)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক সম্পর্কে মিথ্যা বলা হচ্ছে সবচাইতে বড় যুলূম। কাজেই, যে বা যারা মুসলমান হওয়ার পরও আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে সে বা তারা চরম ও বড় যালিম এবং যালিম হওয়ার কারণে তারা হিদায়েত থেকে মাহরূম হয়ে থাকে। অর্থাৎ তারা চরম গোমরাহ। তাই এদের ফতওয়া শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।
আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে আরো ইরশাদ করেন,
ولا تقولوا لما تصف السنتكم الكذب هذا حلل وهذا حرام لتفتروا على. الله الكذب ان الذ ين يفترون على الله الكذب لايفلحون.
অর্থঃ- “তোমাদের মুখ থেকে সাধারণতঃ যেসব মিথ্যা বের হয়ে আসে, তেমনি করে তোমরা আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যারোপ করে বলোনা যে, (আল্লাহ পাক) এটা হালাল এবং ওটা হারাম (করেছেন), নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যারোপ করে, তাদের জন্য কামিয়াবী নেই।” (সূরা নহল-১১৬) অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে তাদের জন্য কামিয়াবী তো নেই। শুধু তাই নয়, বরং তাদের জন্য কঠিন শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রয়েছে।
আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
لو تقول علينا بعض الا قاويل لاخذنا منه باليمين. ثم لقطعنا منه الوتين. فما منكم من احد عنه حجزين.
অর্থঃ- “তিনি যদি আমার নামে বানিয়ে কোন কথা বলতেন, তবে আমি তাঁর দক্ষিণ হস্ত ধরে তাঁর গ্রীবা কেটে দিতাম, তোমাদের কেউই এতে বাধা দিতে পারতে না।” (সূরা হাক্কা- ৪৪, ৪৫, ৪৬)
উপরোক্ত আয়াত শরীফের শানে নুযূল সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে, কাফির, মুশরিকরা বলতো, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাকি আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলেন। (নাউযুবিল্লাহ) এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক এ আয়াত শরীফ নাযিল করে জানিয়ে দিলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনই আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে মিথ্যা বলেন না। শুধু এতটুকুই নয় আরো জানিয়ে দিলেন, যারা আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে মিথ্যা বলবে তাদের শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড।
কারণ আল্লাহ পাক সম্পর্কে যে মিথ্যা বলে সে কুফরী করে, আর যে কুফরী করে সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর শরীয়তের ফতওয়া হলো, যে সমস্ত মুসলমান কুফরী করে তারা মুরতাদ হয়ে যায়। আর যারা মুরতাদ হয়ে যায় তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। শরীয়তে তাদের তওবা করার জন্য তিনদিন সময় দেয়া হয়েছে অন্যথায় শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড।
অতএব, “যারা আল্লাহ পাক ও আল্লাহ পাক-এর কালাম কুরআন শরীফ সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে। অর্থাৎ আল্লাহ পাক যা বলেননি তা বলেছেন বলে এবং কুরআন শরীফে যা উল্লেখ নেই তা আছে বলে”- তারা চরম যালিম, মুরতাদ ও কাফির।
কাজেই, “আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটা আমানত”- তথাকথিত খতীবের এ বক্তব্য আল্লাহ পাক ও কুরআন শরীফের নামে সুস্পষ্ট মিথ্যারোপ ও কাট্টা কুফরী। কারণ, কুরআন শরীফের কোথাও আল্লাহ পাক অনুরূপ কথা বলেননি।
আর খতীব যদি বলে যে, “আমি তো ভাবার্থে বা ব্যাখ্যামূলক অর্থে বলেছি।”
তার এ কথা কখনোই গ্রহনযোগ্য হবেনা। কারণ সে সরাসরি বলেছে “আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত” কাজেই এখানে ভাবার্থে বা ব্যাখ্যামূলকভাবে বলেছি এটা বলার কোন সুযোগ নেই। এরপরেও যদি আমরা একথা ভাবার্থে বা ব্যাখ্যামূলক হিসেবে ধরি তথাপিও খতীবের উক্ত বক্তব্য কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ, নির্ভরযোগ্য কোন তাফসীর বা ব্যাখ্যাগ্রন্থেই ভোটকে আমানত বলা হয়নি। এটা খতীবের সম্পূর্ণই মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা।
খতীব হয়তো বলতে পারে, “পাকিস্তানের মুফতী শফী তো ‘তাফসীরে মা’য়ারিফুল কুরআন’ কিতাবে ভোটকে আমানত বলে উল্লেখ করেছে।”
এর জাওয়াবে বলতে হয়, মুফতী শফীরও উক্ত বক্তব্য শুদ্ধ হয়নি। বরং তা মনগড়া ও কুফরী হয়েছে। কারণ, মুফতী শফীও এর পক্ষে কোন নির্ভরযোগ্য তাফসীর বা হাদীছ অথবা কোন ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবের বরাত দিতে পারেনি। কাজেই ভোটকে আমানত বলে যে আয়াত শরীফ উল্লেখ করেছে, তার সাথে ভোটের কোন সম্পর্ক নেই। উক্ত আয়াত শরীফের অর্থ, শানে নুযূল ও ব্যাখ্যা আলোচনা করলেই তা সুস্পষ্টরূপে জানা যাবে। আয়াত শরীফখানা হলোঃ
ان الله يأمر كم ان تودوا الامنت الى اهلها واذا حكمتم بين الناس ان تحكموا بالعدل ان الله نعما يعظكم به ان الله كان سميعا بصيرا.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তোমাদেরকে আদেশ করেন যে, তোমরা আদায় করে দাও আমানত সমূহকে তার হকদারদেরকে এবং যখন তোমরা মানুষের মধ্যে ফায়সালা বা বিচার করবে, তখন ন্যায়ের সাথে বিচার করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে উত্তম উপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা নিসা-৫৮)
শানে নুযূল
হিজরতের পূর্বে জাহিলিয়াতের যুগে, সপ্তাহে দু’দিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার কা’বা শরীফের দরজা খোলা হতো। যাতে যারা কা’বা শরীফে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক, তাঁরা যেন প্রবেশ করতে পারে। এবং উক্ত ঘরের চাবির জিম্মাদার ছিলেন উসমান বিন তাল্হা।
একবার কা’বা শরীফের দরজা খোলার পর আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু সংখ্যক ছাহাবায়ে কিরাম রদিয়াল্লাহু আনহুমগণকে নিয়ে প্রবেশ করতে আসলে, তখন সে বাধা প্রদান করে এবং কিছু কটু কথা বলে। এ সকল অশালীন ও অশোভনীয় আচরণ লক্ষ্য করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে উসমান! এমন একদিন আসবে, যেদিন তুমি এ কা’বা ঘরের চাবি আমার হাতে দেখতে পাবে এবং এ চাবি যাকে ইচ্ছা তাকে দেয়ার অধিকারও আমার থাকবে।” ইত্যাদি আরো কিছু কথা বলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিয়ারত করে চলে গেলেন।
পরবর্তীতে যখন মক্কা শরীফ বিজয় হলো, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’বা ঘরের চাবি উসমান বিন তালহার কাছ থেকে নিয়ে কা’বা শরীফ খুলে তার মধ্যে প্রবেশ করে দু’রাকায়াত নামায পড়লেন। অতঃপর যখন বের হলেন, তখন হযরত আব্বাস রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা তো পানি পান করানোর জিম্মাদারীতে আছি, সুতরাং আমাদেরকে কা’বা ঘরের চাবিরও জিম্মাদার করে দিন।
তখন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক-এর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকলেন, কাকে এ চাবি দেয়া হবে, তখন উক্ত আয়াত শরীফ নাযিল করে তার মাধ্যমে আল্লাহ পাক জানিয়ে দিলেন।
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উসমান বিন তালহাকে ডেকে বললেন, “তোমার কি সেই কথা স্মরণ আছে যে, আমি বলেছিলাম কা’বা ঘরের চাবি আমার হাতে আসবে এবং যাকে ইচ্ছা তাকে দেয়ার অধিকার আমার থাকবে।” অতঃপর তার নিকট চাবি অর্পণ করলেন এবং বললেন, এ চাবি ক্বিয়ামত পর্যন্ত তোমার বংশধরগণের নিকট থাকবে, যে এটি নিবে সে যালিমের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আল্লাহ পাক-এর রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম, রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উক্ত ভবিষ্যৎবাণী সত্যে বাস্তবায়িত হওয়া দেখে তাঁর ইসলাম গ্রহণের পূর্ব সূক্ষ্ম আকাংখা প্রবল হয়ে উঠল এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন।
ব্যাখ্যা
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক আমানতসমূহের হক্বদার কে, তার প্রতিই তার প্রাপ্য আমানত আদায় করার জন্য আদেশ করেছেন। এখন আমানত কাকে বলে? এবং তা কি কি? এ প্রশ্নের জাওয়াবে হযরত মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ উল্লেখ করেন, আমানত সমূহ প্রধানতঃ তিন প্রকার-
(১) الاما نة فى عبادة الله.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক- এর ইবাদত সম্পর্কে আমানত।”
(২) الامانة مع النصس.
অর্থঃ- “নফ্সের আমানত।”
(৩) امانة العبد مع سأئر عباد الله.
অর্থঃ- “বান্দার উপর অন্যান্য সকল আমানতসমূহ।”
অর্থাৎ (১) আল্লাহ পাক-এর আদেশ ও নিষেধ সমূহ, যেমন- ওযু, গোসল, জানাবাত, নামায, রোযা, যাকাত ইত্যাদি ইবাদতসমূহ আদায় করা এবং এর থেকে বিরত না হওয়া।
(২) আল্লাহ পাক বান্দাদেরকে যে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করেছেন, যেমন- জিহ্বাকে হিফাযত করা, মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরী থেকে, চক্ষুকে হারাম দৃষ্টি থেকে, কানকে গান-বাজনা, অশ্লীল বা ফাহেশা কথা-বার্তা শোনা থেকে বিরত রাখা।
(৩) আল্লাহ পাক বান্দাদের পরস্পর পরস্পরের মধ্যে যে হক্ব দিয়েছেন। যেমন- মুয়ামেলাত, মুয়াশেরাত ইত্যাদি যথাযথভাবে আদায় করা।
হযরত আনাস রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لا ايمان لمن لا اما نة له ولادين لمن لا عهد له.
অর্থঃ- “যার আমানত নেই, তার ঈমান নেই এবং যার ওয়াদা ঠিক নেই, তার দ্বীন নেই।” অর্থাৎ যে আমানত খেয়ানত করবে, সে খালিছ ঈমানদার হতে পারবেনা। আর যে ওয়াদার খেলাফ করবে, সে খালিছ দ্বীনদার হতে পারবেনা।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)
এছাড়াও কুরআন শরীফে “সূরা বাক্বারার” ২৮৩ নং আয়াত শরীফে লেন-দেন প্রসঙ্গে আমানতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
“সূরা আনফালের’’ ২৭ নং আয়াত শরীফে জিহাদ প্রসঙ্গে, “সূরা আহযাবের” ৭২ নং আয়াত শরীফে কুরআন শরীফ ও ইসলাম সম্পর্কে, “সূরা মু’মিনুন” ৮ নং আয়াত শরীফে, “সূরা মায়ারিজের” ৩২ নং আয়াত শরীফে মু’মিনের চরিত্র প্রসঙ্গে আমানতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অতএব, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, সে যেন কোন অবস্থায়ই আমানতের খেয়ানত না করে।
উল্লেখ্য, কুরআন শরীফের কোথাও ভোটকে আমানত বলে উল্লেখ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের কোথাও আমানত বলে উল্লেখ করা হয়নি। কারণ ভোট প্রথা ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ ইসলামের নামে করা সম্পূর্ণই হারাম।
যা ইসলামের নামে করা জায়িয নেই তা কি করে ঈমানদারদের জন্য আমানত বলে সাব্যস্ত হতে পারে?
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, মুফতী শফীর ‘ভোটকে আমানত বলে উল্লেখ করাটা’ সম্পূর্ণরূপে তাফসীর র্বি রায় তথা মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যার অন্তর্ভুক্ত।
আসল কথা হলো, ‘তাফসীরে মা’য়ারিফুল কুরআনে’ মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ, মুফতী শফি ছাহেব পাকিস্তানের রেডিওতে তাফসীর করতো। তার তাফসীরের পর পরই শুরু হতো গান-বাজনা, অশ্লীল-অশালীন অনুষ্ঠান। এভাবে সে চৌদ্দ বছর তাফসীর অনুষ্ঠান করে; আর সেটারই সমষ্টি হচ্ছে ‘তাফসীরে মা’য়ারিফুল কুরআন।’
এখন মুফতী শফী ও তার ভক্ত মুফতীদের প্রতি জিজ্ঞাসাঃ কোন্ দলীলের ভিত্তিতে মুফতী শফী গান-বাজনার আধার রেডিওতে তাফসীর করলো? তার দলীল পেশ করতে পারবে কি? না তা কস্মিনকালেও পেশ করতে পারবে না।
শরীয়তের মাসয়ালা হচ্ছে, গোসলখানা- যেখানে মানুষ পবিত্রতা অর্জন করে থাকে। সেখানে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা মাকরূহ তাহরীমী। তাহলে যেখানে গান-বাজনা, অশ্লীল-অশালীন, হারাম, নাজায়িয কার্যকলাপ সংগঠিত হয় সেখানে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ও তার তাফসীর করার মাসয়ালা কি হবে?
বলার অপেক্ষা রাখেনা, তা অবশ্যই হারাম ও কুফরী হবে। আর সেটাকে জায়িয মনে করলে মুরতাদ ও কাফির হবে।
উল্লেখ্য, কুরআন শরীফের তাহরীফ, তাবদীল অর্থাৎ পরিবর্তন, পরিবর্ধন যেমন নাজায়িয ও কুফরী তেমনি তাফসীর বির রায় তথা মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা করাও নাজায়িয ও কুফরী।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قال فى القران برايه فليتبوأ مقعده من النار وفى رواية من قال فى القران بغير علم فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ সম্পর্কে মনগড়া কথা বলে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়। অপর রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ সম্পর্কে ইলম্ ব্যতীত অর্থাৎ বিনা প্রমাণে মনগড়া কোন কথা বলে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান দোযখে করে নেয়।” (তিরমিযী, মিশকাত, মিরকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
من فسر القر ان برا يه فقد كفر.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের মনগড়া ব্যাখ্যা করলো, সে কুফরী করলো।” (ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন)
কাজেই, বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, উভয় দিক থেকেই খতীবের উপরোক্ত বক্তব্য কুফরীমূলক হয়েছে।
এখন তথাকথিত খতীবের দায়িত্ব হলো, খালিছ ইস্তিগ্ফার ও তওবা করা। অন্যথায় তার পিছনে নামায পড়া কারো জন্য জায়িয হবেনা। যদি কেউ পড়ে তবে তার নামায শুদ্ধ হবে না। সে নামায তরক্বের গুনাহে গুনাহ্গার হবে।
(চলবে)
মুহম্মদ জহিরুদ্দীন নিপু
বাড্ডা, ঢাকা।
সুওয়াল: গত ২১ এপ্রিল/২০০৬ ঈসায়ী ‘দৈনিক সমকাল’ পত্রিকায় ‘সাঈদীর ধরনা’ শিরোনামে প্রথম পাতায় ছোট্ট একটি খবর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘পিরোজপুর-১ আসনের সাংসদ ও জামাতে ইসলামীর সংসদীয় দলের নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আগামী নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট আদায়ের লক্ষ্যে মন্দির-আশ্রমে ধর্ণা দিতে শুরু করেছে।
বুধবার পিরোজপুর পৌর এলাকার ঘুমুরিয়া শ্রী শ্রী বিপিন চাঁদ ঠাকুরের ১৪৩তম জন্মবার্ষিকী ও মতুয়া সম্মেলনে সাঈদী উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখে এবং আশ্রমে ৫০ হাজার টাকা অনুুদানের ঘোষণা দেয়।
এর কিছুদিন আগে সে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে পিরোজপুুর রামকৃষ্ণ আশ্রম, কালীবাড়ি মন্দির, বিপিন চাঁদ সেবাশ্রমসহ বিভিন্ন আশ্রম ও মন্দিরে আলোচনা অনুষ্ঠানে মিলিত হয়।”
এখন আমার সুওয়াল হলো- মাওলানা সাঈদীর হিন্দু ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী ও মতুয়া সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তাদের প্রতি প্রশংসামূলক বক্তব্য রাখা এবং হিন্দু আশ্রমে ৫০ হাজার টাকা অনুদানের ঘোষণা দেয়া অর্থাৎ তাদেরকে সাহায্য করার ব্যাপারে শরীয়তের কি ফতওয়া? দয়া করে জানাবেন।
জাওয়াব: উপরোক্ত সুওয়ালের পরিপ্রেক্ষিতে দু’টা বিষয় ফুঠে উঠেঃ
১. কাফির-মুশরিক তথা বিধর্মীদেরকে কুফরী-শেরেকীতে দৃঢ় থাকার পরও তাদের প্রশংসা করা। ২. কুফরী ও শেরেকীতে সাহায্য-সহযোগীতা করা।
১. কাফির-মুশরিক তথা বিধর্মীদেরকে কুফরী-শেরেকীতে দৃঢ় থাকার পরও তাদের প্রশংসা করা। এটা কাট্টা হারাম ও কুফরী।
উল্লেখ্য, এখানে বিধর্মীদের দু’অবস্থা- (ক) এখনও মারা যায়নি, (খ) মারা গিয়েছে।
(ক) যে সমস্ত বিধর্মীরা এখনও মারা যায়নি যদিও তাদের তওবা করার সুযোগ রয়েছে তারপরও তাদের কুফরী-শেরেকী অবস্থায় প্রশংসা করা কাট্টা হারাম ও কুফরী।
(খ) আর যারা মারা গিয়েছে তাদের প্রশংসা করা আরো কঠিন গুণাহ্র কারণ। যা কাট্টা হারাম ও কুফরী।
কাজেই, মাওলানা সাঈদীর মতুয়া সম্মেলনে উপস্থিত হওয়া ও হিন্দু ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীতে হিন্দুর ছানা-ছিফতমূলক বক্তব্য দেয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে কাট্টা হারাম ও কুফরী হয়েছে।
কারণ, হিন্দু সম্প্রদায় হচ্ছে কাফির ও মুশরিকের অন্তর্ভুক্ত। এদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
ان شر الدواب عند الله الذين كفروا فهم لايؤمنون.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই সমস্ত প্রাণীর মাঝে আল্লাহ পাক-এর নিকট কাফিররাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণী, যারা ঈমান আনেনি।” (সূরা আনফাল- ৫৫)
অর্খাৎ যারা ঈমান আনেনি তারা দুনিয়াবী যিন্দিগীতে আল্লাহ পাক-এর নিকট যেমন নিকৃষ্ট প্রাণী তদ্রুপ মৃত্যুর পরেও।
সে সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
ان الذين كفروا وماتوا وهم كفار فلن يقبل من احد هم ملء الارض ذهبا ولو افتدى به اولئك لهم عذ اب اليم وما لهم من نصرين.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই যারা কাফির এবং কুফরী অবস্থায় মারা গেছে, তারা যদি যমীন পরিপূর্ণ স্বর্ণ কুফরীর ফিদিয়া বা কাফ্ফারা বাবদ দেয়, তা কখনো গ্রহণ করা হবেনা। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব এবং তাদের জন্য কোন সাহায্যকারীও থাকবেনা।” (সূরা আলে ইমরান-৯১)
অর্থাৎ যে সমস্ত কাফিররা কুফরী করে মরেছে, এদের প্রতি আল্লাহ পাক এতটা অসন্তুষ্ট ও এদেরকে এতটা অপছন্দ করেন যে, এরা তো কোন প্রকার সাহায্য পাবেইনা বরং এরা অনন্তকাল ধরে কঠিন আযাবে-গযবে গ্রেপ্তার থাকবে।
আরো ইরশাদ হয়েছে,
ان الله لا يغفر ان يشرك به ويغفر ما دون ذلك لمن يشاء ومن يشر ك با لله فقد ضل ضللا بعيدا.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক ঐ ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে ক্ষমা করেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর সাথে শরীক করে, সে সুদূর গোমরাহীতে গোমরাহ।” (সূরা নিসা-১১৬)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক সকলকে ক্ষমা করলেও মুশরিকদেরকে ক্ষমা করবেন না। কারণ, এদের প্রতিও আল্লাহ পাক চরমভাবে অসন্তুষ্ট ও এদেরকে চরমভাবে অপছন্দ করেন।
কাজেই, কাফির-মুশরিকদের ছানা-ছিফত বা প্রশংসা করা মানে কুফরী ও শিরেকীকে সমর্থন করা ও পছন্দ করা যা কাট্টা কুফরী।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
عن انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا مدح الفاسق غضب الرب تعالى واهبز له العرش
অর্থঃ- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ফাসিকের প্রশংসা করা হলে আল্লাহ পাক গোস্সা করেন এবং সে কারণে আরশ মুবারক কেঁপে উঠে।” (বাইহাক্বী, মিশকাত-১১৪)
অর্থাৎ ফাসিকের প্রশংসা করলে আল্লাহ পাক গোস্সা করেন এবং আল্লাহ পাক-এর আরশ কেঁপে উঠে, তাহলে যারা কাফির-মুশরিকদের ছানা-ছিফত বা প্রশংসা করে, তাদের এ অসন্তুষ্টিমূলক কাজে আল্লাহ পাক তাদের প্রতি কিরূপ গোস্সা করবেন এবং আরশ মুবারক কতটুকু কেঁপে উঠবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
من كان عدوا لله وملئكته ورسله وجبريل وميكل فان الله عدو للكا فرين.
অর্থঃ- “যারা আল্লাহ পাক-এর, তাঁর ফেরেশ্তাগণের, তাঁর রসূলগণের এবং হযরত জিব্রীল আলাইহিস্ সালাম ও হযরত মিকাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর শত্রু, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাকও সেসব কাফিরের শত্রু।” (সূরা বাক্বারা-৯৮)
আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)
কাজেই, যারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শত্রুদের অর্থাৎ কাফির-মুশরিকদের প্রশংসা করে ও তাদের প্রতি মুহব্বত রাখে তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট কতটুকু নিকৃষ্ট ও অপছন্দনীয় প্রাণী তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
অতএব, প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য ফরজ এ প্রকার শরীয়তের খিলাফ কাজ থেকে বিরত থাকা।
এ সম্পর্কে শরীয়তের ফতওয়া হলো, “কাফির-মুশরিকদের ছানা-ছিফত তথা প্রশংসা করা কাট্টা হারাম ও কুফরী এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ।”
(চলবে)