সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৫৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ রেজাউল করীম, কাউখালী, পিরোজপুর।

সুওয়াল: গত ৩১ মার্চ-২০০৬ ঈসায়ী তারিখে দৈনিক জনকক্ত পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, পিরোজপুর-১ আসনের এমপি ও জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলের উপনেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী হিন্দুদের ‘রামকৃষ্ণ আশ্রম’ অনুষ্ঠানে যোগদান করত: আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। আলোচনাকালে সাঈদী বলে, “কৃষ্ণ ও রামকে শ্রদ্ধা করি।”

এখন আমার সুওয়াল হলো- মুসলমান ও মাওলানা হয়ে দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী ছাহেবের উক্ত কথা কতটুকু শরীয়তসম্মত হয়েছে? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী ছাহেবের উক্ত কথা কাট্টা কুফরী হয়েছে। আর কোন মুসলমান সে মাওলানা আর হোক, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, শাইখুল হাদীছ, শাইখুত্ তাফসীর, ইমাম, খতীব, আমীর, মুরুব্বী, পীর, দরবেশ, ছূফী ইত্যাদি যাই হোক না কেন যদি সে কোন কুফরী করে তাহলে সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ ও কাফিরে পরিণত হয়ে যায়।

কারণ, হিন্দু সম্প্রদায় তারা তাদের রাম-কৃষ্ণকে তাদের দেবতার অবতার হিসেবে মেনে থাকে। অথচ এই হিন্দু সম্প্রদায় এবং তাদের অবতার রাম-কৃষ্ণ সকলেই কাফির-মুশরিকের অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ পাক এদের সম্পর্কে কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,

ان الذ ين كفروا وما توا وهم كفا ر فلن يقبل من احدهم ملء الارض ذهبا ولو افتدى به او لئك لهم عذاب اليم وما لهم من نصر ين.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই যারা কাফির এবং কুফরী অবস্থায় মারা গেছে, তারা যদি যমীন পরিপূর্ণ স্বর্ণ তার ফিদিয়া বা কাফ্ফারা বাবদ দেয় (আমার থেকে বাঁচার জন্যে), তা কখনো গ্রহণ করা হবেনা। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব এবং তাদের জন্য কোন সাহায্যকারীও থাকবেনা।”  (সূরা আলে ইমরান-৯১) অর্থাৎ যে সমস্ত কাফিরেরা কুফরী করে মরেছে এদের প্রতি আল্লাহ পাক এতটা অসন্তুষ্ট ও এদেরকে এতটা অপছন্দ করেন যে এরা তো কোন প্রকার সাহায্য পাবেইনা বরং এরা অনন্তকাল ধরে কঠিন আযাবে-গযবে গ্রেপ্তার থাকবে।

আরো ইরশাদ হয়েছে,

ان الله لا يغفر ان يشرك به ويغفر ما دون ذلك لمن يشاء ومن يشر ك با لله فقد ضل ضللا بعيدا.

অর্থঃ- নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক ঐ ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে ক্ষমা করেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর সাথে শরীক করে, সে সুদূর গোমরাহীতে পতিত হয়। (সূরা নিসা-১১৬)

দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ পাক সকলকে ক্ষমা করলেও মুশরিকদেরকে ক্ষমা করবেন না কারণ এদের প্রতিও আল্লাহ পাক চরমভাবে অসন্তুষ্ট ও এদেরকে চরমভাবে অপছন্দ করেন।

উল্লেখ্য, রাম-কৃষ্ণ এরা সারাজীবন কুফরী শেরেকী করেছে ও কুফরী শেরেকী করে মৃত্যুবরণ করেছে। সুতরাং রাম ও কৃষ্ণকে শ্রদ্ধা করা মানে এক দিক থেকে কুফরী  শেরেকীকে  শ্রদ্ধা ও সমর্থন করা। অপরদিক থেকে আল্লাহ পাক যাদের প্রতি অসন্তুষ্ট তাদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা এবং আল্লাহ পাক যাদেরকে অপছন্দ করেন তাদেরকে পছন্দ করা। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।

তাই আল্লাহ পাক অন্যত্র ইরশাদ করেন,

يا يها الذ ين امنوا لا تتخذوا عد وى وعدو كم اولياء.

অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার শত্রু এবং তোমাদের শত্রুকে ভক্তি বা শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে গ্রহণ করোনা।” (সূরা মুমতাহিনা-১)

অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক-এর শত্রু ও ঈমানদারদের শত্রু তাদেরকে যেন কোন ঈমানদার কখনই ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র হিসেবে গ্রহণ না করে। তা আল্লাহ পাক স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন।

আর কেউ যদি কাফির, মুশরিক, ইহুদী, নাছারা অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর অপছন্দনীয় ও অসন্তুষ্টিপ্রাপ্তদেরকে মুহব্বত, ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সম্মান করে এবং বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে তাদের পরিণতি প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

يا يها الذ ين امنوا لاتتخذ وا اليهود والنصرى اولياء بعضهم او لياء بعض ومن يتو لهم منكم فا نه منهم.

অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করোনা। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা মায়িদা-৫১)

অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক-এর অপছন্দনীয় ও অসন্তুষ্টিপ্রাপ্তদেরকে মুহব্বত, ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সম্মান করবে তারাও আল্লাহ পাক-এর নিকট অপছন্দনীয় ও অসন্তুষ্টিপ্রাপ্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

কাজেই এ বিষয়টা স্পষ্ট করে দেয়ার জন্যই হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, কোন কাফির মুশরিককে ভক্তি শ্রদ্ধা করা ও তাদের প্রশংসা করার প্রশ্নই উঠেনা বরং কোন ফাসিকের প্রশংসা করাটাও আল্লাহ পাক-এর কাছে এত অপছন্দনীয় ও অসন্তুষ্টিজনক কাজ যে তাতে আরশে মুয়াল্লা পর্যন্ত কেঁপে উঠে।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن انس ر ضى الله تعا لى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم اذا مدح الفا سق غضب الر ب تعا لى واهتز له العر ش

অর্থঃ- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ফাসিকের প্রশংসা করা হলে আল্লাহ পাক গোস্সা করেন এবং সে কারণে আরশ মুবারক কেঁপে উঠে।” (বাইহাক্বী, মিশকাত-১১৪)

শুধু এতটুকুই নয় হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن ابرا هيم بن ميسرة رحمة الله عليه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من وقر صا حب بد عة فقد اعان على هدم الاسلام.

অর্থঃ- “তাবিয়ী হযরত ইব্রাহীম ইবনে মাইসারা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন বিদ্য়াতী তথা ফাসিককে সম্মান করলো সে মূলত: দ্বীন ইসলাম ধ্বংসের কাজে সাহায্য করলো।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)

অর্থাৎ কোন বিদয়াতীকে সম্মান, ভক্তি, শ্রদ্ধা করলে যদি দ্বীন ইসলামকে ধ্বংস করার কাজে সাহায্য করা হয় তাহলে যারা আল্লাহ পাক-এর চিরশত্রু কাফির, মুশরিক যারা ইসলামের সম্পূর্ণ মুখালিফ তাদেরকে যদি কেউ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সম্মান করে তাহলে সে কতবেশি দ্বীন ধ্বংসের কাজে সাহায্য করল তা অনুধাবন করতে হবে।

অতএব, জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলের উপনেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী “কৃষ্ণ ও রামকে শ্রদ্ধা করি” এ কথা বলার দ্বারা প্রকাশ্য কুফরী করেছে।

শরীয়তের ফতওয়া হলোঃ কোন মুসলমান কুফরী করলে সে মুরতাদ হয়ে যায়।  মুরতাদের শাস্তি হচ্ছে- তার যিন্দিগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। বিয়ে করে থাকলে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। তার ওয়ারিছ সত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তার তওবার জন্য সময়সীমা হচ্ছে তিনদিন। এর মধ্যে তওবা না করলে ইসলামী খিলাফতের তরফ থেকে তার একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদ-। সে মারা গেলে তার জানাযা, দাফন, কাফন কোনটিই জায়িয নেই। বরং তাকে কুকুর-শৃগালের মত গর্তে পুঁতে রাখতে হবে।

{দলীলসমূহ- (১) আহকামুল কুরআন লিল জাস্সাস, (২) কুরতুবী, (৩) রুহুল মায়ানী, (৪)  রুহুল বয়ান, (৫) মাযহারী, (৬) কবীর, (৭) খাযেন, (৮) বাগবী, (৯)  আহমদী, (১০) ইবনে কাছীর, (১১) তাবারী, (১২) যাদুল মাছীর, (১৩) বুখারী, (১৪) মুসলিম, (১৫) বায়হাক্বী, (১৬) মিশকাত, (১৭) ফতহুল বারী, (১৮) উমদাতুল ক্বারী, (১৯) শরহে নববী, (২০) মিরকাত, (২১) আশয়াতুল্ লুময়াত, (২২) লুময়াত, (২৩) ত্বীবী, (২৪) তালীকুছ্ ছবীহ, (২৫) মুযাহিরে হক্ব, (২৬) ফিকহুল আকবর, (২৭) শরহে আকাঈদে নছফী, (২৮) আকাঈদে হাক্কা, (২৯) তাকমীলুল ঈমান ইত্যাদি}

 সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল জাওয়াব